গল্পঃ #রাঙা_বউ ( চতুর্থ পর্ব )
তিথি চোখের পলকে নিলয়ের গালে একটা চুমু খেয়ে উঠে দাড়িয়ে দরজা খুলে দৌড়ে পালালো।
নিলয় থ মেরে দাড়িয়ে আছে, এটা কি হলো! নিলয়ের মাথা ঘুরছে ভনভন করে। অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলে সবার ক্ষেত্রেই এমন হওয়া স্বাভাবিক। তিথি তাও আবার নিজে এগিয়ে। একেবারে কল্পনার বাইরে ছিল।
নিলয় খেয়াল করলো তার শরীর আনন্দে মৃদু কাঁপছে। নিলয় প্রায় ঘন্টাখানেক খাটের ওপর ঝিম মেরে বসে থেকে তারপর উঠে দাড়িয়ে বাইরে আসলো।
একেবারে নতুন যায়গা, সবকিছু কেমন নিলয়ের কাছে লাগে, মন বসেনা একটুও এখানে।
নিলয় তিথির মাকে বললো,– মামি, তোমরা থাকো, আমি চলে যাচ্ছি, বেড়ানো শেষ হলে তোমরা চলে এসো।
: তুই চলে যাবি মানে! আমরা সবাই একত্রে এসেছি আবার একত্রে যাবো।
: না মামি, আমার ভালো লাগেনা এখানে, আমি বরং যাই।
: আচ্ছা তোর যেটা ভালো মনে হয়।
নিলয় বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুদূর আসতেই পেছন থেকে দৌড়ে এসে তিথি নিলয়কে জড়িয়ে ধরে বললো,– এভাবে চলে যাবার মানে কী?
গ্রামের রাস্তা, জনশূন্য, তবুও নিলয় বললো,– এভাবে জড়িয়ে ধরলে লোকজন কি বলবে তিথি।
তিথি বললো,– লোকজনের গুল্লি মারি, এভাবে চলে যাচ্ছিস কেন তাই বল। নিজের ইচ্ছে মতো নাকি সব, মনে চাইলে আসলি, আবার চলে গেলি, মগের মুল্লুক পাইছো?
: আমার ভালো লাগেনা তাই। আর আমি নিজের ইচ্ছেমতো চলবো না তো কার ইচ্ছায় চলবো, তোর? আমি আমার ইচ্ছে মতো চলবো। এখন আমার ভালো লাগেনা তাই চলে যাবো, আমার ইচ্ছা।
: ভালো লাগেনা তাই! নাকি চুমু দিয়েছি তাই? এতদিন আমাকে দিয়ে দিয়ে লাইনে এনেছিস, এখন সব সুদে আসলে শোধ করবো।
: শোধ করতে হবেনা, তুই আমার কাছে ঋণী থাক বুঝলি। তোরটা আমার আপাতত দরকার নেই।
তিথি ঘুরে নিলয়ের সামনে এসে কোমরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে বললো,– আচ্ছা তাইলে আমার চুমু ফেরত দে। সুদসহ ফেরত দিয়ে তারপর যাবি।
: তোর মাথা ঠিক আছে তো তিথি, কি আবোলতাবোল বলছিস এসব। চুমু আবার ফেরত দেয় কেমনে! অদ্ভুত তো!
: আমি যেমনে তোর গালে দিলাম, তুই তেমন আমার গালে দিবি, আমি তোর এক গালে দিছি, তুই আমার দুই গালে দুটো দিবি; ব্যাস শোধবোধ।
: তিথি অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে কিন্তু! বিয়ের আগে এসব ভালো নয় একদম।
: আরে বাবা, এই নিতি এতদিন কই ছিল? কিছুই অতিরিক্ত হচ্ছে না, তুই সিনক্রিয়েট করছিস এখন।
নিলয় রাগ করে হাটা শুরু করতেই তিথি নিলয়ের হাত ধরে টেনে থামিয়ে হাতে কামড় বসিয়ে দিয়ে বললো,– আমাকে একদম রাগাবি না বলে দিলাম।
নিলয় ভীষণ রেগে গিয়ে তিথির গালে একটা থাপ্পড় মেরে বললো,– সহ্যের একটা সীমা আছে, তুই সেটা পার করে ফেলেছিস।
তিথি গাল চেপে ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,– তোর প্রতি অতিরিক্ত খেয়াল রাখাটা অতিরিক্ত তাই না? তোকে ছাড়া এক মুহূর্ত ভালোলাগেনা বলেই তোর আসেপাশে থাকি সেটা অতিরিক্ত তাই না? তোকে ভালোবাসি সেটাও অতিরিক্ত তাই তো? ঠিক আছে তোকে আর জ্বালাবো না কথা দিচ্ছি, তাতে তোর শান্তি হবে তো! আমি তোর শান্তি চাই।
নিলয় অবাক হয়ে তিথির কথা শুনছে। নিলয়ও তিথিকে প্রচুর ভালোবাসে কিন্তু আজ মনে হচ্ছে তিথি আরও বেশী।
এদিকে তিথি হনহন করে হেটে যাচ্ছে। নিলয় পেছন থেকে তিথিকে ডেকে বললো,– তোদের খাচ্ছি পরছি, দিনদিন তোদের বোজা হয়ে যাচ্ছি, আর না, আজই চলে যাবো যেদিকে দুচোখ যায়।
ঘুড়ে দাড়িয়ে তিথি বললো,– ঐ নিলয়ের বাচ্চা, আর এক পা সামনে বাড়ালে তোর ঠ্যাং ভেঙে যদি ঘরে বসিয়ে না রাখছি, এক পা সামনে দিবিনা কইলাম।
নিলয় ঘুরে দাঁড়ালো। তিথি দৌড়ে এসে নিলয়কে জড়িয়ে ধরে বললো,– তুই চলে গেলে আমি বাঁচবো না জানিসনা তুই! যাবার কথা দ্বিতীয় বার বললে তোকে খুন করে আমি নিজেও মরবো। তোর সাথে চিল্লাচিল্লি করতে আমার ভালো লাগে, তোরে বিরক্ত করতে আমার ভালো লাগে। তুই আছিস বলে নিজেকে খুব সুখী মনে হয় আমার। তোর প্রতি এই টান আসলে কী আমি জানিনা, শুধু এটা জানি তুই ছাড়া এক মুহূর্তও আমি ভালো থাকতে পারবো না। যতদিন আমি বেঁচে আছি তুই আমাকে ছেড়ে কোত্থাও যেতে পারবি না।
নিলয়ও তিথিকে জড়িয়ে ধরে বললো,– তোকে ছেড়ে আর কোথায় যাবো, শাসন ভালোবাসায় যেভাবে আগলে রাখিস, মা বাবা হারিয়ে এটাই মনে হয় শেষ আশ্রয়। তোকে ছেড়ে যাবার উপায় কি বল। আমি জানতাম তোর পাগলামির আড়ালে রয়েছে আমার প্রতি অসীম ভালোবাসা।
এদিকে তিথির খালু রাস্তায় এসে নিলয় তিথিকে জড়িয়ে ধরে আছে দেখে বাড়ির ভেতর গিয়ে নুপুরের বাবার কাছে বলে দিলো…
চলবে…
নিলয় আহমেদ।