রিভেঞ্জ পর্বঃ ১৮(শেষ পর্ব)
– আবির খান
পরদিন বিকেলে ঢাকাতে,
নেহাল আর তনু গাড়িতে বসে আছে। নেহাল ড্রাইভ করছে। সালমান আর প্রেমা এখন নেহালের বাইকে। আর কিছুক্ষন পরই নেহালের বাসায় পৌঁছে যাবে নেহাল আর তনু। তনুর খুব ভয় হচ্ছে। মনটা কেমন কেমন জানি করছে৷
নেহালঃ ভয় হচ্ছে??
তনু নেহালের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে বলে,
তনুঃ হুম।
নেহালঃ ভয় নেই। আমার বাবা-মা অনেক ভালো। আমাকে অনেক ভালোবাসেন। তাদের বুঝিয়ে বললে তারা সব বুঝবে।
তনুঃ হুম। আমার জন্য সত্যিই আপনি অনেক কিছু করলেন।
নেহালঃ আপনাকে যে ভালোবাসি ভুলে গেলেন নাকি??
তনুঃ না না।
নেহালঃ তাহলে!!! ভালোবাসার মানুষটাকে পেতে হলে একটুআকটুতো করতেই হয়৷
তনুঃ সত্যিই আমি অনেক ধন্য আপনাকে পেয়ে।
নেহালঃ আর আমি তোমাকে পেয়ে।
একটুপরই নেহাল ওর বাসাতে গাড়ি নিয়ে ঢুকলো,
তনুঃ আমার অনেক ভয় করছে। সবাই কি আমাকে মেনে নিবে?? ভয়ে ভয়ে।
নেহালঃ অবশ্যই। চলো তুমি। আল্লাহ ভরসা।
নেহাল তনুকে নিয়ে ওর বাসার মেইন গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বেল দেওয়ার কিছুক্ষন পরই নেহালের মা এসে দরজা খুলে দেয়।
মাঃ বাবা এসেছিস। আসো মা তুমিও আসো।
তনু নেহালের মাকে সালাম করলো।
মাঃ আরে আরে সালাম করতে হবে না। আগে ভিতরে আসো। কতো দূর থেকে এলে তোমরা।
নেহাল আর তনু ভিতরে ঢুকলো। ড্রইংরুমে সোফাতে দুজন বসলো। নেহালের মা তনুর পাশে গিয়ে বসলো।
কিছুক্ষন তনুকে দেখার পর বললো,
মাঃ বাহ নেহাল, একদম আমার মনের মতো একটা মেয়েকে তুই পছন্দ করেছিস। কি মিষ্টি আর বাচ্চাদের মতো একদম।
নেহালঃ মা, ও এখনো বাচ্চাই। মজা করে।
তনু লজ্জা পাচ্ছে।
মাঃ তনু মা, আমার তোমাকে অনেক পছন্দ হয়েছে। নেহাল আমাকে সব বলেছে। আমার শুধু এই মিষ্টি বউমাকে চাই। আর কাউকে লাগবে না। কি হবে না আমার বউমা???
তনু কাঁদতে কাঁদতে নেহালের মাকে জড়িয়ে ধরে আর বলে,
তনুঃ অবশ্যই মা, আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো আপনাদের খুশি করতে।
মাঃ বাহ। কে বলেছে ও বাচ্চা মেয়ে। ওতো সব বুঝে। মা, বিয়ের পরের দিন কিন্তু এই বিশাল সংসার তোমার। আমি কিন্তু আর পারবো না। এইযে চাবিটা দেখছো এইটা তোমার বিয়ের পর থেকে তোমার কাছেই থাকবে।
তনুঃ না মা, এই চাবিটা আমার লাগবে না। এই চাবিটার দায়িত্ব আপনার৷ আর বাকি যা আছে সব কিছুর দায়িত্ব আমার।
মাঃ নেহাল, তুইতো খাটি হীরা নিয়ে এসেছিস। মা, তুমি আমার পরীক্ষায় ১০০ তে ১০০ পেয়ে পাশ করেছো। অনেক মেয়েই বড়লোক ছেলেদের ফাসিয়ে এই চাবিটা ধরার জন্য বিয়ে করে কিন্তু তুমি সবার থেকে আলাদা। আজ থেকেই এই সংসার তোমার। আর এই বাড়িটাও তোমার।
তনুঃ আমার শুধু আপনাদের ভালোবাসা আর আপনারা হলেই হবে।
মাঃ মাশাল্লাহ। তুমি সত্যিই মা একজন আর্দশ বউ। আমরা হয়তো কোনো ভালো কাজ করেছি তাই তোমার মতো একজন বউমা পেয়েছি।
নেহালঃ কথাটা একদমই সত্যি মা। ও আসলেই অনেক ভালো।
মাঃ হুম। এখন যা ফ্রেশ হয়ে আস। তোর বাবা একটু পরেই আসবে। রাতে তার সাথে কথা হবে। আমি বলছি তোদের কথা তার কাছে।
নেহালঃ আচ্ছা। চলো তনু ফ্রেশ হবে।
মাঃ হ্যাঁ যাও মা ফ্রেশ হয়ে আসো।
নেহাল তনুকে নিয়ে ওর রুমে যায়। তনু নেহালের রুমে গিয়েতো পুরো অবাক। তনুর ছোট ছোট অনেক ছবি। তনুর অজান্তেই এসব তোলা।
তনুঃ আপনি এই ছবি কখন তুলেছেন?? অবাক হয়ে।
নেহালঃ সিক্রেট বলা যাবে না।
তনু নেহালকে এসে জড়িয়ে ধরে। আর বলে,
তনুঃ আপনি আমাকে এতো ভালোবাসেন আর আমি আপনাকে কত্তো কষ্ট দিচ্ছি।
নেহাল তনুর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে,
নেহালঃ বোকা মেয়ে। ভালোবাসি তোমাকে। তোমাকে না দেখে একমুহূর্তও থাকতে পারিনা। তাই এই ছবিগুলো দেখে সময় কাঁটাতাম।
তনুঃ আল্লাহ জেনো আপনার সাথে আমার শেষ নিঃশ্বাস অব্দি থাকার সুযোগ দেয়।
নেহালঃ আমিন। যাও তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি অপেক্ষা করছি।
তনুঃ আচ্ছা।
তনু ব্যাগ থেকে জামা নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। নেহালের আসলে অনেক টেনশন হচ্ছে। কারণ ওর বাবা যেমন রাগী তেমন ও অনেক ভয় পায়। কি আছে কপালে আল্লাহ ভালো জানে।
রাতে,
নেহালের বাবা এসে ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে বসে আছেন। নেহাল ভয়ে ভয়ে তনুকে নিয়ে বাবার সামনে যায়।
নেহালঃ বাবা আসসালামু আলাইকুম।
বাবাঃ অলাইকুম আসসালাম। বাহ তুই দেখি সালামও দিস। ভালো। বস।
নেহাল ইশারা করলে তনু এসে নেহালের বাবাকে সালাম করে।
বাবাঃ আরে আরে সালাম করো না। বসো।
নেহালঃ বাবা, ও তনু।
বাবাঃ হুম তোর মা বলেছে। ও এখানে কেনো??
নেহাল এরপর সব ওর বাবাকে খুলে বলল।
বাবাঃ অসম্ভব ওর সাথে তোর বিয়ে হবে না। ওর বাবা ভালো না।
তনু কেঁদে দেয়। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে।
নেহালঃ বাবা কি বলছো তুমি?? ও অসহায়??
বাবাঃ তা হোকগে। কিন্তু ওর সাথে তোর বিয়ে হবে না। মানে আমি দিবো না। ওকে এখনই ওর বাবা-মার কাছে পাঠিয়ে দে।
নেহালঃ বাবা প্লিজ তুমি এমন করো না। তুমিতো এমন না। আমার সব কথাইতো তুমি রাখো। আমিও তোমার সব কথা মানি। তাহলে??
বাবাঃ হ্যাঁ তো এটাও মান। ওর সাথে তোর বিয়ে হবেনা। এটাই আমার শেষ কথা।
নেহালঃ বাবা তুমি একদিন বলেছিলে, অসহায় মানুষদের কোনোদিন একা ছাড়তে নেই। সেখানে আমিতো ওকে ভালোবাসি। বাবা আমাকে মাফ করে দিও আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
বাবাঃ এটাকি তোর শেষ কথা??গম্ভীর ভাবে।
নেহালঃ বাবা আমাকে ভুল বুঝো না। ওর এখন কেউ নেই এই শহরে যার উপর ও বিশ্বাস করবে শুধুমাত্র আমি ছাড়া। আমি পারবো না ওকে ছাড়তে।
বাবাঃ তাহলে এখনই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যা। সামান্য এই মেয়ের জন্য আজ তুই তোর সব হারালি।
নেহালঃ চলো তনু। লাগবে না আমার এসব। বাবা আমাকে মাফ করে দিও। আমি ওকে একা করতে পারবো না।
তনুঃ না না। আপনি বসুন এখানে। এরকমটা বলবেন না। ওনারা আপনার বাবা-মা। আপনাকে অনেক কষ্ট করে জন্ম দিয়ে বড় করেছেন। আমি মাত্র এই কয়দিনের। আমার জন্য আপনি উনাদেরকে ভুলেও ছাড়বেন না। আমি আমার বাবা-মার কাছে ফিরে যাচ্ছি। আপনার বাবা-মাকে আপনি ছাড়বেন না প্লিজ। আমি চলে যাচ্ছি। কাঁদতে কাঁদতে বলল।
নেহালঃ না তনু এ হয় না। আমি তোমাকে এভাবে একা ছেড়তে পারবো না। আমার শিক্ষা আমাকে তা করতে দিবে না।
বাবাঃ হইছে এখন বস।
নেহালঃ মানে?? বসে।
বাবাঃ মানে তোদের দুজনকেই পরীক্ষা করছিলাম আমি। দুজনই পাশ করেছিস। বিশেষ করে আমার তনু বউমা। তোর মা আমাকে ঠিকই বলেছে ও আসলেই একটা খাটি হীরা।
তনু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কিচ্ছু বুঝতে পারছে না।
নেহালঃ কি পরীক্ষা করলে বাবা?? অবাক হয়ে।
বাবাঃ প্রথমে তনুকে পরীক্ষা করলাম। যে ও কি ভবিষ্যতে আমাদের কাছ থেকে তোকে আলাদা করে ফেলবে কি না। যার উত্তর একটু আগেই ও বলল। দ্বিতীয় পরীক্ষা করেছি তোকে। যে তুই ওকে কোনো সময় ছেড়ে দিবি কিনা। ওর প্রতি তোর ভালোবাসাটা সত্যিই কিনা। তুইও তার প্রমাণ দিলি।
নেহাল ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে।
বাবাঃ মা তুমিও আসো। আমার শুধু এই দুজনকেই চাই। তোরা সবসময় হাসিখুশি থাকবি। আর নেহাল বিয়ের পর কিন্তু তোকে আমার সব দায়িত্ব নিতে হবে।
নেহালঃ আচ্ছা বাবা।
বাবাঃ আর তনু মা, তোমার বাবা-মা আজ থেকে আমরা। তোমার যেকোনো সমস্যা আমাদের বলবে। ঠিক আছে??
তনুঃ জ্বি বাবা।
বাবাঃ বাহ। মাশাল্লাহ। তোদের বিয়ে এই শুক্রবারই দিবো খুব ধুমধামে করে।
নেহালঃ না বাবা। আমার একটা আবদার আছে।
বাবাঃ মানে??কি??
নেহালঃ বাবা আমরা ৫ বন্ধু একসাথেই বিয়ে করবো। আর একদম ইসলামিক নিয়মে। কোনো গান বাজনা বা অজথা টাকা নষ্ট হবে না। বরং আমার অনাথাশ্রম এর বাচ্চাগুলোকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াবে। এছাড়া আরো গরীবদের খাওয়াবে। আমি এরকম ভাবে আমাদের বিয়ে করতে চাই।
বাবাঃ মাশাল্লাহ বাবা মাশাল্লাহ। সত্যিই আমি আজ ধন্য তোকে জন্ম দিয়ে৷ তুই যেভাবে চাস সেভাবেই হবে।
নেহালঃ ধন্যবাদ বাবা।
এরপর সব ইসলামিক নিয়মে বিয়ের আয়োজন করা হয়। একে একে সালমান, শামিম,রাফি আর নিলয়ের বিয়ে পড়া হয়। বাকি আছে শুধু নেহালের।
কাজী সাহেবঃ মেয়ের বাবা-মা কোথায়??
তনু মন খারাপ করে বসে আছে।
সালমানঃ মা বাবা তোমরা তনুর বাবা-মা হয়ে ওকে বিয়েটা করিয়ে দেও।
নেহালঃ নাহ।
নেহালের কথা শুনে সবাই আশ্চর্য হয়ে যায়।
বাবাঃ তাহলে কে ওকে তুলে দিবে??
নেহালঃ কেনো ওর বাবা-মা।
সবাইঃ কিহহহ!!! কিভাবে??
নেহাল উঠে ভিতর থেকে যাদের নিয়ে আসলো সবাই দেখে অবাক। এ যে তনুর আপন বাবা-মা। তনু কেঁদে দেয় বাবা-মাকে দেখে। তনু উঠে ওর বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে।
তনুঃ তোমরা এখানে কিভাবে??
মাঃ কিভাবে আর, জামাই বাবা আমাদের আনিয়েছে। তোর বাবাকে বুঝিয়ে সব বলেছেন।
বাবাঃ মা আমকে মাফ করে দিস। আমি অনেক বড় ভুল করেছি।
তনুঃ না বাবা। তুমিও আমাকে মাফ করে দিও। আমিও অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাদের।
নেহালের বাবাঃ আচ্ছা কথা হবে নে বেয়াই সাহেব। আগে বিয়েটা হোক।
সবাইঃ হ্যাঁ হ্যাঁ।
এরপর তনুর আর নেহালের বাবা-মার উপস্থিতিতে তাদের সম্মতিতে ওদের শুভ বিবাহ হলো। কাজী সাহেব দোয়া করে আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করলেন এবং সবার জন্য দোয়া চাইলেন। সবাই আমিন বলে ওদের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।
কাজী সাহেবঃ আজ থেকে আপনারা সবাই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হলেন।
সবাইঃ আমিন।
বাকি বন্ধুরা এরপর তাদের বউকে নিয়ে যে যার বাসায় চলে যায়। বিয়ে নেহালের বাড়িতে হওয়ায় তনুকে উপরে নেহালের ঘরে অর্থ্যাৎ বাসর ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। নেহাল সবাইকে বিদায় দিতে দিতে প্রায় রাত ১১.৫০ বেজে যায়। বাবা-মাকে সালাম করে তাদের দোয়া আর পরামর্শ নিয়ে নেহাল এখন ওর রুমের সামনে দাঁড়ানো। খুব নার্ভাস লাগছে। ভালোবাসার মানুষটা ভিতরে বউ সাজে বসে আছে। আজ রাতে অনেক কিছু হবে। বাচ্চা একটা মেয়ে তার পরিপূর্ণতা লাভ করবে। একটা নতুন জীবনে পা রাখবে ওরা। এসব ভাবতেই নেহালের নার্ভাস লাগছে৷ নেহাল সাহস নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে ভিতরে ঢুকে পরে।
নেহাল ভিতরে ঢুকতেই তনু বিছানা থেকে উঠে এসেই নেহালকে সালাম করতে নিলে নেহাল ওকে থামিয়ে বলে,
নেহালঃ তোমার জায়গায় ওখানে নয় আমার বুকে।
তনু মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা বলে আবার বিছানায় গিয়ে পা গুটিয়ে বসে পরে। নেহাল তনুর কাছে গিয়ে বসে আস্তে করে ওর ঘোমটা উঠিয়ে দেয়।
নেহালঃ মাশাল্লাহ। তনু তোমাকে আজ পরীর চেয়েও হয়তো বেশি সুন্দর লাগছে। আল্লাহ জেনো তোমাকে সকল খারাপ দৃষ্টি থেকে রক্ষা করেন।
তনুঃ আমিন।
নেহাল কিছুক্ষন তনুর দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ বলে উঠে,
নেহালঃ তনু, তোমার এই গয়না গুলো তাড়াতাড়ি খুলে ফেলো। সাথে এই বিয়ের শাড়ীটাও।
তনু অবাক মানে সেই অবাক হয়ে যায় নেহালের কথা শুনে।
তনুঃ কি বলছেন?? এখনই?? অসহায় ভাবে।
নেহালঃ হ্যাঁ এখনই।
তনুঃ আমাকে একটু রেডি হতে দেন। অসহায় ভাবে।
নেহালঃ নাহ। আমি আর পারছিনা।
তনুঃ আস্তে আস্তে শুরু করি।
নেহালঃ না। তুমি এদিকে আসো আমিই খুলে দিচ্ছি সব।
নেহাল তনুর সব গহনা খুলে দিলো। তনু অসহায় ভাবে নেহালকে দেখছে।
নেহালঃ উঠো। শাড়ী খুলবে।
তনুঃ প্লিজ আমাকে একটু সময় দিন।
নেহালঃ মোটেও নাহ। মনে আছে আমাকে সবার সামনে না করে ছিলে?? আজ তার রিভেঞ্জ নিবো। হাহাহা।
তনুর মনটা অনেক খারাপ হয়ে যায়। এটা ওর প্রথম মিলন। নেহাল উঠে দাঁড়ায়। তনুকেও বিছানা থেকে নামিয়ে ওর সামনে দাঁড় করায়। নেহাল ওর দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎই নেহাল হেসে দেয়। তনু অবাক হয়ে যায়।
নেহালঃ হাহাহ। কি অবস্থা তোমার। ভীতু মেয়ে। বোকা যে আমাদের মিলিয়েছেন তার কাছে শুকরিয়া আদায় করবো না। মানে ২ রাকাত নামাজ আদায় করবো না। তাই এগুলো খুলতে বলেছি। এই নেও জামা। এটা পরে ওযু করে আসো তারপর একসাথে নামাজ পড়বো।
তনু খুশিতে নেহালকে জড়িয়ে ধরে। নেহালও জড়িয়ে ধরে। এরপর ওরা মহান আল্লাহর কাছে ২ রাকাত নামাজ পড়ে শুকরিয়া আদায় করে।
তনু আগের মতো বিছানায় বসে আছে। নেহাল আস্তে করে বিছানায় উঠে বসে। তনুর হৃদস্পন্দন এখন অনেক বেশি। কেমন এক উত্তেজনা কাজ করছে দুজনের মধ্যে। নেহাল কিভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছে না।
নেহালঃ আচ্ছা এখন কি করবো??
তনু নেহালের এমন প্রশ্ন শুনে বোকা হয়ে যায়। আর ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে,
তনুঃ আমি কিভাবে বলবো।
নেহালঃ না মানে প্রথমতো। আচ্ছা আমি তোমার কোলে মাথা রেখে একটু শোবো??
তনুঃ শোন না। আমিতো আপনারই।
নেহাল তনুর কোলে মাথা রেখে শোয়। শুয়েই শুরু করে দুষ্টামি।
তনুঃ একি কি করছেন?? কুতুকুতু লাগেতো। উমা।উউউ…
আসলে নেহাল তনুর পেটে আস্তে আস্তে করে চুমু দিচ্ছে।
তনুঃ আপনি অনেক দুষ্ট।
নেহালঃ তোমার চেয়ে অনেক কম।
বলেই নেহাল তনুকে শুইয়ে দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে।
তনুঃ আমাকে সবসময় এভাবে ভালোবাসবেনতো??
নেহালঃ আল্লাহ তায়ালা চাইলে অবশ্যই। তনু তুমি কি মানসিক ভাবে প্রস্তুত?? যদি না বলো কোনো সমস্যা নেই। আমি তোমাকে বিন্দুমাত্র কষ্ট দিয়েও তোমাকে আপন করে পেতে চাইনা।
তনুঃ আপনার প্রতিটা স্পর্শ আমাকে আপনার কাছে টানে৷ আমি সবভাবেই প্রস্তুত। আমার সবটা আজ আপনাকে দিলাম। আমার সম্মতি সহকারে।
নেহাল আস্তে করে তনুর ঠোঁটদ্বয়ে ওর ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। আর সেই সাথে ওরা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় অন্যরকম অনুভূতিতে। যে অনুভূতির স্পর্শের মাধ্যমে কাল থেকে ওদের নতুন জীবনের গল্প শুরু হবে।
– প্রতিটি পবিত্র ভালোবাসা একদিন না একদিন শত বাঁধা পেরিয়ে পূর্ণতা লাভ করবেই। তাই আমাদের ভালোবাসা যেন পবিত্র থাকে সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। কারণ অপবিত্র ভালোবাসা কিংবা কোনো কিছুই কোনোদিন পূর্ণতা বা মহান আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টি পায় না।
– এ গল্পটি রিভেঞ্জ নামে হলেও, এখানে রিভেঞ্জকে কেন্দ্র করে আমাদের আধুনিক ভালোবাসার চিত্র তুলে ধরেছি। ফলে হয়তো ওভাবে রিভেঞ্জটা ফুটে উঠেনি। আসলে আমি চাইনি সেটা ফুটে উঠুক। কারণ একটা মেয়েকে বা কাউকে কষ্ট দেওয়া আমার গল্পের লক্ষ্য নয়। দিন শেষে আপনারা যেন কিছু শিখে গল্পটা শেষ করতে পারেন। তাই ছিলো আমার উদ্দেশ্য। হয়তো পেরেছি নয়তো পারিনি।
তাই আপনাদের একটা গঠনমূলক মন্তব্য আমি চাচ্ছি এই পুরো গল্পের উপর। জানাবেন কেমন লেগেছে আমার এই ছোট্ট সামান্য গল্পটি। আনন্দ এবং শিক্ষা পেয়েছেন কি এই গল্প থেকে?? জানাবেন অবশ্যই। ধন্যবাদ এতোটা সময় ধরে যারা সাথে ছিলেন।??
– সমাপ্ত।
© আবির খান।