রিভেঞ্জ পর্বঃ ১২
– আবির খান
নেহালের চিন্তা করতে করতে তনু একসময় ঘুমিয়ে পরে। তনুর জানা নেই এই ঘুম ভাঙলে ওর জন্য কত্তো বড় একটা সক অপেক্ষা করছে।
– তনু….তনু মা…এই তনু আরে ওঠ।
তনু সোফায় শোয়া ছিলো। কারো ডাকে তনুর ঘুমটা ভাঙলো। তনু আস্তে আস্তে করে চোখ মিলে তাকায়। তনু তাকিয়ে ওর চোখের সামনে যাকে দেখে তার চেয়ে ভুত দেখলেও ও হয়তো এত্তো সক খেতো না। কারণ ওর মায়াবী দুচোখ ওর নিজের মাকে দেখছে। তনুর কোনোভাবেই বিশ্বাস হচ্ছে না। ওর মনে হচ্ছে ও কোনো স্বপ্ন দেখছে।
মাঃ কিরে কি হলো?? আমাকে জড়িয়ে ধরবি না??
তনুঃ আমিতো স্বপ্ন দেখছি। কিভাবে জড়িয়ে ধরবো বলো।
পাশ থেকে নেহাল,
নেহালঃ দেখো তোমার স্বপ্নে আমিও আছি। মজা করে৷
তনুঃ মানে কি??? তাহলে…
মাঃ হ্যাঁরে পাগলি আমি সত্যিই এসেছি তোর কাছে। বোকা মেয়ে আমার৷
তনু এক লাফে মাকে জড়িয়ে ধরে।
তনুঃ মা!!!! তুমি এখানে??? কিভাবে সম্ভব??? খুব মিস করছিলাম তোমাকে মা। খুব।
মাঃ জানি রে মা। তাইতো চলে এসেছি।
তনুঃ কিন্তু কিভাবে?? অবাক হয়ে।
মাঃ এই যে তোর মতো আমাকেও কিডনাপ করে নিয়ে এসেছে তোর প্রেমিক। মজা করে।
তনুঃ কিহহহ?? কি বলো।
মাঃ আরে তুই নাকি আমাকে দেখতে চেয়েছিস তাই নেহাল বাবা বুদ্ধি করে আমাকে তোর কাছে নিয়ে এসেছে।
তনু নেহালের দিকে তাকায়। নেহাল মন খুলে হাসছে।
তনুঃ কিভাবে আসলে মা??
মাঃ আগে বস তারপর বলছি।
তনু আর তনুর মা সোফাতে বসলেন। তারপর তনুর মা বলতে শুরু করলেন,
মাঃ তোর এই পাগল প্রেমিকটা কি করেছে জানিস??
তনু নেহালের দিকে তাকিয়ে বলল,
তনুঃ কি করেছে??
মাঃ ও আমাদের বাসায় পুলিশ সেজে গিয়েছে। প্রথমে আমরা অনেক ভয় পেয়ে যাই ওর হাবভাব দেখে। পরে ও বলে, এখানে তনুর মা কে। সবাই আমাকে দেখিয়ে দিলে। এ আবার বলে, আপনাকে আমার সাথে থানায় যেতে হবে কিছু জিজ্ঞেস করবো। তোর বাবাতো ভয়ে অবস্থা খারাপ। ও এতো রাগী ভাবে কথা বলছিলো। তারপর আমাকে নিয়ে এখানে চলে আসে। প্রথমে আমিও বুঝিনি যে ও নেহাল। পরে বাইরে এনে আমাকে বলে, মা আমি নেহাল। বল কি দুষ্ট তোর প্রেমিক।
নেহাল হাসছে ওদের দিকে তাকিয়ে। তনু উঠে নেহালের কাছে গিয়ে ওর কান টেনে ধরে। আর বলে,
তনুঃ আপনি আমার মাকে ভয় দেখিয়েছেন কেনো??
নেহালঃ উরেএএএ লাগেতো…ছাড়ো।
মাঃ আরে আরে কি করছিস?? ও এমন না করলে আমাকে আনতে পারতো বোকা মেয়ে?? না আনলে তুই আমাকে দেখতে পেতি??
তনু ভাবে আসলেই তো। তনু ওর মায়ের সামনে নেহালের গালে গাল লাগিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
তনুঃ মা, দেখছো এই হলো আমার নেহাল। কত্তো ভালোবাসে আমাকে। জানো আমাকে অনেক আদর করে।
নেহাল লজ্জায় মরে যাচ্ছে। ঘাম বের হয়ে গিয়েছে লজ্জায়।
নেহালঃ আরে কি করছো কি বলছো মায়ের সামনে?? মাথা ঠিক আছে?? চাপা কণ্ঠে।
তনু মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর মা মিটিমিটি হাসছে। তনু নেহালকে ছেড়ে দিয়ে লজ্জা পেয়ে মায়ের কাছে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে মুখ লুকিয়ে বসে।
মাঃ নেহাল বাবা, তুমিও আমার পাশে বসো।
নেহালও তনুর মায়ের কাছে গিয়ে বসে।
মাঃ বাবা, মেয়েটা আমার অনেক ছোট এখনো। তোমাকে অনেক ভালোবাসে। ওর বাবা এক এলাকার গুন্ডার কাছে ওকে তুলে দিতে চাচ্ছিলো শুধু তার ব্যবসাটা বাঁচানোর জন্য। বাবা তোমাকে কি বলে যে ধধন্যবাদ দিবো আমি জানি না। তুমি ওকে এখানে না আনলে আমার ফুলের মতো মেয়েটার জীবন আজ শেষ হয়ে যেতো। ওর যে কি হতো। কাঁদতে কাঁদতে বললেন।
নেহাল তনুর মায়ের চোখ মুছে দিয়ে বলে,
নেহালঃ মা, অাপনি কাঁদবেন না। আপনার মেয়ের সব দায়িত্ব যেমন আমার তেমনি অাপনাদের দায়িত্বটাও আমার। আপনি আমাকে ধন্যবাদ দিবেন না। সব ওই আল্লাহ তায়ালার রহমত। সে সময় মতো আমাকে সুবুদ্ধি না দিলে হয়তো আমিও যেতাম নাহ। সব আল্লাহর ইচ্ছা।
মাঃ আসলেই বাবা আমার মেয়ে একটা হীরার মতো ছেলেকে পছন্দ করেছে। তুমি হীরার চেয়েও দামি। আল্লাহ তোমাদের সব সময় ভালো রাখুক।
হঠাৎ করে তনু বলে উঠে,
তনুঃ মা, জানো উনি অনেক পঁচা।
নেহাল তনুর কথা শুনে অনেক ভয় পেয়ে যায়।
মাঃ কেনো পঁচা শুনি??
তনুঃ উনি অনেক রাগ করে। বলো আমার রাগ দেখলে অনেক ভয় করে না?? উনাকে বলে যাও আমাকে যেন আর রাগ না দেখায়। বাচ্চাদের মতো করে বলল।
মাঃ ওরে বাবা কি নালিশ। আচ্ছা বলে দিচ্ছি।
তনুর মা নেহালকে চোখ টিপ দিয়ে বলল,
মাঃ নেহাল বাবা, আমার এই বাচ্চা মেয়েটাকে আর রাগ দেখাবা না ঠিক আছে?? নাহলে কি তোমাকে মার দিবো। মজা করে।
নেহালঃ জ্বি মা। হাসতে হাসতে।
মাঃ কিরে হয়েছে খুশি এখন??
তনুঃ হ্যাঁ অনেক খুশি।
মাঃ আচ্ছা যা আমাদের জন্য চা নিয়া আস। তোর হাতের চা খাইনা কত্তো দিন হলো।
তনুঃ আচ্ছা এখনি আনছি।
তনু নিচে চলে গেলে তনুর মা নেহালের দিকে ঘুরে বলতে শুরু করে,
মাঃ বাবা দেখলেইতো আমার মেয়েটা এখনো বাচ্চা মনের দিক থেকে। ওকে আমি অনেক যত্ন করে বড় করেছি। বাবা আমার এই ফুলটা আজ থেকে তোমার। তুমি ওকে আগলে রেখো। কোনো কষ্ট দিওনা ওকে। ও একমাত্র আমার পরে শুধু তোমাকেই এতো ভালোবাসে।
নেহালঃ মা, আমি আপনাকে ওয়াদা করছি ওর কোনো ক্ষতি কিংবা কষ্ট আমি হতে দিবো। আপনার এই ফুলকে আমি সবসময় সযত্নে রাখবো।
মাঃ আর কিছু চাই না বাবা আমি।
নেহালঃ মা আমি জানি আপনার কাছে এই বিষয়টা হয়তো খারাপ লাগছে যে তনুকে বিয়ে না করেই আমার কাছে রাখছি। আসলে মা আমি ওকে অনেক বেশি ভালোবাসি। ওকে ছাড়া থাকাটা এখন আমার পক্ষে আর সম্ভব না। তাছাড়া আমার বাবা এখন অস্ট্রেলিয়াতে আছে। সে আসা মাত্রই আমি তনুকে বিয়ে করবো। সেই কয়দিন মা ও আমার কাছে থাকুক??
মাঃ কি যে বলো বাবা তুমি। শোনো, একজন মেয়ের মায়ের কাছে সবচেয়ে বড় খুশির বিষয় হলো তার মেয়েটা খুশি আছে কিনা?? আমার মেয়েটা তোমার কাছে খুশি আছি এই বেশি। আর বিয়ে সেটা হলো একটা পবিত্র বন্ধন। যে বন্ধন সারাজীবনের জন্য। সে বন্ধনের মাধ্যমে একটা মেয়ের দায়িত্ব একটা ছেলে গ্রহণ করে। আর একটা মেয়ে ছেলেটার সহ তার পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ করে। তুমিতো বাবা ওকে বিয়ে করার আগেই ওর সব দায়িত্ব গ্রহণ করেছো। আমার আর কি চাই বলো।
নেহালঃ ধন্যবাদ মা। তারপরও মা আপনি একটুও টেনশন করবেন না আপনার এই ফুলকে একদম বিয়ে করে আমার বাসার সাজিয়ে রেখে দিবো।
মাঃ আচ্ছা। হাহাহা।
তনু চা হাতে আগমন।
তনুঃ এতো হাসাহাসি কিসের হুম??
নেহালঃ আপনাকে বিয়ে করে একবারে নিয়ে যাবো তার কথাই বলছি।
তনুঃ কি আবার বিয়ে?? আমি বিয়ে করবো না। অসহায় ভাবে।
মাঃ বোকা মেয়ে একটা। তুই নেহালকে বিয়ে করবি না??
তনুঃ এখন না আগে বড় হই তারপর। আমিতো এখনো বাবু।
নেহালঃ দেখছেন মা কি দুষ্ট?? আমি ওকে বাচ্চা বললে বলে, আমি বাচ্চা না আমি অনেক বড়। এখন বলে ও নাকি বাবু।
মাঃ তোমাদের ঝামেলা ভাই তোমারাই দেখো আমি এর মধ্যে নাই ভাই। চা খেতে খেতে বললেন।
নেহালঃ হাহা আচ্ছা মা আমিই দেখবো নে। তনু রামু কাকা কই?? তাকে দেখছি না??
তনুঃ রামু কাকা খুশিতে মিষ্টি আনতে গেছে।
মাঃ তনু মা তোর হাতের চা, আজ কত্তোদিন পর খেলাম। সেই আগের মতো অনেক ভালো হয়েছে।
তনুঃ মা তুমিও না।
নেহালও সাথে সাথে এক কাপ চা তুলে নিয়ে তাতে চুমুক দেয়। আসলেই তনু হেব্বি চা বানায়।
নেহালঃ কুব টেস্ট তনু। হাহা৷
তনুঃ মার দিবো মজা করবা না।
নেহালঃ না না অনেক মজা হইছে সত্যিই। মায়ের কথাই ঠিক তুমি অনেক ভালো চা বানাও।
তনুঃ হুম।
এরমধ্যেই রামু কাকা মিষ্টি নিয়া চলে এসেছেন।
রামু কাকাঃ এই যে মুই মিষ্টি লইয়া আইয়া পরছি। নেন আফা মিষ্টি মুখ করেন।
মাঃ উনিকে বাবা??
নেহালঃ মা উনি আমাদের এই বাগানবাড়ির দেখা শুনা করেন রামু কাকা। আমি চাচা বলি।
রামু কাকাঃ আমনে কি মোর তনু মার আম্মা??
মাঃ জ্বি চাচা।
রামু কাকাঃ খুব ভালো খুব ভালো। মোর আজকে যে কি খুশি লাগতাছে না। কইতে পারমু না।
মাঃ জ্বি চাচা সত্যিই বলছেন। আমারও আজ অনেক খুশি লাগছে।
রামু কাকাঃ দেখছেন মুই আমনেগো লগে কতা কইতাছি। মুই যাইয়া রান্দি। আফা খাইয়া যাইবেন কিন্তু।
মাঃ না না চাচা। আজকে না। আমার এখনই যেতে হবে নাহলে ওর বাবা আবার সমস্যা করবে।
নেহালঃ আচ্ছা মা চলেন আমি এগিয়ে দিয়ে আসি।
তনুঃ মা আরেকটু থাকো।
মাঃ নারে মা। তোর বাবাকে ফাঁকি দিয়ে আসছি। পরে আবার কি করে কে জানে৷ এখন যাই। আমি কিন্তু জামাইয়ের ফোনে ফোন দিবো তোর সাথে কথা বলতে।
তনুঃ জামাই?? আমিতো বিয়েই করিনি জামাই কই??
নেহালঃ মা যাক তারপর বলছি জামাই কই। তনুর কানে কানে বলল।
মাঃ হাহাহা। বাচ্চা মেয়ে আমার। শোন, নেহালকে জ্বালাবি না। আর ঠিক মতো থাকবি। যদি আমার কথা বেশি মনে পরে আমাকে বলবি আমি চলে আসবো। ঠিক আছে?? কাঁদতে কাঁদতে।
তনুঃ আচ্ছা আম্মু। কেঁদো না তুমি। উনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন তোমার মতো। অনেক আদর করে।
মাঃ বোকা মেয়ে চুপ কর৷ হাহা।
এদিকে নেহাল খালি লজ্জায় পরছে। নেহাল ভ্রু কুঁচকে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে।
নেহালঃ এসে নেই দাঁড়াও। দেখাচ্ছি আদর।
মাঃ চলো বাবা এখন যাওয়া যাক।
নিচে,
মাঃ আসি মা। ভালো থাকিস। নিজের আর এই তোর হবু বরটার খেয়াল রাখিস। রামু চাচা আপনি ওদের খেয়াল রেখেন।
রামু কাকাঃ জ্বি আফা অবশ্যই।
মাঃ চলো বাবা।
এরপর নেহাল তনুর মাকে নামিয়ে দিয়ে ওদের বাড়িতে চলে আসে। তনুর মা নেহালকে বলে দেয় তনুর খেয়াল রাখতে। নেহাল বাসায় ঢুকে উপরে যাওয়া মাত্রই তনু দৌড়ে এসে নেহালকে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু নেহাল অভিমান করে তনুকে ছাড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। নেহাল ফ্রেশ হয়ে বাইরে এলেই তনু…
চলবে…?
– কোনো ভুল হলে মাফ করবেন।
কেমন লেগেছে আজকের পর্বটি জানিয়েন কিন্তু। আর আমার প্রিয় পাঠকদের বেশি বেশি সাড়া চাই।