রাত_বিকেলে_প্রেমের_কুঞ্জন পর্ব-০৮

0
613

গল্পের নাম : #রাত_বিকেলে_প্রেমের_কুঞ্জন
লেখিকা: #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্ব : ৮

খাবার টেবিলে নানান আইটেমের খাবার সাজানো। বাড়ির সব পুরুষেরা খেতে বসেছে। মহিলারা এক এক করে খাবার এগিয়ে দিচ্ছে। পাশে সোফায় বসে গল্প করছে মধুমিতা আর ঝুমুর। মুক্তার স্বামী ফরহাদের সাথে একটা ছেলেও আসছে। মধুমিতা তাকে চেনে। ঐযে বইয়ের দোকানে রাফসান নামের ছেলেটা। তবে চিনেও না চেনার ভঙ্গিতে আছে মধুমিতা। বিষয়টা বেশ রাগাচ্ছে রাফসানকে।

রহিমা : বাবা (মুক্তার স্বামীকে উদ্দেশ্য করে)। আরেকটু দেই গরুর মাংস।
ফরহাদ : এত খেতে তো পারব না। তবু যেহেতু দিতে চাচ্ছেন দেন।
মিরাব : তুই এতো ছোছা কেনো রে? লোভ সামলাতে পারিস না।

সবাই খাওয়া বাদ দিয়ে মিরাবের দিকে তাকালো। কি বলছে ও এসব। ফরহাদের তো গলায় গরুর লাথি খাওয়ার অবস্থা। সোহান বুঝছে মিরাব কেন এসব বললো। মুচকি মুচকি হাসছে সে। মিরাবকে আগেই সব বলে দিয়েছে সোহান। ফরহাদকে বাশঁ দিতে মিরাবকে টিমে নেওয়া দরকার।

মিরাব : আরেহ।😦 সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেন? আমিতো ফোনে কথা বলছিলাম। এইযে কানে ব্লুটুথ। আর বলবেন না জামাইবাবু আমার এক ফ্রেন্ড এতো ছেছড়া। খাবারের কথা শুনে নাকি তার আসতে ইচ্ছে করছে।

সবাই আবার খাওয়ায় মনযোগ দিলো। সোহান ইশারা দিয়ে বুঝাচ্ছে দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে এবার। এদিকে সবার খাওয়া শেষ। সবাই উঠলেও ফরহাদ দিব্বি খেয়ে যাচ্ছে। ফরহাদ খাওয়া শেষে দই মুখে দিবে। ঠিক তখনই।

মিরাব : জীবনে কি চোখে দেখোছ নাই। লুববা। সবার শেষ হলেও ওনার শেষ হয়না।
ফরহাদ ( কিছুটা গাবড়ে) : আমাকে বললে শালাবাবু।
মিরাব : আরে না নাহ। ফোনে বলছিলাম।
ফরহাদ : ওহ।

মুখে না বললেও ফরহাদ ঠিক বুঝেছে মিরাব কথাগুলো তাকেই বলছে । তার আর খাওয়া হবে না। রাগে সে উঠে যায়। তবে মুক্তাকে ইশারা দিয়ে বলে রুমে আসতে। কিন্তু ঝুমুরের সাথে থাকায় মুক্তা আর যেতে পারে না। আজ সারাদিন ওর সাথেই গল্প করতে হবে মুক্তাকে।
……
এদিকে বিকেলবেলা পিছনের পুকুরটার পাশে একা একা বসে আছে মধুমিতা। কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছে। আর গুনগুন করে গাইছে। অনেকদিন পর মুক্তা আপুর সাথে কথা বলে ভালো লাগল। তবে ঝুমুর বারবার মুক্তা আপুর সাথে একা কি জানি বলতে চাচ্ছিল। বুঝতে পেরে মধুমিতা নিজেই উঠে আসে। এমন সময় মধুমিতার মনে হলো পিছনে কেউ আছে। পিছ ফেরে কাউকে হঠাৎ দেখে চমকে পড়ে যেতে নিলে সামনের ব্যক্তি ওকে ধরে ফেলে।

রাফসান : রিলেক্স, আমি। আপনি একা একা বসে আছেন যে।
মধুমিতা : না মানে। এমনিই।
রাফসান : এমনিতে কেউ বসে থাকে বুঝি। কাউকে মনে করছেন হয়ত।
মধুমিতা : না তেমন কিছু না।
রাফসান : পুরোনো কোনো ক্ষতও তো মনে করতে পারেন।
এই কথা শুনে মধুমিতার হঠাৎ রিয়াদের কথা মনে পরল । সেইদিন একটুর জন্য বেচে গিয়েছিল সে। কি বাজে অভিজ্ঞতা।
মধুমিতা: না তেমন কিছু না।
রাফসান : হলেও বা কি যায় আসে। পাস্ট ইজ পাস্ট রাইট?

কথা বলতে বলতে রাফসান যে কখন মধুমিতার অনেকটা কাছে চলে এসেছে মধুমিতা খেয়ালই করেনি। তারতো রিয়াদের কথা মনে পড়ছে। শুনেছিল রিয়াদের নাকি পলিটেশিয়ান লোকদের সাথে হাত আছে। ছাড়া পেয়ে গেছে নিশ্চয়ই। আবার কোনো গন্ডগোল করবে নাতো?

সোহান : বাট হোয়াট এবাউট ইওর পাস্ট? মিস্টার রাফসান।
রাফসান ( কিছুটা দূরে সরে) : আরেহ সোহান। আপনার সাথে তো পরিচয় হওয়াই হলো না।
সোহান: আপনিতো অন্য লোকের প্রতি ইন্টারেস্ট বেশি দেখাচ্ছেন। তাই হয়তো আমায় চোখে দেখেননি।

কথা বলতে বলতে সোহান ওদের কাছে চলে আসল। মধুমিতা কিছু না বলে ঘরে চলে যায়। সোহান রাফসানের ঠিক সামনে এসে দাড়ায়।

সোহান : তা আমাকেও একটু বলেন আপনার অতীত নিয়ে।
রাফসান : ইয়ে মানে।
সোহান : ইয়ে টিয়ে বুঝি না ভাই। আপনি আমাদের গেস্ট। আশা করি গেস্ট এর মতোই থাকবেন। বাড়ির মেয়েদের সাথে বেশি ভাব জমাতে আসবেন না। বাড়ির বড় ছেলে হিসেবে ভদ্র ভাষায় জানিয়ে দিলাম।
রাফসান : ওই আমার ফোনটা ঘরে রেখে আসছি। মা ফোন দিতে পারে। যাই তবে। পরে কখনো কথা বলব।

রাফসান তাড়াতাড়ি কেটে পড়ে। সোহানের সন্দেহ ঠিক। এই ফরহাদ আর রাফসানকে একদম বিশ্বাস করা যাবে না। দুজনের মতলব ভালো না। আর এর আগেতো ফরহাদ কখনো এসে রাফসানের কথা কিছু বলেনি। এবার কোথা থেকে নিয়ে আসল একে। সোহানেরতো এবার একটু খোজ নিয়ে দেখতে হবে এই ছেলের সম্পর্কে। মধুমিতার প্রতি ইন্টারেস্ট বেশি দেখাচ্ছে।
……
মধুমিতা ঘরে বসে ফোন টিপছে। হঠাৎ ঝড়ের বেগে একদম রাগী লুকে রুমে ঢুকে সোহান। ঢুকেই এক টানে মধুমিতাকে দাড় করিয়ে ফেলে। মধুমিতা তাল সামলাতে না পেরে সোহানের উপরেই পড়ে যায়।

সোহান : এতো শখ ছেলেদের সাথে গল্প করার। রাফসান এত কাছে কেনো গিয়েছিল তোমার?
মধুমিতা ( ভয়ে ভয়ে) : আমি আসলে খেয়াল করিনি। আপনি দূরে যান একটু।
সোহান : কেনো? আমি কাছে আসলেই দোষ শুধু তাইনা। এই রাফসান সম্পর্কে জানো তুমি কিছু? জানো ও কে?

মধুমিতা ভয়ে কিছু বলতেও পারছেও না। হাতে প্রচুর ব্যাথা পাচ্ছে। চুড়িগুলো ভেঙে একদম হাতে ঢুকে গেছে ওর। সোহানের এতদিকে খেয়াল নেই। সে যখন জানতে পেরেছে রাফসানই রিয়িদ তার আর মাথা ঠিক নেই। হ্যাঁ রাফসান আর অন্য কেউ না বরং রিয়াদ নিজে। ফেইস বদলিয়ে মোটা অংকের টাকা ফরহাদকে দিয়ে এখানে এসেছে সে।

সোহান : কি হলো?আনসার মি।
মধুমিতা :….😭

মধুমিতার হঠাৎ কান্না দেখে সোহানের হুশ ফিরে। সাথে সাথে ওর হাত ছেড়ে দূরে সড়ে যায়। মধুমিতা এক হাতটাকে অন্য হাত দিয়ে ধরে ডুকরে কেদে যাচ্ছে। সোহান দেখে হাতে চুড়ি ভেঙে কিছুটা রক্ত।
সোহান : শিট। আই এম ছো ছরি। আমি আসলে খেয়াল করিনি একটুও। এদিকে আসো।

মধুমিতা আরো পিছনে সড়ে যায়। সোহানের এত রাগী চেহারা এর আগে কখনো দেখেনি মধুমিতা।
সোহান : আসো বলছি।( কিছুটা ধমক দিয়ে)

মধুমিতা ভয়ে আবার আরো দূরে চলে যায়। সোহানও বুঝছে ওকে বলে আর লাব নেই। নিজেই ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্সটা বের করে ওর কাছে গিয়ে হাতটা ব্যান্ডেজ করে দেয়।
সোহান : ছরি। রাগটা কন্ট্রল করতে পারিনি। ফরগিব মি।

সোহান আর কিছু না বলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। বাহ! কি সুন্দর নিজে ব্যথা দিয়ে নিজেই মলম লাগিয়ে গেল। নিজের প্রপারটি মনে করে নাকি। নাকি মধুমিতা ওর বিয়ে করা বউ। রাগে ব্যাথায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে এসব ভাবছে মধুমিতা। সারা বাড়িতে আর কি কোনো রুম ছিল না। ঘুরে ফিরে সোহানের রুমের পাশেরটাই দিতে হলো ওকে। সবই পোড়া কপাল।

এদিকে….
#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে