রিভেঞ্জ পর্বঃ ১৩
– আবির খান
নেহাল বাসায় ঢুকে উপরে যাওয়া মাত্রই তনু দৌড়ে এসে নেহালকে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু নেহাল অভিমান করে তনুকে ছাড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। নেহাল ফ্রেশ হয়ে বাইরে এলেই তনু আবার নেহালকে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু নেহাল তনুকে ছাড়িয়ে বিছানায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে শুয়ে পরে। তনু নেহালের মুখের কাছে গিয়ে বলে,
তনুঃ একি আপনি আমার সাথে এমন করছেন কেনো?? অবাক হয়ে।
নেহাল অন্যদিকে ফিরে শোয়। তনু এবার বিছানার উপর উঠে নেহালের সামনে বসে আবার বলে,
তনুঃ আহহ এমন করছেন কেন কি হয়েছে?? মন খারাপ করে।
নেহাল আবার অন্যদিকে দিকে ঘুরতে নিলে তনু ধরে রেখে বলে,
তনুঃ আপনি যদি আমাকে এখন না বলেন কি হয়েছে আমি কিন্তু কেঁদে দিবো। পরে থামাতে পারবেন না। বলেন এমন করছেন কেনো??
নেহালঃ করবো না এমন?? তোমাকে আদর করলেই তুমি সবাইকে বলে দেও। তোমাকে রাগ দেখালেও তুমি মায়ের কাছে নালিশ করো। তাই তোমাকে আর আদরও করবো না আর রাগও দেখাবো না। মজা করে।
তনুঃ আরে কি বলেন?? আপনি কি বাচ্চা নাকি?? আমি ছোট বাবু দেখে আমি মজা করি। আপনি এমন করেন কেনো??
এবার নেহাল এক লাফে উঠে বসে। আর বলে,
নেহালঃ তুমি ছোট বাবু না?? তুমি নিজে একটা বাবু নিতে পারবা সেই বয়স তোমার হয়েছে। আসছে আমার বাবু হুহ।
তনুঃ সত্যিই আমি একটা বাবু নিতে পারবো?? তাহলে আমাকে একটা বাবু দেন না?? প্লিজ..প্লিজ…প্লিজ.. অনুনয়ের স্বরে।
নেহালঃ তার জন্যতো আমাকে বিয়ে করতে হবে। যদি বিয়ে করো তাহলে বাবু দিবো।
তনুঃ আচ্ছা চলেন এখনই বিয়ে করি।
নেহালঃ আচ্ছা তুমি কি আমার সাথে মজা করছো??
তনুঃ তা নয়তো কি?? আমাকে বোকা পাইছেন আপনি?? আমি এতোটাও ছোট নই যে এসব বুঝি না সব বুঝি।
নেহালঃ তারমানে তুমি আমাকে বোকা বানাচ্ছিলে??
তনুঃ জ্বি। বাবুর কথার বলে আমাকে বিয়ে করা না হুম??
নেহাল ঠাস করে তনুকে ধরে টান মেরে বিছানায় শুয়ে দিয়ে ওর উপর উঠে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
নেহালঃ আমাকে বিয়ে করতে তোমার সমস্যা কি??
তনুঃ আরে আমরাতো ঠিক মতো আগে প্রেমই করতে পারিনি। আগে প্রেম করবো, ঘুরবো, মজা করবো, আপনার কাছ থেকে অনেক গুলা পাপ্পি নিবো তারপর বিয়ে।
নেহালঃ ওরে বাবারেএএএ। এতো সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা। এতো চিন্তা করো কখন?? অবাক হয়ে।
তনুঃ যখন আপনাকে দেখি তখন মনে মনে অনেক ইচ্ছেজাল বুনি।
নেহালঃ বাবাহ। আচ্ছা যাও তোমার প্রতিটা ইচ্ছা আমাকে বলবা আমি সব পূরণ করে দিবো।
তনুঃ সত্যিই?? খুশি হয়ে।
নেহালঃ হ্যাঁ সত্যিই। শুধু তার জন্য তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।
তনুঃ কি কাজ??
নেহালঃ আমাকে অনেক ভালোবাসা দিতে হবে।
তনুঃ আচ্ছা দিবো। এখন আপনি আমাকে কিছু দেন।
নেহালঃ আমি আবার কি দিবো??
তনুঃ কেনো আমার পাপ্পি?? আপনার পাপ্পির প্রেমে পরে গিয়েছি আমি। প্রতিদিন এক,দুই,তিন,চার,পাঁচ না এক হাজারটা পাপ্পি দিবেন আমাকে।
নেহালঃ বলো কি?? তাহলেতো আমার ঠোঁট আর ঠোঁট থাকবেনা। মজা করে।
তনুঃ না না আমার পাপ্পি চাই।
নেহালঃ আচ্ছা দিবো দিবো। তুমি যে কি আমি বুঝিই না।
তনুঃ কেনো কেনো??
নেহালঃ একবার মনে হয় বাচ্চা একবার মনে হয় অনেক বড়।
তনুঃ হা হা হা। আমি এখন বাবু। এই আপনি অনেক পঁচা। আপনি কথা ঘুরাচ্ছেন। পাপ্পি না দেওয়ার ধান্দা না৷ দাঁড়ান আমার পাপ্পি আমাকেই নিতে হবে।
তনু নেহালের ঠোঁটে ওর ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। তনু পরম আনন্দে নেহালের কাছ থেকে তার জোরপূর্বক পাপ্পি নিচ্ছে। নেহাল বেচারা ঠোঁট নিয়ে টানাটানিতে পরছে। তনু যে ভাবে পাপ্পি নিচ্ছে বেচারার ঠোঁটটা আজ ছিড়েই যায় কিনা সন্দেহ। হাহা।
দীর্ঘ ২০ মিনিট পর তনু নেহালকে ছাড়লো। দুজনের শ্বাস একদম ঘন হয়ে গিয়েছে৷ নেহাল তনুর উপর থেকে নেমে পাশে শুয়ে পরে হাপাচ্ছে। মনে হয় ১০ তলা বিল্ডিং ১০ বার উঠা নামা করেছে।
নেহালঃ প্রাণ ভরছে আপনার??
তনুঃ না আরো দিবো৷ মজা করে।
নেহালঃ ওরে বাবারে। আমি কিন্তু এখন নিচে চলে যাবো।
তনুঃ পাগল মজা করছি। এদিকে আসেন আপনার বুকে জড়িয়ে ধরে একটু ঘুমাবো।
নেহাল তনুর এমন আহ্লাদী কণ্ঠে আবদার ফিরাতে পারে না। তনুর কাছে গিয়ে ওকে বুকের মধ্যে নিয়ে জড়িয়ে ধরে দুজন দুজনের মাঝে মিশে এক হয়ে একটা ঘুম দেয়।
দুপুর ২.৩৫ মিনিট,
নেহালের প্রথম ঘুম ভেঙে যায়। নেহাল আস্তে করে সরে তনুর মুখটা বের করে তনুর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে, আজ থেকে কয়েক মাস আগেও এই পিচ্চু পরী মেয়েটা আমার কত্তো অপরিচিত ছিলো। কিন্তু আজ আমার এত্তো পরিচিত যে আমার সাথে মিশে আছে। ও আমার হৃদস্পন্দন ও আমার প্রতিটি নিঃশ্বাস ও আমার একান্ত ভালোবাসা। নেহাল তনুর কপালে চুমু দিয়ে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
তনুঃ এভাবে ভালোবাসবেন তো সবসময় আমাকে??
নেহাল তনুর কথা শুনে চমকে উঠে।
নেহালঃ মানে কি তুমি কখন উঠলে??
তনুঃ যখন আপনার মধ্যে আমার জন্য অনেক ভালোবাসা অনুভব করতে পেরেছিলাম তখন।
নেহালঃ না আমি খেলবো না। আমাকে একটু আমার মতো করে ভালোবাসতে দেওনা তুমি। আমি খেলবো না।
তনুঃ আপনিও আমার মতো একটা বাবু।
নেহালঃ তুমি বাবু অামি না।
তনুঃ আচ্ছা যান অামিই বাবু। আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসেন তাইনা??
নেহালঃ আমার হৃদয় খুলে যদি তোমাকে দেখাতে পারতাম তনু সেখানে শুধু তুমি আর তুমি।
হায়রে নেহাল এমন কি বলল, তনু নেহালকে ছেড়ে হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।
নেহালঃ একি তুমি এভাবে হাসছো কেনো?? পাগলি হলে নাকি??অবাক হয়ে।
তনুঃ হাসবো না তো কি!! বাংলা সিনেমায় এমন ডায়লগ দেয়। হাহাহা।
নেহাল তনুর কথা শুনে লজ্জায় মাথা কাঁটা যাচ্ছে। মেয়েটা ভারী ডেঞ্জারাস। তনুর এমন হাসাহাসি দেখে নেহালও হেসে দেয়।
নেহালঃ আচ্ছা শুনো, সবতো ঠিকঠাক হলো। আমার বন্ধুদের আর প্রেমাকে বিষয়টা জানালে কেমন হয়??
তনুঃ হুম অনেক ভালো। দেন জানিয়ে দেন।
নেহালঃ এক কাজ করি ওদের সবাইকে এখনো আসতে বলি। প্রথমে আমি দুঃখী ভাবে ওদের সামনে যাবো তারপর হঠাৎ করে তুমি আড়াল থেকে বের হয়ে এসে সবাইকে সারপ্রাইজ দিবে। আর ওরা সবাই সক খাবে। সেই হবে না??
তনুঃ সত্যিই সারপ্রাইজ দেওয়া কেউ আপনার কাছ থেকে শিখুক। সেই মানে অস্থির হবে।
নেহালঃ তাহলে এখন উঠো। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে ওদের সাথে কথা বলি।
তনুঃ চলেন একসাথে ফ্রেশ হই। মজা করে।
নেহালঃ এই দুষ্ট মেয়ে পঁচা কথা বলবা না। বিয়ের আগে এগুলো না।
তনুঃ আরে আমিতো মজা করছিলাম।
নেহালঃ আমি বুঝি তোমার মজা। এখন যাও তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। তারপর আমি যাবো।
তনুঃ আচ্ছা।
তনু নেহালকে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। এরপর তনু বের হলে নেহালও ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে তনুকে নিয়ে বাগানে দোলনায় বসে নেহাল সালমানকে ফোন দেয়।
সালমানঃ হ্যালো নেহাল…ভাই আমার কেমন আছিস??
নেহালঃ আছি কোনো রকম। অসহায় ভাবে।
সালমানঃ নেহাল দোস্ত, তনুকে এখনো খুজে পাইনি। প্রেমাটা সারাদিন তনুর জন্য মন খারাপ করে থাকে।
নেহালঃ বাদদে ওই পঁচা মেয়ে তনুর কথা। দেখগে ওর কোনো পুরানা আশিক ওকে তুলে নিয়ে গেছে।
নেহালের কথা শুনে তনু হাসছে আর নেহালের পেটে গুতো দিচ্ছে।
সালমানঃ এভাবে বলিস না ভাই।
নেহালঃ আচ্ছা শোন, তোরা সবাই আর প্রেমাকে সাথে নিয়ে বরিশালে আমাদের বাগান বাড়িতে আসতে পারবি?? আমি গতকাল এসেছি। তোরাও আয়।
সালমানঃ কি বলিস?? গতকালই বলতি তাহলে একসাথে আসতাম।
নেহালঃ না আমার কিছু কাজ ছিলো তাই একা আসছি। এখন বল তোরা আসতে পারবি??
সালমানঃ কি যে বলিস না। ধর আমরা রওনা দিয়েছি। কাল সকালে তোর কাছে ভাই। মন খারাপ করিস না আমরা আসছি কাল সকালে৷
নেহালঃ আচ্ছা আয় আমি অপেক্ষায় আছি। আর প্রেমাকে অবশ্যই নিয়ে আসিস।
সালমানঃ তা আবার বলতে হয়।
নেহালঃ আচ্ছা রাখিরে।
সালমানঃ আচ্ছা।
ফোন রেখে দেয়।
নেহালঃ ইয়েএএএ ওরা আসছে। কাল সেই মজা হবে তনু। ইয়েএএএএ। তনুকে জড়িয়ে ধরে বলল নেহাল।
তনুঃ আসলেই কাল সেই মজা হবে। আমি শুধু প্রেমার ফেইসটা দেখতে চাই। হাহা।
নেহালঃ চলো রামু কাকাকে বলে সব গুছিয়ে নি। আর খাবারের ও ব্যবস্থা করতে হবে। চলো।
তনুঃ আচ্ছা চলেন।
চলবে…?
– কোনো ভুল হলে জানাবেন।
আমার প্রিয় পাঠকদের বেশি বেশি সাড়া চাই। আর কেমন লেগেছে আজকের পর্বটি?? মজা পাচ্ছেনতো?? জানিয়েন কিন্তু। ☺