#রুপালি_মেঘের_খামে
লিখা- Sidratul Muntaz
২৬.
পাশাপাশি সিট পাওয়া যায়নি বলে অরা আর সায়ানকে আলাদা বসতে হয়েছে। সায়ানের সিট একদম পেছনে। অরাও তার সঙ্গে পেছনে যেতে চেয়েছিল। সায়ান বলল,” তুমি এখানেই থাকো ভাবি। পেছনে অনেক ঝাঁকি লাগবে। দম বের হয়ে যাবে। ”
বাস ছেড়েছে চল্লিশ মিনিট হবে। হঠাৎ সায়ান পেছন থেকে উঠে এলো। নিজের ফোন অরার কাছে বাড়িয়ে বলল,” ভাইয়া কথা বলতে চায়। ”
অরা হালকা তটস্থ হলো। এতোক্ষণে নিশ্চয়ই সামির সব জেনে গেছে। সে কি রাগ করবে?অনিচ্ছায় অরা ফোন হাতে নিয়ে বলল,” হ্যালো।”
সামির প্রচন্ড ক্ষোভ নিয়ে জিজ্ঞেস করল,” ফোন বন্ধ কেন তোমার?”
” চার্জ ছিল না হয়তো।”
” হঠাৎ কি এমন জরুরী দরকার পড়ল যে আমাকে না জানিয়ে চলে যেতে হলো?”
অরা আলতো স্বরে প্রশ্ন করল,” অন্তি আপু কিছু বলেনি আপনাকে?”
সামিরের মাথা আরও গরম হলো এবার। অন্তি তার সাথে কথা বলতে চেয়েছিল। কিন্তু সে শোনেনি। রূঢ় বাচ্যে বলল,” তোমার কথা অন্তি কেন বলবে? তোমার কি মুখ নেই? তুমি নিজে বলতে পারছো না?”
” আপনি অন্তি আপুর কথাটা একটু শুনুন প্লিজ।”
” আমি কারো কথা শুনব না। তুমি আমাকে এক্সপ্লেইন করবে।”
অরা একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করল। নরম গলায় বলল,”আমি একটা সমস্যায় পড়েছি। কিন্তু সেটা এখন বলা সম্ভব না।”
” অরা তুমি কি চাও? কেন করছো এসব? যদি চট্টগ্রাম যাওয়া এতোই ইমারজেন্সি হয় তাহলে আমাকে বললেই হতো। আমি নিয়ে যেতাম তোমাকে!”
” আপনি তো বিজি। আপনাকে কিভাবে বলব?”
” আমি কি কখনও তোমাকে ব্যস্ততা দেখিয়েছি? একবার জিজ্ঞেস করে দেখতে পারতে।”
” আসলে তখন আমার মাথা কাজ করছিল না। স্যরি।”
সামির ক্ষীপ্ত হয়ে কিড়মিড়িয়ে বলল,” তোমার মাথা কখন ঠিকভাবে কাজ করে সেটা কি তুমি নিজেও জানো? এখন পর্যন্ত কোন কাজটা তুমি ঠিক করেছো বলোতো?”
অরা সায়ানকে ফোন ফিরিয়ে দিয়ে বলল,” তোমার সাথে কথা বলবে।”
সায়ান ‘হ্যালো’ বলতেই সামির ধমকে উঠল,” তুই কেন? তোর ভাবিকে দে।”
” ভাবিই তো ফোনটা আমাকে দিয়ে দিল।”
সামিরের রাগের মাত্রা চূড়ান্ত রূপ ধারণ করল এবার। বিরক্ত গলায় বলল,” ঠিকাছে, রাখছি।”সে মনে মনে ঠিক করল অরাকে আর একবারও ফোন করবে না।
রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল৷ কুমিল্লার হোটেল পর্যন্ত পৌঁছাতেই সন্ধ্যা হয়ে এলো। অরা একটু বাথরুমে গিয়েছিল। ততক্ষণে সায়ান খাবার অর্ডার দিয়ে ফেলেছে। অরা ভয় নিয়ে জিজ্ঞেস করল,” তোমার ভাইয়া কি আর ফোন দিয়েছিল সায়ান ভাই?”
” না৷ ভাইয়া আর ফোন দেয়নি। তবে মা ফোন দিয়েছিল। ভাইয়া ঠান্ডা হয়ে গেছে।”
অরা হাঁফ ছাড়ল। অন্তি নিশ্চয়ই সামিরকে সব বুঝিয়ে বলেছে। সে নিজের মোবাইল খুলে সামিরকে ফোন দিল এবার। কিন্তু দেখা গেল সামির তার ফোন ধরছে না। অরা কয়েকবার চেষ্টা করল। শেষবার সামির ধরল। অরা কোমল গলায় জানতে চাইল,” বিজি আপনি?”
” না, বলো।”
অত্যন্ত শীতল এবং ভারী কণ্ঠ। অরা সহজ হওয়ার চেষ্টা করে বলল,” আপনি কি রাগ করেছেন? আসলে ব্যাপারটা আমি আপনাকে বুঝিয়ে বলতাম কিন্তু…”
ওইপাশ থেকে টুট শব্দ শোনা গেল। সামির ফোন কেটে দিয়েছে। অরা বোকার মতো ফোনের ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে রইল। সায়ান খেতে খেতে বলল,” ভাবি, আমি আগেই বলেছিলাম৷ ভাইয়া রাগ করবে। তুমি শোনোনি।”
অরা হাসার ভাণ করে বলল,” রাগ করেনি। মনে হয় নেট প্রবলেমের কারণে লাইন কেটে গেছে।”
সায়ান বলল,” ঠিকাছে। তুমি খাও।”
অরা সামিরকে নিয়ে আর চিন্তা করল না। তার রাগ পরেও ভাঙানো যাবে। কিন্তু রূপার কি হয়েছে সেটা জানা দরকার। সায়ান কি নির্দ্বিধায় খাচ্ছে! কিন্তু অরার গলা দিয়ে তো খাবারও নামছে না দুশ্চিন্তায়!
চট্টগ্রাম শহরের মিরসরাই উপজেলায় রূপাদের বাড়ি। বেশ গ্রাম গ্রাম পরিবেশ সেখানে। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যমন্ডিত জায়গা। বাস থেকে নেমে অটো নিয়ে আসতে আধঘণ্টার মতো সময় লেগেছে। তখন রাত সাড়ে নয়টা বাজছে ঘড়িতে। সায়ান বলল,” ভাবি, এতোরাতে ওদের বাসায় যাওয়া ঠিক হবে? ওর মামা-মামী কি ভাববে?”
অরা বিষাদমাখা কণ্ঠে বলল,” কে কি ভাবল তাতে যায় আসে না। আমাদের এখনি যেতে হবে সায়ান ভাই।”
সায়ান খেয়াল করল, অরার চোখ দু’টো অশ্রুতে টলমল। সে কাঁদছে কেন? কাঁদার মতো কি হয়েছে? বাড়ির সামনে উঠানের কাছেই দেখা হলো রূপার সাথে। তেতুল গাছ থেকে লাঠি দিয়ে তেতুল পাড়ছে সে। অরা তার হাতে ধরে থাকা হ্যান্ডব্যাগটি ফেলে দিল। বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইল কয়েক মুহূর্ত।
রূপাও তাদের দেখে থম মেরে গেল। সায়ান ততক্ষণে পড়ে যাওয়া হ্যান্ডব্যাগটি তুলে রূপার উদ্দেশ্যে বলল,” হাই।”
অরা দৌড়ে গিয়ে রূপাকে জড়িয়ে ধরল। তারপর ভেউ ভেউ করে কাঁদতে শুরু করল। এইখানে এসে সে রূপাকে জীবিত পাবে এটা যেন কল্পনাও করেনি। রূপা প্রথমে সায়ানকে দেখে তারপর অরার এমন আচরণে খানিক থতমত খেল।
অরা কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল,” তোকে যে আবার জীবিত দেখতে পারবো এটা আমি ভাবিওনি। তুই ঠিকাছিস দোস্ত? তোর কি হয়েছিল?”
রূপা বিস্ময়ে থম ধরা গলা পরিষ্কার করে বলল,” ঠিকাছি আমি। আমার আবার কি হবে? কিন্তু তোরা হঠাৎ এভাবে না বলে-কয়ে?”
” বলবো কিভাবে? তোর ফোন তো সুইচড অফ করে রেখেছিস। শারমিনের থেকে খবর নিয়ে জানলাম তুই নাকি সুই*সাইড করেছিস?”
রূপা এবার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল একটা। মৃদু হেসে বলল,” ওহ এই ব্যাপার? আসলে সু*ইসাইড করতে চেয়েছিলাম। তারপর মুড সুইং হওয়ায় আর করিনি।”
” মানে কি এসবের? তুই কি আমার সাথে ফাজলামো করছিস?”
” তোর সাথে ফাজলামো কেন করব? করেছি আমার মামার সাথে। মামা বিদেশ যাবে বুঝছিস। কোন এক শা*লার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। মানে যাওয়ার আগে আমাকে আগুনে ফেলে যাবে এটাই তার উদ্দেশ্য। সেই জন্য একটু সু*সাইডের একটিং করেছিলাম। একটিং কাজে লেগেছে। বিয়ে আপাতত স্থগিত। শশশ, এই কথা আবার ঘরে ঢুকে বলে দিস না। আর এই গাঁধাটাকে আনলি কেন তোর সাথে? ও কি চায়?”
এই বলে রূপা কঠিন দৃষ্টিতে সায়ানের দিকে তাকাল। সায়ান বলল,” স্যরি রূপা। আমি…” সায়ান তার কথা শেষ করতে পারল না। রূপাও কিছু বুঝল না। অরা হঠাৎ তার হাতের লাঠিটি কেঁড়ে নিয়ে তাকে বেরধক মা-রতে শুরু করল।
” তোর জন্য আমি এতোদূর থেকে ছুটে এসেছি। অথচ তুই কি-না একটিং করছিস? তোকে তো এখনি আমার মে*রে ফেলতে মন চাইছে।”
রূপা অরাকে থামিয়ে বলল,” আরে শা*লি, আমি কি তোকে ছুটে আসতে বলেছিলাম? তুই কেন এলি? আর এই আপদকে কেন সঙ্গে আনলি?”
” আমার তোর জন্য চিন্তা হচ্ছিল।”
” তোকে চিন্তা করতে কে বলেছিল?”
অরা ধাক্কা মেরে রূপাকে কাদার মধ্যে ফেলে দিল। রূপাও তাকে ল্যাং মেরে ফেলে দিল। তারপর তারা একজন-অন্যজনের চুল টেনে ধরল। তাদের অবস্থা দেখে সায়ান হতভম্ব।
সাদা শাড়ি গায়ে জড়ানো ব্লাউজবিহীন একজন বৃদ্ধা ঘর থেকে বের হয়ে এলেন। সায়ান তাঁকে দেখে একটু ইতস্তত হয়ে বলল,” দাদী, ওদেরকে থামান। দেখেন না কি করছে?”
বৃদ্ধামহিলা সায়ানকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে কৌতুহল নিয়ে শুধালেন,” তুমি খে?”
রূপা মাথা তুলে বলল,” উনি অরার হাজব্যান্ড।”
সায়ান কেশে উঠল। অরা চোখ বড় করে বলল,” মানে কি?”
রূপা বলল,” মানে উনি তোর জামাই! ”
অরা হাঁ করে তাকিয়ে রইল। সায়ানও খুব বিব্রত। রূপা ব্যস্ত স্বরে বলল,” নতুন জামাই এসেছে নানি। আরে মামিকে ডাকো৷ শরবত দিতে বলো।”
একটু পরেই ভয়ংকর চেহারার একজন মোটা মহিলা বের হয়ে আসলেন। গম্ভীর মুখে তিনি সায়ানকে দেখে বললেন,” জামাই তো দেখি পুরাই বাচ্চা ছেলে যে।”
তিনি যে রূপার মামী সেটা সায়ানের বুঝতে অসুবিধা হলো না। তবে মেহমান আগমনে তাকে বিরক্ত মনে হয়নি। বরং তিনি প্রবল উৎসাহে তাদের আপ্যায়ন শুরু করলেন। সায়ান মাত্র এক মুহূর্তেই নতুন জামাই হয়ে গেল। তাকে বড় টেবিলে বসিয়ে নাস্তার পর নাস্তা দেওয়া হতে লাগল। চট্টগ্রামের মানুষ যে খুব অতিথিপরায়ণ এই কথাটির যথার্থ প্রমাণ সায়ান আবারও পেল।
রূপা সায়ানের কাছে এসে হাসিমুখে বলল,” আর কিছু লাগবে দুলাভাই?”
সায়ান আতঙ্কগ্রস্ত কণ্ঠে বলল,” এসব কি হচ্ছে রূপা? আমাকে মিথ্যা পরিচয় কেন দিচ্ছো?”
” আসল পরিচয় দিলে ঝাঁটার বারি খাবে। তাই নকল পরিচয় দিয়ে জামাই আদর খাওয়াচ্ছি। ভালো লাগছে না?”
সায়ান অসহায় চোখে অরার দিকে তাকাল। অরার মুখ গোমরা। রূপা বলল,” তোর আবার কি হয়েছে?”
” অনেক কিছু হয়ে গেছে। ভেতরে চল, বলছি।”
রূপা অরাকে নিয়ে নিজের ঘরে এলো। দরজা আটকে প্রশ্ন করল,” কি হয়েছে?”
” একটু আগে হাসপাতালের ওই নার্সটা ফোন দিয়েছিল। সে কি বলল জানিস?”
” কোন নার্স? যার জন্য তোর প্রেগন্যান্সির রেজাল্ট ভুল এসেছিল?”
” হুম।”
রূপা বিছানায় বসতে বসতে শুধাল,” কি বলল শুনি?”
” বলল দাদী নাকি তাকে এই কাজ করতে বলেছে।”
” কি? তোর দাদী শাশুড়ী?”
” হুম। ”
” আশ্চর্য! বুড়ি এই কাজ কেন করতে বলবে?”
” হয়তো আমাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য। কে জানে? নার্সটা বলল তার নাকি আমাকে পছন্দ হয়েছে। তাই আমাকে সত্যিটা বলে সাবধান করল আর কি…”
রূপা কটমট করে বলল,” এই দাদীর বাচ্চা তো খুবই খারাপ। একে একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার।”
” দাদীর কথা বাদ দে। এদিকে যে আরও বড় ঘটনা ঘটে গেছে।”
” আবার কি?”
অরা আতিফের ঘটনা সম্পূর্ণ বলল। আজকেও সে কয়েকবার ফোন দিয়েছিল। কিন্তু অরা ধরেনি। সে এতোকিছুর পরেও অরাকে বিরক্ত করছে। খুব অপমানজনক গা*লি বের হচ্ছে মুখ দিয়ে। কিন্তু অরা কখনও কারো সাথে গা*লি দিয়ে কথা বলতে পারে না।
রূপা বলল,” দাঁড়া এই বেটাকে আমি শায়েস্তা করব। তুই আগে বলবি না?”
” তোর তো ফোনই বন্ধ ছিল। আগে কিভাবে বলব?”
” ফোন তো বন্ধ রেখেছিলাম তোর দেবরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য৷ এটা আবার ওকে বলিস না। তুই আতিফ পাগলার নাম্বারটা দে।”
এই বলে রূপা তার ফোন বের করল। অরা তটস্থ হয়ে বলল ” প্লিজ রূপা, ঝামেলা করিস না। পরে তোকেও ফোন দিয়ে বিরক্ত করবে।”
” আমার কাছে এক্সট্রা সিম আছে। অন্য নাম্বার থেকে ফোন করব। দে জলদি।”
অরা চুপচাপ নাম্বার দিল। কারণ রূপাকে থামানোর চেষ্টা করে লাভ নেই। সে ফোন করবেই। প্রথম চান্সেই আতিফ ফোন ধরে ফেলল,” হ্যালো।”
রূপা মিষ্টি কণ্ঠে বলল-” আসসালামু আলাইকুম, আমি কি আতিফ আবসারের সাথে কথা বলছি?”
” জ্বী,আপনি কে?”
” আমি তোর যম হা*রামজা*দা।”
” এক্সকিউজ মি?”
” খবরদার ইংলিশ ফুটাবি না। শা*লা কু*ত্তা!”
-” আরে ভাই, আপনি কে?”
” যাকে দিন-রাত ফোন দিয়ে তুই ডিস্টার্ব করিস সে আমার জান লাগে। এইবার বুঝ আমি তোর কে!”
” আমি তো কাউকে ডিস্টার্ব করি না। আপনি মনে হয় ভুল করছেন।”
“ওরে আমার ভদ্র রে! জুতা দিয়ে পি*টায় তোর ভদ্রগিরি ছুটায় দিবো। বিবাহিত মেয়েকে বিরক্ত করা? এতো কুতকুতানি আসে কোথ থেকে? আন্ডার মধ্যে এমন ডান্ডা মারব যে সব কুতকুতানি ঠান্ডা হয়ে যাবে।”
আতিফ ‘পাগল’ বলে ফোন রেখে দিল। রূপা বলল,” বেটার তো সাহস কম না। নিজে পাগল হয়ে আমাকে বলে পাগল?”
সে অন্য নাম্বার থেকে আবার কল করল। তবে কিছুক্ষণ পরে। অরা বলল,” বাদ দে।”
রূপা বলল,” না।”
আতিফ বিনীত কণ্ঠে বলল,” আসসালামু আলাইকুম, দিজ ইজ আতিফ আবসার।”
” হ্যাঁ জানি তুই সেই পাগল। জেনেই তো ফোন করছি। জুতার বারি মেরে চেহারা এমন ভচকায় দিবো যে আয়নায় দাঁড়িয়েও নিজেকে চিনবি না। শা*লা, আমাকে তুই পাগল বললি কোন সাহসে? তুই পাগল। তোর গু*ষ্টি পাগল৷”
আতিফ আবার ফোন কেটে দিল। রূপা বলল,” ভয় পেয়েছে শা*লা।”
অরা হাসতে হাসতে বলল,” তুই পারিসও রূপা। কি দরকার ছিল এসব করার?”
রূপা বলল,” দরকার ছিলরে। এই ছ্যাঁচরা যদি আবার ফোন করে তাহলে আমাকে বলবি। আচ্ছামতো ছ্যাঁ*চা মে*রে দিবো। শা*লা কয়দিন টিকতে পারে আমিও দেখবো। আর তুই আজকে ভাইয়ার ব্যাপারে যা বললি তা শুনে মনে হচ্ছে ভাইয়া তোকে অনেক বিশ্বাস করে। এই বিশ্বাসটা আসলে ভালোবাসা থেকেই এসেছে। অনেক গভীর ভালোবাসা থাকলেই মানুষকে এই পরিমাণ বিশ্বাস করা যায়। তুই লাকি। সবসময় এভাবে সুখে থাক। আই এম সো হ্যাপি ফোর ইউ। ”
অরা মুখ ভার করে বলল,” কিন্তু উনি তো এখন আমার উপর রেগে আছে।”
” আরে এই রাগ বেশিক্ষণ টিকবে না। দেখবি একটু পর সে নিজেই তোকে ফোন করবে। নাউ চিল মেরি জান।”
ডিনারের পর অরা বাড়ি ফিরে যাবে ঠিক করল। তার ইচ্ছা বাবা-মার সাথে দেখা করে সকালেই আবার ঢাকায় রওনা দিবে। সামিরকে আর রাগানো যাবে না। কিন্তু রূপা এবং তার মামা-মামী কিছুতেই যেতে দিতে রাজি হলো না। রূপার মামি আমিনা খাতুন বললেন,” তোমার সাথে আমার কথা আছে অরা।”
” জ্বী মামি। বলুন।”
” এখন বলব না যে। রাতে তোমার স্বামী ঘুমাই গেলে আমার ঘরে আসিও।”
অরা ঢোক গিলে বলল,” কিন্তু আমি তো রাতে রূপার সাথে থাকব মামি।”
” তাহলে রূপা যেন না জানে। ও ঘুমাই যাওয়ার পর আসিও।”
অরা একটু চিন্তায় পড়ে গেল। কি এমন জরুরী কথা? সে ধীরপায়ে রূপার ঘরে গেল৷ ভেতরে ঢুকতেই শুনল সায়ান আহ্লাদ মাখা গলায় বলছে,” আমার ময়নাপাখি, জানপাখি, টিয়া পাখি। আই এম স্যরি৷ মাফ করে দাও৷ আমি সত্যি কালই ভাইয়ার সাথে কথা বলব। প্রমিস করছি।”
রূপা বলল,” তোমার প্রমিসের আমি গুষ্টি মারি। তুমি তো তোমার ভাইয়ের কণ্ঠ শুনলেও কাঁপো। কাওয়ার্ড কোথাকার!”
অরা গলা ঝেড়ে শব্দ করল৷ তার উপস্থিতি টের পেয়ে সায়ান রূপার হাত ছেড়ে দিল। অরা বলল,” তুমি এই ঘরে কি করছো সায়ান ভাই? আমি না এসে অন্যকেউ এলে কি ভাবতো?”
এই কথা বলে সে দরজা আটকে দিল। রূপা বলল,” অরা এটাকে আমার চোখের সামনে থেকে দূর কর। আমি ওর চেহারাও দেখতে চাই না।”
অরা বিরক্ত স্বরে বলল,” তোদের মধ্যে ঝামেলাটা কি হয়েছে বলবি?”
রূপা বলল,” মামা আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে জেনে গেছে।রাতে আমি কারো সাথে কথা বলি এটা মারিয়া নোটিস করে মামাকে বলে দিয়েছে। তারপর থেকে মামা আমাকে সন্দেহ করছে। আমিও সব সত্যি বলে দিয়েছি। তোর দেবরের সাথেই আমার রিলেশন এটাও বলেছি। এজন্যই সায়ানকে পরিচয় করাইনি।”
অরা এবার বুঝল আমিনা খাতুন কোন বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে চান! সে বলল,” এবার তাহলে তোর মামা কি চান?”
” কি আর চাইবে? আমাকে বিয়ে দিতে চায়। ”
” সায়ান ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিলে সমস্যা কি?”
” মামার তো কোনো সমস্যা নেই। তিনি প্রস্তাবের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু সমস্যা তোর এই ভীতু দেবরের। সে তো তার বাড়িতে আমার কথা বলতেই পারছে না।”
সায়ান মাথা নিচু করে বলল,” কিভাবে বলব? মা বলেছে আমার এখনও বিয়ের বয়সই হয়নি।”
এই কথা শুনে রূপা ক্ষেপে গেল। সায়ানের কলার টেনে বলল,” মায়ের কচি খোঁকা, তুমি এখানে কি করছো তাহলে? মায়ের আঁচলের নিচে ঢুকে বসে থাকো। পারভার্ট একটা! ”
টম এন্ড জেরির ঝগড়া আবার শুরু হয়ে গেল। কাকে সামলাবে অরা?টম এন্ড জেরি নাকি নিজের মিস্টার এরোগেন্ট? সামির তো ফোনই ধরছে না। এতো রাগ!
মাঝরাতে হঠাৎ রূপার ঘরে এসে দরজা নক করল সায়ান। অরা ঘুম ভেঙে দরজা খুলল। সায়ানকে দেখে খানিক ভয় নিয়ে বলল,” তুমি এখানে কেন?”
” আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রূপা কই?”
রূপা তখন প্রচন্ড রেগে আছে। গজগজ করে বলল,” ওকে ঝাঁটা মেরে বিদায় কর অরা। আমি কোনো কাওয়ার্ড এর সাথে কথা বলি না।”
সায়ান ঘরে ঢুকে বলল,”চলো বিয়ে করব।”
রূপা শোয়া থেকে উঠে বসল। কিড়মিড় করে বলল,” ফাজলামি করছো?”
” আমি সিরিয়াস। কালকেই বিয়ে করব। কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। আগে বিয়ে করব তারপর সবাই জানবে।”
অরা সায়ানের কথা হেসেই উড়িয়ে দিল। রূপা উপহাস্য কণ্ঠে বলল,” ফাটা পোস্টার নিকলা হিরো। সাব্বাস!”
সায়ান তখন সত্যিই সিরিয়াস ছিল। পরদিন সকালেই সে রূপা আর অরাকে নিয়ে কাজী অফিসে গেল। দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে শারমিনকেও নেওয়া হলো। অরা যাওয়ার সময় বলল,” বিয়ের দিন একটু সাজবি না? আয় তোকে শাড়ি পরিয়ে দেই।”
রূপা বিরক্ত স্বরে বলল,” ওসব শাড়ি-টারি পরে আমি গাড়ি সাজতে পারব না।”
একহাজার এক টাকা দেনমোহরে তাদের বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের সময় সায়ানের গায়ে ছিল সাদা পাঞ্জাবি৷ রূপার গায়ে সাদা টি-শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার জিন্স।
চলবে