রূপবানের শ্যামবতী পর্ব-২৪

0
665

#রূপবানের_শ্যামবতী
#২৪তম_পর্ব
#এম_এ_নিশী

সন্ধ্যার বেশকিছুটা সময় আগে কোচিং শেষ হয় অরুনিকার। প্রতিদিন আহরার তাকে দিয়ে আসে এবং নিয়ে আসে। আজ অতিরিক্ত ব্যস্ততার জন্য আহরার আসতে পারবেনা বলেছিলো। তবে গাড়ি পাঠানোর কথা ছিলো। কিন্তু গাড়ি আসতে দেরি করায় অরু ভাবলো গাড়িটা হয়তো বাড়ির কারো প্রয়োজন পড়েছে তাই আসতে পারছেনা। অরু তাই একটা রিকশা নিয়েই চলে যাওয়ার কথা ভাবলো। রিকশা খুঁজে পাওয়াও মুশকিল হয়ে গেলো। যে কটা রিকশা পাচ্ছে কেউই ওদিকটাই যাবেনা। তাই সামনে এগিয়ে গিয়ে খুঁজতে লাগলো অরু। কিছুটা হেঁটে যেতেই আচমকা একটা রিকশা এসে সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। ভয় পেয়ে ছিটকে যায় সে। পড়ে যেতে গিয়েও সামলে নেয় নিজেকে। বুকে হাত রেখে ধাতস্থ হয়। রিকশাওয়ালার দিকে তাকাতেই সে সবকটা দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বলে ওঠে,

–কই যাইবেন আফা?

অরুর কেমন যেন লাগলো লোকটাকে আর লোকটার আচরণ। তবুও সে বাড়ির ঠিকানাটা বলতেই লোকটি জবাব দেয়,

–হ, যামু। চলেন।

অরুনিকার ইচ্ছে হচ্ছে না এই রিকশাটায় যেতে। কিন্তু আশেপাশে রিকশা কিংবা অন্যান্য কোনো গাড়িই নজরে পড়ছে না আর। এদিকে সন্ধ্যাও হয়ে আসছে। এভাবে সময় নষ্ট করাটা উচিত নয়। তাই মনের ভয় দূরে সরিয়ে রিকশায় উঠে পড়ে অরু। রিকশা চলতে শুরু করেছে। আকাশের দিকে নজর পড়তেই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেলো তার। সন্ধ্যার আগে আগে সূর্য ডুবা কালীন আকাশে কমলা রংএর আভার সৃষ্টি হয়েছে। মেঘেরাও যেন কমলা সুন্দরী সেজেছে। কি অপূর্ব দৃশ্য! চোখ ফিরিয়ে সামনে তাকাতেই ভ্রুঁ কুঁচকে আসে তার। এটা কোন রাস্তা? অনেকদিন ধরে যাতায়াত করায় বাড়ির রাস্তাটা মোটামুটি ভালোভাবেই পরিচিত হয়েছে অরুর। রিকশাটা এখন যেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে এটা তো তার পরিচিত নয়। ভয় জেঁকে বসে অরুনিকার মনে। কোনো বিপদে পড়ছে না তো সে? তবে লোকটাকে বুঝতে দেয়া যাবে না তার ভয়টা। সে অনেকটা স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন করলো,

–এটা কোন রাস্তা? ঠিক চিনলাম না তো?

–এইডা শর্টকাট। জলদি পৌঁছাইয়া দিমু।

অরু আর কথা বাড়ায় না। মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে কেবল। লোকটা মোড় ঘুরাচ্ছে। কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারছেনা। তখনই এক অন্ধকার গলিতে ঢুকে পড়ায় অরু আর চুপ থাকতে পারলোনা। খানিকটা চেঁচিয়েই বলে উঠলো,

–একি! এদিকে কোথায় যাচ্ছেন?

লোকটি পেছনে ফিরে আবারো এক বিশ্রী হাসি দিয়ে বলে ওঠে,

–শর্টকাট আফা।

অরু তীব্র উত্তেজনায় জবাব দেয়,

–সোজা রাস্তায় গেলে এতোক্ষণ বাড়ি পৌঁছে যাওয়া হতো। আর আপনার শর্টকাট দিয়ে এখনো বাড়ির রাস্তাটাতেই পৌঁছাতে পারলাম না। আপনি রিকশা থামান। আমি নেমে যাব।

লোকটা এবার হো হো করে হাসতে থাকে। ভয়ে অরুর হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। লোকটা পুনরায় বলে ওঠে,

–রিকশা তো থামন যাইবো না আফা। চুপচাপ যেইহানে লইয়া যাইতাছি চলেন।

অরু চিৎকার করে ওঠে,

–নাআআআ! যাব না আমি। রিকশা থামান। আমি নামবো। আমি যাব না।

রিকশার গতি আরো বেড়ে যায়। তবে গলি পেরিয়ে মেইনরোডে উঠে পড়ে। ঝড়ের বেগে রিকশা টেনে নিয়ে যাচ্ছে লোকটা। অরু চিৎকার করে থামতে বলছে। আশেপাশে তাকিয়ে সাহায্য চাইছে। কিন্তু কাওকে পেলোনা। যেন কোনো জনশূন্য এলাকায় এসে পড়েছে সে। টপটপ করে অশ্রু গড়াচ্ছে অরুর চোখ বেয়ে। চোখ বুজে আহরারকে স্মরণ করছে সে। আর কি দেখা হবে না তার রূপবানের সাথে? আচমকা রিকশাটা থেমে যায়। দ্রুতগতিতে চলা রিকশা হুট করে থেমে যাওয়ায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছিটকে পড়ে যায় অরুনিকা। গড়িয়ে গিয়ে পড়ে রাস্তার একপাশে। ব্যথায় আর্তনাদ করতে থাকে সে। তখনই শুনতে পায় পরিচিত কন্ঠস্বরের ডাক।

–অরু..

ছুটে এসে অরুকে ধরে উঠে দাঁড় করায় আহরার। উদ্বিগ্ন স্বরে বলতে থাকে,

–তুমি ঠিক আছো তো অরু?

অরু মাথা নাড়ায়। ঘাড় ঘুরিয়ে আহরার রিকশাওয়ালার দিকে তাকায়। লোকটা নিজেও পড়ে গিয়েছিলো। উঠে দাঁড়াতেই আহরারের চোখে চোখ পড়তেই সে উল্টো ঘুরে দৌড় দেয়। আহরারও ছুট লাগায় তার পিছু পিছু। কিছুদূর ছুটতেই লোকটাকে ধরে ফেলে আহরার। ইচ্ছেমতো চড়, থাপ্পড়, ঘুষি মারতে থাকে। একপর্যায়ে লোকটি আহরারকে জোরে ধাক্কা দেওয়ায় আহরার ছিটকে সরে যায় কিছুটা দূরে। এই সুযোগে লোকটা পালিয়ে যায়। আহরার পিছু নিয়েও ধরতে পারেনা আর। লোকটা যেন গায়েব হয়ে গিয়েছে। আহরার আর খোঁজার চেষ্টা করে না। অরুনিকার কাছে ফিরে আসে। অরুর হাতে, পায়ে বেশ কিছুটা জায়গা ছিলে গিয়েছে। আহরার তাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে গিয়ে ড্রেসিং করিয়ে আনে। পুরোটা সময় আহরার আর একটা শব্দও বলেনি। এমনকি গাড়িতে বসেও চুপচাপ ছিলো। অরুনিকা বারবার দেখছে আহরারকে। থমথমে হয়ে আছে মুখটা। আহরারকে কোনো কথা বলতে না দেখে অরু নিজে থেকেই বলে উঠলো,

–কি হয়েছে? চুপ করে আছেন কেন?

কোনো জবাব নেই।

–আপনি কি রেগে আছেন?

এবারও নিশ্চুপ।

–আমার সাথে কথা বলবেন না?

তবুও কোনো সাড়াশব্দ নেই।

–আমি কি কিছু ভুল করেছি? ভুল করে থাকলে বলুন, শাস্তি দিন। চুপ করে থাকবেন না প্লিজ?

গাড়ি থামায় আহরার। অরুনিকার দিকে ফিরে তাকায় সে। চোখদুটো কেমন টলমল করছে। ধ্বক করে ওঠে অরুনিকার বুক। সে দুহাতে আহরারের মুখটা ধরে বলে,

–কি হয়েছে? আপনি কি খুব বেশি কষ্ট পেয়েছেন? আমি খুবই দুঃখিত। আমি বুঝতে পারিনি। বিশ্বাস করুন। আর এমন ভুল হবেনা।

আহরার অরুনিকার হাত দুটো নিয়ে অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিলো। অতঃপর নিজের হাতের মুঠোয় চেপে ধরে অরুর চোখে চোখ রেখে করুণসুরে বলে,

–আজ যদি আমি ঠিক সময়ে না আসতাম, যদি তোমায় খুঁজে না পেতাম। কি হতো অরু? আমি যদি তোমাকে হারিয়ে ফেলতাম? আমি কিভাবে বাঁচতাম বলো?

আহরারের চোখের কোণে অশ্রুদের ভিড়। অরুনিকা অবাক হয়ে চেয়ে আছে। আহরার অরুনিকার হাতদুটো টেনে নিয়ে তাতে কপাল ঠেকিয়ে কান্নামাখা সুরে বলতে থাকে,

–আমি তোমাকে কিছুতেই হারাতে পারবোনা অরু। কোনোকিছুর বিনিময়েও না। তোমাকে হারানোর কথা ভাবলেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। বুকটা খালি খালি লাগে। পৃথিবীটা শূন্য মনে হয়। তোমায় হারানোর কথা আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারিনা অরু।

আহরারের মুখটা তুলে ধরে অরু। টপ করে এক ফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়ে। অরুনিকা সযত্নে মুছে দেয় তা। কপালে কপাল ঠেকিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে জবাব দেয়,

–আপনার অরুকে ছাড়া যেমন আপনার পৃথিবী শূন্য তেমনি আপনি ছাড়া এই অরু নিজেই শূণ্য খান সাহেব। বেঁচে থাকতে অরু কখনোই হারাবে না আপনার কাছ থেকে। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমি আপনার সাথেই থেকে যাব খান সাহেব।

—-

আহরারের তাড়া খেয়ে রিকশাওয়ালাটি যখন ছুটছিলো তখন মাঝপথে কেউ একজন তাকে টেনে আড়ালে নিয়ে চলে আসে। যার ফলে আহরার তাকে ধরতে পারেনা এবং দেখতেও পায় না। লোকটা আর কেউ নয়, আসিফ। আসিফকে দেখামাত্রই রিকশাওয়ালা লোকটি হাতজোড় করে বলে ওঠে,

–ভাই, ভাই আমারে বাঁচান ভাই। আপনে যেমনে কইছেন ওমনেই করছি। এইবার আমারে ছাইড়া দেন।

–ঠিকাছে। তোমার কাজ শেষ। এই নাও তোমার টাকা। এবার কেটে পড়ো। আর ভুলেও কখনো মুখ খোলার চেষ্টা করোনা।

আসিফের বাড়িয়ে দেওয়া টাকাগুলো খপ করে নিয়ে লোকটা মাথা নাড়তে নাড়তে দ্রুত প্রস্থান করে। লোকটা বিদায় হতেই আসিফ ফোন দেয় আয়মানকে। কল রিসিভ হতেই আসিফ বলে ওঠে,

–বস, কাজ কমপ্লিট।

–গুড!

–এবার কি করবো বস?

–পরবর্তী কাজের পরিকল্পনা সামনাসামনি আলোচনা হবে, ফিরে আয়।

–ওকে বস।

লাইন কাটতেই আয়মান বক্রহেসে বলতে থাকে,
“এটা তো কেবল শুরু আহরার। এভাবে একটু একটু ভয় লাগানো, তারপর একদিন হুট করেই… বোওওওমমমম! কিছু বুঝে ওঠার আগেই ব্লাস্টিং।”

বলতে বলতেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে সে। হাসি থামিয়ে পুনরায় স্বগতোক্তি করে,
“ভালোবাসা হারিয়ে ফেলতে গিয়েও হারাসনি, তবে ভয়টা তো পেয়েছিস। এখন থেকে বোঝা শুরু করবি ভালেবাসা হারানোর যন্ত্রণা।”

আয়মানের সাজানো এক পরিকল্পনার অংশ ছিলো এটি। আয়মানের নির্দেশেই রিকশাওয়ালাকে টাকা দিয়ে এই কাজটা করার নির্দেশ দিয়েছে আসিফ। অরুনিকার জন্য আসা গাড়িটাও মাঝপথে আটকে দিয়েছে সে। তারপর একটা অচেনা নাম্বার থেকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে আহরারের কাছে,
“অরুনিকা কিডন্যাপ হচ্ছে।”

ম্যাসেজটুকু পড়তেই আহরার নিজের সমস্ত কাজ ফেলে ছুটে গেছে। এরজন্য যে তার বেশ ভালো একটা লস হবে তা নিয়ে বিন্দু পরিমাণ মাথা ঘামায়নি সে। গাড়ি নিয়ে অরুর কোচিং সেন্টারে আসতেই দেখতে পায় কেউ নেই সেখানে। আশেপাশে পাগলের মতো খুঁজতে থাকে তবুও পায়না। গাড়ি ঘুরিয়ে অন্যপথে যাচ্ছিলো ঠিক তখনই অরুর চিৎকার কানে আসতেই সেদিকে ছুটলো সে। অরুকে রিকশা থামানোর জন্য চিৎকার করতে শুনে সে ফুলস্পিডে গাড়ি ছুটিয়ে নেয় দ্বিকবিদিক ভুলে। ঝড়ের বেগে এসে রিকশাটার সামনে গাড়ি দাঁড় করাতেই রিকশা থেমে অরুসহ রিকশাওয়ালা দুজনেই ছিটকে পড়ে যায়। রিকশাটাও উল্টে যায়। আয়মানের একটি সূক্ষ্ম চাল শুধুমাত্র আহরারের মনে ভীতি সৃষ্টির জন্যই। যা ভালোভাবেই কাজে লেগেছে। এবার সে দ্বিতীয় চালের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে।

~~~~

রাতের খাওয়া দাওয়া সারতে বসেছে আদ্রিকাসহ বাড়ির সকলে। আদ্রিকা বেশ তাড়াহুড়ো করে খাবার গিলছে। তা দেখে আরজু বেগম ধমকে বলে ওঠেন,

–এভাবে অভদ্রের মতো খাচ্ছিস কেন? একটা মারবো। ভালোভাবে খা..

মায়ের ধমকে আদ্রিকা আস্তে আস্তে খাওয়ার ভান করলেও গিলছে বেশ দ্রুত। আজ সারাদিন সেই অপরিচিতের কোনো ম্যাসেজ পায়নি সে। কতো কতো ম্যাসেজ করেছে আদ্রিকা। কোনো উত্তর আসেনি। এখন হয়তো দিয়েছে। কারণ সে ফোনে ম্যাসেজ আসার শব্দ শুনেছে। তাই তাড়াহুড়ো করে খাওয়া শেষ করার চেষ্টা করছে। আদ্রিকার এমন অবস্থা দেখে সেলিনা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকান। সন্দিহান কন্ঠে বলে ওঠেন,

–কি ব্যাপার বল তো আদ্রি? আজকাল তোর বেশ পরিবর্তন বোঝা যাচ্ছে।

খাওয়া থেমে যায় আদ্রিকার। চাচীর দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হেসে জবাব দেয়,

–আমার আবার কি পরিবর্তন হবে চাচী। আমি ঠিকই আছি।

–সারাক্ষণ ফোনে কি করিস?

বিষম খায় আদ্রিকা। ভয়াবহভাবে কাশতে শুরু করে। আরজু বেগম পানির গ্লাস এগিয়ে দিতেই ঢকঢক করে গিলতে থাকে। বকতে বকতে মেয়ের পিঠে হাত বুলাতে থাকেন আরজু। নিজেকে সামলে আদ্রিকা জবাব দেয়,

–কি আর করবো চাচী, নাটক..নাটক দেখি, সিনেমা দেখি।

এই বলে কোনোরকমে খাওয়াটুকু শেষ করে একপ্রকার পালিয়ে গেলো আদ্রিকা। সেলিনা তখনও সন্দেহ নিয়েই তাকিয়ে ছিলেন।

নিজের ঘরে এসে দরজা আটকে শটান শুয়ে পড়লো আদ্রিকা। ফোনটা হাতে নেয়। বুক কাঁপছে তার। পেটটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠছে। সত্যি তারই ম্যাসেজ এসেছে তো। ফোনটা অন করতেই জ্বলজ্বল করে সেই অপরিচিতের আইডি নামটা ভেসে উঠতেই জানে পানি এলো আদ্রিকার। চোখ বুজে তৃপ্তির শ্বাস ফেলে সে। ম্যাসেজটা অন করতেই দেখতে পায় মনছোঁয়া কিছু লেখা,

“কি গো! রূপসী?
অভিমান জন্মেছে নাকি..?
এই অধমের অনুপস্থিতি পুড়িয়েছে বুঝি।
অধমও যে ছটফটিয়ে মরেছে সারাটা বেলা।
তবুও তার জানা চাই,
ওই রূপসীর মনের খবর।

হেসে ফেলে আদ্রিকা। ঝটপট টাইপ করে ছুঁড়ে দেয় এক প্রশ্ন,

–মনের খবর কি জানা গেলো?

খুব একটা সময় না নিয়েই উত্তর এলো অপরপাশ থেকে,

–তা আর বলতে..

–কি জানলেন শুনি?

–এই যে আমি আড়াল হলেই রূপসীর অস্থিরতা।

–হুহ! মোটেও না। আমি তো অস্থির হইনি।

–তাই বুঝি এতো এতো দীর্ঘ সব বার্তা এসে জমেছে। যার প্রতিটি লাইনে অভিমানের পরশ।

” ইশশ!” লজ্জায় চোখ বুজে নেয় আদ্রিকা। ফোনটা বুকে জড়িয়ে বালিশে মুখ গুঁজে রাখে। লোকটা এতো বোঝে কেন? একটু কম বুঝতে পারেনা। কিশোরী মনে নতুন নতুন আবেগের ঢেউ খেলে যায়।

~~~

সেই ঘটনার পর কেটে গেছে বেশ কয়েকদিন। আহরার এখন অরুনিকাকে এক মুহুর্তের জন্যও একা ছাড়েনা। যত কাজের চাপই থাকুক না কেন। তার কাছে সবার আগে তার অরু এবং অরুর সুরক্ষা।
এমনই একদিন কোচিং থেকে বাসায় পৌঁছিয়ে দেওয়ার পর আহরার বলে,

–অরু, তোমার সাথে একটা জরুরি বিষয়ে আলোচনা ছিলো।

অরু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই আহরার বলে,

–একজন ক্লায়েন্টের এক অদ্ভুত অর্ডার এসেছে। আজ পর্যন্ত এমন অর্ডার আসেনি। লোকটা তার ঘরের ইন্টেরিয়র ডিজাইনটা করতে চায় একদম গ্রাম্য স্টাইলে। মাটির তৈরি জিনিসপত্র দিয়ে সাজিয়ে দিতে হবে। তোমার হাতের কাজ তো অসাধারণ। তাই আমি চাই তুমি ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী জিনিসপত্রগুলো বানিয়ে দাও। আমি সবকিছুর ব্যবস্থা করে দেব।

কোনো জবাব না দিয়ে অরু তাকিয়ে আছে আহরারের দিকে। তা দেখে আহরার দুষ্টুমির সুরে বলে ওঠে,

–এরজন্য পেমেন্টও করবো। তা পেমেন্টটা কি ক্যাশে করবো নাকি চেকে ম্যাডাম?

আহরারের কথা বলার ভঙ্গি দেখে হেসে ফেলে অরু। আহরারও হাসে। আবারও বলে ওঠে,

–তাহলে চলো অফিসে। কি কি প্রয়োজন, কিভাবে কি করবে তা বলে দিবে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা করা হবে।

অরুনিকা মাথা নাড়িয়ে সায় জানাতেই আহরার পুনরায় অরুকে নিয়ে ছুটলো অফিসের উদ্দেশ্যে।
অফিসে গিয়ে অরুনিকাকে বসিয়ে মালিহা নামের একটি মেয়েকে পাঠানো হয় তার কাছে। অরুনিকা মেয়েটিকে সবকিছু বলছে কি কি লাগবে না লাগবে বুঝিয়ে দিচ্ছে। মালিহা সব নোট করতে করতে বারবার অরুকে লক্ষ করছে। আহরার খানের স্ত্রী হওয়ার সৌভাগ্য লাভকারী মেয়েটিকে দেখছে সে। এতো সুন্দর একজন পুরুষের স্ত্রী কিনা শ্যামরঙা মেয়ে। ভাবনার লাগাম ওখানেই টেনে দিলো মালিহা। যদি আহরার স্যার ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারে সে এমন ভাবনা ভাবছে তার কলিজা টেনে ছিঁড়ে ফেলবে। শুধু আফসোস কাজ করছে তার। মনে মনে বলছে, “ইশশ! কি লাকি মেয়েটা!”

আহরারকে নিজের কেবিনে চলে যেতে হলো কারণ সেই ক্লায়েন্ট নাকি তার সাথে দেখা করতে এসেছে। দেখা করা শেষে লোকটা অফিস থেকে বেরোনোর সময় অরুনিকার পাশ দিয়েই চলে গেলো। অরুনিকা তখন ঘুরে ঘুরে অফিস দেখছিলো। লোকটা পাশ কাটিয়ে যেতেই কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হলো অরুনিকার। সে পিছু ফিরে লোকটাকে দেখার চেষ্টা করলেও লোকটা ততক্ষণে লিফটে উঠে চলে গেলো। সামনে থাকা বড় কাঁচের দেওয়ালের কাছে এসে নিচে উঁকি দিয়ে দেখতে থাকে অরু। যদি লোকটাকে দেখা যায়। সত্যিই দেখা গেলো। লোকটি যখন গাড়িতে উঠছে একপলকের জন্য তার মুখটা দেখলো অরু। ভ্রুঁ কুঁচকে থাকা অরুর মুহুর্তেই চোখদুটো বিশাল আকার ধারণ করলো। কালবিলম্ব না করেই ছুটে গেলো লিফটের দিকে। নিচে নামতেই গাড়িটা ততক্ষণে গেট ছেড়ে বেরিয়ে গেছে। কিন্তু অরু থামলো না। সে গাড়ির পেছন পেছন ছুটতে থাকে আর চিৎকার করে বলতে থাকে,
“বাবা, বাবা….”

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে