রাগি জামাই পর্ব- ৬
লেখা : বৃষ্টি জাহান নীলা ✍
.
.
শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হলো । মাথায় চিনচিন ব্যাথা করছে । আস্তে করে চোখ মেলে তাকালাম । একি আমি কোথায় ?
পাশে তাকিয়ে দেখি লোকটা আমার হাতের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে । আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি । কি হয়েছে আমার?? আমার নাড়াচাড়া লোকটা বুঝে যায় । তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে বসে । চোখ দুটো লাল হয়ে আছে মনে হয় ঘুমায় নি সারারাত ।
– এখন কেমন লাগছে তোমার ?
– হুম ভালো । কিন্তু আমার কি হয়েছিলো
– সকালে ওঠে দেখি তুমি জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে পরে আছো । রাতের জন্য আমি অনেক অনেক সরি । আর কখনো এমন হবে না সোনা । আমার ভুল হয়ে গেছে
– আমি তো বাজে মেয়ে তাই এমন ব্যবহার পেতে হয় । এতে আপনার তো কোনো দোষ নেই।
– এমন বলে না লক্ষ্মীটি । তুমি খুব ভালো , খুব মিষ্টি, আমার আদরের বউ ।
– হ্যাঁ খুবই আদরের, খুব ভালো জানি আমি ।
– আচ্ছা তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে ।
– কি সারপ্রাইজ ?
– বাসায় ফিরলেই দেখতে পারবে ।
– আমি এখনি যাবো বাসায় ।
– কি ব্যাপার আগে আমার কাছ থেকে পালাতে চাইতে আর এখন আমার কাছে তাড়াতাড়ি আসতে চাইছো । ভালোবাসা হয়ে গেছে মনে হয় বাবুটার ।
– আমাকে একটু একা থাকতে দিন প্লীজ ।
– আচ্ছা তুমি রেস্ট নেও আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসছি ।
বলেই চলে গেলো ।
কিছু একটা ভাবতে লাগলাম এমন সময় স্বর্ণার আগমন ।
– তোমার তো ভাগ্য খুব ভালো ভাবি । আমার ভাইযে বউ পাগলা হয়ে গেছে ।
– মানে ।
– তোমার তো দুইদিন কোনো জ্ঞান ছিলো না । এই দুইদিন ধরে ভাইয়া কিছু খেলো না । একটু ঘুমায়ওনি । শুধু তোমার পাশে বসে ছিলো । কখন তোমার জ্ঞান ফিরে এই আশায় । ভাই আমার প্রেমে পাগল হয়ে গেছে
বলেই মিটিমিটি হাসছে স্বর্ণা ।
– ভাবি ,
– বলো
– পাশের কেবিনে কে ভর্তি আছে জানো ?
– কে
– শাউন ।
– এটা আবার হাসপাতালে ভর্তি কেনো ।
– দেখলেই বুঝবে ।
– আচ্ছা চলো
– কোথায় ?
– শাউনের কাছে ।
– তোমার শরীর এখন কেমন ?? হাঁটতে পারবে তো ?
– হ্যাঁ এখন তো বেশ ভালো লাগছে । হাঁটতে পারবো চলো
– আস্তে আস্তে করে পাশের কেবিনে গেলাম ।
একি শাউনের এ অবস্থা কিভাবে হলো । একটা পা উপরে ঝুলানো । সারা গায়ে ব্যান্ডেজ । আমি গিয়ে পাশে বসতেই শাউন চোখ খুললো । আমাকে দেখে ভয়ে কাঁপতে লাগলো । আমি মাথায় হাত দিতেই বলে ওঠলো ।
– তুই তুই আমাকে ধরিস না আম্মা ।
– আগে জানলে আমি কখনো তোর দিকে তাকিয়ে কথাও বলতাম না । তুই আমার আম্মা আব্বা দাদী নানী সব । মাফ কইরা দে খালাম্মা
– কিরে মাথায় প্রবলেম হইছে নাকি তোর । কি বলোস এই সব আবলতাবল
– আমার থেকে দূরে থাক বইনে । নাহলে তোর জামাই আমাকে জীবিত কবর দিবে ।
.
কথাটা শুনতেই মাথায় হাত চলে গেলো আমার
– হায় আল্লাহ এই লোকটাকে যে কি করতে ইচ্ছে করে! কোনো কিছুর হুসজ্ঞান নেই । রাগ হলে কি করে না করে নিজেও জানে না।
.
অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি বেডে । লোকটা আসলো ।
– চলো সুইটহার্ট। তোমার যাবার সময় হয়ে গেছে ।
– হুম চলেন ।
– আরে আরে হেঁটে যাবে নাকি ।
– হ্যাঁ , নয়তো কি হাসপাতালের ভেতরে গাড়ি এনে গাড়ি করে যাবো নাকি ।
– উহু আমি আছি কি করতে তাহলে ।
বলেই কোলে তুলে নিলো ।
নিয়ে গাড়িতে বসালো । আমার তো শাউনের অবস্থা দেখে মাথায় আগুন জ্বলছে । আমি বড় বড় করে তাকিয়ে আছি লোকটার দিকে ।
– মা গো মা এমন ভাবে তাকিয়ে আছো যেনো আমাকে পানি দিয়ে গিলে খাবে ।
– হ্যাঁ খাবো ।
– বুঝতে পারছি তোমার খুব খিদে পেয়েছে । আমাকে খেয়ো না প্লীজ , আমি তোমাকে ভালো ভালো খাবার রান্না করে খাওয়াবো জান্টি
– আজেবাজে কথা বলবেন না । আগে বলুন শাউনের এই অবস্থা কে করেছে ।
– তোমার স্বামী ।
– আচ্ছা আপনি এটা কেনো করলেন ।
– আল্লাহ,, তুমি মেনে নিয়েছো আমি তোমার স্বামী ।
– না মানিনা , আর কখনো মানবো না , আগে বলুন আমার স্বামী এটা কেনো করলো ।
– তোমার স্বামী এটা মানতে পারেনি ।
– কোনটা ।
– ঐ যে তার মিষ্টি বউটাকে কেউ জড়িয়ে ধরবে এটা ।
– শাউন আমার বেষ্টফ্রেন্ড
– ফ্রেন্ড বলে ঘষাঘষি করতে হবে । দূর থেকে কথা বললে হয় না ( রেগে ) ওর ভাগ্য ভালো বলে হালকা মেরে আবার হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে এসেছি । দ্বিতীয়বার কেউ এমন করলে মেরেই ফেলবো । আমার বউকে স্পর্শ করা হুম ভালো করে মজা বুঝিয়ে দিবো ।
– ভালো করে বুঝিয়ে বললেই হতো ।
– অতশত বুঝাতে পারি না আমি ।
– হ্যাঁ শুধু মারামারি করতে পারেন ।
– হ্যাঁ তা বেশ ভালো পারি ।
– আহ্ , ফাঁক দিয়ে পরেছি আমি বিপদে ।
– কিছু বললে ?
– কই না তো।
– আর তুমি ভালো করে শুনে রাখো । তোমার ভাই আব্বু কাছের আত্মীয় স্বজনরা ছাড়া যেনো অন্য কেউ জড়িয়ে ধরতে না পারে । ধরলে খুব খারাপ অবস্থা হবে ।
– কার ( ঢুক গিলে )
– তোমার আর যে ধরবে তার । তোমাকে ধরবো আমি ভালোবাসবো আমি আদর করবো আমি । মাঝে মাঝে রাগ ও দেখাবো আমি । অন্য কেউ না
– হুহ ( ভেঙ্গচি দিলাম )
– ভেঙ্গচি দিলা কেন ?
– আমার ইচ্ছে ।
– উহু যা হবে সব আমার ইচ্ছেতে । তোমার ইচ্ছেতে কিছু হবে না।
– তাই
– হ্যাঁ । তুমি এখনো আমার কাছে আছো । কারন এটা আমার ইচ্ছে
– যদি আমাকে চুরি করে নেয় কেউ ।
– পারবে না । তোমাকে কেউ নিতে পারবে না আমার থেকে । তুমি যে আমার নিঃশ্বাস
তোমায় ছাড়া বাঁচি কি করে বলো ।
– খুব ভালোবাসেন ?
– ভালোবাসি কি না জানিনা । কিন্তু তোমাকে আমার প্রয়োজন খুব প্রয়োজন ঠিক অক্সিজেনের মতো তুমি ছাড়া আমি অচল । তুমি নেই আমি নেই , তুমি আছো আমিও আছি ।
– নিরব হয়ে দেখছি । এই চোখে শুরু আমার জন্য ভালোবাসা নয় । আমাকে হাড়ানোর ভয় ও আছে । আমাকে অন্য কারো সাথে দেখলে তার রাগ হয় খুব । এটাই হয়তো ভালোবাসা । আমাকে অন্য কারো হতে দিতে চায় না সে । আমি কি শুধুই তার
– এই
–
– এই এই এই ।
– বলুন (আমি ভাবনার জগৎ থেকে চলে আসলাম )
– তুমি আমাকে ভালোবাসতে পারো না কেনো । আমার দোষটা কোথায় ।
– আমাকে জোর করে আটকে বিয়ে করেছেন । আবার দোষ খুজেন আপনি ।
– অন্য ছেলে হলে রেপ করে ছেড়ে দিতো । আমি তোমাকে ভালবাসি বলে বিয়ে করে পরে স্পর্শ করেছি ।
– একই তো কথা ।
– তোমাকে জোর করে স্পর্শ করার কোনো ইচ্ছে আমার ছিলো না । আমার একটা বাবু চাই ঠিক তোমার মতো । সারা বাড়ি নাচানাচি করবে । আমাকে আব্বু বলবে তোমাকে আম্মু বলবে । বাচ্চাটা হয়ে গেলে সব তোমার ইচ্ছেতে হবে । তুমি যা বলবে তাই । তুমি যদি আমাকে ফ্লোরে ঘুমাতে বলো আমি তাই করবো প্রমিশ । খুব ভালোবাসি তোমায় । এইসব তোমার আর আমার জন্যই করছি
– লোকটার চোখে কত স্বপ্ন । সব কিছুই ঠিক আছে , শুধু রাগটা বেশি আমার রাগি জামাই ।
মিটিমিটি হাসতে লাগলাম আমি
ওনার কথা শুনতে শুনতে বাড়ির সামনে পৌঁছে গেলাম । বাড়িতে ঢুকতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম।
.
.
. চলবে