রুপালি মেঘের খামে পর্ব-১৮

0
661

#রুপালি_মেঘের_খামে
লিখা- Sidratul Muntaz

১৮.
জ্বীনের ব্যাপারটা ফুলবানু বেগমের মাথায় গভীরভাবে ঢুকে গেছে। রাতে তিনি ঘুমানোর সময় আজব-আজব শব্দ শুনতে পাচ্ছেন। হঠাৎ চিৎকার করে বলছেন, তাকে কেউ গলা টিপে ধরেছে। রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে তিনি চেঁচামেচি করে একটা হট্টগোল বাঁধিয়ে ফেললেন।

স্বপ্নে তিনি দেখেছেন, সামির মরে গেছে। জ্বীন মেরেছে তাকে। তাই ওই জ্বীনে ধরা মেয়ের সাথে সামিরকে কিছুতেই এক ঘরে থাকতে দেওয়া যাবে না। আজকেই তাদের ঘর আলাদা করতে হবে।

ফুলবানু নীলিমার উদ্দেশ্যে বললেন,” যদি নিজের পোলার লাশ দেখতে না চাও তাইলে এখনি ওই মাইয়ার থেকা ওরে আলাদা করো। নাইলে বড়নাতির লাশ পুষ্কুনিতে ভাসবো কয়া দিলাম।”

সায়ান বলল,” এখানে পুষ্কুনি কোথায় পেলে দাদী? এটা তো তোমার গ্রাম না।”

নীলিমা বললেন,” আম্মা আপনি শান্ত হোন। রাতে একা ঘুমানোটা বোধহয় আপনার জন্য ঠিক হচ্ছে না। আমি কি আজকে আপনার সাথে শোবো?”

” আমার সাথে শুয়া লাভ নাই। আমি ভালোই আছি। আসল বিপদ তোমার পোলার। তার কাছে যাও। জ্বীন তারে মাইরা ফালাইলো।”

বরাবরের মতো ফুলবানুর কথা এবারও কেউ পাত্তা দিল না। তবে ফুলবানু ভারী যন্ত্রণা শুরু করলেন। বাড়ির সবাই ঘুম থেকে উঠে তার ঘরের কাছে এসে জড়ো হয়েছে। শুধু সামির আর অরার ঘরের দরজা বন্ধ। তারা হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই এতো হৈ-চৈ এর মধ্যেও উঠে আসছে না। এদিকে ফুলবানুর শরীর ক্রমশ খারাপ হতে লাগল।

__________________
অরা কিছুক্ষণ একভাবে চেয়ে থেকে সবচেয়ে সাহসী কাজটি করল। নিজেই সামিরকে কিস করে ফেলল।

হঠাৎ এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনায় স্বভাবতই সামির প্রথমে বোকার মতো হয়ে যায়। হাতে ধরে থাকা প্লাস্টিকের বক্সটি ছেড়ে দিতেই মৃদু শব্দ হলো। অরা সেই শব্দে হালকা কেঁপে ওঠে। সম্বিৎ ফিরে পেতেই দ্রুত সরে গেল। প্রচন্ড লজ্জায় আঁটসাঁট হয়ে এলো তার শরীর।

সামির বিস্ময় সামলাতে ছোট করে শ্বাস নেয় কয়েকবার। তারপর একহাতে অরার ডান গাল স্পর্শ করে তার মুখটা উপরে তোলে। চোখাচোখি হতেই অস্বস্তিতে গাঁট হয়ে গেল অরা। বাতাসে মিশে যেতে মন চাইল তার।

সামির নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিল, অরা যেভাবে তাকে দূরে সরিয়েছে ঠিক সেভাবেই নিজে থেকে কাছে টানতে হবে। নয়তো সে আর কখনোই অরার কাছাকাছি আসবে না। জ্বলে-পুড়ে কয়লা হয়ে গেলেও না! তাই এতোদিন নিজেকে প্রচন্ড নিষ্ক্রিয় রেখেছিল। অথচ এখন, এই মুহূর্তে সব নিয়ন্ত্রণের দেয়াল ভেঙে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠতে চাইছে মন।

কিন্তু সেদিনের মতো যদি আবার অযাচিত কিছু হয়? সামির ওইরাতের কথা ভুলতে পারবে না এই জীবনেও। পুনরায় আশাভঙ্গ হোক তা সে চায় না। এই ভেবেই উঠে বারান্দায় চলে গেল।

অরা স্থানুবৎ হয়ে বসে রইল চুপচাপ। প্রত্যাখ্যানের তীব্র আঘাতে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল মন। উত্তপ্ত অশ্রুপাতে চোখের কার্ণিশ ভিজে গেল।

সে আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো একদমই নয়। অরা ভীষণ অন্তর্মুখী। মনের ভাব প্রকাশ করতে তার চরম দ্বিধা। প্রগাঢ় আত্মসম্মানবোধ তাকে সবসময় ঠেঁকিয়ে দেয়। লজ্জা আর অস্বস্তি মেশানো এই ব্যক্তিত্ব তার সব অনুভূতি মনের গোপন কোঠরে সুপ্তাবস্থায় লুকিয়ে রাখে। অরা যে এমনই!

তাই এখন পর্যন্ত নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে ব্যর্থ সে। সামিরের অভিমান ভাঙানোর মতো দুঃসাধ্য কাজ তার দ্বারা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ আজ সে নিজের স্বভাব বিরুদ্ধ দু’টি সাহসী কাজ করে ফেলেছে। তাই তৃতীয়বারের মতো আরেকটা কাজ করল। বারান্দায় গিয়ে কাঁকড়ার মতো দুইহাতে জাপটে ধরল সামিরকে। পিঠে মুখ গুঁজে বলল,” আই এম স্যরি। আমাকে মাফ করে দিন।”

সামির বিস্মিত হলো আরও একদফা। হৃদয় তোলপাড় হয়ে গেল টাল-মাটাল ঝড়ে। তার পক্ষে নিষ্ক্রিয় থাকা আর সম্ভব নয় তখন। কোনো পুরুষের পক্ষেই সম্ভব নয় হয়তো। সে পেছন ফিরতেই অরা কুণ্ঠিত গলায় বলল,” আমি জানি, সেই রাতের কথা আপনি ভুলতে পারছেন না। হয়তো সেজন্য আমাকে ক্ষমাও করতে পারছেন না। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি লজ্জিত…”

সামির অরার মুখটা উপরে তুলল। ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে বলল,” শশশ।”

অরা থামল। চোখে-মুখে তীব্র আকুতি মিশে আছে তার। আবছা অন্ধকারে তার ক্রন্দনরত মায়াভরা মুখটি দেখাচ্ছে স্নিগ্ধ রজনীর তারা ঝলমলে অন্তরীক্ষের মতোন।

সামির বিভোর হয়ে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ তার কপালে চুমু দিল, গালে চুমু দিল। অরার চেহারার লজ্জারাঙা লালচে আভা ফিরে এলো আবার। শরীর শক্ত হয়ে গেল। সামির তাকে কোলে উঠিয়ে বিছানায় নিয়ে এলো। অরার হৃৎস্পন্দন সর্বোচ্চ গতিতে তখন। ভয়ংকর অনুভূতিরা বাঁধনছাড়া।

বিছানায় এসেই ভীষণ বন্য হয়ে উঠল সামির। ঠিক সেইরাতের মতোই৷ অরা সামিরের হঠাৎ এই পরিবর্তন সামলাতে হিমশীম খেল। তবে আজ আর অস্বস্তি হলো না। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো লজ্জাময় ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগল বুকে। জীবনের প্রথম ভালোবাসার পরশ তাকে ভাসিয়ে নিল। অন্ধকার না হলে সে ঠিক দেখতো সামিরের চোখে কি ভয়ংকর নেশা ভর করেছে তখন!

হঠাৎ দরজায় জোরালো করাঘাতের শব্দ শুনে অরা সচকিত হয়ে বলল,” কি হয়েছে?”

সামির বিবশ স্বরে বলল,” কথা না৷ চুপ।”

” কিন্তু আমার মনে হচ্ছে বাইরে কিছু হয়েছে। সবাই এতো শব্দ করছে কেন?”

এবার সামিরও শুনতে পেল হৈ-চৈ। বিস্ময় নিয়ে বলল,” তাইতো।” সে তাড়াহুড়ো করে উঠে দরজা খুলতেই সামিয়া অস্থিরচিত্তে বলল,”দাদীমার শরীর ভালো নেই ভাইয়া। বাবা বলেছে তোমাকে এম্বুল্যান্স ডাকতে। দ্রুত কিছু একটা করো।”

বোনের চোখে পানি দেখে সামিরের মাথা আউলে হয়ে গেল। তৎক্ষণাৎ কিছু ভাবতে পারল না। কাঁপা হাতে এম্বুলেন্স কল করতে লাগল।

অরা মুখে হাত দিয়ে বিছানায় বসে আছে তখন। এই রাতের বেলা এমন দুঃসংবাদ শুনে সে বিস্ময় সামলাতে পারছে না। সামির দ্রুত বলল,” চলো অরা। আমাদের হসপিটালে যেতে হবে।”

অরা স্তব্ধতা কাটিয়ে বলল,” হুম।”

গাড়িতে বসে অরা কাঁদতে কাঁদতে বলে ফেলল,” আমার জন্যই এসব হয়েছে।আমার মিথ্যা বলার শাস্তি দাদী পাচ্ছে।”

সামিয়া অবাক হয়ে বলল,” তোমার মিথ্যা মানে?”

অরা ভয়ে চুপ করে গেল। সামীর গম্ভীর গলায় বলল,” আজাইরা কথা বোলো না। দাদীরডায়াবেটিস আছে৷ তার উপর হাই প্রেশার। হয়তো ভুল-ভাল কিছু খেয়েছিল এজন্য এই অবস্থা। তুমি নিজেকে দোষ দিচ্ছ কেন?”

অরা কোনো কথাই বলল না আর। তার খুব ভয় লাগছে। সে শুধু দোয়া করতে লাগল যেন ফুলবানু ঠিক হয়ে যান। সব তো চলছিল ভালোই। হঠাৎ করে এতোবড় বিপদ কেন এলো?

ফুলবানুকে ইমারজেন্সী ইউনিটে নেওয়া হয়েছে। শ্বাসকষ্টের জন্য মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো হয়েছে। তিনি কারো সাথে কথা বলতে পারছেন না। তবে ট্রান্সপারেন্ট জানালা দিয়ে সবাই তার সাথে দেখা করছে। তিনি সবার দিকে তাকাচ্ছেন, হয়তো বুঝতেও পারছেন। সামির এসে ফুলবানুর সাথে দেখা করল। তিনি সামিরের দিকে চেয়ে একটু অস্থির হয়ে উঠলেন। একজন নার্স এসে বলল,” এখন ভীড় জমাবেন না। পেশেন্টকে রেস্ট নিতে দিন।”

সবাই করিডোরে এসে জড়ো হলো। সামির সুমন সাহেবকে জিজ্ঞেস করল,” হঠাৎ এসব কিভাবে হলো বাবা?”

” স্বপ্ন দেখে খুব ভয় পেয়েছিল। আবোল-তাবোল বকছিল। তারপর হঠাৎ খুব বমি করতে লাগল। বলল তার নাকি খুব গরম লাগছে। আমি আর সামিয়া বাতাস করছিলাম। হঠাৎ বুকে ব্যথা উঠল। মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে গেল। তারপর দেখলাম হসপিটালে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।”

নীলিমা আতঙ্কিত কণ্ঠে বললেন,” আমি তো খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। যদি আম্মার কিছু হয়ে যায়! ভাগ্যিস দ্রুত হসপিটালে আনায় সিরিয়াস কিছু হয়নি।”

সুমন বিলাপ করে বললেন,” প্রতিদিন আম্মা আমার সাথে হাঁটতে যেতে চাইতো৷ আমি আলসেমি করে নিয়ে যাইনি একবারও। এখন খুব আফসোস লাগছে। এবার আম্মা সুস্থ হলে তাকে সবার আগে হাঁটতে নিয়ে যাবো।”

তাঁর চোখ টলমল হয়ে গেল। সায়ান সান্ত্বনা দিতে বাবার কাঁধে হাত রাখল। অরা এসব দেখে আরও অপরাধবোধে ভুগছে। তার জন্যই এখন বাড়িতে সবার এতো ভোগান্তি। শুধু একটা মিথ্যা কথার জন্য যে এমন হবে সে বুঝতেও পারেনি।

কিছুক্ষণ পর একজন নার্স এসে বলল,” আপনাদের মধ্যে সামির কে? পেশেন্ট দেখা করতে চাইছেন।”

সামির তড়াক করে দাঁড়িয়ে বলল,” আমি।”

” আসুন।”

ফুলবানুর সাথে দেখা করে হতাশ মুখে ফিরে এলো সামির। সবাই প্রশ্ন করতে লাগল, তিনি কি বলেছেন? কিন্তু সামির কারো কথার উত্তর দিচ্ছে না।তাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে। সে শুধু বলল, তেমন কিছু না।

নীলিমা এই কথা বিশ্বাস করলেন না। ছেলের হাব-ভাব দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছু একটা হয়েছে। আসল কথা জানতে তিনি নিজেই ভেতরে গেলেন।

ফুলবানু নীলিমাকে বললেন,” ও নিলু, আমি আর বেশি দিন নাই। আমার টিকিট আইসা পড়ছে। খুব দ্রুতই আল্লাহর কাছে চলে যাবো। তবে যাওয়ার আগে আমার একটা শেষ ইচ্ছা৷ বড়নাতির ঘরের পুতিন আমি দেইখা মরতে চাই।”

নীলিমা হতভম্ব গলায় শুধালেন,” আম্মা, আপনি কি এই কথা বলার জন্য সামিরকে ডেকেছিলেন?”

” হ ডাকছি। তো কি হইছে এখন? সে কি চেইতা গেছে? তাতে আমার কিছু করার নাই। আমি আমার মনের কথা জানাইছি।”

নীলিমা শাশুড়ীর কাঁধে হাত রেখে বললেন,” আম্মা আপনি একদম চিন্তা করবেন না। আপনি আরও অনেক দিন আমাদের মাঝে থাকবেন।”

” এসব বইলা লাভ নাই৷ আমি টের পাইছি। আমার মৃত্যু কাছায় আইতাছে।”

নীলিমা ফুলবানুর সাথে অযথা তর্কে গেলেন না। তিনি একবার যা বোঝেন, সেটা বলতেই থাকেন। কারো সাধ্য নেই তাকে বোঝানোর। তিনি হতাশ মুখে বাইরে এসে সবার উদ্দেশ্যে বললেন,” আম্মা বলেছে তার নাকি বাঁচার আশা নেই। মনে হয় মৃত্যু ভয় ঢুকে গেছে মনে। এই বয়সে যা হয় আর কি…তাই তিনি শেষ ইচ্ছার কথা জানাতেই সামিরকে ডেকেছিলেন।”

সামিয়া আগ্রহী হয়ে প্রশ্ন করল,” দাদীর শেষ ইচ্ছেটা কি মা?”

নীলিমা সামিরের দিকে তাকিয়ে বললেন,” পুতির মুখ দেখা।”

সামির দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। অরা কথাটা শুনে আৎকে উঠল। সায়ন ফিক করে হেসে দিল। সুমন সাহেব কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,” হাসার মতো কি হলো বুঝলাম না। একটা অসুস্থ মানুষ ম-রার ভয়ে শেষ ইচ্ছা জানিয়েছেন। এখানে তুই কেন হাসবি?”

সায়নের হাসি তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয়ে গেল।

সামিয়া বলল,” এটা তো দাদীমা আজ সকালেও আমাকে বলছিল। ভাবী, তোমার সকাল থেকে শরীর খারাপ লাগছিল না?তখনি দাদীর মাথায় ব্যাপারটা ঢুকে গেছে। হয়তো পুতির মুখ দেখে মরতে পারবে কি-না এই টেনশনেই তার এই অবস্থা।”

অরা নিজে খুব ভালো করেই জানে কোন টেনশনে ফুলবানুর এই অবস্থা। কিন্তু সেই কথা না বলে তিনি অন্যকথা বললেন কেন? তাঁর মনে কি চলছে আসলে?

নীলিমা বললেন,” আল্লাহ চাইলে হবে, আল্লাহ না চাইলে হবে না। কিন্তু অরা, তোমার অবস্থা দেখে সকালে আমারও একবার সন্দেহ হয়েছিল। চলো তোমাকে বরং টেস্ট করিয়ে আনি।”

অরা থতমত খেয়ে বলল,” কিসের টেস্ট আম্মু?”

” প্রেগন্যান্সি টেস্ট!”

অরা চোখ বড় করে সামিরের দিকে চাইল। সামিরও অপ্রস্তুত। কি বলা উচিৎ বুঝতে পারল না।নীলিমা বললেন,” আরে ভয়ের কিছু নেই। পজেটিভ-নেগেটিভ যেকোনো একটা রেজাল্ট তো হবেই। কনফার্ম করতে ক্ষতি কি? যদি পজিটিভ হয় তাহলে আম্মাও একটু শান্তি পেলেন। আর আমরাও নিশ্চিন্ত হলাম।”

অরা অসহায় দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। সামিরও তার দিকেই তাকিয়ে আছে। সে একবার বাঁধা দেওয়ার চেষ্টায় বলল,” আম্মু বাদ দাও না। এখন এইসব করার কি দরকার? রেজাল্ট তো নেগেটিভও হতে পারে।”

” সেটা দেখার জন্যই তো টেস্ট করব। আর যদি বাই চান্স পজিটিভ হয়, তাহলে তোর দাদী শুনলে কত খুশি হবে!”

সামির চোয়াল শক্ত করে বলল,” আর যদি রেজাল্ট পজিটিভ না হয়?”

সুমন সাহেব বিরক্ত গলায় বললেন,” সেটা তখন দেখা যাবে। তোর মায়ের যেহেতু সন্দেহ হচ্ছে, একবার টেস্ট করুক না। প্রবলেম কি?”

নীলিমা আত্মবিশ্বাসের সাথে অরাকে নিয়ে গেলেন। সাথে সামিয়াও গেল। হসপিটালের ফার্মেসী থেকে প্রেগন্যান্সি কিট কেনা হলো। তাই দিয়ে পরীক্ষা হবে। একজন নার্স এসে হেল্প করতে চাইল।

এদিকে সামির টেনশনে অনবরত পানি খাচ্ছে। পরিস্থিতি কোথা থেকে কোথায় চলে গেছে! সবাই এমন আশা ধরে বসে আছে কেন? রেজাল্ট তো অবশ্যই নেগেটিভ হওয়ার কথা। তখন সবার আশাভঙ্গ হবে৷ সবাই মনখারাপ করবে। সেই কথা ভেবে সামিরের মেজাজটাই খারাপ হচ্ছে। প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার মতো ফালতু আইডিয়া মানুষের মাথায় আসে কিভাবে?

একটু পর নীলিমা হাসি মুখে উপস্থিত হলেন। সামির তখনও ফিল্টার থেকে পানি খাচ্ছিল। সায়ন প্রশ্ন করল,” রেজাল্ট কি মা?”

নীলিমা গদগদ কণ্ঠে বললেন,” মিষ্টি আনার ব্যবস্থা কর। আজ পুরো হসপিটালে মিষ্টি বিলানো হবে। বউমা তো প্রেগন্যান্ট!”

সামিরের মুখ থেকে পানি ছিটকে বেরিয়ে গেল। দেয়াল ভিজে একাকার হলো। অরা মাথা নিচু করে আছে। এতোবড় লজ্জায় পড়তে হবে তা সে কল্পনাও করেনি। এদিকে সায়ান আর সামিয়া খুশিতে উল্লাস করতে লাগল। সুমন সাহেব আর নীলিমাও আনন্দে আত্মহারা। কেবল সামির আর অরার মুখ অন্ধকার দেখাচ্ছে। সামির অরার দিকে তাকিয়ে আছে হতভম্ব হয়ে। কিন্তু অরা তো চোখ তুলে তাকাতেও পারছে না!

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে