> এই উঠো।
‘
> হুম।
‘
> কি হলো উঠতে বলছিতো।
‘
> উম।
‘
> এই তুমি উঠবা না অন্য ব্যবস্থা করব!!
‘
> হুম।
‘
> দাড়াও দেখাচ্ছি।
‘
কিছুক্ষণ পর
‘
> আউুচ ( কেউ কানে সজোড়ে কামড় বসাইছে)
‘
> কি কেমন লাগলো?
‘
> কি হলো এইটা।
‘
> কখন থেকে ডাকছি উঠছোনা তাইতো।
‘
> তাই বলে কানে কামড় দিবা?
‘
> দিব একশবার দিব তাতে তোমার কোনো সমস্যা। ( ঝাড়ি দিয়ে)
‘
> আমার কানে কামড় দিবা তো সমস্যা হবেনা। (তার ঝাড়ির জবাব)
‘
> কি বললা তুমি।( রাগে)
‘
> এই না কিছু বলিনিতো।
‘
> আচ্ছা যাও ফ্রেস হয়ে এসো।
‘
> এত সকালে। একটু ঘুমাইনা প্লিজ।
‘
> কি বললি তুই। (রেগে গেলে তুই করে বলে)
‘
> না কিছু না এইতো যাচ্ছি
‘
‘
এবার আমাদের পরিচয় দেওয়া যাক। আমি … না থাক নাম বলতে লজ্জা লাগছে। আমি একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ কমপ্লিট করে বর্তমানে বেকার। আর এতক্ষণ যে মেয়েটা আমাকে ঝাড়ি মারছিল সে আমার স্ত্রী সাদিয়া শুভ্র। সে একটা সরকারী হাসপাতালে ডক্টরি পোষ্টে চাকরি করছে। কথাটা লজ্জার হলেও সত্যি যে আমি এখন বউয়ের টাকাই খাইদায় চলি আবার বউয়ের সাথেই ঘুমাই( আহা কি লজ্জা কি লজ্জা)।
‘
যদিও এমবিএ কমপ্লিটের পর কয়েকটা ব্যাংক থেকে জবের অফার এসেছিল। কিন্তু সাদিয়া আমাকে কোথাও জয়েন করতে দেইনি। তার ভাষ্য মতে যারা ব্যাংকে জব করে তার নাকি বউদের বেশি সময় দিতে পারেনা। তাই আগামি ১ বছর আমি কোনো চারিতে জয়েন করতে পারবনা।
‘
মেয়েটা খুব রাগী সাথে বদমেজাজি সে যেটা বলবে তাই করতে হবে না হলেই খবর আছে। তাই আর কোনো চাকরিতে জয়েন করা হইনি। আর বউ যেহেতু ডক্টর তাই টাকা পয়সার কোনো অভাব নাই। যাইহোক বাকিটা আপনাদের পরে বলছি। বউ আবার অনেকক্ষণ ধরে ডাকাডাকি করছে যাই শুনে আসি বউ কি বলছে।
‘
‘
> এই কি হলো আর কতক্ষণ লাগবে তোমার ফ্রেস হতে?
‘
> এইতো হয়ে গেছে।
‘
> এই নাও গ্লাসের পুরোটা শেষ করো।
(এক গ্লাস পানি মিশানো নিম পাতার রস)
‘
> প্লিজ বউ আজ এটা না খেলে হয়না!!
‘
> না হয়না।
‘
> শুনোনাগো তুমি না আমার লক্ষি বউ, সোনা বউ প্লিজ বউ আজ এটা না খাই।
‘
> তুমি না আমার ভালো বর। প্লিজ এটা খেয়ে নাও।
> ধুর রোজ সকালে নিম পাতার রস।খেতে ভালো লাগে নাকি।
‘
> এত বেশি কথা কেন খেতে বলেছি ভালো ছেলের মত খেয়ে নাও।
‘
> আমি খাবোনা।
‘
> কি বললা? আরেকবার বলোতো। (রাগে)
‘
> আচ্ছা দাও।
‘
> এইতো গুড বয়।
‘
> হম।
‘
> তুমি বুঝোনা কেন বলতো আমিতো এই সব তোমার ভালোর জন্যই করি। (অভিমানি সূরে)
‘
> আমিতো জানি আমার বউটা আমায় খুব ভালোবাসে। এই দেখে গ্লাসের সবটা শেষ করছি
” ইয়াক ( কি তেতোরে বাবা)
‘
> এই ধরো টুপি যাও নামাজ পড়ে এসো।
‘
> এই এতো তেতো খেলাম একটু মিষ্টি দাওনা। (দুষ্টুমি ভরা চোখে)
‘
> এই দুষ্টুমি করা হচ্ছেনা। যাও নামাজ পড়তে যাও।
‘
‘ আর কথা না বাড়িয়ে সোজা মসজিদের দিকে রওনা দিলাম নামাজ পড়তে। নামাজ শেষ করে সোজা বসায় ফিরলাম। ততক্ষণে বউয়েরো নামাজ পড়া হয়ে গেছে।
‘
‘
> এই তোমার আসতে এত দেরী লাগে। চলো হাটতে যাবো।
‘
> আজকে শরীরটা খুব ব্যাথা করছে। তাই বলছি কী আজকে একটু ঘুমাই।
‘
> তোমার এই সব পুরানা ডাইলোগ রাখতো। আর কথা না বাড়িয়ে চল আমার সাথে।
‘
> অগ্যত বউয়ের বাধ্য হাজবেন্ড এর মতো চললাম তার পিছুপিছু।
‘
‘
সাদিয়ার সাথে আমার পরিচয় কলেজে। আমরা দুইজন ক্লাসমেট ছিলাম। তবে দুইজন দুই বিভাগে। কলেজে নবিন বরণ অনুষ্ঠানে সাদিয়ার সাথে আমার পরিচয় হয়। মেয়েটা দেখতে অসম্ভব সুন্দরি না হলেও তার চেহেরায় একটা মায়া ছিল। আর তার একটা সবচেয়ে ভালোগুণ হচ্ছে সে খুব সহজে মানুষকে আপন করে নিতে পারে।
‘
যার ফলে মাঝেমধ্যেই তার সাথে আমার ক্যাম্পাসে টুকটাক কথা হতো। এভাবেই আমার খুব ভালো বন্ধু হয়ে যাই। আর এই বন্ধেত্বের সম্পর্কটা আরো গভীর হয়ে ভালোবাসার রূপ নেয়।
‘
প্রথমে অবশ্য আমি রাজি হইনি কারণ সাদিয়া ছিল উচ্চবিত্ত পরিবারের একমাত্র মেয়ে। সেই সাথে সে ছিল খুব ভালো ছাত্রি। আর আমি ছিলাম নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। তার সাথে আমার কোনদিক দিয়ে যায়না। তাছাড়া তার পরিবারো আমাদের
সম্পর্কটা কখনো মেনে নিবেনা।
‘
কিন্তু সাদিয়া নাছোড় বান্দা তার শুধু একটাই কথা সে আমাকে ভালোবাসে। আমি যেমনি হইনা কেন সেটা তার দেখার বিষয় না। শেষ পর্যন্ত আমিও সাদিয়ার ভালোবাসার কাছে পরাজিত হই। সেখান থেকে শুরু হয় আমাদের দুজনের নতুন করে পথ চলা।
‘
‘ আমাদের সম্পর্কটা খুব ভালোই যাচ্ছিল। একে অপরের প্রতি কেয়ার, সারদিন খুনসুটি ঝগড়া এইসবের ২টা বছর পার হয়ে গেল। আমাদের এইচ এস সি পরীক্ষার সময় চলে এলো। দুইজনি পড়ালেখা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরলাম। তারপরও চেষ্টা করতাম একে অপরকে যথেষ্ট সময় দেওয়ার।
‘
‘ এভাবেই দিনগুলো খুব তারাতারি পার হয়ে গেল আর আমাদের এইচ এস সি পরীক্ষাও শুরু হয়ে গেল। দুইজনেই ভালোভাবেই পরীক্ষা দিলাম। আমার রেজল্ট মোটামুটি ভালোই হলো আর যা সাদিয়ার যা হওয়ার কথাছিল তাই মাডাম গোল্ডেন এ প্লাস পাইলো।
‘
‘ সাদিয়া তার স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছে সে মেডিকেলে চান্স পাইসে। সেদিন যে সে কি পরিমান খুশি হইছিল তা বলার বাহিরে। আর আমি যে কি পরিমান খুশি তা বলে বুঝাতে পারবনা। যাইহোক আমিও একটা পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে গেলাম।
‘
তারপর থেকে আমরা আর বেশী দেখা করতে পারতামনা। কারণ দুইজন দুই জায়গায় থাকতাম তবুও আমাদের একে অপরের প্রতি ছিল অগাত বিশ্বাস। যার ফলে দুইজন দুই জায়গায় থাকলেও আমাদের ভালোবাসা দিন দিন বেড়েই গেছে।
‘
মেডিকেলে চান্স পাওয়ার কিছুদিন পর থেকেই সাদিয়ার বাবা মা তার বিয়ের জন্য চাপ দেয়। সাদিয়া তার বাবা মাকে বুঝিয়ে তার ইনটার্নি পর্যন্ত সময় নেয়। বাবা মায়ের এক
মাত্র মেয়ে বিধায় তারা তাদের মেয়ের কথা মেনে নেয়।
‘
দেখতে দেখতে সাদিয়ার ইনটার্নি শেষে সে একটা মেডিকেলে চাকরিও পেয়ে যায়। আর এদিকে আমার এমবিএ শেষের পথে। সেই সময় সাদিয়ার পরিবার কোনোরকম ভাবে আমাদের সম্পর্কের কথা জেনে যায়। তাই তারা সাদিয়াকে না জানিয়েই এক ইঞ্জিনিয়ার ছেলের সাথে তার বিয়ে ঠিক করে।
‘
সাদিয়া বিয়ের ব্যাপারটা জানতে পরে তার বাবা মাকে অনেক বুঝায় কিন্তু তার কিছুতেই আমার সাথ তার বিয়ে দিতে রাজি নয়। আর যাই হোককোন বাবা মা চায়না তার মেয়েকে কোন বেকার ছেলের হাতে তুলে দিতে। আর মেয়ে যদি ডাক্তার হয় তাহলেতো কোন কথাই নাই।
‘
সাদিয়া হঠাৎ করেই একদিন বাড়ি থেকে পালাই আসে। তার বাবা নাকি আজ রাতেই তার বিয়ে দিবে। আমি তাকে অনেক বুঝায় কিন্তু সে আমার কোন কথায় শুনতে চাইনা। তার শুধু একটাই কথা আজ আমি যদি তাকে ফিরিয়ে দেই তাহলে তার সামনে আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবেনা। আমি জানি মেয়েটা খুব জেদি আর একটু পাগলি টাইপের সে যেটা বলবে তাই করবে।
‘
তারপরও তাকে বুঝানোর একটা শেষ চেষ্টা করলাম বললাম দেখো আমিতো এখনো কোনো চাকরি পাইনি তাই এখন যদি তোমাকে বিয়ে করি তাহলে তোমাকে খাওয়াবো কি। দেখো জাহিদ আমি এখন চাকরি করছি তাই থাকা খাওয়ার কথা তুমি চিন্তা করোনা । শেষ পর্যন্ত সাদিয়ার জেদের কাছে পরাজিত হই। আমার বাবা মাকে বলে সেই রাতেই সাদিয়াকে বিয়ে করি। সেখান থেকেই আমাদের দুইজনের সাংসারিক জিবনের শুরু। যদিও পরে সাদিয়ার বাবা মা আমাদর সম্পর্কটা মেনে নেয় একমাত্র মেয়ে বলে কথা।
‘
‘
> এই কি ভাবছ?
‘
> না কিছুনা।
‘
> ও তা অনেক হাঁটা হলো চলো বাড়ি যাই।
‘
> হুম — আচ্ছা চলো।
‘
‘ কিছুদূর যাওয়ার পর
‘
‘
> এই শুনছ।
‘
> হ্যাঁ বলো।
‘
> আর হাটতে পারছিনা পাঁয়ে ব্যাথা করছে।(কোলে উঠার ধান্দা)
‘
> এইত বাসার কাছাকাছি চলেই এসেছি আর একটু হাটতে হবে।( না বুঝার ভান করে)
‘
> এখনতো আমি পুরান হয়ে গেছি তাই এখন আমার কষ্ট হলে কি আর কারো চোখে পড়ে। এখনতো আর আমাকে ভালো লাগেনা ব্লা ব্লা ব্লা ( আমাকে শুনায় শুনায় বলতে লাগল)
‘
তাকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কোলে তুলে নিলাম।
‘
> এই কি হচ্ছে এটা নামও বলছি। (রাগ দেখিয়ে)
‘
> নামাবোনা।
‘
> কেন নামাবানা?
‘
> ভালোবাসিতো বউটাকে।
‘
> ছাই ভালোবাসো।
‘
তাই বুঝি বলেই তার ঠোটে দিলাম একটা উম্মা। সেও প্রতিদানে আমার বুকে কয়েকটা কিল ঘুষি দিয়ে আবার আমার বুকেই মুখ লুকালো।
‘
‘
এভাবেই চলছে ডাক্তার বউয়ের সাথে সংসার। যদিও বউ একটু প্যারার উপর রাখে তবে সেটা আবার ভালোবাসা দিয়ে পুষিয়ে দেয়। খুব সখেই আছি আমারা।
??পাগল জাহিদ??