#রুপালি_মেঘের_খামে
লিখা- Sidratul Muntaz
২৭.
আজকের আকাশ একটু বেশিই মেঘলাটে। বৃষ্টি হচ্ছে না তবুও। চারদিকে শনশন বাতাস। এই সকাল বেলাতেও সন্ধ্যা সন্ধ্যা ভাব। দীর্ঘক্ষণ আকাশের রুপালি আঁধারে তাকিয়ে থাকার কারণেই হয়তো সামিরের মনেও আঁধারের বিস্তার ঘটতে শুরু হয়েছে।
ক্ষণে ক্ষণেই মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে। একই ভাবে সামিরের বুকের ভেতরেও ঢিপঢিপ করছে শঙ্কা। ইচ্ছে করছে রুপালি মেঘের খামে একবাক্স অনুভূতি ভরা চিঠি লিখতে। যেখানে সামির ঢেলে দিবে তার সমস্ত মনখারাপের গল্প!
রাতে খুব ভয়ংকর একটা দুঃস্বপ্ন দেখে ফজরের আগেই তার ঘুম ভেঙে যায়। নামায আদায় করে বিছানায় অনেকক্ষণ গড়াগড়ির পরেও আর ঘুম আসেনি। সকালে রান্নাঘরে কফি বানাতে গিয়ে সে দেখল সুমন সাহেব কফি বানাচ্ছেন।
তাঁরও সামিরের মতো এক অবস্থা। ফজরের পর আর ঘুম হয়নি। তিনি সামিরকে দেখে হাস্যমুখে বললেন,” বুঝলি বাবা, এই বয়সে এইসব নরমাল। প্রায়ই এমন হয়। যেদিন ঘুম আসে না সেদিন অযথা শুয়ে না থেকে রান্নাঘরে চলে আসি। এই কয়েক দিনে কফি বানানোটা শিখে গেছি। আস্তে আস্তে রুটিটাও বানানো শিখে যাবো। তারপর একদিন তোর মাকে বিরাট সারপ্রাইজ দিবো। হাহাহা!”
সামিরও বাবার সাথে হেসে বলল,” তুমি চাইলে সারপ্রাইজটা আমরা আজকেই দিতে পারি বাবা।”
সকালে বাবা- ছেলে মিলে একসাথে নাস্তা বানালো। নীলিমা ঘুম থেকে উঠে এই কান্ড দেখে অবাক হয়ে গেলেন। আজকে একটা ইম্পোর্ট্যান্ট টিচার্স মিটিং ছিল বলেই সামির ভার্সিটি এসেছে। কিন্তু তার মন ভালো লাগছে না। স্বপ্নটা দেখার পর থেকে একটা অস্থির ভাব তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
সামির মিটিং থেকে বের হয়েই ঠিক করল চট্টগ্রাম যাবে। আশ্চর্যজনকভাবে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই তার মন শান্ত হয়ে গেল। সবকিছু ভালো লাগা শুরু হলো।
অরারা মাত্র কাজী অফিস থেকে বের হয়েছে। সায়ানের মুখ থেকে হাসি সরছেই না। রূপাও খুব উৎফুল্ল। কিন্তু অরা আর শারমিন অজানা আতঙ্কে শিটিয়ে আছে। যাদেরকে নিয়ে এতো ভয় তারা হাসি-খুশি সেলফি তুলছে। হাত ধরে হাঁটছে। সায়ান কাজী অফিসের সামনে থেকে একজোড়া ডালিয়া ফুল কিনে রূপার হাতে দিয়েছে।
হঠাৎ দেখা গেল রূপা ফুল ছুঁড়ে ফেলে সায়ানের পিঠে ধুপধাপ কিল দিতে শুরু করল। অরা কাছে এসে বলল,” পাঁচমিনিটও হয়নি তোদের বিয়ের। আর তুই এখনি ওকে মারতে শুরু করেছিস?”
রূপা তীক্ষ্ণ মেজাজে বলল,” এই বিয়ে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।”
শারমিন বলল,” এটা বুঝতে অন্তত মানুষের পাঁচমাস লাগে। তুই মাত্র পাঁচমিনিটেই বুঝে গেলি?”
অরা হেসে ফেলল। রূপা রেগে বলল,” হাসবি না তোরা। এই গাঁধা এখন কি বলছে জানিস?আমাকে বাসায় ফিরে যেতে।”
অরা ভ্রু কুঁচকে বলল,” তো তুই কি বাসায় যেতে চাস না?”
” অবশ্যই না। বাসায়ই যদি যেতে হয় তাহলে আমি বিয়ে করলাম কেন?”
সায়ান বলল,” আমার কথা একটু বোঝার চেষ্টা করো রূপা। তোমাকে আমি আমার বাসায় এখন নিতে পারব না৷ আগে আমি ঢাকায় যাই৷ একটা চাকরি যোগাড় করি। তারপর আস্তে-ধীরে সবাইকে ব্যাপারটা জানাবো। এখন তো আমার নিজেরই কোনো ইনকাম সোর্স নেই। আমি তোমার দায়িত্ব কিভাবে নিবো?”
” তাহলে বিয়ে করেছো কেন? আমি বলেছিলাম বিয়ে করতে?”
রূপা সায়ানকে আবার একটা ঘুঁষি দিতে নিচ্ছিল। শারমিন আর অরা তাকে থামাল। অরা তাদের মাঝখানে বেরিকেডের মতো দাঁড়িয়ে বলল,” আচ্ছা, তোদের প্রবলেমটা কি? রূপা তুই কি চাস আমাকে বল। সায়ান ভাই তো ঠিক কথাই বলেছে। সে বাসায় ম্যানেজ না করে তোকে কিভাবে নিয়ে যাবে?”
” তাহলে সে আমাকে বিয়ে কেন করল? আমি ওর জন্য বাসা থেকে বের হয়ে এসেছি না? ও এখন বলছে আমাকে আবার ফিরে যেতে। আমি আমার বাসায় গিয়ে কি বলব?”
” কাউকে কিছু বলতে হবে না। তুই কিছুদিন অপেক্ষা কর।”
রূপা ক্রোধ নিয়ে বলল,” আমার মামা দশদিন পর বিদেশ চলে যাবে। এর আগেই আমাকে বিয়ে দিয়ে যাবে। আমার হাতে সময় নেই। ও যে এতো ভীতু এটা জানলে আমি ওকে বিয়েই করতাম না! রাতে তো সিংহের মতো এসে বলছিল বিয়ে করব। এখন বিয়ের পরই ভেজা বিড়াল হয়ে গেল?”
সায়ান হতাশ কণ্ঠে বলল,” আমাকে দুইদিন সময় দাও রূপা। এটলিস্ট দুইদিন।”
“চুপ, তুমি আর একটা কথাও বলবে না৷ কাওয়ার্ড! তোমাকে আমি দুইটা থাপ্পড় দিবো।”
অরা খেয়াল করল তার ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে। সামির ফোন করেছে। সাথে সাথেই অরার ঠোঁটে এক চিলতে আদুরে হাসি চলে এলো। ধীরপায়ে ওখান থেকে সরে এলো সে। নির্জনে এসে ফোন রিসিভ করল,” হ্যালো।”
” গুড মর্ণিং।”
অরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। মনে হচ্ছে সামিরের রাগ পড়ে গেছে। সে স্বাভাবিক স্বরে কথা বলছে। অরা বলল,” গুড মর্ণিং। আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। আসলেই আপনি ফোন করেছেন? নাকি স্বপ্ন!”
সামির হাসল, শান্ত গলায় বলল,” রূপার কি খবর?”
” ভালো। শুধু শুধুই প্যানিক হয়েছিলাম। ওর কিছুই হয়নি।”
” তুমি আমাকে ব্যাপারটা বললেই পারতে। তাহলে আমিই তোমাকে নিয়ে যেতাম। সায়ানকে নেওয়ার দরকার হতো না।”
অরা মনে মনে বলল,” এজন্যই তো বলিনি।” মুখে বলল,” কি করছেন এখন?”
” ভার্সিটি থেকে বের হলাম। বাসায় যাচ্ছি।”
” এতো দ্রুত?”
” আজকে ক্লাস ছিল না। তুমি কি করছো?”
অরা হতাশ গলায় বলল,” টম এন্ড জেরির ঝগড়া দেখছি।”
সামির বিস্মিত হয়ে শুধাল,” তুমি এখনও টম এন্ড জেরি দেখো নাকি?”
অরা হেসে ফেলল। তারপর বলল,”কাল তো খুব রেগে ছিলেন। হঠাৎ নিজে থেকেই ফোন করলেন যে? আমাকে মিস করছেন নাকি?”
” হয়তো।”
অরা শব্দ করে হাসল। সামির কিছুটা গম্ভীর হয়ে বলল,” আমার রাগটা কিন্তু অযৌক্তিক ছিল না। আমি বাড়ি আসা পর্যন্ত তোমার অপেক্ষা করা উচিৎ ছিল। তা না করে তুমি সায়ানকে নিয়ে আগেই বেরিয়ে গেছো। এটা কি ঠিক হয়েছে?”
অরা চুপ করে রইল। মনে মনে বলল,” কেন আপনাকে না জানিয়ে সায়ান ভাইকে নিয়ে এসেছি সেটা খুব শীঘ্রই বুঝবেন।”
সামির বিভ্রান্তি জিজ্ঞেস করল,” কি হচ্ছে অরা? সামথিং ইজ ফিসি!”
” কি হবে? কিছুই না! সায়ান ভাইয়া ফ্রী ছিল। তাই তাকে এনেছি৷ আপনাকে বিরক্ত করতে চাইনি।”
” তোমার আবদার আমার কাছে কখনোই বিরক্তিকর না অরা। যাইহোক, কবে ফিরবে?”
” সেটা এখনও বলতে পারছি না।”
” বলো আর না বলো। আমি আজকে বারোটায় বাসে উঠছি। ”
অরা উত্তেজনা মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,” মানে? আপনি চট্টগ্রাম আসছেন?”
” হুম।”
অরার আনন্দও হলো আবার ভয়ও লাগল। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে একটু দমে যাওয়া কণ্ঠে বলল,” ঠিকাছে আসুন।”
” তুমি খুশি হওনি?”
” অনেক খুশি হয়েছি আমি। আপনি সাবধানে আসবেন। এখানে আসার পর আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”
সামির ভয়জনিত কণ্ঠে বলল,” না প্লিজ, কালকের সারপ্রাইজটাই এখনও হজম হয়নি। আমি আর কোনো সারপ্রাইজ চাই না তোমার থেকে। ”
অরা ফিসফিস করে বলল,” না চাইলেও আপনাকে সারপ্রাইজটা নিতেই হবে। কিছু করার নেই।”
রূপা আর সায়ানের ঝগড়া জঘন্য রূপ ধারণ করেছে। রূপা খেঁকিয়ে বলছে,” তুমি এখনি আমার সামনে বাড়িতে ফোন করবে। নাহলে আমাকে ডিভোর্স দিবে।”
” কিন্তু এটা কিভাবে হয়? এতোবড় একটা কথা আমি ফোনে বললে তো মা স্ট্রোক করবে।”
” বলার ক্ষমতা নেই অথচ বিয়ে করে বসে আছে।নির্লজ্জ! ”
অরা কাছে গিয়ে বলল,” থাম ভাই, থাম। কাম ডাউন৷ আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে।”
সবাই কৌতুহল নিয়ে তাকাল। অরা মুচকি হেসে বলল,” আজকে বারোটায় তোমার ভাইয়া বাসে উঠছে সায়ান ভাই। এখানে আসবে।”
” হ্যাঁ? ভাইয়া আসছে? ও মাই গড! তুমি কি সব বলে দিয়েছো?”
সায়ানের ভয় পাওয়া দেখে রূপা পাথর কুঁড়িয়ে নিল মারার জন্য। অরা দ্রুত হাতে তাকে থামিয়ে বলল,” আরে কি করছিস? মাথা ফেটে যাবে তো।”
” ওর মাথা ফাটানোই উচিৎ। ভাইয়ের নাম শুনেই কাঁপা-কাঁপি শুরু। ও একটা ডাস্টার্ড! ”
অরা বলল,” উফ, আমার কথা শোন। আমি এখনও উনাকে কিছু বলিনি। উনি এলে ঠান্ডা মাথায় সব বলা যাবে। আমি নিজেই না হয় বলব। আমাদের বিয়েটাও তো খুব অদ্ভুতভাবে হয়েছিল৷ তাও সবাই মেনে নিয়েছে। তোদেরটাও মানবে। চিন্তা করিস না।”
রূপা চোখ সরু করে বলল,” তুই কেন কথা বলবি? ওর ভাইয়ের সাথে ও কথা বলবে। ও আমাকে বিয়ে করেছে, তুই করিসনি।”
সায়ান গর্জে উঠল,” অসম্ভব। আমি ভাইয়ার সাথে এই ব্যাপারে জীবনেও কথা বলব না। ভাইয়া আমাকে চড় মেরে দাঁত ফেলে দিবে।”
” তার আগে আমিই তোমার সব দাঁত ফেলে দিবো।”
অরা ঠান্ডা মাথায় বলল,” ঠিকাছে, আমিই কথা বলব।”
সায়ান রূপার দিকে চেয়ে অনুরোধের স্বরে বলল,” বোঝার চেষ্টা করো রূপা। ভাবি কথা বললে ব্যাপারটা আরও ইজি হবে। ভাইয়া ভাবির কথা শুনবে। আমার কথা শুনবে না।”
রূপা চেঁচিয়ে বলল,” আসল কথা হচ্ছে তুমি তোমার ভাইকে যমের মতো ভয় পাও। তার সামনে দাঁড়িয়ে বিয়ের কথা বলার সাহসও তোমার নেই।”
অরা বলল,” ঠিকাছে। তাহলে প্রবলেম সোলভড। রূপা, তুই আর সায়ান ভাই এখন আমার বাসায় যাচ্ছিস।”
সায়ান কাঁপা কণ্ঠে বলল,” আমি যাবো না প্লিজ, তুমি যখন ভাইয়াকে এসব বলবে আমি তখন সেখানে থাকতেও চাই না।”
রূপা গরম চোখে তাকাল। ভর্ৎসনার স্বরে বলল,” ছি, এই কলিজা নিয়ে আমাকে বিয়ে করেছো?”
অরা রূপার কাঁধে হাত রেখে বলল,” কাম ডাউন মাই ডিয়ার।”
সায়ান আশান্বিত দৃষ্টিতে অরার দিকে তাকাল। একটা ঢোক গিলে বলল,” ভাবি, প্লিজ সবকিছু ম্যানেজ করে দাও। আমি শিউর ভাইয়া তোমার কথা শুনবে। আর ভাইয়া যদি একবার মেনে যায় তাহলে বাসাতে ম্যানেজ করা চুটকির ব্যাপার। বাবা,মা, দাদী সবাই ভাইয়ার কথা শুনবে।”
অরা ভরসা মেশানো কণ্ঠে বলল,” আচ্ছা চিন্তা কোর না। কিন্তু তুমি আমার সাথে না গেলে কোথায় যাবে? রূপা তো আর ওর বাসায় ফিরছে না।”
সায়ান একটু ভেবে বলল,” আমি বরং রূপাকে নিয়ে একটা রিসোর্টে চলে যাই।”
এই কথা শুনে রূপা অগ্নিমূর্তির মতো তেড়ে এলো,” কি বললে তুমি?”
সায়ান অসহায়ের মতো বলল,” কেন যাবে না?”
” তোমার সাহস কিভাবে হলো আমাকে এই প্রশ্ন করার? ”
শারমিন বলল,” তোমরা চাইলে দুইদিনের জন্য আমার বাসায় থাকতে পারো। কেউ নেই সেখানে।”
অরা হেসে বলল,” দারুণ, তাহলে ব্যবস্থা হয়ে গেল। তোমাদের শারমিনের বাসায় ড্রপ করে আমি আমার বাসায় চলে যাব।”
সায়ান স্বস্তিভরা কণ্ঠে বলল,” হ্যাঁ। সেটাই ভালো হবে। ”
রূপা বলল,” কিন্তু আমি আমার বাসায় কি বলব?”
” মামির সাথে আমি কথা বলে নিবো। বলব তুই আমার সাথে আমার বাসায় আছিস। ইজি!”
অরা খুব সহজেই সমাধান করে দিল। সায়ান রূপার দিকে চেয়ে হাসল। রূপা কটমট করে বলল,” হেসে লাভ নেই। বিয়েটা আমি ততক্ষণ মানছি না যতক্ষণ না তুমি বাসায় সব জানাচ্ছো। আমাকে টাচ করলেও খু-ন করে ফেলব।”
সায়ান বলল,” ওকে, কুল।”
___________________
অরাদের বাড়ি পার্বত্য চট্টগ্রামের রোজ ভ্যালিতে। মোটামুটি উচ্চমানের একটা এপার্টমেন্ট। রূপার মামার বাড়িও খুলশীতেই। তবে সেটা ভাড়ার বাড়ি। চাকরির সুবাদে তার মামার পরিবার এতোদিন খুলশীতে থাকতো। মীরসরাইতে তাদের নিজস্ব বাড়ি। বিদেশ যাচ্ছেন বলে তিনি ভাড়ার বাড়ি ছেড়ে নিজের বাড়িতে শিফট হয়েছেন কিছুমাস আগে।
অরা তার ফ্ল্যাটে এসে অবাক। দরজায় এত্তোবড় তালা ঝুলছে। মাকে সারপ্রাইজ দিবে বলে সে আগে থেকে কিছুই জানায়নি। কিন্তু এখন বাড়ি এসে নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেল। মা কোথায়?
অরা দরজায় দাঁড়িয়েই সাবিরা বেগমকে ফোন করল। তিনি আফসোস করে বললেন,” বোকা মেয়ে, তুই আমাকে আগে জানাবি না?”
” সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম মা। আমাকে হঠাৎ দেখে তুমি কেমন চমকাও সেটা দেখার খুব ইচ্ছে ছিল।”
” সবসময় সারপ্রাইজ দিতে হয় না। এবার কি হবে বলতো? আচ্ছা পরশুই না তোদের বাড়িতে আতিফকে নিয়ে এতোবড় ঝামেলা হলো? আজকে আবার তুই এখানে?”
” তোমাদের দেখতে এসেছি। এজন্য কি অনুমতি পত্র লাগবে?”
” আহা, আমি সেটা বলিনি। উল্টা বুঝিস কেন? আমি আর তোর বাবা এসেছি তোর বড়মামার বাসায়। বড়ভাইয়ের শরীর ভালো নেই। কবে আসবো তারও ঠিক নেই। এখানে যা ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে! তোরা রাতে একা কিভাবে থাকবি সেটা নিয়ে ভাবছি আমি। তোর সঙ্গে কে এসেছে?”
অরা মুখ ভোঁতা করে বলল,” এখনও কেউ আসেনি। কিন্তু তোমার জামাই আসছে। ”
” তোর সাথে জামাইও আছে? হায়হায় কি সর্বনাশ!” সাবিরা অস্থির হয়ে উঠলেন। যেন মহাবিপদে পড়ে গেছেন।
অরা বলল,” উনি এখনও আসেনি। আজকে দুপুরে বাসে উঠবে। রাতের মধ্যে হয়তো চলে আসবে।”
” তোরা এমন আলাদা আলাদা আসছিস কেন? ঝগড়া-টগড়া করেছিস নাকি? ”
” তেমন কিছু না।”
“কি যে হচ্ছে! আমাকে তো মহা চিন্তায় ফেলে দিলি। ঠিকাছে, আমরা চেষ্টা করব আজকের মধ্যেই ফিরে আসতে। যদি আসতে না পারি তুই সামলে নিতে পারবি তো?”
” কি সামলাবো?”
” ঘর-দোর গুছাতে হবে না? আর রান্না-বান্না? বিয়ের পর জামাই প্রথমবার বাড়ি আসছে!”
“ধ্যাত, দাঁড়িয়ে থেকে আমার পা ব্যথা করছে। ঘরে কিভাবে ঢুকব সেই কথা বলো।”
” নিচ থেকে দারোয়ানকে ডেকে তালা ভেঙে ঘরে ঢোক। এটাও কি আমাকে বলে দিতে হবে? ঘটে বুদ্ধি নেই?”
অরা ঘরে ঢুকে দেখল আসলেই জঘন্য অবস্থা। ঘর গুছাতে অনেক সময় লাগবে। তবে সে এখন ভীষণ ক্লান্ত।গরম পানিতে গোসল সেড়ে গায়ে কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে পড়ল। ঠান্ডা আবহাওয়ায় একটু আরামের ঘুম! কিন্তু শান্তি আর কোথায়? একটু পরেই সাবিরা আবার ফোন করলেন।
” অরা।”
” বলো মা।”
” জামাই কি গাড়িতে উঠেছে?”
” জানি না।”
” আসবে তো শিউর?”
” বলল তো আসবে।”
” তাহলে এক কাজ কর। আমি একটা মহিলা পাঠাচ্ছি। সে ঘর পরিষ্কার করে দিয়ে যাবে। আর দারোয়ানকে বলেছি বাজার করে আনতে। তুই পাশের ফ্ল্যাটের রাসেলের আম্মুকে ডেকে এনে রান্না শুরু কর। উনি তোকে রান্নায় হেল্প করবে। আমি বলে দিচ্ছি।”
অরা খুব বিরক্তি নিয়ে বলল,” মা, তুমি কি শুরু করলে? এমন ভাব করছো যেন রাজা-বাদশাহ আসছে তোমার ঘরে।”
” আমার মেয়ের জামাই রাজা-বাদশাহর থেকে কম কি! যা বলছি তাই কর। ঘর কেমন সাজানো হয়েছে আমাকে ছবি পাঠাবি। রান্না করেও ছবি পাঠাবি।”
এর মাঝে কলিংবেল বেজে উঠল। গৃহ পরিষ্কার কর্মী চলে এসেছে নিশ্চয়ই। অরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, সাধের ঘুম পায়ে ঠেলে বিছানা ছেড়ে উঠল।
চলবে