#রেখেছি_তারে_মন_পিঞ্জিরায়
লেখনীতে: সালসাবিল সারা
পর্ব- ১৭
__________________
–“উফ,অস্থির তো!ভীতু মেয়েটার পাশে আমাদের কুল উমাইর। দারুণ।”
–“এহ?উমাইর কুল? ও হঠাৎ কুল,আবার হঠাৎ হট।মামা,তুই কিন্তু সেরা উমাইর।তোর চয়েজ ফাটাফাটি।মেয়েটাকে মানিয়েছে সাথে।”
–“মা শাহ্ আল্লাহ্ বল।তোদের নজর আবার কুনজর।মামা জলদি বিয়ে খেতে চাই।”
–“এতো জলদি বিয়ে উমাইর করবে না।শালার ধৈর্য অনেক। ভাবীকে আগে সুযোগ দিবে তাকে বুঝার।তোদের মতো বলদ না উমাইর।”
–“কি আর ধৈর্য?ভাবীর রূপের আগুনে অঘটন ঘটাবে উমাইর।আমি শিউর,উমাইর ভাবীর জন্যে উল্টাপাল্টা কিছু একটা করবেই।”
বন্ধুদের একেকজনের মেসেজ আসার গতির মন্থরে নেই।পুরোদমে গ্রুপে অস্থির ভাব।উমাইর বাড়ি ফিরে গোসল সাড়ে। ঐ বাড়ির জন্যে আধ তৈরি অবস্থায় ফোন হাতে নিলে অত্র মেসেজ খানা ভেসে উঠে স্ক্রিনে।
খানিকটা স্ক্রল করলে স্ক্রিন তাহুরা এবং তার যুগলবন্ধী ছবির সন্ধান পায় উমাইর।মেয়েটা লাজুক আর উমাইর থমথমে মুখশ্রীতে মত্ত।তারপরও ছবিখানা তার মনের খোরাক মেটায়।খুব আশা ছিল এমন পাশাপাশি ছবি তোলার। তবে,কখনো তোলা হয়নি।মনে মনে বন্ধুকে ধন্যবাদ দেয় উমাইর।বিশাল বিশাল মেসেজের বিনিময়ে সে বন্ধুদের জবাবে লিখে,
–“তামাশা বন্ধ কর।”
আবারো হামলে পড়ে একে একে রনি,রকি,বাপ্পি;
–“মামা,বেশি সুন্দর লাগছে তোদের।বল না বিয়েতে বেশি দেরী আছে তোদের?”
–“বারবার বলছি, দেরীতে হবে।উমাইর তার পাখির জন্যে অপেক্ষা করবে।মেয়েটা নাজুক।”
–“জীবনেও না। উমাইর তুই বিয়ে কর।তোর বিয়ের জন্যে আমি মরে যাচ্ছি।দেখতে চাই,কিভাবে তুই তোর লজ্জাবতী বউকে সামলাস।”
ভ্রু কুঁচকে আসে উমাইরের।কি যা তা শুরু করলো!উমাইর মোটেও কখনো তার অনুভূতি নিজ বোকাপাখি ব্যতীত কারো সামনে প্রকাশ করবে? নাহ।টুকটাক পাগলামি দেখলেও আসল ভালোবাসা তার মনের রাণী ছাড়া কাউকে দেখাবে না উমাইর।তার জন্যে জমানো ভালোবাসা উম্মাদনা শুধু তাহুরাই দেখবে,পাবে,সহ্য করবে।
গটগট অক্ষরে উমাইর তাদের মেসেজ দেয়,
–“আর একবার এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে কিন্তু কলেজ-ভার্সিটির উমাইর হবো তোদের জন্যে।বিয়ে যেদিন হবে সেদিন দেখবি।”
বন্ধুরা আবারও নানান বাহানায় এটা সেটা নিয়ে মেসেজ দিচ্ছে।টুকটাক উত্তর দিয়ে তাহুরার ভাবনায় মশগুল হয় উমাইর।
আজ তার শেষ বাক্যে মেয়েটা একদম চুপ হয়ে যায়।লজ্জায় রক্তিম হয়। বোকাটাকে ইঙ্গিত দিয়ে স্বস্থি পায় উমাইর।তারপরও মেয়েটা তার মেজাজ বিগড়িয়েছে। বাড়ির সামনে নামেনি।আরো আগে নেমে হেঁটে বাড়ি ফিরেছে।উমাইর আর জিজ্ঞাসা করেনি কিছু।জিদ করে তাহুরাকে নামিয়ে গাড়ির গতি বাড়িয়ে বাড়ি ফিরে।
মাঝপথে মাও কয়েকবার ফোন দিচ্ছিলো।এখনো এসে মেঘলা ছেলেকে তাড়া দেয়।
উমাইর কাজের গতির বেগ বৃদ্ধি করে।পকেটে ওয়ালেট নিয়ে বেরিয়ে আসে কক্ষ হতে।নিচে নামলে উৎসবমুখর পরিবেশ অবলোকন হয় তার দৃষ্টিতে।যারা যাবে সকলে তৈরি।মেঘলা ছেলেকে দেখে এগিয়ে আসে,
–“নিবরাস এসেছে।ওকে গাড়ির চাবি দাও। ডালাগুলো রাখুক তোমার গাড়িতে।”
ডানদিকের প্যান্টের সম্মুখে ঝুলন্ত কী-বাক্স পরখ করে উমাইর জবাব দেয়,
–“আমাকে দাও আমি রেখে আসি।”
–“এখন নাস্তা করবে তুমি।এরপর যাবে।”
–“পেট ভরা।খিদে নেই।”
নিজ বক্তব্য পেশ করে উমাইর নিজে দুহাতে ডালা উঠিয়ে হাঁটতে আরম্ভ করে।
দুই গাড়ি যাবে আজ। উমাইরের গাড়ি সাথে তার চাচার গাড়ি।হাতের ডালা ঠিকভাবে গাড়িতে রাখে উমাইর। ড্রাইভিং সিটে বসতে নিলে আফিয়া আসে।পেছনে দাঁড়ায় মেঘলা এবং দিলরুবা।
মেঘলাকে দেখে উমাইর শান্ত কণ্ঠে বলে,
–“জাফরানকে আমার সাথে দাও।নিবরাস আর আফিয়া আসুক।”
পরপর উমাইর আবারও আওড়ায়,
–“জাফরান, কাম।”
নম্রতা ছেলেকে সামনের সিটে বসায় সাবধানে।উমাইর জাফরানের সিটবেল্ট বেঁধে দেয়।জাফরান মহাখুশি।দুই পা নাড়িয়ে নিজ খুশির জানান দেয় সে।
গাড়ির হেডলাইটের হলুদ রঙ জ্বলে উঠে।যান্ত্রিক শব্দের আলোড়নে বিশাল ফটক ত্যাগ করে উমাইরের গাড়ি।
জাফরান শান্ত ভঙ্গিতে বসে।তাহুরাদের বাড়ি যাবে বলে বেজায় খুশি।উমাইর জাফরানের পছন্দের “বেবি শার্ক” গান চালু করে মৃদু সুরে।
উমাইর ঘাড় বাঁকা করে তাহুরার প্রিয় আবার উমাইরের প্রিয় জাফরানকে দেখে।ছেলেটা মাকে ছাড়া যায় না কোথাও।আজ তাহুরাদের বাসায় যাবে বলে সেই কি খুশি তার!দূরে সুপারশপ অবস্থিত।লাল নীল লাইট দিয়ে আকর্ষন করছে।উমাইর স্টিয়ারিংয়ে এক হাত রেখে অপর হাতে জাফরানের হাত ধরে,
–“চকলেট খাবে?”
–“খাবো খাবো ভাইয়া।”
উৎসুক জাফরান খুশিতে আত্মহারা।বিনিময়ে হাসে উমাইর।জাফরান আস্ত এক আদর তার নিকট।
সুপার শপে ঘুরে ঘুরে জাফরানের জন্যে কিছু চকলেট নেয় উমাইর।জাফরান তার কোলে উঠে তো আবার হাত ধরে হাঁটে।জাফরানকে চকলেট কিনে দেওয়ার পাশাপাশি উমাইর আলাদা কিছু চকলেট নেয় তাহুরার জন্যে।মেয়েটা গাড়ি থেকে নামলে ফের আর খোঁজ নেয়নি উমাইর। অতএব প্রেয়সীর জন্যে এখন অন্তর জ্বলে উমাইরের।বাসায় গিয়ে নিশ্চিত কেঁদেছে মেয়েটা।
জাফরানকে পুনরায় গাড়িতে বসিয়ে উমাইর তার কোলে তাহুরার জন্যে কেনা চকলেটের প্যাকেট রাখলে জাফরান বলে,
–“এগুলো কার?”
–“তাহুরার।”
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে জবাব দেয় উমাইর।উত্তর জানিয়ে উমাইর আবারও জাফরানকে বলে উঠে,
–“আজকে তাহুরাকে জ্বালাবে না। কোলেও উঠবে না।কোলে উঠতে ইচ্ছে করলে আমার কাছে আসবে।”
জাফরান চকলেট পেয়ে আহ্লাদে আটখানা।সে মাথা নাড়ায়।আজ সে উমাইরের পক্ষে,
–“আচ্ছা ভাইয়া।”
উমাইর হাসে।বাচ্চাটাকে চকলেট দিয়ে বশ করা সহজ।সব সেট করে উমাইর অনায়াসে।
অত্র বাড়িতে পৌঁছায় তারা দ্রুত।রাস্তায় জ্যাম নেই তেমন।তাহুরাদের বাড়িতে আজ অতিথি শূন্য।কেবল ঘরের লোকেরা।মুন্সীর শরীরটা ভালো নেই।হার্টের সমস্যাটা বেড়েছে।উনিও এগিয়ে আসতে পারেননি ছেলেপক্ষকে অ্যাপায়ন করতে।নিবরাসদের গাড়ি আসে প্রথমে। আবার ফিরেও যায় বাড়িতে। সুনেরা,তাহুরা তাদের জিনিসপত্র নিতে সাহায্য করে।
উমাইরের গাড়ি এলে নিবরাস বেরুতে চাইলে, বাঁধ সাধে সুনেরা। নাস্তার টেবিল হতে মেহমানকে উঠানোর কোনো মানে নেই।সুনেরা নির্দেশ দেয় তাহুরাকে,
–“যা,উমাইর ভাইয়াকে হেল্প কর।”
তাহুরার পায়ের তলায় মাটি শক্ত। এইভাবেও মেয়েটা জর্জরিত উমাইরের বলা বেশ বাক্যে।লোকটার সম্মুখীন হবে কিভাবে?সেই বাক্যের পর উমাইর পুরো গাড়িতে কিছু না বললেও,তাহুরা জানে উমাইর তার প্রতি ক্ষিপ্ত।কথা যে শুনেনি সে উমাইরের। পায়ের গতি ধীর তার।বুকটা অস্থির।নিজেকে ধাতস্থ করতে ব্যস্ত মেয়েটা। বক্ষদেশে হাত রাখে।জোরে শ্বাস ফেলে,
–“চিন্তা করিস না তাহুরা।উনি তো তোকে সরাসরি কিছু বলেনি।হয়তো অন্য কিছু বুঝতে চেয়েছেন স্যার!ঠিক থাক তুই।”
পরক্ষণে মন খারাপ হয় তাহুরার।পুনরায় সে মনে মনে আওড়ায়,
–“আপনাকে আমার খুব পছন্দ স্যার।আমার মনে প্রাণে সারাজীবনের জন্যে কেবল আপনাকে চাই আমি।কিন্তু,আপনি এই কথা শুনলে নিশ্চয় আমাকে খুব বকবেন!”
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে তাহুরা উঠানে আসে।উমাইর জাফরানকে নামতে সাহায্য করে।উমাইরের হাতে চকলেটের বাক্স।জাফরান দৌড়িয়ে আসতে নিলে তাহুরা সামলে নেয় জাফরানকে,
–“আস্তে ভাইয়া।পড়ে যাবা।”
–“তাহুরা আপু।”
জাফরান ঢুকে পড়ে তাহুরার বক্ষ পিঞ্জরে।পিঠে হাত রাখে তার তাহুরা।তবে,দৃষ্টি তার উমাইরে নিমিত্ত।
লোকটার সুঠাম দেহ কি আকর্ষণীয়! চুলগুলো তার কিঞ্চিৎ উচুঁ।কলেজে অবশ্য তার চুলের স্টাইল অন্যরকম হয়।অথচ বাহিরে ভঙ্গি বদলে যায় তার চুলের,বেশভূষায়।
আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা মনে এলে কুঁকড়ে উঠে তাহুরা।মনে মনে দোয়া করে,উমাইরের বলা শেষ বাক্যটা যেনো তার জীবনে সত্যি হয়, বাক্যটার অর্থ যেনো তাহুরা যা ভাবছে তাই হয়।
জাফরানের হাত ধরে উমাইরের নিকট পৌঁছায় তাহুরা।মলিন কণ্ঠে শুধায়,
–“আমাকে কিছু জিনিস দিন।”
উমাইর একের উপর এক তিনটা ডালা রাখে ডান হাতে। অপর হাতের চকলেটের বাক্স এগিয়ে দেয় তার প্রাণ ভোমরাকে,
–“এটা নিয়ে বাসায় যাও।”
চকলেটের বাক্স হাতে নেয় তাহুরা।লোকটা এতসব ডালা একা কিভাবে নিবে?লজ্জায়, শঙ্কায় মুখ খুলে মেয়েটা,
–“এতসব আপনি নিতে পারবেন না।আমাকে দিন।”
–“তোমাকে সহ ইজিলি ক্যারি করতে পারবো।প্রমাণ লাগবে?”
থমথমে সুর উমাইরের।তাহুরা অধরে হাত রাখে।দুকদম পেছায়।ততক্ষণে উমাইর সব ডালা নিজ হাতে তুলে।তাহুরাকে মূর্তির মতো লাজে আড়ষ্ট হতে দেখে শান্তি পায় উমাইর।সেই হাসি অপ্রকাশিত রেখে জবাব দেয়,
–“কি সমস্যা?পা চলে না? নাকি প্রমাণ দেখতে চাও?”
উমাইরের অকপট ধমকে অন্তত পুড়ে তাহুরার।তার মনের রাজা এখনো রেগে আজকের জন্যে!তাহুরা জাফরানের হাত ধরে এগোতে নিলে সুনেরা বাহিরে আসে। উমাইরকে সবকিছু একা নিতে দেখে ধমকায় সে তাহুরাকে,
–“তোকে সাহায্য করতে পাঠিয়েছিলাম।”
ধমকে তাহুরা শক্ত করে চেপে ধরে জাফরানের হাত।চমকে উঠে মেয়েটা।
উমাইর ভাবভঙ্গি লক্ষ্য করে তার বোকাটার।সামান্য এই কথায় কেউ এমন ভয় পায়?তাহলে বিয়ের পর মেয়েটার অবস্থা কেমন হবে?উমাইর যে ইচ্ছাকৃত মেয়েটাকে ধমকাবে আবার ভালোবাসায় মুড়ে নিবে!
বেশ হবে,উমাইর মেয়েটার সকল রূপ দেখতে প্রস্তুত।তাহুরা যখন উমাইরের ভালোবাসার স্পর্শে বিচলিত হবে,তখন নিশ্চয় উমাইর হুঁশ বুদ্ধি হারাবে মেয়েটার রূপ দেখে?
এখনকার মতো দমে নেয় নিজেকে উমাইর।অধরে মিথ্যে হাসি টানে,
–“আমি ওকে হেল্প করতে দিইনি। ইটস ওকে,ভাবী।”
–“আচ্ছা ভাইয়া।আসুন।জাফরান,ভাবীর কোলে আসো।”
জাফরানকে কোলে তুলে নেয় সুনেরা।সে যেতে যেতে শুনতে পায় উমাইরের কণ্ঠ,
–“উপর থেকে একটা ডালা নাও।”
সুনেরা আর থামেনি।ভেতরে যায়।তাদের ব্যাপার তারা সামলাক।উমাইর আবার অন্যের নাক গলানো পছন্দ করে না।
এইদিকে তাহুরা হতবিহ্বল।এতক্ষণ তাকে নিজে কথা শুনিয়েছে আবার আপুও এসে বকে যায়।আর লোকটা আবার তাকেই ডালা নিতে বলছে?অদ্ভুত না?
বিনা বাক্যে তাহুরা ডালা নেয় উপর হতে।অতঃপর তাহুরাকে অতিক্রম করে যাওয়া অবস্থায় উমাইর বলে,
–“হাতের জিনিস দুইটাই তোমার।শাড়িটা মা দিয়েছে তোমার জন্যে।মনে আছে নিশ্চয়?”
তাহুরার মন খারাপ উবে যায়।আপুর বকুনি ভুলে।চকলেট তার অতিপ্রিয়।উমাইর এনেছে বুঝি!খুশিতে মেয়েটার আঁখি চকচক করে। উমাইরের পেছনে লম্বা কদমে অগ্রসর হয় তাহুরা।
জাফরানের হাতে লিকুইড চকলেটের প্যাকেট।তাহুরা দিয়েছে। মনের সুখে সেটা খাচ্ছে জাফরান।আবার এইদিক সেইদিক ছোটাছুটি করছে।উমাইর মুন্সীর সাথে টুকটাক কথা বলে।ভদ্রলোক আজ কেমন বেজার।অসুস্থ অনেকটা।তাহুরা বাবাকে চা এনে দেয়। উমাইরের জন্যে আনে চিনি ছাড়া চা।ইদানিং চিনি একদম কমিয়ে ফেলে উমাইর।জাফরান তাহুরাকে অবলোকন করে দৌড়িয়ে আসতে নেয়।পা বেঁকে ভুলক্রমে জাফরান উমাইরের পায়ের নিকট পড়ে।অতঃপর উমাইরের গায়ে শার্ট লেপ্টে যায় চায়ে।জাফরানকে দ্রুত সরায় উমাইর।যদিও চায়ের বিভৎস দাগ বসেছে উমাইরের শার্টে,তবে গরম ভাব লাগেনি।চা তুলনামূলক ঠান্ডা হয় ততক্ষণে।
উমাইর উঠে দাঁড়ায়।তাহুরা ভয় পায় খানিকটা।সে ভাবে জাফরানকে বকবে উমাইর।তাহুরা অসহায় সুরে বলে,
–“ভেজা কাপড় দিয়ে মুছলে দাগ উঠে যাবে, স্যার।”
আতঙ্কে মেয়েটা কি বললো নিজে বুঝেনি।জাফরান কাঁদো করো মুখ করে তাকালে নিবরাস কোলে তুলে নেয় জাফরানকে,
–“ধুর কান্না করবে না।ভাইয়া কিছু বলবে না।”
সুনেরা ব্যস্ত ডালা চেক করতে।সাথে আছে আফিয়া।তাহুরার মা আসে রান্নাঘর হতে।উমাইরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বলে,
–“তাহু,উনাকে ভেতরে নিয়ে যা।ভেজা কাপড়ে সাবান মেখে একটু ঘষলে দাগ উঠে যাবে।”
তাহুরা মাথা নাড়ায়।উমাইরের অস্বস্তি হচ্ছে এমন ছিপছিপে শার্টে।জাফরান ছোট বাচ্চা,তাকে সে দোষ দেয়নি।বাচ্চারা একটু চঞ্চল থাকে স্বভাবগত।
–“আসুন, স্যার।”
জাফরানের কার্যকলাপে বিরক্ত না হলেও তাহুরার বারবার স্যার ডাকা বিরক্ত করছে উমাইরকে।নিশ্চুপ সে তাহুরার পানে হাঁটে।মায়ের নির্দেশনায় নিজেদের রুমের বাথরুমে উমাইরকে নিয়ে যেতে উদ্যত হয় মানবী।কক্ষে প্রবেশ করে।তাহুরা সর্বপ্রথম আওড়ায়,
–“আমি ভেজা কাপড় এনে দিবো?নাকি আপনি ভেতরে যাবেন?”
উমাইর একনজর তাহুরার পানে চেয়ে কক্ষে নজর দেয়।কেমন প্রশান্তি এই কক্ষে।তার প্রেয়সী এতে ঘুমায় বলে?সারাদিন এই কক্ষে সময় কাটায় বলে?খোলা জানালার সাহায্যে পুকুরপাড় দৃশ্যমান।মাঝারি গোলাকার পুকুরের চারিদিকে সারি গাছ এবং সেথায় জ্বলজ্বল করছে সোনালী রঙের আলো।পরক্ষণে দৃষ্টি সরিয়ে তাহুরার কান টেনে ধরে উমাইর,
–“স্যার! এতো স্যার স্যার করছো হঠাৎ?”
–“জ্বী?”
তাহুরা ভাবুক হয়।
–“তোমার মাথা।যাও ভেজা কাপড় নিয়ে আসো।”
তাহুরা ধীরে যায়।ফিরে আসে মগ ভর্তি পানি সাথে ভেজা কাপড়ে সাবান মেখে।কাপড় খানা উমাইরের পানে এগিয়ে দিলে উমাইর হাত পেছনে নেয়,
–“আমি পারিনা এইসব।মুছে দাও।”
তাহুরা মুছবে?কিভাবে?মুছলে একটুর জন্য হলেও হাত লাগবে উমাইরের সত্তায়।শুকনো ঢেঁকুর গিলে তাহুরা।আলগোছে বলে,
–“আমি কিভাবে!”
–“ওকে।লাগবে না।আমি বাসায় ফিরছি।”
উমাইর দাঁড়ায় না।চলে যেতে নিলে তাহুরা মুচড়ে ধরে উমাইরের শার্টের পেছন অংশ,
–“খেয়ে যাবেন।দিচ্ছি মুছে।”
–“ওকে।”
গা ছাড়া ভাবে উমাইরের।তাহুরার হাত হতে মগ নেয় সে।তাহুরা এক হাতে শার্ট কিছুটা উচুঁ করে ধরে।এরপর অপর হাতে সাবান মাখা ভেজা কাপড় দ্বারা মুছতে আরম্ভ করে শার্ট।
উমাইরের অধর প্রসারিত।তার তুলনায় উচ্চতায় কম মেয়েটার মাথা নিচু।ইচ্ছে হচ্ছে এখনি মেয়েটাকে কাছে টেনে নিতে।মাথায় ভালবাসার স্পর্শ জারি করতে।ভেতরটা এলোমেলো হয় তার।অদ্ভুত উষ্ণতায় ছেয়ে যায় পুরো শরীর।এই রুমটা এইভাবে একটু গরম। ফ্যানেও কাজ হচ্ছে না।এসিতে অভ্যস্ত উমাইর ঘেমে অস্থির। বসার ঘরে, খাবার ঘরে দুইটা করে ফ্যান থাকায় মানিয়ে নিতে পারে সে এই বাসায়।কিন্তু, কক্ষটায় একটা ফ্যান সাথে তার উষ্ণতার পাখি তার নিকটে।অতি নিকটে।
তাহুরার মাথার ঘোমটা আচমকা পড়ে।দৃশ্যমান হয় মেয়েটার শুভ্র ঘাড়,পিঠের উপরিভাগ।মেয়েটা খোঁপা করেছে।তাই সহজে দেখা মিলল তাদের।ঘোমটা পড়ার সাথে সাথে তাহুরা মাথা তুলে।উমাইর তার পানে চেয়ে।অন্যরকম দৃষ্টিতে।উমাইর তাহুরার ঘোমটা টেনে দেয় ফের।কপালে আসা চুল সরিয়ে দেয় মেয়েটার,
–“আমার সামনে ঘোমটা পড়লে আনইজি ফিল করার দরকার নেই।তবে,অন্যের সামনে যেনো ঘোমটা না পড়ে।বি কেয়ারফুল।”
তাহুরা মাথা নাড়ে।লাজে তার আস্তরণ রক্তিম হচ্ছে।উমাইর ব্যতীত তাহুরা কখনো অন্য ছেলের এতটা নিকটে আসেনি।আসার কথা ভাবেনি ইহকালে।উমাইর তার নিজ মনের মানুষ বলে তাহুরার কেবল লজ্জা লাগছে।তাহুরা একমাত্র তার উমাইর স্যারেই মগ্ন,মত্ত,মাতোয়ারা।
তাহুরা কাজ শেষ করে দ্রুত।উমাইরের গরম লাগছে স্পষ্ট বুঝলো মেয়েটা।শার্টে দাগ হালকা এখনো বিদ্যমান।উমাইর শার্টের অবস্থা দেখে বলে,
–“মাছহ বেটার।থ্যাংকস,তাহু।”
–“রুমটা একটু গরম।আপনি ঘেমে আছেন।ড্রইংরুমে বসুন ফ্যানের নিচে।আমি ঠান্ডা পানি দিচ্ছি আপনাকে।”
তাহুরা নিজ বক্তব্য শেষ করে জগ নেয়।যেতে নিলে শুনতে পায় উমাইরের শীতল কণ্ঠ।তার এহেন কণ্ঠ গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে তাহুরার।
–“গরমটা ফ্যান, এসি,ঠান্ডা পানি কিছুতেই কমবে না।যা দিয়ে কমবে,সে এখন আমার আয়ত্বের কাছে তবে দূরে।”
তাহুরা ভ্রু কুঁচকে নেয়।কি বলছে উমাইর?না বুঝে তাহুরা প্রশ্ন করে,
–“বুঝলাম না।”
উমাইর দুই কদম এগোয়।জিন্সের পকেটে হাত গুঁজে।কিঞ্চিৎ ঝুঁকে,
–“তুমি নামক মাথামোটা,আমার উষ্ণতার কারণ।সময় এলে বুঝিয়ে দিবো,স্টুপিড রূপসী একটা।”
উমাইর ভ্রু উঁচিয়ে হাসে।কক্ষ হতে বেরুনোর পূর্বে তাহুরার কপালে টোকা দেয়।
তাহুরার জগৎ স্থগিত।উমাইরের হাসিটা খু’ন করেছে তাকে।বুকের গতি স্বাভাবিক নয়।ফ্যালফ্যাল করে মেয়েটা তাকিয়ে রইলো উমাইরের যাওয়ার পানে।
চলবে…..
#রেখেছি_তারে_মন_পিঞ্জিরায়
লেখনীতে: সালসাবিল সারা
পর্ব- ১৮
____________________
–“উনি উমাইর স্যার না?”
সন্দেহজনক কণ্ঠ স্বাগতার।তার বিচলিত প্রশ্নে তাহুরা বামে ফিরে।পেছন অবয়ব পর্যবেক্ষণ করে মেয়েটা চিনলো তার মনের রাজাকে।সুঠাম দেহী উমাইর অন্যদিকে মুড়ে আছে।লোকটার ঘাড়ের উপর ট্রিম করা চুল,পেছনের অবয়ব চিনতে ভুল করেনি তাহুরা।এমনকি স্বাগতাও ঠিক ধরেছে।কলেজের সুনামধন্য স্যার হওয়ায় যে কেউ তাকে চিনতে সক্ষম হবে।উমাইর তার পড়ানোর নিয়ম,ভালো ব্যবহার,আবার মেজাজের তিক্তকা,রাগী মনোভাব, সুদর্শনতা সবকিছু দিয়ে কলেজে বেশ ভালো জনপ্রিয় করেছে নিজেকে।
তাহুরা মাথার হিজাবে হাত রাখে।ভাবুক হয়ে উত্তর দেয়,
–“হ্যাঁ,উনি।কলেজের মাঝে কি করছেন?”
উৎসুক হয় তাহুরার মন।পরপর তার মনের প্রশ্নের উত্তর আঁখির সম্মুখে আসে।উমাইরের পাশে এসে দাঁড়ায় ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের আরো কিছু শিক্ষক শিক্ষিকা।মূলত তারা ছবি তুলতে দাঁড়িয়েছে।সকলে সারি বদ্ধ দাঁড়ালে পেছনে তাহুরা, স্বাগতাকে দেখা যায় ক্যামেরায়।ফলস্বরূপ ফটোগ্রাফার হালকা চিৎকারে বলে উঠে,
–“পিছন থেকে প্লিজ সরে দাঁড়ান।”
স্বাগতা,তাহুরার হাত ধরে টানে।মেয়েটার শক্ত কদম না চাওয়া সত্ত্বেও অগ্রসর হয়।ফটোগ্রাফারের ইশারায় একজন শিক্ষিকা এসে দাঁড়ায় উমাইরের নিকট।আর সেদিকে তাকায়নি তাহুরা।অদ্ভুত জ্বলন অনুভব করে অন্তরে।সেদিকে দ্বিতীয়বার তাকানোর মুরত নেই মেয়েটার। আঁখি ছলছল। উমাইরের পাশে অন্য মহিলাকে দাঁড়াতে দেখে তার এতটা কষ্ট হওয়ার কি কথা ছিলো?
অভিমানী ভাবনায় ছেয়ে পড়ে সরল মেয়েটার মন পিঞ্জিরা।পেছন ফিরে তাকালে হয়তো দেখতো,উমাইর সেই মেয়ে শিক্ষিকা হতে এক হাত দূরে অবস্থানরত।ক্যামেরাম্যান বলেও কাছাকাছি আনতে পারেনি।অবশেষে ছবি তুলে ক্যামেরাম্যান।নাছোড়বান্দা থাকে উমাইর।
তাহুরা,স্বাগতা কলেজের এক কিনারায় যায়।নিজে সামলে নেয় তাহুরা।লোকটা যার পাশে দাঁড়াবে দাঁড়াক।এই নিয়ে আর ভাববে না বোকা মেয়েটা।বুকে অন্যরকম পীড়া।অসহ্যকর যন্ত্রণা।দুই হাতের তালু ঘষে সে।নিজেকে শান্ত করার চেষ্টায়।অনুষ্ঠানের জন্যে বিদ্যমান ছাউনী থেকে তারা বহু দূরে মূলত কলেজের বৃহৎ গাছটার নিচে।
স্বাগতা ঘড়ি দেখে হাতের।বিরক্ত হয় খানিকটা,
–“চৈতালি এখনো আসছে না।গরমটা অসহ্য লাগছে।”
–“কমন রুমে বসবি?”
ধীর সুর তাহুরার।
স্বাগতা ফিরে তাহুরার পানে।তার পাশেই বসে,
–“নাহ।চার তলায় উঠার শক্তি নেই। চৈতালিকে একটা শিক্ষা দিয়ে এরপর বাসায় দৌড়।”
–“দরকার কি বল?যেটা হয়েছে সেটার চ্যাপ্টার বন্ধ করলে তো হয়।আমি আসতে চাইনি,তুই জোর করে…”
তাহুরাকে বলতে দেয়নি স্বাগতা।কথার ফোড়ন কাটে,
–“তুই বেশি বুঝিস।সেদিন রেস্টুরেন্টে কেনো তোর সাথে এমনটা করলো চৈতালি?আমি কোনোদিন ব্যাপারটা মেনে নিবো না।কৈফিয়ত আমার লাগবে।”
তাদের কথার মাঝে উপস্থিত হয় চৈতালি।গেইট থেকে অবলোকন করলো সে দুই সইদের।চৈতালি আসলে ক্ষিপ্ত হয় স্বাগতা,
–“তোকে আমার ফ্রেন্ড মানতে ইচ্ছা করছে না।”
চৈতালি কান ধরে একহাতে, অপর হাতে জড়িয়ে ধরে তাহুরাকে,
–“সরি তো।সেদিনের ভুলটা আমি জীবনেও করবো না। মাফ করে দে প্লিজ।”
–“তুই জানিস,সেদিন ওর কিছু হলে আঙ্কেল কি করতো তো…”
–“আচ্ছা বাবা,হয়েছে স্বাগতা।আমি মাফ করলাম চৈতালিকে।”
তাহুরা হেসে উত্তর দেয়।কান ছেড়ে চৈতালি তাহুরাকে আগলে নেয় দুই হাতে,
–“তুই সবচেয়ে সেরা।”
স্বাগতা কোমরে হাত রাখে,
–“সেরা তো অবশ্যই।মেয়েটাকে যদি ফের এইসব লটভট কাজে নিয়ে যাস,তোর চুল ছিঁড়বো আমি।”
স্বাগতা নিজেও জড়িয়ে নেয় আদরের দুই বান্ধবিকে।
–“তোরা দিনদুপুরে কি শুরু করলি?কি বাজে দৃশ্য!”
নাক কুঁচকায় নিবরাস।তার সাথে দুইজন ক্লাসমেট।তাদের একজন ক্লাসের প্রথম সারির ছেলে।বাকি ছেলেটাও ভদ্র।নাহলে,নিবরাস উৎশৃঙ্খল ছেলের সাথে চললেও,মেয়ে বন্ধুদের মাঝে তাদের কখনো আসতে দেয়নি,বা আনেনি তাদের।
তাহুরা,চৈতালি অবাক হলো কিঞ্চিৎ।তবে,অবাক হয়নি স্বাগতা।যেনো সে পূর্ব হতে জানতো নিবরাস আসবে।
–“তুই কোথা থেকে আসলি?অনুষ্ঠানে এসেছিস?”
চৈতালি প্রশ্ন করে।
–“উম,কাজে এসেছি।অনেক রকম কাজ।”
দৃষ্টি তার স্বাগতার পানে।যেনো গ্রাস করবে এখনই।
তাহুরা মিটমিটিয়ে হাসে।স্পষ্ট বুঝে নিবরাস,স্বাগতার মাঝে রোমাঞ্চকর ব্যাপার চলছে।
–“সব মিটমাট হয়েছে,চল কলেজ ঘুরে দেখি।ব্যাপক আয়োজন হয়েছে অনুষ্ঠানে।”
স্বাগতা বলে।
–“উম, নাহ।আমি বাসায় যাবো।আব্বা বকবে দেরী হলে।”
তাহুরা বলে উঠে। দাঁড়ায় মেয়েটা। কাঁধে ব্যাগ চাপলে চৈতালি তার হাত ধরে,
–“বিশ মিনিট ঘুরে চলে যাবো।প্রমিজ।”
স্বাগতাও সায় দেয়।
–“কালকে আপুর হলুদের অনুষ্ঠান।অনেক কাজ বাকি।”
পুনরায় তাহুরা বললে স্বাগতা তার বাহু ধরে হাঁটতে আরম্ভ করে,
–“কালকে আর বিশ মিনিটের মাঝে বিরাট তফাৎ,বুঝলি?”
তাহুরা নিরুপায়।দৃষ্টি ঝুঁকে চলতে থাকে।মনে আবারও হানা দেয় বিষাদ যন্ত্রণার। উমাইরের বলা কথা মনে আসে।সেদিন উমাইরের শার্ট মুছে দেওয়ার পর লোকটা এক অনুভূতিময় কথা বললো।এরপর!এরপর লোকটার মুখে আর এমন কথা শুনেনি।শুধু তাই নয়,উমাইর মেসেজও দেয় খুব কম।তাহুরার সাহস হয়নি জিজ্ঞাসা করার।শান্ত মেয়েটা হুট করে চঞ্চল হয় যখন উমাইর থেকে একটা মেসেজ আসে।লোকটা তার অভ্যাসে পরিণত।তার দেওয়া একটা মেসেজ তাহুরার নিকট অত্যধিক প্রিয়।যদিও বেশির ভাগ মেসেজে উমাইর তাহুরাকে খোটা দিয়ে কথা বলে।এই যেমন,
–“মাথার ঘোমটা ফেলে হাঁটলে নিজেকে নায়িকা মনে হয়?”
–“তুমি মাথামোটা,বুঝবা না।”
–“অন্য আত্মীয়দের সাথে এতো কিসের হাসি?নিজের সুন্দর হাসি জমিয়ে রাখতে শিখো।”
–“আমাকে উল্টা প্রশ্ন করলে তোমার কান টেনে ছিঁড়বো আমি।”
–“তোমার ঘোমটা আমার সামনে পড়া জায়েজ,বাকিদের সামনে না।”
–“জাফরানকে এতো আদর কিসের?কথায় কথায় ওকে কিস দাও কেনো?আমি কি তোমার জন্যে এখন জাফরান হবো?
–“খাওয়ার প্রতি উদাসীনতা দেখলে,প্লেট তোমার মাথায় ভাঙবো।”
আরো অনেক অনেক।তাহুরা একেকটা মেসেজের পর বিশাল সাফাই গেয়ে উত্তর লিখে।উমাইর পড়ে ঠিকই,কিন্তু জবাব দেয় না।ফলস্বরূপ,মেয়েটার দিন রাত মস্তিষ্কে কেবল উমাইর আর উমাইরের নাম ঘুরে।
ঘোমটা তো ইচ্ছা করে ফেলে না তাহুরা।কাজের ফাঁকে কখন মাথাটা ঘোমটা শূন্য হয় বুঝতে পারে না।উমাইর দু’বার এসেছিল তাদের বাড়িতে কাজের সূত্রে।লোকটা তো তার সামনেও আসেনি তেমন,তাও সব লক্ষ্য করে কিভাবে!লোকটার কি চার চোখ আছে?
–“তাহু,লাড্ডু খাবি? চুড়ি কিনবি না আজকে?”
সুবুদ্ধি লাভ করে তাহুরা চৈতালির প্রশ্নে।চুড়ি কেনার টাকা তাহুরার নেই।তাই অকপটে ভঙ্গিতে বলে,
–“লাড্ডু খাবো।”
–“কেনো কেনো? চুড়ি কিনবি না?তোর না অনেক পছন্দের!”
স্বাগতা জিজ্ঞাসা করে।
–“যাহ,আজকে তিন গরীবকে আমি চুড়ি কিনে দিবো।”
হেসে উত্তর দেয় নিবরাস।
–“লাগবে না।হুদাই কষ্ট করিস না তুই।”
তাহুরার নরম সুর।
–“তুই লাড্ডু খা,অসহায় আমাদের।”
তাহুরাকে পচিয়ে সে সহ বাকিরা হাসে।তাহুরা নিজেও হেসে উঠে।বহুদিন পর আগের সেই আড্ডার মহল ফিরে পেয়েছে।
কমলা রঙের লাড্ডু মিষ্টি তাহুরার হাতে। ক্ষণে ক্ষণে ছোট কামড় দিয়ে খাচ্ছে।গরমটা ভ্যাপসা।ইতিমধ্যে নাক,কপাল,গালের দুদিক রক্তিম হয়েছে তাহুরার।চারিদিকে অনুষ্ঠানের গানের শব্দ।মাইক লাগিয়েছে বলে কথা।হঠাৎ শব্দ বেড়ে যায় দুই গুণে।কাছাকাছি শব্দ শোনা যেনো দায়।
কলেজের মাঠে স্টল একপাশে আর অনুষ্ঠান হচ্ছে কলেজের মাঠের মধ্যেখানে।কয়েকবার উকি ঝুঁকি দিলো মেয়েটা মনের রাজাকে দেখার আশায়।তবে,উন্নতি হয়নি।বিরাট মাঠে কিছু দেখা দুষ্কর।মানুষের মাথা ব্যতীত অন্যকিছু বুঝা মুশকিল।
হাতে বিদ্যমান মোবাইল কয়েকবার ভাইব্রেট হয়েছে বুঝলো তাহুরা।তবে, রোদের তেজে মোবাইল চেক করার দুই ফোঁটা আকাঙ্খা নেই তার।তারা বেরুতে নিলে আবারও ভাইব্রেট হওয়া শুরু করে তার মোবাইল।এইবার থেমে নেই।না দেখে আন্দাজ করে ফোন রিসিভ করে।
দু তিনবার “হ্যালো” বলেছে তবে ঐপাশে কি বললো শুনতে পায়নি সে।
ফোন কেটে দেয় অপর পক্ষ।পরপর তাহুরা অবলোকন করে,নিবরাস তার ফোন চেক করে চিল্লিয়ে তাহুরাকে বলে,
–“উমাইর ভাইয়া তোকে ওর কেবিনে যেতে বললো।ভাইয়ার নাকি তোকে কিছু দেওয়ার আছে তোর আপুর জন্যে।জুবায়ের ভাইয়া পাঠিয়েছে।সম্ভবত ভাইয়ার যাওয়ার কথা ছিল তোদের বাসায় আজ,কিন্তু তোকে দিয়ে কাজটা করিয়ে নিবে।”
তাহুরা বুঝেনি কথা।তিন চারবার করে বুঝিয়ে পাঠিয়েছে সে তাহুরাকে।বাকি দুই বান্ধবী ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের সম্মুখে দাঁড়িয়ে।
বিল্ডিংয়ের মতো ভেতর যাচ্ছে তাহুরা মাইকের শব্দ কিছুটা কমে আসছে।
————-
উমাইর তার কেবিনের দরজার আড়ালে।তাহুরাকে আসতে দেখে হাত টেনে আনে ভেতরে।দরজার সাথে ঠেকিয়ে দাঁড় করায়। কর্কশ গলায় প্রশ্ন করে ওঠে,
–“ছেলে নিয়ে ঘোরা হচ্ছে? নিবরাস ছাড়া বাকি দুই ছেলে কে?হেসে হেসে লাড্ডু খাও?লাড্ডু?এখন দিবো একটা কানের নিচে?”
তাহুরা ভীত,চমকিত।উমাইরের আঁখিতে দৃষ্টি মেলানো দায়।লোকটার দৃষ্টি হিংস্র।এখনই খুবলে খাবে এই দৃষ্টি।তাহুরার অন্তর কম্পিত। আঁখি জোড়া জ্বলে।তাহুরাকে কিভাবে দেখলো উমাইর?কই তাহুরা তো দেখেনি তাকে!ভাবনার মাঝে নিজ গালে আরো গভীর স্পর্শ টের পায় সে।
উমাইর দুই আঙ্গুলে তাহুরার গাল চেপে ধরে।তার বিশাল দেহের ছায়ায়ও স্পষ্ট জ্বলজ্বল করছে তাহুরার দু চোখ। নাহ মায়া লাগেনি, নেশা লেগেছে।মেয়েটাকে কে বলেছে রোদে এমন ছেলে নিয়ে ঘুরতে?ছেলেগুলো ওর দিকে সাথে অন্য মেয়েদের দিকে তাকাচ্ছিল। মুর্দা কথা,তাদের দৃষ্টি তাহুরাতে কেনো পড়েছে এই নিয়ে উমাইরের যতো অভিমান।অথচ,তার মতো ম্যাচিউর পুরুষ এমন হালকা ব্যাপার না বোঝার কিছু নেই।তবে কি ভালোবাসা সত্যি মানুষকে বোধশূন্য করে?
তার মনের পক্ষিকে পারছে না উমাইর এখনই খাঁচায় বন্ধী করতে।
তাহুরা চুপ থাকলে গালে আরেকটু চাপ দেয় সে,
–“এই কথা বন্ধ কেনো?”
–“আম..আমি জানতাম না ওরা আসবে।আমি…
আমি…আমি ছেলে নিয়ে ঘুরি না।সত্যি কথা।”
হাউমাউ করে কেঁদে উঠে তাহুরা।উমাইর চেয়ে চেয়ে মেয়েটার অশ্রুপাত দেখে।চোখ খিঁচে আবারও গাল খুলে শ্বাস নিচ্ছে মেয়েটা।গাল ছাড়েনি উমাইর তখনো।হালকা ঝুঁকে তাহুরার পানে,
–“কলেজে কাজ কি?আমাকে জানাওনি কেনো তুমি আজকে বের হবে বাসা থেকে?”
তাহুরার গলা শুকিয়ে আসে।লোকটা নিজে যোগাযোগ করে না,তাহুরা আবার যেঁচে কেনো জ্বালাবে লোকটাকে?মাঝে মাঝে বেশি মনে পড়লে তখন দু তিনবার মেসেজ দেয় সে উমাইরকে।তাও ফলাফল শূন্য ই থাকে।
–“পরের বার থেকে বলবো।”
নাক টানে তাহুরা।
উমাইর সোজা হয়।দু হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে চোখের পানি পুছে দেয় প্রিয়তমার,
–“আচ্ছা।দেখি, কাঁদে না আর।”
তাহুরা নিজেকে সামলায়,কষ্ট করে দৃষ্টি দেয় লোকটার অবয়বে।
কলেজের জন্যে উমাইরের গেটআপ অন্যরকম।অতীব মোলায়েম দেখায় উমাইরকে।চেক ডিজাইনের ফুল হাতা শার্ট ইন করে পড়েছে সে।গালে খোঁচা দাড়ি।চুল একপাশ করে আঁচড়ানো।গালের চোয়াল অত্যন্ত ক্ষীণ।ভ্রু জোড়া সমান্তরাল।
উমাইর তার অফিস ব্যাগ হতে একটা খাম বের করে।তাহুরার হাতে দেয়,
–“ভাবীকে দিবা।ভাই দিয়েছে।আমার যাওয়ার কথা ছিল তোমাদের বাসায়,কিন্তু তোমার মাধ্যমে পাঠালাম।”
–“আপনি যাবেন না?”
তাহুরা প্রশ্ন করে।
–“যাওয়ার আর দরকার কি!যেটা বেশি দরকার ছিল সেটা এইখানে পেয়েছি,শান্তনা দিয়েছি।আরেকটা কাজ করতে ইচ্ছা হয়েছে।সেটা কালকে করবো।”
উমাইর তির্যক হাসে।তাহুরা তাড়াহুড়ো ভঙ্গিতে কিছু আন্দাজ করতে পারেনি।সে সহসা প্রশ্ন করে,
–“বুঝলাম না!”
–“বুঝবে কালকে।যখন আমার কাজে তুমি অজ্ঞান হবে।”
উমাইর বুকে হাত গুটিয়ে দাঁড়ায়।
তাহুরা আবারও প্রশ্ন করতে নিলে উমাইর তার কান ধরে।টেনে বলে,
–“ক্লাসমেট হোক আর যে হোক,অন্য ছেলেকে তোমার পাশে ফের যদি দেখি আমি,বিনা কথায় গিয়ে হার্ট করবো।”
–“মারবেন আমাকে?”
একটু ভয় পেয়ে বলে তাহুরা।
উমাইর হাসে।এক হাতে নিজের চুল ঠিক করে।আঙুল দ্বারা তাহুরার মাথায় টোকা দেয়,
–“বোকা মেয়ে,তোমার পাশে যে ছেলে থাকবে তাকে। ইউ নো,এককালে আমার এক ঘুষিতে মানুষ সেন্সলেস হতো।”
দরজায় টোকা পড়ে।তাহুরার কানে এখনো উমাইরের কথা বাজছে।আজকের পর পরিবারের ছেলে ব্যতীত কোনো ছেলেকে নিজ ত্রিসীমানায় আসতে দিবে না তাহুরা।
–“স্যার,আপনি বিজি?”
মেয়েলি সুর।দরজা হালকা ধাক্কায় খুলে।তাহুরা একটু খেয়ালী হয়।সকালের ম্যাম এটা।এইখানে এসেছেন!কেনো?
–“বলতে পারেন।”
–“সবাই লাঞ্চ করেছে। আমি আপনার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম।”
ম্যামের কথায় অন্য সুর।তাহুরার মনটা নড়ে উঠে।
–“অপেক্ষা তাহলে করতেই থাকতে হবে।বিকজ,আমি লাঞ্চ এইখানে করবো না।বাসায় ফিরবো একটু পর।আজকে আমার লাঞ্চ বাসায়।”
উমাইরের কথায় তিক্ততা।
–“ওকে।হ্যাভ এ নাইস লাঞ্চ।”
ম্যাম যেইভাবে প্রফুল্লতায় এসেছে সেইভাবে বিষন্নতা নিয়ে ফিরলো।
তাহুরা মলিন কণ্ঠে বলে,
–“আমি তাহলে আসি।”
–“আসতে চাইলে আসো,আমি রেডি আছি।”
উমাইর ঠিক কতটা গভীর মনোভাবে কথাটা বললো তাহুরা বুঝেনি।উল্টো জবাব দেয়,
–“কই আসবো?আমি বাসায় যাচ্ছি।”
তাহুরা আর দাঁড়ায় না।দ্রুত বেরিয়ে পড়ে।
তার যাওয়ার দিক লক্ষ্য করে উমাইর অধর চেপে হাসি আটকে রাখে।কপালে দুই আঙ্গুল ঠেকে বলে,
–“তোমাকে সবকিছু বুঝিয়ে ডিটেইলসে বুঝানোর অপেক্ষায় আছি রূপসী।তুমি যে কার হাতে পড়েছো বোকা মেয়ে!”
–“আমি যতটা উন্মাদ তোমার প্রতি,তুমি ঠিক ততটা নাজুক।তুমি আস্ত এক আদর,আমার ভালোবাসা।”
.
–“কিরে,এতক্ষণ লাগে নাকি?”
খানিক অবাক হয় স্বাগতা।
–“আরে,ওরা কি এখন আর স্যার,স্টুডেন্ট?ওদের মাঝে কতো ভাব হবে এখন।ওরা এখন আত্মীয়।হয়তো,কুশল বিনিময় করতে করতে সময় গেলো।”
হাহা করে হাসে চৈতালি।
তাহুরা অধরে হাত চাপে।কি লজ্জাকর পরিস্থিতি!
–“এমন কিছু না।”
লাজুক স্বর তাহুরার।
–“কেমন কিছু?”
স্বাগতা ফের প্রশ্ন করলে উত্তর আসে পেছন থেকে।উত্তর যেনো হাঁটছে,
–“জিনিস খুঁজতে দেরী করেছি আমি।”
আসলেই উত্তর হাঁটছে উমাইরের সাথে সাথে।তার বিশাল অবয়ব দেখতে পায় তিনজন।
স্বাগতা,চৈতালি জোরে সালাম দেয়।উমাইর না পেছন ফিরলো,না ডানে না বামে।কেবল হাত উঠিয়ে ইশারা করে।
তাহুরা দৃষ্টি ঘোরায়।উমাইর মিথ্যা বলেছে শুধু তাহুরাকে বাঁচানোর জন্যে? লাজ ভর করে তার শরীরে।
–“এটা বলতে তোর এতক্ষণ লাগে?”
স্বাগতা বলে।
–“আমি জানিনা কিছু।গেলাম আমি।বড্ড দেরী হয়েছে।”
ব্যাগ খুলে মোবাইল রাখে,সাথে চুড়ি জোড়া সামলিয়ে নেয়। নিবরাসের কিনে দেওয়া।অবশ্য উমাইর জানলে হয়তো চুড়িগুলো ভেঙেই ফেলবে।লোকটার আসলে সমস্যা কি?
স্বাগতা,চৈতালি তাহুরার সাথে বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত যায়।পরপর সকলে নিজ গন্তব্যে ছুটে।
বাসায় গিয়ে সর্বপ্রথম তাহুরা খাম দেয় বোনকে।সুনেরা অবাক হয়।জিজ্ঞেস করে,
–“এটা কি?”
–“উমাইর স্যার দিয়েছে কলেজে।জুবায়ের ভাইয়া নাকি তোমার জন্যে পাঠিয়েছিল।আমাকে কলেজে দেখে স্যার তাই আমাকে দিয়ে পাঠায় উনি।”
তাহুরা জবাব দিয়ে বোরকা খুলে। সুনেরা খাম খুলে অবাক।তার মনের দখলদার তাকে শেষ চিঠি লিখেছে প্রেমিক হিসেবে। সুনেরা মুচকি হেসে চিঠি পড়তে আরম্ভ করে।
মুখ ধুয়ে এসে তাহুরা বোনের হাসিমুখ দেখে।নিশ্চয় তার দুলাভাই আপুর মন খুশি করতে কিছু লিখেছে।তার বোন সত্যি ভাগ্যবতী।
.
উমাইর দুপুরের খাবার খায় মায়ের সাথে।তখন অনেকটা বিকাল। সন্ধ্যায় তাদের ফুটবল খেলার পরিকল্পনা আছে।জুবায়েরের কালকে হলুদের অনুষ্ঠান, তাও সে আজ খেলতে যাবে।ফুটবল খেলাটা তাদের অন্যরকম আকর্ষণ।মূলত ভাইয়ের জন্যে অপেক্ষা করছে উমাইর।নিবরাস ইতিমধ্যে তাদের ক্লাবে।
উমাইর তার কক্ষের বারান্দায়।গাছের পরিচর্যা করলো হালকা।গোলাপের গাছ আবারও মৃত।যে চার-পাঁচটা ফুল হয়েছিল সেগুলো সব শুকিয়ে এরপর উমাইর তার বইয়ের ভাঁজে রেখেছে।আগের গাছের ফুলগুলোও আছে।
মৃত গোলাপ গাছ সাইডে রাখে সে।কোমরের পিছে দুই হাত রাখে,
–“ফুল গাছের মালকিনকে কবে আমার ঘরে আনবো?মন ভরে দেখবো?”
–“ধৈর্য উমাইর,ধৈর্য।”
দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে উমাইরের।ছাদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।এইভাবে লাইটিংয়ের কাজটা পরখ করা দরকার।যেই ভাবা সেই কাজ।টুকটাক আত্মীয় বাসায়।উমাইর মোবাইলে মনোনিবেশ করে হাঁটতে থাকে।পা থামে তার পেছন থেকে মায়ের ডাকে।মায়ের পাশে জাফরান।
–“বলো,মা।”
উমাইর মোবাইল পকেটে পুরে।
–“আসলে আব্বা..কথাটা কিভাবে বলবো!”
উমাইর কোলে তুলে জাফরানকে।বিনা দ্বিধায় বলে,
–“রিল্যাক্সে বলো মা।”
–“আমি কি নম্রতাকে বলবো,তুমি তাহুরাকে পছন্দ করো সেটা?”
মেঘলা খানিকটা দমে যাচ্ছে।
–“কাহিনী কি?”
উমাইর গাল টানে জাফরানের।মেঘলা ভয় পাচ্ছে,অথচ উমাইর কেমন শান্ত।
–“তুনাজ কিছুতে মানছে না।সে কালকে আবারও তার বাবার সাথে মিলে তাহুরার বাবাকে…”
–“ওহহ।মামীকে কিছু বলার দরকার নেই।যেটা করবো আমি দেখছি।”
উমাইর মাকে থামিয়ে উত্তর দেয়।
–“আব্বা,তুমি মারপিট করবে নাকি?আত্মীয় স্বজন মানুষ!”
মেঘলা ছেলের হাত ধরে আকুতি করে।
–“প্রথমে বুঝাবো,এক বোঝানোতে রাজি হলে ভালো।তাহুরার সাথে রিলেটেড কোনো কিছু আমি হালকায় নিচ্ছি না।”
জাফরানকে কোল থেকে নামায় উমাইর।পকেট থেকে ফোন বের করে ফের।তবে মোবাইল চালুর পূর্বে মাকে বলে,
–“টেনশন করো না,আগের মতো সরাসরি উমাইর কারো গায়ে হাত তুলে না।স্যার মানুষ আমি,কিন্তু গায়ে জ্বালা সৃষ্টির মতো কথা আমি বলতে জানি।সব কেস আজকে মিটিয়ে দিবো।”
–“আব্বা,তুমি বেশি ভেজাল করো না।”
–“তুনাজ ভেজাল করলে,আমি না করে কিভাবে থাকি?বিষয়টা আমার ঐ বোকাকে নিয়ে,যে বোকাটা একান্ত আমার।”
পরপর উমাইর মোবাইল কানে লাগায়।গম্ভীর,থমথমে সুরে বলে উঠে,
–“ভাই,আমি খেলবো না।অন্যকে খেলাতে বেরুচ্ছি।”
চলবে……