রুম গোছাতে এসেছে বড় ভাবি নিশিতা।

0
13731

রুম গোছাতে এসেছে বড় ভাবি নিশিতা।

রাফি কম্পিউটারের মনিটরের দিকে ঝুঁকে অফিসের কাজগুলো চেক করছে। এমন সময় হঠাৎ ই রাফির চোখ চলে যায় নিশিতার দিকে…

দ্রুত চোখ নামিয়ে নেয় রাফি। রাগ হচ্ছে ওর খুব। সহ্য করতে না পেরে নিশিতাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,,

ভাবি আপনি বেরোয় যান…(রাফি)

নিশিতা কিছুটা অবাক হয়ে,

কেনো রাফি??(নিশিতা)

রাফি কি বলবে বুঝতে পারছে না…

আমার কাজ তো এখনও শেষ হয়নি। আর তাছাড়া রুমের যে ছিরি করে রেখেছো। এ ঘরে মানুষ থাকে বলে মনে হয় না।(নিশিতা)

আমার রুম আমি গুছিয়ে রাখবো, হুম। এখন আপনি যান আমার সামনে থেকে(রাফি)

নিশিতা এবার রাফির দিকে ক্ষুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে,,

সমস্যা কি তোমার?? তোমার সামনে তো আমি আসতেই পারি না। সবসময় এমন করো। কি হয়েছে তোমার…(বলেই নিশিতা রাফির কাধে হাত দিলো)

<a href=”https://play.google.com/store/apps/details?id=com.golpopoka.android” target=”_blank” rel=”noopener”><img class=”alignnone size-full wp-image-13798″ src=”https://golpopoka-4ad355.ingress-bonde.easywp.com/wp-content/uploads/2019/06/61453730_563463727517131_2776040382213914624_n.gif” alt=”” width=”540″ height=”960″ /></a>

ভাবি প্লিজ। যাষ্ট লিভ মি… এন্ড গো..(রাফি এবার রাগে কাঁপছে)

নিশিতা ভয় পেয়ে দ্রুত রুম থেকে চলে গেলো..

রাফি আস্তে আস্তে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো…

রাফির এমন আজব রিয়েকশনের কারণ,

রাফি যখন নিশিতার দিকে তাকায়, নিশিতা তখন নিচু হয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে কাজ করছিলো আর এর ফলে রাফির নজর নিশিতার বুকের উপর গিয়ে পড়ে। আর নিশিতা যেহেতু স্টার জলসার নায়িকাদের মতো করে ড্রেস বানায়, সেহেতু, নিশিতার আপত্তিকর জায়গাটার প্রায় পুরো টাই রাফির নজরে চলে আসে…

রাফির বিরক্ত লাগছে। হাজার বার বড় ভাইয়াকে ও বলেছে, বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে ভাবিকে একটু পর্দার সাথে চলতে বল। আর যদি সেটাও না পারে তো শালীনতাটুকু বজায় করে চলতে বলিস। কিন্তু ভাইয়া রাফির কোন কথাই কানে তুলে না। হাজার টা অযুহাত দিয়ে ব্যাপার টাকে এড়িয়ে যায়। আর যাবেই বা না কেন? সে যে ভাবির মতোই। আল্ট্রামর্ডান যাদের পছন্দের তালিকায় থাকে…

ভাবিকে মাঝে মাঝেই কিসব ড্রেস কিনে উপহার সমেত দেয়। আর ভাবি সেটা পেয়ে, খুশিতে, বাবা মায়ের সামনেই ভাইয়াকে কিস করে,

ছিহ,… (রাফির মুখ থেকে কথাটা বেরোয় এলো)…

কম্পিউটার টারের মনিটর টা বন্ধ করে রাফি মাকে জোরে জোরে ডাকলো,

রাফির মা ঘরে এসে,

কি হয়েছে বাবা..??(মা)

ভাবিকে এরপর থেকে আমার রুমে ঢুকতে বারণ করবা। আমার রুম অগোছালো থাকুক বা না গোছানো থাকুক উনি যেনো কোনমতেই আমার রুমে না আসে৷… (রাফি)

রাফি কথাটা বলেই রুম থেকে বাহিরে চলে গেলো..

রাফির মা ছোট ছেলের কথার পুরোটাই বুঝতে পেরেছে। কিন্তু কি করবেন উনি? উনি নিজে অসুস্থ জন্য রাফির কোন যত্ন উনি নিতে পারেন না। তাই মাঝে মাঝে উনি রাফির ঘরে খাবার পাঠানো, ঘর গুছানোর জন্য নিশিতাকে পাঠান।

আজ ও নিশ্চয় কিছু হয়েছে নয়তো রাফি এমন কেন করবে??(রাফির মা ভাবতে থাকে)

রাফি ছোট থেকেই এসব কিছুর প্রতি বিরুপ মনোভাব নিয়ে গড়ে উঠেছে। মায়ের কষ্ট হলেও, মায়ের বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে মাকে, বোরকা + নিকাব পড়ে যেতে হবে। এটা এক প্রকার রাফির অর্ডার। মা ও খুশিমনে রাফির আদেশ টা মেনে চলে।

অফিসে যখন অন্যসব কলিগ রা মেয়ে স্টাফ দের সাথে লুতুপুতু করাতে ব্যস্ত। রাফি তখন কম্পিউটারের মনিটরের সামনে মাথা গুজে বসে থাকে।

গাড়িতে যদি কোন মেয়েকে পাশে বসতে দেখে শালীন পোশাক ছাড়া। ও সিট ছেড়ে উঠে পড়ে, সারাপথ দাঁড়িয়ে আসে। তবুও সিটে বসা বা মেয়েটার দিকে তাকানোর প্রয়োজন টুকু মনে করে না…

বর্তমানঃ

সময় টা সন্ধ্যা ৭ টা,

সারাদিনে একবারো রাফিকে বাসায় দেখা যায় নি। এই সময়ে রাফিকে বাসায় দেখে মা বলে উঠলো,,

কিরে, কখন এলি??(মা)

মাত্র..(বলেই রাফি নিজের রুমে চলে গেলো)

রুমে গিয়ে বিছানায় বসতে না বসতেই, সামনে তাকিয়ে দেখে বড় ভাই রাতুল এসেছে ওর রুমে,,

কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাতুল, রাফির গালে চড় দিয়ে বসলো…

রাফি গালে হাত দিয়ে রাতুলের দিকে তাকিয়ে দেখলো নিশিতা ভাবিও ভাইয়ার সাথেই এসেছে… এমন সাঁজ সেঁজেছে। মনে হচ্ছে উনি মাত্র, পার্লার থেকে এসেছেন। কোন বিয়ের অনুষ্টানে যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছেন…

মারলি কেনো??(রাফি)

তুই তোর ভাবিকে কি বলেছিস??এমন নোংরা কথা বলার আগে তুই ভাবতে পারলি না ও তোর ভাবি হয়?(রাতুল)

ওয়েট ওয়েট, নোংরা কথা মানে??(রাফি)

হ্যা নোংরা কথায় তো। তোর ভাবি অনেক হট, ওর ফিগার হট..ছিহ তোর থেকে এটা আসা করিনি..(রাতুল)

রাফি হেসে দেয়…এবং জোরেই হেসে দেয়…ও বুঝতে পেরেছে ভাবি ঠিক উলটো বুঝিয়েছে ভাইয়া কে..

কিছুসময় পরে,,

তোর বউকে আমি এ কথা বলবো?? আর এটা তোর বিশ্বাস হয়?? আর এগুলো বললেও বা কি? তুই তো মানুষের থেকে তোর বউ সম্পর্কে এগুলোই শুনতে চাস?? (রাফি)

রাফি….(রাতুল চিৎকার করে উঠলো)

আস্তে কথা বল…কারণ এরপর যেগুলো বলবো কথাগুলো বাহিরের মানুষ শুনলে তোর ই সম্মান টা যাবে আমার কিচ্চু যাবে আসবে না…(রাফি)

ততক্ষনে বাবা মা রাফির রুমে চলে এসেছে…

রাফি, বাবা, ছাড়ো এসব…(বাবা).

অনেক ছেড়েছি বাবা। আর না। (রাফি)

রাতুলের দিকে তাকিয়ে,,

এটা তোর বউ তাই না বল??(রাফি নিশিতাকে দেখিয়ে)

হ্যা, আমার বউ…(রাতুলের ঝটপট উত্তর)

হ্যা তোর বউ। আর চরিত্র টাও ঠিক তোর মতোই….। কারণ জিনিস টা যে তোরি…(রাফি)

দেখলা কি বললো…(নিশিতা মায়া কান্না জুড়ে দিলো)

মুখ সামলে কথা বল, নয়তো..(রাতুল)

আরে থাম। তোর বউয়ের দিকে তাকিয়ে দেখ, একবার তাকিয়ে দেখ। আমার ইসলামে যেই সাঁজগোজ শুধু মাত্র তোর সামনে করার কথা বলেছে, আর তোর বউ কি করছে?? শুধু তোর সামনে না। তোর বউয়ের শ্বশুড়, দেবর, এমন কি প্রতিবেশী পুরুষ দের সামনেও দেখাতে ব্যস্ত…(রাফি)

রাতুল কিছুটা রাফির থেকে দূরে সড়ে দাঁড়ালো।।।

বিয়ের দিন থেকে আজ অবধি কখনো ওনাকে(নিশিতা) আমি সাঁজ আর শরীর দেখানো পোশাক ছাড়া দেখিনি। তুই আর তোর বউ জাহান্নামে যেতে চাস ভালো, কিন্তু আমাদের টানতে চাইছিস কেন?? আমরা কি তোর শত্রু?? আমার বাবা তোর শত্রু??(রাফি)

রাতুল চুপ করে আছে…

আরে তোর বউয়ের সৌন্দর্য যদি এতই দেখাতে চাস, তো এক কাজ কর। মিডিয়াতে দিয়ে দে। ওখানে শুধু প্রতিবেশী না, দুনিয়ার সকল লোক ই তোর বউয়ের শরীর দেখতে পাবে…(রাফি)

কথাগুলো বলার সময় বড় ভাবির রিয়েকশন ছিলো সাধারণ। মনে হচ্ছে এখানে ওনার স্টার জলসার নাটক চলছে আর উনি সেটা উপভোগ করছে। আর ভাইয়ার রিয়েকশন ছিলো, মাথা নিচু করে থাকা…

রাফি এবার বাবার দিকে তাকিয়ে…

হয় তোমার বড় ছেলে এ বাসায় থাকবে নয়তো আমি এ বাসায় থাকবো। এবার ডিসিশন টা তোমার…(বলেই রাফি রুম থেকে বেরোয় গেলো)

বাবা মা চুপ করে আছে। বড় ভাবি রুমে চলে গিয়েছে আর বড় ভাই মাথা নিচু করে আছে…

এর ৭ দিন পরেঃ

বাবা মায়ের অনুমতি ছাড়াই বড় ভাই আর ভাবি বাসা থেকে বেরোয় যায়।

রাফি গভীর করে শ্বাস নেয়। মনে হচ্ছে আজ ও মুক্তি পেয়েছে শয়তানের থাবা থেকে….

তবে ও মনেপ্রাণে ভাই আর ভাবির জন্য এই প্রার্থনা করে যে, আল্লাহ তুমি ওদের সঠিক বুঝ দান করো…ঈমানের পথে আসার তৌফিক দান করো।

রাফি কখনো চাইনি ওদের ভাই ভাইয়ের সম্পর্ক ছিন্ন হোক। ও শুধু চেয়েছিলো, খারাপ কাজগুলো থেকে ছিন্ন হতে। কিন্তু খারাপ কাজ যখন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব কে গ্রাস করে নেয় তখন খারাপ সঙ্গ ত্যাগ করায় সমুচিত বলে রাফি মনে করেছিলো….

[সৎ সঙ্গ আপনাকে জান্নাতের বাগান দেখাতে পারবে। আর অসৎ সঙ্গ দেখাতে পারবে, জাহান্নামের জলন্ত শিখা]

লেখাঃ তাসকিনা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে