#রেখেছি_তারে_বক্ষ_পিঞ্জিরায়
#অন্তিম_পর্ব
#জান্নাত_সুলতানা
-“একদম নড়াচড়া করবে না জান।
আমি নিচে গিয়ে মা কে রুমে পাঠাচ্ছি।”
কথা টা বলে সাহাব আলো’র কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো।
আলো মুচকি হাসে বিনিময়ে সাহাবও হাসে।
কিন্তু কেন জানি ওর অস্থির অস্থির লাগছে ভিতর টা।
সাহাব বেরিয়ে যায় কক্ষ হতে।
আলো চোখ বন্ধ করে বালিশে হেলান দিয়ে শুয়ে থাকে।শরীর টা কয় দিন ধরে ভালো যাচ্ছে না নয় মাস চলে।
খাবার ঠিক ঠাক মতো খেতে পারে না বমি সাথে অরুচি তো আছেই।
আজ সন্ধ্যায় সাফারাত রায়শার বিয়ে।
বাড়ির মানুষ সবাই ব্যস্ত।আলো’র পেটে চিনচিন ব্যথা করছে।তাই রায়শার রুমে আর থাকে নি।
বেরিয়ে এসছে সেখান থেকে যদি উল্টো পাল্টা কিছু হয় তবে মেয়ে টার আনন্দ টা নষ্ট হবে।যদিও এতে কারোর হাত নেই সব আল্লাহর ইচ্ছে।
তবুও আলো চায় না ওর জন্য এতো সুন্দর একটা দিন নষ্ট করতে।
এই দিন টা সব মেয়ে ছেলের জন্য একটা আনন্দ স্বপ্ন পূরণের দিন আর সেখানে তাদের ভালোবাসার বিয়ে।
এসব ভেবেই আলো আস্তে আস্তে হেঁটে রুমে চলে আসে।
আর সাহাব তখন আলো কে রুম থেকে খুঁজে বেড় হচ্ছিল।
দরজায় এসে আলো কে পেয়ে ধরে নিয়ে এসে শুতে সাহায্য করে আলো কে।
আলো’র ভাবনার মাঝেই পেটে প্রচুর পরিমাণ ব্যথা অনুভব করলো।
বেডশিট খামচে ধরে আলো।
চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
আলো ব্যথা আর সহ্য করতে না পেরে অনেক কষ্ট ডেকে উঠে
-“সাহাব?”
আর সাহাব তক্ষুনি ফলের থালা হাতে রুমে এসছিল।
আলো’র এমন করুন কণ্ঠে নিজের নাম শোনে সেটা সেন্টার টেবিল রেখে দৌড়ে আলো’র কাছে এসে অস্থির হয়ে বলতে লাগলো
-“কিছু হবে না একটু ধৈর্য্য ধরো। ”
কথা গুলো বলতে বলতে সাহাব আলো কে কোলে তুলে তাড়াতাড়ি নিচে চলে আসে।
ততক্ষণে বাড়ির সবাই এসে পড়েছে।
আরিফ গিয়ে গাড়ি বের করে।
আর বাড়িতে থাকা প্রতি টা ব্যক্তি দোয়া করতে থাকে যেনো মা সন্তান দুজনেই সুস্থ থাকে।
—————
-“আলো তাড়াতাড়ি এসো।
আরাব কাঁদছে।”
-“কেন এখন আমাকে কেন ডাকছেন?
আপনাদের তো আমাকে প্রয়োজন হয় না।”
কথা টা বলতে বলতে আলো রুমে প্রবেশ করে।
কোলে ছয় কি সাত মাসের একটা মেয়ে বাবু।
রুমে ডুকতেই মেয়ে বাবু টা সাহাবের কোলে থাকা আরাব এর দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠে।
সাথে সাহাবও হাসে।
আলো ভ্রু কুঁচকে নিজের ছেলের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে
-“তোমার সুয়েটার কোথায়?”
আরাব বাবার দিকে অসহায় ফেস করে তাকায়।
সাহাব চোরা চোখে একবার বউয়ের দিকে তাকায় তো একবার ছেলের দিকে।
আমতা আমতা করে বলে উঠে
-“চকলেট মেখে ফেলেছে ড্রেসে।”
-“আমি খাইয়ে দিলে তো এমন হয় না?”
-“মাম্মা।
পাপা মিথ্যা ব,,,
-“আরাব তুমি তোমার দাদুর কাছে যাও।”
-“কোথাও যাবে না।
ওয়াশরুম যাও।”
কথা টা বলতে বলতে আলো নিজের কোলে থাকা রাফা কে সাহাবের কোলে দিয়ে আরাব কে নিয়ে ওয়াশরুম চলে গেলো।
————
আলোর আর সাহাবের ছেলে আরাব। চার বছর চলে।
রাফা সাফারাত আর রায়শার মেয়ে।
ছয় মাস চলে।
দেখতে দেখতে চার চারটি বছর কেটে গিয়েছে।
আলো অনার্স শেষ করেছে।
রায়শা এখন পড়া লেখা করে এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে।
আজ পরীক্ষা আছে তাই রায়শা কে বাড়িতে রেখে গিয়েছে।
সাফারাত অফিস গিয়েছে।
বাড়িতে সাহাব কোনো এক অজানা কারণে রয়ে গিয়েছে।
——-
দুপুরে খাবার খেয়ে আলো বাচ্চাদের নিয়ে ঘুমিয়েছে এখন পাঁচ টা বাজে।
সাহাব দুপুরে একবার রুমে এসছে তার পর বেরিয়েছে আর রুমে আসে নি না-কি?
ভ্রু কুঁচকে ভাবে আলো।
হয়তো আসে নি।
আর রাফার মাও কি ভার্সিটিতে থেকে আসে নি একবারও এলো না যে।
আলো আর বেশি কিছু ভাবে না।
ওয়াশরুম চলে যায়।
নিজে ফ্রেশ হয়ে এসে বাচ্চাদের ডেকে তুলবে।
ভেবে ওয়াশরুম চলে যায়।
মিনিট পাঁচ এক পর আলো বেরিয়ে আসে।
তার পর বাচ্চাদের ডেকে তুলে।
ফ্রেশ করিয়ে এনে গরম কাপড় পড়িয়ে নিচে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয়।
পুরো বাড়ি অন্ধকার এমন তো কখনো হয় না।একটু পর আযান দেবে।আর বাড়ির মেইড কেউ লাইট দেয় নি এখন।
আলো রাফা কে শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে আরাব কে নিয়ে আবছা আবছা আলোর মধ্যে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামে।
নিচে আসার সঙ্গে সঙ্গে পুরো বাড়ি আলোকিত হয় উঠে।
আর বাড়ির প্রতি টা সদস্য এক সাথে বিবাহ বার্ষিকী উইস করে।
আলো অবাক হয়ে চার দিকে দেখতে লাগলো।
আরাব রাফা দুজেনই হাসছে।
আরাব হাত তালি দিচ্ছে লাফিয়ে লাফিয়ে আর রাফা কোলে থেকে খিলখিল করে হাসছে ভাইয়ের কান্ড দেখে।
সারা বাড়ি লাইটিং করা।
ফুল বেলুন দিয়ে সাজানো। আর মাঝখানে সেন্টার টেবিলে সুন্দর একটা কেক রাখা।
সবাই এক সাথে দাঁড়িয়ে আছে।
সাফারাত এসে আরাব কে কোলে তুলে নেয়।
আর সাহাব এগিয়ে এসে আলোর কাছ থেকে রাফা কে নিজের কোলে নিয়ে ডান হাত টা আলোর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠে
-“Happy anniversary ”
বিনিময়ে আলো মুচকি হেসে সাহাবের হাত টার উপর নিজের ডান হাত রাখে।
সাহাব শক্ত করে সেই তুলতুলে ছোট হাত টা নিজের শক্ত হাতের মাঝে বন্দী করে এগিয়ে যায় কেক টার কাছে।
——–
রাত নয় টার দিকে সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে নেয়।
আর অফিসের কিছু কলিগ আর সাহাব, সাফারাতের কয়েক জন ফ্রেন্ড এসছিল সবাই চলে যায়।
সামলা তালুকদার কে অনেক আগেই খাবার খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিয়েছে রায়শা।
তিনি অনেক টাই নরম হয়ে গিয়েছে।
হয়তো ওনার সময় ফুঁড়িয়ে আসছে।
শারমিন তালুকদার আর সেলিম তালুকদারও তারাও খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে চলে গিয়েছে।
এখন ডাইনিং টেবিলে শুধু সাহাব রা রয়েছে।
আরাব আর রাফা কে রুমে দিয়ে এসছে।
দুই ভাই বোন খেলছে।
তাই চিন্তার কোনো কারণ নেই।
সবাই খাবার খেয়ে উঠে সাফারাত এর রুমে চলে আসে।
কিন্তু রুমে এসে কাউ কে আর দেখতে পায় না।
রায়শা দৌড়ে শাশুড়ীর রুমে গিয়ে দেখলো তারা বাচ্চাদের সাথে খেলছে।
রাফার খাবার তো মায়ের কাছে তাই রাফা কে রায়শা নিয়ে চলে যায়।
কিন্তু আরাব বায়না ধরেছে সে আজ দাদা দাদির কাছে ঘুমুবে তাই অগত্যা আরাব কে ছাড়াই আলো রুমে ফিরে আসে।
আর এসেই আলো অবাক।
পুরো রুম অন্ধকার আর ফুলের গন্ধে সারা রুমে জুড়ে মৌ মৌ করছে।
আলো একটু সামনে এগুতেই দরজা টা কেউ পেছন থেকে লাগিয়ে দিয়ে ধীরে পায়ে এগিয়ে আসছে আলো বুঝতে পারছে।
কিন্তু নড়াচড়া করার মতো শক্ত পাচ্ছে না আলো।
সাহাব দরজা টা আটকে এসে আলোর শরীরে থাকা শীতের চাদরে সরিয়ে আলো’র অনাবৃত কোমরে শাড়ীর সরিয়ে নিজের ঠান্ডা শক্ত হাত টা আলো’র কোমরে রাখে।
আলো ততক্ষণে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে।
-“এসব কখন করেছেন?”
-“আমি না সাফারাত আর আরিফ সাজিয়েছে।”
-“বয়েস হয়েছে সে দিকে খেয়াল আছে?”
-“সেই জন্যই তো আরাবের একটা বোনের ব্যবস্থা তাড়াতাড়ি করতে হবে।”
-“অসভ্য পুরুষ।
আপনি আর কোনো দিন ভালো হবেন না?”
-“সবার কাছে হলেও তোমার কাছে হতো পারবো না।
কারণ প্রতি টা পুরুষ তার ব্যক্তিগত নারীর কাছে অসভ্য।
আর যদি ভালো হয়ে যায় তবে ভবিষ্যত প্রজন্ম কোথা থেকে আসবে?”
-“চুপ করুন অসভ্য পুরুষ।
ভুল হয়েছে আমার।”
-“তবে বাবার রাজকন্যা আনার মিশন শুরু,,,
সাহাব সব টা কথা সম্পূর্ণ করার আগেই আলো সাহাবের দিকে ফিরে ঝাপটে জড়িত ধরে সাহাব কে।
সাহাব মুচকি হেসে কোলে তুলে নেয় আলো কে।
বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজের ভালোবাসার দিয়ে দিশাহারা করে তুলে আলো কে।
স্বামীর ভালোবাসায় দিশেহারা আলো যখন দিক খুঁজতে ব্যস্ত ঠিক তক্ষুনি কানে ভেসে আসে
-“ভালোবাসি বউ।
এভাবে মরণের আগে অব্দি রেখে দেবো তোমায় আমার বক্ষ পিঞ্জিরায়।”
~সমাপ্ত~