#রেখেছি_তারে_বক্ষ_পিঞ্জিরায়
#পর্ব_৫
#জান্নাত_সুলতানা
-“বাবা আমাদের এতিম খানায় আজ সকালে থেকে একটা মেয়ে পাওয়া যাচ্ছে না।”
-“হুম আমি শুনেছি।
তুমি ভাইয়া কে ডাকো।”
সেলিম তালুকদার কথা শুনে সাফারাত দৌড়ে উপর সাহাবের রুমের উদ্দেশ্য চলে গেলো।
শারমিন তালুকদার কপালে চিন্তার ভাজ ফেলে থমথমে কণ্ঠে স্বামীর উদ্দেশ্য বলে উঠে
-“কি হচ্ছে বলুন তো?
কয়েকদিন আগেও দুই টা বাচ্চা চুরি হয়ে গেলো।
আর আজ আঠারো বছরের একজন যুবতী মেয়ে?”
-“বুঝতে পারছি না।
আচ্ছা তোমারা এ নিয়ে চিন্তা করো না।
মা কোথায়?”
-“রুমে ঘুমিয়ে আছে।”
তাদের স্বামী স্ত্রীর কথা মধ্যে সাহাব সাফারাত দুই জনে নিচে এলো।
আর ঠিক তক্ষুনি আরিফ বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে।
সাহাবের কাছে এসে দাঁড়ায়।
সেলিম তালুকদার কথা বলছে সাহাবের সঙ্গে সাফারাত সেদিকে কোনো মনোযোগ নেই। সে এক মনে কিছু ভেবে চলেছে।
শারমিন তালুকদার একজন মেইড কে ডাকতে ডাকতে রান্না ঘরে চলে গেলো।
আরিফ কিছু একটা করছে ফোনে।
আলো নিচে এসে সোজা রান্না ঘরে চলে গেলো। শারমিন তালুকদার আলো কে ডাইনিং টেবিলে বসতে বলে মেইড কে খাবার দিতে বলে।
কিন্তু আলো নিষেধ করে সব সময়ের মতো নিজে খাবার নিয়ে রান্না ঘরে শারমিন তালুকদার পাশে একটা টুলে বসে খাবার খেয়ে নিলো।
শারমিন তালুকদার বেশ খুশি। এটাই চাইতো তিনি একটা মেয়ে যে সব সময় তার আশে পাশে ঘুর ঘুর করবে।আর এখন থেকে এটা সব সময় হবে।তিনি নিশ্চিত।
এ-সব ভাবতে ভাবতে তিনি কফি গুলো একজন মেইড এর হাতে দিয়ে ড্রয়িং রুমে দিয়ে আসতে বলে।
আর নিজেও সানায়া কে নিয়ে লিভিং রুমে আসে।
-“আচ্ছা আমি দেখছি বাবা।
চিন্তা করো না।”
কথা টা শেষ করে সাহাব কফির কাপে চুমুক বসায়।
এর মধ্যে সামলা তালুকদার এখানে এসে উপস্থিত হয়েছে।
সাহাব দাদু নের ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে।
তার পর হাতে থাকা মগ টা সেন্টার টেবিলে রাখতে রাখতে আলো কে রুমে আসার জন্য ইশারা করে। শারমিন তালুকদার সেটা লক্ষ করে।
আর সাহাব উপরে যাওয়ার সাথে সাথে তিনিও আলোকে রুমে যাওয়ার জন্য বলে।
আলো মুচকি হেসে ওনাকে জড়িয়ে ধরে। রুমে চলে আসে।
সাহাব রুমে নেই। আলো ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। এখন বেলা এগারোটা মতো বাজে।এখনো সূর্যের দেখা নেই। চারদিকে কুয়াশা আচ্ছন্ন।
আলো গায়ে থাকা চাদর টা আরও একটু শক্ত করে পেঁচিয়ে নেওয়ার জন্য এটা দু দিকে ছড়িয়ে নিলো।কিন্তু সেটা আর পেঁচানো হয় না।
ঠান্ডা দুটি হাত পেছন থেকে চাদর সহ আগলে নিলো আলো কে।
আলো কেঁপে উঠল।
চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে পারলো।এটা তার ব্যক্তিগত পুরুষ টা।
তাই মুচকি হেসে নিজেও ঘাড় হেলিয়ে দেয় স্বামীর শক্ত চওড়া বুকে।
ততক্ষণে সাহাবের হাত শরীরে থাকা শাড়ী ভেদ করে নিজের দানবীয় হাতের বিচরণ চালায় বউয়ের উন্মুক্ত পেটে।
আরও একটু শক্ত করে চেপে ধরে বুকের সাথে।
-“বেরুতে হবে।
কখন ফিরবো জানি না।”
কথা টা লম্বা লম্বা শ্বাস টেনে বলে সাহাব।
অতঃপর বউকে পাশের দোলনা সাথে চেপে ধরে নিজের ওষ্ঠে বউয়ের ওষ্ঠ এক করে দেয়।
লম্বা গাঢ় একটা চুম্বন করে বউকে ওষ্ঠ।
বেশ অনেক টা সময় নিয়ে
ছেড়ে দিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে ঘনঘন নিশ্বাস নেয় দুজনে।
সাহাব শান্ত হয়ে ধীরে কন্ঠে বলে উঠে
-“ভালোবাসি বউ।
রাতে ফিরে আসবো।
অপেক্ষা করবে?”
-“করবো।”
আলো ফটাফট উত্তর দেয়।বাসর রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিল এতে আলো খারাপ লেগেছিল। আর আজ বিয়ের এক মাসেরও বেশি সময় হয়ে এলো।রোজ রাতে আলো সাহাবের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পরে তাই আজ সাহাবকে আগে আগে জানিয়ে দিল।
সাহাব বউয়ের এমন উত্তর পেয়ে হাসে। খুব কমই এমন হাসি হাসে এই ব্যক্তি।সব সময় তো সয়তানি হাসি নয়তো ঠোঁট কামড়ে এমন সুন্দর আর প্রশান্তিময় হাসি আলো সাহাবের মুখে কমই দেখেছে।
দুই জনেই দুজনের ভাবনায় বিভোর। আর ঠিক তক্ষুনি আরিফ রুমের দরজায় নক করে।সাহাবকে যেতে হবে।তাদের যে অনেক বড় একটা কাজ আছে আজ রাতে।
সাহাব আরও একবার বউয়ের ঠোঁটে হালকা করে নিজের ঠোঁটে ছুঁয়ে দেয়। তার পর কপালে চুমু খেয়ে সাবধানে থাকতে বলে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।
পেছন পেছন আলোও নিচে নেমে আসে।সেলিম তালুকদারও লিভিং রুমে বসে।
ছেলে কে দেখে উঠে এসে ছেলের কাঁধে চাপর মেরে বলে উঠে
-“সাবধানে আর আমি সব রকম ব্যবস্থা করে রাখবো।”
সাহাব মুচকি হাসে মায়ের কাছে বলে সাফারাত, আরিফ কে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো।
—————
রাত বারোটা একচল্লিশ বাজে।আলো বসে একটা উপন্যাস পড়ছে। একটু আগে এসছে শারমিন তালুকদারের রুম থেকে। সন্ধ্যায় যখন লিভিং রুমে বসে নাস্তা করছিল সবাই আর ঠিক তক্ষুনি একটা কল আসে আর তিনি হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যায়।
আলোর কেমন অস্থির অস্থির লাগছে ভালো লাগছে না কিছু।
আলো বই টা পাশে রেখে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
একটা রঙ চা খাওয়া দরকার। নয়তো রোজকার নেয় আজও আবারও ঘুমিয়ে পড়তে পারে।
আলো এসব ভাবতে ভাবতে নিচে এসে রান্না ঘরে চলে আসে।
তার পর চা করে নিয়ে রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে লিভিং রুমে আসতেই বাড়ির কলিং বেল টা সশব্দে বেজে উঠে।
কেউ অনবরত বেল বাজিয়ে যাচ্ছে।
আলোর ভ্রু কুঁচকে আসে। চায়ের কাপ টা সেন্টার টেবিলে রেখে দৌড়ে গিয়ে দরজা খোলে।
সাফারাত দাঁড়িয়ে আছে কোলে একটা মেয়ে। মেয়ে টাকে আলো চিনে।
সাহাবদের এতিম খানার।মেয়েটা সাফারাত এর কোলে থেকে কি সব আবলতাবল বকে যাচ্ছে। আলো অবাক হয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই সাহাব সাফারাত এর পেছন থেকে আলো কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে
-“আগে ভিতরে যেতে দেও।
পরে সব বলছি।”
আলো সরে দাঁড়ায়। ততক্ষণে বাড়ির কাজের লোক আর শারমিন তালুকদারও লিভিং রুমে এসে উপস্থিত হয়েছে।
সাফারাত মেয়ে টাকে সোফায় সুয়ে দিয়ে আলোকে পাশে বসতে ইশারা করে। আলো চট করে মেয়ে টাকে আগলে নিয়ে বসে।
সাহাব ততক্ষণে একজন মেইড কে লেবুর পানি আনতে বলে।
সেলিম তালুকদার স্ত্রীর সাথে কিছু বলছে।
যা শুনে শারমিন তালুকদার কিছু বুঝতে পারছে। এখানে অবস্থানরত আরেক জন মেইড কে গেস্ট রুম টা খোলে দিতে বলে।
মিনিট তিন এর মাথায় মেইড লেবু পানি গ্লাস হাতে এগিয়ে আসে আর সেটা আলোর কাছে দেয়।তখনও মেয়েটা কি সব বিরবির করেই যাচ্ছে।
আলো অনেক কষ্টে শারমিন তালুকদারের সাহায্যে মেয়ে টাকে পানি টা খাওয়াতে সক্ষম হয়।
এর একটু পর মেয়েটা আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরে।
আর মেইড কে বলে মেয়ে টাকে রুমে পাঠিয়ে দেয় তাদের সাহায্যে।
ততক্ষণে সাহাব রুমে চলে গিয়েছে ফ্রেশ হতে।
সাফারাতও চলে যায়। শারমিন তালুকদার আলো কে সাহাবের জন্য খাবার দিয়ে আলো কে রুমে পাঠিয়ে দেয়।
আলোও আস্তে আস্তে রুমে চলে আসে।
পানির শব্দ হচ্ছে ওয়াশ রুম থেকে। আলো রুমে এসে খাবার টা সেন্টার টেবিলে রেখে দরজা টা লক করে। আলমারি খোলে সাহাবের রাতের পোষাক নামিয়ে রাখে সোফায়।অতঃপর বিছানা পা উঠিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে।
সাহাব মিনিট দশের মাথায় বেড়িয়ে আসে।পড়নে শুধু একটা থ্রি কোয়ার্টার পেন্ট তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে।
সোফায় তোয়ালে রেখে আলোর দিকে একবার তাকায়।
সোফায় রাখা রাতের পোষাক পড়ে নেয় সোফা হতে।
আলো বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে খাবার থালা হাতে নিয়ে সাহাবে খাইয়ে দেয়।
#চলবে…..
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]