#রুপালি_মেঘের_খামে
লিখা- Sidratul Muntaz
৯.
সামির চলে যাওয়ার পর অরা মুখে হাত দিয়ে অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। তার ছোটবেলা থেকেই একটা সমস্যা আছে৷ হঠাৎ ঘটে যাওয়া আকস্মিক ধা-ক্কাগুলো নিতে পারে না। ওই সময় সে খুব নার্ভাস হয়ে যায়। গলা দিয়ে টু-শব্দটিও বের হয় না৷ সামিরকে চ-ড় মা-রার পর অতিরিক্ত নার্ভাসনেসের কারণে সে কিছুই বলতে পারেনি৷ অথচ তার সাথে সাথেই ‘স্যরি’ বলা উচিৎ ছিল।
সে তো অরাকে সময় দিয়েছিল। তার জায়গায় অন্যকেউ থাকলে অরা কি এই স্বাধীনতা পেতো? কেউ নিশ্চয়ই বিয়ের পর সাতরাত ধরে অপেক্ষা করতো না। আর সামির শুধু অপেক্ষাই করেনি, অরার যাতে কোনোরূপ অসুবিধা না হয় সেজন্য তার সঙ্গে কথাও কম বলেছে এই কয়েকদিন। একবারও অভিযোগ করেনি। অথচ তার অভিযোগ করার সুযোগ ছিল। সে না থাকলে তো অরার বিয়েটাই ভেঙে যাচ্ছিল।
যে মানুষটি বিপদের সময় অরার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে, এতোদিন তাকে সবরকম সাপোর্ট দিয়েছে তার সাথে এমন ব্যবহার করা উচিৎ হয়নি।
অরা নিজের ভুলের জন্য ভীষণ অনুতপ্ত বোধ করছে। সে এক ছুটে রুম থেকে বের হলো। দিশেহারার মতো এদিক-সেদিক খুঁজতে লাগল।সামির কোথায় গিয়েছে?
অরার অবস্থা রান্নাঘর থেকে পরখ করলেন নীলিমা। তিনি বেঁচে যাওয়া খাবারগুলো ফিরোজাকে দিয়ে ফ্রীজে তুলে রাখছিলেন। অরার চোখে জল আর মুখে অস্থিরতা দেখে বিচলিত ভঙ্গিতে ছুটে এলেন। অরাকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেন,” কি হয়েছে মা?”
অরা কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে কিসব যে আওড়াল, নীলিমা কিছুই বুঝতে পারলেন না। অরাকে টেনে ডাইনিং টেবিলে এনে বসালেন। ঠান্ডা মাথায় পুরো ব্যাপার জিজ্ঞেস করলেন,” কি হয়েছে বলো? কাঁদতে কাঁদতে তো নাকের পানি, চোখের পানি একাকার করে ফেলেছো! আল্লাহ!”
নীলিমা শাড়ির আঁচল দিয়ে অরার মুখ মুছিয়ে দিলেন। অরা নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,” উনি আমার উপর রাগ করে চলে গেছে মা।”
” কে? সামির?”
অরা মাথা নাড়ল। নীলিমা হেসে বললেন,” এইজন্য এতো কাঁদতে হয় নাকি? বোকা মেয়ে! কোথায় গেছে ও? যেখানেই যাক ফিরে আসবে। দাঁড়াও এলে আমি কি করি দেখো।”
” না মা, কিছু বলবেন না। দোষ আমারই ছিল। আমি ভুল করেছি।”
” ভুল করেছো ভালো কথা। তাই বলে ও তোমাকে কাঁদিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যাবে নাকি? আশ্চর্য ছেলে তো! বেয়াদব একটা। ”
” মা, উনি তো বাড়ির কোথাও নেই।”
” একটা ফোন দিয়ে দেখো।”
ফোনের কথা শুনেই অরার টনক নড়ল। দৌড়ে ঘরে ফিরে এসে মোবাইল হাতে নিল। সামিরকে ফোন করতে গিয়ে দেখল, নাম্বার নেই। বিয়ের সাতদিন পরেও সামিরের নাম্বারটা মোবাইলে সেইভ করা হয়নি। অরা উদভ্রান্তের মতো আবারও ছুটে গেল শাশুড়ী মায়ের কাছে। আকুল নিবেদনে বলল,” উনার নাম্বারটা একটু আমাকে দিবেন মা?”
নীলিমা হতভম্ব হয়ে গেলেন। অরার কাছে সামিরের ফোন নাম্বারই নেই ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগল। তবুও তিনি আপাতত অরাকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেন না। নিজের ফোন থেকে নাম্বার বলে দিলেন। অরা ফোন দিল। ওই পাশ থেকে বাতাসের জোরালো শব্দ ভেসে আসছে। সামিরের গম্ভীর এবং ফিকে কণ্ঠে শোনা গেল,” হ্যালো, কে বলছেন?”
” আমি, আমি অরা।”
ওই পাশে শুধুই নীরবতা। সামির কিছু বলছে না। অরা ঢোক গিলে বলল,” আমি স্যরি…খুব বেশি স্যরি। আপনি কোথায়? বাড়ি আসুন প্লিজ।”
সামির লাইনটা কে-টে দিল। অরার চোখ থেকে অশ্রু উপচে পড়তে লাগল। এই বুঝি নিঃশ্বাসটা গলার কাছেই আটকে যাবে। কাঁদতে কাঁদতে আবারও ফোন করল। কিন্তু এবার একটি মেয়েলী কণ্ঠ বলল,” আপনি যে নাম্বারে কল করেছেন তা এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছে…”
অরার পা টলতে লাগল। মাথা ঘুরতে লাগল। সামনের দৃষ্টি ক্রমশ ঝাপসা হচ্ছে। সামির তার নাম্বারটা ব্ল্যাকলিস্ট করে দিল? নীলিমা প্রশ্ন করলেন,” কি ব্যাপার? কথা বলেছো?”
অরা লজ্জায় সত্য কথাটা বলল না। মিথ্যার আশ্রয় নিল।
” নেটওয়ার্কে সমস্যা হচ্ছে মনে হয়। তাই কিছু বুঝতে পারছি না।”
এই বলে ঝটপট ঘরে চলে এলো। দরজা আটকে চুপচাপ বসে রইল পাথুরে মূর্তির মতো।
ঝড়ো বাতাসে সামিরের কপালের কাছে জড়ো হয়ে থাকা চুল উড়ছে। বৃষ্টির ঝাপটায় চোখমুখ ভিজে একাকার। আজকে সকাল থেকেই ভ্যাপসা গরম ছিল পরিবেশে৷ এই রাতের বেলা দুনিয়া তোলপাড় করে বৃষ্টি নেমেছে। ট্যাক্সিওয়ালা বললেন,” জানালাটা লাগিয়ে দিলে ভালো হয় ভাই। ভিজে যাচ্ছেন তো।”
সামির কপট রাগ নিয়ে বলল,” ভিজলে আমি ভিজবো। আপনার কোনো সমস্যা আছে?”
” না ভাই।”
” তাহলে চুপ থাকুন।”
” ভাই কোথায় যাবো সেটা তো বললেন না।”
” যেখানে খুশি যান। কোনো প্রশ্ন করবেন না। যত ভাড়া উঠবে দিয়ে দিবো।”
ট্যাক্সি ড্রাইভার মিনমিন করে বললেন,” অদ্ভুত পেসেঞ্জার!”
সামির প্রবাহমান বৃষ্টির দিকে অপলক চেয়ে রইল। তার হৃদয় বিষণ্ণ ব্যথায় স্তব্ধ হয়ে আছে। অরার অনুভূতিগুলো ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। মেয়েটা কি চায়, কেন চায় তা কিছুই যেন বুঝে ওঠার জো নেই। যখনি সামির তাকে একটু বুঝতে শুরু করে তখনি অরা এমন এক কান্ড করবে যে তার পুরো ধারণাই বদলে যাবে।
গতকাল সে ডিভোর্সের কথা বলেছিল। সন্ধ্যায় সামিরের উপস্থিতিতে বিরক্তি প্রকাশ করল। কিন্তু লোড শেডিংয়ের পর তারা যখন আলাদা ঘরে ছিল তখন অরার আচরণ বদলে গেছিল। প্রতিটি কথায় লজ্জা পাচ্ছিল। মনে হয়েছিল সেও সামিরের প্রতি আগ্রহী। তারপর আয়নায় মেসেজ লিখে ছাদে আহ্বান করল। অথচ নিজেই এলো না।
এমনকি ভালোবাসার কথাও নিজমুখে স্বীকার করেছিল। সামির তো ধরেই নিয়েছিল এবার বুঝি অরার জড়তা কা-টবে। সব স্বাভাবিক হবে। সে তো এই ভেবেই অরার কাছে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ তার এমন আক্রমণে সামির বাকরুদ্ধ। অকারণে কিংবা ভুল করে নিশ্চয়ই কেউ এইভাবে কাউকে আঘাত করতে পারে না! অরা কি তাহলে তখনও বিভ্রান্ত ছিল? সামির কি বেশিই তাড়াহুড়ো করে ফেলেছে?
কিন্তু অরা যদি বিভ্রান্তই হবে তাহলে বলল কেন ভালোবাসার কথা? সামির কি ওর হাতের খেলনা যে যেভাবে চাইবে সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে? মানুষের সহ্যেরও তো একটা সীমা থাকে। অরাকে বোঝার চেষ্টা করতে গিয়ে সামির ক্লান্ত!
রাতটা জেগে থেকেই পার করে দিল অরা। তীব্র অনুশোচনায় দগ্ধ তার হৃদয়। এই ঝড়-বৃষ্টির রাতে মানুষটা বেরিয়েছে, যদি কোনো বিপদ হয়? আশঙ্কা আর দুশ্চিন্তায় তার ঘুম এলো না। ভোরের দিকে হালকা তন্দ্রার মতো লেগেছিল।
তখন অরা দেখল সামির ফিরে এসেছে। অরা তাকে জড়িয়ে ধরে বলল,” আই এম স্যরি। আমাকে মাফ করে দিন।”
সামির হাসিমুখে বলল,” মাফ না করলে তো ফিরে আসতাম না।”
অরা লাজুক মুখে বলল,” আমি আসলে আপনাকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু কখনও বুঝতে পারিনি।”
” আমি জানি।”
” সত্যি আপনি জানেন? তাহলে রেগে চলে গেলেন কেন?”
” আর যাবো না, প্রমিস।” সামির অরার হাত নিয়ে চুমু দিল।
অরা মিষ্টি করে হাসল৷ সামির তাকে বাইরে নিয়ে এলো। সদর দরজার কাছে একটা নতুন বাইক। সামির বলল সে অরাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চায়৷ তারা বাইকে উঠল৷ কি নৈসর্গিক সুন্দর প্রকৃতি। রাস্তায় একটা মানুষও নেই। বিস্তর এক বেলাভূমির পথ ধরে তারা ছুটছে। অরা সামিরকে পেছন থেকে জাপটে ধরে আছে। সামির খুব জোরে বাইক চালাচ্ছিল৷ অরার মনে হলো তারা এক্সিডেন্ট করবে। সত্যি তাই হলো। রক্তাক্ত অবস্থায় দু’জনেই পড়ে রইল ফাঁকা রাস্তায়।
দুঃস্বপ্ন দেখে আচমকা ঘুমটা ভেঙে গেল অরার। বুক ধুকপুক করতে লাগল। মনে হলো, এমন ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন সে আগে কখনও দেখেনি। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখল সকাল আটটা বাজে৷ দ্রুত ঘর থেকে বের হলো।
ড্রয়িংরুমে সবাই জটলা পাকিয়ে বসে আছে। অরা কারো মাঝেই সামিরকে খুঁজে পেল না৷ অর্থাৎ এখনও সামির ফেরেনি। নীলিমা বললেন, সামির নাকি খুলনায় তার কোন বন্ধুর বাড়িতে গেছে। বন্ধু নাকি হাসপাতালে ভর্তি। অবস্থা গুরুতর। সামির সেখানে সাতদিন থাকবে। তবে নীলিমা বেশ ভালো করেই জানেন পুরো ব্যাপারটাই একটা বাহানা। খুলনাতে সামিরের কোনো বন্ধু থাকার কথা নয়। সে বাড়ি থেকে কিছুদিন দূরে থাকবে এটাই আসল ব্যাপার।
নীলিমা হালকা লজ্জিতবোধ করছেন। আজরাতে সামিরের অরাদের সাথে চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা ছিল। সেই পরিকল্পনা স্থগিত। অরাকে একাই যেতে হবে। তার ইচ্ছাই পূরণ হয়েছে। কিন্তু অরা এটা এভাবে চায়নি!
সামিয়া হঠাৎ অরার উদ্দেশ্যে বলল,” তোমাদের কি নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল ভাবি?”
সামিয়ার প্রশ্নে সবাই অরার দিকে ঘুরে তাকালো। রাতে অরা নীলিমাকে ঝগড়ার কথা বলার সময় সামিয়াও শুনেছিল। অরা প্রশ্ন শুনে থতমত খেল। এতো মানুষের সামনে কিভাবে বলবে যে কি হয়েছিল? এদিকে সাবিরা কথাটা শুনেই অরার দিকে গরম দৃষ্টিতে তাকালেন।
নীলিমা মেয়েকে শাসনের সুরে বললেন,” কিসের ঝগড়া?বেশি বুঝিস তুই? যা, ঘরে যা।”
নীলিমা চাইছেন না অরার মা-বাবা ঝগড়ার ব্যাপারটা বুঝে ফেলুক। তাহলে তারা সহজেই অনুমান করে ফেলবে যে সামিরের হঠাৎ চলে যাওয়াটা অনাকাঙ্ক্ষিত নয় বরং ইচ্ছাকৃত!
কিন্তু সাবিরার সন্দেহ কমল না। তিনি অরাকে ইশারায় ঘরে ডাকলেন। অরা মাথা নিচু করে মায়ের পিছু নিল। ঘরে এসে দরজা আটকেই প্রশ্ন করলেন সাবিরা,”কি হয়েছে সব সত্যি সত্যি বল। একদম কিচ্ছু বাদ দিবি না।”
অরা ভয়ে ভয়ে পুরো কাহিনী বলল। সাবিরা দ্বিতীয় চ-ড় মা-রলেন মেয়ের গালে। অরা ব্যাকুল হয়ে অনুরোধ করল,” উনাকে ফিরে আসতে বলো না, মা! আমার ফোনটাও ধরছে না।”
” কোন মুখে ফিরে আসতে বলবো? তুই যে অন্যায় করেছিস সেটা ক্ষমার অযোগ্য। স্বামীর গায়ে হাত তোলার মানে বুঝিস? তোকে যদি কেউ বিনা দোষে চ-ড় মা-রে তুই সহ্য করবি?”
” আমার ভুল হয়ে গেছে মা। আমি তো নিজের ভুল স্বীকার করেছি।”
” ভুল না এটা অপরাধ।”
” আমি তো ক্ষমা চাইছি অপরাধের জন্য।”
” চাইতে থাক। যখন রাগ পড়বে তখন ও এমনিই ফিরে আসবে। এছাড়া আমার কিছু বলার নেই।”
রাতে অরার বাবা-মা আর রূপা চট্টগ্রামে ফিরে যাবেন। অরার যাওয়ার কথা থাকলেও সে যেতে চাইল না। নীলিমাই জোর করে অরাকে পাঠাতে চাইলেন। নিজের ছেলেকে তিনি হাড়ে হাড়ে চেনেন। এতো সহজে সে বাড়ি ফিরবে না। শুধু শুধুই মেয়েটা অপেক্ষা করে কষ্ট পাবে। তার চেয়ে বাপের বাড়ি থেকে ঘুরে আসুক, মন ভালো হবে।
কিন্তু অরা যাবে না। সায়ান নিজে থেকেই রূপাদের স্টেশনে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলল৷ ছেলের দায়িত্ববোধ দেখে সুমন সাহেব খুশি হলেন। কিন্তু অরা জানে এখানে আসল কারণটা কি!
বাবা-মা আর রূপা চলে যাওয়ার পর অরার সময়টা খুব অসহনীয় তীক্ষ্ণ ব্যথায় অতিবাহিত হচ্ছিল। তিন দিন কেটে গেল কিন্তু সামির ফিরল না।তার সাথে অরার না কোনো যোগাযোগ হলো আর না কোনো সাক্ষাৎ। অরা সামিরের ঘরে তারই অপেক্ষায় একা একা থাকতে শুরু করল।
অপেক্ষা, জিনিসটা বড্ড কষ্টের। বড্ড যন্ত্রণার। কাউকে অপেক্ষায় রাখার চেয়ে বড় শাস্তি বোধ হয় এ পৃথিবীতে আর কিছু হয় না।
একদিন সকালে ঘুম ভেঙে বাড়ির বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে অরা। তখনি মূল ফটকের সামনে একটি বড় গাড়ি এসে থামল। অরা দেখল বিশাল বড় গাড়িটি থেকে বের হচ্ছে একটি সুন্দর মেয়ে। স্কিন ফিটেড জিন্স আর কূর্তি তার গায়ে। চুলগুলো কার্লি, চোখে সানগ্লাস। মেয়েটি অরার কাছে এগিয়ে এলো। সানগ্লাস খুলে মিষ্টি করে হাসল। তখনি অরার মনে হলো, এতো সুন্দর মেয়ে সে আগে কখনও দেখেনি।
” হায়, আমি তন্বি। ফাইজান ভাইয়া বাড়িতে আছেন?”
অরা ভ্রু কুঁচকে তাকাল। ফাইজান মানে তো সামির। সামিরের পুরো নাম ফাইজান সামির চৌধুরী।
” আপনি কে?”
” আমি ভাইয়ার স্টুডেন্ট। আসলে উনি তিনমাস হলো খন্ডকালীনে লেকচারার হিসেবে আমাদের ভার্সিটিতে জয়েন করেছেন। প্রথমে তো সিনিয়র ছিলেন। তাই এখনও স্যার ডাকে অভ্যস্ত হতে পারিনি। তুমি নিশ্চয়ই সামিয়া?”
অরা কোনো কথা বলল না এবার। মেয়েটি নীরবতাকেই সম্মতির লক্ষণ ধরে নিয়ে বলল,” এই সামিয়া, খুব ইচ্ছে ছিল তোমার সাথে দেখা করার। সত্যিই মিষ্টি মেয়ে তুমি। ভাইয়া তোমার ব্যাপারে প্রায়ই বলে। আচ্ছা, ভাইয়ার কি হয়েছে? ভার্সিটিতে কেন আসছেন না? তিনি কি অসুস্থ?”
” না। সে একটা কাজে ঢাকার বাইরে গেছে।”
” ও, কোথায় গেছে?”
” খুলনা।”
তন্বি তার ব্যাগ থেকে একটা রঙিন ব্যাগ বের করে বলল,” ভাইয়া ফিরলে তাকে এই জিনিসটা দিতে পারবে? আমার নাম বলার দরকার নেই। উনি এমনিই বুঝবে। নাও, ধরো!”
অরা যন্ত্রের মতো জিনিসটা হাতে নিল। তন্বি উপরে তাকাল। তার নজর সামিরের ঘরের বারান্দায়। মুগ্ধ কণ্ঠে বলল,” ওয়াও, দোলনচাঁপা গাছের প্ল্যান্টটা… কি সুন্দর বেড়ে উঠছে!”
তার দৃষ্টি অনুসরণ করে অরাও তাকাল উপরে। তন্বি আপ্লুত কণ্ঠে বলল,” ভাইয়াকে গাছটা আমি উপহার দিয়েছিলাম। উনি এতো যত্নে রেখেছেন দেখে ভালো লাগছে।”
অরা চোখ-মুখ শক্ত করে জানতে চাইল,” আপনি কি আর কিছু বলবেন?”
” ভাইয়া কবে নাগাদ ফিরবে এটা জানতে পারলে ভালো হতো।”
” আমি জানি না।”
তন্বি বিষণ্ণ গলায় বলল,” ঠিকাছে, তাহলে আর কি করার? আমি আজ আসি। তুমি কিন্তু আমাকে একবারও ভেতরে আসতে বললে না।”
অরা অপ্রস্তুত হলো। তন্বি সাথে সাথেই হেসে বলল,” নো প্রবলেম। আমার এমনিতেও ভেতরে যাওয়ার ইচ্ছে নেই। তুমি মনে করে ভাইয়াকে জিনিসটা দিও প্লিজ।”
অরা নিশ্চুপ রইল। মেয়েটি গাড়িতে উঠে চোখের পলকে বিদায় হলো। অরা ধীরপায়ে হেঁটে ঘরে ঢুকল। যাওয়ার পথে দেখল ফুলবানু বেগম নিজের ঘরে বসে কাঁথা সেলাই করছেন। অরাকে দেখেই ডাকলেন,” ও নটির মাইয়া, কই যাও? তোমার তো স্বভাব-চরিত্র কিছুই ভালো না। দুইদিন যাইতে না যাইতেই আমার নাতিটারে ঘর থেকা ভাগাইছো। দাঁড়াও না, তোমার গুমোর আমি ভাইঙ্গা ছাড়মু। বিয়ার আগে কয় নাগরের লগে শুইছো তা আমি জানি। মা*গী দেখলেই আমি চিনি।”
অরার শরীর শিরশির করতে লাগল। এই মহিলা তাকে দেখলেই আজে-বাজে বলতে শুরু করেন। আজকে মেজাজ এমনিতেও খারাপ ছিল৷ তার উপর এমন কথা সহ্য হলো না। সে সোজা ফুলবানুর ঘরে ঢুকে তার হাত থেকে সুই কেঁড়ে নিয়ে বলল,” আরেকটা নোংরা কথা বললে এই সুই দিয়ে আপনার চোখ আমি গেলে দিবো।”
চলবে