#রেখেছি_তারে_বক্ষ_পিঞ্জিরায়
#পর্ব_৭
#জান্নাত_সুলতানা
-“কি হয়েছে তোমার?
আজ এক মাসেরও বেশি দিন ধরে এমন কেন করছো?”
আলো রুমে এসছিল মাত্র। রুমে আসার সঙ্গে সঙ্গে সাহাব ওকে টেনে এনে বিছানায় ফেলে দিয়ে নিজের দু হাত দ্বারা আলোর হাত বিছানায় চেপে ধরে দাঁত কটমট করে উপরোক্ত কথা গুলো হিসহিসিয়ে বলে উঠে।
আলো হঠাৎ এমন আকস্মিক ঘটনায় ভয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।
কিন্তু সাহাবের এমন রাগী কণ্ঠে শুনে।আস্তে আস্তে চোখ খোলে।
খুব স্বাভাবিক ভাবে নিজেও উল্টো সাহাব কে প্রশ্ন করে
-“কি করেছি?”
সাহাব এবার আরও রেগে গেলো।
আগের চেয়ে দ্বিগুণ শক্ত করে চেপে ধরে আলোর হাত।
আলো ব্যাথা পায়।চোখে কোঠরায় পানি জমে চোখ চিকচিক করে উঠে।
হাল্কা আর্তনাদ করে উঠে।
সাহাব আলোর অবস্থা দেখে তড়িঘড়ি করে হাত ছেড়ে দেয়।
আলোর উপর থেকে উঠে সাইডে বসে।
নিজের হাত দিয়ে চুল খামচে ধরে।
বিরবির করে কিছু বলে। কিন্তু আলোর কানে তা আসে না সে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিয়েছে।
আলো নিজেও সুয়া থেকে উঠে বসে।
গায়ের ওড়না টা ভালো করে জড়িয়ে নেয়।
চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়া পানি মুছে নেয়।
বিছানা থেকে নেমে গিয়ে ব্যালকনির দিকে চলে যায়।
সাহাবও আলোর পেছন পেছন এসে আলোর পাশে দাঁড়ায়।
রাত দশটার মতো বাজে হয়তো।
আজ সাহাব তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরেছে।
কারণ একটাই আর সেটা হলো বউ তার আজ অনেক দিন ধরে তার সাথে ঠিক করে কথা বলে না।
রাতে তার জন্য অপেক্ষা করে না।ঘুমিয়ে পড়ে।সকালে সাহাব ঘুম থেকে উঠার আগে সাফারাতের সঙ্গে ভার্সিটিতে চলে যায়।
সাহাব এসব প্রথম প্রথম স্বাভাবিক ভাবে নিলেও।
পরে বুঝতে পারে বউ তার উপর কোনো কারণে অভিমান করে আছে।
কিন্তু অভিমান ভাঙ্গানোর মতো সময় সাহাব পায় নি।
নারী প্রচারকারী দলের লোক গুলো ধরা পরেছে। এনিয়ে অনেক দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে।
সেই সাথে নিজেদের কোম্পানির অনেক গুলো ডিল ছিল সে গুলো করতে হয়েছে সব মিলিয়ে সময় করে উঠতে পারে নি।
সাহাবের ভাবনার মাঝেই আলো শান্ত চোখে সামনে অন্ধকারে দিকে তাকিয়ে বলে উঠে
-“বাবা মায়ের ভালোবাসা পায়নি।বাবা রাজনৈতি করতো মা চাকরি। তারা আমাকে সময় দিতে পারতো না।কাজের লোকের কাছেই আমার ছোট বেলা কাটে।কিন্তু কখনো সে টা নিয়ে ভাবি নি।কিন্তু যখন কিন্ডারগার্টেন ভর্তি হলাম। তখন স্কুলে যখন সবার মা নয়তো বাবা তাদের স্কুল নিয়ে আসতো তখন আমাকে বাড়ি কাজের লোক দিয়ে আসতো নিয়ে আসতো।এভাবেই চলছিল দিন। মন খারাপ হতো।কিন্তু বাবা বা মায়ের কাছে কখনো তা নিয়ে বায়না করি নি।তবে মনে মনে তাদের প্রতি অনেক অভিমান জন্মায়।আর যখন সাত বছর বয়সে বাবা মা দুজনেই আমাকে একা করে সেই অভিমানের পাল্লা টা আরও ভারি করে দু’জন আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেলো।যেখান থেকে চাইলেও কেউ ফিরে আসতে পারে না আর না কেউ ফিরিয়ে আনতে পারে।
আর ঠিক তক্ষুনি বাবাই এলো আর আমাকে একটা সুন্দর পরিবার পরিচয় দিলো।এখানে এসে এতো এতো ভালোবাসা পেয়েছি হয়তো তা কোনো দিন সুদ করতে পারবো না।আস্তে আস্তে বড় হলাম আপনি সাফারাত ভাই সবাই ভালোবাসা পেয়ে আমি আমার অতীত ভুলে গেলাম।আর যখন ষোল বছর তখন বুঝতে পারলাম আমি কাউকে ভালোবাসি। কিন্তু সেই চাওয়া আমার জন্য নিষিদ্ধ।কিন্তু মন সে শুনলে তো? মন যে বড় বেহায়া। যে আমাকে পরিবার দিল তার বড় ছেলে কেই আমার মনে অজান্তেই জায়গায় দিয়ে ফেলেছিলাম।লোকে জানলে কি বলবে? ছিঃ ভাই কে কি করে কেউ ভালোবাসতে পারে?লোক চক্ষে মুখ দেখানো দায় হবে যে।এসব ভেবে সব সময় তার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকতাম। এভাবেই চলছিল দিন। কিন্তু আমার মনে সব সময় সে রাজত্ব করতো।আর আমার জীবনেও তার রাজত্ব বেশি ছিল। আমি বুঝতে পারতাম না সে কি আমায় বোন মনে করে এমন করে নাকি অন্য কারণ? আর যখন ইন্টার পরীক্ষা শেষ হলো।তখন একদিন জানতে পারলাম সে মাফিয়া। তারও অনেক বড় গ্রুপ আছে আর সে সেখানকার লিডার। সে দিন অনেক কেঁদে ছিলাম। যদিও সেই কান্নার কোনো মানে ছিল না।
চাওয়া গুলো যে নিষিদ্ধ ছিল। আস্তে আস্তে তাকে নিজের মন মাথা দুই টা থেকে বিদায় করতে উঠে পরে লাগলাম। কিন্তু এটা আমার জন্য এতো সহজ ছিল না।তবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলাম। কিন্তু মস্তিষ্কের কাছে সফল হলেও মনের কাছে পারলাম না।আর যখন বিয়ের কথা হলো। তখন মা আমায় সব টা জানিয়েছে।প্রথমে খুশি হয়েছিলাম কিন্তু আপনার প্রফেশন এর কথা মাথার আসতেই সে খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। কিন্তু আপনার ভালোবাসা আর দাদুনের আবদার এই পরিবারের প্রতি টা মানুষের ভালোবাসা। স্বার্থপর হয়ে গিয়ে ছিলাম কিন্তু আপনার ক্ষমতা র কাছে গিয়ে সে টায় আমি বিজয়ী হতে পারি নি।
কিন্তু আপনি তো আমায় কথা দিয়ে ছিলেন এসব ছেড়ে দিবেন।
তবে এখন কেন তা হচ্ছে না।
প্লিজ আপনি এসব আর করবেন না আমি শান্তিতে সংসার করতে চাই।পরিবারের প্রতি টা মানুষ কে আগলে রাখতে চাই একটা সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক জীবন চাই।পরিবার নিয়ে ভালো থ,,,,
আলো এক নিশ্বাসে সব গুলো কথা বলে।কিন্তু লাস্ট কথা গুলো বেশ উত্তেজিত হয়ে হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে বলে।
তবে লাস্ট কথা গুলো সম্পূর্ণ করতে পারে না তার আগেই ঢলে পড়ে সাহাবের উপর।
সাহাব আগলে নেয় বউকে।
অস্থির হয়ে কয়েক বার ডাকে কিন্তু আলো কোনো রেসপন্স করে না।
সাহাব হন্তদন্ত হয়ে কোলে তুলে নিয়ে রুমে এসে বিছানায় সুয়ে দেয় বউ কে।
মা কে ডাকে।মূহুর্তের মধ্যে বাড়ির মেইড থেকে শুরু করে সামলা তালুকদার হাজির হয় এখানে।
সাহাব আরিফ কে ফোন দিয়ে ডক্টর নিয়ে আসতে বলে।
শারমিন তালুকদার আলোর হাত ঘষছে। রায়শা পায়ের কাছে বসে পায়ের তালু ঘষে। কাজের দুই জন লোক বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রায় আধঘন্টা পর আরিফ সহ ডক্টর নিয়ে রুমে এসছে।
সেলিম তালুকদার ডক্টর কে কিছু বলে বেরিয়ে যায়।
সাহাব তখনো বউয়ের হাত ধরে বসে।
সাফারাত, আরিফ বেরিয়ে যায়। শুধু মহিলার আছে।
———–
-“বলেছি না বেশি লাফালাফি না করতে? ”
আলো সাহাবের কথা পাত্তা দেয় না নিজের মতো করে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য দরজার দিকে পা বারাতেই সাহাব খপ করে ওর হাত ধরে আটকে দেয়। হাতে থাকা প্যাকেট গুলো পাশে দরজার কাছে থাকা টেবিলে সেগুলো রেখে দিয়ে ঝট করে কোলে তুলে নেয় বউ কে।
বিছানায় সুয়ে দিয়ে নিজেও আলো’র উপর হাল্কা ঝুঁকে পেট থেকে জামা টা সরিয়ে সেখানে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় পর পর কয়েক বার।
আলো কেঁপে কেঁপে উঠে কিন্তু চুপচাপ বেডশিট খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে রাখে।
সাহাব নিজের মতো করে কতক্ষণ নিজের অস্তিত্বের সাথে বকবক করে।হ্যাঁ সে দিন ডক্টর বলেছে আলোর ছয় সাপ্তাহ চলে।
আলো খুশি হয়েছে কি না দেখে বুঝার উপায় নেই। তবে সাহাব ভীষণ খুশি এটা তার কেয়ার যত্ন দ্বিগুণ হয়েছে বউয়ের প্রতি।
সবাই যখন চলে গিয়েছইল সে রাতে আলো আর ঘুম থেকে উঠে নি।
কিন্তু সাহাব সে রাতে আর ঘুমায় নি।সারা রাত বউয়ের পাশে বসে কাটিয়ে দিয়েছে।
আলো সকালে উঠে দেখেছিল সাহাব তার পাশে বসে।
আর রাতের সব ঘটনা রায়শা তাকে বলেছিল।
আলোর ভাবনার মাঝেই সাহাব আলো’র উপর থেকে উঠে বসে সার্ট এর উপর পরিহিত ব্লেজার টা খুলতে খুলতে আলো কে বলে উঠে
-“চুপ চাপ খাবার গুলো ফিনিশ করো।
আর একটা কথা আজ সবাই কে বিদায় করে দিয়েছি।”
কথা টা বলেই সাহাব তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুম চলে যায়।
আলো হতভম্ব হয়ে সে দিকে তাকিয়ে থাকে।
কি বলে গেলো সাহাব এটাও সম্ভব?
এটা কি সত্যি?
#চলবে……
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]