গল্পঃ #রাঙা_বউ ( ষষ্ঠ বা শেষ পর্ব )
পরদিন খুব সকালে তিথি বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে যায়। নিলয়ের যে ঠিকানা ছিল তিথির কাছে সেই ঠিকানা বরাবর। যদিও তিথি এর আগে কোনদিন বাড়ি থেকে দূরের পথে যাত্রা করেনি, কিন্তু এবার ভালোবাসার জন্য সাহস করে বেড়িয়ে পড়তে হলো।
আর ঠিকানা বরাবর এসে ঠিকই পৌঁছে গেল।
হঠাৎ তিথিকে দেখে ভীষণ অবাক হয়ে গেল নিলয়, এটা কীভাবে সম্ভব? নিলয় অবাক হয়ে বললো,– তিথি তোরে এতবড় পাগলামি করতে কে বলছে, মামা মানে তোর বাপ এবার আমাদের দুজনকেই চিরতরে দূর করে দেবে, আমাকে বললেই পারতি, আমি ব্যবস্থা করতাম।
তিথি ভেংচি কেটে বললো,– ফোন বন্ধ তোমার, তুমি ব্যবস্থা করতে করতে আমি অন্য কারো বাচ্চার মা হয়ে যাইতাম, তারপর বাচ্চাদের ফিডার খাওয়াইতে খাওয়াইতে তোমার শোক পালন করতাম।
: তিথি তোর ছেলেমানুষী গেলো না আর।
: ছেলেমানুষী মানে, আমি তো মেয়ে, মেয়েমানুষী বল।
: হা হা হা, পাগলী একটা, আচ্ছা শোন, এভাবে চলে আসা উচিৎ হয়নি তোর, মামা হয়তো মনে ভীষণ কষ্ট পেয়েছে, চল বাড়ি গিয়ে সবকিছু ঠান্ডা মাথায় ম্যানেজ করার ট্রাই করি।
বিকেলে তিথিকে শহরের বিভিন্ন যায়গায় ঘুরিয়ে দেখিয়ে, পছন্দের খাবার খাইয়ে রাতের গাড়ির টিকিট কাটলো।
পরদিন সকাল সকাল তিথি ও নিলয় বাড়িতে ফিরলো। সবাই কেমন আড় চোখে দেখছে ওদের।
তিথির বাবা এসে চোখ লাল করে ধমক দিয়ে তিথিকে বললো,– তোর এতবড় সাহস হলো কি করে, বাড়ির বাইরে পা রাখার, চলে যা আমার চোখের সামনে থেকে।
তিথি ফট করে বলে ফেললো,– বললেই হলো, এটা আমার বাপের বাড়ি, তোমার বাপের বাড়ি না যে তুমি বললেই চলে যাবো হুহ।
এত রাগের মধ্যেও তিথির বাবা হেসে ফেললো। তাই দেখে অন্য সবাই হেসে ফেললো।
নিলয় সামনে এসে তার মামা মানে তিথির বাবাকে বললো,– মামা, সেই ছোটবেলা মা বাবা মারা যাবার পরে আপনার কাছে রেখেছেন, নিজের ছেলের মতো ভালো বেসেছেন, তার পরেও আপনার মনে কষ্ট দিলাম সেই অপরাধবোধে ভুগছি প্রতিদিন। জানি আমি ক্ষমার অযোগ্য, তাই দ্বিতীয় বার আবার ভুল করে অপরাধের বোঝা বাড়াতে চাইনা। আপনি আমার শেষ আশ্রয় মামা। আমি এবং তিথি দুজন দুজনকে ভালোবাসি, আমাদের ভালোবাসার জন্য আমি আমার শেষ আশ্রয় হারাতে চাইনা। তাই তিথিকে দিয়ে গেলাম, পারলে আমাকে ক্ষমা করবেন।
কথা শেষে নিলয় চলে যেতে লাগলো। পেছন থেকে মামা ডেকে বললো,– তাহলে চলে যাচ্ছিস কেন? জানিসনা শেষ আশ্রয় আঁকড়ে ধরে বাঁচতে হয়, তোর কোথাও যাবার দরকার নেই। তুই ছাড়া বাড়িটা খুব শূন্য মনে হয়, এটাই তোর বাড়ি, এটাই তোর ঘর।
তিথি বললো– আব্বা নিলয় গেলে কিন্তু আমি আবারও পালাইয়া যাবো বাড়ি থেকে ওর কাছে।
তিথির বাবা হেসে ফেলে বললো– মুখে একটু লাগাম তো দে, পাগলী মেয়ে।
তারপর দিনক্ষণ দেখে নিলয় ও তিথির বিয়ে হয়ে গেল।
বাসর ঘরে খাটের ওপর বসে আছে নিলয় ও তিথি।
নিলয় দুই হাত দিয়ে তিথির দুই গাল চেপে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললো– অবশেষে তুই আমার রাঙা বউ।
তিথি উঠে দাড়িয়ে রুমের বাইরে গিয়ে একটু পরেই একটা লাঠি নিয়ে আবার রুমে এসে ঢুকলো।
তিথির হাতে লাঠি দেখে নিলয়ের চোখ কপালে। অবাক হয়ে বললো– কিরে রাঙা বউ বাসর রাতে এসব কি ভয়ঙ্কর আলামত দেখি।
তিথি এগিয়ে এসে নিলয়ের কানে কানে বললো– তুই জানোসনা বাসর রাতে নাকি বিড়াল মারতে হয়, সেই বিড়াল মারার জন্য এই লাঠি নিয়ে আসছি।
তিথির কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠে তিথিকে টান মেরে খাটের ওপর শুইয়ে তিথির ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে নিলয় বললো– লাইট অফ না করলে তো বিড়াল আসবে না রাঙা বউ। লাইট অফ করে আসো তারপর আমরা বিড়াল মারবো।
তিথি নিলয়ের গালে আলতো করে কামড়ে দিয়ে বললো– দুষ্ট একটা।
তারপর নিলয় উঠে গিয়ে রুমের লাইট অফ করে এসে তিথিকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।
সমাপ্ত।
নিলয় আহমেদ।