#রেখেছি_তারে_বক্ষ_পিঞ্জিরায়
#পর্ব_৩
#জান্নাত_সুলতানা
-“আপনি তখন কি বলতে চাইছিলেন, আরিফ ভাই?
যদি সত্যি আমাকে বোন মনে করেন তবে আশা
করি সত্যি টা বলবেন। ”
আরিফ ওর নিজের বউয়ের সাথে ফোনে কথা বলছিল হসপিটালের করিডরে দাঁড়িয়ে।
কিন্তু পেছনে থেকে আলোর কণ্ঠে শুনে ফোন কেটে পেন্ট এর পকেটে রেখে দিয়ে পেছন ফিরে খুব স্বাভাবিক ভাবে বলে
-“বলুন কি জানতে চান।”
-“আপনি তখন কি বলতে চাইছিলেন?
আপনার স্যার যারা ড্রাগস বিক্রি করে তার কি?
বলুন না প্লিজ?”
আলো বেশ উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করে।
আরিফ চার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়।
তার পর আস্তে আস্তে করে বলতে শুরু করে
-“স্যার’র আজ অনেক বছর ধরে এই কাজ টা করে আসছে।যারা ড্রাগস আর নারী প্রচার করা তাদের কাজে সফল হতে দেয় না। স্যার মাফিয়া কিন্তু শুধু খারাপ মানুষের কাছে।
এটুকুই জেনে রাখুন ম্যাম।”
কথা গুলো শেষ করে আলো কে কিছু বলতে না দিয়ে আরিফ হন্তদন্ত হয়ে চলে গেলো।
আলো হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
না জেনে শুনে কি করে বসলে ও।আচ্ছা সাহাব ভাই কি এতো বড় ভুল করার পরেও বিয়ে করবে ওকে?
আলো যখন ভাবনায় বিভোর ঠিক তক্ষুনি সাহাব পেছনে থেকে বলে উঠে
-“এতো রাতে এখানে কি করছো একা একা?”
সাহাবের কথা আলো সম্মতি ফিরে পায়।আর চার দিকে চোখ বোলায়।
তার পর সাহাবের দিকে ফিরে বলে উঠে
-“কই কিছু না।
দাদুন কে কাল সকালে রিলিজ দিবে?”
-“হুম।
ডক্টর এর সঙ্গে কথা বলে এসছি।
মা বলেছে তোমাকে নিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য। ”
আলো আর কথা বাড়ায় না সাহাবের সাথে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে আসে।
রাত দেড় টা বাজে।
মানুষ জন একদম নেই বললেই চলে। শুধু হসপিটালের আশে পাশে দুই তিন টা ঔষধ ফার্মেসি খোলা।
আর বড় বড় গাড়ি গুলো শাঁই শাঁই করে আওয়াজ তুলে আবারও চলে যাচ্ছে।
বাহিরে ঠান্ডা টা একটু বেশি লাগছে আলোর মনে হচ্ছে হসপিটালের ভিতর একটু কম ছিল।
আলো ফ্রন্ট সিটে বসে আছে দুই বাহুতে দু হাত ঠেকিয়ে।
গাড়ি চলছে নিজ গন্তব্যে আর বেশি সময় লাগবে না হয়তো আধঘন্টা।
আলো এসব ভাবতে ভাবতে নিজের হাত দুটি ওড়না টা আরও একটু টেনেটুনে গায়ে জড়ালো।কিন্তু হায় আফসোস এই পাতলা ওড়না কি আর এই জানুয়ারি মাসের কনকনে শীত দমন করার মতো পোশাক। তবুও চুপচাপ বসে আছে।
সাহাব দেখছে আঁড়চোখে একটু পর পর প্রেয়সী কে দেখছে।
কিন্তু ওর বেশ মজাই লাগছে কেন জানি।
কিন্তু আলোর মলিন হয়ে থাকা মুখের দিকে তাকিয়ে আর ভালো লাগে না।
কিছু ভেবে মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে নেয়।
নিজের শরীর থেকে ব্লেজার টা খোলে আলোর গায়ে সামনে থেকে জড়িয়ে দেয়।
আলো হতভম্ব একটু নড়েচড়ে বসে আঁড়চোখে তাকালো সাহাবের দিকে।
বুকের বেশ অনেক টা জায়গায় উন্মুক্ত। সার্ট এর বোতাম বেশ কয় টা খোলা যার ফলে লোমযুক্ত উন্মুক্ত বুক টা বেশ মোহনীয় লাগছে।
আলো সে দিকে তাকিয়ে আবারও মাথা নিচু করে।
যা দেখে সাহাব ঠোঁট টিপে হাসে।
সাহাব মুখে হাসি রেখে আবারও গাড়ি স্টাট করে।
-“আপনার ঠান্ডা লাগবে।”
মিনমিন করে বলে উঠে আলো।
-“না।”
-“কেন?
বাহিরে অনেক ঠান্ডা? ”
-“তুমি আমার আশে পাশে থাকলে আমার এসিতেও গরম লাগে।
সেখানে এই শীত নিছক তুচ্ছ।”
আলোর প্রশ্নে সাহাবের এমন জবাবে আলো শরীর শীর দ্বারা দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো।
চোখ ঘুরিয়ে মাথা নুইয়ে নিলো।
লজ্জা পেয়েছে কি না। আর কোনো কথা বলে না পুরো রাস্তা আলো।
সাহাব বলে নি।
গাড়ি এসে তালুকদার বাড়ির গেইট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করার পর পরই সাহাব গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরে আলো নামে।
সাহাব দারোয়ান কে চাবি দিয়ে গাড়ি গ্যারেজ এ রাখতে বলে আলো কে নিয়ে বাড়িতে চলে এলো।
-“বিয়ে হয় নি বলে বেঁচে গেলে।
নয়তো এই লজ্জা পাওয়া মুখ টা তোমার কাল হয়ে দাঁড়াতো। ”
সাহাব কথা গুলো বলে আগে আগে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো।
আলোর বাক্য গুলোর মানে বুঝতে মিনিটখানেক সময় লাগে।
বুঝতে পেরে আবারও লজ্জা পায়।
কিন্তু পরক্ষণেই ভাবে এই লজ্জা পাওয়ার জন্যই তো এসব শুনতে হলো।
আর এসব ভেবে নিজের উপর নিজেই বিরক্ত হলো।
এই লোকের সামনেই কেন লজ্জা পেতে হবে।
কিন্তু লজ্জার কি দোষ এই অসভ্য লোকই তো এমন লজ্জা মার্কা কথা বলে।
তাই সব দোষ এই লোকের।
আলো এসব ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি দিয়ে উপর উঠতে উঠতে বিরবির করে বলে উঠে
-“নিজে যেমন অসভ্য।
কথা গুলো তেমন অসভ্য। ”
————–
-“বাবা বলো নি আজ আসবে?”
-“কাজ শেষ।
ভাবছিলাম ক’দিন পর ফিরবো।
কিন্তু তোমার দাদুন অসুস্থ তাই কাল সন্ধ্যায় ফ্লাইট এ আজ সকালে বাড়ি।”
সাহাবের প্রশ্নের জবাব দিয়ে সেলিম তালুকদার গিয়ে সোফায় মায়ের পাশে বসে জিজ্ঞেস করে
-“মা এখন কেমন লাগছে?”
-“বিয়ে টা হলে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাব।”
মুখ গুমোট ভাব নিয়ে বলে উঠে সামলা তালুকদার।
মায়ের এমন কথায় সেলিম তালুকদার আর সাফারাত সহ উপস্থিত সবাই হেসে দিল।
সাহাব নির্বিকার।
আলো শারমিন তালুকদার পেছনে দাঁড়িয়ে লজ্জায় রংধনু হচ্ছে।
-“আলো এদিকে এসো।
বসো বাবাই’র পাশে।”
সেলিম তালুকদার ডাকে আলো লজ্জা ভুলে শারমিন তালুকদার পেছনে হতে পা টিপে টিপে এগিয়ে গিয়ে ওনার পাশে বসে।
আলোর ঠিক বরাবর অপর পাশের সোফায় সাহাব বসে আর তার পাশে সাফারাত।
-“দেখো তোমাকে না বলে হয়তো আমাদের এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া ভুল হয়েছে।
দ্বিতীয় বার আমরা কেউ আর সে টা করতে চাই না।এখন তুমি যা বলবে তাই হবে।
আমি তোমার কাছে এখনি উত্তর চাচ্ছি না।তুমি ভাবো সময় ন,,,,
-“সময়ের দরকার নেই বাবাই।
তোমাদের যা ভালো মনে হয় করো।আর আমি জানি আমি ভুল করেছি।
হয়তো তোমাদের অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।আর তোমরা সেটার জন্য কেউ আর প্লিজ কষ্ট পেয়েও না। ”
কথা গুলো বলেই আলো আর এক সেকেন্ডও বসে না দৌড়ে উপরে চলে যায়।
সেলিম তালুকদারও সবার সাথে আলাপ আলোচনা করে ফ্রেশ হতে যায়।
সাফারাত ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে যায়।
শারমিন তালুকদার শাশুড়ী কে নিয়ে ওনাকে রুমে দিয়ে আসতে যায়।
সাহাবও খাবার টেবিলে থাকা ঝুরি থেকে একটা আপেল নিয়ে খেতে খেতে উপর চলে এলো।
আলো কম্বল গায়ে বিছানায় গোল হয়ে বসে আছে একটা
উপন্যাসের বই হাতে। দরজা খোল শব্দে সে দিকে তাকিয়ে দেখলো সাহাব দাঁড়িয়ে আছে মুখে হাতে আধখাওয়া আপেল।
আলো সে দিক হতে চোখ ফিরিয়ে মুচকি হেসে সাহাব কে জিজ্ঞেস করে উঠে
-“কিছু বলবেন?”
সাহাবের কোনোদিন হেলদুল নেই। আলোর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
যা দেখে আলোর ভ্রু কুঁচকে আসে।
বই পাশে রেখে বিছানা থেকে নেমে সাহাবের সন্নিকটে আসে।
-“সাহাব ভাইইয়া?”
আলো জোরে ডাকে সাহাব ধড়ফড়িয়ে উঠে কানে হাত দিয়ে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয়।
যা দেখে আলো জোরে জোরে হাসতে থাকে।
সাহাব কান হতে হাত সরিয়ে নেয়।
হাতে থাকা আধখাওয়া আপেল গুঁজে দেয় আলোর মুখে।
তার পর নিজেও চোখ টিপে দিয়ে বলে উঠে
-“এটা শেষ করে রেডি হয়ে এসো।
আর তুমি চাইলে এভাবে আসতে পার।
আমার কোনো প্রবলেম নেই।”
বলেই আবারও চোখ টিপ দিয়ে রুম ত্যাগ করে।
আর আলো সে দিক এখনো চোখ বড় বড় তাকিয়ে মুখ থেকে আপেল টা বের করে নিজের শরীরে দৃষ্টি বুলিয়ে নিজেই লজ্জায় পরে যায়।
এই শীতের মৌসুমে আলোর কান
গরম হয়ে আসে।
এক হাতে কান চেপে ধরে বিরবির করে বলে উঠে
-“অসভ্য পুরুষ।”
#চলবে……