রুপালি মেঘের খামে পর্ব-১৩

0
653

#রুপালি_মেঘের_খামে
লিখা- Sidratul Muntaz

১৩.
বাইরে এসে অরা বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল,” কিছু হয়নি আম্মু। বাদ দিন।”

নীলিমা বুঝতে পারছেন অরা খুব অস্বস্তিবোধ করছে। মেয়েটা এতো চাপা স্বভাবের! তার মনের কথা বের করা কোনো সহজ বিষয় না। নীলিমা অরাকে সহজ করার উদ্দেশ্যে একটু হাসলেন। সস্নেহে বললেন,” তুমিও দেখি সামিরের মতো আমাকে আম্মু বলা শুরু করেছো।”

” আমি এখন থেকে আপনাকে আম্মু বলেই ডাকব।”

” শুধু ডাকলে তো হবে না, মন থেকে মানতেও হবে। তোমার সব সমস্যার কথা মায়ের কাছে যেভাবে বলো, আমার কাছেও সেভাবে বলতে হবে। মনে থাকবে?”

অরা মিষ্টি করে হেসে মাথা নাড়ল। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠল। নীলিমা তাকে দরজা খুলতে বলে রান্নাঘরে চলে গেলেন।

অরা দরজা খুলে আশ্চর্য হলো। বাইরে তন্বি দাঁড়িয়ে আছে। অরাকে দেখে সুন্দর করে হাসল সে।

” কেমন আছো সামিয়া?”

অরা মুখ মলিন করে বলল,” আপনি এই সময়?”

তন্বি এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল,” স্যার বাড়িতে আছে তো?”

অরা রূঢ় স্বরে বলল,” না নেই।”

” কি? কিন্তু স্যারের সাথে তো একটু আগেই আমি কথা বলে এলাম।”

তন্বি অরাকে পাশ কাটিয়ে ঢুকে গেল ভেতরে। আশ্চর্য মেয়ে তো! দরজাটা একটু শব্দ করেই আটকাল অরা। তন্বি সোফায় এসে বসতে না বসতেই দেখা গেল সামির উঠে এসেছে। বাহ, একটু আগে অরা যখন কথা বলার চেষ্টা করছিল তখন তো কম্পিউটারের দিকে এমনভাবে চেয়েছিল যেন আজন্মেও চোখ সরাবে না৷ অথচ এখন তন্বির আগমনে কেমন সুড়সুড় করে উঠে এসেছে। অরার গায়ে জ্বালা ধরে গেল। অপ্রতিরোধ্য একটা আগুন চিড়বিড় করতে লাগল মাথায়।

তন্বি হাসিমুখে বলল,” স্যার, আসসালামু আলাইকুম। ভালো আছেন?”

” এইতো, ভালো। তারপর বলো তন্বি, কি খবর তোমার?”

সামির বসল সিঙ্গেল সোফায়। তন্বি বসল একদম তার পাশের সোফাতেই। অরা ড্রয়িংরুমের এক কোণে দাঁড়িয়ে রইল। কি করা উচিৎ সে বুঝতে পারছে না।

তন্বি বলল,” আমি ভালো আছি। আপনার জন্য একটা জিনিস এনেছি স্যার। ঠান্ডার মধ্যে এটা গলায় জড়িয়ে রাখলে বেশ উপকার পাবেন।”

তন্বি তার ব্যাগ থেকে একটা মাফলার বের করল। তখন ইচ্ছাকৃতভাবেই নিজের আইডি কার্ড সোফার নিচে ফেলে দিল। অন্তত আইডি কার্ডের বাহানায় যদি সামির তার বাড়ি আসে! আগের বার স্বর্ণের দুলটা হারিয়ে গেছিল। এটা নিশ্চয়ই হারাবে না।

সামির আন্তরিক কণ্ঠে বলল,” থ্যাঙ্কিউ। খুব সুন্দর এটা।”

তন্বি লাজুক কণ্ঠে বলল,” আমার আম্মু নিজের হাতে বুনেছে।”

অরা ড্রয়িংরুমের আশেপাশে ঘুরঘুর করতে লাগল। এখানে তার কোনো কাজ নেই তবুও বিভিন্ন বাহানায় আসা-যাওয়া করছে। দু’টি মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করা খুব দরকার। কিন্তু মানুষ দু’টো নিজেদের আলোচনায় এতোই বিভোর যে অরার দিকে মনোযোগ দেওয়ার সময়ই তাদের নেই!

একবার অরা এলো সোফার কুশন ঠিক করতে। কোনো প্রয়োজন ছিল না, তবুও সে নিজের উপস্থিতি সামিরের পাশে বসে থাকা মেয়েটিকে বোঝাতে চায়। কিন্তু মেয়েটি যেন তাকে দেখেও দেখছে না! এমনভাবে সামিরের উপর দৃষ্টি আটকে রেখেছে যেন সে ছাড়া পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোনো মানুষ নেই।

অরার অসহ্য অনুভূত হচ্ছে। একদিন অসুস্থতার বাহানায় সে ভার্সিটি যায়নি বলে বাড়ি বয়ে দেখতে চলে আসতে হবে? মেয়েটার আহ্লাদ দেখে আর বাঁচে না অরা! অসুস্থ হলেই কেন দেখতে আসতে হবে? আর দেখতে এসে এমন ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাসিমুখে গল্প করতে হবে? ভাবটা এমন যেন তার হাসি দেখেই সুস্থ হবে সামির। ঔষধপত্রের আর প্রয়োজন নেই। অরাকে অনেকক্ষণ ধরে সোফার কুশন ঠিক করতে দেখে একটু ঝেড়ে কাশলো সামির। পরিষ্কার কণ্ঠে বলল,” আম্মুকে বলো তন্বি এসেছে। এদিকে যেন একটু চা আর স্ন্যাক্স দেওয়া হয়।”

সাথে সাথেই রিনরিনে কণ্ঠে তন্বি বলে উঠল,” আমি কিছু খাবো না এখন স্যার। আপনাকে দেখতে এসেছিলাম। এখন উঠবো।”

সেই কখন থেকে উঠবো, উঠবোই করে যাচ্ছে তন্বি নামক চুন্নি। কিন্তু উঠছে আর কই? যেন কোমরের সাথে ফেভিকল লাগিয়ে আজীবন বসে থাকার চুক্তি স্থাপন করেছে সোফার সাথে। সামির বলল,” এসেছো যখন কিছু তো খেতেই হবে অন্তত এক গ্লাস পানি হলেও। আমরা খালি মুখে মেহমান বিদায় করি না।”

” ওকে তাহলে এক গ্লাস পানিই খাবো।”

” আচ্ছা, ঠান্ডা না গরম?”

” যেটা সুবিধা হয়।”

সামির অরার দিকে ইশারা করে তাকে ‘পানি’ আনতে বলল। অরা চলে যাওয়ার সময় শুনল মেয়েটি প্রশ্ন করছে,” ওর নাম বুঝি অরা? আমি তো ওকে সামিয়া ভেবেছিলাম।”

” ও সামিয়া না।”

” কি আশ্চর্য! যতবার দেখা হয়েছে আমি ওকে সামিয়াই ডেকেছি। অথচ একবারও সে আমার ভুলটা ভাঙায়নি। আচ্ছা, কে এই কিউট মেয়েটা?”

” আমার কাজিন। চিটাগাং থেকে এসেছে।”

উত্তরটা শুনেই খুকখুক করে কেশে উঠলো অরা। বিস্মিত দৃষ্টিতে সামিরের দিকে চাইল৷ এতোবড় মিথ্যেটা সামির কি করে বলতে পারল তা ঠিক বুঝে আসছে না। ডিভোর্স দিবে বলে কি তাকে স্ত্রী হিসেবেও স্বীকার করবে না? একমাস আগেও সামির অরাকে স্ত্রী বলে কারো সাথে পরিচয় করালে অস্বস্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ফেলতো সে। অথচ এখন সামিরের থেকে স্ত্রী স্বীকৃতি পায়নি বলে মনটা অভিমানে দগ্ধ হয়ে উঠল। বুকের মধ্যে অদ্ভুত জ্বলুনি টের পাচ্ছে সে।

গম্ভীর মুখে অরা যখন এক গ্লাস পানি নিয়ে ভেতরে ঢুকল তখন সামির অবাক হয়ে বলল,” শুধু পানি চাইল বলে পানিই আনবে? ফ্রীজে আর কিছু ছিল না?”

অরা কঠিনমুখে সামিরকে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে বলল,” দেখিনি, ভাইয়া।”

অরার মুখে ‘ভাইয়া’ ডাক শুনে সামির একটু ইতস্তত হয়ে গেল। তন্বি হাসিমুখে বলল,” সো সুইট অফ ইউ। থ্যাংক ইউ অরা। আমি শুধু পানিটাই খেতে চেয়েছিলাম। তাছাড়া আজকে আমি অনেক বেশি লাঞ্চ করেছি। পেট একদম ফুল। কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। ”

সামির অরার দিকে চেয়ে বলল,” ফ্রীজ থেকে মিষ্টি নিয়ে এসো।”

তন্বি বাঁধ সেধে বলল,” ইটস ওকে। লাগবে না। তাছাড়া আমি ডায়েটিং এ আছি। মিষ্টি খাবো না।”

” ফ্রীজে ডায়েট কোকও আছে। চাইলে খেতে পারো।”

” হ্যাঁ। সেটা খাওয়া যায়।”

” যাও অরা।”

জোরপূর্বক মুখে হাসি এঁটে অরা কোক আনতে গেল। মেয়েটার উপর রাগ লাগার প্রধান কারণ হলো সে অতিরিক্ত স্মার্ট সাজার চেষ্টা করছে। প্রত্যেকটি কথা বলছে টেনে টেনে, প্রতিটি শব্দ উচ্চারণ করছে ঢং করে। আর সে সামিরের সামনে বসে যেভাবে হাসি দিচ্ছে তাতে বোঝাই যায় যে সামিরের প্রেমে একেবারে হাবুডুবু খাচ্ছে।

মেয়েরা একমাত্র পছন্দের পুরুষের সামনেই এমন করে হাসে। ছেলেরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যাপারটি ধরতে পারে না। কিন্তু মেয়েরা মেয়েদেরটা ধরতে পারে। সমজাতীয় প্রাণী কি-না!

অরা মুখ ভার করে বারান্দায় গেল। দোলনচাঁপা গাছটার পাতা নড়ছে। অরা অযথাই কিছু ফুল ছিঁড়ে হাতের মুঠোয় নিল৷ পাপড়িগুলো দুমড়ে-মুচড়ে ফুঁ মেরে উড়িয়ে দিল বাইরে। এভাবে যদি তন্বিকেও উড়িয়ে দেওয়া যেতো…ব্যাপারটা মন্দ হতো না।

রাতে আরিফ চৌধুরী চলে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এলে অরা বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। কান্নাটা বাবাকে ধরে করলেও অভিমানটা সামিরের উপর ছিল। তখন সেখানে সামিরও উপস্থিত। সেই কান্না কি তার মন বুঝতে পেরেছিল? আরিফ মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন,” কাঁদার কিছু নেই মা। আমার কথা মনে এলেই ট্রেনে উঠে পড়বি। সাত-আটঘণ্টার জার্ণি তেমন কঠিন কিছু না। কি বলো সামির?”

সামীর হেসে বলল,” জ্বী আঙ্কেল। ওর ফুল ফ্রীডম লাইফ। যা খুশি তাই করতে পারে। যেখানে ইচ্ছা যেতে পারে। কেউ বাঁধা দেবে না।”

অরা আঁড়চোখে চাইল। কেউ না বুঝলেও সে ঠিক বুঝতে পেরেছে যে সামির এই কথা কি উদ্দেশ্যে বলেছে! পুনরায় ডিভোর্সের ব্যাপারটি সে কৌশলে অরাকে মনে করিয়ে দিতে চাইল আর কি!

নীলিমা আরিফ চৌধুরীর জন্যই রাতের খাবার দ্রুত রেঁধে ফেলেছেন। অরাকে বললেন বাবাকে চটজলদি খাবার বেড়ে দিতে। এদিকে আরিফ বেয়াই আর জামাইকে ছাড়া খাবেন না। তাই অগত্যা সামির আর সুমন সাহেবকেও বসতে হলো টেবিলে। আরিফ সামিয়াকেও বসে যেতে বললেন তাদের সাথে। খাওয়া-দাওয়ার এক পর্যায়ে হুট করে অরা বলে উঠল,” ভাইয়া, আপনাকে একটু মাংস দেবো?”

অরার কথা শুনে সবাই হতবাক চোখে চাইল। সামিরের প্রায় বিষম উঠে যাওয়ার মতো অবস্থা। অরা তাকে আরও বিব্রত করতে বলল,” ফুপির রান্নাটা কিন্তু ভালো হয়েছে। আরেকটু নিন না ভাইয়া।”

সামির খাবারের লোকমা মুখে তুলতে গিয়েও থেমে গেছে। হাঁ করে ন্যাবার মতো তাকিয়ে আছে। সামিয়া এই অবস্থা দেখে মুখে হাত দিয়ে ফিক করে হেসে ফেলল। নীলিমা অবাক স্বরে বললেন,” তোমার কি হয়েছে অরা? এসব কি বলছো?”

অরা সামিরের দিকে চেয়ে থেকেই বলল,” আমি তো উনার কাজিন। তখন তো তন্বির কাছে এই বলেই পরিচয় করিয়ে দিলেন। তাই ভাবছি এখন থেকে উনাকে ভাইয়া বলেই ডাকব। আর আপনাকে ডাকব ফুপি।”

সামির বিষম খাওয়া দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। অরা যে এই রসিকতাটা করতে পারে তা যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না। আসলে ভার্সিটিতে বিয়ের ব্যাপারটা এখনও জানানো হয়নি। কলিগরা অনেক বিরক্ত করে, ট্রিট চায়, কেউ কেউ আবার ছুটি নিতে গেলেও বাঁকা দৃষ্টিতে তাকায়। সদ্য বিবাহিত পুরুষ আরমান স্যারের সাথেও এসব হচ্ছে। তাই সামির আগে থেকেই ভেবে রেখেছিল যে বিয়ে করলে কাউকে জানাবে না। কিন্তু আজ হঠাৎ তন্বি বাড়ি চলে আসায় তাকে অরার ব্যাপারে মিথ্যা বলতে হয়েছে। সত্যিটা জানলে পুরো ভার্সিটিতে ছড়িয়ে যেতো। এসব নিয়ে অনেক কন্ট্রোভার্সি হতো। তাই সঙ্গত কারণেই সে ব্যাপারটা চেপে গেছে। কিন্তু অরা যে এতো অফেন্ডেড হবে তা কে জানতো?

সুমন সাহেব বললেন,” তোর কি কাজিনের অভাব পড়েছে যে বউকেই বোন বানাতে হবে? আহাম্মক একটা!”

সামির বাবার কথায় থতমত খেল। অরার ঠোঁটে মুচকি হাসি। সামিরকে শায়েস্তা করতে সফল হয়েছে সে। এবার বুঝবে কাজিন বলে পরিচয় করানোর মজা।

________________
অরা দাঁড়িয়ে আছে ছাদের আঙিনায়। ঠান্ডা বাতাসে মৃদু কাঁপন ধরছে শরীরে। ঘড়িতে ঠিক রাত নয়টা। সামির আরিফ সাহেবের সাথে বাসস্ট্যান্ড গেছে। না গেলেও চলতো। তবুও এতো ভদ্রতার কি দরকার ছিল অরা বুঝতে পারছে না। সামিরের মনে কোনো কুমতলব ঘুরছে না তো? সে কি বাবার সাথে ডিভোর্সের বিষয়ে আলোচনা করতে গেছে? বাড়িতে সবার সামনে এই বিষয়ে কথা বলতে পারছিল না৷ হয়তো সেজন্যই বেরিয়েছে যাতে পথে আলোচনা সেরে নেওয়া যায়!

অরার এই ভেবে ভীষণ ভয় করতে লাগল। সামির যদি বাবাকে রাজি করিয়ে ফেলে? দুশ্চিন্তায় পেটের খাবার বমি হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে।

সামির ফিরল রাত সাড়ে দশটায়। নীলিমা অরার হাতে গরম স্যুপের বাটি দিয়ে বললেন,-” এটা সামিরকে খেয়ে নিতে বোলো। ইদানীং ছেলেটার ঠান্ডায় যা অবস্থা! তাই একটু স্পাইসি স্যুপ করলাম। এ ছাড়া তো কিছু খেয়ে টেস্ট পাচ্ছে না। ”

অরা স্যুপের বাটি নিয়ে সামিরের কাছে এলো। সামির তখন পুনরায় কম্পিউটারের সামনে বসেছে। তার মুখে হাসি। চুন্নি থাকার সময় যে হাসিটা সর্বক্ষণ ঠোঁটে আটকে ছিল ঠিক সেই হাসি। অরার খটকা লাগল। সে কি এখন চুন্নির সাথে চ্যাটিং এ বসেছে নাকি?

ব্যাপারটা বোঝার জন্য অরা কম্পিউটারের স্ক্রিন দেখার চেষ্টা করল। কিন্তু এমনভাবে দেখতে হবে যাতে সামির টের না পায়। সে অনেকটা দূরে গিয়ে আঁড়চোখে তাকাল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। সে আরেকটু কাছে এলো।

সামির বলল,”মোচড়া-মুচড়ি করছো কেন এভাবে? আমার কম্পিউটারে দেখার মতো কিছু নেই।”

চোরের মতো ধরা পড়ায় অরা আচমকা কেঁপে উঠল। আরেকটু হলেই হাত থেকে স্যুপের বাটিটা পড়ে যেতে নিচ্ছিল। সে লজ্জিত গলায় বলল,” আমি কিছু দেখছিলাম না। এইটা দিতে এসেছিলাম। আম্মু পাঠিয়েছেন আপনার জন্য।”

” রেখে যাও।”

অরা বাটিটা রাখল কিন্তু বুঝতে পারল না এবার তার কি করা উচিৎ। সে কি চলে যাবে? সামির তো তার দিকে তাকাচ্ছেও না।

অরা ইতস্ততবোধ করতে লাগল। একটা মানুষ এইভাবে ইগনোর করলে সহ্য করা যায় না। তার ভাব দেখে মনে হচ্ছে অরা কোনো মানুষই না। সে জড়পদার্থ। তার সাথে কথা তো বলা যায়ই না এমনকি তাকানোও নিষেধ!

আচ্ছা, সামির কি বাবার সাথে ডিভোর্সের কথা বলেছে? আজ না হয় কাল হয়তো বলবেই। এর আগেই অরার কিছু করা দরকার। সে যেতে নিয়ে আবার ফিরে এসে বলল,”আমি স্যরি।”

সামির কোনো জবাব দিল না। অরা মাথা নিচু করে চোখের জল মুছল। ভেজা গলায় বলল,” আমি জানি, আমি খুব অন্যায় করেছি। আপনাকে বোঝার একটুও চেষ্টা করিনি। আপনি যদি আমাকে মাফ না করেন তাহলে… তাহলে আজকে সারারাত আমি এখানে এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকব।”

সামির ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলল। অরা চুপচাপ তাকিয়ে আছে নিচের দিকে। তার চোখ থেকে টপটপ করে বাহিত হচ্ছে অশ্রু। সে চোখ মুছছে না। মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে।

সামির হঠাৎ উঠে বের হয়ে গেল রুম থেকে। অরা নিদারুণভাবে আহত হলো। বড্ড নিষ্ঠুর তো এই লোক।
চোখের জল মুছে স্যুপের বাটিটা তুলে নিতে গিয়ে দেখল….

কম্পিউটারের স্ক্রিনে বড় করে লেখা,” CUTE.” লেখাটা দেখে অরার চেহারায় অজান্তেই হাসি চলে এলো।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে