#রূপবানের_শ্যামবতী
#অন্তিম_পর্ব (শেষাংশ)
#এম_এ_নিশী
চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে আদ্রিকা। প্রাণপাখিটা বুঝি উড়াল দিবে এবার। শক্ত হয়ে থেকে নিজেকে প্রস্তুত করছে সে। কিন্তু কোনোপ্রকার কোনো ব্যথা অনুভূত হয়না তার। মনে হচ্ছে স্থির হয়ে আছে সে। তবে কি সে ছাদ থেকে পড়ে যায়নি। ঝট করে চোখ খুলে তাকায় সে। তার একহাত টেনে ধরে রেখেছে আয়াজ। ভীতচোখে চেয়ে আছে আদ্রিকার দিকে। আদ্রিকা তাকাতেই তাকে এক ঝটকায় নিজের কাছে টেনে এনে জড়িয়ে নিলো বুকে। আয়াজের বুকে হৃদপিণ্ডের ধরাস ধরাস করে লাফানোর শব্দ আদ্রিকার কানে এসে ভালোভাবেই ঠেকে। আদ্রিকা তখনও ভয়ংকর ভাবে কেঁপে যাচ্ছে। যদি আয়াজের আসতে একটু দেরি হতো.. ভাবতে পারছেনা সে। ভাবতে চায়ওনা।
এদিকে আয়াজের এমন উপস্থিতি নাদিমের কাছে একেবারেই কাম্য ছিলো না। তারপরই তার মাথায় এলো, বাড়িতে সকলেই থাকা সত্ত্বেও সে আদ্রিকার ওপর আক্রমণ করার মতো ভুল কিভাবে করলো? তারমানে আদ্রিকা এটাই চেয়েছিলো। ইচ্ছাকৃত ভাবে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যাতে নাদিম ভুল করে। সবটা পূর্বপরিকল্পিত। নাদিম ধরা পড়ে গেছে। এই কথা তার মস্তিষ্কে খেলে যেতেই সারা শরীর শিরশির করে উঠলো তার। একপা দুপা করে পিছিয়ে যেতে লাগলো। দরজার কাছে আসতেই কালক্ষেপণ না করেই সে দ্রুতবেগে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যেতে লাগলো। তাকে পালাতে হবে। কিন্তু আয়াজের চোখে পড়ে গেলো সে। আদ্রিকাকে দাঁড় করিয়ে সে নাদিমের পিছনে ছুটলো। ড্রয়িংরুমের কাছে আসতেই হাতের নাগালে পাওয়া শোপিসটা নাদিমের দিকে ছুঁড়ে মারলো আয়াজ। ঘাড়ে আঘাত লাগায় আর্তনাদ করে মেঝেতে বসে পড়লো নাদিম। আয়াজ এগিয়ে এসে কলার টেনে উঠে দাঁড় করালো তাকে। প্রচন্ড আক্রোশে ক্ষোভ ঝেড়ে বলতে থাকে,
–কালসাপ, এতোদিন ধরে এতো এতো কলকাঠি নেড়েছিস আমার পরিবারের ক্ষতি করতে। আমার দুটো বড় ভাইয়ের জীবনই অশান্তিতে ভরিয়ে দিয়েছিস। তোকে মেরে ফেললেও শান্তি হবেনা আমার..
এই বলে আয়াজ ইচ্ছেমতো এলোপাতাড়ি মারতে থাকে নাদিমকে। আয়াজের চিৎকার শুনে ড্রয়িংরুমে এসে হাজির হয় সবাই। আদ্রিকাও ছাদ থেকে নেমে চলে এসেছে। নাদিমকে মারতে দেখেও আদ্রিকা আয়াজকে কোনো বাঁধা দিচ্ছে না। ফারজানা বেগম আদ্রিকার উদ্দেশ্যে ধমকে বলে ওঠেন,
–আদ্রিকা, ছেলেটাকে আটকাচ্ছো না কেন? কি হচ্ছে কি এসব? আয়াজ এমন কেন করছে?
আদ্রিকা জবাব দেয়,
–যা হচ্ছে হতে দিন মা। আপনারা সবটা জানেননা।
আদ্রিকার হেঁয়ালিপূর্ণ কথা ফারজানা বুঝতে পারেন না। তিনি কেবল আয়াজকে আটকাতে চান। নইলে তো নাদিমকে মেরেই ফেলবে। তাসফিয়াও কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না। কি থেকে কি হচ্ছে এসব।
–আয়াজ..
ফারনাজের ডাকে থেমে যায় আয়াজ। ফারনাজ এগিয়ে এসে দাঁড়ায়। শান্ত ভঙ্গিতে চেয়ে থাকে। নাদিম খুশি হয়। ভাবে ফারনাজ তার পক্ষে থাকবে, মেয়েটা তো তাকে ভালোবাসে ভিষণ। কিন্তু নাদিমের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে ফারনাজ,
–মার ওকে আয়াজ, মার। এই অ মা নুষটা আমার গর্ভের অনাগত সন্তান, নিষ্পাপ প্রাণটাকে মেরে ফেলেছে। ও নিজ হাতে মেরেছে, আমার নিধিকে মারার হুমকি দিয়ে আমার মুখ বন্ধ করে রেখেছে। ওকে ছাড়বিনা আয়াজ। কিছুতেই ছাড়বিনা। এমন মার মারবি যেন যন্ত্রণায় সহ্য করতে না পেরে মৃ ত্যু ভিক্ষা চায়..
বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ে ফারনাজ। আদ্রিকা দুহাতে আগলে ধরে রাখে ফারনাজকে। ফারনাজের কথা শুনে ফারজানা বেগম ধপ করে বসে পড়লেন মেঝেতে। এমন ভয়াবহ সত্যের মুখোমুখি হলেন তিনি যা সইবার মতো না। তাসফিয়াও পাশে বসে জাকে জড়িয়ে নিয়ে শান্তনা দিতে থাকে, তার চোখেও বইছে অশ্রুধারা।
এদিকে সবকিছু দেখে শুনে নাদিম বুঝলো সে পুরোপুরি ফেঁসে গিয়েছে। তাই তো আয়াজের থেমে যাওয়ার সুযোগটা কাজে লাগিয়ে সে দ্রুতবেগে উঠে দাঁড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো। তা দেখে আয়াজ পিছু ছুটলেও নাদিমের নাগাল পেলো না আর। যেন হুট করে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে সে। তন্ন তন্ন করে খুঁজেও নাদিমকে পেলোনা আয়াজ। বাধ্য হয়ে ফিরে এলো বাড়িতে। কারণ তাকে কোর্টে যেতে হবে। আহরারকে নির্দোষ প্রমাণ করে ফিরিয়ে আনতে হবে। আদ্রিকা যখন নাদিমের কাছ থেকে তার অপরাধের স্বীকারোক্তি বের করে আনছিলো, তখন আড়ালে দাঁড়িয়ে সবটা ভিডিও করে আয়াজ। আহরারকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে এই ভিডিও ক্লিপটাই যথেষ্ট।
উকিলের কাছে ক্লিপটি দিয়ে তারা কোর্টের বিচারকার্যের অপেক্ষায় থাকে। এই একটা প্রমাণের মাধ্যমেই আহরার নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে যায় এবং সসম্মানে মুক্তি লাভ করে। ওই নাদিম ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সহ রি ভ লবারটা পর্যন্ত বদলে দিয়েছে নিজের টাকা আর পাওয়ার খাটিয়ে। আহরারকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য নিজের সর্বোচ্চটা লাগিয়ে দিয়েছিলো সে। কিন্তু আজ মাত্র একটা চালেই তার সকল জারিজুরি ফাঁস।
বাড়ি ফেরার পথে আহরার নিশ্চুপ পুরোটা সময়। কোর্টে সব প্রমাণ পেশ করার সময়ও তার মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়নি। যেন সবকিছু তার আগে থেকেই জানা। ব্যাপারটা অবাক করলো আয়াজকে। তবে সে বিশেষ কিছু বললোনা। কিন্তু বাড়িতে ফিরতে না ফিরতেই আহরারের রূপ বদলে গেলো। আয়াজের দিকে তাকিয়ে ক্ষোভমিশ্রিত স্বরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো আহরার,
–জা নো য়ারটা কোথায় আয়াজ?
কোর্ট থেকে পুলিশকে আদেশ দেওয়া হয়েছে নাদিমকে গ্রেফতার করার জন্য। তবে পুলিশ তাকে ধরার আগেই আহরার নিজে হাতে তাকে শাস্তি দিতে চায়। তাই নাদিমের খোঁজ জানাটা তার ভিষণ জরুরি। আয়াজ কিছুটা ভীতস্বরে জবাব দিলো,
–ও..ও পালিয়েছে ভাইয়া।
মস্তিষ্কে যেন দপ করে আগুন জ্বলে উঠলো আহরারের। টেবিলের ওপরে থাকা গ্লাসটা তুলে সজোরে আছড়ে ফেলে দিলো সে। দ্বিগুণ স্বরে চেঁচিয়ে বলে ওঠে,
–কি করে পালাতে দিলি তুই ওকে? বওওওলললল..
আহরারের চিৎকারে কেঁপে ওঠে সকলে। কেউ কোনো কথা বলার সাহস পায়না। হুট করে আহরার একবার সবার দিকে নজর বুলিয়ে পুনরায় আয়াজকে প্রশ্ন করে,
–অরু কোথায়?
এবার জবাবটা আদ্রিকা দেয়,
–বুবু, ওবাড়ি থেকে ফেরেনি আহরার ভাই। আমি ফিরতে দেইনি।
আহরার খানিকটা অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করে,
–কেন?
–সেটা আপনি সময়মতোই জেনে যাবেন। বুবু নিজেই জানাবে আপনাকে।
–কিন্তু ওই নাদিম যে পালিয়েছে। ও যদি এখন আমার অরুর কোনো ক্ষতি করে দেয়?
আহরারের কথার মাঝেই বিকট শব্দে বেজে ওঠে বাড়ির ল্যান্ডলাইন। আয়াজের হাতের কাছে থাকায় সে-ই ফোন তুললো। “হ্যালো” বলতেই ফোনের অপরপ্রান্তের মানুষটির আওয়াজ শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় আয়াজ। কিছু বলার আগেই আহরার এগিয়ে এসে আয়াজের কাছ থেকে টেলিফোনটা নিয়ে নিজের কানে লাগায়। ওপাশ থেকে অনেক কিছুই বললো। আহরার কেবল ছোট্ট একটা জবাব দিলো “আসছি”। লাইনটা কাটতেই আহরারের ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে অদ্ভুত হাসি। “আয়াজ, আমার সাথে আয়”, আয়াজের উদ্দেশ্যে কথাটুকু বলে আর কাওকে কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো আহরার।
~~~
ছোট্ট একটি ঘর। হালকা আলো থাকায় পুরোপুরি আলোকিতও নয় আবার আঁধারও নয়। অদ্ভুত আলো-আঁধারিতে ছেয়ে থাকা ঘরটির মাঝখানে রাখা একটি চেয়ারে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বসে আছে নাদিম। তার চোখ দুটোও বাঁধা থাকায় কিছুই দেখতে পারছেনা সে। খান ভিলা থেকে পালানোর সময় তার সামনে একটি গাড়ি এসে থামে। সেখান থেকে একজন মুখোশধারী লোক বেরিয়ে তার চোখেমুখে কিছু একটা স্প্রে করতেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর আর কিছু মনে নেই তার। জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে এমন বদ্ধ অবস্থায় আবিষ্কার করে। বুঝতে পারছে না সে এখন কোথায় আছে? আর কে-ই বা তাকে এভাবে বেঁধে রেখেছে। কেবল বুঝতে পারছে তার আশেপাশে কেউ একজন ঘুরঘুর করছে।
ক্যাচক্যাচ আওয়াজে দরজা খুলে যায়। ভেতরে প্রবেশ করলো কেউ। তখনই আশেপাশে ঘুরতে থাকা ব্যক্তিটির কন্ঠস্বর শুনলো নাদিম।
–আয়, তোদের জন্যই অপেক্ষায় ছিলাম।
কন্ঠ শুনে নাদিমের আর বুঝতে বাকি রইলো না এটা আয়মান। সাথে সাথে তার চোখের পট্টি খুলে গেলো। অস্পষ্ট দৃষ্টি স্পষ্ট হতেই দেখতে পেলো তার সামনে তিন তিনখানা মানব দাঁড়িয়ে। এ যেন তার আজরাইল দাঁড়িয়ে আছে। তিন তিনজন আজরাইল। আয়মান, আহরার, আয়াজ। ভয়ংকর দৃষ্টি ফেলে দেখছে তাকে আগাগোড়া। যেন এখনি ঝাঁপিয়ে পড়বে তার ওপর, ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে তাকে।
আয়াজ আহরার দুপাশে সরে গিয়ে দাঁড়ালো। আয়মান একটা চেয়ার টেনে এনে ঠিক নাদিমের সামনে রেখে বসে পড়লো তাতে। মুখোমুখি হয়ে গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলো নাদিমকে। নাদিম বুঝতে পারছেনা। এরা চাইছে টা কি। হুট করে আয়মান হাত বাড়ালো। আয়াজ এগিয়ে এসে সেই হাতে একটা ধারালো ছু রি তুলে দিলো। তা দেখে শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের শীতলস্রোত নেমে গেলো নাদিমের। ভয়াবহ কিছু ঘটতে চলেছে তার সাথে, সে বেশ বুঝতে পেরেছে। আয়মান ছু রিটা উল্টে পাল্টে নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতে শীতলকন্ঠে বলে ওঠে,
–ঠান্ডা মাথার খেলোয়াড় নাদিম। কি সুন্দর সব চাল চেলেছিস একটার পর একটা। তারপর ফলাফলটা কি পেলি?
নাদিম চুপচাপ দেখছে আয়মানকে। কোনো জবাব দিচ্ছে না। আয়মান কিছুটা ঝুঁকে এসে বললো,
–কি হলো? চুপ কেন? উত্তর দে, কি পেলি?
আচমকা নাদিমের মনে হলো তার সাহস বেড়ে গিয়েছে। হালকা হেসে তাই জবাব দিলো,
–শান্তি। শান্তি পেয়েছি। বিশ্বাস কর, তোদের ভোগাতে পেরে আমার যে কি শান্তি হচ্ছে।
দাঁতে দাঁত চেপে আয়মান আবারো প্রশ্ন করলো,
–তানিশার সাথে তোর কি শত্রুতা ছিলো? ওকে কেন মারলি?
–ওকে না মারলে তো তোকে কষ্ট দিতে পারতাম না..
নাদিমের কথাটুকু শেষ হতে না হতেই তার হাতের তালুতে ধারালো ছু রিটি গেঁথে দিলো আয়মান। গগনবিদারী চিৎকার করে ওঠে নাদিম। ফাঁকা ঘরের দেয়ালে দেয়ালে প্রতিধ্বনি হতে থাকে এই চিৎকার।
আয়মান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। নাদিমের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বলে,
–আমি সন্দেহ করেছিলাম কোনো এক তৃতীয় ব্যাক্তি আমার চালের ওপর চালবাজি করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সে কে? কেন করছে? আমার ইনফরমেশন গুলোয় বা সে পাচ্ছে কিভাবে? এসবের উত্তর আমার কাছে ছিলোনা। কিন্তু সেদিন.. আহরারের ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে তুই যখন আমার খুবই প্রিয় এবং কাছের একজন মানুষ, হক সাহেবকে গু লি করলি সেদিন তোকে সরাসরি দেখেছিলো অরুনিকা আর সিসিটিভি ফুটেজে দেখেছিলাম আমি। তোকে ধরার জন্য বেরিয়েছিলাম কিন্তু তোর কপাল, তুই পালিয়ে যেতে পারলি। তবে মুখোশ পড়ে থাকায় তোর মুখ তো দেখতে পেলাম না তবে তোকে ইনফরমেশন কে দিতো তা ঠিকই ধরে ফেললাম।
এই বলে আয়মান ঘরের আরেকমাথায় নজর ফেলতেই সকলের দৃষ্টি সেদিকে যায়। হাত পা বাঁধা অবস্থায় র ক্তা ক্ত হয়ে মাটিতে পড়ে আছে আরো একজন। সে আর কেউ না, আয়মানের আরো একজন বিশ্বস্ত মানুষ তামিম। তামিম ছেলেটাকে দিয়ে সে তার অনেক অনেক কাজ করিয়েছে। কিন্তু সে যে নাদিমের কাজিন এবং কাছের বন্ধু এই ব্যাপারটা অজানা ছিলো আয়মানের। সেদিন নাদিমকে পালাতে সাহায্য করতে গিয়েই আয়মানের চোখে ধরা পড়ে যায় তামিম। আর বন্দী হয়ে যায় আয়মানের কাছে। বিশ্বাসঘাতকতার শা স্তি হিসেবে তাকে ভয়ংকর মার মে রে ছে আয়মান। বেঁচে থাকতে সে হয়তো আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবেনা কখনো। তামিমের দিকে দৃষ্টি রেখে আয়াজের উদ্দেশ্যে আয়মান বলে ওঠে,
–ওকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে আয় আয়াজ। ওর স্বীকারোক্তির ভিডিওটা আমি তোর ফোনে সেন্ড করেছি। পুলিশকে সেটা দেখিয়ে বলবি নাদিমকে সাহায্যকারী ছিলো সে। ওর মতো বিশ্বাসঘাতককে আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। ওকে নিয়ে যা।
ভাইয়ের কথা শুনে আয়াজ কোনো দ্বিরুক্তি করেনা।তামিমকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে লাগলে তামিম নিজের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে গলা দিয়ে আওয়াজ বের করে বলে,
–বস, এবারের মতো আমায় মাফ করে দিন বস। আমায় ছেড়ে দিন প্লিজ।
তামিমের আকুতি কর্ণপাত করলো না আয়মান। ভেতরে ভিষণ কষ্ট অনুভূত হচ্ছে তার। কাছের মানুষগুলো কেন এভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করে?
আয়াজ তামিমকে নিয়ে চলে যেতেই আয়মান আহরারের দিকে তাকিয়ে বলে,
–এই জা নো য়ারটার জন্য তোকেও অনেক কষ্ট সইতে হয়েছে আহরার। যা যা শাস্তি দিতে চাস দে।
আয়মানের কথা শুনে আহরার এগিয়ে এসে দাঁড়ায় নাদিমের সামনে। কেমন নেতিয়ে আছে নাদিম। তার হাতে গেঁথে রাখা ছু রিটার দিকে তাকায় আহরার। ধীরে ধীরে ছু রিটার ওপর হাত রাখলো সে। তারপর একটানে তুলে নিলো সেটা। নেতিয়ে পড়া নাদিম আবারো নতুন উদ্যমে চেঁচিয়ে উঠলো। আহরার তাকে থামার সুযোগ না দিয়েই তার আঙুল টেনে ধরলো। ধারালো ছু রিটার দ্বারা এক পোজে কে টে আলাদা করে দিলো আঙুলটা। নাদিমের গলা ফাটানো আর্তনাদ যেন পৈশাচিক আনন্দ দিচ্ছে আহরারকে। সে শক্ত করে নাদিমের গাল চেপে ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে ওঠে,
–কেমন লাগছে এখন? খুব কষ্ট হচ্ছে? কি ভেবেছিলি, শুধু তুইই সবাইকে কষ্ট দিয়ে যাবি আর তোকে কেউ কিচ্ছু করতে পারবেনা? এবার তুই বুঝবি আসল যন্ত্রণা কাকে বলে।
এই বলে আহরার নাদিমের বাকি চারটা আঙুলেরও একই অবস্থা করলো। উন্মাদের মতো সে আঘাত করে যাচ্ছে নাদিমকে, আর নাদিমের চিৎকার সব মিলিয়ে পরিবেশ হয়ে উঠলো অসহনীয়। আয়মান নির্বিকার হয়ে দেখে যেতে লাগলো সবটা। দুই হাতের সবকটা আঙুল কে টে টুকরো টুকরো করে ফেললো সে। আয়মান আসিফকে ইশারা করতেই আসিফ পাশের রুম থেকে বিশালাকৃতির এক কু কুর নিয়ে এলো। কু কুরটিকে আহরারের কাছাকাছি আনতেই আহরার নাদিমের কেটে নেয়া আঙুলগুলো ছুঁড়ে দিলো সাথে সাথে কুকুরটি ঝাপিয়ে পরে সেগুলো খেতে লাগলো। নিজের চোখে দেখা এই দৃশ্য নাদিম হজম করতে পারছেনা। পাগলের মতো ছটফট করছে সে। একবার আহরার, আরেকবার আয়মানের উদ্দেশ্যে বারবার ক্ষমা ভিক্ষে চেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ তার প্রতি এতটুকু দয়া দেখালো না। একটু পরই আয়মান এক বালতি ফুটন্ত গরম পানি নিয়ে এলো। আহরারকে বললো,
–সড়ে দাঁড়া।
আহরার উঠে গিয়ে সরে দাঁড়াতেই আয়মান সেই বালতি ভর্তি ফুটন্ত পানি ছুঁড়ে মারলো নাদিমের ওপর। ভয়াবহ চিৎকারে মনে হলো নাদিমের গলার রগ ছিঁড়ে গেলো। কাঁটা মুরগীর মতো ছটফট করতে থাকে সে। মুহুর্তের মধ্যে তার মুখমণ্ডলসহ সারা শরীরে ফোসকা পড়তে লাগলো। আহরার এবার আয়মানের দিকে তাকিয়ে বলে,
–এবার ওকে ছেড়ে দে আয়মান। যেহেতু ওকে পুলিশ খুঁজছে তাই মে রে ফেলাটা উচিত হবেনা।
আয়মান জবাব দেয়,
–পুলিশ কি করবে? বড় জোড় ফাঁসি। ওকে আমি আরো কষ্ট দিব। তিলে তিলে মারব। আমার তানিশার আ ত্মাকে শান্তি দিতে হবে তো।
এই বলে আয়মান এগিয়ে গিয়ে নাদিমের ফোসকা পড়া জায়গা গুলোতে ইচ্ছেমতো লবনমরিচ মাখিয়ে দিতে লাগলো। নাদিম ভাঙা ভাঙা গলায় বলার চেষ্টা করলো,
–এবার আমাকে মাফ কর ভাই, আমায় ছাড়। আমি আর সইতে পারছিনা।
আয়মান চেঁচিয়ে বলতে থাকে,
–তাহলে দে আমার তানিশাকে ফিরিয়ে দে, ফিরিয়ে দে আমার ভালোবাসা, আমার স্ত্রী, আমার সুখ আমার শান্তি। ফিরিয়ে দে। দে ফিরিয়ে।
আয়মান চিৎকার করতে করতে ছু রিটা হাতে তুলে নিয়ে এলোপাতাড়ি মা রতে থাকলো নাদিমকে। নাদিমের মুখ দিয়ে গলগল করে র ক্ত বেরোতে থাকে। ছটফট করতে করতে নাদিম নিস্তেজ হয়ে যায় একটাসময়। মা রা যায় নাদিম। কিন্তু আয়মান বদ্ধ উন্মাদের ন্যায় তখনো ছু রি চালিয়ে যাচ্ছে। আহরার টেনে হিঁচড়ে তাকে সরিয়ে নিয়ে আসলো। নাদিমকে খু ন করার জন্য আয়মানের জেল হয়ে যাবে। এই ভয়ে আহরার আয়মানকে জোর করেই ধরেবেঁধে নিয়ে গেলো সেখান থেকে। আর আসিফকে বলে দিলো লা শটা যেন নদীতে ফেলে দিয়ে আসে।
আয়মানকে নিয়ে বাড়িতে ফিরলে সকলেরই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় আহরারকে। আয়মান কোনো কথা বলেনা। আহরারও কিছু জবাব দিতে পারেনা। তবে বাড়ির লোকেরা এটা ভেবেই খুশি থাকে যে সবকিছু ঠিক হয়ে গিয়েছে। বাড়ির ছেলে বাড়ি ফিরেছে। সেদিন আয়মান দীর্ঘক্ষণ যাবত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো আহরারকে। এতোদিন নিজের প্রিয় ভাই, প্রিয় বন্ধুটাকে ভুল বুঝে তার কত ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিলো সে। তার এসব ভুলের কোনো ক্ষমা হয়না। প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে তার। তার আগে ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয় সে। আহরার আঁচ করতে পারেনা আয়মানের উদ্দেশ্য। শুধু হেসে হেসে বলে,
–এখন থেকে প্রতিদিন আমার সাথে দাবা খেলবি আর হারবি তাহলেই তোর ক্ষমা। তোকে আমি কখনো হারাতে পারিনা রে।
আহরারের কথা শুনে আয়মান হাসলো। আরো একবার ভাইকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। তারপর তাড়া দিয়ে বললো,
–যা যা অরুনিকা তোর জন্য অপেক্ষা করছে। ওকে ফিরিয়ে নিয়ে আয় যা।
আহরার খুশি মনে অরুনিকাকে ফিরিয়ে আনতে যায়।
___
নিজের ঘরে মনমরা হয়ে শুয়ে বসে দিন কাটছে অরুর। আদ্রিকার কাছ থেকে শেষ খবর পেয়েছিলো আহরার ছাড়া পেয়েছে। কিন্তু এখনো কেন এলো না তার কাছে? এই ভেবে বড্ড অভিমান হচ্ছে তার।
–শ্যামবতী।
কাঙ্ক্ষিত ডাকটা শুনতেই চোখ বুজে নেয় অরুনিকা। মনের মধ্যে শীতল হাওয়া বয়ে গেলো যেন। ধীরে ধীরে চোখ খুলে ঘাড় ঘুরিয়ে চাইলো। প্রিয়মুখটা আজ কতদিন পর দেখলো সে। নিজেকে সামলাতে না পেরে ছুটে এসে ঝাঁপিয়ে পড়লে আহরারের বুকে। হু হু করে কাঁদতে থাকলো। আহরার হালকা হেসে বুকের মধ্যে আগলে রাখলো তার শ্যামবতীকে। নাক টেনে অভিমানী সুরে অরুনিকা বলে,
–অবশেষে আমাকে মনে পড়লো আপনার? এখন আসার সময় হলো?
আহরার অরুনিকাকে সোজা করে দাঁড় করালো। পরম যত্নে চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললো,
–তা তুমিও তো ফিরে যাওনি। আমি কি কিছু বলেছি তা নিয়ে?
–আমার ফিরে না যাওয়ার কারণ আছে।
–কি কারণ শুনি?
অরুনিকা বলতে গিয়েও আটকে যায়। তার চোখেমুখে একরাশ লজ্জা এসে ভর করে। আহরার সরু দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে তা। সন্দিহান কন্ঠে বলে ওঠে,
–কি ব্যাপার বলো তো। আমি কিছু বুঝতে পারছিনা।
অরুনিকা সরাসরি আহরারের চোখে চোখ রেখে তাকায়। ধীরস্বরে জবাব দেয়,
–কত্তো অপেক্ষা করেছি এই সময়টার, জানেন। আপনি আমার সামনে এসে দাঁড়াবেন। আর আমি আপনাকে কথাটা বলবো..
থেমে গেলো অরু। আহরার অধৈর্য্য হয়ে বলে উঠলো,
–কি হলো অরু। থামলে কেন? বলো। কি কথা বলার এতো অপেক্ষা তোমার।
অরুনিকা হাসলো। কি সুন্দর সেই হাসি। আহরার বরাবরের মতোই মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো সেই হাসি। এতেটাই বেখেয়ালি হয়ে তাকিয়ে ছিলো সে, যে কখন অরুনিকা তার হাতটা টেনে নিয়েছে বুঝতেই পারেনি। খেয়াল হতেই তাকিয়ে দেখে অরু তার হাতটা ধীরে ধীরে নিজের পেটের ওপর রাখলো। আহরার আহাম্মকের মতো তাকিয়ে থাকলো কেবল। অরুনিকা দৃষ্টি নামিয়ে রেখেছে। ঠোঁটে তার লাজুক হাসি। আহরার কি বলবে বুঝতে পারছেনা। সে যা ভাবছে তা কি সত্যি? তোতলানো স্বরে কোনোরকমে উচ্চারণ করলো,
–অ..অরু.. এ..এটা সত্যি?
দৃষ্টি নত রেখেই অরু ধীরে ধীরে ওপরে নিচে মাথা নাড়ায়। যার অর্থ “হ্যা”।
আহরার চোখ বড় করে মুখ হা করে চেয়ে রইলো। কথা বলতেও যেন ভুলে গেছে সে। ঠাস করে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো মেঝেতে। দৃষ্টি অরুর পেটের ওপর যেখানে অরু তার হাতটা চেপে রেখেছে। বুঝতে পারলো আহরার তার হাত কাঁপছে। সেই কম্পনরত হাতখানা আলতো করে বোলাতে লাগলো অরুর পেটের ওপর। খুশিতে বাকহারা সে। চোখের কোণে অশ্রু জমেছে। মুখটা এগিয়ে নিয়ে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,
–জুনিয়র আহরার নাকি জুনিয়র অরুনিকা? আমি কিন্তু অরুনিকা চাই।
আহরারের কথা শুনে খিলখিল করে হেসে ওঠে অরু। আহরার উঠে দাঁড়ায়। অরুনিকাকে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে। উৎফুল্ল স্বরে বলে,
–তুমি জানোনা অরু, তুমি আমায় আজ কতো বড় উপহার দিলে। আমি আজ পরিপূর্ণ। আমার আর জীবনে কিচ্ছু চাওয়ার নেই, কিচ্ছু না।
হুট করে অরুনিকা চিন্তিত হয়ে গেলো। হালকা মাথা তুলে আহরারের দিকে চেয়ে বললো,
–ওই শ য় তান নাদিমটার কি হলো খান সাহেব?
–ওকে ওর যোগ্য শাস্তি পাইয়ে দিয়েছি অরু। এ নিয়ে তুমি আর চিন্তা কোরোনা।
আহরারের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় অরু। আবারো বলে ওঠে,
–জানেন নাদিমকে ধরার জন্য যা কিছু করার সব তো আমারই করার কথা ছিলো। কিন্তু আদ্রি আমাকে আটকে দিয়েছে। এই অবস্থায় যদি আমার কোনো ক্ষতি করে দেয় সেই ভয়ে। আমার বারণ শুনলোনা, নিজে নিজেই পন্ডিতি করলো। আর নাদিমের সামনে আমাকে দিয়ে অভিনয় করালো যেন আমি আর ওই বাড়ি ফিরতে চাইনা তাই আদ্রিকে জোর করে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
আহরার কৌতুহলী স্বরে প্রশ্ন করলো,
–কিন্তু তুমি এই সুখবরটা জানলে কখন?
–আফসোস, আমার বাবার লা শ টা যেদিন আনি সেদিন আমার ভয়াবহ শরীর খারাপ হয়ে যায়। আমার চাচীই প্রথম ব্যাপারটা আঁচ করতে পারেন। তারপর এখানাকার হসপিটালে জোর করেই নিয়ে যান আমাকে। সেদিনই জানতে পারি। যদি বাবাকে জানাতে পারতাম কত্তো খুশি হতো তাইনা।
বলতে বলতে অরুর চোখজোড়া অশ্রুসিক্ত হয়ে যায়। আহরার অরুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
–তোমার বাবার খু নি শাস্তি পেয়ে গেছে অরু। আর কষ্ট পেওনা প্লিজ।
—
অরুনিকাকে নিয়ে আহরার বাড়িতে ফিরলো বিশাল এক আনন্দ নিয়ে। খান বাড়ির কাণায় কাণায় এখন খুশিতে পরিপূর্ণ হয়ে থাকবে। কিন্তু বাড়ি এসেই জানতে পারলো আয়মান পুলিশের কাছে গিয়ে সারেন্ডার করেছে, নাদিমকে খু নের দায় স্বীকার করে। ফারজানা বেগম বিলাপ করে কাঁদছেন।
আহরার থানায় ছুটে যায়। আয়মানের সাথে দেখা করলে আয়মান তাকে একটা কথাই বলে,
–নিজের কর্মের দায়ভার নিতেই হবে। তুই আমার কথা ভাবিসনা। বাড়ির সবার খেয়াল রাখিস।
এরপর আর আয়মান কাওকে দেখা দিতো না। কারো সাথে দেখা করতে চাইতোনা। আহরার অনেক অনেক ছুটোছুটি করেছে আয়মানকে ছাড়িয়ে নেওয়ার। তবে তাকে ছাঁড়াতে না পারলেও তার ফাঁ সির রায়টা আটকানো গেলো। বারো বছরের জেল হলো তার। খান পরিবার সবকিছু পেয়েও আবার যেন শূন্য হয়ে গেলো।
সময় সময়ের পরিক্রমায় চলতে থাকে। সেই সাথে চলতে থাকে সবার জীবন। না সময় থামে, না জীবন থামে। শুধু থেকে যায় সবার অপেক্ষা। একটা নতুন সকালের অপেক্ষা। যেদিন সত্যি সত্যি সব সুখ পরিপূর্ণ হবে।
———-
দীঘির পাড়ে বসে শান্ত জলের দিকে একধ্যানে চেয়ে আছে অরুনিকা। নয়মাসের ভরা পেটটা নিয়ে বসে আছে সে। কারণ এটা তার রীতিমতো পাগলামি। সে যখন এখানে আসবে বলেছে মানে আসবেই। তার জেদের কাছে হার মেনে এই অবস্থায় তাকে বাইরে এনেছে আহরার। কিন্তু এখানে সে একা বসে আছে। আহরার নেই। আহরারকে সে পাঠিয়েছে গন্ধরাজ ফুল আনতে। তার এখন ফুল লাগবে। গন্ধরাজ ফুলই লাগবে। বেচারা আহরার, কোথায় কোথায় পাগলের মতো খুঁজে বেরাচ্ছে কে জানে। একটুপরই পেছন থেকে ভেসে এলো আহরারের চিৎকার,
–অরু..অরু..
অরুনিকা পিছু ফিরে চাইতেই দেখতে পেলো আহরার একহাত উঁচু করে গন্ধরাজ ফুলের তোড়াটা নিয়ে দৌড়ে দৌড়ে আসছে। কেমন পাগলের মতো লাগছে তাকে। অরুর কাছে এসে ধপ করে বসে পড়লো সে। হাঁপাতে হাঁপাতে ফুলের তোড়াটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
–টাটকা ফুল পাইনি গো, রাগ করোনা। এই সময় তো তাজা গন্ধরাজ পাওয়া যাবেনা। তাই একটু বাসি.. বেশিনা অল্প একটু বাসি হয়েছে।
অরুনিকা মুখ টিপে হাসছে। ফুলের তোড়াটা হাতে নিয়ে মুখে গাম্ভীর্যভাব আনার অভিনয় করে। কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহরার হড়বড় করে বলে ওঠে,
–সরি, সরি.. আমি রাতের বেলা আবারো এনে দিব। একেবারে তাজা ফুল। দরকার পড়লে আমি এত্তোগুলা গন্ধরাজের গাছ এনে দিব। তাও তুমি রাগ করোনা প্লিজ..
আহরারের কথা বলার ধরণ দেখে এবার আর হাসি চেপে রাখতে পারেনা অরুনিকা। খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সে। হাসতে হাসতে এলোমেলো করে দেয় আহরারের মাথাভর্তি পরিপাটি চুলগুলো। হাসি থামিয়ে বলে,
–আমার পাগলটা।
আহরারও তাল মিলিয়ে লাজুক হাসে কেবল।
অরু আহরারের কাঁধে মাথা রেখে প্রশ্ন করে,
–আমার জন্য এতো কষ্ট কেন করছেন?
–শ্যামবতীর জন্য এই আহরার সব করতে পারে।
জীবনের এমন মুহুর্তে দাঁড়িয়ে অরুনিকার স্মৃতিচারণ হয়। শুরু থেকে সব। শ্যামবর্ণী হওয়ার দরুন প্রত্যাখ্যিত, অপমানিত হওয়া অরুনিকার জীবনে হুট করেই এক সুন্দর পুরুষের আগমন। আর আজ জীবনের পুরোটা জুড়ে কেবল সেই মানুষটারই বিচরণ। কখনো কি ভেবেছিলো জীবনে এতো ভালোবাসা পাবে সে। ভাবেনি, এই শ্যামবতী কখনো এক রূপবান পাবে, পাবে সেই রূপবানের উজাড় করা ভালোবাসা যা হয়তো অনেক সুন্দরী মেয়েরাও পায়না। আজ চিৎকার করে পুরো পৃথিবীকে শোনাতে ইচ্ছে হচ্ছে,
“এই যে সবাই, পুরো পৃথিবীবাসী শোনো তোমরা, দেখো আমায়, আমি এক শ্যামবতী। আমি এক রূপবানের-শ্যামবতী। শুনেছো কখনো এমন গল্প? দেখেছো কখনো? এই যে দেখো, আহরার-অরুনিকার গল্প। একটা শ্যামবতী মেয়েকেও কেও এতো ভালোবাসতে পারে? তাও আবার যেই সেই নয়- এক ভয়ংকর সুন্দর রূপবান। এতো ঝড় ঝাপ্টাও যাদের আলাদা করতে পারেনি তাদের গল্প, ভালোবাসতে যে রূপটা জরুরি নয় তা প্রমাণ করে দিয়েছে যারা তাদের গল্প। শুনছো তোমরা? সেই গল্প, যেই গল্পের নাম- “রূপবানের-শ্যামবতী”।”
~সমাপ্ত ~
(আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। অবশেষে সমাপ্তি ঘটে গেলো গল্পটির। অনেক অনেক অপেক্ষা করিয়েছি আপনাদের যার জন্য আমি খুবই দুঃখিত এবং মন থেকে ক্ষমাপ্রার্থী। জানিনা কতটা ভালো লিখেছি। তবে ভুলত্রুটিগুলো সম্পর্কে জানতে চাই। তাই যার যেমনই লেগেছে অবশ্যই অবশ্যই মন্তব্য করে জানাবেন তবে মার্জিত ভাষায়। আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন ইনশাআল্লাহ শুধরে নিব। আর যদি নিজেকে নিয়মিত করতে পারবো বলে নিশ্চিত হতে পারি তবেই পরবর্তী গল্প নিয়ে ফিরবো নইলে চিরবিদায়। এতোদিন পাশে থাকার জন্য সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন সবাই। আল্লাহ হাফেজ।)