#রূপকথা
#লেখিকা-DI YA
#পর্ব-৪
কল্পনার জগত থেকে বের হন মিস্টার রূপ চৌধুরী। আমি সেই আগের কথা নেই যে আপনার শত অবহেলা অপমানের পরে ও আপনার পিছু পিছু ঘুরবো। আজকের কথা আর আগের কতার মাঝে প্রচুর তফাত । যা আপনি ধীরে ধীরে খুব ভাল ভাবে বুঝে যাবেন।জাস্ট ওয়েট এন্ড সি মিস্টার রূপ চৌধুরী -কথা
রূপ আর কিছু না বলে কথার হাতটা ছেড়ে দিলো। ছাড়া পাওয়ার সাথে সাথে কথা নিজের রুমে চলে গেলো। কিন্তু রুমে ঢুকতেই কথা দেখলো তার বিছানার উপর একটি ব্যাগ রাখা রয়েছে। কথা এগিয়ে গিয়ে ব্যাগটা খুলতেই দেখতে পেলো তার ভিতরে আরো দুইটি ব্যাগ আছে। প্রথম ব্যাগটি খুলে কথা পেলো একটি হলুদ রঙের শাড়ি। শাড়িতে খুব সুন্দর করে ওয়েল পেইন্ট করা। শাড়িতে প্রথম দেখায় যে কারোরই মনে ধরে যাবে। এত অপূর্ব দেখতে শাড়িটা।সাথে রয়েছে শাড়ির সাথে মিলানো কিছু জুয়েলারি।একগুচ্ছ হলুদ আর লাল রঙ মিশ্রণের চুড়ি। আর দ্বিতীয় ব্যাগের ভিতর ছিল দুই বক্স চকলেট। তাও কথার পছন্দের চকলেট।কথা হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলো এগুলো কে দিলে আবার। তখনি রূপের কথার ঘরের দরজার পাশে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে বলে উঠলো,
এত ভেবে লাভ নেই।এগুলো আমিই দিয়েছি – রূপ
মানে। আপনি কেন দিলেন এসব – কথা
আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই দিয়েছি – রূপ
কথা জিনিসগুলো ব্যাগের ভিতর ভরে রূপের কাছে এসে এগিয়ে দিয়ে বললো,
সরি ভাইয়া আমি এসব নিতে পারবো না – কথা
কেন? কারণটা কি জানতে পারি? – রূপ
আমি সব মানুষের থেকে গিফট নিতে লাইক করি না – কথা
আমি কি তোর পর নাকি যে নিতে পারবি না – রূপ
এখানে পর বা আপনের কথা হচ্ছে না। এখানে মূল কথা হচ্ছে আমি নিতে পছন্দ করি না গিফট আশা করি বুঝবে – কথা
আচ্ছা ঠিক আছে আছে তোর কথা মানলাম। কিন্তু ভাই হিসেবে তো গিফট টা নিতেই পারিস তাই না – রূপ
আচ্ছা ঠিক আছে – কথা।
ওদের কথার মাঝে সেখানে আরশি এসে উপস্থিত হলো।রূপ আর কথাকে একসাথে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আরশি প্রশ্ন করলো,
ভাইয়া তুমি এখানে কি করছো? – আরশি
একটা কাজে এসেছিলাম।কিন্তু তুই এরকম রেডি হয়ে এ অসময়ে কোথায় যাচ্ছিস – রূপ
আসলে আজকে একটু ঘুরতে যাব বাহিরে আমরা ফ্রেন্ড রা। – আরশি
আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে যাবি আর তারাতাড়ি বাসায় ফিরে আসবি – বলে রূপ চলে গেলো
তুই এখনো রেডি হসনি কেনো কথা? – আরশি
আরে আর বলিস না আমি তো ঠিকই করতে পারলাম না যে কোন ড্রেস পরবো – কথা
তোর হাতে এটা কি কথা? – আরশি
আরে এটা আমাকে রূপ ভাইয়া গিফট করেছে – কথা
ওয়াও শাড়িটা সুন্দর তো – আরশি
হুম।আচ্ছা তুই ভেতরে আয় আমাকে ড্রেস পছন্দ করতে সাহায্য কর – কথা
তারপর আরশি একটা ড্রেস বের করে কথাকে দিয়ে বললো এই ড্রেসটা পড়। এটা তোকে অনেক মানাবে – আরশি
আচ্ছা ঠিক আছে আমি চেঞ্জ করে আসছি। তুই ড্রয়ারের ভেতর থেকে এটার সাথে মেচিং হবে এরকম কোনো ঝুমকো বের কর – বলে কথা ওয়াশরুমে চলে গেলো।
রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হতে হতে আরশি আর কথার বারোটা বেজে গেলো। গাড়িতে গিয়ে বসতেই আকাশ আর রিয়াকে নিজের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে কথা বললো,
সরি সরি আর হবেনা কখনো লেট – কথা
এই কখনো যে কবে আসবে এটা আল্লাহই ভাল জানে – আকাশ
আকাশের কথা শুনে রিয়া আর আরশি হাসতে শুরু করলো।
হয়েছে হয়েছে আমি লেট করেছি সব ঠিকই দেখলো।এখন যে আকাশ ড্রাইভিং শুরু না করে সময় নষ্ট করছে এটা কেউ দেখে না। – কথা
পেত্নীর নানী তুই কি কখনো ভাল হবিনা? – আকাশ
আমি যথেষ্ট ভাল। আর ভাল কিভাবে হবো? – কথা
হইছে আম্মা আব্বা। তোরা দুইটা থাম। তোরা এখন ঝগড়া শুরু করলে আমার আর আরশির সারাদিন গাড়িতেই কেটে যাবে – রিয়া
হুম ঠিক আছে। কিন্তু আমি ঝগড়া করি না। সব ঝগড়া এই ডাইনি মহিলা করে – বলে আকাশ গাড়ি ড্রাইভ করা শুরু করলো
কথা আকাশের কথা পাত্তা না দিয়ে আরশি আর রিয়ার সাথে গল্প শুরু করে দিলো। শপিংমলের সামনে এসে আকাশ গাড়ি দাঁড় করালো। আর বলতে লাগলো,
আমার আজকে শিক্ষা হয়ে গেছে বাপু এমন ভুল আর আমি জীবনে কোনোদিন ও করবো না – আকাশ
ভুল তো তুই সারাজীবন করেই এসেছিস। আর বাকি জীবন করেই যাবি। কিন্তু আজকে হঠাৎ আবার তুই কি ভুল করলি – কথা
আরে তোদের মত তিন বাঁচাল মহিলাকে গাড়িতে বসিয়ে নিয়ে এসেছি এটাই মনে হয় আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল – আকাশ
কি বলতে চাচ্ছিস সেটা ক্লিয়ার করে বল তুই – আরশি
আরে তোরা তিনজন যে পরিমাণ বাঁচাল। আজকে আমার কানের সব পোকা মরে গেছে – আকাশ
নিজে যে এতগুলো কথা বললি তার কি – রিয়া
আরে তুই জানিস না রিয়া আকাশ তো কথাই বলতে পারেনা। আবার এত কথা কিভাবে বলবে ? – কথা
আলুর বাচ্চা আলু – আকাশ
আমার এখনো বিয়েই হলো না বাবু কই থেকে আসলো আমার – কথা
হইছে বাবা তোরা থাম সবাই। আর ভিতরে চল শপিং মলের এখনো আমাদের হলুদের শাড়ি আর পাঞ্জাবি ঠিক করা বাকি বিয়ের মাএ পাঁচ দিন বাকি – আরশি
হুম চল – আকাশ
প্রথমে সবাই গেলো আকাশের জন্য পাঞ্জাবি কিনতে। পাঞ্জাবি কেনা শেষ হতেই সবাই শাড়ি দেখা শুরু করলো। এক দোকানের প্রায় সব শাড়ি দেখার পরই মেয়েদের একজনের ও কোনো শাড়ি পছন্দ হয়নি। তাই বের হয়ে অন্য দোকানে যেতে লাগলো। তখন আকাশ বললো,
এখন দোকানে না গিয়ে চল আগে হোটেলে যেয়ে লান্স শেষ করি। তারপর শাড়ি দেখবো কেমন – আকাশ
হুম ঠিক বলেছিস আমার অনেক খিদে লেগেছে – রিয়া
আচ্ছা চল সবাই – আরশি
লান্স শেষ করে সবাই আবার নানা দোকানে শাড়ি দেখতে শুরু করলো। কোনো মতেই কারোর শাড়ি পছন্দ হচ্ছিল না। তাই আকাশ বললো এবার সবার জন্য ও শাড়ি ঠিক করবে।মেয়েরা ও আকাশের কথায় রাজি হয়ে গেলো। তারপর আকাশ সবাইকে শাড়ি পছন্দ করে দিলো। আরশি রিয়া আর কথার শাড়ি একই কিন্তু রঙ ভিন্ন। কথার শাড়ি হলুদ রঙের,রিয়ার শাড়ি সবুজ রঙের আর আরশির শাড়ি লাল রঙের। শাড়ি কেনা শেষে সবাই ঘুরে ঘুরে নিজেদের বাকি টুকিটাকি জিনিসপত্র কিনতে লাগলো। আকাশের একটা কল আসায় সে সবাইকে বলে শপিংমলের বাইরে চলে গেলো। ঘুরতে ঘুরতে কথা দেখতে পেলো রূপ একটি মেয়ের সাথে শাড়ির দোকানে ঢুকলো। কথা রূপকে দেখে সেদিকে এগিয়ে গেলো। রূপ নিজে মেয়েটাকে শাড়ি পছন্দ করে দিলো। তারপর দুজনে ঘুরে ঘুরে আরে কিছু জিনিস কিনলো। কথার নজর রূপ আর সেই মেয়েটার দিকেই ছিল সবসময়। কেনাকাটা শেষ হতেই রূপ আর মেয়েটি চলে গেলো। তখনি আকাশ এসে কথার পাশে দাঁড়ালো।কথা আকাশকে বললো,
আমার আর ভাল লাগছে না আকাশ আমি অনেক ক্লান্ত। বাসায় যাব – কথা
কি হইছে? তোর কি শরীর খারাপ লাগছে বল আমাকে – আকাশ
না আমি সম্পূর্ণ ঠিক আছি। শুধু একটু ক্লান্ত লাগছে আর মাথা ব্যাততা করছে – কথা।
ঠিক আছে তুই নিচে যা। গিয়ে গাড়িতে বস আমি ওদের দুজনকে নিয়ে আসি – আকাশ
আচ্ছা – কথা
~~~~~~~
বাসায় আসতে আসতে সন্ধ্যা ৭ টা বেজে গেলো।বাসায় এসে জানতে পারলো রূপ বাসায় নেই। কোন প্রয়োজনে জানি বাইরে গিয়েছে। কথাটি শুনো কথার মুখে ফুটে উঠলো তাচ্ছিল্যের হাসি। সবার সাথে কথা বলে সে কথা রুমে আসলো।
তারপর ভাবতে লাগলো রূপ আর মেয়েটার কথা। সে একা একাই বলতে লাগলো,
তাহলে এটা তোমার সেই যোগ্য মেয়ে তাই তো রূপ ভাইয়া। হুম সত্যি সে অনেক সুন্দরী। তোমার পাশে তাকে অনেক মানাবে। আর আমি হ্যা আমার তো কোনো যোগ্যতাই নেই তোমার পাশে দাঁড়ানোর। এই কারণেই বদলে গেলাম।তুমি যে কি চাচ্ছো আমি বুঝতে পারছি না। কেন হচ্ছে আমার সাথে এসব – বলে কথা কান্না করতে লাগলো
(রিচেক করতে পারিনি। আজকে একটু বড় করেই দিয়েছি।দেরি হওয়ার জন্য আমি দুঃখিত)
চলবে,