#রূপবানের_শ্যামবতী
#৬ষ্ঠ_পর্ব
#এম_এ_নিশী
সকাল সকাল আদ্রিকাকে ঘুম থেকে টেনে তুলে দিয়েছে অরুনিকা। সাধের ঘুম ভাঙায় বড্ড বিরক্ত লাগছে আদ্রির।
–উফফ! বুবু আরেকটু ঘুমোতে দাও না। কি সুন্দর আবহাওয়া। এমন আবহাওয়ায় ঘুম ছেড়ে কার উঠতে ইচ্ছে করে বলো।
–না বনু, আর ঘুমানো যাবে না। ওঠ। একটু বাড়ি যা। কিছু টুকটাক জিনিস আনা লাগবে। জলদি যা।
–পরে আনবো। এখন ঘুমাই।
অরুনিকা জোর করে টেনে বসিয়ে দেয় আদ্রিকাকে। দুহাতে ধরে বসিয়ে রেখে বলে,
–আজ প্রচুর কাজ। একটু পরই হুলুস্থুল শুরু হবে। আর সুযোগ হবে না। তাই এক্ষুনি যাবি। চল নাম।
এই বলে একপ্রকার জোর করেই নামিয়ে দিলো আদ্রিকাকে। বাধ্য হয়ে ঘুম বাদ দিয়ে বের হতেই হলো তাকে। চোখ ডলতে ডলতে বাড়ির মূল দরজার সামনে এসে দাঁড়ায় সে। আধো আধো চোখ বুজেই সাঁই করে দরজাটা খুলে বেরোতে যায় আর আচমকা কাওকে বেশ জোরে শোরেই ধাক্কা দিয়ে বসে। সারারাত বৃষ্টি হওয়ার দরুন বাইরেটা পিচ্ছিল হয়ে ছিলো বেশ। আর ধাক্কা খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে মানুষটি পিছলে পড়ে যায় ধাম করে।
–হোয়াট দ্যা হেল..
রাগতস্বরের চিৎকার শুনে এক লাফে ঘুম উবে যায় আদ্রিকার। সামনে তাকিয়ে একটা ছেলেকে কাঁদামাটিতে পড়ে থাকতে দেখে বেশ হাসি পেলো তার। তবে যখনই সে বুঝতে পারলো তার ভুলের জন্যই মানুষটা পড়ে গিয়েছে সে দ্রুত এগিয়ে এসে মানুষটিকে ধরে দাঁড় করালো আর সমানে বলে যাচ্ছে,
–আমি খুব খুব দুঃখিত, দেখতে পাইনি আমি। ভুল হয়ে গেছে। মাফ করবেন। ছিহ ছিহ কাঁদা মেখে কি অবস্থা হয়েছে। আমি এক্ষুনি পরিষ্কার করে দিচ্ছি।
এই বলে একপ্রকার টানতে টানতে ছেলেটিকে কলপাড়ে নিয়ে এলো। ছেলেটি বাধা দেওয়ার সুযোগটাও পাচ্ছে না। “আরে আরে” করতে করতেই অাদ্রিকা টেনে নিয়ে চলেই এলো। আর এনেই বালতি থেকে মগভর্তি পানি উঠিয়ে ছেলেটির গায়ে ঢালতে থাকে। এই ঠান্ডা আবহাওয়ায় এমন কনকনে ঠান্ডা পানি গায়ে লাগায় লাফিয়ে উঠে ছেলেটি। ছিটকে দু কদম পিছিয়ে যায়। পুনরার চেঁচিয়ে বলতে থাকে,
–স্টুপিড! মাথায় সমস্যা আছে নাকি তোমার?
আদ্রিকা জিব কেটে বলে,
–ইশরে! খুব ঠান্ডা তাই না। তাহলে যান এক কাজ করুন ওই পুকুরটাতে গিয়ে টুপ করে দুটো ডুব দিয়ে দিন। তাহলে বেশি ঠান্ডা লাগবে না। আর কাঁদাগুলোও পরিষ্কার হয়ে যাবে।
অাদ্রিকার কথা শুনে ছেলেটি আঙুল উঁচিয়ে ক্ষুব্ধ স্বরে বলে,
–আমি কি করবো না করবো, কিভাবে ক্লিন করবো সেটা তোমার কাছ থেকে জানবো? ইউ ইডিয়ট গার্ল!
–ওই ফটর ফটর ইংরেজি। পড়াশোনা আমিও করেছি। ইংরেজি আমিও জানি। এই ইংরেজি ঝাড়া বন্ধ করুন। আপনার উপকার করতে আসলাম কোথায় ধন্যবাদ জানাবেন তা না খালি তখন থেকে ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছে। উপকার করতে আসাই ভুল হয়েছে আমার। কাঁদায় গড়াগড়ি খেতে দিলেই ভালো হতো। হুহ্! যত্তসব।
মুখ ঝামটা মেরে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ায় না আদ্রিকা। হনহনিয়ে চলে যায় নিজ কাজের উদ্দেশ্যে। এদিকে পেছনে দাঁড়িয়ে ছেলেটি বিরবির করছে,
“এসব গ্রাম্য মেয়েরা এতো ঝগড়ুটে হয়। বিরক্তিকর!”
জগিং করতে বেরিয়েছিলো আহরার। শেষ করে বাড়ির দিকে ফিরতেই কলপাড়ে কাওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সেদিকে এগিয়ে যায় সে। কাঁদামাখা অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটিকে ভালো করে দেখতেই আশ্চর্যান্বিত হয়ে তাকিয়ে থাকে আহরার। পরক্ষণেই হো হো করে হেসে ওঠে সে। হাসতে হাসতে বলে,
–একি রে আয়াজ, তোর এই অবস্থা কেন? কাঁদামেখে ওমন সং সেজে দাঁড়িয়ে আছিস।
ফোঁসফোঁস করতে করতে আয়াজ জবাব দেয়,
–তুমি হাসছো ভাইয়া। গ্রাম আমার একদম পছন্দ নয়। এজন্যই আমি গ্রামে আসতে চাইনি। শুধুমাত্র দাইয়ান ভাইয়ার জোরাজোরিতে এসেছি। কিন্তু এই বাড়িতে যে একটা দস্যি মেয়ে আছে তা জানলে তো কোনো জোরাজোরিই মানতাম না।
–কার কথা বলছিস তুই আর কেনই বা বলছিস বুঝতে পারছি না। আচ্ছা যাই হোক, যা এখন তাড়াতাড়ি ক্লিন হয়ে চেঞ্জ করে নে। এই ভেজা অবস্থায় থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে তোর।
–হুম হুম ঠিকাছে।
আয়াজ বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। আহরার তখনও মিটমিট করে হাসছে।
আয়াজ আর আহরারের ছোটো বোন আহিয়া এসেছে গতকাল রাতে। বেশ রাতই হয়ে গিয়েছিলো তাদের আসতে আসতে। আয়াজ কোনোভাবেই আসতে রাজি ছিলো না। কিন্তু একদিকে দাইয়ানের জোরাজোরি আরেকদিকে আহিয়ার আসার জন্য পাগলামি। তাই বাধ্য হয়েই তাকে আসতে হলো। বেশ রাত করে আসায় বাড়ির কারো সাথে তেমন সাক্ষাৎ বা আলাপ হয়নি তার। আদ্রিকার সাথেও না। তবে ভাবেনি সকাল সকাল এমন সংবর্ধনা পাবে সে যা তার গ্রামে আসার বিরক্তিটাকে আরো কয়েকশো গুন বাড়িয়ে দিবে।
~~~
গায়ে হলুদের আয়োজন বেশ জোরেশোরে চলছে। অতিথিদের আগমনে গিজগিজ করছে পুরো বাড়ি। কোথাও এতোটুকু দাঁড়াবার জো নেই।
স্টেজ সাজানোর জন্য বিভিন্ন রকমের ফলফলাদি, মিষ্টি দিয়ে কারুকার্য করে রাখা হয়েছে। আর এসবকিছু অরুনিকা একাহাতে করেছে। সকলেই বেশ মুগ্ধ হয়ে দেখে প্রশংসা করছে তার।
অরুনিকা বেশ ছুটোছুটি করে কাজ করছে। কোনোদিকে কোনো খেয়াল নেই তার। শুধু সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে সম্পন্ন হলেই নিশ্চিন্ত সে।
এদিকের কাজ সেরে সে গিয়ে পৌঁছালো কনের কাছে। দায়িত্ব পড়েছে কনেকে সাজানোরও। দিয়া ড্রেস পড়ে রেডি। এখন প্রসাধনীর সাজগোজটা বাকি। অরুনিকা এসে দেখে বলে উঠে,
–ওমা! বসে আছো তুমি। আমার খুব দেরি হয়ে গেলো তাই না।
দিয়া গ্রামের বাড়িতে অনেকবারই এসেছে। সেই সুবাদে অরুনিকাকে সে ভালোভাবেই চেনে। বেশ পছন্দও করে। তাই অরুনিকাকে দেখতেই সে উৎফুল্ল হয়ে বলে,
–না না অরু আপু একদম দেরি হয়নি। তুমি রিল্যাক্সে সাজাতে পারো আমাকে। কোনো চাপ নেই।
আহরারের বোন আহিয়া প্রথমবার এসেছে এই গ্রামে। দিয়ার কথা শুনে অরুনিকাকে বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখছিলো সে। দিয়া সচরাচর সবার সাথে মিশুক নয়। এতোটা উৎফুল্লতা নিয়ে খুব কম মানুষের সাথেই কথা বলে। সেই মেয়ে যখন এই মেয়েটিকে দেখে এতো খুশি হয়েছে তার মানে মেয়েটির মধ্যে বিশেষত্ব তো আছে বটেই। অরুনিকাকে আগাগোড়া ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে আহিয়া। গায়ের রংটা একটু চাপা হলেও মুখের আদলটা বেশ সুনিপুণ মায়াবী গড়নের। দেখলেই একটা প্রশান্তি কাজ করবে। কথার ধরনও বেশ সুন্দর। সুমধুর, সুললিত কন্ঠস্বর। কি জানি কেন, অরুনিকাকে আহিয়ার বেশ মনে ধরে যায়। তাই আনমনেই বলে ফেলে,
–তুমি তো বেশ মিষ্টি মেয়ে।
আহিয়ার কথা শুনে চোখ তুলে তাকায় অরুনিকা। এভাবে তার পরিবারের মানুষ ছাড়া আর কেউ কখনো বলেনি। তাই কথাটুকু শুনে প্রত্যুত্তরে মনকাড়া এক হাসি দিলো সে। যা দেখে আহিয়ার আরো ভালো লেগে যায়।
~~~
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছে। মিষ্টির থালা হাতে অাদ্রিকা বাইরে স্টেজের দিকে যাচ্ছে। মিষ্টিগুলো মুলত অতিথিদের জন্য। খাওয়া দাওয়ার জায়গায় পৌঁছে দিয়ে আসতে হবে। যাওয়ার পথে হুট করেই আয়াজের মুখোমুখি হয়ে যায় সে।
–আরে ইংরেজি সাহেব যে। সকালে কাঁদা মাখামাখি থাকায় তো বুঝতেই পারিনি এতো টিপটপ বাবু আপনি। একেবারে রাজপুত্রের মতো দেখতে কিন্তু মুখের ভাষা পুরাই ফকিন্নি।
–ব্যাস! ঘুরেফিরে এই মেয়েরই সামনে পড়তে হলো। এই মেয়ে! তোমার আর কোনো কাজ নেই? এভাবে পুটুরপুটুর করে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া।
–ওমা! ঘুরে কই বেড়ালাম। দেখছেন না মিষ্টির থালা নিয়ে যাচ্ছি। নিন, আপনি একটা মিষ্টি খান। তাহলে যদি মুখ দিয়ে একটু মিষ্টি কথা ঝড়ে।
–এই শোনো, বড্ড বেশি কথা বলো তুমি। টু মাচ টকেটিভ গার্ল, আই হেইট…
বাকি কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই থেমে গেলো সে। আদ্রিকা বিশাল সাইজের একটা মিষ্টি ঠেসে মুখে পুরে দিয়েছে তার। তারপর দাঁত ক্যালিয়ে হি হি করে হাসতে হাসতে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আর এদিকে মিষ্টি মুখে নিয়ে আহাম্মকের মতো আদ্রিকার চলে যাওয়া দেখছে আয়াজ।
হলুদের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত হয়েছে নিয়াজী পরিবারের সকলেই। সেখানে শাহাদাত নিয়াজীও এসেছে। যার সাথে আদ্রিকার বিয়ের কথা চলছে। শাহাদাত এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ অবগত। তাই এখানে আসার পর থেকেই সে আদ্রিকাকে খেয়াল করছে। তার চালচলন, কথাবার্তা, কখন কার সাথে কি করছে না করছে সবটাই দেখছে সে।
এই যেমন এখন। খানিকটা দূরে কিছুটা আঁধারে দাঁড়িয়ে সি গা রে ট ফুঁকছে সে। ধোঁয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে তা বাতাসে ছাড়ছে। আর সরু চোখে আয়াজের সাথে আদ্রিকার রসিকতাগুলো সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
~~~
বাসন্তী রং এর সুতি শাড়ি পরিহিতা রমনী, মুখমন্ডলীতে নেই কোনো বাড়তি প্রসাধনীর ছোঁয়া। বেশভূষায় যতোটা সাধারণ থাকা যায় সে যেন তাই থাকার চেষ্টা করছে।
আর সেই রমনীর অতি সাধারণ থাকাটাও কারো চোখে অসাধারণ হয়ে ধরা দিচ্ছে। আর সবচেয়ে সুন্দর যে ব্যাপারটি ঘটেছে তা হলো সুনয়না আজ চোখে কাজল পরেছে।
ভিড়ভাট্টার মাঝে যেতে অরুনিকা সাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। তাই একটু ফাঁকা জায়গা দেখেই দাঁড়িয়েছে। সেখান থেকেই অনুষ্ঠান দেখছে সে। ওদিকে তার থেকে কিছুটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে তাকে মনভরে দেখছে আহরার। টেবিলের কাছে দাঁড়িয়ে আছে সে। সেই টেবিলের ওপর কাবাবের প্লেট রাখা। ঈশান এসে আহরারকে বলে,
–কাবাবের প্লেট থেকে একটা কাবাব দে তো। কাবাব খেতে মন চাচ্ছে। কি দারুন দেখতে হয়েছে। উফফ! দে দে জলদি দে।
ডেকোরেশনে একটু ভিন্নতা আনার চেষ্টায় টেবিলটা সাজানো হয়েছিলো লতা পাতা দিয়ে। আহরার অরুনিকাকে দেখতে এতোটাই ব্যস্ত ছিলো যে সে প্লেটের দিকে না তাকিয়ে টেবিল থেকেই লতা পাতা ছিঁড়ে ঈশানের দিকে এগিয়ে দেয়। তা দেখে ঈশান বাকহারার ন্যায় চেয়ে রয়।
–একি রে তুই আমাকে এসব খেতে দিচ্ছিস?
অরুনিকার দিকে দৃষ্টি রেখেই আহরার জবাব দেয়,
–তুই-ই তো খেতে চাইলি। এখন বেশি প্যাঁচাল না পেড়ে ঝটপট খেয়ে নে।
ততক্ষণে দাইয়ান আর রাদিফও এসে দাঁড়িয়েছে সেখানে। তারাও হতভম্ব হয়ে দেখছে আহরারের কাণ্ডকারখানা।
এদিকে রাগে দুঃখে কাঁদোকাঁদো মুখ করে ঈশান বলে উঠে,
–হ্যা হ্যা তাই তো। আমি তো ছাগল। তাই বসে বসে এখন লতা পাতা চিবাবো। দে দে চিবাই। লতাপাতা চিবাই দে..
এই বলে সে আহরারের হাত থেকে লতাপাতাগুলো নিয়ে ক্ষোভের সাথে দাঁত দিয়ে ছিঁড়তে থাকে। দাইয়ান আর রাদিফ “হই হই” করে এসে ঈশানের হাত থেকে লতাপাতাগুলো কেড়ে নিয়ে ফেলে দেয়। ওদের চিৎকারে ভড়কে গিয়ে অরুনিকার দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বন্ধুদের দিকে তাকায় আহরার। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই দাইয়ান ধমকে বলে উঠে,
–কি রে তোর ধ্যান কোনদিকে বল তো? চাইলো কাবাব আর দিলি লতাপাতা।
বোধগম্য হতেই আহরার হড়বড় করে বলে উঠে,
–সরি, সরি দোস্ত আমি একদম বুঝতে পারিনি।
বলতে বলতেই কাবাবের প্লেটটা নিয়ে ঈশানের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলে,
–এই নে বন্ধু, কাবাব খা।
ঠাস করে হাত থেকে প্লেটটা নিয়ে নেয় ঈশান। তারপর টপাটপ মুখে পুড়তে থাকে।
রাদিফ সন্দেহের দৃষ্টিতে আহরারকে দেখতে দেখতে প্রশ্ন করে,
–আমার ডাউব্ট যদি ঠিক হয়, তবে যেই মেয়েকে দেখে তোর চোখ আটকেছিলো সে বোধহয় এখানেই আছে তাই না।
রাদিফের কথা শুনে দাইয়ান, ঈশান দুজনেই আহরারের দিকে দৃষ্টি স্থির করে। থতমত খেয়ে যায় আহরার। মাথা চুলকে একটু লাজুকভাব দেখিয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। সাথে সাথেই তিনবন্ধু চিৎকার করে বলে উঠে, “কিইইই!”
আহরার “হুসস! হুসস!” করে থামতে বলে তাদের। চিৎকার শুনে আশেপাশের মানুষ একবার তাদের দিকে তাকিয়ে পুনরায় নিজেদের কাজে মগ্ন হয়ে যায়।
তিন বন্ধুই আহরারকে চেপে ধরে।
ঈশান বলে,
–ওই ব্যাটা, ক। কে সেই মাইয়া?
দাইয়ান, রাদিফও তাল মিলিয়ে বলে,
–বল বল কোনটা?
আহরার এক নজর অরুনিকাকে দেখে নেয়। তারপর তিনজনকেই ঈশারায় দেখিয়ে দিতেই সকলের দৃষ্টি সেদিকে নিপতিত হলো। অরুনিকাকে দেখতেই দাইয়ান বলে উঠে,
–ওয়েট, ওয়েট, ওয়েট। ও তো জসীম দাদুর বড় নাতনী। কি যেন নাম.. হ্যা অরুনিকা। ওকে পছন্দ করেছিস তুই?
আহরার দৃঢ়তার সাথে জবাব দেয়,
–হ্যা করেছি। ওকেই পছন্দ করেছি। কেন? কোনো সমস্যা?
–আরে দোস্ত, চাচীদের কাছে শুনেছি ওর মতো গুণী মেয়ে নাকি এই গ্রামে আর একটাও নেই। আচার ব্যাবহার সবদিক দিয়েই একশোতে একশো। শুধু..
রাদিফ প্রশ্ন করে,
–শুধু কি?
দাইয়ান জবাব দেয়,
–শুনেছি ওর বিয়ের কথা চলছে কিন্তু কোনোটাই আগায় না। গায়ের রংটার জন্যই।
–গায়ের রং তো বাহানা, আসল কথা কি জানিস?
আহরারের কথা শুনে তিন বন্ধুই তাকিয়ে থাকে তার দিকে,
–অরুনিকা শুধুই আহরারের জন্য। তাই অরুনিকা পর্যন্ত এই আহরার খান ছাড়া অার অন্য কেউ পৌঁছাতে পারবে না। কখনোই না।
ঈশান বলে উঠে,
–তুই শিউর?
গাঢ় দৃষ্টিতে অরুনিকার দিকে চেয়ে মৃদু শব্দে বক্রহেসে আহরার জবাব দেয়,
–বলেছিলাম তোদের, যেই মেয়েকে দেখে আহরার খানের চোখ আটকে যাবে, সেই মেয়েটাই আহরার খানের জন্য নির্ধারিত হয়ে যাবে। মেয়েটি আর কেউ নয়। ওয়ান এন্ড ওনলি- “অরুনিকা”।
আনমনেই কি ভেবে যেন অরুনিকা তাকিয়েছিলো এদিকে। তখনই তার দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় সরাসরি আহরারের দৃষ্টির পানেই। চোখাচোখি হয় দুজনের।কিম্তু এবার আর অরুনিকা চোখ সরিয়ে নিলো না। চুম্বকের ন্যায় আটকে রাখলো নিজের চাহনি। আহরারও এক সম্মোহনী দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো তার শ্যামবতীর পানে। অরুনিকার শান্ত, সুস্থির চাহনি যেন তীক্ষ্ণ বান চালিয়ে সাঁই সাঁই করে প্রবেশ করছে আহরারের দৃষ্টির অভ্যন্তরে।
সময়টা কি থামিয়ে দিবে?
নাহ! সময়টাকে বেঁধে রাখতে হবে স্মৃতির পাতায়।
এই শুভক্ষণ!
যে ক্ষনে ঘটেছে,
রূপবান-শ্যামবতীর এক অপূর্ব দৃষ্টিমিলন।
চলবে…