রুপালি মেঘের খামে পর্ব-২৮

0
613

#রুপালি_মেঘের_খামে
লিখা- Sidratul Muntaz

২৮.
সাবিরার পাঠানো গৃহ পরিষ্কার কর্মী খুব ভালো কাজ করছে এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু হাতের পাশাপাশি তার মুখও চলছে সমানতালে৷ কথায় কথায় সে নাক-মুখ কুঁচকে বলছে,” এতো ময়লা আমি জীবনেও কোনো ঘরে দেখি নাই।আপনেরা কয়দিন ধইরা ঘর মুছেন না? আমার ঘরের সবকিছু ফকফকা থাকে। ফোলোরে তাকাইলে চেহারা দেহন যায়। ছি, ছি, এইহানে এতো ধুলা জমছে ক্যা….কয়দিন মুছেন নাই?

অরা না পারতে একটা ধমক দিল,” ময়লা পরিষ্কারের জন্যই আপনাকে ডাকা হয়েছে। মুখ না চালিয়ে দ্রুত হাত চালান। সন্ধ্যার মধ্যে সব কাজ শেষ করতে না পারলে একটা টাকাও পাবেন না।”

বিকালের মধ্যে দারোয়ান বাজার নিয়ে উপস্থিত হলো। অরা ভেবেছিল সে একাই রাঁধবে। দ্রুত রান্না-বান্না শেষ করলে এই মহিলাকে দিয়ে রান্নাঘরটাও পরিষ্কার করিয়ে নেওয়া যাবে। নয়তো উনি চলে গেলে নিজেকেই পরিষ্কার করতে হবে।

পাশের ফ্ল্যাটের ছুটা বুয়া রাসেলের আম্মু সময়মতোই হাজির হলো। হাসি মুখে বলল,” আম্মা, আমি তোমারে সাহায্য করতাম আইছি। কি কি রানতে হইব কও খালি।”

অরা বলল,” রান্না আমি একাই করতে পারি খালা। আপনার আসার দরকার ছিল না।”

” তা কেমনে হয়? আপায় যে আমারে কয়া দিল।”

এদিকে রূপা ফোন দিতে দিতে অস্থির। তার থেকেও বেশি বিরক্ত করছে সায়ান। সিরিয়াস কোনো অপারেশনের সময়ও মানুষ এতো প্যানিক হয় না। সায়ান যতটা প্যানিক হচ্ছে! ভয় একটা সংক্রামক রোগ। তার এহেন অবস্থা দেখে এখন অরারও নর্ভাস লাগছে। একটা শঙ্কা কাজ করছে মনে। সে শেষমেষ সামিরকে ম্যানেজ করতে পারবে তো? উফ, এতো যন্ত্রণা হবে জানলে আগ বাড়িয়ে এমন দায়িত্ব নিতোই না।

সাবিরাও মিনিটে মিনিটে ফোন দিচ্ছেন ঘরের ছবি পাঠানোর জন্য। অরা কয়দিক সামলাবে? কোনমতে বেডরুম আর ড্রয়িংরুমের ছবি তুলে মাকে পাঠালো।

সাবিরা সাথে সাথে ফোন দিয়ে বললেন,” সোফার কভারগুলো পুরনো দেখাচ্ছে অরা। নতুন কভার আলমারিতে আছে। বের করে একটু লাগিয়েনে তো।”

অরা মিষ্টি কণ্ঠে বলল,” এতো ঝামেলা না করে নতুন সোফা অর্ডার দেই মা? কি বলো?”

” ফাজলামি করবি না একদম। রান্না-বান্নার কি খবর? মেন্যুতে কি কি রাখবি ঠিক করেছিস?”

“আস্তো খাসি বসিয়ে দিবো নাকি? নবাব আসছে বলে কথা!”

সাবিরা রেগে বললেন,” থাপ্পড় খাবি কিন্তু এবার।”

” আফসোস, মোবাইল ফোনে থাপ্পড় দেওয়ার সিস্টেম নেই। তাই তুমি চেষ্টা করলেও পারবে না।”

সন্ধ্যার মধ্যেই রাসেলের আম্মু সব রান্না শেষ করে ফেলেছে। এতো দ্রুত কিভাবে কাজ করে কে জানে? গৃহ পরিষ্কারের জন্য যে ভদ্রমহিলা এসেছিল সে রান্নাঘরটাও ঝকঝকে পরিষ্কার করে দিয়ে গেছে। অরা খুশি হয়ে তাদের বাড়তি টাকা বকশিশও দিয়ে দিল।

তখন সন্ধ্যা সাতটা বাজছে। অরা ভাবল একটু গোসল করে নিবে। সকালেও একবার গোসল করা হয়েছে। কিন্তু এতো কাজের পর আরেকবার গোসল না করলেই নয়। সে অনেক সময় নিয়ে বাথরুম থেকে বের হলো। তখন দেখল তার মোবাইলে মিসডকল এসে ভরে গেছে। এর মধ্যে প্রায় পাঁচটা মিসডকল সামিরের।

অরার বুক ছ্যাঁত করে উঠল। সামির কি চলে এসেছে? সে অবিলম্বে কলব্যাক করতেই সামিরের ক্লান্ত এবং বিষণ্ণ কণ্ঠ ভেসে এলো,” অরা।”

” কোথায় আপনি? চলে এসেছেন? বাস থেকে নেমেছেন?”অরা উদগ্রীব। সামির গম্ভীর গলায় বলল,” আসছি না আমি।”

অরা বিস্মিত এবং আহত হলো,” আসছেন না মানে?”

” হঠাৎ জরুরী একটা কাজ পড়ে গেছে এখানে।”

টুপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল অরার বামচোখ থেকে। প্রহত মন নিয়ে উচ্চারণ করল,”এই কথা আমাকে আগে জানালেন না কেন?”

” স্যরি, ভুলে গেছিলাম। যাইহোক এখন তো জানিয়েছি।”

অরার মন একদম খারাপ হয়ে গেল। সামিরকে সারপ্রাইজ দিবে বলে কতকিছু প্ল্যান করেছিল। ক্যান্ডেলাইট ডিনারের জন্য ডাইনিং-এ মোমবাতির ব্যবস্থা করেছিল। কেক বানিয়েছিল যত্ন করে। নিজেকেও সাজাবে বলে কমলা রঙের একটা স্নিগ্ধ শাড়ি বের করে করেছিল। অথচ এখন কি-না সামির বলছে আসবে না!সামান্য ‘স্যরি’তে মনের ব্যথা দূর হয় না বরং বাড়ে! এই সত্যি সে হঠাৎই ভালোভাবে উপলব্ধি করল।

অরা খুব মলিন কণ্ঠে বলল,” ঠিকাছে, সমস্যা নেই।”

” তুমি কি কাঁদছো অরা?”

অরা দ্রুত নিজের কণ্ঠ স্বাভাবিক করে বলল,” একদম না। কাঁদবো কেন?”

” তাহলে দরজাটা খোলো। দেখি আমি তোমাকে!”

আচম্বিতে কথাটার অর্থ বুঝল না অরা। সবিস্ময়ে বলল,” মানে?”

সামির হেসে কলিংবেল চাপল। বুকের মধ্যে অসহ্য সুখানুভূতি দাপিয়ে উঠল অরার। চোখের পানি উপচে পড়তে লাগল। দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখল সামির দাঁড়িয়ে আছে। একহাতে ফোন, অন্যহাতে লাগেজ। অরার দিকে চেয়ে ঠোঁট উঁচু করে ফ্লায়িং কিস দিল।

অরার মুখে হাসি চলে এলো। চোখের পানি ঝরঝর করছে চিবুক বেয়ে। উত্তেজনা সামলাতে না পেরে দুইহাতে জড়িয়ে ধরল সামিরকে।

সামির লাগেজ ছেড়ে, ফোন পকেটে রেখে নিজেও জড়িয়ে ধরল অরাকে। ফিসফিস করে বলল,” একটু দুষ্টমি করতে চেয়েছিলাম। এভাবে কেঁদে ফেলবে বুঝিনি।”

অরা সত্যিই কেঁদে ফেলেছিল। ভাবতে অবাক লাগছে তার। সামির বলল,” ভেতরে ঢুকি আগে, তারপর জড়িয়ে ধরো। এভাবে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে তো কেউ দেখে ফেলবে!”

অরা লজ্জা পেয়ে দ্রুত ছেড়ে দিল। মাথা নিচু করে বলল,” ভেতরে আসুন।”

পুরো বাড়ি নীরবতায় থমথম করছে। সামির জিজ্ঞেস করল,” বাসায় আর কেউ নেই?”

” মা আর বাবা বড়মামার বাসায় গেছে। রাতে হয়তো আসবে না।”

” আর সায়ান? সে কোথায়?”

অরা নির্বাক হয়ে গেল। কি বলবে এবার? এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে এটা মাথাতেই আসেনি।

সামিরের মনে আছে গতকাল সায়ান তার থেকে টাকা নিয়েছিল ট্যুরে যাবে বলে। সেই কথা ভেবেই প্রশ্ন করল,” তোমাকে এখানে একা রেখে সায়ান চলে গেছে নাকি?”

” সায়ান ভাইয়ের কোথাও যাওয়ার কথা ছিল?”

” ছিল তো। আমাকে বলেছিল ফ্রেন্ডদের নিয়ে ট্যুরে যাবে।”

” ও…আপনাকে টায়ার্ড মনে হচ্ছে। ফ্রেশ হোন। আমি ডিনার রেডি করছি।”

অরা প্রসঙ্গ কাটাতে চাইল। সামির সত্যিই ক্লান্ত। সারাদিন এতো জার্ণি করে শরীর ভার লাগছে। মনে হচ্ছে গোসলই একমাত্র সমাধান।

অরা দেখল সামিরের লাগেজটা অনেক ভারী।এতোবড় লাগেজে সে কি এনেছে? সে কি এখানে অনেক দিন থাকবে? লাগেজ খুলে হতভম্ব হয়ে গেল অরা।

ভেতরে অনেক ধরণের জিনিস। চকলেট,চিপস, বড় বড় জুসের বোতল,ফ্রোজেন স্ন্যাকসের প্যাকেট, মিঠাই থেকে আনা বিশাল বড় মিষ্টির বাক্স, শাড়ি,পাঞ্জাবি৷ বোঝাই যাচ্ছে সামির অনেক শপিং করেছে। শাড়ি আর পাঞ্জাবী নিশ্চয়ই বাবা-মায়ের জন্য।

অরা প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বের করে লাগেজ যেভাবে ছিল সেভাবেই রেখে দিল। এইসব উপহার সামির নিজের হাতে বাবা-মাকে দিলে তাঁরা বেশি খুশি হবেন।

বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। প্রচুর ঠান্ডা বাতাস। ষোলকলা পূর্ণ করতেই আচমকা হয়ে গেল লোডশেডিং। অরা যেন মনে মনে এটাই চাইছিল।

ক্যান্ডেলাইট ডিনারটা এবার জমবে ভালো। সে ডাইনিং টেবিলের মাঝখানে কেকটা রাখল। কেকের উপর চকলেট সিরাপ দিয়ে সুন্দর করে লেখা,” I Love You…”

চারপাশে মোমবাতি জ্বেলে দিল। বাতাসে যেন আগুন নিভতে না পারে তাই জানালা আটকে দিল। মেন্যুতে সব সামিরের পছন্দের খাবার। খাসির মাংস, চিংড়ি মাছ, হাঁসের ডিম আর ঝরঝরে সাদা পোলাও।

অরা খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছিল। সে কমলা রঙের শাড়িটা পরেছে। সুন্দরভাবে সেজেছে। মোমবাতি সবগুলো জ্বালানোর সময় সে স্বগতোক্তি করল,” মিস্টার সামির চৌধুরী, এসব দেখে আবার ভাববেন না যে আপনার ওয়াইফ খুব রোমান্টিক৷ সবই সে করছে নিজের বন্ধুত্বের খাতিরে।”

” তাই? এইসবের সাথে বন্ধুত্ব কিভাবে রিলেটেড শুনি?”

অরার আত্মা ছলাৎ করে উঠল। পেছনে তাকিয়ে দেখল সামির দাঁড়িয়ে আছে, তার হাতে তোয়ালে। সে গোসলে ছিল। কখন বাথরুম থেকে বের হয়ে পেছনে এসে দাঁড়ালো কে জানে? অরা একদম টের পায়নি। শব্দ ছাড়া একটা মানুষ কিভাবে হাঁটে? জ্বীন নাকি সে?

অরা মৃদু হাসার চেষ্টা করল। তৎক্ষণাৎ কি বলবে বুঝতে না পেরে দ্রুত চেয়ার টেনে দিয়ে বলল,” বসুন। দেখুন…আপনার জন্য কত কিছু রান্না করেছি। সব আপনার ফেভারিট আইটেম।”

সামির ভালোমতো অরার দিকে লক্ষ্য করল। অরা পোশাক বদলে ফেলেছে। এখন তার গায়ে কমলা রঙের সুন্দর একটা শাড়ি। ভীষণ মানাচ্ছে। চোখে-মুখে অপ্রস্তুত ভাব। দেখতে ভীষণ কিউট লাগছে।

সামির চেয়ারে বসল না। হাতের তোয়ালেটা সোফায় ছুঁড়ে অরার মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো। তার ধারালো দৃষ্টির তোপের মুখে পড়ে যেন আরও বেশি এলোমেলো হয়ে গেল অরা। সারাদিন ধরে যেসব কথা পেটের মধ্যে সাজিয়েছিল, সবই যেন প্যাঁচিয়ে যেতে লাগল। কণ্ঠ জড়িয়ে আসতে লাগল। কি অদ্ভুত!

কোনমতে আড়ষ্ট স্বরে বলল,” কেকও বানিয়েছি। দেখুন, সুন্দর হয়েছে?”

সামির কেকের দিকে তাকাল না। ঘোর মাখা দৃষ্টিতে অরার চিবুক স্পর্শ করে বলল,” খুব সুন্দর। ”

অচিরেই শীতল পরিবেশে উষ্ণতা নেমে এলো যেন। দম বন্ধ অনুভূতিতে ছটফট করে উঠল মন। সামিরের গা থেকে বয়েজ শ্যাম্পুর ঘ্রাণ আসছে। সে কি নিজের শ্যাম্পুও সাথে নিয়ে এসেছে? এই সুগন্ধ শুনলেই অরার মাথা ঝিমঝিম করে।

সামিরের হাত চিবুক থেকে সরে অরার ঠোঁট স্পর্শ করল। ঠিক তখনি অরা ঝট করে সরে গিয়ে বলল,” নিন, কেক কা-টুন।”

এই কথা বলেই ছু/রি বাড়িয়ে দিল। সামিরের সকল অনুভূতি বিকল হয়ে গেল প্রত্যাখ্যানের তীব্র আঘাতে। কেক কা-টা এতো জরুরী বিষয় কিভাবে হলো? সে ছু/রি হাতে নিল না।চেয়ারে বসল চুপচাপ। অরা বলল,” কি হলো? কেক কাটবেন না?”

সামির শান্ত গলায় বলল,” আমি খুব টায়ার্ড। এই মুহূর্তে ভালো লাগছে না।”

” ঠিকাছে, তাহলে আগে ডিনার করুন। কেক তো পরেও কা-টা যাবে। দেখুন… আপনার সব পছন্দের আইটেম করেছি।”

অরা হাসছে। কিন্তু সামির হাসল না। আস্তে আস্তে খাবারের ঢাকনা সরাতে লাগল অরা। পোলাওয়ের গন্ধে সামিরের কেমন বমি আসছিল। এতো ভারী খাবার দেখতেও অস্বস্তি লাগছে৷ সে অরার হাত ধরে তাকে থামিয়ে বলল,” আমি কিছু খাবো না অরা। এগুলো নিয়ে যাও প্লিজ। ”

” কেন? খাবেন না কেন?”

” ইচ্ছে করছে না। ক্ষিদে নেই।”

এই কথা বলে সে টেবিল থেকে উঠে শোবার ঘরের দিকে গেল। অরা হতভম্ব। টেবিলটা কত সুন্দর করে সাজিয়েছিল। অথচ সামির কিছুই খাবে না? একটু আগের ঘটনার জন্য কি সে রেগে গেছে? অরার ফোন আবার ভাইব্রেট হচ্ছে। রূপা কল দিয়েছে।

কিচেনে এসে অরা ফোনটা রিসিভ করল,” হ্যাঁ রূপা, বল।”

” কি অবস্থা অরা? আমরা টেনশনে পাগল হয়ে যাচ্ছি৷ তুই বলেছিস সব?”

” মাত্র কিছুক্ষণ হলো উনি এসেছে। এখনি কি বলতে শুরু করব? একটু সময় দে। এতো সেন্সিটিভ একটা বিষয় বুঝে-শুনে বলতে হবে। যখন উনার মুড ভালো থাকবে।”

” এখন কি মুড খারাপ?”

অরা হতাশ গলায় বলল,” মনে তো হচ্ছে তাই। আমি এতো কিছু রান্না করলাম। কিন্তু সে কিছুই খেল না। কথা-বার্তাও কেমন গম্ভীর। মনে হচ্ছে রেগে আছে।”

” হঠাৎ রাগল কেন?”

” আমি কি জানি রাগল কেন? আমি কি তার মনের ভেতর ঢুকেছি?”

রূপা বলল,” তোকে অবশ্যই তার মনের ভেতর ঢুকতে হবে। নাহলে তুই কনভিন্স করবি কি করে?”

” আমার ভয় লাগছে রূপা। মনে হচ্ছে এই কাজ আমার দ্বারা সম্ভব না।”

” আমরা দু’টো মানুষ তোর উপর ভরসা করে সকাল থেকে বসে আছি। আর এখন তুই এই কথা বলছিস? আমার ভীতুর ডিম তো জীবনেও বলতে পারবে না সেটা আমি জানি। এখন তুই আমার একমাত্র আশা-ভরসা। প্লিজ অরা, কিছু কর। আমাদের দশবছরের বন্ধুত্বের দোহাই।”

অরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,” কি করব আমি? যদি উনি না মানে?”

” অবশ্যই মানবে। তুই চাইলেই মানাতে পারিস।”

” কিভাবে?”

” কিভাবে সেটা নিজেই ভেবে দ্যাখ। আর কতদিন বাচ্চা থাকবি? বি আ রিয়েল উইমেন নাউ।”

অরা ফোন রেখে খুব চিন্তায় পড়ে গেল। তারপর যত্ন করে এক কাপ কফি বানাল সামিরের জন্য। পানি পড়ার মতো কফি পড়া বলে কি কিছু আছে? তাহলে সামিরকে কফি খাইয়েই বশ করে ফেলা যেতো৷ ধূর, কি অদ্ভুত চিন্তা করছে সে।

সামির বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। অরা পেছনে এসে বলল,” আপনার জন্য কফি এনেছি। খেলে ভালো লাগবে।”

সামির নির্বিকার ভঙ্গিতে কফির মগ হাতে নিল। তারপর অরাকে অবাক করে দিয়ে মগটা কাত করে সমস্ত কফি ঢেলে দিল জানালার বাইরে।

তার এহেন কান্ডে অরা নির্বাকচিত্তে তাকিয়ে রইল, ভ্রু কুঁচকে। সামির কিছুই যেন হয়নি এমন ভাব করে খালি মগটা অরাকে ফিরিয়ে দিল। অরা নিভু কণ্ঠে প্রশ্ন করল,” আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন?”

সামির তাকিয়ে বলল,” এতো বেহুদা মনে হয় আমাকে? তোমার উপর রাগ করার চেয়ে ভালো আমি একটা গাছের উপর রাগ করি।”

অরা মগ হাতে নত মাথায় দাঁড়িয়ে রইল। সামির বারান্দা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এমন সময় রূপার কথাটা স্মরণ হলো,”তুই চাইলেই পারিস। বি আ রিয়েল উইমেন নাউ। ”

অরা ডাকল,” শুনুন। সামির থামল৷ অরা পেছন ফিরে বলল,” আপনার সাথে আমার জরুরী কথা আছে।”

” বলো।”

সে বড় করে নিঃশ্বাস নিল কয়েকবার। তারপর সামিরের সামনে এসে হাত বাড়িয়ে বলল,” আগে আমাকে উপরে তুলুন।”

” মানে?”

” আমি আপনার সমান হতে চাই।”

সামির কিছু বুঝতে না পেরে অরাকে কোমর ধরে উপরে তুলল। অরা তার নাকে, কপালে চুমু দিয়ে বলল,” আই লাভ ইউ।”

সামির কিংকর্তব্যবিমুঢ়। বিয়ের পর এই প্রথমবার অরার মুখে ভালোবাসার কথা শুনে সে পুরোপুরি নির্বাক। হাঁ করে কয়েক মুহূর্ত চেয়ে থেকে বলল,” এটাই তোমার জরুরী কথা ছিল?”

অরা লাজুক মুখে বলল,” হ্যাঁ। এটাই।”

সামির অরাকে ঘুরিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল। তারপর রুদ্ধশ্বাসে বলল,”তাহলে এবার আমার জরুরী কথা শোনো।”

অরার নিশ্বাস ভারী হয়ে উঠল। গাঢ় স্পর্শে সামির চুমু দিল তার ঠোঁটে। বাইরে ঝমঝম বৃষ্টির শব্দ। বজ্রপাত হচ্ছে। শীতল বাতাসে উষ্ণতার পরশ। এ যেন কোনো ঐশ্বরিক মুহূর্ত।

সামির ছেড়ে দিতেই গ্রিল ধরে দাঁড়াল অরা। তার সম্পূর্ণ শরীর তিরতির করে কাঁপছিল। বৃষ্টির ফোঁটা এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে দু’জনকে। সামির তার কোমর জড়িয়ে ধরতেই অরা শিউরে উঠল। সামির হালকা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,” ঠান্ডা লাগছে?”

অরা দুইপাশে মাথা নাড়ল। সামির বলল,” তাহলে? ভয় পাচ্ছো?”

অরা এবার মাথা উপর-নিচ করল। সামির তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,” আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো, সব ভয় কেটে যাবে।”

অরা অচেতনের মতো নিজের শরীরের ভার সামিরের উপর ছেড়ে দিল। নরম আদরে সামির আগলে নিল তাকে।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে