গল্পঃ #রাঙা_বউ ( ৫ম পর্ব )
রাস্তা থেকে তিথি এবং নিলয় বাড়ির ভেতর আসতেই তিথির খালু এবং বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে উঠোনে নিলয় এবং তিথির সামনে দাঁড়ালো। তিথির বাবা ভীষণ রেগে চোখ লাল করে তিথিকে বললো,– একটু আগে তোদের রাস্তায় দেখে এসে তোর খালু যা বললো তা কি সত্যি?
তিথি মাথা নত করে আছে। তিথির বাবা এবার নিলয়ের সামনে এসে কষে দুই গালে দুটো থাপ্পড় মেরে বললো,– এর জন্যই তোকে আশ্রয় দিয়েছিলাম, এর জন্যই খাইয়ে পড়িয়ে বড়ো করেছি তোকে? এভাবে রাস্তাঘাটে আমার মানইজ্জত ডুবিয়ে প্রতিদান দিবি? এই মুহূর্তে আমার চোখের সামনে থেকে চলে যা, আর কোনদিন তোর মুখ আমি দেখতে চাইনা।
নিলয় মাথানিচু করে চুপচাপ চলে আসলো তিথিদের বাড়িতে, তারপর নিজের জামাকাপড় গোছগাছ করে চলে গেল।
তিথিরাও বিকেলেই বাড়িতে চলে আসলো সবাই। নিলয়কে না দেখে সবাই ভেঙে পড়লো। তিথি তো পাগল প্রায়। সন্ধ্যা গড়িয়ে গভীর রাত। তিথি বাড়ি ফেরার পরে দানাপানি মুখে তোলেনি। রুমে বসে ফুপিয়ে কাঁদছে তিথি, ইচ্ছে করছে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে।
হঠাৎ তিথির জানালার কপাটে মৃদু ঠকঠক আওয়াজ, তিথি উঠে গিয়ে জানালার কপাট খুলতেই নিলয়কে দেখে আনন্দে আত্মহারা। নিলয় ফিসফিস করে বললো,– বাইরে আয়।
তিথি খুব সতর্কতা অবলম্বন করে ঘরের পেছনের দরজা খুলে বাইরে এসেই নিলয়কে জড়িয়ে ধরে বললো,– তুই কোথাও যাবিনা, আর গেলে আমাকে মেরে ফেলে যাবি, যেন তোর বিরহে প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত ছটফট করে মরতে না হয়।
নিলয় হঠাৎ করেই তিথির ঠোঁটে চুমু খেয়ে ফেলল। তিথি অন্যরকম এক অনুভূতির আবেশে ভেসে বেড়াতে লাগলো, আসলে এই অনুভূতি ঠিক কেমন তা বলে বোঝানোর নয়। নিলয় আবারও তিথির ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললো,– দ্বিতীয় বার তোর মুখে যেন আর মরার কথা না শুনি, আমরা আমাদের জন্য বাঁচবো।
তিথিকে পাঁজাকোলা করে কোলে নিয়ে ধীরে ধীরে বাড়ির সামনে রাস্তার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে নিলয় বললো,– আমাদের বিয়েটা হয়ে যাক, তারপর এভাবেই তোকে কোলে নিয়ে হঠাৎ করে ঘুরতে বের হবো রাত বিরেতে, ভূত পেত্নীর মতো, তুই আমার পেত্নী আর আমি তোর ভূত। রাতভর গল্প করে কাটিয়ে দেবো দুজন।
তিথি মিষ্টি হেসে বললো,– আমি তোর পেত্নী হবার অপেক্ষায় সবসময়।
হঠাৎ দূর থেকে আসা একটা টর্চের আলো দেখে তিথি ও নিলয় রাস্তার পাশের একটা বাড়ির ভেতরের পরিত্যক্ত একটা কুঁড়েঘর টাইপের ঘরে গিয়ে ঢুকলো। মেঝেতে খড়ের ওপরে পুরনো পাটি পাতা। এখানে দিনের বেলা এবাড়ির মালিকের কাজের লোকেরা বাড়ির পরিচর্যা করতে এসে বসে।
পাটির ওপর বসলো দুজন, তারপর নিলয় শুয়ে পড়লো। তিথিকে টেনে বুকের ওপর শুইয়ে নিলয় বললো– তুই শুধু আমার তিথি, যতই ঝড়ঝাপটা আসুক আমরা এক থাকলে পৃথিবীর কোনো শক্তি আমাদের আলাদা করতে পারবেনা।
তিতি নিলয়ের বুকে একটা চুমু খেয়ে বললো– আমার জীবনটা তোর তরেই উৎসর্গ করেছি অনেক আগেই। যদি তোকে হারাই তাহলে আমি মরে যেতে চাই।
তিথিকে জড়িয়ে ধরে নিলয় উল্টে তিথির বুকের ওপর উঠে তিথির ঠোঁট লম্বা একটা চুমু খেয়ে বললো– মরে যাবার কথা যেন আর না শুনি, তাহলে আমার রাঙা বউ কে হবে বল। আর রাঙা বউ ছাড়া আমার জীবনটাও যে বৃথা।
নিলয় তিথির ঠোঁটে গালে কপালে, গলায় বুকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে লাগলো। তিথির সমস্ত শরীরের শিরা-উপশিরায় অন্যরকম এক ভালোলাগার শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। নিজেকে ফেরানো খুব কঠিন। তিথিও উপভোগ করছে নিলয়ের ঠোঁটের এই যাদুকরী স্পর্শ।
নিলয় মুচকি হেসে বললো– তিথি তোর বুকের মাঝখানে একটা চুমু খাই?
তিথি ফিসফিস করে বললো– ঠিক মাঝখানে কিন্তু, ডানে বামে যেন চোখ না যায়।
নিলয় মুচকি হেসে বললো– কেন ডানে বামে কিরে?
তিথি মুচকি হেসে বললো– ডানে বামে অমূল্য সম্পদ, দেখলে নিজেকে সামলাতে পারবি না।
নিলয় বললো– তাহলে তো দেখতেই হচ্ছে আজ।
তিথি বললো– একদম না, ওসব বিয়ের পরে পাগলা।
নিলয় মুচকি হেসে তিথির বুকের মাঝখানে একটা চুমু খেয়ে বললো– এই মানুষটার বুকে মহামূল্যবান একটা হৃদয় আছে, সেই হৃদয় থেকে যেন কোনদিন মুছে না যাই। আর সেই হৃদয়ে যেন কোনদিন আমি ব্যতীত অন্য কারো স্থান না হয় বলে দিলাম।
তিথি নিলয়কে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো– কথা দিলাম আমি তোর, মৃত্যু ছাড়া কেউ কোনদিন তোকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবেনা।
দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে আছে, দুজনের হৃৎস্পন্দন যেন একই সুরে বাজছে।
এভাবে কিছু সময় অতিবাহিত হবার পরে নিলয় বললো,– শোন মামা যেভাবে রেগে আছে তাতে আমার এখানে থাকা আপাতত ঠিক হবেনা, আমি বাইরে থেকে পড়ালেখা শেষ করে আবার ফিরবো, ততদিন কষ্ট করে ধৈর্য ধরে থাক। আবার ফিরবো আমি, আবার মিলবো দুজন, তোকে কাগজে কলমে আমার করে নেবো।
কথা শেষে তিথির কপালে ভালোবাসার পরস মিশ্রিত চুমু খেয়ে তিথিকে ঘরে পৌঁছে দিয়ে হিমেল চলে গেল।
দেখতে দেখতে প্রায় দেড় বছর। মাঝেমধ্যে লুকিয়ে ফোনে যোগাযোগ হয়, কিন্তু সামনাসামনি দেখা নেই দুজনের এতগুলো দিন।
মরুর বুকে তৃষ্ণার্ত চাতক পাখি যেমন বৃষ্টির আসায় আকাশের দিকে চেয়ে থাকে। তিথি তেমন নিলয়ের ফেরার অপেক্ষায় ছটফট করতে থাকে দিনের পরে দিন।
আর তিথির জন্যও বিয়ের সম্বন্ধও আসছে একের পরে এক। অনেক বার চালাকি করে পাত্রপক্ষ তাড়াতে পারলেও এবারের পাত্র নাছোড়বান্দা, তিথিকে তার এতটাই ভালো লেগেছে যে বিয়ে না করে এবাড়ি থেকে নামবে না। নাস্তা পানি পর্ব শেষে পাত্র পাত্রীর আলাদা ভাবে কথাবার্তা বলার পালা।
একটা বারান্দায় তিথি এবং পাত্র এসে দাড়ালো।
তিথি পাত্রকে বললো,– কি অদ্ভুত তাই না, প্রেম করি কার সাথে, বউ হবো কার!
পাত্র বেশ খুশি মনে বললো,– প্রেম যার সাথেই করো পাস্ট ইজ পাস্ট, তুমি আমার বউ হবা এটাই লাস্ট।
তিথি ভ্রু কুঁচকে বললো,– আমি প্রেম করি জেনেও বিয়ে করবেন আমাকে?
: অবশ্যই তিথি, তোমাকে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে, আর বিয়ের পরে স্বামী স্ত্রীর মহব্বতের চাপে ওসব বহিরাগত প্রেম প্রাণ হাতে নিয়ে পালাবে।
: আমার কিন্তু বদ অভ্যাস আছে।
: কি?
: রাতে ঘুমের মধ্যে, কিল ঘুষি লাথি চড় এসব মারার।
: এটা কোনো সমস্যাই না, প্রিয়জনের সবকিছু হজম করা সম্ভব। সবকিছু আমি সামলে নেবো, তবু তোমাকে চাই।
তিথি মনে মনে বললো, কত্তবড় বেহায়া লোকরে বাবা, চুইংগাম ফেল, লেগে গেলে তো আর ছাড়ানো যাবেনা!
পাত্র বললো,– ঠিক আছে তিথি, আজ তো সন্ধ্যা হয়ে গেল, কালকেই আমার মুরব্বিদের পাঠিয়ে বিয়ের কথা পাকাপোক্ত করাবো, যেহেতু তোমার আব্বা আগে থেকেই আমাকে পছন্দ করে, সেহেতু আর কোনো ঝামেলা নেই।
গত কয়েকদিন ধরে নিলয়ের ফোন বন্ধ। নিলয়ের সাথে যোগাযোগ করার কোনো উপায়ও যে নেই। কি হবে এখন! নুপুর রাতে অল্পকিছু জামাকাপড় গুছিয়ে ব্যাগ ভরলো। সকাল হবার আগেই বাড়ি ছেড়ে পালাতে হবে…
চলবে…
লেখকঃ নিলয় আহমেদ।