রিভেঞ্জ পর্বঃ ০৩
– আবির খান
তনুঃ প্রেমা এসেছিস। দে চা’টা দে। মাথা ঘুরাচ্ছে এত্তো নোটস দেখে। কিহলো দে…
তনু কোনো চা না পেয়ে যেইনা পাশে তাকায় আর ও যাকে ওর পাশে বসা দেখে সে আর কেউ নয় নেহাল। নেহাল ওর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর মিটিমিটি হাসছে। তনু ভয়ে ওর মায়াবী চোখদুটো বন্ধ করে আছে।
আর এদিকে নেহাল ওই প্রথম তনুকে এতোটা কাছ থেকে দেখছে। তনুকে দেখলে একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগে। মনে হয় এখনো স্কুলে পরে। ফর্সা মুখটা দেখতে খুব সুন্দর। মুখের সুন্দর গঠনটা সবার মনকারে। তনুর চোখদুটো যেন ঠিক নীল সাগরের মতো। যার অপরূপ সৌন্দর্যে শুধু হারিয়ে যেতে মনে চায়। তনুর নাক’টা বেশি লম্বাও না আবার বেশি বোচাও না একদম চেহারার সাথে পারফেক্ট। এরপর তনুর ঠোঁটদ্বয়। ঠোঁটদুটো যেন গোলাপের নরম দুটো পাপড়ি। যে পাপড়ির পরশ হয়তো কাউকে অন্যরকম অনুভূতিতে নিয়ে যাবে। সবমিলিয়ে নেহালের কাছে তনু অনেক প্রিয়। তবে তনু যে দুষ্ট তাই ওর সাথে নেহাল দুষ্টমিটাই বেশি করবে। ওকে ওর বন্ধুদের সামনে পশু বানানোর জন্য রিভেঞ্জ নিবে নেহাল।
নেহালঃ চোখটা খুলবেন?? নাকি মাথায় উঠে বসবো?? মজা করে।
তনু সাথে সাথে চোখ খুলে নেহালের দিকে তাকায়। এই প্রথম তনুও নেহালকে এতো ভালো ভাবে দেখছে। ফর্সা মুখটা চাপ দাড়িতে ভরা। চুলগুলো বেশ সিল্কি আর বড়। পিছনে ঝুটি করা। তনু আগে কখনো দেখেনি যে ছেলেদেরও ঠোঁট গোলাপি হয়। এই প্রথম নেহালকে দেখলো যার ঠোঁটদুটো ঠিক ওর মতোই গোলাপি। তবে হাল্কা বেশি নয়। তনু নেহালের দিকে তাকিয়ে আছে।
নেহালঃ হেহ কি ভেবে ছিলে আমাকে বোকা বানিয়ে পালাবে?? দেখেছো ভাগ্যের কি পরিহাস?? সেই ঘুরেফিরে আমার কাছেই আসতে হলো।
তনুঃ গতকালকের জন্য প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন। আসলে আমি বুঝতে পারিনি। অসহায় ভাবে।
নেহালঃ কেনো তুমি কি ছোট্ট বাবু যে কিছু বুঝো না?? হুম?? মজা করে।
তনুঃ দেখুন সরি বলছি। আপনি আমার সাথে এমন করতে পারেন না। বিরক্তি নিয়ে।
নেহালঃ বাবাহ আমি ভয় পেয়ে গিয়েছি। তাহলে বলোতো তোমার সাথে কেমন করতে হবে শুনি।
নেহাল তনুর অনেকটা কাছে এগিয়ে গেলো। নেহাল তনুর নেশা লাগানো ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে। তনুও নেহালকে বুঝার চেষ্টা করছে। নেহালের কেমন জানি লাগছে। খুব ইচ্ছে করছে তনুর ঠোঁটদুটোর স্বাদ নিতে। নেহাল কেমন এক ঘোরের ভিতর চলে যাচ্ছে। নেহাল আস্তে আস্তে তনুর ঠোঁটের দিকে এগোচ্ছে। তনুর চোখ বড় বড় হয়ে যাচ্ছে। কি হতে চলছে ও বুঝতে পারছেনা। কিন্তু হঠাৎই কে যেন জোরে কেশে উঠলো।
– উহম উহম….
নেহাল তাকিয়ে দেখে প্রেমা চা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। নেহাল লজ্জা পেয়ে যায়। তাই তাড়াতাড়ি তনুর চুল থেকে মিথ্যা মিথ্যি কিছু বের করে বলে,
নেহালঃ আরে একটা ময়লা ছিলো সেটা সরাচ্ছিলাম।
প্রেমাঃ ও আচ্ছা ভাইয়া।
নেহাল তনুকে চোখ টিপ দিয়ে বাইরে চলে যায়। আর যাওয়ার আগে আস্তে করে বলে যায় রিভেঞ্জটা বাকি রইলো। তনু নেহালের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রেমাঃ কিরে তোরা কি করতে যাচ্ছিলি বলতো?? মজা করে।
তনুঃ আমি কি জানি। আমিতো চুপচাপ বসে ছিলাম।
তনু মনে মনে ভাবছে, আসলেইতো সে কি আমাকে কিস করতে যাচ্ছিলো?? আর আমিও বা কেমন চুপচাপ বসে ছিলাম। ভাগ্য ভালো প্রেমা এসেছিলো বলে না হলেতো উনি। নাহ কেন যে এখানে ভর্তি হলাম ধুর।
প্রেমাঃ কই হারালি?? নে তোর চা। চা’টা খেয়ে শেষ কর। বাসায় যাবো। অনেক দেরি হয়ে গেলো। আর এখানে থাকলে নেহাল ভাইয়া আবার আসতে পারে। মজা করে।
তনুঃ কিহহহ…. ভয় পেয়ে।
প্রেমাঃ আরে আরে আস্তে খা মজা করছিলাম। গরমতো জিহবা পুড়ে যাবে।
এরপর তনু তাড়াতাড়ি চা খেয়ে সব গুছিয়ে বেরিয়ে পরে বাসার উদ্দেশ্য।
বন্ধুদের সাথে,
নেহালঃ সালমান দোস্ত, তোকে একটা কাজ করে দিতে হবে।
সালমানঃ হ্যাঁ দোস্ত বল।
নেহালঃ দোস্ত তনুর সব ডিটেইলস আমার চাই।
শামিমঃ কেন দোস্ত??
রাফিঃ আরে তুই বুঝবি না। কাহানি আছে।
নিলয়ঃ হুম ডাল মে কুচ কালা হ্যাঁয়।
নেহালঃ কালা না সাদা। হাহাহা।
এরপর সবাই অনেক হাসাহাসি করে।
সালমানঃ দোস্ত রাতের মধ্যেই পেয়ে যাবি সব।
নেহালঃ আচ্ছা দোস্ত। শোন, তাহলে আমি একটু এখন বের হই একটা কাজ আছে।
সবাইঃ আচ্ছা দোস্ত যা।
নেহাল চলে গেলো।
রাতে নেহালের বাসায়। নেহাল খাওয়া দাওয়া শেষ করে বসে আছে সালমানের কলের অপেক্ষায়। হঠাৎই সালমানের কল আসে।
নেহালঃ হ্যাঁ দোস্ত বল।
সালমানঃ কিরে মামা তুই মনে হয় আমার অপেক্ষায় ছিলি।
নেহালঃ হ ভাই। এখন তাড়াতাড়ি বল। কি কি জানতে পারলি।
সালমানঃ সবই জানছি ভাই। কিন্তু…
নেহালঃ কিন্তু কি??
সালমানঃ কিন্তু মুখে কইতে পারমু না। আমি মেসেজ এ পাঠায় দিতাছি।
নেহালঃ আচ্ছা। তাড়াতাড়ি পাঠা।
সালমানঃ আচ্ছা।
বেশ কিছুক্ষন পর সালমানের মেসেজ আসলো। নেহাল মেসেজ খুলে পড়তে শুরু করলো,
” তনুর পুরো নাম হলো তানজিনা বিনতে তনু। তনুরা মধ্যেবিত্ত পরিবারের। ওর বাবা-মা বরিশালে থাকে। আর্থিক অবস্থা অতটা ভালো না। তনুর কোনো ভাইবোন নেই। পড়ার জন্য ঢাকাতে এসেছে প্রেমাদের বাসায়। প্রেমা ওর চাচাতো বোন। দোস্ত তনুর নাকি ঘুরতে অনেক ভালো লাগে। আর এই সব প্রেমা আমাকে বলল। দোস্ত প্রেমার সাথে কিন্তু আমাকে কিছু একটা করে দিতে হবে বুঝলিতো। এইতো দোস্ত আর তেমন কিছু নাই।
নেহাল সালমানকে মেসেজ দিলো,
নেহালঃ প্রেমা শুধু তোরই হবে। তার আগে তনুর নাম্বারটা নে। নিয়া আমাকে পাঠা।
কিছুক্ষন পরই সালমানের মেসেজ এলো,
সালমানঃ নাম্বার দিলাম। কিন্তু আমার কথা যেন মনে থাকে।
নেহালঃ ঠিক আছে ভাই। থ্যাংকস।
নেহাল তনুকে ফোন দেয়। তনু তখন মাত্র শুলো। হঠাৎ তনুর ফোনটা বেজে উঠলো। আননোন নাম্বার হওয়ায় তনু প্রথমে ধরে নি। কিন্তু পর পর যখন অনেক বার বেজে উঠলো তখন তনু আর না ধরে পারলো না।
তনুঃ হ্যালো কে???
নেহালঃ রিভেঞ্জ…
তনু রিভেঞ্জ শুনে আঁতকে উঠে। আর ভয়ে ভয়ে বলে,
তনুঃ হ্যা…হ্যালো কে আপনি?? ভয়ে ভয়ে।
নেহালঃ…..চুপ।
তনুঃ কি হলো বলুন কে আপনি?? হ্যালো??
নেহালঃ…. চুপ।
তনুঃ প্লিজ বলেন কে?? কাঁদো কণ্ঠে।
নেহালঃ আপনার বানর।
তনুঃ নেহাল ভাইয়া….
নেহালঃ এই ভাইয়া কি!!! আমি তোমার ভাইয়া না। আমাকে ভাইয়া বলবাও না আর ভাইয়া ভাববেও না।
তনুঃ কেনো??
নেহালঃ তোমার জানার দরকার নাই। যা বলেছি তাই।
তনুঃ আপনি আমার নাম্বার পেলেন কই??
নেহালঃ সেটাও জানতে হবে না। তা বরিশালের কথা মনে পরে??
তনুঃ কিহহহ??? আমি বরিশালের আপনি কিভাবে জানেন??
নেহালঃ আমি সবার সব কিছু জানি?? হাহা।
তনুঃ আমার ভয় হচ্ছে কিন্তু।
নেহালঃ কাল ছুটির পর আমার বাইকের পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে। কোথাও যাবে না। মনে থাকে যেনো।
তনুঃ কেনো??
নেহালঃ……
কল কেটে গিয়েছে।
পরদিন ভার্সিটিতে,
তনু ক্লাস শেষ করে প্রেমার সাথে ভাসিটি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো হঠাৎই….
চলবে…?
কোনো ভুল হলে জানাবেন।
সবার অনেক বেশি সাড়া চাই। আর কেমন লেগেছে জানিয়েন কিন্তু।