রিভেঞ্জ পর্বঃ ১৫
– আবির খান
পরদিন সকালে,
নেহালের হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে যায়। কিন্তু চোখ মিলে তাকায় নি। চুপচাপ শুয়ে আছে আর আজকে কি কি করবে তা ভাবছে। আসলে নেহাল সবসময়ই একা ঘুমাতে পছন্দ করে। অনেক জনের সাথে ঘুমাতে ওর অনেক আনইজি লাগে। তাই ওর বাকি বন্ধুরা অন্য রুমে ঘুমিয়েছে আর নেহাল একা ওর রুমে। এতে ওর বন্ধুদের কোনো সমস্যা নেই ওরা বিষয়টা জানে। নেহাল চোখ বন্ধ করে শুয়ে শুয়ে ভাবছে হঠাৎই ওর ফিল হয় কে যেন ওর বিছানায় উঠেছে। নেহাল আস্তে করে এক চোখ খুলে খুব সাবধানে তাকিয়ে দেখে তনু। তনু আস্তে আস্তে করে নেহালের হাত জাগিয়ে নেহালের বুকের সাথে মিশে নেহালকে জড়িয়ে ধরে শোয়। নেহাল তনুর কান্ড দেখে মনে মনে হাসছে। আবার ভালোও লাগছে। রাতে তনুকে ছাড়া অনেকক্ষন ঘুম হয়নি নেহালের। এখন ভালো লাগছে।
তনু আস্তে করে একটু উপরে উঠে নেহালের একদম মুখ বরাবর শোয়। নেহালের ঘন নিঃশ্বাস যেমন তনুর মুখে পরছে ঠিক তেমনি তনুর নিঃশ্বাসও নেহালের মুখে পরছে। নেহালের যা অবস্থা না। ওর খুব ইচ্ছে হচ্ছে এই নরম কোমলতার স্পর্শ পেতে। কিন্তু না আগে দেখতে হবে তনু কি করে। তাই নেহাল চুপচাপ শুয়ে আছে।
তনু নেহালের দিকে তাকিয়ে আছে আর নেহালের গরম নিঃশ্বাস অনুভব করছে। নেহালকে ঘুমন্ত অবস্থায় খুব ভালো লাগছে তনুর। কিউট লাগছে অনেক। তনু মাথাটা তুলে নেহালের নাকে নাক লাগিয়ে ঘষাঘষি করছে। খুব মজা পাচ্ছে তনু। এদিকে নেহালের হাসি পাচ্ছে তনুর বাচ্ছামি দেখে। তনু হঠাৎই নেহালের ঠোঁটে একটা চুমু দিয়ে দেয়। নেহাল কেঁপে উঠে। আবার ডান গালে একটা দেয়, বাম গালে একটা দেয়। নেহাল ভাবছে, ওর মতলবটা কি?? তনু এবার নেহালের কপালে একটা চুমু দেয়৷ দিয়ে নেহালে ঠোঁটের একদম কাছে গিয়ে শোয়। নেহালের কেমন জানি লাগছে। কপালে ঘাম জমে গেছে তনুর কান্ড দেখে। তনু এবার যা করলো তার জন্য নেহাল মোটেও প্রস্তুত ছিলনা। তনু আস্তে করে নেহালের ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে চুপচাপ শুয়ে আছে। নেহালের মন এখন অনেক কিছু চাচ্ছে কিন্তু তনুকে লজ্জা দেওয়া যাবে না তাই নেহালও চুপচাপ শুয়ে আছে। দুজনের ঘন ঘন নিঃশ্বাস একে অপরের সাথে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। তনু স্পর্শটা একটু গভীর করে কিছুক্ষন পর উঠে বসে। আর বলে,
তনুঃ হইছে আর অভিনয় করতে হবে না। আপনি যে সজাগ আমি জানি এখন চোখ মিলে একটু তাকান।
নেহাল তনুর কথায় সক খায় আর ঠাস করে উঠে বসে। আর বলে,
নেহালঃ আমি সজাগ জেনেও আমাকে এভাবে জ্বালালে কেনো?? আশ্চর্য হয়ে।
তনুঃ আপনার ধ্যৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছিলাম।
নেহালঃ বাবাহ। তা ম্যাম আমিকি পাশ করেছি??
তনুঃ হ্যাঁ ১০০ তে ১০০ পেয়েছেন। এতো কেমনে পারেন??
নেহাল তনুকে ধরে টান মেরে শুয়ে দিয়ে ওর ওপর শুয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে। আর বলে,
নেহালঃ ইচ্ছা করে খালি আমাকে ওদিকে নেও না??
তনুঃ কোনদিকে?? না জানার ভান করে।
নেহালঃ দেখাবো কোন দিকে??
তনুঃ হুম দেখান একটু দেখি। মজা করে।
নেহালঃ তুমিতো সেই দুষ্ট। অন্য মেয়েরা হলে এসব থেকে দূরে থাকে আর তুমি উল্টো আমাকে খালি খোচাও।
তনুঃ কারণ আমি জানি আপনি আপনার সীমা অতিক্রম করবেন না বিয়ের আগে। আর এই যে পাপ্পিদি এটা আমার ভালোবাসা। আপনার পরশ স্পর্শ আমার অনেক বেশি ভালো লাগে। আপনাকে সারাজীবনের জন্য ভালোবাসার এবং সারাজীবন আপনার সাথে থাকার প্রতিজ্ঞা করেছি সো একটু পাপ্পিটাপ্পি দিলে কিচ্ছু হবে না। আমার ভালো লাগে। আর আপনাকে আমার প্রতি দূর্বল করে রাখার এটাই আমার একমাত্র অশ্র। নাহলেতো অন্য কোনো সুন্দরী মেয়ের কাছে চলে যাবেন। মজা করে।
নেহালঃ ওরে বাবারে…তুমি কে গো??? এত্তো কিছু ভাবো কিভাবে!!!
তনুঃ ভালোবাসলে এগুলো ভাবতে হয়।
নেহালঃ শোনো তনু, আমাকে আর ১০ ছেলের মতো ভাববা না। আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমার মনকে ভালোবাসি তোমার অস্তিত্বকে ভালোবাসি। আমি শুধু তোমাকে চাই সারাটা জীবন সারাটাক্ষন। এসবের জন্য আমি তোমাকে চাই না। আর আমি এমনও না যে তুমি আমাকে এসব আদর না দিলে আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো। আমার ভালোবাসা অন্যরকম। যাকে ভালোবাসি একবারই সারাজীবনের জন্য ভালোবাসি। আর ২য় কেউ নয়।
তনুঃ আমি সব জানি। আপনি যে কতোটা ভালো মানুষ সেদিন এতিম বাচ্চাগুলোকে দেখেই বুঝেছি। আসলে আপনাকে ভালোবেসেই আদর করি। আমার ভালোবাসা এমনই। আমার মনের শান্তিতেই আমার ভালোবাসা।
নেহালঃ আচ্ছা বাবা বুঝলাম। এখন যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। সবার সাথে নাস্তা করে তোমাকে নিয়ে শপিং এ যাবো।
তনুঃ শপিং!!! কেনো?? অবাক হয়ে।
নেহালঃ ম্যাম তুলে আনছি আপনাকে। জামা কাপড়তো কিছুই আনিনি ভুলে গেছেন??
তনুঃ তাহলে এগুলো??
নেহালঃ আরে এই ৪/৫ টা জামায় কি হবে?? আমার বন্ধুদের বান্ধবীরা আসছে তাদের সামনে কি তুমি এই নরমাল জামা পরে থাকবে?? আমার ভালো লাগবে না। তাই আজ মন ভরে শপিং করবো।
তনুঃ বাপের টাকায়??মজা করে।
নেহালঃ তনু এগুলো কিন্তু ঠিক না। মজা নষ্ট করবে না।
তনুঃ আচ্ছা যাবো। চলেন আমাকে ব্রাশ করিয়ে দিবেন।
নেহাল তনুর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে বলল,
নেহালঃ আচ্ছো চলেন আমার পিচ্চু পরী। আজ আপনাকে ব্রাশ করিয়ে দিবো। আচ্ছা খাইয়ে দিতে হবে??মজা করে।
তনুঃ দিলে আমার সমস্যা নেই। মজা করে।
নেহালঃ ওরে দুষ্ট রে। চলো।
এরপর নেহাল আর তনু ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে দুজন একসাথে নিচে নেমে এলো। রাফি উঠে হাত দিয়ে স্ক্রিন বানিয়ে বলছে,
রাফিঃ বাহহহ। কি সুন্দর জুটি। একদম জানাম জানামকা।
শামিমঃ ঠিক বলেছিস রাফি।
নেহালঃ তোদের জুটি কই??
নিলয়ঃ আসছে মামা। এই ১২ টার মধ্যে এসে পরবে।
পাশ থেকে সালমান বলে উঠলো,
সালমানঃ তোদের ৩ জনের ১২ টা বাজাতে!!! মজা করে।
সবাই একসাথে হেসে দেয়। তনু প্রেমার কাছে রান্না ঘরে চলে যায়।
তনুঃ কিরে কি করছিস??
রামু কাকাঃ দেখছো মা, হেই কবে থেকে কইলাম দেও নাস্তাডা মুই বানাই হেয়া মাইয়া মোডে মোর কতাই হোনে না। নিজে নিজে বানাইতাছে।
তনুঃ কিরে তুই বানাচ্ছিস কেনো??
প্রেমাঃ আরে রামু কাকা কতো জনের নাস্তা বানাবে?? বয়স্ক মানুষ। তাই আজ আমিই বানাচ্ছি।
তনুঃ বাবাহ। তা আমাকে ডাক দিতি।
প্রেমা তনুর কানের কাছে এসে বলল,
প্রেমাঃ তুইতো ভাইয়াকে আদর করতে ছিলি কিভাবে আসতি!!
তনু লজ্জা পেয়ে যায়।
তনুঃ আচ্ছা দে আমিও সাহায্য করছি।
প্রেমাঃ আচ্ছা।
তনু আর প্রেমা নাস্তা বানাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর,
নেহালঃ ও রামু চাচা…
রামু কাকাঃ জ্বি বাবা??
নেহালঃ তনুরা কই??
রামু কাকাঃ আরে কইয়ো না দুই জনে মিল্লা জমপেশ নাস্তা বানাইতাছে তোমগো লইগা।
নেহালঃ ওয়াও বলেন কি।
সালমানঃ দোস্তো সংসারতো ওরা এখনই হাতে নিয়া নিসে। চল বিয়েটা করেই ফেলি।
নেহালঃ ভাই তোর খবর জানি না। কিন্তু আমার দেরি আছে। হতাশ হয়ে।
সবাইঃ হাহাহা।
এরমধ্যেই তনু আর প্রেমা সবার জন্য নাস্তা খাবার টেবিলে নিয়ে আসলো। সবাই একসাথে খেতে বসলো।
নেহালঃ নাস্তাটা আসলেই সেই হয়েছে।
তনুঃ হবে না আবার আমার বোন প্রেমা একদম পাকা রাঁধূনী। সে রেঁধেছে। মজা না হয়ে পারে।
প্রেমা অনেক লজ্জা পাচ্ছে।
শামিমঃ ভাই সালমান কপাল ভালো তোর। আমারটা আজ পর্যন্ত রান্নাঘরে গিয়েছে কিনা সন্দেহ। খালি খায়।
তনুঃ আরে ভাইয়া আপনি শিখায় দিবেন।
নিলয়ঃ হাহাহা ও শিখাবে??? ও নিজেইতো রান্না পারে না।।
শামিমঃ ইউটিউব বাবা আছে না।
সবাই একসাথে হেসে দেয়। খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে নেহাল তনুকে নিয়ে শপিং এ চলে যায়। যাওয়ার আগে সালমানকে সব বুঝিয়ে দেয়। সালমান আর বাকি বন্ধুরা মিলে সুন্দর করে সবটা সাজিয়ে নেয়। এরমধ্যে শামিম, রাফি আর নিলয়েরও গার্লফ্রেন্ডরাও এসে পরে। ওরা ৮ জন মিলে সুন্দর করে বাগানটা সাজায়। গোলাপের পাপড়ি দিয়ে স্পেশাল রাস্তা বানানো হয় তনু আর নেহালের জন্য। ওরা সব গুছিয়ে রেডি করছে।
এদিকে শপিং মলে,
তনুঃ আরে এত্তো দামি দামি ড্রেস কিনছেন কেনো??
নেহালঃ চুপ থাকোতো। আমার বাপের অনেক টাকা একটু ওড়াইতে দেও। মজা করে।
নেহাল তনুকে অনেক সুন্দর সুন্দর ড্রেস কিনে দিয়ে ওকে নিয়ে একটা পার্লারে যায়। আসলে তনুর আজ মোটেও খেয়াল নেই যে তনুর আজ জন্মদিন। পার্লারে নেওয়াতে তনু কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
তনুঃ এখানে কেনো??
নেহালঃ আরে আমার বন্ধুদের গার্লফ্রেন্ডরা আসবেনা। তোমাকে একদম পরীর মতো সাজিয়ে তাদের সামনে নিয়ে যাবো।
তনুঃ তুমিও না একটা পাগল।
নেহালঃ হুম শুধু তোমার জন্য।
নেহাল তনুর অজান্তেই পার্লারের আপুদের বলে দেয় ওকে বার্থডে সাজ দিতে। তারা সেভাবেই সাজ দেয়। নেহালের কেনা দামি ড্রেসটা তনুকে পরিয়ে দেওয়া হয়। নেহাল চোখ ফেরাতে পারছে না তনুর উপর থেকে। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নেহাল।
তনুঃ হয়েছে মন মতো??
নেহালঃ একদম ময়নাপাখি। অনেক খুশি হয়ে।
তনুঃ তাহলে চলো এখন বাসায় যাই। দেখি কে বেশি সুন্দর। মজা করে।
নেহালঃ আচ্ছা চলো। আর শোনো, তুমিই সবচেয়ে বেশি সুন্দরী আমার কাছে।
সন্ধ্যা ৭.১৩ মিনিট,
নেহাল গাড়িতে করে তনুকে নিয়ে ওর বাগান বাড়ির মেইন গেইটের সামনে থামলো। তনু দেখে পুরো বাড়ি অন্ধকার। নেহাল আর তনু বাইরে বেরিয়ে আসে।
তনুঃ কি ব্যাপার এত্তো অন্ধকার কেনো??
নেহালঃ মনে হয় কারেন্ট গেসে। চলোতো ভিতরে ঢুকে দেখি।
তনুঃ হ্যাঁ।
নেহাল আর তনু মেইন গেইট দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই ওদের মাথার উপর থেকে…
চলবে…?
– গল্পের চলমান অবস্থা অনুযায়ী পর্বগুলো ছোট-বড় হয়ে থাকে।