#রেখেছি_তারে_বক্ষ_পিঞ্জিরায়
#পর্ব_৬
#জান্নাত_সুলতানা
-“মেয়েটাকে ড্রাগস দেওয়া হয়েছে।
আজ রাতে এদের প্রাচার করা হতো।
ওরা মোট সতেরো টা মেয়ে।
এর মধ্যে রায়শাও ছিল।”
এইটুকু বলেই থামে সাহাব।আলোকে আরও একটু বুকের সাথে চেপে ধরে।
কম্বল টা দুজনের উপর টেনে নেয় আরও কিছু টা।
-“আমাদের এতিম খানার আটজন। বাকি গুলো বাহিরের।
সবাই কে তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আর এতিম খানার আটজনের মধ্যে সাতজন কে ওখানে রেখে এসছে আরিফ।
কিন্তু সাফারাত রায়শা কে কিছুতেই ওখানে রেখে আসতে রাজি নয়।
বোঝা গিয়েছে কিছু? ”
-“হুম।
কিন্তু রায়শার আঠারো বছর হয়নি এখনো।”
-“হুম।
দাদুনের সাথে কথা বলে দেখা যাক কি করা যায়।”
সাহাবের কথা আলো আর উত্তর করে না।
চুপ চাপ সাহাবের বুকে মাথা রেখে সুয়ে থাকে।কিন্তু সাহাব কি চুপ চাপ থাকার লোক? উঁহু নিজেও ঘুমুবে না আর বউকে ঘুমুতে দিবে না।
-“কাল ভার্সিটির প্রথম দিন।”
আলো মাথা টা একটু উঁচু করে ঘুম ঘুম চোখে পিটপিট করে তাকিয়ে আস্তে করে বলে উঠে।
সাহাব তৎক্ষনাৎ অনেক টাই বউ কে আগলে নিয়েছিল।
কিন্তু আলোর মিনমিন করে করা আবদার শুনে থেমে যায়।দু হাতে বউ কে শক্ত করে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস ফেলে বলে উঠে
-“হুম।
সাফারাত দিয়ে আসবে।
আমার একটা কাজ আছে। তবে আমি নিতে যাব।”
আলো ঘুম ঘুম কন্ঠে “আচ্ছা” বলে।হয়তো ঘুমিয়ে পরেছে। তাই সাহাব আর কিছু বলে না। নিজেও চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে।
———-
আলো সকালে ঘুম থেকে উঠে সাহাব কে পায় না।ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে নিচে আসে।
সাহাব বাদে সবাই নাস্তার টেবিলে আছে।কাল রাতের রায়শা নামের মেয়ে টাও।
শারমিন তালুকদার আলো কে দেখে বসতে বলে। আলো ওনার পাশের চেয়ার টায় বসে পড়ে। তার পর নাস্তা করে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সাফারাত এর সঙ্গে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে এলো।
সাফারাত ডাইভিং সিটে বসে আলো ফ্রন্ট সিটে বসে আছে।
সাফারাত কে আজ বেশ ফুরফুরে লাগছে।যা দেখে আলো ঠোঁট টিপে হাসে।
কিন্তু সাফারাতের চোখে তা পড়ে না।
আলো নিজে কে স্বাভাবিক করে সাফারাত কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে
-“একবারও বলে নি আগে ভাইয়া।”
সাফারাতের কথা টা বুঝতে একটু সময় লাগলো। বুঝতে পেরে লাজুক হাসলো।
তার পর আলোর দিকে তাকিয়ে একটু করুন কণ্ঠে বলে উঠে
-“বলতাম।
কিন্তু ভয় করতো যদি ভাইয়া বা বাবা না মানে।”
-“এটা কোনো যৌক্তিক কথা নয় ভাইয়া।”
ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে আলো।
সাফারাত দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। সে জানে।কিন্তু কেন বলতে পারে নি সে জানে না।হয়তো বড় ভাইয়ের মতো হলে ঠিক বলে দিতে।যেমন টা বড় ভাই খুব সহজ সাবলীল ভাবে তার ভালোবাসার মানুষ টাকে নিজের করে নিয়েছে।
কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো সে তো সাহাব নয় সাফারাত তাই হয়তো পারে নি।
এখনো তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেক টা সময় বাকি।
সাফারাত এসব ভেবেই নিজের মনের কিছু কথা আলো কে বলতে শুরু করে
-“তুমি তো জানো।আমরা সবাই মাসে একবার করে এতিম খানায় যাই।এমনি একদিন সবাই আমরা গিয়েছিলাম সে দিন। আমি তখন ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে মাত্র। সব সময় ওখানে গেলেও কখনো কারোর দিকে তেমন নজর দিতাম না। মেয়েদের এতিম খানা কি না তাই।আর তুমি খুব ভালো করে জানো আমি দাদুন,মা,তুমি ছাড়া কারোর সঙ্গে কথা বা মিশতামও না।সে দিন যখন ওখানে গিয়েছিলাম আমরা। তখন তোমারা সবাই যখন বাকি সব মানুষদের সাথে ছিলে তখন আমি ফোন নিয়ে গেমস খেলার জন্য সেখান থেকে সরে বাগানের এক সাইডে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি একটা নয়, দশ বছর একটা মেয়ে ওখানে ঘাসের উপর বসে বসে কাঁদছে।
মেয়ে টাকে আমার কাছ থেকে একদম পুরো পুরি দেখা যাচ্ছিল।আর ওর কান্নারত অবস্থায় দেখে আমার হার্ট কিছুক্ষণের জন্য স্টপ হয়ে গিয়েছিল। সে দিন আমি ওকে কান্না করতে না করি নি। কোনো এক অজানা কারণে ভালোই লাগছিল। ওর কাছ থেকে অনেক টা দূরে দাঁড়িয়ে ওর কান্না দেখছিলাম। সে দিনের পর থেকে আমি প্রায় যেতাম ওখানে।
তার পর আস্তে আস্তে ওর সাথে কথা বলতে বলতে একটা সময় জানতে পারলাম ওর বাবা দু’জনেই কার এক্সিডেন্ট করে মারা গিয়েছে। সেই থেকে ওর প্রতি আমার একটা আলাদা টান তৈরি হলো।আর সেখান থেকে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছিল।
কিন্তু ও নিজে কখনো বলে নি আমায় ভালোবাসে কি না।”
কথা গুলো বলেই সাফারাত গাড়ি ব্রেক কষে।
আলো এতক্ষণ মন দিয়ে কথা গুলো শুনছিল।
গাড়ি হটাৎ থেমে যাওয়াতে আলো ধ্যান ফিরে। সাফারাত ততক্ষণে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আলোর কাছে এসে দরজা খুলে নামতে বলে।
আলো মুচকি হেসে নেমে সাফারাত এর সঙ্গে ভার্সিটির ভিতর প্রবেশ করে।
সাফারাত আলো কে ওর এক ফ্রেন্ড এর বোনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।আলো মেয়ে টার সাথে কথা বলে জানতে পারে সেই মেয়ে টার বিয়ে হয়েছে পনেরো দিন এর মতো হবে। মেয়ে টার নাম রিয়া।
সাফারাত চলে যায় আলো মেয়ে টার সঙ্গে কথা বলে। দুজনেই এই সময়ের মাঝে অনেক টা ভাব হয়ে যায়।
আজ প্রথম দিন তাই ক্লাস হয়নি।পরিচয় পর্ব চলেছে প্রতি ক্লাসে।ছুটি দিয়ে দেয়।
আলো আর রিয়া দুইজনে ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে আসে।
ওরা বেরিয়ে এসে দেখলো রিয়ার ভাই ওর জন্য অপেক্ষা করছে।
রিয়া আলোকে বিদায় দিয়ে চলে যায়।
আর আলো দাঁড়িয়ে থাকে। সাফারাত আলো কে ভার্সিটিতে রেখে আবার বাড়ি চলে গিয়েছে।
সাহাব আসবে বলেছে নয়তো ও চলে যেতো।
এখান থেকে বাড়ি বেশি দূর নয়।হেঁটে গেলে পনেরো বা বিশ মিনিট এর মতো লাগবে।
আলোর এসব ভাবনায় যখন বিভোর ঠিক তক্ষুনি একটা কালো গাড়ি এসে থামে ওর সামনে।
আর সে টা থেকে সাহাব বেরিয়ে আসে। আলো কাছে দিয়ে এসে গাড়ি দরজা খুলে দিয়ে আলোকে বসতে ইশারা করে।
আলো সাহাবের দিকে তাকিয়ে থেকেই গাড়িতে উঠে বসে।। সাহাব একটা ফর্মাল সাদা সার্ট পড়ে আছে সাথে কালো প্যান্ট বেশ লাগছে দেখতে।
এমনিতেই সুন্দর তারমধ্য এখন আরও আকর্ষণীয় লাগছে।
যার জন্য এখানে অবস্থানরত সব মেয়ে গুলোর দৃষ্টি সাহাবের দিকে।
কিন্তু সাহাবের সে দিকে ধ্যান নেই।
সে নিজের মতো সানগ্লাস চোখে দিয়ে গাড়িতে উঠে।
আলো বসে আছে সিট বেল্ট বাঁধে নি।
সাহাব এগিয়ে গিয়ে সেটা বেঁধে দিয়ে। বউয়ের কপালে এসে পড়া থাকা ছোট ছোট চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে কপালে একটা চুমু খেয়ে সরে আসে।
আলো হটাৎ বলে উঠে
-“কষ্টে হচ্ছে।
দরকার ছিল না আমি যেতে পারতাম।”
সাহাব কে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
কিন্তু বউয়ের এমন কথায় ভ্রু কুঁচকে আসে। নিজে উল্টো জিজ্ঞেস করে
-“বলেছি?”
আলো কিছু বলে না শুধু দু’দিকে মাথা নাড়ে যার অর্থ না।
সাহাবও গাড়ি স্টাট দেয়।
-“কাল আমরা সব গুলো মেয়ে বাঁচাতে পেরেছি।আর কিছু নারী প্রচারকারী দলের লোক ধরা পড়েছে।
তবে যারা মেইন শয়তান তাদের নাগাল আমরা পায়নি।
কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
খুব শীগগির তারা-ও ধরা পড়ে যাবে পুলিশ বলেছে।
আর যত দিন তাদের ধরতে না পারছে ততদিনে আমাদের একটু সাবধানে থাকতে হবে।
কারণ এবার এটা সবাই যেনে গিয়েছে। এর পেছনে অবদান টা আমার তাই শত্রু পক্ষে আমার ফ্যামেলির উপর নজর টা বেশি হবে।
বুঝতে পেরেছো?”
-“হুম।”
সাহাবের কথা শুনে আলো ছোট করে জবাব দেয়।
কিন্তু ও কিছু একটা ভেবে চলেছে।
#চলবে….