রাঙা বউ পর্ব-০১

0
987

গল্পঃ #রাঙা_বউ। ( প্রথম পর্ব )

নিলয় আহমেদ

নিলয় শক্ত করে জড়িয়ে ধরতেই–উহ! নিলয় ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দাও বলছি, ব্যথা লাগছে তো। এইভাবে যখনতখন আমার শরিরে হাত দিবানা আমার কেমন যেন লাগে, আমি কিন্তু এখন আর ছোট নেই বড়ো হয়ে গেছি, তুমি এরকম করলে আমি কিন্তু আম্মুকে বলে দিবো” এই কথা বলে তিথি হেটে যাবার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই পেছন থেকে তিথির হাত টেনে ধরে নিলয় বললো– তাইলে অবশেষে তুই স্বীকার করলি তো বড়ো হয়েছিস।

: তো কি, আমি কি ছোট নাকি?

: প্রেম করার কথা, রাঙা বউ বানানোর কথা বললেই তো বলিস আমি ছোট এসব বুঝিনা।

: আমার ইচ্ছা আমার মুখ, যা ইচ্ছা তাই বলবো তাতে তোর কি?

– আমার কি? দাড়া দেখাচ্ছি– বলেই নিলয় তিথিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে ঠোঁটে একটা চুমু খেতেই তিথি রাগে গজগজ করতে করতে উঠোনে চলে আসলো।

নিলয়ের চুমু খেয়ে তিতি বারবার থুতু ফেলছে, তাই দেখে তিথির মা বললো– কিরে কি হইছে তোর?

নিলয় পেছন থেকে দৌড়ে এসে বললো– কি আর হবে, ঐ যে মেয়াদোত্তীর্ণ লিপস্টিপ মেখেছিল ঠোটে, সেই লিপস্টিপ মনে হয় পেটে গেছে তাই বারবার থুতু ফেলছে।

দাঁত কটমট করে তিথি বললো– হ তোরে কইছে, খবিশ একটা।

নিলয় এগিয়ে এসে আঙ্গুল দিয়ে তিথির ঠোঁট চেপে ধরে বললো– আমি খবিশ তাইনা? আর নিজে যে ঠোঁটে মেয়াদোত্তীর্ণ লিপস্টিপ মাখিস সেগুলো কি হুম। লিপস্টিক পেটে গেছে বলেই তো বারবার থুতু ফেলেছিস বান্দর। ফের যদি কোনদিন দেখি তাইলে ঠোঁট কেটে রোদে শুকাতে দেবো দেখিস।

রাগে তিথির কান দিয়ে ধোঁয়া বের হবার উপক্রম। একটু দূরেই দাড়িয়ে আছে তিথির মা, বড়ো বোন আর দাদী। নিলয় আর তিথির কান্ড দেখে হাসছে তারা।

তিথি নিলয়ের হাতে কামড় বসিয়ে দিয়ে বললো,– আমার ঠোঁটে আমি যা মনে চায় দিমু তোর কি তাতে, শয়তান, বিলাই, কুত্তা বান্দর।

নিলয় রাগের ভান করে বললো,– আচ্ছা দে মুরগির ইয়ে দে, আরও সুন্দর লাগবে, সুন্দরের শ্রাদ্ধ হয়ে যাক।

তিথি আবারও রেগেমেগে নিলয়ের হাতে কামড় বসিয়ে দিলো। নিলয় ব্যাথায় আঁতকে উঠে তিথির মাকে বললো,– মামি, এইটা তো পাগল হয়ে গেছে, শুধু কামড়ায়, শেলক দিয়ে বেঁধে রাখেন সময় থাকতে।

এবার তিথি আরও ক্ষেপে গিয়ে বললো,– মানে! কি বলতে চাস তুই, আমি কিচ্ছু বুঝিনা তাইনা! দাড়া হারামি, আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন।

কথা শেষে একটা বাঁশের কঞ্চি হাতে নিলো তিথি, তাই দেখে নিলয় বললো,– এইডা কি মাইয়া নাকি রানু মন্ডল, দজ্জাল একটা।

কথা শেষ হতে না হতেই তিথি তাড়া করলো নিলয়কে, নিলয় দৌড়ে বাড়ির বাইরে চলে গেল।

তিথি বাঁশের কঞ্চি উঁচিয়ে ধরে নিলয়ের উদ্দেশ্যে বললো,– আজকে তুই ঘরে আয়, লিপস্টিক যদি ভর্তা বানিয়ে তোরে না খাওয়াইছি, তাইলে আমার নামও তিথি না।

নিলয় দূর থেকে চেচিয়ে বললো,– হ তোর নাম তো রানু মন্ডল রাখছি, এমনিতেও তোর নাম এখন তিথি না।

তিথি রাগে গজগজ করে মাকে বললো,– দেখছো মা, দুধকলা খাইয়ে একটা কালসাপ পুষতেছো, এখন আমাদেরই ছোবল মারতে চায়।

তিথির মা হেসে হেসে বললো,– চুপ কর, মুখে কিছু আটকায় না! ও তো আমাদের ছোবল মারেনাই, ছোবল মারছে তোর লিপস্টিকে। ওসব না মাখলেই তো হয়।

আসলে তিথির মা তো জানেনা আসল ঘটনাটা কি।

‘বুঝতে পারছি তোমরা সবাই বিরোধী দলের লোক, আজকে হাতের কাছে পাই একবার, তারপর বুঝামু কত ধানে কত চাল।’ বলতে বলতে রাগে গজগজ করতে করতে তিথি ঘরে চলে গেল।

তিথি নিলয়ের মামাতো বোন, আর নিলয় তিথির ফুপাতো ভাই। নিলয়ের মা-বাবা গাড়ি এক্সিডেন্ট করে মারা যাবার পরে নিলয় এখানে মানে ছোটমামার বাড়িতে থাকে।

তিথি ক্লাস টেনে পড়ে, আর নিলয় ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে একটা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছে কেবল। দুজনের বয়সে ভালোই তফাৎ রয়েছে, কিন্তু দুজন যেন সাপ আর বেঁজি। তাই তুইতোকারি চলে হরদম। আর ঝগড়া তো আছেই লাগাতার। পারলে একজন অন্যজনের ছায়ার উপরেও দশটা করে কিল মারতে ছাড়েনা।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, নিলয়ের খবর নেই! বারবার সামনের দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিয়ে আবার দরজা বন্ধ করে একবার ড্রইং রুমে, একবার বেডরুমে, একবার রান্না ঘরে ঘুরঘুর করছে তিথি। তাই দেখে তিথির বড়ো বোন বললো,– কিরে, তোর ঘাড়ে কি বদজ্বীন চাপছে! এরকম করছিস কেন?

তিথি বললো,– আপা দেখছো, গুন্ডাটা এখনো আসার নামগন্ধ নাই, রাত হয়ে গেল।

: গুন্ডাটার জন্য তোর এত মাথা ব্যথা ক্যান তিথি, তোর কাজ তুই খেয়েদেয়ে ঘুমা।

: এহ, এত সহজে! প্রতিশোধ না নিলে আজকে আমার ঘুম হবেনা।

: তুই যেভাবে ক্ষেপে আছিস, ও কি আর এত জলদি ফিরবে! তুই ঘুমালে তারপর ও আসবে দেখিস।

: হুহ ঘুম! আজকে ওকে সায়েস্তা না করা পর্যন্ত আমার ঘুম নিদ্রা সব হারাম। আমার ঠোঁটের লিপস্টিক নষ্ট করা, সবার সামনে অপমান।

হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ, তিথি চুপ হয়ে গেল। দৌড়ে গিয়ে এক জগ পানি এনে পা টিপে টিপে দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। আবার বাইরে থেকে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। বিদ্যুৎ গতিতে দরজা খুলে অন্ধকারে মানুষের অস্পষ্ট অবয়ব দেখেই একজগ পানি ছুড়ে মারলো তিথি। নুপুরের বাবার কন্ঠস্বর,– কিরে এই কাম করলো কে, আমার গায়ে পানি মারলো কে।

কণ্ঠস্বর শুনে তিথি মনে মনে বললো,– এইরে কাম সারছে। তারপর দৌড়ে গিয়ে খালি জগটা বড়ো বোনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে তিথি সোজা তার রুমে এসে কম্বলের নিচে আত্মগোপন করলো।

তিথির বাবা ঘরে উঠে বড়ো মেয়ের হাতে জগ দেখে মুচকি হেসে বললো,– সামনের বাতিটা জ্বালিয়ে রাখলেই তো হয়, তা অরিজিনাল আসামি কি আত্মগোপন করছে? এডা যে তিথির কাজ তা আমি জানি।

সবাই খাওয়াদাওয়া করে শুয়ে পড়েছে। তিথি সজাগ, দরজার কাছে কান পেতে আছে। দরজা হালকা খোলা, দরজার পেছনে লুকিয়ে আছে তিথি।

বাইরে থেকে কারো হেটে আসার শব্দ ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে, এটা নিশ্চিত নিলয়। তিথি রেডি…

চলবে…।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে