রাগি জামাই পর্ব – ৭

0
4618

রাগি জামাই পর্ব – ৭

লেখা : বৃষ্টি জাহান নীলা ✍
.
.
বাসায় ঢুকেই যে এতো বড় সারপ্রাইজ পাবো তা আগে ভাবতেই পারিনি । আমার সামনে আমার আম্মু .আব্বু .ভাইয়া । ওনার আম্মু .আব্বু ও বসে আছে । আমি গিয়ে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলাম । অনেক দিন পর তাদের দেখতে পেলাম । খুব ভালো লাগছে । আম্মু আমার চোখ মুছে দিচ্ছে ।
– আমাদের তো আগে বললেই পারতি রে মা । আমরা সব মেনে নিতাম
– মানে কি ??
– তুই পূর্ণকে ভালোবাসিস আমাদের আগে বললেই হতো । এই ভাবে না পালিয়ে আমাদের বললে আমরা সুন্দর ভাবে আয়োজন করে তোদের বিয়ে দিতাম।
.
আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব । কিসব বলছে এরা । আমি কিছু বলতে যাবো এমন সময় লোকটা আমাকে টেনে উপরে নিয়ে উপরে চলে আসলো ।
.
– কি ব্যাপার আমাকে জোর করে নিয়ে আসলেন কেনো । ওদের কথা ভালো করে বুঝতেও পারলাম না । যাই আমি শুনে আসি কি হয়েছে ছাড়ুন আমাকে ।
– কোথাও যেতে হবে না ।
– আপনি তাদের কি বলেছেন বলুন।
– উহু বলবো না।
– বলুন না প্লীজ ।
– আচ্ছা বললে কি দিবে ।
– আমার কাছে তো কিছু নেই । কি বা দিবো ।
– উহু কিছু তো দিতে হবে নয়তো বলবো না ।
– আচ্ছা দিবো ।
– কি দিবে শুনি ।
– আমার বুঝি লজ্জা করে না হুহ ।
– ওরে আমার লজ্জাবতী রে । বলতে এতো লজ্জা পেলে দিবে কিভাবে ।
– আগে বলুন পরে দিয়ে দিবো ।
– আগে বলো কি দিবে পরে বলে দিবো ।
– আমি একটা আমি একটা ।
– তুমি একটা কি ।
– আমি একটা চুমু দিবো । ( মাথা নিচু করে )
– ওলে বাবা লে । কোথায় কোথায় দিবে ।
– আহ্ দিলেই তো দেখবেন । এখন বলুন কি বলেছেন ওদের ।
– বলেছি
– কি
– বলেছি । আমরা দুইজন ৪ বছর ধরে প্রেম করেছি । বাসার কেউ হয়তো মেনে নিবে না সেই ভয়ে ওদের না বলে পালিয়েছি।
– কিহহ্
– হ্যাঁ
– কুত্তা. বিলাই . সয়তান
লোকটা হাসি শুরু করেছে । আমি রাগে ওনার চুল ধরে টানছি । প্রায় পাঁচ মিনিট ওনার চুল টেনে ছিঁড়েছি ।
– আরে থামো থামো
– না থামবো না । আপনি এতো বড় মিথ্যে বললেন , মিথ্যুক একটা ।
– কিসের মিথ্যে , বিয়ের আগে প্রেম না করলেও তো বিয়ের পর করছি এখন ।
– কিসের প্রেম হ্যাঁ ( বলেই পেটে চিমটি কেটে দিলাম )
– আল্লাহ ,, দেখো নীলা এইসব দিবার কিন্তু কথা ছিলো না । যা দিবার কথা ছিলো ওটা দেও ।
– উহু দিবোনা ।
– দিবানা ?
– উহু ।
– দিবেনা তো ??
– না না না ।
– বুঝেছি আমার টা আমাকে জোর করে আদায় করে নিতে হবে ।
– হুহ ( ভেঙ্গচি দিলাম )
– ভালোই হলো আমি নিজে আদায় করে নিলে অন্য কিছুও নিতে পারবো ।
– অন্য কিছু কি ।
– ওই যে বাসর রাতের কথা মনে আছে । আমার তো লজ্জা লাগছে এখনি ।
– নাহ ( ভয় পেয়ে )
– কি না । কাছে আসো সোনা ।
– আমি দিয়ে দিচ্ছি ।। আপনাকে নিয়ে নিতে হবে না ।
– এখন যে আমার অন্য কিছু পেতে ইচ্ছে করছে ।
– কি ( কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে )
– বুঝে নেও সোনা ।
.
বলেই ওনার নাকটা আমার নাকের কাছে নিয়ে আসে । আমি তাড়াতাড়ি করে ওনার কপালে একটা চুমু দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে নিচে চলে আসলাম ।
.
– নীলা একদম দৌড়াবে না । দূর চাইলাম কি আর পাইলাম কি । কপালে না দিয়ে তো ঠোঁটে ও দিতে পারতো । আহা এই কষ্ট কই যে রাখি।
.
নিচে গিয়ে দেখি সবাই গল্প করছে । আমিও গিয়ে বসে পড়লাম ।
– আমি তো আজকেই আমার বউমাকে বাসায় নিয়ে যাবো ( পূর্ণের মা )
– সে না হয় নিবেন । আমাকেউ কিন্তু কিছু দিনের জন্য আমার মেয়েকে দিতে হবে। ( আমার আম্মু )
– উহু বিয়ান এখন কিন্তু আপনার মেয়ে নয় । এখন এটা আমার মেয়ে !
– আমার মেয়ে খুব লাকি যে এমন স্বামী আর শশুড় .শাশুড়ি পেয়েছে ।
– আপনার মেয়েও কিন্তু কম মিষ্টি নয় বিয়ান ।
.
সবাই হাসাহাসি করছে । তাই আর আমি সত্যিটা বললাম না । সবাই যখন খুশি তাহলে এটা মেনে নেওয়াই ভালো । লোকটা তো খারাপ না । আমাকেও খুব ভালোবাসে , ওনার রাগ হবে এমন কিছু না করলেই হবে । তিনিও নিচে নামলেন
.
– পূর্ণ সব গুছিয়ে নে । আজই তোদের বাসায় নিয়ে যাবো ( পূর্ণের মা )
– কিন্তু আম্মু আমার অফিস
– কিছু দিনের জন্য ছুটি নে । কিছুদিন আমাদের সাথে থেকে কিছুদিন নীলাদের বাসায় থেকে চলে আসবি । মেয়েটার কথা ভাব একবার । কতদিন ধরে নিজ বাড়িতে যেতে পারে না । হয়তো খুব কষ্ট হচ্ছে মেয়েটার ।
– আচ্ছা আমি অফিসে ফোন করে ছুটি নিয়ে নিচ্ছি ।
.
আমি তো বেশ খুশি অনেক দিন পর বাড়ি যাবো । ওনি অফিস থেকে ৭ দিনের ছুটি নিয়ে নিলো । আমরা সবাই রাতে ডিনার করে বেরিয়ে পড়বো ঢাকার উদ্দেশ্যে । এখন সন্ধ্যা আম্মু আর আমার শাশুড়ি মা বসে বসে টিভি দেখছে । আমি রুমে বসে বসে পা নাচানাচি করছি । এমন সময় রুমে লোকটার আগমন ‌।
.

– এইযে মেডাম খুশিতে যে পা দুলাচ্ছেন । সব ব্যাগে গুছাবে কে হুম?
– কেনো সব তো আপনিই গুছিয়ে নিবেন ।
– হ্যাঁ পাইছো তো একটা বিনে পয়সার চাকর । কাজ করাও কিন্তু কোনো বকসিস দেও না ।
– বউয়ের কাজ করে দিলে চাকর হয়ে যায় বুঝি ।
– বউয়ের কাজ করলে চাকর হয়না । শালীর কাজ করলে হয় । তুমি তো আমার শালী তাই না ।
– কেনো দেও আমায় গালী ।
– আল্লাহ ,, আমাকে একটা শালী দিলে পারতে । শালীটা দুলাভাইয়ের কষ্ট বুঝতো । মাঝে মাঝে আদর ভালোবাসা দিয়ে ভরে দিতো । আমি ও শালীকে চোখে চোখে রাখতাম ।
– লুচ্চা কোথাকার । বউয়ের সেবা করতে পারে না আবার শালী শালী করে মরে ।
– শালী মানেই তো মনের অর্ধেক জায়গা তার । আহা
– আপনার মন আমি টেনে ছিঁড়ে নিবো । এর পর দেখবো কত মানুষের জায়গা হয় এতে ।
– আচ্ছা তোমার ২/৩ টা সুন্দর সুন্দর ছোট বোন থাকলে আমরা কত মজা করতাম তাই না ।
– কেনো আমি বুঝি সুন্দর নই । আমাকে পছন্দ হয় না ।
– হয় হয় । কিন্তু বউ আমার মনের কথা বুঝে না ।
– হুহ ( ভেঙ্গচি দিলাম )
– হ্যাঁ শুধু এটাই করতে পারবে আর কিছুই পারবে না ।
– তাতে আপনার কি ।
– আমার বউ ।
– বউয়ের জন্য তো এই টুকু কাজ করতেই পারেন আপনি ।
– না পারিনা
– কেমন জামাইরে বাবা ।
– খুবই সহজ সরল জামাই । যেমনে নাচাবা তেমনিই নাচবে ।
– হুহ ঢং । রুমে এসে যেনো দেখি সব কি ব্যাগে গুছানো ।
– আহ্ মহারানীর হুকুম তো মানতেই হবে।
.
আমি আবার নাচতে নাচতে আম্মুদের পাশে গিয়ে বসলাম । আজ যেনো খুশির সীমা নেই আমার । আমার আর ওনার পরিবারও আমাদের দেখে খুব খুশি । ওনি আমাদের দুইজনের জিনিস পত্র ব্যাগে ভরে নিলেন । একটা লাল রঙের পাঞ্জাবি পরে নিলেন । আর আমি লাল শাড়ি । ওনাকে বেশ সুন্দর লাগছে । দুইজনকে নতুন জামাই বউ লাগছে । আমরা সবাই তৈরি হয়ে বেরিয়ে পরলাম । বাইরের একটি রেস্টুরেন্টে ডিনার করে রওনা দিলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে ।
.
.
. চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে