রুপালি মেঘের খামে পর্ব-২৩

0
631

#রুপালি_মেঘের_খামে
লিখা- Sidratul Muntaz

২৩.
সকাল থেকেই টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। মধ্যরাতে শুরু হয়েছিল তুমুল বর্ষণ। এখন বর্ষণের তেজ কমে এলেও পরিবেশে শীতলতার মাত্রা বেড়েছে। অরার মনে হলো, আজকের সকালটা স্নিগ্ধ সুন্দর। বৃষ্টির অপরূপ ছন্দে ছন্দময়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে গভীর করে শ্বাস নিল সে। হাত দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা স্পর্শ করতে চাইল। তার আঙুলের ডগায় স্বচ্ছ পানির বিন্দু নিয়ে গালে মাখল তারপর হেসে উঠল।

সামির একঝলক তাকালো। তারপর পুনরায় ড্রেসিং টেবিলের আয়নার দিকে চেয়ে গলায় টাই বাঁধতে ব্যস্ত হলো। ভাবটা এমন, যেন সে অরার হাসির শব্দে বিরক্ত!

অরা মনোযোগ দিয়ে সামিরকে দেখল। তার চেহারার পেশি টানটান, শ্যামলা মুখটি ঈষৎ লাল হয়ে আছে। বোঝাই যাচ্ছে, মহাশয় আজ ভীষণ রেগে। সকাল থেকে অরার সাথে একটা কথাও বলেনি। অরা কিছু বললেও সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়ে আলোচনা শেষ করতে চেয়েছে। কিন্তু এভাবে কতক্ষণ সে অরাকে অবহেলা করবে?

অরাও গতরাতের জন্য লজ্জায় মুখ খুলতে পারছে না। গতরাতে নিজের মুখে সে সামীরকে কত কিছুই না বলেছিল, নিজের ব্যাকুলতা নির্দ্বিধায় প্রকাশ করেছিল। তারপর নিজেই সব আশায় জল ঢেলে ঘুমিয়ে পড়েছে।

এই লজ্জায় সে আপাতত সামিরের চোখে চোখ রাখতেও ভয় পাচ্ছে। কিন্তু তাকে এইভাবে গোমরা মুখে চলে যেতে দেওয়া যায় না। তাহলে সারাদিন অরার মনখারাপ থাকবে। প্রায় ছয়-সাত ঘণ্টা ছটফট করেই কা-টাতে হবে। তার চেয়ে ভালো, এখনি ঝামেলাটুকু মিটিয়ে নেওয়া যাক!

অরা তার সমস্ত আড়ষ্টতা পেছনে ঠেলে সামিরের সামনে এসে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো। তরল স্বরে অনুরোধ করল,” আজ একটু দেরি করে গেলে হয় না?”

” কেন? হঠাৎ দেরি করতে যাবো কেন শুধু শুধু? কোনো রিজন আছে? ”

অরার গলা শুকিয়ে গেল। বাপরে! কন্ঠ যেন লোহার চেয়েও কঠিন! দৃষ্টিতে সে কি তেজ! এতো রাগ? সে অপ্রস্তুত কণ্ঠে বলল,” মানে… বাহিরে তো বৃষ্টি হচ্ছে!”

” বৃষ্টি সারাদিনই হতে থাকবে। আমি কি সারাদিন বাসায় বসে থাকবো?”

অরা আকুল হয়ে বলল,” একদিন না গেলে কি হয়?”

” কিছুই হয় না। কালও তো মিস দিলাম। তাও কিছু হলো না।”

অরার মুখটা নিচু হয়ে একদম চিবুক গলার সাথে লেগে যেতে চাইল। সামির আঁড়চোখে তাকাল। অরা আরও নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বলল,” স্যরি।”

সামির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,” ক্ষমতা থাকলে ‘স্যরি’ নামক শব্দের আবিষ্কারকারিকে আমি ফাঁসি দিতাম। ‘স্যরি’ বলেই সবাই পার পেয়ে যায়।”

” ঠিকাছে, আপনি চাইলে আমায় শাস্তি দিতে পারেন। যে শাস্তি দিবেন, আমি সব মাথা পেতে গ্রহণ করবো।”

সামির ঘড়ির দিকে চেয়ে গম্ভীর গলায় বলল,” শাস্তি দেওয়ার সময় আপাতত নেই। ফেরার পর যদি আপনি ঘুমিয়ে না যান তখন ভেবে দেখা যেতে পারে।”

মানুষটা তাকে রোমান্টিক কথা বলছে তাও রেগে রেগে। যেন হুমকি দিচ্ছে! কি অদ্ভুত! অভিমান করলে সামির তাকে ‘আপনি’ করে বলে। অরার কাছে ব্যাপারটা বেশ মজা লাগে। কিন্তু তবুও সে চায় না সামির অভিমান করুক। তার অভিমান কমানো ভীষণ কঠিন!অরার থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে সামির পরিষ্কার কণ্ঠে বলল,” বায়।”

অরা জানে এই ‘বায়’ শব্দের অর্থ ‘বিদায়’ নয়। সে চাইছে অরা তাকে কিছু বলে। কিন্তু কি বলবে অরা? যতবার সামিরের দিকে সে তাকায় ততবার রাতের কল্পনাগুলো স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে। সে কিছু বলতেই পারে না। কণ্ঠ শুকিয়ে যায়। সামির দরজা পর্যন্ত যেতে যেতে আবার বলল,-“আমি চলে যাচ্ছি।”

” শুনুন।”

মুখ থেকে ছিটকে বেরিয়ে এলো শব্দটা। সামির ফিরে তাকালো। অরার মতো একই স্বরে বলল,” বলুন।”

অরা লজ্জা মাখা দৃষ্টিতে বলল,” সাবধানে যাবেন। আর দ্রুত ফিরে আসবেন।”

সামির কোনো জবাব না দিয়ে মৃদু হাসল। সেই হাসিটাই যেন কাঁপন ধরালো অরার বুকে। বৃষ্টির ছন্দকে ছাপিয়ে সে নিজের অন্তরাত্মার ঢিপঢিপ কম্পন টের পেল…সামির গটগট করে তার সামনে এগিয়ে আআছে। মৃদু স্পর্শে চু-মু এঁকে দিল তার কপালে। সেই চু-মুতে ছিল এক পশলা বৃষ্টির মতো স্নিগ্ধ আদর! অরা বোধ করল, তার শরীর অসাড় এবং শক্ত হয়ে গেছে। শরীরের তাপমাত্রা হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সামির সেই স্তব্ধ, বিমূঢ়, মূর্তি বনে যাওয়া অরাকে ছেড়ে ঘর ছেড়ে বের হয়ে গেল। অরা ধপ করে বসে পড়ল বিছানায়। কতক্ষণ যে এইভাবে কে-টে গেল তার হিসাব নেই। একটু পরেই ম্যাসেজ এলো তার ফোনে,” শোনো প্রজাপতি… না, লজ্জাবতি! আমি বাইরে বের হওয়ার সময় আর কখনও ওইভাবে তাকিয়ো না প্লিজ। ওই লাজুক দৃষ্টি ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়। ইচ্ছে করে দুনিয়া ভেসে যাক, প্রলয় শরু হোক। তাও আমি সব ছেড়ে তোমার কাছে বসে থাকি।”

অরা চোখমুখ খিঁচে হেসে ফোনটা মুখে চেপে ধরল। হৃদয়ের লাবডুব শব্দটা যেন সে স্পষ্ট কানেই শুনতে পাচ্ছে! শীহরণ বয়ে যাচ্ছে সারা শরীরে।

রান্নার সুঘ্রাণে ঘর ভরে গেছে। মেন্যুতে প্রায় সব অরার পছন্দের খাবার। নীলিমা চপিং বোর্ডে সালাদের জন্য শসা, টমেটো আর পেঁয়াজ কে’টে নিচ্ছেন। অরা দাঁড়িয়ে আছে পাশেই। পুরো শরীর তার ঘেমে একাকার।

নীলিমা অসন্তুষ্ট গলায় বললেন,” এবার কিন্তু আমি খুব বকা দিবো তোমাকে। যাও রুমে যাও৷ শুধু শুধু গরমের মধ্যে দাঁড়িয়ে ঘামছো।”

অরা বলল,” আমি আপনাকে সাহায্য করছি আম্মু।”

” সাহায্য করতে হবে না। তুমি তো মাংসটাও কাটতে পারছো না। মা কিচ্ছু শেখায়নি।”

” আসলে মা আমাকে কখনও মাংস কাটতে দেয়নি। সবসময় ফ্রীজে রেডিমেট মাংস পেয়ে গেছি। সমস্যা নেই, এখন আপনি শিখিয়ে দিবেন।”

” আমি শেখাবো না। নিজে নিজে সব শিখবে। যখন সামিরের সাথে আলাদা বাসা নিবে তখন তো নিজেকেই রান্না করে খেতে হবে।”

অরা আৎকে উঠল। চোখ বড় করে জানতে চাইল,” উনার সাথে আলাদা বাসা নিবো মানে?”

” যদি কখনও প্রয়োজন হয়? ডেস্টিনির কথা তো বলা যায় না।”

“অসম্ভব। আমি আপনাদের ছেড়ে যাবোই না আম্মু। প্রয়োজনে আপনার ছেলেকে মেসে পাঠিয়ে দিবো। বিবাহিত হয়েও ব্যাচেলর থাকবে।”

” ওরে আল্লাহ, বলে কি!”

নীলিমা জোরে হেসে উঠলেন। অরা খাবারের সুঘ্রাণ নিয়ে বলল,” আমি আপনার থেকে অবশ্যই সব কাজ শিখব আম্মু৷ তারপর নিজেই সব করব।”

” জানি তুমি এসব কেন বলছো। নিশ্চয়ই হেজিটেশন লাগছে?মানুষ দেখলে বলবে বউটা ভালো নয়। শাশুড়ীকে দিন-রাত খাটিয়ে মা-রে! এসব যদি ভেবে থাকো তাহলে আমি খুব কষ্ট পাবো। কারণ আমি তোমাকে ছেলের বউ ভাবিই না। নিজের মেয়ে ভাবি৷ সামিয়ার জন্মদিন হলে কি আমি এই কষ্ট করতাম না? তাহলে তোমার জন্য কেন পারবো না?”

অরা চোখের কোণ মুছে বলল,” আপনাকে এতো ভালো হতে কে বলেছে আম্মু? এতো অন্যরকম হতে কে বলেছে আপনাকে?”

সামিয়া এসে জানাল, অরার ফোন বাজছে অনেকক্ষণ ধরে। সে যেন বেডরুমে গিয়ে ফোনটা রিসিভ করে। অরার মুখ অল্প লালচে হলো। সামির ফোন করেছে নিশ্চয়ই। ভেতরে খুব উত্তেজনা বোধ করলেও শাশুড়ীর সামনে মাথা নিচু করেই রান্নাঘর থেকে বের হলো। তারপর একছুটে বেডরুমে।

ফোন হাতে নিতেই অরার লালচে মুখ কালচে বর্ণ ধারণ করল। সামির ফোন করেনি। ফোন এসেছে অচেনা নাম্বার থেকে। লোকটি এর আগেও তিন থেকে চারবার কল দিয়েছে। প্রত্যেক বারই নিঃশ্বাসের শব্দ শুনিয়েই ফোন কে-টে দেয়। এই ফাজলামি তো আর সহ্য করা যায় না!

অরা ভাবল এবার সে মোবাইলটা কানে রেখে কড়া একটা ধমক দিবে। এই ভাবনা থেকেই কল রিসিভ করল। তবে অরা ধমক দেওয়ার সময় পেল না। অপর পাশ থেকে আগন্তুক প্রায় রুদ্ধশ্বাসে প্রশ্ন করল,-” আপনি কি অর্পিতা ইসলাম অরা বলছেন?”

” জ্বী, আপনি কে?”

” অরা, আমি আতিফ।”

অরা সাথে সাথে ফোনটা কান থেকে সরিয়ে নাম্বার দেখল। আতিফের ফোন নাম্বার তার কাছে ছিল না। বিয়ের আগে সে একবারও আতিফের সাথে ফোনে কথা বলেনি। তাদের দেখা হয়েছিল মাত্র দু’বার। সেই হিসেবে আতিফের কাছেও তার নাম্বার থাকার কথা না। তাহলে কি আতিফ কোনোভাবে তার নাম্বার কালেক্ট করেছে? কিন্তু কেন? প্রশ্নের মেলা পসরা সাজালো মস্তিষ্কে।

অরা মাত্র কয়েক মুহূর্তেই সাত-পাঁচ ভেবে নিয়ে বলল,” আপনি কেন ফোন করেছেন?

” অরা, আমি চট্টগ্রামের আতিফ। আতিফ আবসার।”

” হ্যাঁ চিনতে পেরেছি। কিন্তু হঠাৎ আপনি কেন আমায় ফোন করলেন?”

আতিফ চুপ করে গেল। আবার তার এলোমেলো নিঃশ্বাসের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। বিরক্তিতে অরার কপাল কুঁচকে গেল। আতিফ হঠাৎ বলল,-” দেখা করতে চাই।”

” হোয়াট?”

আতিফ কাঁচুমাচু স্বরে বলল,” প্লিজ অরা, না করবেন না। আপনার সাথে দেখা করাটা খুব জরুরী। আমি সেই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছি শুধু আপনার সাথে দেখা করার জন্য।”

অরার শরীরে তীব্র বেগে কিছু একটা বয়ে গেল। হাঁ করে পাঁচসেকেন্ড স্তব্ধ থেকে বলল,-” এসবের মানে কি? ”

” মানে বোঝানোর জন্যই তো আপনাকে দেখা করতে বলছি।”

আতিফ কত অকপটে প্রস্তাব দিয়ে ফেলল। অরা চোয়াল শক্ত করে জানিয়ে দিল,”আমি ম-রে গেলেও আপনার সাথে দেখা করবো না। আমি এখন বিবাহিত। আমার হাসব্যান্ড আছে, শ্বশুর-শাশুড়ী আছে। তাদের ইগনোর করে কিভাবে..”

” উপায় নেই যে!”

অরাকে কথা বলতে না দিয়েই উক্ত বাক্যটি বলে ফেলল আতিফ। কি এমন জরুরী কথা? জানার জন্য কৌতুহল তো হচ্ছেই। প্রশ্নেরা মৌমাছির মতো কিলবিল করছে মাথায়। অরার খুব নার্ভাস লাগছে।

একটু ভেবে বলল,” আপনি চাইলে আমার বাড়ি আসতে পারেন। যা বলতে চান, আমার হাজব্যান্ডের সামনে বলবেন।”

” আমি আপনার বাড়ির নিচেই দাঁড়িয়ে আছি।”

এবার অরার বুকে ধুকপুকানি শুরু হলো। সে বারান্দায় উঁকি দিতেই দেখে ফেলল আতিফকে। কণ্ঠমণি শুকিয়ে এলো অজানা আতঙ্কে।

আতিফ বলল,” কিন্তু আপনার হাজব্যান্ডের সামনে কথা বলা অসম্ভব। এটা ভীষণ পারসোনাল ব্যাপার।”

অরা নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল,” আপনার আর আমার মধ্যে পারসোনাল বলে কিছু নেই। সেই সম্পর্ক তৈরী হওয়ার আগেই ভেঙে গেছে। তাও আপনারই দোষে। আপনি কেন এখন হঠাৎ করে এতোদিন পর উদয় হয়েছেন সেটা আমি বুঝতে পারছি না। কেন দেখা করতে চান? আর আমি কেন আসবো আপনার ডাকে? পাগলামি বন্ধ করে ফিরে যান।”

” ফিরে যাওয়ার হলে কি আমি আসতাম? আর এতোদিন সময় নেওয়ার জন্য দুঃখিত। ব্যাপারটি আমি জানতে পেরেছি মাত্র কিছুদিন আগে। আর আপনার ফোন, এড্রেস যোগাড় করতেই বাকি সময় লেগে গেল। একবার ভেবে দেখুন, কতটা ইমারজেন্সি হলে আমি এতোদূর ছুটে আসতে পারি? শুধু আপনার সাথে একটু কথা বলবো বলে!”

আতিফের কথার সুর শুনে অরার গা রিরি করছে৷ কোনো চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই বলে দিল,” যে কারণেই হোক, আমি দেখা করবো না।”

” অরা, প্লিজ….বোঝার চেষ্টা করুন কতটা জরুরী হলে আমি আপনার বাড়ি নিচে দাঁড়িয়ে আপনাকে ফোন করি?”

” যদি আপনার এতোই প্রয়োজন হয় তাহলে বাড়ির ভেতরে আসুন। এছাড়া সম্ভব না।”

” ওকে। আপনি যদি তাই চান তাহলে আমি আসছি। কিন্তু সেটা হয়তো আপনার জন্য খুব একটা ভালো হবে না ”

এই বলে আতিফ ফোন কে’টে দিল। অরা মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসল। দুইহাতে মুখের ঘাম মুছে চিন্তা করল, যদি আতিফ এই বাড়িতে আসে তাহলে ব্যাপারটা কেমন দৃষ্টিকটূ দেখায় না? সবাই কি ভাববে? অরা কলব্যাক করল।

” হ্যালো অরা।”

” বাসায় আসতে হবে না। ছাদে চলে যান। আমি ওখানে আসছি।”

” থ্যাঙ্কিউ, থ্যাঙ্কিউ সো মাচ।”

অরা ফোন রেখে দিয়ে ভাবতে লাগল, কি করবে? তার একবার মন সায় দিল যেতে। তারপর আবার মনে হলো আতিফকে বিশ্বাস করা কি ঠিক?
___________________
পার্কিং লটে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিল সামির। একটা উবার কল করা হয়েছে। মনে হচ্ছে লেইট হবে।সকালেও পরিবেশ খুব শীতল ছিল। কিন্তু এখন আকাশ জুড়ে খটমটে রোদ। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেই ঘাম ছুটে যাচ্ছে।

এমন সময় উত্তর দিক থেকে গাড়ি নিয়ে ঠিক সামনে এসেই থামল তন্বি। কাঁচ নামিয়ে ভেতর থেকে মাথা বের করে বলল,” গুড নূন স্যার, কেমন আছেন?”

সামির ভদ্রতার হাসি দিয়ে বলল,” ভালো আছি। তোমার কি অবস্থা?”

” এইতো, চলছে। আপনি কি কারো জন্য ওয়েট করছেন?”

” হ্যাঁ… আমার উবার আসবে।”

তন্বি এবার গাড়ি থেকে নেমে খুব অনুরোধ নিয়ে বলল,” স্যার প্লিজ, আজকে আমি আপনাকে লিফট দিতে চাই। না করবেন না।”

সামির শান্তভাবে হেসে বলল,” প্রয়োজন নেই তন্বি। উবার পাঁচমিনিটের মধ্যেই চলে আসবে। কাছাকাছি আছে।”

” আপনি ক্যান্সেল করে দিলেই হয়।”

” এতোদূর থেকে এনে আবার ক্যান্সেল করব? তা কিভাবে হয়?”

” প্লিজ স্যার… প্লিজ! আই ইনসিস্ট!”

সে কাছে এসে সামিরের হাত ধরল। সামির বিস্ময় নিয়ে তাকাতেই দ্রুত হাত ছেড়ে বলল,” আই এম স্যরি। আসলে আমার আপনার সাথে জরুরী কথা আছে।”

কিছুক্ষণ গম্ভীর দৃষ্টিতে তন্বির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে সামির জিজ্ঞেস করল,” কি জরুরী কথা?”

” এখানে দাঁড়িয়ে বলা সম্ভব না। যেতে যেতে বলব।”

সামির কয়েক মুহূর্ত চেয়ে থেকে বলল,” ঠিকাছে। চলো।”

তন্বির চোখে-মুখে মুহূর্তের মধ্যেই আনন্দের দীপ্তি ছড়িয়ে পড়ল। প্রবল উৎসাহ নিয়ে গাড়ির দরজার খুলে হাত বাড়িয়ে সামিরকে বসার জন্য ইশারা করল। তার পুরো ব্যাপারটা স্বপ্নের মতো লাগছে। সামির গাড়িতে উঠে বসল। তন্বি বড় করে শ্বাস নিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসল।

” স্যার, আপনার যদি সময় থাকে তাহলে আজ আমাদের বাড়িতে চলুন। বাবা আপনার সাথে কফি খেতে চেয়েছিলেন।”

” হঠাৎ তোমার বাবা আমার সাথে কফি খেতে চাইলেন কেন?”

” আসলে সবসময় আমার কাছে আপনার গল্প শোনে তো, তাই বোধহয় আপনাকে দেখার ইচ্ছা হয়েছে। প্লিজ স্যার, না করবেন না। প্লিজ!”

সামির একটু সময় নিয়ে বলল,” তন্বি, তোমাকে একটা কথা বলা দরকার।”

” জ্বী স্যার, বলুন না!” তম্বি কিছুটা নর্ভাস ফীল করছে। স্টেয়ারিং ঘোরানোর সময় তার হাতের আঙুল কাঁপছে। মুখে লেগে আছে হাসি। বুকের ভেতর অজস্র অনুভূতিদের ঢেউ।

সামির শীতল গলায় উচ্চারণ করল,” আমি ম্যারিড। দুইমাস আগে আমার বিয়ে হয়েছে।”

তন্বির হাতের পেশি শিথিল হয়ে আসল। বিকট শব্দে গাড়িটি জোরে ব্রেক কষে রাস্তার মাঝেই থেমে গেল।

*চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে