রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব-১৯+২০

0
1199

#রেখেছি_তারে_মন_পিঞ্জিরায়
লেখনীতে: সালসাবিল সারা
পর্ব-১৯
_______________
–“লিসেন তুনাজ,সোজাসাপ্টা কথা হলো,তাহুরার দিকে তাকানো যাবে না।ওর ব্যাপারে কোনো কথা ভাবতেও পারবে না তুমি।”
দুই আঙ্গুল টেবিলে ঠেকিয়ে গড়গড় করে নিজ বক্তব্য পেশ করে উমাইর।ভাবভঙ্গি শক্ত,নির্দয় ভাব। অপর পাশে অবস্থানরত তুনাজ ঘাবড়িয়ে।দোটানায় ভুগে। এইভাবে সে উমাইরকে ভীতি করে চলে।তার উপর একাকীত্বে উমাইর তাকে ডেকেছে আবার তাহুরার বিষয়ে হুশিয়ারি দিচ্ছে।তুনাজের কপালের কিনারায় সূক্ষ্ম ঘামের আস্তরণ।তাহুরাকে পছন্দ করে বিরাট ভুল করেছে কি?
একদিকে তাহুরার প্রতি মায়া,ভালো লাগা অন্যদিকে উমাইরের কঠোর বক্তব্য।হরেক রকম চিন্তা শেষে তুনাজ মুখ খুলে,
–“আসলে,তাহুরাকে আমার ভালো লেগেছে।বাসায় মেয়ে দেখছিল আমার জন্যে।তাই….”

টেবিলে সজোরে থাবা দেয় উমাইর।তার কর্মকাণ্ডে রেস্তোরায় উপস্থিত তাদের নিকটবর্তী সকলে চিন্তিত নজরে অবলোকন করে।উমাইর ঘাড় ফেরায় চারিদিক।তার টগবগে দৃষ্টি সকলকে নিজ কাজে ফিরতে বাধ্য করে নিমিষে।তুনাজ শঙ্কিত।ভুল কথা বলেছে সে নিশ্চিত।

–“তাহুরা অনেক আগে থেকেই আমার।ওর উপর অন্য ছেলের দৃষ্টি আমি কখনো সহ্য করি না।নেহাত তুমি আত্মীয় তাই বোঝাতে এলাম।তোমার জায়গায় অন্য ছেলে হলে বোঝানোর দরকার পড়তো?তুমি জানো আমি কি করতাম তখন।মুখে না বলে আমার হাত দ্বারা আলোচনা করতাম।”
উমাইরের কণ্ঠ বড্ড গম্ভীর। দাঁতে দাঁত চেপে বলা প্রত্যেক বাক্যে যেনো হুমকি আর হুশিয়ারি।
তুনাজ ঘাবড়ে যায়। এসির মাঝেও সে ঘেমে কুলহীন সাথে উমাইরের ভয়ংকর নজর।সুদর্শন লোকটা রেগে গেলে আঁখিদ্বয় তার রক্তিম হয়,কপালের মধ্যেকার রগ হয় ভাসমান।তুনাজ স্পষ্ট বুঝে নেয়,উমাইর তাহুরাকে পছন্দ করে।উহু,পছন্দ না ভালোবাসে।

ভীত সুরে তুনাজ মুখ খুলে,
–“আপনি…আপনি তাহুরাকে পছন্দ করেন?বা ভালোবাসেন?”

–“যেটাই করি,সেই মেয়েটা শুধু আমার।নজর দেওয়া নিষিদ্ধ।তুমি পরিচিত তাই বসে আলোচনা করলাম।চ্যাপ্টারটা এইখানে ক্লোজ করছি।ফের যেনো তোমার বাড়ির কেউ বা তুমি তাহুরার কোনো বিষয়ে কথা না বাড়াও।”
আবারও এক রাশ গম্ভীর মনোভাব প্রকাশ করে উমাইর।পরক্ষণে চেয়ারে হেলান দেয় সে।অধর বাঁকা করে,
–“আত্মীয় বলে একবার আলোচনার সুযোগ পেয়েছো।দ্বিতীয়বার পাবে না।শেষ কথা হলো,আমাদের আলোচনা আমাদের ভেতরে থাকবে।মামী বা ফ্যামিলির কেউ যদি জানে,এর ফল তুমি ভোগ করবে।আমি চাই না,আমার তাহুরাকে কেউ কটু কথা শোনাক বা জ্বালাতন করুক।”
বৃদ্ধাঙ্গুল ছুঁয়ে দেয় উমাইর তার নিজ কপালে।

তুনাজ উঠে দাঁড়ায়।সে ভারসাম্যহীন।তাহুরার প্রতি উমাইরের চাহিদা আছে জানলে,মেয়েটার দিকে দ্বিতীয়বার ফিরে দেখতো না।সামান্য ঝুঁকে তুনাজ।গড়গড় শব্দে আওড়ায়,
–“আজ থেকে আমি ভুলে যাবো তাহুরা নামের কাউকে আমি চিনতাম।”

–“দ্যাটস গুড।”
উমাইর নিজ বুকে দুহাত ভাঁজ করে হাসিমুখে।তবে চাহনি তার এখনো করুণ।
–“আমি যাই তবে।”
তুনাজ শার্টের হাতায় ঘাম মুছে।
–“অবশ্যই যাও।একাকী মিটিং পরের বার যেনো না হয়।তখন মিটিং রেস্টুরেন্টে না হয়ে,কই হবে সেটা তোমার জানা আছে।”
উমাইর রুঢ় হাসে।

–“জ্বী, উমাইর ভাই।”
তুনাজ পায়ের গতি বাড়ায়।হতদন্ত ভঙ্গিতে একপ্রকার ছুটে পালায়।

উমাইর রেস্তোরায় একা বসে।মেজাজ নিয়ন্ত্রণের জন্যে কফি অর্ডার দেয়।এরমাঝে তার মোবাইলে বিপ বিপ শব্দ আসে পরপর।স্ক্রিনে “মা ” ভাসমান।মেঘলা বেগম নিশ্চয় ব্যাপক চিন্তিত।উমাইর ফোন রিসিভ করে।পরিস্থিতির স্বাভাবিকতা সম্পর্কে জানায়।মেঘলার যেনো জান বাঁচলো।

মায়ের সাথে কথা শেষে উমাইর ঢু মারে তাহুরার চ্যাটে।মেয়েটা চারটা মেসেজ দিয়েছে চার সময়ে। উমাইরের কথা মনে পড়ছিলো বুঝি?

তাহুরার মেসেজের বিপরীতে উমাইর পাঠায়,
–“সমস্যা কি? এতো মেসেজ দিচ্ছো?”

মিনিট এক পরে তাহুরা উত্তর পাঠায়,
–“সরি।আসলে আপনি দুপুরে রেগে ছিলেন।তাই ভাবলাম জিজ্ঞাসা করি,এখনো কি রেগে আছেন?”
–“না।”
উমাইর ছোট্ট অক্ষরে লিখে।

–“আচ্ছা।”
মেসেজ পাঠিয়ে তাহুরা আবারও প্রশ্ন করে,
–“উম,একটা প্রশ্ন হচ্ছে; আপনি আজ বললেন কালকে আপনি এমন কিছু করবেন যেনো আমি অজ্ঞান হবো।কি করবেন?”
উমাইর তাহুরার প্রশ্ন দেখে হাসে।সে জানতো মেয়েটা এই বিষয় নিয়ে দ্বিধায় ভুগবে শতভাগ।দ্বিধায় যখন ভুগছে তাহুরা,সেই তাড়নায় উমাইর তাকে আরো জ্বালাতন করার সিদ্ধান্ত নিলো,
–“করবো কিছু একটা।সহ্য হবে তোমার?”

–“কিজানি!”
তাহুরা অবাক হয় কিঞ্চিৎ।
–“কিজানি বলে লাভ নেই।আমি ভেবে নিয়েছি কি করবো।আর একটা কথা, কাল যেনো খোলা চুলে ঘুরতে না দেখি তোমাকে।দুই ফ্যামিলির একসাথে বিরাট প্রোগ্রাম।যতো ঢং করার আমার সামনে করবে,অন্যের সামনে না।”
মেসেজ পাঠিয়ে মোবাইল থেকে নজর সরায় উমাইর।ওয়েটার তার সম্মুখে কফি রাখে।

আবারো মোবাইল ভাইব্রেট করলে উমাইর দৃষ্টি দেয় মোবাইলে।

তাহুরা জবাব পাঠিয়েছে,
–“আমি কেনো আপনার সামনে ঢং করবো?আমি এমন মেয়ে না।”
–“আমার সামনে ঢং করতে বাধ্য তুমি। গাঁধী একটা।”
উমাইর অধর চেপে হাসে।মেয়েটাকে হেনস্তা করা খুব সহজ আর মজাদার।তবে,তাহুরাকে হেনস্তা বা তার মজা নেওয়া কেবল উমাইর নিজের জন্যে বরাদ্দ রেখেছে।অন্য কারো সেথায় নাক গলানোর ভূমিকা উমাইর রাখেনি।

কফির কাপে চুমুক দেয় উমাইর।নজর এখনো স্ক্রিনে সীমাবদ্ধ।অনেক্ষণ তাহুরার নামের নিচে টাইপিং দেখাচ্ছে।মেয়েটা কি এতো লিখছে?মিনিট দুই পর তাহুরার উত্তর আসে,
–“আমি তাহুরা,গাঁধী না।”

অধর জোড়া প্রশস্ত হয় উমাইরের।বোকাটা এতক্ষণ চিন্তা করে এই মেসেজ পাঠিয়েছে!স্ক্রিনে আঙুল বোলায় উমাইর।মেসেজের জবাব না দিয়ে আপনমনে আওড়ায়,
–“আমার গাঁধী তুমি।আমার সুন্দরী গাঁধী।”

উমাইর কফির কাপে শেষ চুমুক দিয়ে রেস্তোরা হতে বেরোয়।বাইকের হেলমেট হাতে নিয়ে ভাইকে ফোন দেয়।জুবায়ের ফোন রিসিভ করে সহসা বলে,
–“কিরে তোর খেলানো শেষ?”
–“হুম।লেভেল ওয়ান ছিলো।খেলা কতদূর?”
উমাইর জবাব দেয়।
–“আরেক ম্যাচ স্টার্ট হবে।আসবি?”

–“আসছি। বিশ মিনিট।”
ফোন কাটে উমাইর।হেলমেট পড়ে। কালো কাঁচের আড়ালে কিছু দৃশ্যমান নেই।উমাইর মোবাইল পকেটে পুরে।ভারী মোটর বাইক নিমিষে নিজ আয়ত্বে আনে সে।অতঃপর সহজ রাস্তায় না গিয়ে,গাড়ি অন্য রাস্তায় নেয়।তাহুরাদের বাড়ির সম্মুখের রাস্তা নির্ধারণ করে সে।

গতি অনেকটা বেশি মোটর বাইকের।বড়, ছোট গাড়ির মধ্যখানে বেশ দক্ষতার সহিত মোটর বাইক এগিয়ে যাচ্ছে। আট মিনিটের মাথায় পৌঁছেও যায় তাহুরাদের বাড়ির গলিতে।গতি এখন মন্থর।তাহুরাদের গেইটের বরাবর আসলে ঘাড় ফেরায় ডানদিকে।তাদের প্রধান ফটক খোলা।ভেতরে একটা প্রাইভেট কার।হয়তো কোনো আত্মীয় আসলো।
কাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে দেখলো না।উমাইর ব্যথিত হয় না, কষ্টও পায় না।অধরে প্রশান্তির হাসি ঝুলিয়ে ভাবে,
–“তোমার বাড়ির সামনেও যেনো তোমার অস্তিত্বরা আমাকে গ্রাস করছে।”

ফের মোটর বাইকের বেগ বৃদ্ধি করে উমাইর। ম্যাচ শুরু হতে বেশি সময় বাকি নেই।
————-
দুই পরিবারের আত্মীয়ের সংখ্যা অসংখ্য।বড় ছেলে,মেয়ের বিয়ে বলে কথা।কাউকে দাওয়াতে বাদ রাখেনি উভয় পরিবার।মুন্সী সমান টাকা ইনভেস্ট করেছে।যদিও একটু টানাপোড়ার জোগাড়,তাও থেমে নেই সে।ছেলেমেয়ের হলুদের অনুষ্ঠান একসাথে হবে বলে ক্লাবের ভাড়া অর্ধেক নিজ থেকে দেয় মুন্সী।মেয়ের জন্যে সব মেনে নিচ্ছে মানুষটা।তাহুরাদের পরিবার প্রথমে আসে কনভেনশন হলে।এরপর ধীরে ধীরে আত্মীয়ের সংখ্যা বাড়ে।ভেতরকার ডেকোরেশন দেখে মুন্সী সাথে তাহুরা এমনকি বাকি পরিবারবর্গ সমানে অবাক।নিশ্চয় ছেলে পক্ষ গোপনে টাকা খরচ করেছে এমন আয়োজনে।যেটা মুন্সীকে জানানো হয়নি।

আলোর ফোয়ারা চারিদিকে।অত্যন্ত সুন্দর ডেকোরেশন।কৃত্রিম চেরি ব্লোসমের গাছের দেখা মিলল।সেথায় ঝুলছে গোলাপী আভা।কি মনোরম,কি আকর্ষণীয়!

তাহুরা বিস্ফোরিত নজরে চারিদিক দেখছে।অনুষ্ঠানে এমন আয়োজন হবে কস্মিককালে ভাবেনি। স্টেজ থেকে শুরু করে পুরো এলাকাজুড়ে কেবল কৃত্রিম আলো,গাছ,ফুল,কাঁচের সমাহার।তাহুরা নিজ হলুদ রঙের শাড়ির কুঁচি ধরে সাবধানে।আপুর সাথে ভারী সাজ দিয়েছে সে।মুখে একটু অস্বস্থি লাগলেও,ব্যাপক মানিয়েছে মেয়েটাকে।সোনালী রঙের হিজাবে তাহুরাকে আরো জীবন্ত লাগছে।অধরে লেপ্টে তার খয়েরী রঙ।আলাদা দ্যুতি জ্বলজ্বল করছে মেয়েটার সত্তা হতে।

মুন্সী মেয়ের সৌন্দর্য দেখে শুকরিয়া আদায় করে।পাশে দাঁড়ানো সহধর্মিণীকে বলে,
–“তাহুরাকে গিয়ে সূরা পড়ে ফুঁক দিয়ে আসো।আমার বাচ্চাটার উপর কারো কুনজর আল্লাহ্ না পড়ুক। সুনেরার জন্যেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করো।”

শিউলি মেয়েকে মন ভরে দেখে।বড় মেয়েকে হলুদের বৌ-রুপে দেখে আঁখিতে জল জমে।ধীরে হেঁটে ছোট মেয়ের কাছে যায় শিউলি।মাকে দেখে খুশি মনে তাহুরা বলে,
–“কি সুন্দর লাগছে চারিদিকে তাই না,মা?”
শিউলি দোয়া পড়ে ফুঁক দেয় মেয়ের সত্তায়,
–“হ্যাঁ।তোর সইরা আসবে না?”
–“আজকে আসবে না, মা।পরশু দিন বিয়েতে আসবে।”
তাহুরা জবাব দেয়।
–“আচ্ছা।সাবধানে থাকিস।আমি আত্মীয় সামলাই।”
মায়ের উত্তরে তাহুরা মাথা নাড়ায়।মা চলে গেলে আবারও তার স্নেহময় দৃষ্টিতে পারিপার্শ্বিক দিক অবলোকন করে মেয়েটা।
——————–
নিজ প্রাইভেট কার হতে উমাইর বেরোয়।সবার শেষে এসেছে সে।অনুষ্ঠানের জন্যে কেক আনতে সে দেরী করে। উমাইরের জন্যে এখনো বর,কনে স্টেজে উঠেনি আনুষ্ঠানিকভাবে।উমাইর গাড়ির ড্রাইভিং সিটের পাশের দরজা খোলে।তার ধারে আজিম দাঁড়িয়ে।উনি মূলত কেক ভেতরে নিবেন।উমাইর দরজা খুললে প্রবীণ লোক কেকের বাক্স নিয়ে হলের দিকে এগোয়।

উমাইর নিজ পাঞ্জাবি সমান্তরাল করে।জেল সারা সেট করা চুলে আলতো হাত বুলায়। গালে চাপ দাড়ির নকশা নতুন। ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা।ফর্সা ত্বকে হালকা সবুজ রঙের পাঞ্জাবি বেশ আকর্ষিত করলো উমাইরের তনুকে।হাতের কব্জিতে সটান আটকে তার কালো ঘড়ি।বন্ধুদের একে একে ফোন দিয়ে খবরাখবর জানছে।কতটুক পৌঁছালো তারা!

সিঁড়ি ভেঙে মাত্র কনভেনশন হলের প্রাণে এসে দাঁড়িয়েছে উমাইর। তখনই তার ভেতরকার সত্তা নড়ে উঠে।চক্ষুদ্বয় স্থগিত হয়। বক্ষদেশের গতি অস্বাভাবিক।শরীরের ভেতর অদ্ভুত তাপ।তার শরীরটা কি জ্বলছে?
উমাইর হতে কিছু ফুট দূরত্বে অবস্থানরত তাহুরা। শাড়িতে মোড়ানো।মার্জিত রূপ।চেহারার সৌন্দর্যের বিস্তৃত কোনো বৃত্তান্ত নেই।মেয়েটা অপরূপ,মোহনীয়।খুব করে হাসছে।ভারী মেকাপে গোলাপী আভার গাল জোড়া আরো গাঢ় দেখাচ্ছে।বুকের গতি এতটা অস্বাভাবিক হলো,উমাইর নিজ কানে তা শুনছে।

আটকে রইলো সম্পূর্ণ সে তার রূপসীতে।তার মোহে গ্রাস হলেও,অন্তঃস্থলে ঈর্ষায় মত্ত হয় মানব।মানা করেছিল এমন দুর্দান্ত ভাবে না হাসতে।উমাইর এমনটা ছিলো না কখনো।তবে,তবে,তবে…এই এক সরল মেয়েটার জন্যে নিজের অন্যান্য গুণের সাথে ঈর্ষার গুণ অর্জন করেছে।

–“বাবা,সবাই বুঝে যাবে তুমি তাহুরাতে মগ্ন।নজর ফেরাও।”
মায়ের দুষ্টুমি ভরা কণ্ঠ।উমাইর দৃষ্টি ফেরায় না।গরম ভাব বাড়ছে তার তনুয়,
–“ওকে আমি এমন খিলখিল হাসতে মানা করেছিলাম ভরা আসরে।ওর বাসায় হাসুক,আমার বাসায় হাসুক আমার সমস্যা নেই।কিন্তু…সবার সামনে কেনো হাসছে?প্রস্তাব আসার জন্যে?”

মেঘলা ছেলের ঈর্ষা দেখে অবাক না হয়ে পারে না। যেই ছেলের নম্র ব্যবহার,আবার জিদ, রাগ,মেয়েদের প্রতি সম্মানের গুণ দেখেছে;সেই ছেলের এমন ঈর্ষান্বিত রূপ আশা করাটা খুব অপাক্ষিক ছিলো।মেঘলা মুখে হাত দেয়।অবাক হয়ে বলে,
–“আব্বা তুমি জেলাস?”
–“জানিনা।ওকে এইভাবে সবার সামনে নিজের সুন্দর হাসি দিতে মানা করো।আমি মানা করলে না তোমার পছন্দ হবে না মেয়েটার।”
উমাইর ক্রোধে দগ্ধ আবার মেয়েটাকে মত্ত।অন্য পাশে যেতে যেতে তাহুরাকে ভস্ম করে উমাইর নিজ দৃষ্টি দ্বারা।

উমাইর আসার পর সকলে তাড়াহুড়ো করে কনে-বরের স্টেজে উঠার প্রক্রিয়ার জন্যে।ভাই বোনেরা মিলে পাশাপাশি দাঁড়ায় তাদের। তাহুরা তার বোনের নিকট,সাথে আয়মা। সেইদিকে দাঁড়িয়েছে তাহুরার চাচাতো ভাইয়েরা।খানিক নড়চড় হলে তাহুরার গায়ের সাথে ঘেষবে সহজে।উমাইর দাঁড়ায়নি প্রথমে।কিন্তু,এহেন দৃশ্য দেখে থামাতে পারলো না সে নিজেকে।

গটগট ভঙ্গিতে হেঁটে যায়।হুংকার ছাড়ে ভদ্রতা বজায় রেখে,
–“মেয়েরা ভাবীর পাশে দাঁড়ালে বেটার।”

তাহুরা সবে লক্ষ্য করলো উমাইরের অবয়ব।সুঠামদেহী এই মানবে গলে যায় তাহুরার নরম অন্তর।কি আকর্ষণীয় লোকটার আঁখি,অবয়ব।অস্থির হয়ে যায় মনের গহীন।ঘেমে উঠে তার নাক।লোকটা কবে এলো?তাহুরা উমাইরকে দেখতে ব্যস্ত হলেও, উমাইরের নির্দেশে সবাই নিজ অবস্থান ঠিক করছে।তাহুরা আলতো ভাষায় উমাইরকে বলে উঠে,
–“কখন এসেছেন আপনি?”

নজর মিলে দুজনের।উমাইরের দৃষ্টিতে অন্য মাতোয়ারা স্পষ্ট।কি বুঝালো,তাহুরা বুঝলো না।তবে অবাক হলো,উমাইর তাকে জবাব দেয়নি বলে।মুহূর্তে চঞ্চলতা ছেয়ে যায় তাহুরার হৃদয়ে।লোকটা তার সাথে কথা বলবে না?কেনো? কি করেছে তাহুরা?

সবাই ঠিক হয়ে দাঁড়ালে ক্যামেরাম্যান নির্দেশনা দেয় সম্মুখে আগানোর।তাহুরা এখনো উমাইরের পানে চেয়ে।একটা বাক্যের অপেক্ষায়।সমাপ্তিতে উমাইর বেশ ব্যক্তিগত ভঙ্গিতে তাকে চিবিয়ে জবাব দেয়,
–“বেশি উড়লে সবার সামনে পাখা ভাঙবো।”

খানখান করে উঠে পুরো শরীর।কথা তো কথা নয়,যেনো তীর।সোজা এসে হানা করে তাহুরার বক্ষ মাঝারে। ভুল করে তাহুরা কিসে গরমিল করলো?
মনের ভাবনার সাথে পাল্লা দিয়ে সম্মুখে অগ্রসর হয় সে সকলের তালে।অন্যমনস্ক হওয়ায় শাড়ি পায়ের নিচে আসে খানিকটা।পড়তে নিলে নিজেকে সামলে নেয়।

তার দৃশ্য উমাইরের নজরে আটকালে মেজাজ চটে তার।ক্ষিপ্ত হয়ে আওড়ায়,
–“মাথামোটা।”
.
কথায় বলে নিজ পারিবারিক অনুষ্ঠানে নিজের খাওয়ার সুযোগ হয় সবার শেষে।তাহুরার বেলায় একই।মেয়েটা জড়তার সাথে আত্মীয়দের সামলাচ্ছে। উমাইরের দিকের আত্মীয় তারা দেখছে।ক্ষুধা ভিড় করে তাহুরার উদরে।দুপুরের পর কিছু খাওয়া হয়নি।তার উপর এতো খাটনি। মানুষও বেড়েছে অনেক।
একজনকে দেখলে আরেকজনকে খুঁজে পাওয়ার দায়।বিশাল এরিয়া বলে কথা। উমাইরের দিকের আত্মীয়ের সংখ্যা বেশি।

ক্ষুধায় তার মাথা ঘোরার জোগাড়। বোনেরা খেতে আরো দেরী আছে,সবাইকে ফেলে খেতে বসতে মন সায় দিচ্ছে না মেয়েটার।তার উপর মন খারাপের পরিমাণ আকাশ ছুঁয়ে।উমাইর তাকে অবজ্ঞা করছে।কি দোষ করেছে সে,কথাটা জিজ্ঞাসা করতে দুইবার উমাইরের নিকট গেলে তাকে না দেখার ভান করে উমাইর।শেষবার তো উমাইরের বন্ধু রনি তাহুরার উপস্থিতিতে বলেছিলো,
–“উমাইর,তাহুরা হয়তো কিছু বলতে চায়।”

বিনিময়ে উমাইর জবাব দেয়,
–“তোকে ছাড়া কাউকে দেখছি না।”

কি অপমান!তাহুরাকে একেবারে গায়েব করে দিলো?
মন খারাপের পাল্লা ভারী অত্যন্ত।তাহুরা বাবাকে খুঁজে।মায়ের কাছে জানে,তার বাবাকে বাসায় পাঠিয়েছে উমাইর।বাবার শরীর এতো মানুষের ভিড়ে খারাপ হচ্ছে।

উমাইর তার পরিবারের জন্যে উজাড় করছে সবটা,আর সেই পরিবারের ছোট মেয়েকে করছে তুচ্ছতাচ্ছিল্য।কান্না পায় তাহুরার।শরীর টলছে।মানুষ যাকে ভালোবাসে তার এক বিন্দু এড়িয়ে যাওয়াটা যেনো বিষের চেয়েও বিষাক্ত।
আবারো নজর হন্য হচ্ছে উমাইরকে খুঁজতে।তৎক্ষণাৎ বেজে উঠে মুঠোফোন।উমাইরের নাম, নাম্বার,ছবি দৃশ্যমান।তাহুরা কিছু বলার পূর্বে উমাইরের গম্ভীর স্বর শুনতে পায়,
–“পার্কিংয়ে আসো।ফাস্ট।”

উমাইর তাহুরার সাথে কথা বলেছে এটাই যেনো সৌভাগ্য তার।মাকে খুঁজেছে জানানোর জন্যে।পায়নি।তবে মেঘলা বেগম তাকে দেখে এগিয়ে আসে,
–“উমাইরের কাছে যাও।আমি তোমার মাকে সামলাবো।”
–“কাজ ছিলো আন্টি?”
তাহুরা জানতে চায় কেনো উমাইর ডাকছে তাকে!
–“উমাইর রেগেছে কেনো জানি।বলেনি আমাকে।এইদিকে আমি দেখছি, সামলাচ্ছি।”

মাথা নাড়ায় তাহুরা।মেয়ে পক্ষ কি ভুল করেছে এই নিয়ে তাহুরার শঙ্কা।নাহলে উমাইর রাগলো কেনো?হলের মুখে আসলে রনি তাকে এগিয়ে নেয়,
–“আসো ছোট আপু।”

বিনা কথায় তাহুরা তাকে ফলো করে। পার্কিংয়ে নিরবতা।বন্ধুরা পার্কিংয়ের সম্মুখে দাঁড়িয়ে।সেখান হতে উমাইর তার হাত ধরে।টেনে নিয়ে যায় সারির পর সারির পিছে উমাইরের গাড়ির দিকে।তাহুরা তার লম্বা কদমের সাথে পাল্লা দিতে হিমশিম।তাও এগিয়ে যাচ্ছে।হাফ ছুটে প্রশ্ন করে,
–“আপনি রেগেছেন কেনো?”

উমাইর গাড়ির পেছনের দরজা খুলে।তাহুরাকে বসায়।ফের তাহুরাকে আরো সরিয়ে নিজে বসে।শেষ প্রশ্বাস ঘন।বুকের উঠানামা দ্রুত।ভয়ে আড়ষ্ট তাহুরা।পার্কিংয়ের লাইটে গাড়ির ভেতরকার দৃশ্য আবছা হলেও স্পষ্ট।তবে বাহির থেকে দেখার জো নেই।গাড়ির কাঁচ কালো।
তাহুরা অধর ভেজায় জিহ্বার সাহায্যে।কি হয়েছে?
শাড়ি খাঁমচে ধরে সে।মাথা নিচু করে প্রশ্ন করে,
–“এই যে,আপনি এমন করছেন কেনো?আমরা কোনো ভুল করেছি?সরি ভুল করলে।”

উমাইর চোখ খুলে।ঘুরে বসে তাহুরার নিকট।দৃষ্টি তার এলোমেলো।তাহুরা বুঝছে?বুঝছে না।
তাহুরা ছলছল দৃষ্টিতে মাথা উচুঁ করে তাকালে উমাইর আরো নিকটে যায়।ফলস্বরূপ আরেকটু পেছালো তাহুরা,
–“এই যে,কি হয়েছে?”

–“একদম এমন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাবে না।ম”রে যাবো আমি।”
উমাইরের কণ্ঠে মাদকতা।নিজেকে হারানোর মাতোয়ারা।

তাহুরা দৃষ্টি নামিয়ে ফের তাকায়।উমাইরের নজরটা তাহুরাকে ভেঙে ছুঁড়ে ছারখার করছে।মাথাটাও বড্ড ঘোরাচ্ছে।প্রেসার লো হচ্ছে মেয়েটার।

–” বললাম না তাকাতে আমার দিকে।”
তাহুরা উমাইরের কথা শুনে মাথা ঘোরালে,উমাইর তার হিজাব টানে,
–“শেষ করেছো আমাকে তুমি।জাস্ট শেষ।”

তাহুরা হিজাবের টানে তাকায় উমাইরের পানে।লোকটার সুঠাম দেহ তার অনেকাংশ জুড়ে ঝুঁকে।
–“তোমার বোনের বিয়ে,অবশ্যই তুমি সুন্দরভাবে সাজবে,সব করবে।কিন্তু, আমার সহ্য হচ্ছে না।বুকের জ্বালায় দম বন্ধ হচ্ছে।আমি আগে কখনো এমন ছিলাম না।তুমি আমাকে এমনটা হতে বাধ্য করেছো।”
খানিকটা অগ্রসর হয় উমাইর।ততক্ষণে তাহুরা গাড়ির দরজায় লেপ্টে হিজাব সরে।উমাইর দৃষ্টি সংযত করেও লাভ হয়নি।মেয়েটার আকর্ষণীয় বক্ষাংশ আঁখিতে বন্ধী।মাথায় হাত রেখে আফসোস করে,
–“আহ, শিট!”

পরপর উমাইর তাহুরার পিঠের নিচে হাত রেখে নিজের নিকট টানে।কপালে কপাল ঠেকায়।আতঙ্কিত তাহুরা, উমাইরের গরম নিঃশ্বাসে দিগ্বিদিক হারায়। স্বপ্ন দেখছে কি সে?উমাইরের মাতোয়ারা শ্বাসরুদ্ধ কন্ঠও ভেসে আসে তার কানে,
–“প্লিজ,অন্যের সামনে তুমি প্রাণখুলে হাসবে না রূপসী।আমার…আমার জাস্ট দম বন্ধ লাগে তখন।”
তাহুরা শুনছে কি শুনলো না নিজের আন্দাজে নেই।তার শরীর লাগামহীন বদ্ধ গাড়িতে,উমাইর কাছাকাছি।তাহুরার দুইহাত উমাইর নিজ বক্ষে ঠেকিয়ে রাখলো।
–“আচ্চ…আচ্ছা।কিন্তু,এখন আমি উপরে যাবো।খারাপ লাগছে।”
আকুতি ভরা কণ্ঠ।

উমাইর চেয়েছিলো ভালোবাসাময় শাস্তি দিতে তাহুরাকে।অতঃপর লক্ষ্য করে মেয়েটা নেতিয়ে যাচ্ছে অন্য কারণে।
উমাইর তার সুন্দরীর হাত ধরে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। মেয়েটাকে ভালোবাসার একটা স্পর্শ দিবে ভাবলেও,সামলে নেয় উমাইর নিজেকে।তাহুরার আঁখিতে ভয় স্পষ্ট।গাড়ি থেকে বেরুলে উমাইর লক্ষ্য করে তাহুরা নিজ হতে উমাইরের প্রশস্ত বাহুতে হাত রাখে।মাথা ঝুঁকিয়ে উমাইর লক্ষ্য করে তাহুরার পদক্ষেপ ধীর।তার হাতের উপর হাত বুলায় উমাইর।ঐযে দেখা যাচ্ছে রকি,রনিকে।

–“যা বলেছি মনে রাখবে।নাহলে আমি রাগ করবো আবারও।বাহিরের কারো সাথে বা কারো সামনে বেশি হাসবে না,ভাব করবে না। নাহলে,আমি এমন রাগ করবো তুমি সহ্য করতে পারবে না।মেজাজ বিগড়াবে না আমার।”
উমাইর হুশিয়ারি দেয় ফের।

তাহুরার সবকিছু এলোমেলো লাগে,মনে হচ্ছে গভীর ঘুমে সে স্বপ্ন দেখছে।অথচ তার প্রেসার ফল করেছে খাবারের ঘাটতি আর ক্লান্তিতে।
–“স…সরি…”
বলতে বলতে তাহুরা নিজ ভারসাম্য হারায়।উমাইরের বাহুতে রাখা হাত ঢলে পড়তে নিলে উমাইর তার কোমর জড়িয়ে নেয়।বিচলিত হয় মুহূর্তে।গলা উঁচু করে রনিকে বলে,
–“রনি পানি আন।”

পরক্ষণে উমাইর কোলে তুলে তাহুরাকে।মেয়েটা তার বুকে লেপ্টে যায়।অজ্ঞান হ‌ওয়ার কারণ নিশ্চয় উমাইর নয়।বরংচ উমাইর তাহুরার নিস্তেজ ভাব লক্ষ্য করে, গাড়িতে তার গালে আলতো স্পর্শ করতে গিয়ে ফিরে আসে। পুনরায় তাহুরাকে গাড়ির দিকে নেয় উমাইর।চোখমুখ শক্ত হয় তার।গাড়ির পিছের সিটে শোয়ানো অবস্থায় আপন সুরে সে বলে উঠে,
–“আমি ছাড়া অন্য কেউ বা অন্যকিছু যদি জ্ঞান হারানোর কারণ হয় তাহু,আমি শুধু তাণ্ডব চালাবো।”

পরপর তাহুরার শুকনো মুখে হাত বুলায় উমাইর।রনি,রকি পানি নিয়ে আসছে।তাহুরার কপালে তাদের অনুপস্থিতে অধর স্পর্শ করে উমাইর,
–“তোমার ভালো,খারাপ,সুখ,দুঃখ সবকিছুর কারণ শুধু উমাইর।আমি ব্যতিত বাকি সবাইকে তোমার জন্যে বিষাক্ত ঘোষণা করলাম,জান।”

চলবে ……..

#রেখেছি_তারে_মন_পিঞ্জিরায়
লেখনীতে: সালসাবিল সারা
পর্ব-২০
______________________
–“তাহুরাকে পছন্দ আমার।আমি উমাইর যা পছন্দ করি সেটা আমার করে দম ফেলি।বলতে পারেন,আমি তাহুরাকে ভালোবাসি।”
সম্মুখে মুন্সী।তার আঁখি জ্বলন্ত চেরাগের লাহান দপদপে। উমাইরের চালচলন সুবিধার না।সে চঞ্চল।তাহুরা মুখে হাত রেখে দাঁড়িয়ে।ঘটনা কোনদিন মোড় নিলো বুঝতে মেয়েটা হিমশিম।শরীরে অজানা ভার।কি হচ্ছে না হচ্ছে বুঝলো না।আয়ত্বের বাইরে যেনো সব।মুন্সীর অবস্থা বেগতিক।এখনই হুংকার ছাড়বে সে।জানে তাহুরা।তার বাবার ব্যবহার জানা আছে।এরপর কি করবে উমাইর?বাবাকে মারবে?কষ্টে কেমন অন্তরটা কেঁপে উঠে।তাহুরা উমাইরকে ইশারা দেয়,ছেলেটা দমলো না।উল্টো ভয়ংকর দৃষ্টিতে ভস্ম করে তাহুরাকে।

–“আমি মেয়ে দিবো না আপনাকে,উমাইর।”
মুন্সীর ক্ষিপ্ত সুর।তাহুরার প্রাণ নাশ হবে হবে ভাব।বাবা কেনো এমনটা বললো?উমাইর ছাড়া কোনো পুরুষের কথা মন ভাবেনি।সে ব্যতীত অন্য লোকের কিভাবে হবে তাহুরা?মাথা ঘুরে উঠে।চারপাশ আঁধার।

ঝাপসা নজরে দেখে উমাইর তার বাবার দিকে তেড়ে যাচ্ছে।তাকে থামানোর কেউ নেই।যেনো এক মরুভূমিতে তাদের তিনজনে লড়াইয়ের ব্যবস্থা করা হলো।তাহুরা চিৎকার দেয়, উমাইরের পা ধরে। ফুঁপিয়ে বলে,
–“আমার বাবাকে মারবেন না।আল্লাহ্ সহ্য করবে না,আমিও না।”
উমাইরের বলিষ্ঠ দেহ নিমিষে ঝুঁকে।বাহু টেনে উঠায় তাহুরাকে।তীব্র ব্যাথায় কুঁচকে যায় মেয়েটার স্নিগ্ধ মুখশ্রী।পরপর উমাইর চেপে ধরে তাহুরার কোমর।কি বিষাক্ত পীড়া!কোমরের হাড় ভাঙবে নিশ্চয়?

তাহুরার মৃদু আর্তনাদ শোনা যায়,
–“স্যার,ছাড়ুন আমাকে।ব্যথা লাগছে।”

–“তুই অন্য ছেলেকে বিয়ে করবি?তোর বাপ অন্যের সাথে তোকে সংসার করতে পাঠাবে?আর তুই?তুই সায় দিচ্ছিস?এই তুই জানিস না, আমার জীবনে তুই কি?”
কণ্ঠ বাজের শব্দের সমার্থক।তাহুরার কানে সেই ধ্বনি বিষ ঢাললো নিমিষে।মস্তিষ্ক স্থগিত।তাহুরা কম্পনরত হাত উমাইরের বুকে ঠেকায়,
–“আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না,উমাইর।”

নিজ হতে তাকে আলাদা করে উমাইর।

পরপর উমাইর কি বললো শুনলো না সে।আচমকা ভূমি কাঁপছে।তাহুরা বসে পড়ে দ্রুত।হঠাৎ কি বলো বুঝলো না।প্রচণ্ড ঝাঁকিতে সব ঝাপসা হয়।

ধীর ঝটকি অনুভব করে সে নিজের তনুতে।সাথে এক স্নেহ সমৃদ্ধ সুর,
–“তাহু,ঠিক আছো?চোখ খুলো মেয়ে?”

পিটপিট দৃষ্টি মেলে মেয়েটা।শরীর এখনো থেমে থেমে অস্থির হচ্ছে।নিজেকে আবিষ্কার করে বদ্ধ গাড়িতে।ঐযে পার্কিংয়ের আলোতে দেওয়াল দৃশ্যমান।তাহুরা নিজের শরীর উঠাতে চায়।পারে না।উদরে তার বাঁধা।পিঠ ঠেকে আছে কিসে?মাথায় যন্ত্রণা।পেটে ক্ষুধারা হট্টগোল করছে।

–“তাহুরা,কথা বলো?”
আকুলতা ভর্তি মায়াময় সুর।তাহুরা বাঁক ফিরে ডানে।উমাইর! তার অবয়ব পরিষ্কার।কেমন ঘনিষ্ঠতার সাথে বসে দুইজন।
উমাইরের হাত তার উদরে লেপ্টে।তার পিঠ উমাইরের বক্ষদেশে।আঁখিদ্বয় ছানাবড়া মেয়েটার। খানিক আগের দৃশ্য কেবল দুঃস্বপ্ন ছিল!ব্যাপারখানা আয়ত্বে এলে দ্রুত সরতে চায় তাহুরা।

উমাইর নিজ হাত সরায় ধীরে।তাহুরার মাথায় হাত রাখে,
–“আস্তে উঠো।”

তাহুরা সিট হতে পা নামায়। দূর্বলতা ঘিরে ধরে।মাথাটা টলে।আতঙ্কিত সুরে আওড়ায়,
–“আমার কি হয়েছিলো?”
–“পাঁচ মিনিটের জন্যে সেন্সলেস ছিলে তুমি।ব্যাপার কি?”
উমাইর চিন্তিত।তাহুরা ফিরেনি তার দিকে।লজ্জায় মরমর সে।তখনই আবার পেটে মোচড় দেয়।খিদার আহ্বান জানায়।তাহুরা চুপ করে থাকে কয়েক সেকেন্ড।ফের বলে,
–“অনেক্ষণ কিছু না খাওয়ায়,প্রেসার লো হয়েছিল হয়তো।”

–“হোয়াট?”
হুংকার ছাড়ে উমাইর।নিজে গাড়ি থেকে বেরিয়ে তাহুরাকেও টেনে বের করে।আলোতে মেয়েটার ভীত মুখ অবলোকন করলেও,উমাইর তার কঠোর ভাব জারি রাখে,
–“নাটক করো না খেয়ে?তুমি নায়িকা?খাবে না
আর অজ্ঞান হলে নায়ক তোমাকে উঠিয়ে ডাক্তারের কাছে নিবে?আমি তোমাকে মাত্রই গাড়ি থেকে ফেলতে নিচ্ছিলাম!ভাগ্যিস উঠেছিলে।”

সমান্তরাল ভ্রু জোড়া বক্র হয় তাহুরার।সত্যি উমাইর তাকে ফেলে দিতো?কই?সে তো এমন কিছু অনুভব করেনি! বরং উমাইরকে,তার স্পর্শকে,চিন্তিত সুরকে অনুভব করেছে।তাহুরা ভীত কণ্ঠে শুধায়,
–“আপনি…আপনি সত্যি আমাকে গাড়ি থেকে ফেলে দিতেন?”
–“ফেলে দেখানো দরকার ছিলো!”
উমাইর বাঁকা হাসে।ছেলেটা তাহুরাকে জ্বালাতন করতে ব্যাপক ভালোবাসে।

–“উমাইর!কি হলো মেয়েটার?”
পেছনে মেঘলার আওয়াজ।মহিলা চিন্তিত।সাথে আছে রকি, রনি এবং বাপ্পী।
–“তাহুরার জ্ঞান এসেছে তবে?”
বাপ্পী জিজ্ঞাসা করে।
–“মা,ওকে নিয়ে যাও। খাবার না খেয়ে অজ্ঞান হয়েছে।আর কখনো এমন হলে এই মেয়েকে আমি!”
তাহুরা নিজেকে ছাড়িয়ে মেঘলার নিকট যায়। বাকি কথা শেষ করলো না উমাইর।ভীত সন্ত্রস্ত তাহুরাকে তার বক্ষ পিঞ্জিরায় লেপ্টে নিতে লোভ জাগে হঠাৎ।মেয়েটার হিজাব নষ্ট হয়েছে,কয়েকটা চুলও বেরিয়েছে।ডাগর ডাগর আঁখি জোড়া ভীত দৃষ্টিতে ঘুরে ঘুরে উমাইরকে পর্যবেক্ষণ করে তো আবার মেঘলার দিকে ফিরে।

–“একে নিয়ে খাওয়াও।দুই প্লেট অবশ্যই।নায়িকা সাজছে নায়িকা!”
অগ্নির দহনের ন্যায় তেজ উমাইরের কথায়।তাহুরা লোকটার দিকে দেখার সাহস সঞ্চার করেও ভেতরে সেই সাহসিকতার পরিচয় দিতে পারলো না আর। পাঞ্জাবি পরিধেয় সুদর্শন লোকটার চোখের রং বদলাচ্ছে।
–“যাচ্ছি। বকবি না আর ওকে।”
মেঘলা জবাব দেয়।ভদ্র মহিলা তাহুরার কাঁধ চেপে সম্মুখে অগ্রসর হয়।

তাদের অবয়বে দৃষ্টি রাখে উমাইর। বিড়বিড় করে আপনমনে বলে,
–“বকা দিতে কে চাই?আমার বোকা রূপসীকে আদর করতে চাই আমি।হালাল আদর।”

তাহুরা মেঘলার হাত ধরে হাঁটে।দুই তলায় পৌঁছালে মেয়েটা মেঘলার হাত ধরে অনুরোধ করে,
–“আন্টি মাকে কিছু বলবেন না।মা রাগবে আমার উপর।”
মেঘলা আঙুল ঠেকায় তাহুরার চিবুকে,
–“বলবো না,মা।চিন্তা করো না।খাওয়া দাওয়ায় মন দিও।উমাইর যখন ডাকা পাঠালো আমাকে,আমি বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।”
–“সরি আন্টি।আর হবে না এমন।”
তাহুরা মাথা ঝুঁকায়।
মেঘলা তাহুরার মাথায় অধর ছোঁয়ায়,মেয়েটার এলো চুল হিজাবের আড়াল করে,
–“খেয়ে এরপর হিজাব ঠিক করবে।”
তাহুরা আলগোছে মাথা নাড়ে।

সেদিনকার মতো অনুষ্ঠান শেষ হলো প্রায় রাত সাড়ে তিনটায়।তাহুরাদের বাসায় পৌঁছিয়ে দেয় উমাইর।

বিয়ের অনুষ্ঠানের দিনে তাহুরার বাবার শরীর একেবারে বিগড়েছে।খানিক্ষণ আগে তাহুরার দুই চাচার সাথে তর্কে জড়িয়ে উনি ব্যাপক অসুস্থ হোন।সুনেরা পার্লারে সাথে কিছু আত্মীয় যায় তার সাথে।তাহুরার আত্মীয় বড়ভাই কয়েকজন রান্নার ব্যবস্থা দেখছে ভেন্যুতে।মুন্সী বেরোবে সেথায় যেতে তখনই ভাইদের সাথে বিরোধ বাঁধে।বিরোধের কারণ অহেতুক।পূর্বের পারিবারিক সমস্যা টেনে এই ঘটনার আবির্ভাব হয়।

তাহুরা তাদের সামনে কিছু বলতে পারলো না।কেবল বাবার অপমানে চোখের পানি বিসর্জন দেয়।সেই মুহূর্তে আসে ইমনের বাবা এবং শিউলি।ভদ্রলোক এসে চিৎকার করে,
–“গাড়িতে উঠাও জলদি।কেনো বসে রাখলে এতক্ষণ?”
শিউলি নিজেকে সামলে নেয়।মহিলার মনোবল অনেক।স্বামীকে অপদস্ত করার সময় না থাকলেও ঘটনা দ্রুত শুনে নেয় বাকি আত্মীয় হতে।

তাহুরাকে জড়িয়ে নেয় নিজ বুকে।ঘটনা শুনে শিউলির ক্রোধ আকাশসম।তাহুরার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত সুরে মেয়েকে বুঝায়,
–“আমি যাচ্ছি তোর চাচাদের কাছে।তুই মামার সাথে যা হাসপাতালে।বাবা তোকে দেখলে শান্তি পাবে।”

কান্নারত তাহুরা ওড়না দ্বারা চোখের জল মুছে।বাবার হাত ধরে মামার সাথে এগোয়। বোকা মেয়েটা বাবাকে সামলাচ্ছে।মুন্সী মেয়েকে পেয়ে নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টায়।মেয়ের বিয়ের দিন ভাইদের এমন ব্যবহার সহ্যের বাহিরে।

বাবাকে নিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে তাহুরা।মামাও সাথে এসেছে।মন খুব খারাপ তার।বিয়ে বাড়ীতে রঙিন আলো জ্বললেও,মন তাহুরার বিষন্ন।সারাদিন উমাইরের সাথেও কথা হয়নি।লোকটাকে সে কারণে অকারণে বারংবার মেসেজ দিতে ভালোবাসে।লোকটা মাঝে মাঝে রেসপন্স না করলেও তাহুরা নিজ হতে তাকে মেসেজ দেয়,জানান দেয়;তাহুরা সবসময় উমাইরের কথা ভাবে।আজ মোবাইল নেওয়ার ইচ্ছেটাও নেই তাহুরার।বিছানায় শুয়ে রয় সে নিরব।বাবার সাথে বাসায় থাকবে কি সে?থাকলে থাকবে।বাবার জন্যে মন কাঁদে।বাবা আজ মেয়ের বিয়েতে যাবে না।

তাহুরা নিজ কক্ষের চারিদিকে নজর বুলায়।আজ থেকে সে একা মায়ের সাথে থাকবে এই রুমে। বোন চলে যাচ্ছে পর ঘরে।বোনের সাথে কতো রাত আনন্দে কেটেছে!মাঝে মাঝে খুনসুটি হলেও বড় বোন সব ঠিক করেছে তাদের অভ্যন্তরে।এটা সেটা কতো কি কিনেছে তার জন্যে!তাহুরা এই ঋণ কখনো শোধ করতে পারবে না বোনের।

দরজায় খুট শব্দ হয়।আঁখি রক্তিম তাহুরার।মা প্রবেশ করে কক্ষে।মুখশ্রী গম্ভীর।তাহুরাকে শুয়ে থাকতে দেখে শিউলি মুখ খুলে,
–“উঠে রেডি হো।ক্লাবে যেতে হবে।”
–“আমি বাবার সাথে থাকবো?”
তাহুরা প্রশ্ন করে।
–“কোনো দরকার নেই।রানু কাকী আছে তোর বাবার সাথে।আমিও যেতাম না।কিন্তু, সুনেরা যদি জানে তোর বাবার শরীর ফের খারাপ হয়েছে সে চিন্তা করবে।এছাড়া ঐ বাড়ির কাউকে জানানো হয়নি আজকের ঘটনা।”
শিউলি নিজ বাক্য শেষে বেরিয়ে আসে কক্ষ হতে।

তাহুরা উঠে ধীরে।আলমিরা হতে শাড়ির প্যাকেট বের করে।জলপাই রঙের সেই সুন্দর শাড়ি।মাকে ডেকে মায়ের সাহায্য নিয়ে শাড়ি জড়ায় সে কেবল।মুখে প্রসাধনীর আবরণ নেই।ইচ্ছে করছে না তার কিছুই।কেবল হিজাব বাঁধে সিলভার রঙের।অধরে লেপ্টে লিপ অয়েল।প্রাকৃতিক মোহে রূপে ষোলো আনা তাহুরা।রক্তিম নাক,গাল তার আরেকটু গাঢ় দেখাচ্ছে বাবার জন্যে বারংবার অশ্রুতে ছেয়ে যাচ্ছে বলে।

হাতের ছোট ব্যাগটা নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত ঘোষণা করে তাহুরা।

শিউলি মেয়ের সহজ সাজ দেখেও বললো না কিছু।মেয়েকে তার এইভাবে অপ্সরী মনে হয়।

বিয়ের ভেন্যুতে এলাহী কান্ড।তাহুরার এখন টনক নড়ে।হলুদের চেয়েও বিয়েতে ভারী মানুষ জনের আগমন।মেয়েদের সাজসজ্জা বিলাসিতায় ভরপুর। উমাইরদের এবং নিজেদের পক্ষের মেয়ে আত্মীয়রা বেশ পরিপাটি।সেখানে তাহুরা একেবারে সাধাসিধে রূপে।তাহুরা ঠিক করে আজ সে একদিকে বসে রবে।বোনের সাথে দেখাও তেমন করবে না।বোন হাজারটা প্রশ্ন করলে তাহুরা মিথ্যে বলতে পারবে না।

মানুষের ভিড় অসংখ্য।তাহুরার অস্বস্থি হচ্ছে।মেঘলা তাকে একা বসতে দিলো কই? হাসিখুশিতে উনি সকলের সাথে তাহুরার পরিচয় করাচ্ছে।

অধরে হাসি ঝুলিয়ে চুপটি করে মাথা নাড়ায় সকলের সম্মুখে মেয়েটা।
বান্ধুবীরা এলে তাদের সাথে কিছুক্ষণ সময় পার করে তাহুরা।তারাও অবশ্য দ্রুত প্রস্থান নেয়।তাহুরার যেখানে মন খারাপ,সেখানে অনুষ্ঠানে তারা জান খুঁজে পায়নি।বাদ বাকি তারা জানে,তাহুরার মন সম্পূর্ণ তার বাবার নিকট।

মেঘলা আবারও তাহুরাকে খুঁজে বের করে।তার হাত ধরে বলে,
–“আম্মা,তোমার আজ কি হয়েছে? এমন চুপচাপ কেনো তুমি?সুনেরা,জুবায়ের এর সাথে খেতে বসবে। আসো।”

সুনেরার কথা শুনে একটু বিচলিত হয় সে,
–“আন্টি,আপুর সাথে বিদায় বেলায় দেখা করবো।এখন না।এছাড়াও আমার খিদে নেই।”
–“মাইর পড়বে মেয়ে।আসো বলছি।হলুদে কি হলো ভুললে?উমাইর কিন্তু খুব বকবে।”

উমাইরের কথা শুনে দমে যায় তাহুরা।লোকটা কই?একটাবার দেখলো না।খোঁজ নিবে কি তার?মেঘলা উত্তর দিবে অবশ্যই।
–“উমাইর স্যার! মানে উনাকে আজ দেখলাম না।”
–“সে নিচ তলায়।তোমার আংকেলের সাথে নেতাদের সামলাচ্ছেন।বেশ বড় মাপের লোকেরা এসেছেন বলে কথা।ছেলেদের খাবারের ব্যবস্থা নিচে।”

তাহুরা নিজ ভাবনায় এমন মশগুল ছিলো ব্যাপারটা খেয়াল করেনি।চারিদিকে নজর বুলিয়ে জবাব দেয়,
–“ওহহ আচ্ছা।”
.
মেঘলার সাথে খাবার টেবিলে যায় তাহুরা।সুনেরা বোনকে পেয়ে প্রথমে বিরাট ক্ষেপে যায়।জুবায়ের সামলে নেয় তাকে।বোনের এমন সাধারণ মেকাপ দেখেও বিচলিত হয় সুনেরা।উত্তর জানতে চায়।তাহুরা বিপাকে পড়ে।সেই মুহূর্তে শিউলি এসে সামাল দেয়।জানায় তাহুরার শরীর ভালো না।সুনেরাও মেনে নেয়।অতঃপর বোনকে বুকে টেনে মাথায় হাত বুলায়।অসংখ্য বার দুঃখ প্রকাশ করে জানায়,
–“সরি বাচ্চাটা।আগে বললে কি হতো?”
–“কিছু না।”
তাহুরা জবাব দেয়।
–“খেয়ে আপুর সাথে ছবি তুলবি।”
সুনেরা নির্দেশ দেয় বোনকে।
–“না।আমি তুলবো না।সবাই কতো সুন্দর করে সাজলো।আমাকে খুব সিম্পল লাগছে।”
তাহুরা মন খারাপ করে বলে।
–“সিম্পলেই আমার শালী অপরূপ।ভাইয়া কিন্তু খুব রাগ করবো ছবি না তুললে।”
জুবায়েরের অমায়িক আচরণে হাসে তাহুরা।মলিন কণ্ঠে বলে,
–“আচ্ছা ভাইয়া,তুলবো।”

–“বাহ,বউয়ের বোনকে সবাই পেম্পার করছে আর বরের ভাই কাজ করে হয়রান।”
তাহুরা স্তব্দ।তার সম্মুখে উমাইর।একদম ফিট।ধূসর রঙের স্যুট পড়েছে সে।অত্যধিক সুদর্শন তার অবয়ব।ছেলে হয়েও উমাইরকে যতটা পরিপাটি লাগছে তাহুরাকে ঠিক ততটাই সাধারণ লাগছে বলে মন খারাপ হয় তাহুরার নিমিষে।উমাইর নিশ্চয় আশে পাশের সুন্দরী মেয়েদের প্রতি মত্ত হবে!

ঠিকই তো। আশে পাশে পরিপাটি রমণী থাকলে কে বা সাধারণ মেয়েদের পানে চায়?

–“তুই আর আমার শালী দুজনই আমাদের সাথে ছবি তুলবি।তোদের আজ পাওয়া যাচ্ছে না।”
জুবায়ের হেসে কথাখানা বললে উমাইর তার থমথমে সুর বজায় রেখে উত্তর দেয় ভাইয়াকে,
–“বাবার কিছু প্রিমিয়াম গেস্ট এসেছিলো,উনাদের হ্যান্ডেল করছিলাম।”

অতঃপর খাবার টেবিলে চালাকির সাহায্যে উমাইর বসে তাহুরার পাশের চেয়ারে।

খাবার নিয়ে ব্যস্ত সকলে।উমাইর নিজ চেয়ার তাহুরার নিকট আরো এগিয়ে নেয়।অনেকটা ছুঁইছুঁই হয়ে বসে,
–“আজ সিম্পল মুখ দেখিয়ে সবাইকে নিজের সৌন্দর্য দেখাচ্ছো?মেকাপ ছাড়াও তুমি অপরূপ,এটা বুঝাচ্ছো?”
তাহুরা প্লেট শক্ত হাতে চেপে ধরে।উমাইর!আবারও উমাইর!লোকটার একেকটা কথায় উথাল পাথাল হয় মেয়েটার অন্তর।তবে,সারাজীবন লোকটা তাকে ভুল বুঝে।তাহুরা ধীর কণ্ঠে বলে,
–“নাহ।”

–“আমাকে শিখাও?আমি তোমার মতো বোকা?”
উমাইর ইচ্ছে করে তাহুরাকে চেতানোর চেষ্টায়।

–“এই যে বিশ্বাস করুন।আমি এমন মেয়ে না।আমি সত্যি কিছু করিনি ইচ্ছা করে।”
তাহুরা অনেকটা বিচলিত হয়ে পড়ে।মেয়েটার এমন চঞ্চলতা অবলোকন করে থামে উমাইর।মেয়েটা চিন্তিত কিছু নিয়ে।তাহুরার কণ্ঠে স্পষ্ট সেই সুর।উমাইর জানতে চায় সেই বিষয়ে।

তাই একপ্রকার হুমকি দেয় সে তাহুরাকে,
–“খাবার শেষে আমার সাথে দেখা করবে।কি হয়েছে তোমার,সবটা বলবে।তোমার বোনকে তোমার মা মিথ্যে বললেও আমি খুব চালাক।”

তাহুরা নজর উঠিয়ে দেখে উমাইরকে।লোকটা সব বুঝে যায় কিভাবে?পরক্ষণে সে আলেয়ার দিকে ফিরে।আলেয়া এক ধ্যানে তাদের পর্যবেক্ষণ করছে তো বাকিরা নিজ খাবারে ব্যস্ত।উমাইর তাহুরার দৃষ্টি অনুসরণ করে আফিয়ার পানে তাকালে আলেয়া দ্রুত নজর সরায়।উমাইর আফিয়াকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে।এমনকি তাহুরার নামে উল্টোপাল্টা কিছু রটালে তার খারাপটা ভুগবে আলেয়া সেটা উমাইর সোজা জানিয়েছে তাকে।এই কারণেই আফিয়া সব জেনেও চুপ, উমাইরের মামীকেও বললো না কিছু।

উমাইরের ভাবভঙ্গি কঠোর হয়। খাবার এগিয়ে দেয় তাহুরার প্লেটে। সেই সময় তাহুরা মিনমিন কণ্ঠে বলে,
–“আমি ঠিক আছি।”

উমাইরের মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টায় সে।মেয়েটা ইচ্ছাকৃত ঘটনা এড়াতে চাইছে বুঝলো।কিন্তু,উমাইর নাছোড়বান্দা।তার মাথামোটা কিছু নিয়ে চিন্তিত,মনে মনে জর্জরিত আর সে ব্যাপারটা জানবে না?মেয়েটার সকল শান্তির কারণ হতে চায় উমাইর।

বেশ ধিম গলায় উমাইর তার প্রেয়সীকে বলে,
–“তোমার প্রত্যেকটা নিঃশ্বাসের ভাষা আমি বুঝি,মাথামোটা।আর মুখের ভাষা বুঝবো না?

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে