#রেখেছি_তারে_বক্ষ_পিঞ্জিরায়
#পর্ব_২
#জান্নাত_সুলতানা
-“মাফিয়া আমি?”
আলো ওর এক ফ্রেন্ড এর বাসায় এসছে।সন্ধ্যায় এসছে আর এখন রাত দশ টার বেশি সময় বাজে।
এ-র মধ্যে সাহাব খুঁজ নিয়ে এখানেও এসে পরেছে। আলো আজ রাত টা এখানে কাটিয়ে কাল চট্টগ্রাম চলে যেতো এখন যার বাসায় এসছে ওর বোনের বাসায়। সেখানে ভার্সিটিতে এডমিশন নিতো আর দু একটা টিউশন করিয়ে একা একা জীবন কাটাবে বলে ঠিক করেছি
কিন্তু সে টা মনে হয় আর হচ্ছে না।
আলো এসব ভাবতে ভাবছিল। কিন্তু সাহাব আবারও ধমকের সুরে বলে উঠে
-“কি হলো উত্তর দিচ্ছো না কেন?”
সাহাবের ধমকে আলো হালকা নড়েচড়ে দাঁড়ায়। অতঃপরও মাথা টা তুলে একবার
চোরা চোখে তাকায় সাহাবের দিকে। আবারও মাথা নুইয়ে আমতা আমতা করে প্রশ্নের জবাব দেয় আলো
-“হ,,,,
-“না ম্যাম স্যার তো যারা ড্রাগস বিক্রি করে তাদের,,,,
কিন্তু আরফি আলোর উত্তর না শুনে নিজে কিছু বলতে যাচ্ছিল।
কিন্তু সাহাব তার আগেই ধমক দিয়ে উঠে
-“আরিফফ।”
ব্যাস আরিফ আর কিছু বলতে পারে না। সাহাবের দিকে তাকিয়ে একটা ঢোক গিলে নেয়।
সাহাব আরিফ কে উদ্দেশ্য করে চেচিয়ে বলে উঠে
-“বাহিরে যাও।”
আরিফ মাথা হেলিয়ে জানায়
-“আচ্ছা স্যার। ”
তার পর আরিফ রুম থেকে বাহিরে চলে গেলো।
সাহাব এবার আরও একটু এগিয়ে গেলো আলোর দিকে।
আলো নিচের দিকে তাকিয়ে আছে বিধায় সে টা ওর নজরে আসে না।
-“ছেড়ে দেবো সব।
তবুও পালিয়ে যাবে?”
আলো মাথা নিচু করে ছিল কিন্তু সাহাবের কথায় মাথা উঁচু করে বিস্ফোরিত নয়নে চাইলো সাহবের দিকে। কি করুন কণ্ঠ। এই লোক টা কি বলছে এসব?
সত্যি ভালো হয়ে যাবে?
কিন্তু তার আগে প্রশ্ন হলো আরিফ ভাই তখন কি বলতে চাচ্ছিল?
আলো কে এভাবে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাহাব আবারও বলে উঠে
-“সত্যি বলছি।
দাদুন অসুস্থ। প্লিজ রাজি হয়ে যাও।”
তার পর একটু থেমে আবারও বলতে লাগলো
–
“আমরা দু ভাই, দাদু ভাই, দাদুন, মা, বাবা সুন্দর একটা সুখী পরিবার। দাদুনের আর মায়ের আশা ছিল সাফারাত মেয়ে হবে।কিন্তু তাদের আশায় জল ঢেলে সাফারাত এলো।তবে সে টা নিয়ে কখনো কেউ মন খারাপ করতো না। তবে তাদের শাশুড়ী বউয়ের একটা মেয়ের শখ রয়ে যায়। এরমধ্যে দাদু ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেলো।আমরা সবাই তখন শোকে ছিলাম।
এভাবে চলছিল দিন।আমি তখন নাইনে পড়ি। ।সাফারাত চতুর্থ শ্রেণী। এক দিন অফিস থেকে আসার সময় বাবা তোমাকে নিয়ে এলো।তখন তোমার সাত বছর বয়স।বাবা বলেছিল তোমার বাবা রাজনীতি করতো।আর কোনো এক জনসভায় গোলাগুলির কারণে অনেক লোক মারা গেলো তাদের মধ্যে তোমার বাবাও ছিল। আর সেই শোক সহ্য করতে না পেরে তোমার মাও মারা যায়।আর তোমার মা আমাদের অফিসে কাজ করতো বিধায় বাবা তখন তোমাদের বাসায় যায়।কিন্তু তোমাদের কোনো কাছের মানুষ ছিল না তখন। কারণ তোমার মা বাবা পালিয়ে বিয়ে করেছিল তাই তাদের না-কি কারোর পরিবার থেকে কেউ মেনে নেয় নি।
বাবা সে দিন পাড়া প্রতিবেশী থেকে এসব শুনে বুঝতে পেরেছিল তোমার এ শহরে আপন বলতে কেউ নেই যার কাছে তোমায় রেখে আসবে তাই তিনি তোমায় সাথে করে আমাদের বাড়ি নিয়ে এলো।মা আর দাদি সে কি খুশি হয়ছিল। তুমি আসাতে যেনো দাদু ভাইয়ের শোক টা কাটিয়ে দাদুন আর মা কিছু টা স্বাভাবিক হলো। তোমায় দু জনে খুব যত্ন করতো ভালোবাসতো।আল্লাহ তাদের আশা পূরণ করেছিল কি না, তাই। এসব দেখে আমার হিংসে হতো।কারণ মা সাফারাত আর আমাকে যেনো কম ভালোবাসতে এমন মনে হতো আমার।কিন্তু আসলে তেমন টা না। আমাদের আগে যেমন ভালোবাসতো তেমনি ছিল কিন্তু তোমায় বেশি ভালোবাতো বলে আমাদের এমন মনে হতো। আমি দাদুন কে এক দিন রাগ করে বলেছিলাম যাতে তোমায় এতিম খানায় রেখে আসে।
সে দিন দাদুন হেসে বলেছিল তুমি বড় হলে না-কি তোমাকে আমার বউ বানাবে তাই যাতে আর হিংসা করতে না পারি।”
সাহাব কথা টা শেষ করে সেন্টার টেবিল থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে পানি টা এক নিশ্বাসে শেষ করে। আলো মন দিয়ে সাহাবের প্রতি টা কথা শুছে।চোখে থেকে জল গড়িয়ে পরেছিল বোধহয় তাই গালে দাগ বসেছে।কিন্তু সাহাবের লাস্ট কথা গুলো শুনে কেমন ভ্রু কুঁচকে আছে।সাহাব গ্লাস টা আবার যথাস্থানে রেখে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে আবারও বলতে লাগলো
-“তার পর থেকে অদ্ভুত এক কারণে তোমাকে আমারও আর হিংসা হতো না সব সময় কেমন কেমন একটা ফিলিংস হতো।
এভাবে দিন পেরিয়ে মাস। মাস শেষ বছর। এভাবে সময় কাটতে লাগলো।
আমি সাফারাত তোমাকে ভালোবাসতে লাগলাম। কিন্তু সাফারাত বোন হিসেবে ভালোবাসলেও আমি সে টা পারি নি।
স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে কম মেয়ে ঘুরে নি আমার পেছনে। সব গুলো বড় লোক বাবার সুন্দরী মেয়ে ছিল। কিন্তু আমার কেন জানি একটাকেও ভালো লাগতো না।সব সময় তোমার কথা ভাবতাম।
কিন্তু তুমি তো আমার অনেক ছোট। আর সবাই আমাদের ভাই বোন জানে।যদি কেউ বুঝতে পারে আমি ভাই হয়ে। যদিও আপন নয় তবুও কখনো কারোর সাথে শেয়ার করি নি।মনের ভিতর চেপে রেখে দিয়েছিলাম। নিজের মনের অনুভূতি গুলো,ভালোবাসা। দেখতে দেখতে আমার পড়া লেখা শেষ বাবার সাথে নিজেদের ব্যবসা যোগ দিলাম।আর এভাবে কেটে গেলো কয়েক বছর তুমিও ইন্টার পরীক্ষা দিলে।
আর হঠাৎ দাদুন অসুস্থ হয়ে পরলো। আর সে দিন দাদুন বারো বছর আগের কথা টা আবারও বলে উঠলো। আর এটা ওনার শেষ ইচ্ছে বলে জানালো।
আমিও স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম সাথে কি পরিমাণ খুশি হয়েছি আমি নিজেও জানি না। বাবা আর মায়ের সাথে কথা হলো এ বিষয়ে। বাবা মা দু-জনে এক পায়ে রাজি।
কিন্তু বাবার অফিসিয়াল কাজে দেশের বাহিরে যেতে হবে তাই বিয়ের ডেট টা এক মাস পরে দেওয়া হলো।দাদুন কে বলেছিলাম তোমার সাথে এক বার কথা বলে নিতে এ ব্যাপারে কিন্তু দাদুন না করলো। তবুও আমি নিজে থেকে তোমার সাথে কথা বললাম কিন্তু তুমি রাজি না কারণ আমি মাফিয়া।
কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো তুমি এটা ভুল শুনছো।
তাই বিয়েতে রাজি হলে না। যদিও নিজেও আমাকে ভালোবাসো।আর বিয়ের কথা চলছে এটাও তুমি জানতে।
আর এখন সব টা তোমার উপর নির্ভর করছে তুমি কি চাও।
কিন্তু উত্তর টা যেনো পজিটিভ আসে।”
কথা গুলো শেষ করে সাহাব আলো কে নিয়ে ওর ফ্রেন্ড এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফ্ল্যাট থেকে বেড়িয়ে আসে।
আরিফ বসে আছে ডাইভিং সিটে।
সাহাব আলো কে নিয়ে পেছনে উঠে বসতেই আরিফ গাড়ি স্টাট করে।
——
-“দাদুন?”
আলো কেবিনের দরজায় দাঁড়িয়ে ডাকে সামলা কে।তিনি চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল। কিন্তু আলোর কণ্ঠ শুনে চোখ খুলে তাকায়।
খুব স্বাভাবিক ভাবে হাত দিয়ে ইশারা করে কাছে আসতে বলে।
শারমিন তালুকদার বসে ছিল শাশুড়ীর হাত ধরে। তিনি উঠে দাঁড়াল। আলো এগিয়ে এলো।
ঝাপটে জড়িয়ে ধরে সামলা কে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
কান্নাভেজা কণ্ঠে বলে উঠলো
-“সরি দাদুন আমি বুঝতে পারি নি।
আ’ম সো সরি।”
সামলা তালুকদার আলোর মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠে
-“ইট’স ওকে দাদুন।”
আলো ওনাকে ছেড়ে দিয়ে ওনার গালে একটা টুপ করে চুমে খেয়ে নিলো।এটা কেবিনের বাহির থেকে কেউ দেখে হিংসায় জ্বলে উঠলো।
আলো সামলা তালুকদার ছেড়ে সাহাবের মাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো
-“সরি মামনি।
আমি তোমাদের সবাই কে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।”
-“হুম।
আর তার বিনিময় আমরা তোমায় শাস্তি দেবো না।
কিন্তু একজন দিলে আমরা কিছু করতে পারবো না।
তুই এটা কেন করেছি।জানি না আর জানতেও চাই না। কিন্তু ভবিষ্যতে আর এমন করিস না মা।”
শারমিন তালুকদার কথায় আলো ওনাকে জড়িয়ে ধরে থাকা অবস্থায় বলে উঠে
-“তোমায় ছুঁয়ে কথা দিলাম আর কখনো এমন করবো না আর তোমাদেরও কষ্ট পেতে দেবো না।
শুধু তোমরা দোয়া করো।”
#চলবে….