রিভেঞ্জ পর্বঃ ০৯
– আবির খান
তনুর বিয়ের শাড়ী পরা অবস্থায় এখনো অজ্ঞান হয়ে নেহালের বিছানায় পরে আছে। আরো কিছু সময় পরই তনুর আস্তে আস্তে জ্ঞান ফিরে আসে। তনু আস্তে করে চোখ মিলে তাকায়। তনু দেখে, মাথার উপর দামি ফ্যানটা অনেক জোরে ঘুরছে আর শো শো করে বাতাসের শব্দ হচ্ছে। তনুর কাছে ফ্যানটা আর পরিবেশটা সম্পূর্ণ অচেনা লাগছে। ওর কিছুই মনে আসছে না। তনু আস্তে করে উঠে বসে। তনু সামনে তাকাতেই তনু আঁতকে উঠে। কারণ তনু দেখে ওর সামনে হিংস্র সিংহের মতো রাগী ভাবে নেহাল বসে ওর দিকে জ্বলন্ত চোখদ্বয় নিয়ে তাকিয়ে আছে।
নেহালকে এভাবে দেখে তনু প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে ওর শরীর কাঁপতে শুরু করে। তনু ভয়ে পাশ থেকে বালিশ নিয়ে তা দিয়ে নিজেকে আড়াল করার মিথ্যা চেষ্টা করে। নিজেকে আড়াল করে তনু ভাবে, আমারতো আজ বিয়ে হচ্ছিলো। আমিতো এখনো বিয়ের জামা পরা। তাহলে এখানে আসলাম কি করে?? তাহলে কি উনি আমাকে নিয়ে এসেছেন??
তনু এসব ভেবে যেই বালিশটা মুখের কাছ থেকে সরায়, তনু দেখে নেহাল একদম ওর কাছে বসা। তনু ভয়ে লাফিয়ে উঠে। বালিশ দিয়ে আবার মুখ ঢাকতে নিলে নেহাল বালিশটা নিয়ে অন্যদিকে ছুড়ে ফেলে দেয় জোরে। তনু অনেক ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে হাত-পা কাঁপছে তনুর।
হঠাৎ করেই নেহালের যেন কি হয় যায়। রাগে আর কষ্টে নেহাল নিজের বিবেককে হারিয়ে ফেলে। নেহাল তনুর চুলে হাত দিয়ে ওকে রাগী ভাবে বলতে শুরু করে,
নেহালঃ কি ভেবেছিলি?? আমাকে কষ্ট দিয়ে তুই বিয়ে করে শান্তিতে থাকবি?? দেখ তুই এখন কই?? তুই এখন নেহালের কাছে। এত্তো সহজে তোকে ছেড়ে দিবো ভাবলি কি করে?? সবার সামনে আমাকে অপমান করে আমার ভালোবাসাকে তুচ্ছ করে এখানে বিয়ে করতে চলে এসেছিস না?? রিভেঞ্জ…. আমাকে এত্তো কষ্ট দেওয়ার রিভেঞ্জ আজ থেকে শুরু হবে। দুনিয়ার কেউ তোকে এখানে খুঁজতে আসবে না। তনু তুই শেষ। রাগী কণ্ঠে।
তনুঃ উহহহহ আমার লাগছে। ছাড়ুন। প্লিজ ছাড়ুন। কাঁদো কণ্ঠে।
নেহালঃ আমার মনে যে কষ্ট দিয়েছিস তার কাছে এটা কিচ্ছুনা। সামনে আরো কষ্ট দিবো তোকে। কড়া গলায়।
নেহাল তনুর চুল ধরে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দেয়। তনু তাল সামলাতে না পেরে বিছানায় শুয়ে পরে। নেহাল আবার সেই অবস্থায় তনুর উপর ভর দিয়ে ওর হাত দুটো চেপে ধরে ওকে বলে,
নেহালঃ অতীতের রিভেঞ্জগুলোতে ভালোবাসা ছিলো কিন্তু এবার থাকবে শুধু তোর জন্য ঘৃনা। খুব রাগী ভাবে।
আসলে নেহালের রাগ খুব মারাত্মক। যখন রাগ উঠে তখন নিজের প্রতি নেহালের কোনো কন্ট্রোল থাকে না। বিবেক কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
কথাটা বলেই ওকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায় নেহাল। যাওয়া সময় গেইটটা বাইরে থেকে লাগিয়ে দিয়ে যায়।
তনুর হাতটা লাল হয়ে গিয়েছে। চোখদুটো থেকে অঝোরে অশ্রু ঝরছে। খুব ভয় করছে এখানে তনুর। তনু শুয়ে শুয়ে শুধু কাঁদছে। কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। ও যে কোথায় আছে তাও জানে না। তনুর মনে শুধু এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরছে ও এখানে আসলো কিভাবে??
>>>>>ফ্ল্যাশব্যাক<<<<< দুপুর ১২ টা, নেহালঃ চাচা আমি যাচ্ছি দোয়া কইরেন। রামু কাকাঃ বাবা কাজডা কি ঠিক হইবো?? চিন্তিত কণ্ঠে। নেহালঃ চাচা ও আমাকে অনেক কষ্ট দিছে। আমি ওকে এভাবে অন্যকারো হতে তুলে দিতে পারবো না। আপনিতো সব জানলেনই। রামু কাকাঃ আচ্ছা যাও বাবা। কিচ্ছু হইবো না। মুই দোয়া হরমু নে। নেহাল ওদের বাগানবাড়িতে রাখা প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে তনুদের বাসায় চলে গেলো। বরিশালে তনুদের বাসার এড্রেস নেহাল বের করেছে ভার্সিটির এক লোক দিয়ে। সেখানে তনুর বরিশালের এড্রেস দেওয়া আছে। তা নিয়েই নেহাল যাচ্ছে তনুর বাসায়। তনুর বাসায় আসতেই নেহাল দেখে পুরো বাড়ি বিয়ে বাড়ির মতো সাজানো। নেহালের বুকটা ধুক করে উঠে। নেহাল গাড়িটা সাইট করে রেখে চুপিচুপি তনুর বাড়িতে ঢুকে পরে। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে নেহাল তনুর রুমে চলে যায়। তনুরা নিচতলায় থাকায় নেহাল তনুকে অর্ধ বেহুশ করে ওকে একটা বোরখা পরিয়ে মুখ ঢেকে পিছন দিক থেকে নিয়ে আসে। আসলে গ্রামের দিকে বাড়ির গেইট সবসময় দুটো থেকে। একটা পিছনে আর একটা সামনে। সবাই সামনে বরকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় নেহাল পিছন দিক থেকে তনুকে বের করে গাড়িতে করে নিয়ে আসে। অবশ্য এক দুবার ধরা খেতে নিয়েছিলো কিন্তু বেঁচে গিয়েছে। রাস্তার লোকেরাও তনু বোরখা পরা থাকায় কিছু বুঝতে পারেনি। এরপর নেহাল গাড়ি নিয়ে একটানে ওদের বাগানবাড়িতে চলে আসে। এখন, অনেকটা সময় পর নেহাল দরজা খুলে ভিতরে আসে। তনু এখনো কাঁদছে। নেহালঃ এই জামাটা পরে নে। আমি একটু পর এসে যেন এটা পরা দেখি। তনুঃ আমি পরবো না কিছু। আমি বাসায় যাবো। কাঁদতে কাঁদতে। নেহালের মাথায় আবার রাগটা উঠে যায়। নেহাল আবার তনুর উপরে চলে যায়। ওকে ঝাপটে ধরে রাগে। আর বলে, নেহালঃ কি বললি তুই বাসায় যাবি?? বিয়া করবি ওই পোলারে?? আমারে তুই ভালোবাসোস না?? তাই আমারে দেখতে পারোস না?? তোরে আমি যে কি করমু। রাগী ভাবে। তনু নেহালের অগ্নিচক্ষুর দিকে তাকিয়ে আছে। নেহাল অনেক রেগে আছে। তনুর চোখ থেকে পানি ঝরছে আর মিষ্টি ঠোঁটটা ভয়ে সমানে কাঁপছে। নেহালের নজর যায় সেই কাঁপা ঠোঁটের দিকে। নেহাল কিছু না ভেবেই সেই কাঁপা মিষ্টি ঠোঁটে ওর ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। ঘটনার আকশ্মিকতায় তনু একদম হতবাক হয়ে যায়। এদিকে নেহাল পরম আনন্দে আসলে রাগেই তনু এই মিষ্টি ঠোঁটের স্বাদ উপভোগ করছে। তনু চেয়েও কিছু করতে পারছে না। কারণ নেহাল আগেই ওকে জড়িয়ে ধরে আছে। তনুর চোখ থেকে শুধু অশ্রু ঝরছে। জীবনে প্রথম কোনো পুরুষ ওর এই মিষ্টি ঠোঁট স্পর্শ করেছে। তাও আবার নেহাল। নেহাল এখনো পাগলের মতো তনুর ঠোঁটের স্বাদ নিয়েই যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কামড়ে খাচ্ছে। নেহালের কোনো হুশই নেই যে ও কি করছে। হয়তো নেহাল এভাবেই ওর রাগ কমাচ্ছে। তনুর কোনো সাড়া না পাওয়ায় নেহাল চোখ খুলে তনুর দিকে তাকায়। নেহাল দেখে তনু ওর দিকে তাকিয়ে মলিন চোখে নিঃশব্দে কাঁদছে। নেহালের ঘোর কেঁটে যায়। নেহাল থেমে যায়। তনুর ঠোঁটটা ছেড়ে দেয়। ফুলে লাল হয়ে গিয়েছে। রক্ত জমে গেছে ঠোঁটে। নেহালের খুব খারাপ লাগছে। তনু এখনো নেহালের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে। নেহাল সে অবস্থায় তনুকে বলে, নেহালঃ জামাটা পরে নিয়ো। যদি এসে দেখি পরো নি। তাহলে আমি নিজে পরিয়ে দিবো। রাগী ভাবে। নেহাল তনুর উপর থেকে উঠে যায়। একবার ওর দিকে তাকিয়ে চলে যায়। তনু নিথর হয়ে শুয়ে আছে। কাঁপা হাত দিয়ে ঠোঁটটা স্পর্শ করে। ব্যাথা অনুভব করছে। তবে বেশি না অল্প। তনুর চোখ দিয়ে এখনো অশ্রু ঝরছে। তনু উঠে বসে। বসে আশেপাশে ভালো করে তাকায়। একটা ড্রেসিং টেবিল দেখতে পায় তনু। উঠে সেখানে গিয়ে দাঁড়ায়। তনু নিজেকে ভালো করে দেখে। বউয়ের সাজে খুব সুন্দর লাগছে তনুকে। একদম পিচ্চি বউ লাগছে তনুকে। তনুর চোখদুটো আটকে যায় ওর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে। লাল আর ফুলে আছে। নেহাল একটুও কমতি রাখেনি তনুর এই ঠোঁটের মিষ্টি স্বাদ নিতে। এমন ভাবে স্বাদ নিয়েছে যে ফুলে লাল হয়ে আছে। তনু একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে হতাশ হয়ে জামাটা নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। কিছুক্ষন পর ফ্রেশ হয়ে তনু বাইরে বেরিয়ে আসে। একটা কালো কামিজ এনে দিয়েছে নেহাল তনুকে। সেটাই পরেছে তনু। তনু বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে নেহাল গম্ভীর ভাবে বসে আছে। হাতে যেন কি। তনু আস্তে আস্তে করে ভয়ে ভয়ে হেঁটে ওর বিয়ের জামাটা বিছানার একপাশে রাখে। রাখা মাত্রই হঠাৎ নেহাল বসা থেকে উঠে তনুর সামনে এসে ডান হাত তুলে তনুকে মারতে নেয়। তনু আকশ্মিকভাবে ভয় পেয়ে চিৎকার করে বিছানায় বসে পরে চোখ বন্ধ করে মুখে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে দেয়। তনু ভয়ে কাঁপছে। কিন্তু ও গায়ে কোনো কারো স্পর্শ পাচ্ছে না। তাই আস্তে আস্তে মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে নেহালের দিকে তাকায়। তনু দেখে, নেহাল ওর সামনে বসে আছে আর ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সে চাহনিটা অন্যরকম। তনু বুঝতে পারছে না। নেহাল তনুকে ইশারা করে হাত সরাতে বলে। তনু ভয়ে হাত সরিয়ে ফেলে। তনু নেহালের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে। নেহাল পিছন থেকে এবার হাতটা বের করে তনুর ঠোঁটের উপর রাখে। তনুর ঠোঁটে তনু ঠান্ডা কিছু অনুভব করে। তনু তাকিয়ে দেখে নেহাল ওর ঠোঁটে বরফ লাগিয়ে দিচ্ছে। তনু মলিন চোখে তাকিয়ে আছে নেহালের দিকে। নেহাল তনুর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে আর বরফ লাগিয়ে দিচ্ছে। তনুর মাথায় একটু খটকা লাগে। ও যখন নেহালের হাতে বরফ দেখেছিলো তখন ও নেহালের হাতটা কেমন জানি দেখেছিলো। তাই তনু ঠাস করে ওর এক হাত দিয়ে নেহালের ডান হাতটা ধরে দেখতে থাকে। হাতটায় রক্ত জমে আছে। কিছু জায়গা কেঁটে গিয়েছে, ছাল উঠে গিয়েছে। তনু নেহালের অন্য হাতটাও টান দিয়ে দেখে। না বাম হাত ঠিক আছে তারমানে নেহাল ইচ্ছা করে নিজেকে অাঘাত করেছে। কিন্তু কেন?? তনু ভাবছে। নেহাল তনুর হাত ছাড়িয়ে আবার তনুর ঠোঁটে বরফ লাগিয়ে দিচ্ছে। তনু ওর উত্তরটা পেয়ে গেছে। ওর ঠোঁটে নেহাল ব্যাথা দেওয়ায় নিজেকে ব্যাথা দিয়েছে নেহাল। তনুর খুব কষ্ট হচ্ছে। তনু নেহালের দিকে কাঁদো কাঁদো ভাবে তাকিয়ে আছে। তনু নেহালের হাত থেকে বরফটা নিয়ে নেহালের হাতে লাগাতে নিলে নেহাল হাত সরিয়ে নেয়। আর বলে, নেহালঃ লাগবে না তোর দরদ আমার। যে কষ্ট এখানে দিয়েছিস(বুকের বাম পাশ দেখিয়ে) তা কিভাবে ঠিক করবি?? নিচে খেতে চলে আছিস। না আসলে আমিও আর খেতে বলবো না। না খেয়ে এখানেই পরে থাকিস। বলেই নেহাল চলে যায় রেগেমেগে। তনু বসে বসে কাঁদছে আর ভাবছে, তনুঃ আমাকে কষ্ট দিতে পারে না। আবার দিলে নিজেকেও আঘাত করে। ভালোবাসে না আবার আমার খারাপও চায় না। এ কেমন রিভেঞ্জ?? উনি একটাবারও আমার কাছে জানতে চাইলেন না কেন আমি সেদিন না বলেছি?? একটাবারও জিজ্ঞেস করলো না। উল্টো আমাকে শাস্তি দিচ্ছে। আবার নিজেকেও দিচ্ছে। যাবোই না খেতে। না খেয়ে নিজেকে শেষ করে দিবো। তনু উঠে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে। তনু অনেক ক্লান্ত থাকায় শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পরে। আর এদিকে নেহালের রাগ আরো বেরেই চলছে। রামু কাকা তনুকে ডাকতে নিলে নেহাল রাগে না করে দেয়। নেহালঃ চাচা আমি দেখতে চাই ও কতক্ষণ না খেয়ে থাকতে পারে। রামু কাকাঃ বাবা মাফ... নেহালঃ চাচা না। আপনি আপনার কাজে যান। ওর প্রতি কোনো মায়া নাই আমার। দেখি কতক্ষণ না খেয়ে থাকে। রাগী ভাবে। রাত ৮ টা, তনুর ঘুমটা ক্ষুধা লাগায় ভেঙে যায়। চোখ খুলে তাকিয়ে উঠে বসে। প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে তনুর। সেই সকালে খেয়ে ছিলো আর এখন পর্যন্ত না খাওয়া। তনু আর পারছেনা। তাই উঠে দরজা দিয়ে বাইরে যেতেই নেহালকে এদিকে আসতে দেখে। তনু তাড়াতাড়ি আবার ঘুমের ভান ধরে শুয়ে পরে। নেহালের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে এখন। সেই কখন থেকে না খেয়ে আছে তনু। ওর কিছুই ভালো লাগছে না। না খেয়ে থাকতে বলছি তাই না খেয়ে থাকবে। আজকে ওর খবর আছে। নেহাল তনুর কাছে এগিয়ে যাচ্ছে। এদিকে তনুর মাথায় নেহালকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য একটা দুষ্ট বুদ্ধি চালে। নেহালঃ তনু....এই তনু...উঠ... তোরে কি ঘুমানোর জন্য আনছি নাকি। উঠ বলতাছি...নাইলে কিন্তু খবর আছে আজকে। তনুউউউউ.... নেহালের অনেক ডাকাডাকির পরও তনু উঠছে না।নেহালের এখন ভয় হচ্ছে। নেহালঃ তনু???এই তনু??কি হয়েছে উঠো??উঠো না কেনো?? তনুঃ উঠবো না আজকে দেখি বেটা আজকে তুই আমাকে কি করিস। আমার সুন্দর ঠোঁটটা একদম লাল করেছিস। এটা তোর শাস্তি। দেখি কতটুকু ভালোবাসিস আমাকে। মনে মনে বলল। নেহালঃ তনুউউউ....এই তনুউউউ কি হলো উঠো...কথা বলো.... কি হয়েছে....আল্লাহ আমার তনু...তনুউউউ... অস্থির হয়ে কেঁদে দেয়। নেহাল তনুকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। আর কাঁদতে কাঁদতে তনুকে ডাকতে থাকে। নেহালের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে তনুর উঠছে না দেখে। নেহালের এই অবস্থা দেখে তনু বেশ অবাক হয়ে যায়। তনু বুঝতে পারছে নেহাল ওকে কতটা ভালোবাসে। নেহালের ঘন শ্বাস বারবার তনুর কাধে পরায় কুতুকুতু লাগায় তনু হঠাৎ করে হেসে দেয়। নেহাল সেই হাসি শুনে তনুর দিকে তাকায়। নেহাল দেখে তনু হাসছে। নেহাল বুঝে যায় তনু এতোক্ষন ইচ্ছা করে এমন করছিলো। নেহাল যে কতটা ভয় পেয়েছে তা শুধু ও জানে। কিন্তু তনুর এরকম করাটায় নেহালের রাগ আরো অনেক বেরে যায়। নেহাল রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না। তনুর কোনো ক্ষতি করে ফেলবে সেই ভয়ে নেহাল উঠে জানালার কাছে চলে যায় তনুকে বিছানায় ফেলে। জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে নেহাল রাগ শান্ত করার চেষ্টা করছে। হঠাৎই তনু নেহালের সামনে এসে ওকে অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আর বলে, তনুঃ সরি আমাকে মাফ করে দেন। আসলে আমি বুঝিনি আপনি এতোটা ভয় পাবেন। সরি। অনুনয়ের স্বরে বাচ্চাদের মতো করে। নেহালঃ তনু সরে যাও। রাগী কণ্ঠে। তনুঃ না আপনাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না। সরিইই। নেহালঃ আমাকে ছাড় তনু। সরে যা। রাগী ভাবে। তনুঃ না আমি যাবো না। নেহালঃ সর এখান থেকে। চিৎকার করে। নেহাল তনুকে খাটের উপর জোরে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। তনু ভয়ে কেঁদে দেয়। একটু ব্যাথাও পেয়েছে হাতে। নেহালঃ খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি চুপচাপ খাবি। নাহলে আজ তোকে মেরে ফেলবো। অগ্নিচক্ষু নিয়ে তনুর দিকে তাকিয়ে নেহাল বলল। তনু নেহালের এমন আচরণে ভয়ে কান্না করছে। নেহাল নিচে চলে যায়। নিচে, নেহালঃ চাচা, খাবারটা উপরে দিয়ে আসেন। আর ও যেন খায় আমি বাইরে গেলাম। এসে যেন শুনি না ও না খেয়ে আছে। গম্ভীর কণ্ঠে। রামু কাকাঃ আচ্ছা বাবা। মুই এহনি যাইতাছি খাবার লইয়া। নেহাল বাইরে চলে যায়। রামু কাকা খাবার নিয়ে তনুর কাছে যায়। রামু কাকা দেখে তনু সমানে কাঁদছে। রামু কাকাঃ ও মাইয়া তুমি এমনে কান্তাছো ক্যা?? নেহাল বাবা মারছে?? তনু হঠাৎ কারো ডাকে চমকে উঠে আর কাঁদতে কাঁদতে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। রামু কাকাঃ তুমি না খাইয়া আছো দেইখাইতো তোমারে মারছে। এহন তাড়াতাড়ি এই খাবারডা খাও৷ নাইলে পরে আবার মারবো। খাও তাড়াতাড়ি। তনুঃ আমি খাবো না। আমাকে মারছে ওই শয়তান হনুমানটা। কাঁদতে কাঁদতে। বাচ্চাদের মতো করে। রামু কাকাঃ নেহাল বাবায় ঠিকই কইছে তুমি আসলেই এক্কাখান বাচ্চা মাইয়া। খালি গায়েগতরে বড় হইছো। তুমি হেরে এমনে কষ্ট দিলা ক্যা মাইয়া?? হে কি কষ্ট পাইছে জানো?? তোমারে কত্তো ভালোবাসে। হেই পোলাডারে হালাইয়া তুমি চইলা গেলাগা মাইয়া?? তনুর কান্না এবার থেমে যায়। মুখটা মলিন হয়ে যায়। হতাশ হয়ে একদিকে তাকিয়ে আছে তনু। রামু কাকাঃ কি হইলো মাইয়া??এমন কইরা আছো ক্যা?? এহন সুন্দর কইরা খাওনডা খাও নাইলে তোমারেও যেমনে মারবে লগে আমারেও হেমনে মারবে। তুমি কি চাও আমি মাইর খাই?? তনু মাথা নাড়িয়ে না বলে। রামু কাকাঃ তাইলে সুন্দর কইরা খাও। হেরপর তুমি আমারে কবা কির লইগা এমন করছো। তনুঃ আচ্ছা। তনুর প্রচন্ড ক্ষুধা লাগায় খাবার গুলো সব খেয়ে ফেলে। এখন লজ্জাও পাচ্ছে কাকার সামনে। রামু কাকাঃ আরে লজ্জা পাইয়ো না। খিদা আছিলো পেডে খাইছো। শেষ। এহন বও আমি এডি থুইয়া আই। কিছুক্ষন পর, রামু কাকাঃ মাইয়া এহন কও কেন এমন করলা আমার নেহাল বাবার লগে। তনুঃ বলবো আঙ্কেল। কিন্তু আপনি ওয়াদা করেন উনাকে কিছু বলবেন না। রামু কাকাঃ ক্যা?? হেরে কইলে সমস্যা কি?? তনুঃ না আঙ্কেল সমস্যা আছে। আপনি বলবেন না। আমি সময় হলে বলবো। রামু কাকাঃ আচ্ছা মুই কমু না। তুমি এহন কও। এরপর তনু রামু কাকাকে সব খুলে বলল। রামু কাকাঃ মাইয়া কও কি!! আমারে মাফ কইরা দেও মা। আমি তোমারে খারাপ মনে করছি। তুমিতো অনেক অসহায় মা। আমারে মাফ কইরা দেও। তনুঃ আরে আঙ্কেল কি করছেন। আপনি আমার বাবার মতো। প্লিজ মাফ চাবেন না। খারাপ লাগে। রামু কাকাঃ মা, নেহাল বাবাতো তোমার উপর অনেক রাগ। তারে এইয়া সব কইয়া দিলিয়েইতো হে আর তোমার লগে রাগারাগি করবে না। কি জানি হ মনে পরছে। হে আর রিভেঞ্জ নেবে না। তনুঃ না আঙ্কেল। এখন না। আমিও দেখি সে কি কি রিভেঞ্জ আমার উপর নেয়। রামু কাকাঃ মা মুই আর কি কমু। তয় নেহাল বাবা তোমার উপর অনেক ক্ষেইপা আছে। তনুঃ থাকুক দেখি আমার ভালোবাসাটা কতটা সত্যি। এরপর রামু কাকা তনুর সাথে কিছুক্ষন কথা বলে নিচে চলে যায়। তনু একা চুপটি করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। বারান্দায় জেতে ভয় করছে। তনুর খুব খারাপ লাগছে বাবা-মার জন্য। কিন্তু আজ এত্তো কিছু হচ্ছে শুধু তাদেরই জন্য। হঠাৎই নেহাল রুমে ঢুকে। তনু ঘুরে নেহালের দিকে তাকায়। নেহাল ভিতরে ঢুকে দেখে তনু জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। নেহালও তনুর দিকে তাকিয়ে আছে। তনু হঠাৎই কেঁদে দেয় নেহালের দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায়। নেহাল একদম বোকা হয়ে যায় তনুর কান্না দেখে। নেহালঃ এই তুই কাঁদছিস কেনো?? আশ্চর্য হয়ে। তনুঃ এত্তো বড় বাসাটায় সেই কখন থেকে একা বসে আছি। আমার কত্তো ভয় করছিলো জানেন?? কাঁদো কণ্ঠে। নেহালঃ এটাই তোর শাস্তি। আমাকে একা করার সময় মনে ছিলো না?? এখন দেখ একা থাকাটা কত কষ্টের। তনুঃ আমাকে কষ্ট দিতে আপনার কষ্ট হয়না?? ভালো লাগছে আপনার আমাকে কষ্ট দিতে?? কাঁদো কণ্ঠে। নেহালঃ তনু এসব ফালতু কথা বলে আমাকে দূর্বল করতে পারবি না। তুই আমাকে সবার সামনে সেদিন অনেক বড় একটা ধোকা দিয়েছিস। যদি আমাকে ভালো নাই বাসতি তাহলে কেন আমার কথা মতো ঘুরতে যেতি?? রাগী ভাবে। তনুঃ আপনার কি মনে হয় আমি আপনাকে ভালোবাসি না?? দুঃখী ভাবে। নেহালঃ না বাসিস না। যদি বাসতি তাহলে সেদিন এভাবে কষ্ট দিয়ে চলে যেতি না। কড়া গলায়। তনুঃ সত্যিই কি আপনার তাই মনে হই?? আচ্ছা আপনার কি জানতে..... নেহালঃ আমি আর একটা কথাও শুনতে চাইনা। চুপচাপ ঘুমিয়ে পর। তনুঃ কোথায়?? নেহালঃ এই রুমে একা। আর ভাবিস না পালিয়ে যাবি। মেইন গেইট তালা মেরে দিয়েছি। এই যে চাবি। পালানোর কোনো রাস্তা নেই। তনুঃ আমি একা ঘুমাতে পারবো না। আমি আপনার সাথে ঘুমাবো। আমার অনেক ভয় করে। বাচ্চাদের মতো। নেহালঃ এহহহহ শখ কতো। এখানে চুপচাপ ঘুমিয়ে পর নাহলে কিন্তু দুপুরের কথা মনে আছে। রাগী ভাবে। বলেই নেহাল চলে গেলো ওর রুমে। ওর রুমটা তনুর রুম থেকে দুটো রুম পরে। নেহাল ওর রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পরে। চাবিটা মাথার কাছে রেখে দেয়। নেহাল জানে তনু কোনোদিনও পালাবেনা। তাও ও রিস্ক নিতে চায়না। তাই এই ব্যবস্থা। কিন্তু নেহালের খুব খারাপ লাগছে। এভাবে ওকে ভয়ে রাখাটা ঠিক হচ্ছে কি?? কিন্তু পরক্ষণেই আবার সেদিনের কথা মনে পরছে। কিভাবে সবার সামনে ওকে একা ফেলে চলে গেলো। নেহালকে সবাই ভয় পায় দেখে কেউ ওর সামনে ওকে নিয়ে হাসে নি। কি অপমানটাই না হয়েছিলো নেহাল সেদিন। এসব চিন্তা করতেই নেহালের রক্ত গরম হয়ে ওঠে। তাই আর এসব না ভেবে ঘুমিয়ে পরে। আর অন্য দিকে তনু ভিষণ ভয়ে একা রুমে কান্না করছে। পরদিন সকালে, সকালের ঝলমলে রোদ এসে নেহালের মুখে পরে। নেহাল আস্তে আস্তে ওর চোখদ্বয় খুলে তাকায়। কিন্তু হঠাৎই... চলবে... -কোনো ভুল হলে জানাবেন। - গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে এর কোনো মিল নেই। গল্পটি শুধু উপভোগের স্বার্থে পড়ুন। ধন্যবাদ সবাইকে। কেমন লেগেছে আজকের পর্বটি জানিয়েন কিন্তু। আর আমার প্রিয় পাঠকদের বেশি বেশি সাড়া চাই।