#রুপালি_মেঘের_খামে
লিখা- Sidratul Muntaz
৩০.(১ম ভাগ)
অরা অসংখ্যবার সামিরকে ‘ স্যরি’ লিখে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। ফোনও দিয়েছে বহুবার। কিন্তু সামির কোনোভাবেই রেসপন্স করছে না। সকালেও সে অরার সাথে কথা বলেনি। ভার্সিটি যাওয়ার সময় অরাকে বিদায় পর্যন্ত জানায়নি৷ এতো নিষ্ঠুর আচরণ সে করতে পারল? অরার খুব খারাপ লাগছে। অচিরেই কান্না পেয়ে যাচ্ছে। সামির তাকে অবহেলা করলে তার কিচ্ছু ভালো লাগে না।
নীলিমা দুপুরে অরার ঘরে এলেন। একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলাপ করবেন। অরাকে বললেন,” ফ্রী আছো?”
অরা মোবাইলে ইউটিউব দেখছিল। শাশুড়ীর আগমনে শোয়া থেকে উঠে বসল৷ মোবাইল রেখে বলল,” আসুন আম্মু। অবশ্যই ফ্রী আছি। আপনার কাছে কোনো কাজই গুরুত্বপূর্ণ না।”
নীলিমা বিছানায় বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলেন,” নানান ঝামেলায় তোমার তো পড়াশুনা কিছুই হলো না। পরীক্ষারও আর বেশিদিন বাকি নেই। একটা কাজ করো বরং,প্রাইভেটে ভর্তি হয়ে যাও?”
অরা অবাক স্বরে বলল,” কিন্তু আমি এখনও প্রিপারেশন নিচ্ছি আম্মু। পরীক্ষাটা অন্তত দেই। হয়তো খুব বেশি ভালো হবে না। তবুও আমি কিছুটা আশাবাদী।”
” তবুও আমি বলি কি, ভর্তি হয়ে থাকো। সময় নষ্ট করে লাভ নেই।”
” কিন্তু উনার সাথে আমার এই বিষয়ে কোনো কথা হয়নি।”
” কে? অর্ঘ্য? ওর কথা বাদ দাও।তোমার শ্বশুর বলেছে তোমাকে কাল সামিয়ার ভার্সিটিতে নিয়ে যাবেন ভর্তি কনফার্ম করতে।”
অরার বিস্ময় আকাশ ছুঁলো। চোখ বড় করে বলল,” ও বাবা! সামিয়া তো ব্র্যাকে পড়ে! সেখানে অনেক খরচ। আমি পারবো না ওখানে ভর্তি হতে।”
নীলিমা হেসে বললেন,” কেন পারবে না? সামিয়া ভর্তি হয়েছে না?”
” সে তো ভর্তি হয়েছে বাবার টাকায়। আমি তো আর শ্বশুরের টাকায় ভর্তি হতে পারি না। আর আপনার ছেলে মনে হয় না আমাকে ওখানে পড়াতে পারবে। তাহলে তো সে নিজেই বলতো।”
নীলিমা আঁড়চোখে তাকিয়ে বললেন,” বোকা মেয়ে, তোমার শ্বশুর কি তোমার বাবা হয় না? বাবার টাকা মেয়ে নিতেই পারে। এতে লজ্জার কি আছে?”
অরা মাথা নিচু করে বলল,” লজ্জা আমার লাগবে না। কিন্তু আপনার ছেলের যদি লাগে? আমি এমন কিছু চাই না যেটা উনার সাধ্যের বাইরে চলে যায়। এখনও সময় আছে। আমি পরীক্ষার জন্য প্রিপারেশন নিবো। ওখানে না হলে ন্যাশনালে পড়বো৷ নাহলে উনি এফোর্ড করতে পারে এমন একটা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবো।”
নীলিমা অরার কথা শুনে অবাক হলেন৷ এভাবে কয়জন স্ত্রী চিন্তা করে? অন্য মেয়ে হলে নিশ্চয়ই ননদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে রাজি হয়ে যেতো। কিন্তু অরা সবার আগে সামিরের আত্মসম্মানের কথা চিন্তা করেছে।
ছেলের স্ত্রী ভাগ্য দেখে নীলিমা আপ্লুত হলেন। কোমল কণ্ঠে বললেন, “ঠিকাছে। তোমার যেমন ইচ্ছে, তেমনই করো মা।”
নীলিমা উঠতে নিবেন তখন অরা হাত ধরে বলল,” আম্মু, আপনাকে একটা কথা বলার ছিল।”
” বলো মা।”
অরা একটু লাজুক হেসে বলল,” আমার বান্ধবীকে তো চেনেন। রূপা, ওইযে বউভাতে এসেছিল?”
” হ্যাঁ। কি হয়েছে?”
” ও আসলে এখানের একটা কোচিং-এ ভর্তি হবে। সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছে তো! ঢাকার মধ্যে কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই। লেডিস হোস্টেলে উঠতে চেয়েছিল। আমি ওকে আপনার অনুমতি না নিয়েই এখানে আসতে বলে দিয়েছি। আমাদের বাসায় তো আলাদা একটা গেস্টরুম আছেই।”
নীলিমা ভ্রু কুঁচকে বললেন,” তুমি এতো ইতস্তত করছো কেন? অবশ্যই থাকবে। আর আত্মীয়-স্বজন নেই কে বলল? বন্ধু-বান্ধব কি পর? তুমি ওর এতো ক্লোজ ফ্রেন্ড… তোমার বাড়ি থাকতে লেডিস হোস্টেলে কেন থাকবে? ভালো করেছো আসতে বলে। আসুক।”
অরা খুব খুশি হয়ে সাথে সাথেই রূপাকে ফোন দিল। রূপা সব শুনে মলিন কণ্ঠে বলল,” যখন তোর শাশুড়ী আসল কাহিনী জানবেন তখন নিশ্চয়ই আমাকে আর পছন্দ করবেন না।”
” ভুল বললি। আমার শাশুড়ী অনেক ভালো মানুষ। পৃথিবীর বেস্ট শাশুড়ী। তুই কয়েকদিন এসে থাক, তাহলেই বুঝবি। কবে আসছিস তুই?”
” আমি জানাবো৷”
” ঠিকাছে। দ্রুত আয় প্লিজ। আমি আর ওয়েট করতে পারছি না।”
ছাদে আজ খুব ঠান্ডা বাতাস। আকাশের রঙ নির্মল।ভাসমান মেঘগুলো যেন সাদা পায়রা। অরা একাকি পায়চারী করছিল ছাদে। সকাল সাড়ে আটটা বাজছে। সামির অনেকক্ষণ আগেই ঘুম থেকে উঠেছে। এখনও আসছে না কেন? সে তো এই সময় এসেই এক্সারসাইজ করে।
অরাও তাই দ্রুত ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। বই নিয়ে ছাদে হাঁটাহাঁটি করছে। উদ্দেশ্য সামিরের উপর নজর রাখা। অরা পণ করেছে সে ছাদ থেকে ততক্ষণ নামবে না যতক্ষণ না সামির এসে তাকে কোলে করে নামাচ্ছে। কিন্তু সামিরের তো আসার কোনো লক্ষণই নেই।
অরা না পারতে ফোন করল। সামির গম্ভীর কণ্ঠে বলল,”কি সমস্যা?”
” আপনি কি আসবেন না?”
” না।”
” কয়বার স্যরি বলতে হবে? স্যরি, স্যরি, স্যরি, বললাম তো। ”
” শুনলাম।”
” শুধু শুনেই বসে থাকবেন? আর কিছু করবেন না?”
“না।”
” আপনি খুব নিষ্ঠুর। ছাদে আসুন, প্লিজ!”
” এসে কি করবো?”
” সবসময় যা করেন সেটাই করবেন। তারপর আমাকে কোলে করে ঘরে নিয়ে যাবেন। নাহলে আমি যাবো না।”
” কেন আপনাকে কোলে নিতে হবে আমার? আপনার কি পা নেই?”
অরার বুক ধ্বক করে উঠল। সামির আবার তাকে ‘আপনি’ করে বলছে। এর মানে পরিস্থিতি অনুকূলে নেই। বিয়ের ঘটনা নিয়ে মারাত্মক রেগে আছে এখনও। উফ, কি একটা মেজাজি বর পেয়েছে সে। তার জীবনের অর্ধেক সময়ই বুঝি কে-টে যাবে বরের রাগ ভাঙাতে ভাঙাতে। অরা মিনমিন করে বলল,” আপনি যদি ছাদে না আসেন তাহলে আমিও ঘরে আসবো না। সারাদিন ছাদেই বসে থাকবো। রোদে জ্বলে কয়লা হয়ে যাবো”
-” ওকে। বেস্ট অফ লাক।”
সামির ফোন রেখে দিল৷ অরার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল জল। মানুষটা এতো পাষাণ! অরা সত্যি সত্যি ছাদে বসে থাকার সিদ্ধান্ত নিল৷ তার ভীষণ রাগ হচ্ছে। সামির ঘরে বসে কি করছে? ভার্সিটিতে চলে গেল নাকি আবার?
অরা রাগান্বিত গতিতে সিঁড়ি থেকে নামতে লাগল। সামির এতোক্ষণ ধরে ঘরে বসে কি করছে সেটা দেখা দরকার। সে অতি দ্রুত নামতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল। পায়ে ব্যথা হলো প্রচন্ড।
মোবাইলটা পড়ে গেছিল সিঁড়ির গোঁড়ায়। অরা কোনোমতে মোবাইলের কাছে পৌঁছাল। তারপর সামিরকে ফোন করল। সামির আগের মতোই গম্ভীর কণ্ঠে কথা বলল,” হ্যালো।”
” আপনি প্লিজ একটু ছাদে আসুন না।”
অরার চাপা আর্তনাদ শুনে সামির একটু হকচকিয়ে গেল। বিচলিত গলায় বলল,” কি হয়েছে?”
” সিঁড়ি থেকে পড়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছি।”
-” মিথ্যা বলছেন না তো আবার?”
” ছিঃ, আপনার এরকম মনে হলো? থাক, আপনাকে আসতে হবে না। আমি রাখছি। খবরদার আসবেন না আপনি।”
অরা ফোন কেটে দিল। সামির দ্রুত ছাদে রওনা হলো। সিঁড়িতেই দেখা হলো অরার সাথে। পায়ে হাত দিয়ে বসে আছে। চোখে অশ্রু টলমল। সামির অপরাধী কণ্ঠে বলল,” স্যরি।”
” হুহ!”
” কিভাবে ব্যথা পেলে? বেশি ব্যথা করছে?
” আমার পা একদম মচকে গেছে। ব্যথায় মরে যাচ্ছি আমি। আমাকে হসপিটালে নিয়ে চলুন।”
সামির ভয়ে প্রশ্ন করল,-” কি বলো? এতো সিরিয়াস অবস্থা? দেখি?”
” আউ, ব্যথা! প্লিজ ধরবেন না। আমার কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে। আমাকে হসপিটালে নিয়ে চলুন।”
সামির সন্দেহী দৃষ্টিতে তাকাতেই অরা হেসে ফেলল। সামির উঠে দাঁড়িয়ে গুমোট কণ্ঠে বলল,” জানতাম আমি।”
” এভাবে না বললে তো আপনি আসতেন না। কি করব?”
সামির কথা না বলে ছাদের ভেতরে ঢুকল। অরা ছাদের বিপরীত পাশে গিয়ে পায়চারি করতে লাগল। হঠাৎ চোখে পড়ল অন্য ছাদের একটি মেয়ে কাপড় নাড়তে এসে তাদের ছাদের দিকে চেয়ে আছে। আরেকটু ভালোভাবে লক্ষ্য করতেই অরা বুঝল, মেয়েটি আসলে সামিরকে দেখছে। সামির সম্পূর্ণ খালি গায়ে উবু হয়ে পুশ আপ দিচ্ছে। এই দৃশ্য দেখেই মেয়েটা মজা নিচ্ছে।
অরা প্রচন্ড ক্ষেপে গেল। বই ভাঁজ করে সামিরের কাছে গিয়ে বলল,” চলুন এখান থেকে। ”
সামির ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,” মানে? কোথায় যাবো?”
” নিচে।”
” তুমি যাও।”
” আপনিও আমার সাথে যাবেন। ওই মেয়েটা আপনার দিকে চেয়ে আছে।”
” কোন মেয়ে?”
” ওইতো পাশের ছাদে। ”
” তো আমি কি করব?”
” কি করবেন মানে? আমার সাথে এখান থেকে যাবেন।”
” না।”
অরা কার্নিশে দাঁড়িয়ে মেয়েটিকে চোখ রাঙাল। অথচ মেয়েটি তাকে দেখছে না। তার সম্পূর্ণ মনোযোগ সামিরের দিকেই। অরার মাথায় আগুন ধরে যাচ্ছে। সে নিচ থেকে পাথর কুড়িয়ে মেয়েটির গায়ে ছুঁড়ে মারল।
মেয়েটি বিস্মিত হয়ে চাইতেই সে খিটমিট করে বলল,” চোখ গেলে দিবো একদম।”
মেয়েটি অবাকচোখে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ চলে গেল। সামির হেসে উঠল উচ্চশব্দে। অরা কাছে এসে বলল,” খুব মজা লাগছে তাই না? আপনি আর ছাদে আসতে পারবেন না। এখন থেকে আপনার ছাদে আসা নিষেধ।”
” তোমার অনুমতি কে চাইছে? আমার যা ভালো লাগে আমি করব।”
” আপনার তাহলে এটা ভালো লাগে? এভাবে আপনি খালি গায়ে ছাদে উঠবেন। আর মেয়েরা আপনার দিকে চেয়ে থাকবে?”
” আমি কখনও ওই মেয়েকে দেখিনি অরা।”
” আমি বিশ্বাস করি না৷ তাহলে আপনি ছাদে কেন আসেন? বুঝেছি, এই জন্যেই আসেন। আমাকে কি বোকা মনে হয়?”
সামির হেসে ফেলল। তারপর বলল,” আমি আমার কাজে আসি। কে আমাকে দেখল, কে দেখল না এতোকিছু দেখার সময় নেই।”
” ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছেন। এই কাজ করে কি মজা পান বুঝি না। নিজেকে কি সালমান খান ভাবেন?”
” হুম, মজা তো আছেই। সবচেয়ে কখন বেশি ভালো লাগে জানো?”
” কখন? ”
সামির একটু ঝুঁকে এলো। অরা তার ভাব-গতিক বুঝতে পেরে নিজের কান এগিয়ে দিল। সামির ফিসফিসিয়ে বলল,” যখন আমার নিচে তুমি থাকো।”
অরা থতমত খেল। প্রথমে বুঝতে পারল না। তারপর হঠাৎই তার চোখ-মুখ লালচে বর্ণ ধারণ করল। সামির হাসছে। অরার সারা শরীরে বিদ্যুৎ এর মতো কিছু একটা প্রবাহিত হলো। এমন বাজে রসিকতা সামির করতে পারে ভেবেই সে বিব্রত হলো। অপ্রস্তুত চিত্তে বই হাতে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে ছাদ থেকে নামতে লাগল। সামির তখনও হাসছে। অরা মনে মনে কয়েকবার স্বগতোক্তি করল,” অসভ্য লোক, অসভ্য লোক!”
চলবে।
#রুপালি_মেঘের_খামে
লিখা- Sidratul Muntaz
৩০.(২য় ভাগ)
ফিরোজা অরাদের শোবার ঘরে চা নিয়ে ঢুকেছে। সামির এখানে নেই। অরা পড়াশুনা করছিল। ব্যস্ত স্বরে বলল,” রেখে যান।”
ফিরোজা চা রেখে চলে যেতে নিলেই অরা ডেকে উঠল,” আচ্ছা শুনুন।”
” কিছু লাগব?”
“আপনার সাথে আমার জরুরী কথা আছে খালা।”
অরা উঠে দাঁড়াল। ফিরোজা বলল,” সকালে আমার মেলা কাম থাকে। জলদি বলেন।”
অরা কিছুটা এগিয়ে আসতে আসতে কড়া বাচ্যে বলল,” আপনার যে কি কাজ তা আমি খুব ভালো করেই জানি। সারাক্ষণ আমাদের ঘরে আড়ি পেতে রাখেন সেটা আমি খেয়াল করেছি। লুকিয়ে লুকিয়ে আমাদের কথা শোনেন কেন? আম্মুর কাছে বিচার দিলে চাকরিটা আর থাকবে না আপনার।”
ফিরোজা প্রতিবাদ করে বলল,” ওমা কি কন? কুন সময় আমি আড়ি পাতলাম? এই বাড়িতে এতোবছর ধইরা কাম করি। ছোট আব্বা আর ছোট আম্মা বড় হইছে আমার হাতে। জীবনে কেউ এই কথা কইতে পারে নাই।”
অরা কাছে এসে ফিসফসিয়ে বলল,” কি মনে হয়? শুধু আপনিই আড়ি পাততে জানেন? আর আমি জানি না? আপনি যে দাদীর পারসোনাল গুপ্তচর সেটাও আমি জানি। মাসে দাদী কতটাকা দেয় আপনাকে? তার চেয়ে বেশি টাকা আমি দিবো। শুধু আপনি আমাকে ছোট্ট একটা ইনফোরমেশন এনে দিবেন। পারবেন?”
“এডা আবার কি?”
” ইনফোরমেশন মানে হচ্ছে খবর। ছোট্ট একটা খবর এনে দিবেন।”
ফিরোজা কিছুক্ষণ ভ্রু কুটি করে চেয়ে থেকে শুধাল,” কয় ট্যাকা দিবেন?”
” পাঁচশো।”
ফিরোজা খুশি হয়ে বলল,” আইচ্ছা কন, কি খবর আনতে হইব?”
সে আহ্লাদ করে অরার হাতের বাহু চেপে ধরল। টাকার কথা শুনলেই মানুষের চোখ চকচক করে। টাকার কত ক্ষমতা! সামিরকেও যদি টাকার কথা বলে বশে আনা যেতো…. ব্যাপারটা কেমন হতো? অরা বলতো,” আপনাকে আমি নগদ পাঁচশো টাকা দিবো। শর্ত হচ্ছে- আজকে সারাদিন আমার সাথে রাগ করা যাবে না।”
সামির খুশি হয়ে বলতো,” যো হুকুম মহারাণী!”
অরার মনখারাপ হলো। ইশ, এটা কখনও সম্ভব না৷ শুধু টাকা কেন? পৃথিবীতে এমন কোনো বস্তু তৈরীই হয়নি যা দিয়ে সামিরের রাগ ভাঙানো সম্ভব।
সে একটু চিন্তা করে বলল,” আমার মনে হয় আপনি ব্যাপারটা জানেন। দাদী অসুস্থ হওয়ার পর যখন হাসপাতালে নেওয়া হলো তখন আমাকে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করানোর বুদ্ধিটা কার ছিল?”
ফিরোজার মুখ চিমসে গেল। সে অবশ্যই এই ব্যাপারে কিছু জানে তা নিশ্চিত। অরা সাবধানী কণ্ঠে বলল,” খবরদার মিথ্যা বলবেন না। আপনি এই বিষয়ে সব জানেন। দাদী ইচ্ছে করে নার্সকে টাকা খাইয়ে খবর ভুল বানিয়েছে, তাই না?”
ফিরোজা নত মাথায় বলল,” হ। ঠিক।”
” আপনিও দাদীকে এই কাজে সাহায্য করেছেন?”
” তয় কি করমু? আমার চাকরি বাঁচান লাগব না?”
” দাদী এই কাজটা কেন করলেন?”
” আপনের আর বড় আব্বার মইধ্যে ঝামেলা করতে চাইছিল। বড় আব্বা আপনেরে ডিফোস দিলে খালাম্মায় তার পছন্দমতো মাইয়া আইনা বড় আব্বার সাথে বিয়া দিবো।”
এমন কথা শুনে অরার মন ভার হয়ে গেল। সে ম্লান হেসে বলল,” ও। তাহলে এই ব্যাপার? কিন্তু উনি কিভাবে বুঝলেন এই কাজ করলে উনার সাথে আমার ঝামেলা হবে?”
ফিরোজা চুপ হয়ে গেল। অরা ধমক দিয়ে উঠল,” কথা বলুন।”
ফিরোজা বিব্রত এবং আড়ষ্ট ভঙ্গিতে বলল,”আমি বলছি। বড় আব্বা আর আপনে প্রতিদিন আলাদা শুইতেন এই ঘটনা আমি দেখছি।”
” আপনার কি কাজই তাহলে মানুষের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে স্পাইগিরি করা?” অরার প্রচন্ড রাগ উঠে গেল। রাগে রীতিমতো শরীর কাঁপতে লাগল৷ ফিরোজা অনুরোধের স্বরে বলল,” আম্মা, রাগ কইরেন না। আমি আর কখনও এমন করব না। এইযে কানে ধরছি।”
” শুধু সত্যি বলেছেন দেখে এবারের মতো আপনাকে মাফ করলাম। নেক্সট টাইম এমন করলে শিউর আপনার চাকরি খাবো আমি। এখন বের হোন। আমার সামনে আর কখনও আসবেন না। ”
ফিরোজা যাওয়ার আগে ক্ষীণ গলায় বলল,” আম্মা, আমার ট্যাকা?”
” এতো নোংরা কাজ করেও আবার টাকা চাইছেন? লজ্জা নেই আপনার? বের হোন! শুধু মায়ের বয়সী দেখে আমি আপনাকে এখনও কিছু বলিনি।”
ফিরোজা কাঁচুমাচু মুখে বের হয়ে যেতেই সায়ান ঢুকল ভেতরে। হাস্যমুখে জানতে চাইল,” কি ব্যাপার ভাবী? হঠাৎ ফিরোজা খালার উপর চেতলে কেন? সে কি করেছে?”
অরা মাথায় হাত ঠেঁকিয়ে নিজেকে শান্ত করে বলল,” তেমন কিছু না।” তারপর মুখে হাসি এনে প্রশ্ন করল,” তুমি কিছু বলবে?”
সায়ান বিরস মুখে বলল,” রূপা আসতে চাইছে না। মনে হয় লজ্জা পাচ্ছে।”
” লজ্জা পাওয়ার কি আছে? এটা এখন ওর শ্বশুরবাড়ি৷ শুধু কেউ জানে না ব্যাপারটা। কিন্তু সবাইকে জানাতে হবে। আর সেজন্য রূপাকে এখানে আসতে হবে। তোমার ভাইয়া কি বলেছে শোনোনি?”
” সেটাই তো আমি ওকে বোঝানোর চেষ্টা করছি ভাবী। কিন্তু ও বুঝলে তো… একবার মনে হচ্ছে নিজেই গিয়ে তুলে নিয়ে আসি।”
অরা ফিসফিসিয়ে বলল,” ব্যাপারটা যখন ভেবেই ফেলেছো…. তাহলে আর অপেক্ষা কেন? চলে যাও!”
” সত্যি যাবো?” সায়ান সামান্য অস্থির হয়ে উঠল৷ উত্তেজনায় তার কণ্ঠনালী কাঁপছে। তারপর হঠাৎ চুপসে গিয়ে বলল,” ভাইয়া যদি রেগে যায়?”
” আমি ম্যানেজ করব।”
” থ্যাঙ্কিউ ভাবি। ইউ আর দ্যা বেস্ট।”
সায়ান বের হয়ে যেতেই চিন্তারা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল অরার। খুব তো বলে দিল সে ম্যানেজ করবে। কিন্তু আসলেই কি ম্যানেজ করতে পারবে?
রজনীর নির্জনতা ছাপিয়ে টুংটুং করে বেজে উঠল রূপার ফোনের মেসেজ টোন। সায়ানের নাম্বার থেকে একটা মেসেজ এসেছে,” রূপা, আমি তোমাদের বাসা খুঁজে পাচ্ছি না। মনে হয় পথ হারিয়ে ফেলেছি।”
মেসেজ দেখে রূপা বিস্মিত হলো। শোয়া থেকে উঠে বসল ত্বরিতে। কিছুক্ষণ সাত-পাঁচ ভেবে নিয়েই কল করল।
” হ্যালো।”
” হ্যাঁ রূপা। তোমাদের বাসাটা কোথায় যেন? খুঁজে পাচ্ছি না।”
” আমার বাসা কোথায় মানে? আগে বলো তুমি এখন কোথায়?”
” আমি মীরসরাইতে।”
” মানে? তুমি এখানে কেন এসেছো? পাগল হয়ে গেছো?”
” তোমাকে নিতে এসেছি।”
রূপা বড় করে কয়েক শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করল৷ তারপর জানতে চাইল,” কোথায় আছো তুমি এখন?”
ঠিক রাত বারোটায় সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়েছে… রূপা সায়ানকে নিয়ে তার বেডরুমে ঢুকল। দরজা আটকাতেই সায়ান তাকে জড়িয়ে ধরে তৃষ্ণার্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করল,” আই মিসড ইউ সো মাচ।”
রূপা নিজেকে ছাড়িয়ে বলল,” এক চড় দিবো। এখানে কেন এসেছো?”
সায়ানের মুখে লম্বা হাসি। সে রূপার হাত ধরে বলল,” দাও। যত ইচ্ছা চড় দাও। প্লিজ।”
” হাসছো কেন তুমি গাঁধার মতো? ”
” অনেকদিন পর তোমার ধমক শুনে ভালো লাগছে। তাই আনন্দে হাসছি।”
রূপা আর নিজেকে সামলাতে পারল না। হেসেই ফেলল। তারপর বলল,” মামা আজ বিদেশ চলে যাচ্ছে। ভোর তিনটায় ফ্লাইট। আমরা সবাই এয়ারপোর্টে যাব।”
” সত্যি? আপদ বিদায় হচ্ছে তাহলে।”
রূপা কড়াচোখে তাকাল। সায়ান আমতা-আমতা করল,” স্যরি মানে… এবার তো তুমি চাইলে কাল সকালেই আমার সাথে ঢাকায় যেতে পারো?”
” কিন্তু মামীকে কি বলব?”
” জানি না। কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না। বিয়ের পরেও আলাদা থাকার কষ্ট কিভাবে বোঝাই?”
রূপা চোখ বড় করে বলল,” ফাজিল! এজন্য তাহলে তোমার কষ্ট?”
” শুধু এজন্য না। আমি সত্যিই তোমাকে খুব মিস করছি রূপা।”
সায়ান রূপাকে জড়িয়ে ধরল খুব শক্ত করে। তখনি দরজায় করাঘাতের শব্দ হলো। রূপা ফিসফিসিয়ে বলল,” মামা এসেছে। লুকাও।”
“কই লুকাবো?”
“খাটের নিচে চলে যাও।”
” কেন? আমি কি চোর? ভয় কেন পাবো?”
” গভীর রাতে একটা মেয়ের ঘরে ঢুকে বসে আছো আবার বলছো ভয় কেন পাবো? লজ্জা করে না?”
সায়ান কণ্ঠে ঝাঁঝ নিয়ে বলল” তো কি? আমি নিজের বউয়ের ঘরে ঢুকেছি।”
রূপা হাত ভাঁজ করে বলল,” এইটা মামার সামনে বলতে পারবে?”
” ভাইয়ার সামনে পর্যন্ত বলে ফেলেছি। সেখানে তোমার মামা তো কিছুই না। হুহ!”
রূপা হাসল। ভ্রু নাচিয়ে বলল,” ঠিকাছে… তুমি তাহলে দাঁড়াও। আমি এখনি দরজা খুলছি।”
সে দরজা খোলার জন্য পা বাড়াতে নিলেই নিলেই সায়ান বিদ্যুৎবেগে খাটের নিচে ঢুকে পড়ল।
বারান্দায় বসে কফি খাচ্ছে সামির। সায়ানের সাথে মাত্রই কথা হয়েছে তার। চট্টগ্রাম যাওয়ার ব্যাপারটা শুনে সে রেগে গেছে নাকি বোঝা যাচ্ছে না। সায়ান রূপাকে নিয়ে সকালেই ঢাকায় আসবে। রূপা বাড়িতে প্রবেশের দুই-তিন ঘণ্টা পর সে প্রবেশ করবে। যাতে কেউ সন্দেহ না করে।
অরা খুব সাবধানে বারান্দায় এসে দাঁড়াল। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,” সায়ান ভাই রূপাকে কত ভালোবাসে তাই না?”
সামির আঁড়চোখে চাইল। অরা হেসে আরও যোগ করল,” ওদের জন্য আমাদের কিছু করা উচিৎ। বিয়ের পরেও আলাদা থাকছে। কি দুঃখজনক ব্যাপার, আহারে!”
সামির বলল,” এই দুঃখ আমার চেয়ে ভালো কে বুঝবে?”
অরা প্রসঙ্গ কাটাতে বলল,” জানেন রূপাকে শাড়ি পরিয়ে দিবে বলে সায়ান ভাই নিজে ইউটিউব দেখে শাড়ি পরানো শিখেছে। হাউ রোমান্টিক না?”
সামির কফির মগ রেখে গম্ভীর মুখে উঠে দাঁড়াল। অরা চমকাল তার অভিব্যক্তি দেখে। সে যে নিজেই সায়ানকে চট্টগ্রাম যাওয়ার বুদ্ধিটা দিয়েছিল সেটা কি কোনোভাবে বুঝে ফেলেছে সামির? ভয়ে শুকনো ঢোক গিলল অরা।
সামির তার দিকে এগিয়ে এলো। অরা দেয়ালের সাথে মিশে দাঁড়াল। খানিকটা অপ্রস্তুত কণ্ঠে শুধাল,” কি ব্যাপার?”
সামির ঝুঁকে প্রশ্ন করল,” আমি কি?”
” মানে?”
” আমি রোমান্টিক না?”
অরা ভ্যাবেচেকা খাওয়া কণ্ঠে বলল,” আপনি কি শাড়ি পরাতে জানেন?”
সামির এবার সোজা হয়ে বলল,” রোমান্টিক হওয়ার জন্য শাড়ি পরানো জানতে হবে কেন? শাড়ি খুলতে জানাই যথেষ্ট।”
অরা এই কথা শুনে হতবুদ্ধির মতো হয়ে গেল। ক্ষীণ কণ্ঠে স্বগতোক্তি করল,” অসভ্য।”
তারপর কোনমতে বারান্দা থেকে বের হয়ে এলো। একটু পর সামিরও বের হলো। ঘরে ঢুকেই লাইট নিভিয়ে দিল। অরা হুমকি দিয়ে বলল,” খবরদার, হাত দিবেন না।”
” কোথায় হাত দিবো না?”
” আমার শাড়ির ওপর।”
সামির অরার কোমর জড়িয়ে ধরে আদুরে কণ্ঠে বলল,”ঠিকাছে, তাহলে শাড়ির ভেতরে হাত দিবো।”
অরা ফিসফিসিয়ে বলল,” নির্লজ্জ!”
সামির বলল,” নির্লজ্জের লজ্জাবতি, কাছে আসো।”
___________________
রূপা বাড়ি আসার পর থেকে দিনগুলো খুব সুন্দর হয়ে উঠেছে। সুযোগ পেলেই দুই বান্ধবী গল্প করতে বসে যায়। তাদের হাসির শব্দে সারাক্ষণ মেতে থাকে ঘরটা। সামিয়াও রূপার আগমনে বেশ খুশি। রূপার প্রতিটি কথাতেই সে খুব মজা পেয়ে হাসে। একবার তো সামিয়া কথায় কথায় বলেই ফেলল,” তুমি এখানে সারাজীবনের জন্য থেকে যাও না রূপা।”
অরা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,” একটা উপায় আছে।”
” কি উপায়?” সামিয়া উৎফুল্ল হয়ে তাকাল। রূপা চোখ রাঙাতেই থেমে গেল অরা। বিব্রত গলায় বলল,” মজা করেছি। এমন কোনো উপায় নেই আসলে।”
” কিন্তু আমার মনে হয় আছে। রূপা, তুমিও ভাবির সাথে ভর্তি পরীক্ষা দাও। চান্স পেয়ে গেলে এখানেই থাকবে।”
অরা বলল,” বুদ্ধিটা কিন্তু মন্দ না। রূপা, তুই ট্রাই করে দেখতে পারিস।”
তারা ঠিক করল একসাথে পড়াশুনা শুরু করবে। কিন্তু একসাথে থাকলে পড়ার চেয়ে গল্পই বেশি হয়। আজ-কাল ফুলবানু রূপার এই বাড়িতে থাকার বিষয়টা সহ্য করতে পারছেন না। একদিন রূপা শুনল নীলিমা আর ফুলবানু আলাপ করছে। নিজের নাম শুনে রূপা তৎক্ষণাৎ থেমে দাঁড়ায়। ফুলবানু বলছেন,” ওই মাইয়া যাইব কবে নিলু?”
নীলিমা বললেন,” কে? রূপা?”
” হ। মেহমান বেশিদিন ঘরে রাখন তো ভালো না। তার উপর সে জুয়ান মাইয়া। ঘরে দুইডা জুয়ান পুলা আছে। বেগানা মাইয়া-পুরুষ একই বাড়িতে থাকা মানেই তো বিপদ।”
ব্যাপারটা নীলিমার মাথায় ঢুকে গেল। আসলেই তো, সামিরকে নিয়ে ভয় নেই কিন্তু সায়ান? আজ-কাল তিনি লক্ষ্য করেছেন সায়ান ঘরের বাইরে বের হয় না। আগে তো বেশিরভাগ সময় বাইরেই কাটাতো। এখন তাকে টেনেও ঘর থেকে বের করা যায় না। এর কারণটা কি রূপা?
তাছাড়া তিনি ফিরোজার কাছে কয়েকবার শুনেছেন সায়ান আর রূপা নাকি রাতে একসাথে ছাদে বসে আড্ডা দেয়। ব্যাপারটা প্রথমে তিনি খুব একটা পাত্তা দেননি। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে দেখতেই হবে।
নীলিমা সুযোগ বুঝে একদিন রাতে সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ছাদে উঠেছিলেন। দেখা গেল ঘটনা সত্যি। সায়ান আর রূপা দু’জনেই ছাদে, একসাথে বসে হাসছে। নীলিমাকে দেখে তাদের মুখের হাসি উবে গেল।
সায়ান কোনমতে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” ঘুম আসছিল না মা। তাই একটু ছাদে হাঁটতে এসেছিলাম।”
নীলিমা রূপার দিকে তাকালেন। রূপা আমতা-আমতা করে বলল,” আমারও ঘুম আসছে না। ছাদে এসে দেখলাম সায়ান ভাইও এখানে।”
নীলিমা এবার তাকালেন তাদের হাতবন্ধনের দিকে। ভয়ে দিশাহীন হয়ে হাত ছাড়তেই ভুলে গেছিল তারা। রূপা দ্রুত নিজের হাত গুটিয়ে নিল। সায়ান ইতস্তত করে বলল,” অন্ধকারে রূপার ভয় লাগছিল। তাই আমি বললাম হাত ধরে থাকি।”
কথাটা বলার পর সায়ান নিজেই বোকা হয়ে গেল৷ কি বলল সে এটা? নীলিমা কতক্ষণ তাদের দিকে চেয়ে থেকে অসাড় পায়ে নিচে নেমে এলেন। তাঁর মাথা ভনভন করছিল।
পরদিন সকালেই তিনি সামিরকে সমস্ত ঘটনা জানালেন। অরা বিছানায় এলোমেলো হয়ে ঘুমাচ্ছে তখন। নীলিমা বসলেন না। দাঁড়িয়েই কথা সেরে নিলেন। সামির সব শুনে অদ্ভুত কথা বলল,” ওদের বিয়ে দিয়ে দাও।”
নীলিমা বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে শুধালেন,” কি বললি তুই এটা? বিয়ে দিবো মানে? সায়ানের বয়স কত?”
” এই বছরই না চব্বিশ হলো? বিয়ের জন্য পারফেক্ট এইজ। ”
” তোর কি মাথা ঠিকাছে? ও তো কিছুই করে না। ভাইয়ের ঘাড়ে বসে খায়, বাপের কোলে ঘুমায়। এই ছেলেকে আমি বিয়ে দিবো কোন ভরসায়?”
সামির একটু চিন্তা করে বলল,” রূপার মামা-মামির কাছে একটা প্রস্তাব দিয়ে দেখতে পারো। অরার কাছে শুনেছিলাম ওরা রূপাকে দ্রুত বিয়ে দিতে চাইছে। পাত্র খুঁজছে।”
” বললেই কি প্রস্তাব দেওয়া যায়? ওরা জিজ্ঞেস করবে ছেলে কি করে? তখন আমি কি বলব? ছেলে বেকার!”
” সায়ান তো এমবিএ’র জন্য বিদেশ যাচ্ছেই আম্মু। বলে দিবে ছেলে কানাডা থাকে।”
নীলিমা হাসবেন নাকি কাঁদবেন বুঝে উঠতে পারলেন না। তবে তিনি সামিরের থেকে এমন উদ্ভট সমাধান আশা করেননি। চিন্তিত গলায় বললেন,” দেখি কি করা যায়। তোর বাবার সাথে আলাপ করি আগে।”
তিনি বের হয়ে যেতেই সামির অরার কাছে এসে বলল,” আর কত ঘুমাবে অরাবতী? ওঠো এবার।”
অরা ঘুমো ঘুমো কণ্ঠে কি যেন একটা বলল, ঠিক বোঝা গেল না। সামির বলল,” ওঠো না৷ তোমার সাথে জরুরী কথা আছে।”
নীলিমা আবার ঘরে ঢুকেছেন। অরা জড়ানো কণ্ঠে বলল,” ঘুম আসছে আমার।”
” এতো ঘুমালে পড়বে কখন? রাতে ঘুমিয়ো”
অরা রেগে বলল,” রাতে ঘুমানোর সুযোগ পাচ্ছি কই? আপনি কি আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছেন?”
“অরা স্টপ!”
” কেন স্টপ হবো? আপনি যা ইচ্ছা তাই করবেন আর আমি কিছু বলতে পারবো না? অন্তত দুইঘণ্টাও কি আপনি আমাকে শান্তিতে ঘুমাতে দেন? চোখের নিচে কালি পড়ে যাচ্ছে না ঘুমিয়ে। হাত-পায়ে ব্যথা হচ্ছে। ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি তবুও আপনার দয়া-মায়া হয় না…. ”
এইবার সামির না পারতে অরার মুখ চেপে ধরল। তারপর মুখ থেকে কাঁথাটা সরিয়ে দিল৷ অরা চোখ খুলে তাকাতেই দেখল তাদের ঘরে তৃতীয়জনের উপস্থিতি। নীলিমা বিব্রত মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। অস্বস্তিতে অরার চেহারা লাল হয়ে গেল।
চলবে