রিভেঞ্জ পর্বঃ ০৮
– আবির খান
এরপর নেহাল ওর বাইক নিয়ে ওদের বাগানবাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়। নেহাল আজ ঢাকা ছেড়ে আর সাথে সব খারাপ স্মৃতিগুলো ছেড়ে চলে যাচ্ছে ওদের বাগানবাড়িতে। হয়তো সেখানেই ওর একটু শান্তি মিলবে।
নেহাল সকাল ১১ টায় বাসা থেকে রওনা দিয়েছিলো। ওদের বাগানবাড়ি এসে পৌঁছালো সন্ধ্যা ৬ টায়। মাঝখানে একটু বিশ্রাম নিয়েছিলো। অনেকটা পথ বাইক চালিয়ে এসেছে। সেই ঢাকা থেকে বরিশাল। আসলে নেহালদের বাগানবাড়িটা বরিশালে। খুব সুন্দর করে বানিয়েছেন নেহালের বাবা। অনেক দামি দামি আসবাবপত্রে সাজানো বাড়িটি। আর সাথে প্রকৃতির ছোয়া। নেহাল বাগানবাড়িতে ঢুকতেই একজন বয়ষ্ক লোক নেহালের দিকে এগিয়ে আসলো।
রামু কাকাঃ নেহাল বাবা আমনে আইছেন। কোনো সমস্যা হয়নাই তো??
নেহালঃ না চাচা কোনো সমস্যা হয়নি।
রামু কাকাঃ দেন আমারে ব্যাগটা দেন। আমি হেই কবে হইতে বইয়া আছি আমনের লইগা।
নেহালঃ চাচা বইলেন না আর। ফেরি পাড় হতেই যা দেরিটা হলো।
রামু কাকাঃ ও আচ্ছা। মুই আজকে বহুত খুশি। এই বাড়িডা হারাদিন খালি পইরা থাহে। কেউ আয় না। আমনে আইছেন মোর খুব ভালো লাগতাছে।
নেহালঃ আচ্ছা আচ্ছা চলেন এখন ভিতরে যাই।
রামু কাকাঃ হ আহেন আমার লগে।
নেহাল রামু কাকাকে নিয়ে ওদের বাসার ভিতরে যায়। বিশাল বড় বাসাটা খুব সুন্দর করে গুছানো। নেহালের এখানে আসলেই খুব ভালো লাগে।
রামু কাকাঃ বাবা আমনের রুমডা উপরে। আহেন আমার লগে।
রামু কাকা নেহালকে ওর রুমে পৌঁছে দিয়ে এই বলে চলে যায়,
রামু কাকাঃ বাবা মুই নিছে খাওন দেতাছি তুমি আইয়া পইরো।
নেহালঃ আচ্ছা চাচা আমি আসছি আপনি যান।
রামু কাকাঃ আচ্ছা বাবা।
রামু কাকা চলে গেলে নেহাল বিছানায় গা’টা এলিয়ে দেয়। মাথার উপর ঘুরন্ত ফ্যানটার দিকে নেহাল তাকিয়ে আছে আর ভাবছে,
নেহালঃ কেন তনু কেন?? কেন এমন করলে?? কি দোষ ছিলো আমার?? এখন তোমার কি হবে তনু?? রিভেঞ্জটা কি তুমি নিতে পারবে?? এই নেহাল যে কতটা খারাপ তা কি তুমি জানো তনু?? আমাকে কষ্ট দিয়ে তুমি শান্তিতে থাকবে?? এটা কি করে ভাবলে?? তনু…তনু…হায়রে তনু রেডি হয়ে যাও নেহালের রিভেঞ্জের জন্য। যতটা কষ্ট আমি পেয়েছি তার থেকে দিগুণ কষ্ট তুমি পাবে এখন।
নেহাল এসব ভাবতে ভাবতে উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে নিচে খেতে চলে যায়।
রামু কাকাঃ আইছো বাবা। বও এইহানে। মোর মাইয়া সকিনা রানছে। খুব টেস্ট।
নেহালঃ হাহাহা।
নেহাল রামু কাকার কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ।
রামু কাকাঃ ওকি বাবা তুমি এমনে হাসতাছ ক্যা??
নেহালঃ কিছু না চাচা কিছু না। আপনে একটা চিচ বুঝলেন। মনটা ভালো করে দিলেন।
রামু কাকাঃ হ বাবা, তোমার লইগাই আজকে তিন বেলা মুই আর মোর মাইয়া ভাত খাই। রাস্তা পইরা আছিলাম। তুমি কইয়া এই পুরা বাড়িডার দায়িত্ব মোরে দিলা। বাবা মন থেইকা সবসময় তোমার লইগা মুই দোয়া করি। তোমার সব বিপদ আপদ আল্লাহ দূর কইরা দেউক।
নেহালঃ আমিন। চাচা আপনার সাথে আমার একটা জরুরি কথা আছে। খাওয়াটা শেষ করে বলছি।
রামু কাকাঃ আচ্ছা।
নেহালঃ চাচা আপনিও খান আমার সাথে।
রামু কাকাঃ না বাবা মুই পরে খামু নে। এহন তুমি খাও মুই দেহি।
নেহালঃ চাচা আপনিও না।
নেহাল খাওয়া দাওয়া শেষ করে রামু কাকাকে নিয়ে ড্রইংরুমে বসে। আর রামু কাকাকে সবটা বুঝিয়ে বলে।
রামু কাকাঃ বাবা এইডা তুমি কি কও?? যদি ধরা খাও বাবা তোমারে কেউ বাঁচাইতে পারবো না। বাবা মোর অনেক ডর হরতাছে তোমার কতা হুইনা।
নেহালঃ আরে কেউ এখানে আসবে না। আপনি শুধু বাবাকে বলবেন না এই।
রামু কাকাঃ বাবা ডরডাতো হেরে লইয়াই। হে যদি একবার এই কতা জানে তোমারেতো মারবেই লগে মোরেও মারবে। চিন্তিত কণ্ঠে।
নেহালঃ আরে বাবাকে আমি ম্যানেজ করবো নে যদি ধরা খাই। চাচা প্লিজ আপনি না আমাকে অনেক ভালোবাসেন। আপনি প্লিজ আমার সাথে থাকবেন।
রামু কাকাঃ আচ্ছা বাবা আছি মুই তোমার লগে। কিন্তু হেরে আনবানে কেমনে??
নেহালঃ ওয়া মুই চিন্তা কইরা রাকছি। হাহা। মজা করে।
রামু কাকাঃ ওমা তুমিও দেহি বরিশাইল্লা ভাষায় কতা কও। অবাক হয়ে।
নেহালঃ আপনার কাছ থেকে শুনতে শুনতে একটু বললাম।
রামু কাকাঃ ও। বোজ্জো বাবা, হে আসলেই কাজডা ভালো হরে নাই।
নেহালঃ হুম চাচা। আমি শুধু অপেক্ষায় আছি রিভেঞ্জের।
রামু কাকাঃ রিভেঞ্জ!!! হেডা আবার কি??
নেহালঃ প্রতিশোধ চাচা প্রতিশোধ। গম্ভীর কণ্ঠে।
রামু কাকাঃ আচ্ছা হইছে বাবা হেয়া দেহা যাইবে নে। তুমি এহন যাইয়া এক্কারে একখান ঘুম দেও দেহি। মুই এইয়া গুছাইয়া মাইয়াডারে লইয়া খাইয়া ঘুম দিমু। কালকে যে কি হইবে নে মোর আল্লাহ মাবুত জানে। আল্লাহ তুমি মোরে বাঁচাইও।
নেহালঃ আরে চাচা এত্তো ভয় পেয়েন নাহ। কিচ্ছু হবে না। এখন থেকে হবে খালি রিভেঞ্জ।
নেহাল উপরে ঘুমাতে চলে যায়। সারাদিন বাইক চালিয়ে নেহাল আজ অনেক ক্লান্ত। বিছানায় পরার সাথে সাথেই নেহাল ঘুমিয়ে পরে।
পরদিন সকাল ৭ টায়,
নেহালের ফোনটা সমানে বেজেই চলছে। নেহালের ঘুমটা ভেঙে যায়। বিরক্ত নিয়ে ফোনটা ধরে নেহাল।
সালমানঃ হ্যালো নেহাল কই তুই?? চিন্তিত কণ্ঠে।
নেহালঃ আছি কেন কি হইছে?? শান্ত গলায়।
সালমানঃ ভাই আজকে তনুর বিয়ে। তুই খালি বল বিয়েটা ভেঙে দিয়ে আসি। কিছু একটা কর ভাই?? অসহায় ভাবে।
নেহালঃ তনু নামে কাউকে আমি চিনি না। ওর কথা আর আমাকে বলবি না। ও আমার কাছে আর কেউ না। ও আমার না। করুক বিয়ে। আমার কিছুই যায় আসে না। কড়া গলায়।
সালমানঃ দোস্ত ওর বিয়ে দুপুর ১.৩০ এ নাকি। দোস্ত তনুকে কতটা তুই ভালোবাসিস আমি জানি। চল দোস্ত এখনি বের হই। বরিশাল গিয়ে তনুকে নিয়ে আসি।
নেহালঃ না। তনুকে আমি চিনিনা। ও আমাকে যে কষ্ট দিসে। আমি তা ভুলবো না। করুক ও বিয়ে। রাগী ভাবে।
সালমানঃ কি থেকে কি হয়ে গেলো ভাইরে। মাফ করে দিস। পারলাম না তনুকে তোর করতে। অসহায় ভাবে।
নেহালঃ বাদ দে এসব। আমি কদিন একা থাকতে চাই বুঝলি। নিজেকে শান্ত করে তোদের কাছে ফিরে আসবো। আমি ঢাকায়ই আছি। তোরা টেনশন করিস না।
সালমানঃ আচ্ছা। ভালো থাকিস ভাই। তোকে নিয়া খুব টেনশন হয় আমার। তোর যে কত্তো রাগ আমি জানি। শান্ত থাক।
নেহালঃ আচ্ছা রাখি দোস্ত ঘুমাবো।
সালমানঃ আচ্ছা।
সালমান ফোন রেখে দিলে নেহাল হাসিতে ভেঙে পরে। কিভাবে অভিনয় করে বোকা বানালো ওকে বুঝলোই না। হাহা বন্ধু পিকচার আবিভি বাকি হ্যায়। রিভেঞ্জ।
এরপর নেহাল আবার ঘুমিয়ে পরে।
দুপুর ২.৫০ মিনিট,
নেহালের ফোনটা আবার বেজে উঠে। নেহাল আস্তে করে ফোনটা রিসিভ করে।
সালমানঃ দোস্ত একটা বড় ঝামেলা হয়ে গেছে?? খুব টেনশন হচ্ছে কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। তোকেও যে কিভাবে বলবো জানি না। উত্তেজিত হয়ে।
নেহাল আপেল খেতে খেতে শান্ত গলায় বলল,
নেহালঃ আরে কি হয়েছে বলতো।
সালমানঃ মানে আসলে…প্রেমা কল দিসিলো। ও বললো..
নেহালঃ হুম কি বলল?? শান্ত গলায়।
সালমানঃ তনুকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দোস্ত কিছুইতো বুঝতে পারছি না। তবে..
নেহালঃ তবে কি??
সালমানঃ তনু একটা চিঠি রেখে গেছে।
নেহালঃ কি লেখা তাতে??
সালমানঃ আমাকে খুঁজার চেষ্টা করো না। আমি ভালো আছি। আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।
নেহালঃ মানে ও এবারও পালাইছে??
সালমানঃ বুঝতাছি না। মেয়েটার যে কি হইছে আল্লাহ জানে। তুই টেনিশন করিস না। ওরা তনুকে খুঁজছে।
নেহালঃ আমি করবো টেনশন!!! তাও ওকে নিয়ে??আমি তনুকে ভুলে গেছি সালমান। ওর যা ইচ্ছা তাই হোক আমার কিচ্ছু যায় আসে না। ও আমাকে অনেক বড় একটা কষ্ট দিছে। শক্ত গলায়।
সালমানঃ বাদ দে দোস্ত। খুব টেনশন হচ্ছে। কই গেলো মেয়েটা আল্লাহ জানে।
নেহালঃ দেখ কোনো পুরনো প্রেমিকের কাছে গেছে কিনা আবার।
সালমানঃ তুইও না। আচ্ছা রাখছি। আমার মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না।
নেহালঃ আচ্ছা রাখ।
ফোনটা কেঁটে দিয়ে নেহাল অট্টো হাসিতে ভেঙে পরে।
নেহালঃ আমাকে সবার সামনে ছোট করে আজ তুমি খুব আরামে বিয়ে করছিলে না তনু?? দিলাম আজ তোমাকে সবার কাছে ছোট করে। বিয়ের আসর থেকে বউ পালিয়েছে। রিভেঞ্জ শুরু আমার পিচ্চু পরীটা। হাহাহা।
অজ্ঞান তনুর দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলল নেহাল।
চলবে….
– কোনো ভুল হলে জানাবেন।
– গল্পের চলমান অবস্থা অনুযায়ী গল্প ছোট বড় হয়ে থাকে।
গল্পের নতুন মোড় কেমন লেগেছে জানিয়েন কিন্তু। আর আমার প্রিয় পাঠকদের বেশি বেশি সাড়া চাই।