#রূপবানের_শ্যামবতী
#৩০তম_পর্ব
#এম_এ_নিশী
লোকটা যখনই ছুরিটা ওপরে তুললো নিস্তব্ধ পরিবেশের নিস্তব্ধতা ভেঙে কলিং বেলটা বেজে উঠলো জোরে জোরে। লোকটার হাত থেমে গেলো। ঝট করে ঘুরে তাকালো দরজার দিকে। লোকটার ধ্যান সরে যাওয়ার সুযোগটা অরু বেশ ভালোভাবেই লুফে নিলো।নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো লোকটিকে। এক মুহুর্ত দেরি না করে উঠে দাঁড়িয়ে ছুটে যায় দরজার দিকে। দরজা খুলতেই সামনে আহরারকে দেখে ঝাপিয়ে পড়ে অরু তার বুকে। আহরারকে আঁকড়ে ধরে হাওমাও করে কাঁদতে থাকে পাগলের মতো। প্রচন্ড ভয়ে তার শরীর এখনো কাঁপছে। আহরার দু হাতে অরুর মাথায়, পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। উদ্বিগ্ন স্বরে বলে ওঠে,
–কি হয়েছে অরু? এভাবে কাঁদছো কেন? আর কে এসেছিলো? কোন লোক? কি করেছে তোমার সাথে? বলো অরু.. বলো..
কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গিয়েছে অরুর। আহরারের বুক থেকে মাথা না তুলেই আঙুল দিয়ে ইশারা করলো বাড়ির ভেতর। আহরার অরুকে শান্তনা দিয়ে দিয়ে সোজা করে দাঁড় করালো। তারপর ভেতরে এসে ঢুকতেই দেখে ফাঁকা ঘর। কেউ নেই। অরু নিজেও অবাক হয়ে দেখছে। এইতো একটু আগেই লোকটা এখানে ছিলো। কোথায় গেলো? পালালো? কিন্তু কিভাবে?
হুট করে আহরার বলে ওঠে,
–দাদীজান? দাদীজান ঠিক আছে তো?
বলতে বলতে আহরার ছুট লাগায় গুলবাহারের ঘরে। অরুনিকাও পেছন পেছন যায়। গুলবাহারের ঘরে ঢুকতেই দেখে গুলবাহার তখনও গভীর ঘুমে মগ্ন। আহরার স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলে,
–যাক, দাদীজান ঠিক আছেন।
অরুনিকা বিস্মিত স্বরে বলে,
–এতো কিছু হয়ে গেলো, তাও উনি একটুও টের পেলেন না?
–ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমোচ্ছেন নিশ্চয়ই..। ওই লোকটা? ওই লোকটা নিশ্চয়ই বাড়ির ভেতর ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছে কোথাও।
আহরার দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। অরুনিকা তখনও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে গুলবাহারের দিকে। কারণ তার জানামতে গুলবাহারের ঘুমের ওষুধ শুধুমাত্র রাতের জন্য। দিনের বেলা কোনো ঘুমের ওষুধ নেই।
অরুনিকা রুম থেকে বেরিয়ে এলো। মনে সন্দেহ এলেও খুব বেশি নাড়াঘাঁটা করতে পারলো না তা নিয়ে। সে যখন ড্রয়িং রুমে ফিরলো আহরার তখন বাইরে থেকে ঘরে ঢুকছে। চিন্তিত মুখশ্রী তার। অরুনিকা প্রশ্ন করে,
–কি হলো? পেলেন না লোকটাকে?
আহরার মাথা নাড়িয়ে না জানায়। অরুনিকা তপ্ত শ্বাস ফেলে জবাব দেয়,
–পালিয়েছে। কৌশলে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে পারে যে তার কাছে পালানোটা এ আর এমন কি?
আহরার এগিয়ে এসে দুহাতে অরুনিকার মুখটা আগলে ধরে। কোমলস্বরে বলে,
–অরু.. তোমার কিছু হয়নি তো? তুমি ঠিক আছো?
অরু ধীরভাবে নিজের মাথাটা আহরারের বুকে ঠেকায়। ঘটনাগুলো মনে পড়তেই গায়ে কাঁটা দেয় তার। মৃদু স্বরে বলে,
–আপনি একদম সময়মতোই চলে এসেছেন খান সাহেব। নইলে আজ.. আজই হয়তো আমার অস্তিত্ব মুছে যেতো এই দুনিয়া থেকে।
অরুর কথা শুনে আহরারের বাহুবন্ধন শক্ত হয়। অরুনিকাকে নিজের বুকে চেপে রেখেই জবাব দেয়,
–আমি থাকতে তোমার কিচ্ছু হবে না অরু। আমার প্রাণ থাকতে আমি তোমার কোনো ক্ষতি হতে দিবোনা। আর কখনো তোমাকে এভাবে একা ফেলে যাব না। কক্ষনো না।
এই ঘটনা বাড়ির লোকদের জানানোর সাহস আহরার বা অরুনিকা কেউই করলো না। একেতো ফারনাজকে নিয়ে সকলের মানসিক অবস্থা খুব করুণ, এমন মনের অবস্থায় আর কাওকে বাড়তি চাপ দেওয়াটা উচিত বলে মনে করলো না তারা।
রাতেই ফারনাজকে হসপিটাল থেকে নিয়ে চলে আসা হয়েছে। যতদিন না পুরোপুরি সুস্থ হয় ফারনাজ খান বাড়িতেই থাকবে। নিজের ঘরে, নিজের বিছানায় চোখ বুজে শুয়ে আছে ফারনাজ। পাশেই ফারজানা বসে বসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। কিছু সময় পর কোমলসুরে মেয়েকে ডেকে উঠলেন,
–ফারনাজ, মা।
ফারনাজ চোখ খুলে মায়ের দিকে তাকাতেই তার মা পুনরায় বলে ওঠেন,
–এমন ঘটনা ঘটলো কি করে মা? নাদিম বললো তুই বাথরুমে পিছলে পড়েছিস.. পড়লি কিভাবে?
ফারনাজ ঢোক গিললো। চোখের সামনে ভেসে উঠলো সেই ভয়াবহ স্মৃতি। মুহুর্তেই চোখ অশ্রুতে ভরে গেলো তার। সাথে সাথে নিজেকে সামলেও নিলো। মনে হলো মাকে বলে দেওয়া উচিত সব কিন্তু পরপরই মনে পড়ে গেলো নাদিমের হুমকির কথা।
হসপিটালে জ্ঞান ফেরার পর সর্বপ্রথম নাদিমই দেখা করতে এসেছিলো তার সাথে। মাথার কাছে বসে যত্নশীল স্বামীর মতো মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
–জান, ভালো আছো?
ফারনাজের শরীর এতোটাই দূর্বল ছিলো যে মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করতেও কষ্ট হচ্ছিলো তার। নাদিমকে দেখতেই চোখে মুখে ঘৃণা উপচে পড়ছিলো। মুখ ফিরিয়ে নিতে চাইলে নাদিম বাধা দেয়। শক্ত করে মুখটা চেপে ধরে তার দিকে ফিরিয়ে নিয়ে বলে,
–এখন মুখ চুপ আছে আর বাড়ির লোকদের সামনে মুখটা খুলে যাবে, তাইনা? ভুলেও এমনটা ভেবোনা সোনা। যদি ভুল করেও মুখটা খুলেছো বা কাওকে কিছু বলেছো তবে পেটের টার মতো বাইরেরটাও কিন্তু দুনিয়া ছাড়বে।
ফারনাজ বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে নাদিমের দিকে। নাদিম ফিচেল হেসে বলে,
–বুঝতে পারোনি তাইনা। নিধির পরিণতিও কিন্তু একই হতে পারে।
মাথার ওপর বাজ পড়লো যেন ফারনাজের। নাদিম নিধিকে মারার কথা বলছে। সেই নিধি যে তার প্রাণের চেয়ে প্রিয়। ফারনাজের অভিব্যক্তি বুঝতে পেরে নাদিম আবারো বলে ওঠে,
–আমার কাছে প্রিয় বলে কিছু নেই। যেসব জিনিস আমার মস্তিষ্কে আঘাত করে সেসব আমি নিশ্চিহ্ন করে দেই। যদি কোনো মানুষ হয়ে থাকে তবে তাকে সরিয়ে দিতেও আমি দ্বিতীয়বার ভাবিনা। হোক সে নিজের কাছের মানুষ..
বলতে বলতে চাপা হাসিতে ফেটে পড়ে নাদিম। কি ভয়ংকর সেই হাসি। ফারনাজের মনে হলো এই ভয়ংকর লোকটার একটা ভয়ংকর মৃ ত্যু হওয়া উচিত। তিলে তিলে মা রা উচিত। কিন্তু কে করবে সে-ই কাজ? ভেতর ফুঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বের হয় তার। সেই সাথে চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু মালা।
ফারজানার ডাকে অতীত ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে ফারনাজ। মাকে সত্যিটা বলার আর সাহস হলোনা তার। আলতো করে চোখের কোণে জমা পানি টুকু মুছে নিয়ে ক্লান্ত স্বরে বলে,
–সাবান পড়ে ছিলো, তাতেই পিছলে গেছিলাম। তুমি এখন যাও তো মা। আমাকে একটু একা থাকতে দাও। আর নিধিকে একটু কষ্ট করে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দাও প্লিজ।
ফারজানা আর দ্বিরুক্তি করলেন না। মেয়ের গায়ের চাদরটা ঠিকঠাক করে দিয়ে আরো একবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, কপালে চুমু খেলেন। তারপর ঘরের আলোটা নিভিয়ে দিয়ে দরজা চাপিয়ে বেরিয়ে গেলেন। ফারজানা বেরিয়ে যেতেই চাপা কান্নায় ভেঙে পড়লো ফারনাজ।
ডাইনিং এ রাতের খাবার সাজানোর কাজ করছেন ফারজানা। রান্নাঘরে তাসফিয়া, অরুনিকা খাবার গরম করছে। আহরার টেবিলের কাছে এসে গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে প্রশ্ন ছোঁড়ে ফারজানার উদ্দেশ্যে,
–বড়মা, দাদীজানের ঘুমের ওষুধ কয়বেলা খাওয়াতে হয়?
অত্যন্ত স্বাভাবিক আহরারের কন্ঠস্বর ও মুখভঙ্গিমা। যেন সাধারণ ভাবেই একটি প্রশ্ন করেছে। আহরার হঠাৎ এমন প্রশ্ন করায় ফারজানা খানিকটা অবাক হলেও তিনিও স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দেন,
–আম্মাজানের ঘুমের ওষুধ তো কেবল রাতের বেলায় দিতে হয়।
ততক্ষণে আহরার গ্লাসে পানি ভরে নিয়েছে। চুমুক দেওয়ার আগে পুনরায় প্রশ্ন করে,
–ওষুধের পাতায় আর কটা ওষুধ আছে?
প্রশ্ন শেষ করেই গ্লাসে চুমুক লাগায় আহরার। ফারজানা জবাব দেন,
–কালকেই তো নতুন পাতা খুললাম। একটাই খাওয়ানো হয়েছে কেবল।
পানি খাওয়া মাঝপথে থামিয়ে আহরার কৌতুহলী স্বরে বলে,
–দুপুরে যদি দাদীজান একটা খেয়ে থাকেন তবে দুটো খাওয়া হয়েছে।
–তা তো জানিনা রে বাবা। উনি শুধু শুধু দুপুরেই বা খেতে যাবেন কেন? দুপুরে তো উনি ঘুমান না। একটু বিশ্রাম নেন কেবল।
–হুম।
আহরার ছোট্টো করে জবাব দিলো। আর কিছু না বলে গ্লাসের বাকি পানিটুকু শেষ করে চলে গেলো। ফারজানা কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলেন না। কিছু না ভেবে নিজের কাজে মনোযোগ দিলেন।
একটু আগেই আহরার গুলবাহারের সাথে কথা বলে এসেছে। কৌশলে জানতে চেয়েছিলো দুপুরে কিছু হয়েছিলো কিনা? বা কিছু টের পেয়েছে কিনা? গুলবাহারও কিছু না জানার ভান ধরে, নিজের ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমানোর কথা জানিয়ে দিলেন। নিজের গা বাঁচিয়ে নিলেন।
কিন্তু আহরারের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। কেন হয়? গুলবাহারের কথাবার্তার ধরণ তার কাছে অন্যরকম লাগে। তাই সে ফারজানার কাছে ওষুধের ব্যাপারে জানতে গিয়েছিলো। এবার আস্তেধীরে গুলবাহারের ঘরে এসে প্রবেশ করে সে। ঘরে গুলবাহার নেই। ফারনাজের কাছে আছেন। আহরার ওষুধের বক্স থেকে ঘুমের ওষুধের পাতাটা বের করলো। স্পষ্ট চোখের সামনে জ্বলজ্বল করলো একটি খালি ঘর। অর্থাৎ এই পাতা থেকে কেবল একটি ট্যাবলেটই খাওয়া হয়েছে।
গটগট পায়ে আফতাব সাহেবের ঘরের সামনে এসে পরপর দুবার টোকা মারলো আহরার। ওপাশ থেকে জবাবের অপেক্ষা না করেই গমগমে গলায় বলে ওঠে,
–বাবা, বড় আব্বুর ঘরে এসো। কথা আছে।
আফজাল সাহেবের ঘরে একপ্রকার গোপন বৈঠক বসিয়েছে আহরার। সদস্য অবশ্য কেবলই তারা তিনজন। আহরার, আফজাল ও আফতাব সাহেব। আফজাল ও আফতাব সাহেব দুজনেই সোফায় বসে আছেন কিন্তু আহরার পায়চারী করছে। দুজনে থম মেরে অনুভূতিশূণ্যের ন্যায় বসে আছেন। যেন তাদের কিছুই বলার নেই, কিছুই করার নেই। খানিকবাদে আফজাল সাহেব বলে ওঠেন,
–তবে এখন তুই কি করতে চাইছিস আহরার?
মূলত আহরার তাদের দুজনকেই সবকিছু খোলাসা করে জানিয়ে দিয়েছে। সকলেই তাই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলো কিছু সময়ের জন্য। আফজাল সাহেবের প্রশ্ন শুনে পায়চারি বন্ধ করে আহরার। সরাসরি তাকিয়ে বলে,
–আমি তো বলেই দিয়েছি বড় আব্বু, আমি কি করতে চাই।
আফজাল সাহেব আবারো বলে ওঠেন,
–তুই শিউর? এমন একটা কাজ করা কি উচিত হবে?
আহরার কোনো জবাব না দিয়ে তার বাবার কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। বাবার দুইহাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে বলে,
–বাবা, মায়ের সাথে এমন কি কি ঘটতো যার জন্য মা ভীত হয়ে পড়েছিলেন অরুনিকাকে বউ হিসেবে দেখে? সবটা সত্যি বলবে বাবা..
আফতাব সাহেব ঠান্ডাসুরে জবাব দেন,
–কতো কতো বেলা কেটে গিয়েছে তোর মা কে খেতে দেয়নি, না খাইয়ে রেখেছে। অসুস্থ শরীর নিয়ে এতো খাটিয়েছিলো তিন দিন হসপিটালে ভর্তি থাকতে হয়েছিলো। উঠতে বসতে কটু কথা, খোঁচা মারা কথা শুনিয়ে কতো ছোটো করেছে কতো অপমান করেছে তার হিসেব মেলানোই দায়। একবার তো বাড়ি থেকেই বের করে দিয়েছিলো এবং আমাকে এক প্রকার বাধ্যই করা হয়েছিলো যেন তোর মাকে তালাক দিয়ে দেই। কিন্তু আমি তা করিনি। বরং আমিও বেরিয়ে গিয়েছিলাম। তাসফিকে নিয়ে আলাদা সংসার করছিলাম। তখনই তোর আসার সুসংবাদ জানি। তাও তোর দাদীজান তোর মাকে গ্রহণ করছিলেন না, বারবার আমাকে ফিরে যাওয়ার তাগিদ দিতেন। আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে কত কি-না করেছেন। তারপর তোর জন্ম হলো। তোকে দেখতে এসে তোর দাদীজান স্থির হয়ে গিয়েছিলেন। তোর সৌন্দর্য দেখে। তিনি সৌন্দর্যের পূজারি। এতো সুন্দর বংশধর এসেছে তার ঘরে, তার জন্য হলেও তিনি তাসফিকে গ্রহণ করলেন। এবাড়িতে ফিরে এলাম আমরা আবার। তারপর থেকে তোর মাকে তেমন অত্যাচার না করলেও খোঁচা মারাটা আজও ছাড়তে পারেননি।
নত মস্তকে সমস্ত কথা শুনলো আহরার। ভিষণ শান্ত হয়ে আছে সে। এতোকিছু শুনেও প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। ধীরকন্ঠে কেবল একটা কথাই বললো,
–আশা করি আমার কাজে তোমরা কোনো বাঁধা দেবেনা।
এই বলে আহরার উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে এগোলো। পেছন থেকে আফজাল সাহেব ডেকে ওঠেন,
–দাঁড়া আহরার।
আহরার দাঁড়িয়ে পড়ে। আফজাল সাহেব উঠে এসে আহরারের কাঁধে হাত রেখে বলেন,
–বরাবরই আমি বাড়ির সব ব্যাপার থেকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতাম শুধুমাত্র নিজের মাকে কিছু বলতে পারবোনা বলে। তোর বাবাও অনেক চেষ্টা করেও কোনো সুবিধা করতে পারেনি। পারেনি নিজের মাকে বদলাতে। পারেনি তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত কোনো ব্যবস্থা নিতে। যদি তুই মনে করে থাকিস তুই এই কাজটা যথাযথ ভাবেই করতে পারবি তবে কর। আমাদের দিক থেকে কোনো আপত্তি নেই। কিরে আফতাব তুই কি বলিস?
আফতাব সাহেবকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলতেই তিনিও মাথা নেড়ে জবাব দেন,
–জি ভাইজান, আমারো কোনো বাঁধা নেই।
আহরার কিছু বললো না। হালকা হাসলো। তার হাসির সাথে বাকি দুজনও হাসি মেলালো।
___
কাল থেকে নাদিমকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। আজ সকাল সকাল গুলবাহার তাই আবারো ফোন লাগালেন নাদিমকে। এবারে পাওয়া গেলো। কয়েকবার রিং হতেই রিসিভ হলো,
–জি দাদীজান..
দাঁত কিড়মিড়িয়ে গুলবাহার জবাব দেন,
–আরে রাখো তোমার দাদীজান। আমাদের কি কথা হয়েছিলো? বারবার করে বলেছিলাম, একজন বিশ্বস্ত লোককে ওই অরুনিকার ঘরে ঢুকিয়ে দিবে। তাদের কিছু ঘনিষ্ঠতার মুহূর্ত সৃষ্টি করে সেসব ছবি তুলে নিবে। বাড়ির সবাইকে তা দেখিয়ে, মেয়েটাকে দুশ্চরিত্রা প্রমাণ করে এই বাড়ি থেকে চিরকালের মতো বিদায় করবো। আর তুমি কি করলে? ওকে খু ন করার চেষ্টা করলে। দেখো নাদিম আমি মেয়েটিকে অপছন্দ করি, ওকে এই বাড়ি থেকে তাড়াতে চাই তার মানে এই নয় যে ওকে জানে মেরে ফেলার চিন্তা করবো। কাজটা তুমি একদম ঠিক করোনি। এখন কি করবে? আহরার তোমাকে ছাড়বে না কিছুতেই। পাতাল থেকে হলেও তেমাকে টেনেহিঁচড়ে বের করে আনবে। আমি তো নিজেকে বাঁচিয়ে নিয়েছি। তুমি কি করবে এবার ভাবো।
দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজে দ্রুত ফোনটা কেটে দিলেন গুলবাহার। নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ করে গলা চড়িয়ে বললেন,
–কে?
–দাদীজান..
আহরারের কন্ঠস্বর শুনে মুখে হাসি ফুটলো গুলাবাহারের।
–আরে দাদুভাই, ভেতরে এসো ভেতরে এসো।
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো আহরার। গুলবাহারকে তাড়া দিয়ে বললো,
–দাদীজান জলদি রেডি হয়ে নিন। একজায়গায় যেতে হবে।
গুলবাহার কৌতুহলী স্বরে জিজ্ঞেস করেন,
–কোথায় যাব দাদুভাই?
আহরার অদ্ভুত ভাবে হাসলো। কেমন রহস্যময় ঠেকলো হাসিটা। জবাব দিলো,
–সা – র – প্রা – ই – জ!
গুলবাহার তৈরি হতেই আহরার তাকে নিয়ে গাড়ির কাছে আসলো। গুলবাহার বিরক্ত হন।
–দাদুভাই, একটু জার্নিও এখন শরীরে সয়না। গাড়ি করে কোথায় নিয়ে যাবে তুমি আমায়?
আহরার দরজা খুলতে খুলতে বলে,
–বেশিদূর না দাদীজান। ৫ মিনিটের পথ।
গুলবাহারকে ওঠার ইশারা দিতেই তিনি আর কিছু না বলে উঠে পড়েন। সত্যি সত্যি আহরার ৫ মিনিটের মাথায় তাকে নিয়ে এলো। গাড়ি থেকে নামাতেই গুলবাহার কৌতুহলী দৃষ্টিতে চারপাশ দেখছেন। এ কোথায় নিয়ে এলো আহরার তাকে? কিছু জিজ্ঞেস করবেন তার আগেই সামনে চোখ পড়লো তার। বিশাল এক ভবন, যার চূড়ায় বড় বড় অক্ষরে লিখা আছে, “মমতা বৃদ্ধাশ্রম”।
বৃদ্ধাশ্রমটি আফজাল সাহেব ও আফতাব সাহেব মিলে তৈরি করেছেন। নামটা গুলবাহার দিয়েছেন। তার মায়ের নাম- মমতা।
আহরার তাকে হঠাৎ এখানে কেন নিয়ে এসেছে বুঝতে পারছেন না তিনি। ভাবতে ভাবতেই তাকে ভেতরে নিয়ে এলো আহরার। একটা ঘরে ঢুকিয়ে বিছানার ওপর বসিয়ে দিয়ে আহরার বলে,
–আপনি এখানে বসুন, দাদীজান। আমি কিছু কাজ সেরে আসছি।
গুলবাহার কিছু বলতে চাইলেন তবে আহরার সেই সুযোগ দিলো না। দ্রুত বেরিয়ে গেলো। বৃদ্ধাশ্রমটির মূল দায়িত্বে থাকা জয়নাব বেগমের সাথে কথা বলছে আহরার।
–কাল রাতে তো সব বলেইছি আপনাকে। ঠিক যেভাবে যেভাবে, যা যা করতে বলেছি তাই তাই করবেন। মূল কথা, তাকে শান্তিতে বসতে দিবেন না।
জয়নাব বেগম গদগদ হয়ে মাথা নাড়লেন কেবল। আহরার একবার সেই ঘরটার দিকে তাকালো যেখানে গুলবাহারকে বসিয়ে রেখে এসেছে। তারপর আবারো জয়নাব বেগমের উদ্দেশ্যে বললো,
–আপনার প্রাপ্য আপনাকে যথাযথ ভাবেই মিটিয়ে দেওয়া হবে। আর হ্যা, আমি কাওকে দিয়ে উনার জিনিসপত্র গুলো পাঠিয়ে দিচ্ছি। চলি।
এই বলে আহরার বেরিয়ে গেলো। তার চোখেমুখে কঠোর অভিব্যক্তি। কিছু কিছু মানুষের ভুলের মাশুল এভাবেই দিতে হয়। আহরার নিজের গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।
এদিকে গুলবাহার অতিষ্ঠ হয়ে বেরিয়ে আসলেন। আহরারকে খুঁজতে লাগলেন। তখনই জয়নাব বেগম সামনে এসে দাঁড়ালেন,
–কোথায় যাচ্ছেন? এখান থেকে বেরোনো নিষেধ।
গুলবাহার ক্রুদ্ধ স্বরে বলে ওঠেন,
–তোমার এতো বড় সাহস তুমি আমাকে আটকাও। তুমি জানো আমি কে? আমি এই বৃদ্ধাশ্রমের মালকিন। তোমাকে এই মুহূর্তে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারি আমি, জানো?
জয়নাব বেগম ব্যাঙ্গাত্মক হেসে বলে উঠলেন,
–বৃদ্ধাশ্রমের মালকিন এখন এই বৃদ্ধাশ্রমেই আশ্রয় নেওয়া এক বুড়ি মানে বৃদ্ধা।
গুলবাহার ফুঁসে উঠে বলেন,
–কিইইই?
–জি হ্যা। এখন থেকে আপনি এখানেই থাকবেন। আপনার নাতি আপনাকে এখানে রেখে গেছে। এই বৃদ্ধাশ্রমের বাইরে পা রাখা আপনার জন্য নিষিদ্ধ।
–নাআআআ.. এটা ভুল, এটা মিথ্যে। আমার নাতি এমনটা করতে পারেনা। আমি কথা বলবো ওর সাথে। কোথায় ও?
বলতে বলতে গুলবাহার বেরোতে চাইলে জয়নাব বেগমের ইশারায় দুজন মহিলা তাকে দুদিক থেকে ধরে আটকে দেয়। তাকে টেনেহিঁচড়ে ভেতরে নিয়ে যেতে থাকে। গুলবাহার কেবল চিৎকার করে বলে যাচ্ছেন,
–এ্যাই অসভ্যের দল ছাড় আমাকে ছাড়। তোরা জানিসনা আমি কে? দেখে নিবো তোদের। ছাড় আমাআআআয়য়য়য়…
জয়নাব বেগম খিকখিক করে হাসতে থাকেন। হাসতে হাসতে বলেন,
“বুড়ি তোর কতো তেজ এবার বের করবো দাঁড়া।”
চলবে….
#রূপবানের_শ্যামবতী
#৩১তম_পর্ব
#এম_এ_নিশী
বৃদ্ধাশ্রমের সবচেয়ে খারাপ, স্যাঁতস্যাঁতে, ভাঙাচোরা ঘরটায় আশ্রয় মিলেছে গুলবাহারের। শুরুতে বেশ চিৎকার চেঁচামেচি করায় তাকে ঘরটিতে বন্দী করে রাখা হয়েছিলো। অবশ্য কিছু সময় পরেই থেমে গেছিলেন তিনি। খানিক চেঁচামেচিতেই ক্লান্ত হয়ে নেতিয়ে গেছেন। শক্তিতে কুলোয়না আর। শরীর অসাড়ের ন্যায় লেপ্টে আছে বিছানায়। ক্রমাগত চোখের জলে ভাসিয়ে নিচ্ছেন নিজেকে। আর গুনগুনিয়ে বিলাপ গাইছেন, কি করে সকলে তাকে এতোটা পর করে দিলো এই ভেবে।
দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলেন জয়নাব বেগম। কর্কশ স্বরে বলে ওঠেন,
–এই যে বড়লোক বুড়ি থুক্কু বয়োজ্যেষ্ঠ খালাম্মা, শুয়ে বসে থাকলে এখানে ভাত জুটবে না। খেটে খেতে হবে। বুঝলেন?
গুলবাহারের মিইয়ে যাওয়া শক্তি যেন পুনরায় নতুন উদ্যমে ফিরে এলো। ক্ষেপাটে স্বরে একপ্রকার তেড়ে গিয়ে বলতে থাকেন,
–কি বললি? কি বললি তুই? আমাকে বুড়ি বলিস। তোর সাহস তো মন্দ না। আবার কিনা কাজ করার কথা বলছিস? আমাকে? এই গুলবাহার খানকে?
গুলবাহারের তেড়ে আসা দেখে ভয় পেয়ে কিছুটা পিছিয়ে গেলো জয়নাব। পরপরই নিজেকে সামলে দ্বিগুণ তেজে জবাব দেয়,
–এটা আপনার বাড়ি নয়। এটা বৃদ্ধাশ্রম। আর আপনার মতো বৃদ্ধা যাদের সুখে থাকতে ভুতে কিলায় তাদের জন্যই এমন ব্যবস্থা এখানে। কয়েকটা ঘর আর বারান্দা পরিষ্কার করা লাগবে, কিছু থালাবাসন মাজা লাগবে আর বোধহয় কিছু বাসি জামাকাপড় আছে। কেঁচে দিবেন। ব্যস! আজকের মতো একটা কাজ করলেই আপনার খাওয়া জুটবে। নইলে না খেয়ে কাটাতে হবে আজ।
এই বলে জয়নাব টিটকারি মূলক হাসি ছুঁড়ে চলে যায়। গুলবাহার পারেন না তো তাকে কাঁচাই চিবিয়ে খেয়ে ফেলেন। বেশ কিছুক্ষণ বসে বসে গজগজ করলেন তিনি। অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও যখন কেউ খাবার দিয়ে গেলো না, গুলবাহার তখন একটু একটু করে ক্ষিদে অনুভব করছেন। এপাশ ওপাশ করে শুয়ে থেকে ঘুমানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু পারলেন না। একেতো নোংরা বিছানা, তারওপর অভুক্ত থেকে চোখে ঘুম নামানো মুশকিল।
একটাসময় আর সহ্য করতে না পেরে তিনি বেরিয়ে এলেন। জয়নাবকে দেখতে না পেয়ে অন্য একজনকে দেখতে পেলেন। তার কাছে গিয়ে কোনোরকমে নিজের ক্ষিদের কথাটা জানালেন। মেয়েটি কেমন বিদ্রুপ করে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতেই বললো,
–কাজ না করলে আপনার খাওয়া জুটবেনা দাদী। কাজগুলো শেষ করে এসে খাবার নিয়ে যান।
কথা শেষে মেয়েটিও চলে গেলো। যাওয়ার সময় আরো একবার বিদ্রুপাত্মক হাসি হাসতে ভুললো না। গুলবাহার শুধু দাঁত কিড়মিড়িয়ে দেখেন। আর কিছু বলেন না।
নিরুপায় গুলবাহার বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া শরীরটা কোনোরকমে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে কাজগুলো শেষ করার চেষ্টা করেন। পুরোটা সময় শুধু চোখের জল ফেলেছেন।
কাজ শেষেই খাবার পেয়েছেন তিনি। চোখের সামনে খাবারের থালা পেতেই হামলে পড়েন। খেতে খেতে বুঝতে পারেন খাবারগুলো বাসি। তারপরও সেগুলোই গোগ্রাসে গিলতে থাকেন।
অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে প্রথমদিনই বিছানায় পড়ে গিয়েছেন তিনি। যদিও তাকে খুব বেশি বা ভারি কোনো কাজ দেওয়া হয়নি। তার বয়সের দিকে খেয়াল রেখেই। কিন্তু আরাম আয়েশে, বিলাসী জীবন কাটানো গুলবাহারের শরীরে এটুকু পরিশ্রমও যেন সহ্য হচ্ছে না।
ভেবেছিলো পরদিন হয়তো তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তাকে ছাড় দেওয়া হবে। তবে আফসোস তার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করে আবারো কাজের বিনিময়ে খাবারের শর্ত আরোপিত হলো।
অসুস্থ শরীর নিয়েই তাকে কাজ করতে হচ্ছে। নইলে তো খেতে পাবেন না। না খেলে চলবে কি করে? বাঁচবেন কিভাবে?
বাসন মাজতে মাজতে চোখের জল ফেলছেন গুলবাহার। তখনই জয়নাব এসে খোঁচা মেরে বলে ওঠে,
–কি গো খালাম্মা, কষ্ট হচ্ছে খুববব? এমন কষ্ট তো আপনিও দিয়েছিলেন, আপনার বাড়ির বউকে। বিনা কারণে, বিনা অপরাধে। কি বলুন তো, পাপ বাপকেও ছাড়েনা। হা হা হা…
অট্টহাসি হেসে প্রস্থান করে জয়নাব। তবে গুলবাহারের মাথায় ঘুরতে থাকে জয়নাবের বলা কথাগুলো। বড্ড মনে পড়ছে তার তাসফিয়াকে। মেয়েটাকে এতো কষ্ট দেওয়া সত্ত্বেও কখনো তার সেবাতে কার্পণ্য করেনি সে। তাসফিয়ার কষ্টগুলো যেন আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন গুলবাহার।
আশ্চর্যের ব্যাপার, ২-৩ দিনের মাথায়ই গুলবাহার বুঝতে পারেন তার মধ্য থেকে রাগ, জেদ, অহংকার সব কর্পূরের মতো গায়েব হয়ে যাচ্ছে। নিজের পরিবারের কথা ভেবে ভেবে কেবল কষ্ট হচ্ছে, যন্ত্রণা হচ্ছে বুকে। যার ফলস্বরূপ সর্বদা অশ্রুসিক্ত হয়ে থাকছে চোখজোড়া। বারবার একটা কথাই ভেবে যাচ্ছেন, তার কিচ্ছু চাইনা, কোনো কিচ্ছু না। কেবল তার পরিবারটাকে ফেরত পেতে চান। ছেলে-বউমা, নাতি-নাতনিদের নিয়ে তার ওই ভরা সংসারটা আবারো ফিরে পেতে চান। কার গায়ের রং কেমন, কার অবস্থা কেমন এসবকিছুতেই তার আর কোনো কিছু যায় আসেনা। তার শুধু বাড়ি ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে, তার ওই সুখী পরিবারটা ফিরে পাওয়ার ইচ্ছে।
____
খান বাড়ির পরিবেশ এখন দুঃখী দুঃখী হয়ে থাকে। গুলবাহার যতই খারাপ হন, কিন্তু বাড়ির একজন সদস্য। তাকে ছাড়া সত্যিই বাড়িটি নিষ্প্রাণ লাগছে। তাসফিয়া বারকয়েক আহরারকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন কিন্তু আহরার শুনতে নারাজ। তার এক কথা সঠিক সময় হলে সে নিজে গিয়ে গুলবাহারকে আবারো ফিরিয়ে আনবে খান ভিলায়। তাসফিয়াও তাও মানতে পারছিলেন না। নিজের স্বামী এমনকি ভাসুরের কাছেও অনুরোধ করেছে কেউই এই ব্যাপারে কথা বলতে চাননা। সবটাই ছেড়ে দিয়ে রেখেছেন আহরারের ওপর। তাই শেষ পর্যন্ত অরুনিকার কাছে অনুরোধ নিয়ে গেলে অরুনিকার জবাব,
–মা, এই যে মানুষটার জন্য কষ্ট পাচ্ছেন। আপনি কি চান না মানুষটা ভালো হয়ে যাক? তার মধ্য থেকে সমস্ত খারাপি দূর হয়ে যাক?
তাসফিয়া করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে মৃদু স্বরে জবাব দেন,
–চাই তো। কিন্তু নিজের বাড়ি ছেড়ে মানুষটা ওভাবে..
তাসফিয়াকে থামিয়ে অরুনিকা পুনরায় বলে ওঠে,
–এই যে উনি আপনাকে, আমাকে এতোটা অপছন্দ করেন। আপনি চাননা উনি মন থেকে আমাদের মেনে নিক। আমাদেরকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিক।
তাসফিয়ার চোখজোড়া চকচক করে ওঠে৷ যেন বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত কোনোকিছু পূরণ হওয়ার সংবাদ পেতে যাচ্ছে। উজ্জ্বল হয়ে ওঠে মুখশ্রী। ওপর নিচে মাথা দুলিয়ে বোঝান যে তিনি কতটা চান।
অরুনিকা হাসলো। ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে রেখেই জবাব দিলো,
–তবে একটু অপেক্ষা করুন মা। একটা বিশুদ্ধ, পরিষ্কার মন নিয়ে একজন পবিত্র মানুষ হিসেবে এই বাড়িতে ফিরবেন দাদীজান। শুধু একটু ধৈর্য্য রাখুন।
তাসফিয়ার চোখেমুখে আবারো হতাশার ছাপ দেখা যায়। ভেতর চিঁড়ে আসা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নেড়ে সম্মতি জানান অরুনিকার কথায়।
____
নিকষ কালো আঁধারে ছেয়ে থাকা ঘরের মেঝেতে গুটিশুটি মেরে বসে আছে আদ্রিকা। দু হাঁটু ভাজ করে তাতে মুখ গুঁজে রেখেছে। থেকে থেকে শরীর কেঁপে উঠছে তার। ফোঁপানোর আওয়াজ ভেসে আসছে।
একা একা অন্ধকারে ভয় পাওয়া আদ্রিকা আজ ঘরে আলো জ্বালায়নি। আঁধারে নিভৃতে বসে মন খুলে কাঁদার ব্যবস্থা করে রেখেছে। এভাবেই কাটছে তার বিগত কয়েকদিন। ঘরবন্দী জীবন। সকলের গালমন্দ শোনা আর মায়ের একবুক কষ্ট থেকে বেরিয়ে আসা চোখের জল দেখে দেখে এক দমবন্ধ করা কষ্টানুভূতি নিয়ে দিন কাটাচ্ছে সে।
ক্যাচক্যাচ করে দরজা খোলার আওয়াজে কান্না থেমে যায় আদ্রিকার। তবে মাথা তুলে তাকায় না সে। আলো জ্বলে ওঠে ঘরের, সেই সাথে ধিক্কার মিশ্রিত এক কন্ঠস্বর,
–এভাবে বসে বসে শোক পালন করে কি প্রমাণ করবি তুই? নোংরামি করার আগে মাথায় রাখা উচিত ছিলো, পরিস্থিতি কেমন হতে পারে?
সেলিনার কথা শুনে মাথা তোলে আদ্রিকা। টকটকে লাল চোখ, ফোলা ফোলা মুখে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে চাচীর দিকে। তাতে সেলিনার বিন্দুমাত্র মায়া হয়না। আরো একবার মুখ ঝামটা দিয়ে বললো,
–বাপহীন মেয়ে তুই। অন্তত মায়ের কথাটা ভাবা উচিত ছিলো। যাই হোক নিজেকে যতদ্রুত পারিস সামলে নে। তোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এই বলে সেলিনা গটগটিয়ে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। বাইরে থেকে আর দরজা আটকে দিলেন না। তাতে কিছুটা খুশিই হলো আদ্রিকা।
সেদিন তার ফোনটা সেলিনার হাতে পরায় সেই অপরিচিতের সাথে হওয়া সমস্ত বার্তালাপ পড়ে ফেলেন তিনি। সাথে সাথেই চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলেছেন। আরজু বেগমের সামনে অভিযোগ তুলে নানা ধরনের কটু কথা বলেছেন। কিছুসময় পর আদ্রিকা বাড়ি ফিরতেই কোনো কথা ছাড়াই তার ওপর হামলে পড়েন আরজু। ইচ্ছেমতো চড় থাপ্পড় মারতে থাকেন। একটাসময় ক্লান্ত হয়ে ধপ করে মাটিতে বসে পড়েন তিনি। হাওমাও করে কাঁদতে কাঁদতে বিলাপ করতে থাকেন। ততক্ষণে আদ্রিকা সবকিছুই জেনে-বুঝে গিয়েছে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে কেঁদেই গেছে কেবল। মুখ ফুটে কোনো টুঁ শব্দ করেনি।
তারপর থেকেই তাকে ঘরবন্দী করে রাখেন আরজু। প্রথম দিন তাকে না খাইয়ে রেখেছিলো দুই বেলা। তারপর থেকে ঘরে কেবল খাবার দিয়ে যাওয়ার জন্যই দরজা খোলা হতো। আর পুরোটা সময় বন্দীদশায় পার করতো আদ্রিকা। কাঁদতে কাঁদতে কখনো ক্লান্ত হয়ে চুপচাপ নীরব হয়ে যেতো। কখনো হাওমাও করে কেঁদেই যেতো। এই সবকিছুর মধ্যে কেবল তার বুবুর কথাই মনে পড়তো বারবার। আজ তার বুবু থাকলে তাকে এতো কষ্ট পেতে হতোনা। আদ্রিকা কোনোভাবেই নিজেকে দোষী ভাবতে পারেনা। সে তো কেবল পছন্দ করেছে একটা ছেলেকে, এছাড়া কোনো গভীর বাক্যালাপও হয়নি তাদের মধ্যে। এতো মার্জিত সব কথাবার্তা ছিলো তাদের। তারপরও তাকে এমনভাবে দোষারোপ করা হচ্ছে যেন সে রীতিমতো খু নের আসামী।
আজ দরজা খোলা পাওয়ায় আদ্রিকার মনে হলো একবার ফোনটা খুঁজে দেখবে। যেভাবেই হোক অরুনিকার সাথে যোগাযোগ করতে চায় সে।
তাই তো ঘর থেকে বেরিয়ে সেলিনার ঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় সে। পথে তার দাদা জসীমউদ্দিনের ঘর থেকে চাচা জাহেদের গলার আওয়াজে থমকে গেলো পা জোড়া। তার বিয়ের আলাপ চলছে। আদ্রিকা একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে শোনার চেষ্টা করলো। জাহেদ বলেন,
–ছেলেটাতো প্রথমে রাজি ছিলোনা। কিন্তু আজ হঠাৎ সে নিজেই আমার দোকানে এসে হাজির। ভালোমন্দ কতো কথা বলে অবশেষে নিজের রাজি হওয়ার কথাটা জানিয়েই দিলো। আদ্রিকাকে বিয়ে করতে কোনো আপত্তি নেই তার। তবে সে চায় আপাতত ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা করবে। পরে না হয় অনুষ্ঠান হবে। কাল সন্ধ্যায় বাবা-মা কে নিয়ে এসে বিয়ের কাজটা সম্পন্ন করে যেতে চাচ্ছে। আপনি কি বলেন বাবা?
জসীমউদ্দিন জবাব দেন,
–আমি আর কি বলবো? তোমরা যা ভালো বোঝো।
জাফর আরজু বেগমের উদ্দেশ্যেও একই প্রশ্ন ছুঁড়লে তারও অনুরূপ জবাবই মিলে।
আদ্রিকা বোঝার চেষ্টা করছে কার সাথে তার বিয়ের এতো তোড়জোড়।
তখনই সেলিনা বলে ওঠেন,
–যাক বাবা শাহাদাতের মতো এতো ভালো ছেলেকে জামাই হিসেবে পাওয়া বড় সৌভাগ্য হলো।
আদ্রিকার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। বিস্ফোরিত নয়নে চেয়ে থাকে সে। শাহাদাত? ওই মানুষরূপী জা নো য়ারটার সাথে তার বিয়ে দিতে চাইছে তার পরিবার। তারা তো কেউ জানেনা ওর আসল রূপ। এখন কি করবে আদ্রিকা? ভরসা কেবল তার বুবু।
আদ্রিকা ছুটে চলে যায় সেলিনার ঘরে। ওয়ারড্রবের ওপরেই কাঙ্ক্ষিত ফোনটা পেয়ে যেতেই দ্রুত সেটা হাতে নিয়ে অরুনিকার নাম্বারে ডায়াল করতে যায়। কিন্তু পারেনা। খপ করে কেউ একজন হাত ধরে ফেলে তার। তাকিয়ে দেখে সেলিনা।
–তোর সাহস তো কম নয় আদ্রি, একটু সুযোগ পেয়েছিস আর ওমনি কাজে লাগিয়ে ফেলছিস। তোকে ছেড়ে দেওয়াই ভুল হয়েছে।
এই বলে সেলিনা আদ্রিকার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে। আদ্রিকা বারবার আকুতি ভরা কন্ঠে বলে যাচ্ছে,
–চাচী আমায় ছাড়ো। আমি বুবুর সাথে কথা বলবো। ওই শাহাদাত একটা বাজে ছেলে। আমি কিছুতেই ওকে বিয়ে করবোনা।
আদ্রিকাকে ঘরে ঢুকিয়ে ছিটকে ফেলে দিলো সেলিনা। রাগে গজগজ করে বলতে থাকেন,
–তুই তো এইসব কথা বলবিই। শাহাদাতের মতো ছেলেকে বাজে বলিস। তুই নিজে কি? তোর মতো মেয়ে শাহাদাতের মতো বর পাচ্ছে এই নিয়ে খুশি হ। মেনে নে। এতেই তোর মঙ্গল।
কথা শেষেই সশব্দে দরজা আটকে দেন সেলিনা। ভেতর থেকে আসা আদ্রিকার এতো কাকুতিমিনতি কোনো কিছুই কর্ণপাত করেননা।
শাহাদাত চায়না আপাতত বিয়ের ব্যাপারে কেউ জানুক। এমনকি অরুনিকাও না। বিয়েটা হয়ে গেলে অনুষ্ঠানের জন্যই সবাইকে নিমন্ত্রণ করা যাবে। সেলিনা, জাহেদ খুশিতে আটখানা থাকায় শাহাদাতের এমন শর্তগুলো অনায়াসেই মেনে নেন কোনো প্রশ্ন ছাড়াই। তাই আরজু বেগম অরুনিকাকে জানাতে চাইলেও সেলিনা বেগমের জোরদার নিষেধে আর কিছু বলতে পারেন না।
পরদিন দুপুর। বিয়েটা আটকানোর কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে আদ্রিকা হাল ছেড়ে দেয়। মানসিক ভাবে নিজের এই বলিদানের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে সে। মেনে নেয়, তার জীবনের করুণ পরিণতি। বন্দী ঘরে বসে চুপচাপ আপনমনে নিজের কষ্টের কথা ভেবে যাচ্ছে।
হুট করে ঘরের দরজা খুলে যায়। বান্ধবী রুমকিকে ভেতরে ঢুকতে দেখে বাঁধভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। রুমকি ছুটে এসে আদ্রিকাকে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দিতে থাকে। কিছুসময় পর কান্না থামিয়ে নিজেকে সামলে নিলো আদ্রিকা। কৌতূহলী স্বরে জিজ্ঞেস করে,
–তুই এই ঘরে আসলি কিভাবে? চাচী আসতে দিলো?
রুমকি জবাব দেয়,
–উনিই তো ডেকে পাঠিয়েছেন। তোকে ঠিকঠাক করে সাজিয়ে গুছিয়ে দেওয়ার জন্য। আর বলেছেন আমি যেন তোকে বুঝিয়ে রাজি করাই।
–কিহহ! তুলি তুই তো জানিস ওই শাহাদাত কেমন। আমি তো তোকে সব বলেছি। আমি কিভাবে..
–আমি জানি আদ্রি.. শোন
থেমে গেলো রুমকি। আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টিতে নজর বুলিয়ে নিলো। যখন বুঝলো কেউ নেই আদ্রিকার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,
–আমি লুকিয়ে একটা বাটন ফোন এনেছি। তুই অরুবুবুকে ফোন কর। তাকে জানা। সে নিশ্চয়ই কিছু না কিছু করবে। তোর জীবনটা এভাবে নষ্ট হতে দিবেনা।
রুমকির কথা শুনে আদ্রিকা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলো। চট করে উঠে গিয়ে দরজাটা আটকে দেয় সে। রুমকি তার হাতে ফোনটা দিতেই ঝটপট অরুর নাম্বার ডায়াল করে কল লাগায়। বুক কাঁপছে তার। বুবুকে সবটা বলার আগেই ধরা না পড়ে যায়। অনেকক্ষণ ধরে রিং হচ্ছে। রিসিভ হচ্ছে না। আদ্রিকা ভয়ে বারবার ঢোক গিলছে। আর মনে মনে দোয়া করছে যেন অরুনিকা ফোনটা রিসিভ করে। অবশেষে তার দোয়া কবুল হয়ে অপর পাশ থেকে অরুনিকার মিষ্টি স্বর ভেসে এলো,
–হ্যালো কে বলছেন?
অরুনিকার কন্ঠস্বর শুনতেই ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো আদ্রিকা। কান্নারত স্বরেই ভাঙা ভাঙা ভাবে উচ্চারণ করলো,
–বু..বুবু.. আমি.. আদ্রিকা।
আদ্রিকার কন্নামিশ্রিত স্বর শুনে ধ্বক করে ওঠে অরুনিকার বুক। তার বোন। তার আদরের বোন। এমনভাবে কাঁদছে? উদ্বিগ্ন স্বরে ছটফটিয়ে বলে ওঠে অরু,
–আদ্রি.. কি হয়েছে বোন আমার? কাঁদছিস কেন এভাবে? বুবুকে বল
–বুবু.. চাচা চাচী মিলে ওই শাহাদাতের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। আজ সন্ধ্যায় বিয়ে। তুমি আমায় বাঁচাও বুবু। আমি কিছুতেই এই বিয়ে করবোনা।
ভনভন করে ওঠে অরুনিকার মাথা। চক্কর আসতেই সে টাল সামলাতে বসে পড়ে বিছানায়। এসব কি শুনছে সে? ওই অমানুষটার সাথে তার বোনের বিয়ে ঠিক করেছে? এতো বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে সকলে অথচ কেউ তাকে কিছু জানানোর প্রয়োজনবোধ করলো না।
–বুবু.. ও বুবু.. কিছু বলছো না কেন?
আদ্রিকার ডাকে সম্বিত ফেরে অরুনিকার। নিজেকে ধাতস্থ করে জবাব দেয়,
–আদ্রি একদম ভয় পাস না। তুই কোনো চিন্তা করিস না। এই বিয়ে হবে না। আমি হতে দিবো না। আমি আসছি। একটু অপেক্ষা কর। আমি আসছি। ততক্ষণ বিয়েটা ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা কর বোন।
ফোন কেটে দেয় অরুনিকা। আহরার অফিসে আছে। আজ তার কিছু জরুরি মিটিং এ থাকার কথা। ফোনে পাওয়া সম্ভব নয় জেনেও অরুনিকা ফোন দেয়। যা ভেবেছিলো তাই। ফোন বন্ধ। কি করবে না করবে ভেবে দিশেহারা অবস্থা হয়ে যাচ্ছে অরুর। কাকে বলবে? কে আছে বাড়িতে? ভাবতে ভাবতে মাথায় আসে – আয়াজ। আয়াজ আজ বাড়িতে। অফিসে যায়নি সে। অবশ্য ইদানীং তাকে খুব একটা অফিসে যেতে দেখা যায় না। বেশিরভাগ সময় বাড়িতেই থাকে। দরজা আটকে ঘরে বসে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা। কেমন একটা নিষ্প্রাণ, নির্জীবের মতো ঘুরে বেড়ায় সে।
অরুনিকা আর কিছু না ভেবে ছুটে যায় আয়াজের ঘরের সামনে। ক্রমাগত দরজা ধাক্কিয়ে উত্তেজিত স্বরে ডাকতে থাকে,
–আয়াজ ভাইয়া, দরজা খুলুন প্লিজ। আয়াজ ভাইয়া..
কয়েক সেকেন্ডের মাথায়ই দরজা খুলে দেয় আয়াজ। বিস্মিত হয়ে বলে,
–অরুভাবি, কি হয়েছে? এতো উত্তেজিত দেখাচ্ছে কেন আপনাকে? কোনো সমস্যা?
বারকয়েক ঢোক গিলে শুকনো গলা ভিজিয়ে নেয় অরু। হাঁপিয়ে ওঠা স্বরে বলে,
–আমাকে.. আমাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে চলুন ভাইয়া। প্লিজ! আমার বোনটাকে বাঁচাতে হবে।
মুহুর্তেই আয়াজের চোখেমুখে পরিবর্তন চলে আসে। যতটা উত্তেজিত অরু ছিলো ততটাই উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করে আয়াজ,
–আদ্রিকা? কি হয়েছে আদ্রিকার? ভাবি, আদ্রিকা ঠিকাছে তো?
–শাহাদাতের সাথে ওর বিয়ে ঠিক করেছে আমার বাড়ির লোক। আজ সন্ধ্যায় বিয়ে। আমাদের এই বিয়েটা আটকাতে হবে। সন্ধ্যার আগেই যেভাবেই হোক ওখানে পৌঁছাতে হবে।
আয়াজের মুখশ্রী রক্তিম হয়ে ওঠে। তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে সে। তবে প্রকাশ করেনা। গম্ভীর অথচ ভারি রাগত স্বরে জবাব দেয়,
–আমি গাড়ি বের করছি ভাবি। আপনি আসুন।
চলবে….