#রুপালি_মেঘের_খামে
লিখা- Sidratul Muntaz
১৪.
সারাবাড়ি খুঁজেও অরাকে পাওয়া যাচ্ছে না। এতোরাতে মেয়েটা যাবে কই? নীলিমাকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন,” কে? তোর কাজিন? মনে হয় ছাদে আছে।”
সামির হতাশার নিঃশ্বাস ছাড়ল। অরা ভালোই সমস্যায় ফেলেছে তাকে। মা এখন কথায় কথায় বিষয়টি নিয়ে খোঁচা মা-রতে ছাড়বে না। ছাদে যেতেই অরাকে পাওয়া গেল।
কার্ণিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে অরা। ঠান্ডা বাতাসে তার চুল উড়ছে। শাড়ির আঁচল সঠিক জায়গা থেকে সরে গেছে। অন্ধকারেও ঝিলিক দিয়ে উঠেছে মসৃণ ত্বক। সামির দ্রুত নজর ঘুরিয়ে নিল। এই মেয়ের জন্য শাড়ি নিষিদ্ধ করা উচিৎ। যেই জিনিস সামলাতে পারে না সেই জিনিস পরে কেন? সামির না এসে যদি ছাদে অন্য কেউ আসতো? অন্য ফ্ল্যাটের মানুষ? তখন কি হতো?
সামির ভাবল অরাকে একটা শিক্ষা দেওয়া উচিৎ।শব্দহীন গতিতে অরার পেছনে এসে দাঁড়ালো সে। অরা মনোযোগ দিয়ে রাতের ব্যস্ত শহর দেখছে। আনমনে ভাবছে অনেক কিছু। আচমকা পেটের কাছে বিষাক্ত ব্যথা অনুভব হতেই চেঁচিয়ে উঠল। মনে হলো যেন একটা পোকা বিষদাঁত বসিয়ে দিয়েছে কোমরে।
অরা পেছনে তাকিয়ে সামিরকে দেখে আরও এক দফা চমকালো। যে জায়গায় সামির চিমটি কে-টেছে সেই জায়গা হাত দিয়ে ডলতে ডলতে আশ্চর্য গলায় বলল,”এটা কি করলেন?”
সামির কিড়মিড় করে বলল,” এইভাবে কন্টিনিউয়াসলি আমাকে বিরক্ত করে গেলে আরও করব এমন।”
” আমি আপনাকে বিরক্ত করলাম কখন?”
গোপনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সামির। অরা যে তাকে কি পরিমাণ বিরক্ত করছে সেটা বেচারী নিজেও হয়তো জানে না।
অরা অভিমান করে বলল,” স্যরি, যদি জানতাম আমি এলে আপনি বিরক্ত হবেন তাহলে আসতামই না।”
সামির একটা ধাক্কার মতো খেল। বুকের বামপাশ চিনচিন করে উঠল। অরার অভিমানী দৃষ্টি তাকে খু-ন করে ফেলে। এভাবে সে গাল ফুলালে ভীষণ কিউট লাগে। নিষিদ্ধ ইচ্ছেরা বাঁধন ছাড়া হতে চায়। ইচ্ছে করে তাকে কাছে টেনে গাল দু’টো টিপে দিতে।
তার লজ্জামাখা মুখে ঠোঁট ছোঁয়াতে। কিন্তু এতো দ্রুত বাঁধন ছাড়া হলে তো চলবে না। একবার বাঁধন ছাড়া হতে গিয়েই তো বাঁধন ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। তাই এইবার সামির নিজের মনের অনুভূতিদের কড়া শাসনে রেখেছে। কিছুতেই গলবে না সে এবার। অরা যতই উত্তাপ দেখাক না কেন!
হঠাৎ ডিভোর্সের ব্যাপারটা মনে পড়তেই অরা অসহায় মুখে প্রশ্ন করল,”আচ্ছা, আপনি কি আজকে বাবাকে কিছু বলেছেন?”
” কোন বিষয়ে?”
” আমাদের ডিভোর্সের বিষয়ে।”
” না। কিন্তু তুমি চাইলে বলবো।”
হাঁফ ছেড়ে শান্ত হলো অরা। পরক্ষণেই মিনমিনে স্বরে বলল,” আমি চাই না, কোনো ডিভোর্স চাই না!”
সামির চায় অরা তাকে ডিভোর্স না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করুক। কিন্তু অরা হলো ‘বুক ফে-টে গেলেও মুখ ফা-টবে না’ ধরণের মেয়ে। কিছুতেই সে সামিরের কাছে অনুরোধ করতে পারবে না। তাই সামিরও নিজের সিদ্ধান্তে অটল। যতক্ষণ না অরা তার অটলতা ভাঙছে! বেশ কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতা বয়ে গেল। একটু পর সামির বলল,” নিচে চলো।”
” কেন? এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে আপনার ভালো লাগছে না?”
” এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগবে কেন? ভালো লাগার মতো কি কিছু হয়েছে?”
অরার চেহারা লালচে আভায় ভরে উঠল। আড়ষ্ট গলায় বলল,” তাহলে কি হলে আপনার ভালো লাগবে?”
সামির তার পকেটে হাত গুঁজে একটু আয়েশ করে দাঁড়ালো। আকাশের দিকে চেয়ে ভাবলেশ হয়ে বলল,” জানি না। যদি কোনো সুন্দরী মেয়ে পাশে থাকতো তাহলে বলতে পারতাম।”
অরার মুখটা চুপসে গেল মুহুর্তেই।চোখ দু’টো ছোট করে বলল,” আপনি কি আমাকে অসুন্দরী বললেন?”
সামির হেসে ফেলল,” ঠিক তা নয়। তুমি সুন্দরী… কিন্তু খুব ন্যাকা।”
” ন্যাকা? কি ন্যাকামি করেছি আমি?”
” এইযে, মাত্র রেগে উঠলে। এটাও একটা ন্যাকামি। ব্যক্তিত্বপূর্ণ মানুষ ঠুনকো বিষয় নিয়ে হুটহাট রেগে ওঠে না।”
অরার চোখ টলমলে হয়ে এলো। মনের গহীনে যেন কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিল। সত্যিই কি সামির তার সম্পর্কে এমন ধারণা করে? সে যদি ব্যক্তিত্বহীন হয় তাহলে ব্যক্তিত্বপূর্ণ কে? ওই তন্বি নামের চুন্নি?
অরা ভেতরে তেতে উঠলেও সেটা প্রকাশ করল না। অন্যদিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলবে ঠিক করল। কিন্তু এর আগেই সামিরের ফোন এলো। সে মোবাইল নিয়ে ছাদের অন্যপাশে চলে গেল।
এদিকে অরার শরীরের কম্পন থামছেই না। তার মনে হচ্ছে আটতলা ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে এই মুহূর্তে প্রাণ বিসর্জন দিতে। কিন্তু তাতে তো কোনো লাভ হবে না। একটু পর সামির এসে বলল,” নিচে চলো। রাত অনেক হয়েছে।”
” আমি যাবো না। এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো। যেতে হলে আপনি যান।”
সামির কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,” এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে তোমার ঠান্ডা লাগবে।”
অরা উদাসীন কণ্ঠে বলল,” লাগুক।”
হঠাৎ অরার এই উদাসীনতাকে তুমুল বিস্ময়ে পাল্টে দিয়ে সামির আচমকা তাকে পাজাকোলায় নিয়ে ছাদ থেকে বেরিয়ে যেতে লাগল। তার চেহারা অভিব্যক্তিহীন। এদিকে বিস্ময়ে অরার চোখ কোটরাগত হয়ে আসতে চাইছে। আশ্চর্য কণ্ঠে চাপা আর্তনাদ করল,” কেউ যদি দেখে?”
” দেখলে দেখবে। আমার তো কোনো সমস্যা নেই। এটা হচ্ছে আমার কথা না শোনার শাস্তি।”
” কথা না শুনলেই আপনি এমন করবেন?”
” প্রয়োজন হলে করবো।”
সামিরের কণ্ঠ নির্বিকার। অরা ফিসফিস করে বলল,” তাহলে এখন থেকে আমি আপনার কথা কখনও শুনবো না।”
এই কথা বলে ফেলার পর সে লজ্জা পেয়ে মুখ গুটিয়ে ফেলল। সামিরের হৃৎস্পন্দনের গতি তখন তুমুলে। মনে মনে ভাবল, কথা না বলা মেয়েটা এমন ঠোঁটকাটা হয়ে যাচ্ছে কিভাবে? মাত্র একটা চিঠির এতো জোর? এমন করে চলতে থাকলে সামিরের প্রতিজ্ঞা ভাঙতে বেশি সময় লাগবে না।
দরজার সামনে এসেই সামির ভেবেছিল অরাকে কোল থেকে নামিয়ে দিবে। কিন্তু ড্রয়িংরুমে দেখা গেল কেউ নেই। তাই একদম বেডরুম পর্যন্তই নিয়ে এলো। অরা শুধু ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। সামিরকে এতো কাছ থেকে দেখতে খুব ভালো লাগছিল তার।
শক্ত চোয়ালবিশিষ্ট গম্ভীর চেহারা। এই চশমাওয়ালা মানুষটি যে আসলে খুব মিষ্টি এটা সে আগে লক্ষ্য করেনি।সামিরকে মনোযোগ দিয়ে দেখার সময় অরার ঠোঁটে লেগে ছিল লাজুক হাসি। অরাকে বিছানায় এনে রাখতেই সামির দেখল তার পোলো টিশার্টের কলার চেপে ধরে আছে অরা। তার ঠোঁট দু’টো কাঁপছে অনবরত। চোখ বন্ধ হয়ে গেছে।
সামির গাঢ় দৃষ্টিতে তাকাল সেই ঠোঁটের দিকে। মসৃণ ওই ঠোঁটজোড়ার কম্পন থামাতেই আলতো করে চেপে ধরল। চুম্বনের তুমুল ঝড়ে তোলপাড় হয়ে গেল অরার ভেতরটা। বাজতে লাগল উপশিরা-শিরা। বন্ধ চোখ দু’টো খুলে গেল অনায়াসে।
তারপর হুট করেই আগ্রাসী কাঁটার মতো সেদিনের অপ্রীতিকর স্মৃতি মাথা চাড়া দিয়ে উঠতেই থেমে গেল সামির। কয়েক মুহূর্ত ভ্রু কুঁচকে চেয়ে থেকে উঠে দাঁড়াল।
অরা অবাক স্বরে প্রশ্ন করে ফেলল,” কোথায় যাচ্ছেন?”
সামির একপলক তাকাল। আলতো স্বরে বলল,” গেস্টরুমে। আমার কিছু কাজ আছে। তুমি ঘুমাও। গুড নাইট। ”
অরার হতবিহ্বল দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বের হয়ে গেল সামির। সেদিকে নিশ্চুপ তাকিয়ে থেকে অরা একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করল। তার মন চাইছে এখনি দৌড়ে গিয়ে সামিরকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু সে এই কাজ কিছুতেই করতে পারবে না৷ কাজটি করার জন্য যতটুকু সাহসের প্রয়োজন ততটুকু সাহস তার এখনও হয়ে উঠেনি ভেবেই হতাশ লাগল ভীষণ। কেন এতো ভীতু সে? কেন তার এতো লজ্জা?
এই ভয়, লজ্জা আর অস্বস্তির জন্যই আজ এতোকিছু হচ্ছে। ইশ, অরা যদি রূপার মতো হতো তাহলে এতো সব ঝামেলা পোহাতেই হতো না। জীবনের সব সমস্যা এক চুটকিতে সমাধান হয়ে যেতো।
অরার মনে হয়, বিয়ের প্রথম রাতেই রূপা তার বরের কোলে উঠে বসে থাকবে। সে যেই মেয়ে, তার কান্ড-কারখানা দেখে বর বেচারা নিজেই না লজ্জায় লাল হয়ে যায়। তার কথাগুলো যেন কথা নয়, একেকটা বিস্ফোরক। সেসব কথা শুনে অরা নিজেই লাল টমেটো হয়ে যায়। তাহলে রূপার বরের কি অবস্থা হবে?
আহারে বেচারা! অরা রূপাকে খুব মিস করছে। এখনও তো বেশি রাত হয়নি৷ রূপাকে একটা ফোন করাই যায়। কয়েকদিন ধরে ঝামেলায় রূপার সাথে ঠিকঠাক কথাই বলা হয়নি।
” হ্যালো রূপা।”
” বল সেলফিশ।”
” একটা সমস্যার কথা বলার জন্য ফোন করেছিলাম।”
” জানি তো। সমস্যা ছাড়া আমার কথা তোর মনে পড়ার কথা না।”
” এভাবে বলিস না প্লিজ।”
” ঢং না করে আসল কথা বল।”
” সমস্যা হচ্ছে উনি…”
” উনি মানে কি? তোর বর?”
” হুম।”
” কি করেছে সে? তোকে চু-মু দিয়েছে? ”
অরা লজ্জায় বিব্রত হয়ে বলল,” ধূর, তুই এসব বললে কিন্তু আমি ফোন রেখে দিবো।”
” রেখে দে। শা-লি ন্যাকার বস্তা একটা! বিয়ের এক মাস হতে চলল আর উনি এখনও চু-মুর কথা শুনে লজ্জায় আৎকে উঠছেন। কানের নিচে থা-প্পড় খেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে তোর।”
” এমন করছিস কেন?”
” তো আর কেমন করবো? আসল সমস্যা কোথায় সেটা বল।”
অরা প্রথম দিন থেকে শুরু করে সব বলে নিল৷ তারপর প্রশ্ন করল,” উনি আমাকে ঘরে একা ছেড়ে গেস্টরুমে চলে গেছেন। মনে হয় সেদিনের ঘটনাটা এখনও ভুলতে পারেননি। আমি নিজেও তো ভুলতে পারছি না। এখন আমার কি করা উচিৎ? ”
” মাত্র একটা থাপ্পড়েই তার এতো রাগ? এদিকে সায়ানকে আমি কথায় কথায় থাপ্পড় মারি। ”
” সবাই তো আর সায়ান ভাই না। ওই রাগী, এটিটিউড ওয়ালার গায়ে হাত তুলে যে আমি বিরাট পাপ করে ফেলেছি তা এখন বুঝতে পারছি।”
” তুই কি তন্বিকে নিয়ে ভয় পাচ্ছিস? ভাবছিস তোর উপর রাগ করে উনি অন্যকোথাও ঝুঁকে যায় কি-না?”
রূপা যেন অরার মনের কথাই বুঝে ফেলল।
” হ্যাঁ। ঠিক বলেছিস।”
” যদিও তোর ভয়টা অমূলক…. তবুও বলছি। তুই এক কাজ করতে পারিস, ওই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে যা। সবসময় বরকে নজরদারিতে রাখতে পারবি। এতো ইনসিকিউরিটি নিয়েও থাকতে হবে না।”
” ভালো আইডিয়া। কিন্তু আমি কিভাবে ওখানে ভর্তি হবো? বললেই কি ভর্তি হওয়া যায় নাকি?”
” সেকেন্ড টাইমের অপশন নিশ্চয়ই আছে। আর কিছুদিন পরেই তো এডমিশন শুরু হবে। মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা কর, পেরে যাবি। তুই তো স্টুডেন্ট ভালো। ”
অরা গুগল ঘেঁটে ভার্সিটির ভর্তি সার্কুলারটা বের করল। এখনও ভর্তির সুযোগ আছে। বর্তমানে অরা চট্টগ্রামের একটা প্রাইভেট ইন্সটিটিউটে পড়ছে। ঢাকায় আসার সুবাদে তাকে এমনিতেও ভার্সিটি চেঞ্জ করতে হতো। সে ভাবুক স্বরে বলল,” কিন্তু সময় তো অনেক কম। মাত্র দুইমাস। আমি কি পারব?”
” নিশ্চয়ই পারবি। চেষ্টা কর।”
” কিন্তু যদি আমি ওই ভার্সিটিতে যাই তাহলে তন্বি হবে আমার সিনিয়র। যদি র্যাগ দেয়?”
” লেকচারারের বউ হয়ে র্যাগকে ভয় পাচ্ছিস? গাঁধী কোথাকার!”
” ও বাবা, এটা তো আমি চিন্তাই করিনি। ওই ভার্সিটিতে ভর্তি হলে উনি আবার আমার টিচার হয়ে যাবেন। যতটা জড়তা কেটেছে তা আবার নতুন করে ফিরে আসুক আমি চাই না।”
রূপা একটু ভেবে বলল,” সামির ভাইয়ের সাবজেক্ট ফিজিক্স না? তুই বায়োলজি রিলেটেড কোনো সাবজেক্ট নেওয়ার চেষ্টা কর। তাহলে উনার ক্লাস করতে হবে না। আর কোনো সমস্যাও হবে না। সিম্পল!”
” এটাও গুড আইডিয়া।”
রূপা হেসে বলল,” এবার তোর ত্যাড়া বরকে কিভাবে সোজা করতে হবে তার একটা উপদেশ দিচ্ছি শোন, সকাল-বিকাল এক্সপোস করতে থাক।”
” এক্সপোস মানে? সেটা আবার কি?”
” আরে এক্সপোস মানে সিডিউস করা আর কি! তুই এমন এমন পোশাক পরবি যেন বিশেষ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখা যায়। গলা বড় এমন জামা পরবি যাতে ক্লিভেজ দেখা যায়। এক্ষেত্রে নাইটি বেস্ট। তোকে তো রেড কালারে সেই হট লাগে। শাড়ি পরলে পেটের কাছ থেকে আঁচল সরিয়ে রাখবি। যাতে নাভি দেখা যায়।”
অরার কান গরম হয়ে উঠল। ঝাঁজালো স্বরে বলল,” ছি, আমি এসব করতে পারবো না। তোর কাছে সভ্য কোনো উপায় থাকলে বল৷”
” এটা কি অসভ্য উপায়?”
” অবশ্যই।”
” তাহলে তুই ম-র। আমাকে আর ফোন দিবি না।”
খট করে লাইন কে-টে দিল রূপা। আশ্চর্য দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে মেজাজটা গিলে নিল অরা। তার আগেই বোঝা উচিৎ ছিল, রূপাকে ফোন করলে সে এইসবই বলবে। এই মেয়ের মাথায় সব অসভ্য চিন্তা। ওর কথা শুনে এসব করলে তো সামীর তাকে বেহায়া ভাববে। ছি, ছি!
তবে রূপার প্রথম বুদ্ধিটা খুব ভালো। অরার এখন থেকেই পড়াশুনা শুরু করা উচিৎ। কিন্তু সে তো কবেই এডমিশনের সব বই বিক্রি করে দিয়েছে। আবার কিনতে হবে।
পরদিন সকালে উঠেই সামিয়াকে সাথে নিয়ে নীলক্ষেত চলে গেল অরা। এডমিশনের প্রয়োজনীয় সব বই কিনে আনল। কোমরে আঁচল বেঁধে পড়াশুনা শুরু করল। পড়ার টেবিলে বসেই সে খাওয়া-দাওয়া করবে। তাও টেবিল ছেড়ে উঠবে না।
ফুলবানু এসব দেখে মুখ বেঁকিয়ে বলতে লাগলেন,” এডি আবার কুন ঢং? যত্তসব রং-ঢং!”
তবে নীলিমা খুবই খুশি হলেন। তিনি বললেন,” তুমি খুব ভালো একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছো অরা। সামিরের ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারলে আর কোনো টেনশনই থাকবে না। সামিয়া তো চান্স পেল না। তাই ওকে প্রাইভেটে ভর্তি করাতে হলো। আমি তো ভেবেছিলাম তোমাকেও সামিয়ার ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দিবো।”
অরা বলল,” সেটার কোনো প্রয়োজন নেই আম্মু। আমি এখানেই চান্স পাবো, আপনি দেখবেন!”
” মাশআল্লাহ। তোমার স্বপ্ন পূরণ হোক।”
অরা বড় মুখ করে এই কথা বলে তো ফেলল, কিন্তু সত্যিই কি সে চান্স পাবে? ভাগ্যের কথা বলা যায় না। যদি না পারে? তাহলে মান-সম্মান কিছু বাকি থাকবে না আর।
ভার্সিটি থেকে ফিরে নিজের ঘরে ঢুকে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল সামির। বেশ এলোমেলো অবস্থা ঘরের। চারদিকে বই-খাতা ছড়ানো-ছিটানো। টেবিলে রাখার জায়গা হয়নি বলে কিছু বই খাটের নিচে আর কিছু খাটের ওপরে রাখা হয়েছে। হাত-পা ছড়িয়ে পড়াশুনা করছে অরা। তার অন্য কোনোদিকে মনোযোগ নেই বললেই চলে।
ধীরপায়ে ভেতরে এলো সামির। ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়াল। গলার টাই খুলতে খুলতে প্রশ্ন ছুঁড়ল,” কি ব্যাপার? এখন থেকেই বিসিএসের প্রিপারেশন শুরু করলে নাকি?”
অরা বেশ চটপটে গলায় উত্তর দিল,” আমার কি এখনও বিসিএসের বয়স হয়েছে? আমি কি আপনার মতো বুড়ো নাকি? এডমিশনের প্রিপারেশন নিচ্ছি।”
সামির বিষম খেল। তাকে বুড়ো বলে অপমান করা হচ্ছে? সে বুড়ো হলো কোনদিক দিয়ে? সামান্য রেগে বলল,” এডমিশন মানে?এখন কিসের এডমিশন?”
” আপনার ইউনিভার্সিটির একটা সিট আমি খুব শীঘ্রই দখল করতে যাচ্ছি।”
অরা এতো কনফিডেন্টলি কথাটা বলল যে সামিরের হাসি পেল। সে বলল,” আমার ইউনিভার্সিটিতে সেকেন্ড টাইমের কোনো অপশন নেই। আগে ছিল, কিন্তু এ বছর বাতিল করা হয়েছে।”
অরার সারাদিনের পরিশ্রমের উপর যেন ফস করে এক বালতি জল ঢেলে দেওয়া হলো। সে মুখ অন্ধকার করে শুধাল,” কিন্তু আমি যে সার্কুলারে দেখলাম?”
” মনে হয় আগের বছরের সার্কুলার দেখেছো।”
অরার ছোট্ট মনটা ভেঙে একদম টুকরো-টুকরো হয়ে গেল। কত স্বপ্ন দেখেছিল সে। শ্বাশুড়ী মাকেও কত বড় মুখ করে বলেছে, কতটাকার বই কিনে এনেছে… অথচ এখন! মন একদম খারাপ হয়ে গেল।
*১,০০০ রিয়েক্ট হলে আজকেও ৮টায় নেক্সট পর্ব দিবো। জানি এখন পর্যন্ত কোনো পর্বেই এতো রিয়েক্ট হয়নি৷ এই পর্বে রেকর্ড ব্রেক হোক। *
চলবে