রাগি জামাই পর্ব – ৪

0
4709

রাগি জামাই পর্ব – ৪
লেখা : বৃষ্টি জাহান নীলা✍
.
.
বাইরে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ হচ্ছে। মনে হয় ভোর হয়ে গেছে । আমি যে উঠে ওয়াসরুমে যেতে পারছি না । পা বেশ ফুলে আছে ব্যাথায় একটু ঘুম ও নেই চোখে । নাক কান ঠোঁট মরিচের মতো জ্বলছে সাথে ব্যাথা তো আছেই । বাইরে আস্তে আস্তে আলো ফুটতে থাকে এই আলো জানলার পর্দা দিয়ে রুমে ঢুকছে । দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছি। চোখের পানি শুকিয়ে গেছে গালে সারা মুখে । এখন আর চোখ থেকে পানি পড়ছে না । ৮ টা বেজে গেছে । আমি খেয়াল করলাম রাতে আমাকে ফুলদানি দিয়ে পায়ে আঘাত করেছে । ফুলদানি টা মেঝেতে ভেঙ্গে পড়ে আছে । রাতে লাইট অফ থাকায় বুঝতে পারিনি কি দিয়ে আঘাত করেছিল। হঠাৎ লোকটা নাড়াচাড়া করে ওঠে । চোখ খুলে পাশে তাকালো । আমাকে বিছানায় পাশে না পেয়ে তাড়াতাড়ি ওঠে বসলো । সারা রুমে চোখ বুলাতে থাকে । আমাকে মেজের এককোণে অসহায়ের মতো গুটিয়ে বসে থাকতে দেখলো । বিছানা থেকে নেমে আমার কাছে আসছে আমি চুপচাপ বসে আছি আগের মতো । কাছে এসে বসলো , লোকটার সারাগায়ে নখের আঁচড় রক্তবর্ণ ধারণ করে আছে । অনেক যায়গায় কেটে গেছে । বুঝতে বাকী রইল না এইগুলা আমার নখের আঁচড় ।
– এখনো ঘুমাওনি তুমি ( মিষ্টি হাসি দিয়ে )
– ………….

– না ঘুমালে যে সারাদিন মাথা ব্যাথা করবে । চলো গোসল করে খাওয়া দাওয়া করে একটা ঘুম দিবে ( মাথায় হাত বুলাতে লাগলো )
– ………….( কিছু না বলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে দিচ্ছি)
– বাবুটার কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমাকে কি বলা যাবে ? বাবুটা কান্না করলে আমারো যে খুব কষ্ট হয়।
ওনি খেয়াল করলেন আমার পা ফুলে বালিশ হয়ে আছে । মুখ ও ফুলে গেছে ঠোঁট তো চেনাই যাচ্ছেনা। করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
– কালকের জন্য সরি সোনা । তুমি আমার কাছ থেকে পালানোর চেষ্টা করোনা প্লীজ আমি সহ্য করতে পারি না । পাগল হয়ে যাই ,মাথা ঠিক থাকে না । তখন কি করি না করি তার ঠিক নেই । অনেক ভালোবাসি
– এটা ভালোবাসা??? এটা ভালোবাসা হলে ধর্ষণকে মানুষ কি বলবে
– তোমার আমার সম্পর্ক স্বামী স্ত্রীর । তোমার সাথে আমার কিছু হলে সেটা প্রবিত্র ।এটা ধর্ষন নয় , আমি শুধু তোমাকে সারাজীবন কাছে রাখবো বলে এইসব করছি । ভুল বুঝো না আমায়
– …………….. ‌
– তুমি প্রেগন্যান্ট হয়ে যাও । এরপর থেকে আমি আর তোমার সাথে এমন আচরন করবো না । আমাদের একটা বাবু হয়ে গেলে তুমি আমাকে ছাড়তে পারবে না । বাবুর জন্য হলেও আমার সাথে থেকে যাবে তোমার বাড়ির লোকজন ও তোমাকে জোর করে নিতে পারবে না। আমি যে তোমায় কখনো হারাতে চাই না । তোমাকে সারাজীবন কাছে রাখতে এই কষ্ট গুলো দিচ্ছি বাবুন ।
এক নিঃশ্বাসে যেনো কথা গুলো বলে ফেললো লোকটা। আমি তাকিয়ে আছি তার শরীরের ক্ষতের দিকে । দুই তিন মিনিট পর নিরবতা ভেঙ্গে লোকটা আমাকে কোলে তুলে নিয়ে গেলো গোসল করতে । আয়নার তাকালাম একবার। মুখ ফুলে যাওয়ায় চেনাই যাচ্ছেনা। কিন্তু লোকটার কোনো নজরই নেই নিজের দিকে । যেনো এই রকম রক্তাক্ত হবারই ছিলো । লোকটা খুব যত্ন করে আমায় গোসল করিয়ে দিয়ে কোলে করে রুমে দিয়ে নিজেও করে নিলো । তার চোখে এখন আর কোনো রাগ নেই । সেই মায়া যেই মায়াবী চোখে তাকিয়ে হারিয়ে যেতে চাইবে সব মেয়েই । আমি রুমে বসে বসে চুল শুকাচ্ছি । হঠাৎ লোকটা একটা তোয়ালে পড়ে অন্য আরেকটি তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ওয়াসরুম থেকে বের হলো । এই প্রথম লোকটার দিকে তাকিয়ে ভালো করে দেখলাম। দেখতে তো বেশ আগে থেকেই হিরো । ভেজা চুলে নাকি মেয়েদের দাড়ুন লাগে এখন তো দেখছি ছেলেদেরও কম কিউট লাগে না । ভাবতে ভাবতেই চোখ পড়লো লোকটার বুকের দিকে । লোমে ভরা ছিলো , ইচ্ছে করছে গিয়ে একটা চিমটি কেটে দেই হুহ । আমি বার বার আড় চোখে তাকাই লোকটার দিকে । সে এখনো ব্যাপারটা খেয়াল করেনি !
আল্লাহ নীলু তুই দেখি লুচু মেয়ে হয়ে গেছিস ছিঃ ছিঃ কি লজ্জা । আমি মনে মনে হাসতে থাকলাম । রাতের কথা আমার কিছুই মাথায় নেই । এখন কি ঘটছে আমি তো এই ভাবনায়ই মরি।
কিছুক্ষণ পর আমার সামনে কমোরে হাত দিয়ে দাঁড়ালো লোকটা । আমি তো ভয়ে শেষ না জানি আবার কি করলাম। ইয়া আল্লাহ এইবারের মতন বাঁচিয়ে দিয়ো ।
– এই যে পিচ্চি এতো বেলা হলো এখনো কি খিদে পায়নি আপনার ?
– খিদে তো সেই কখনই পেয়েছে ( মন খারাপ করে )
– ফ্রিজে তো খাবার রাখা ছিলো ।
– আমার পা ।


 

– ও সরি সরি । দাঁড়াও আমি খাবার নিয়ে আসছি ।
– না আমি নিচে যাবো ।
– তোমার পা ?
– পায়ে হেঁটে যাবো কেনো । কোলে করে নিয়ে যান !
– বাব্বাহ আমার বউ তো আমার থেকেও বেশী রোমান্টিক ।
কথাটা বলতেই আমি একটা ভেঙ্গচি কেটে দিলাম ।
লোকটা আমাকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছে । আমি তার শরীরের গন্ধ নিচ্ছি । মানুষরে গায়ে একটা আলাদা গন্ধ থাকে । আমি এটা উপভোগ করতে লাগলাম ‌ । আমাকে নিয়ে টেবিলের সামনে বসালো , অনেক খাবার সাজানো আছে টেবিলে । ওনি নাকি নিজের হাতে আমার জন্য রান্না করেছেন । নাহ লোকটা অতোটা খারাপ না ‌‌‌ । শুধু রাগ হলে জানোয়ার হয়ে যায় । এটা ছাড়া সব ঠিক আছে ‌ । ওনি নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছেন আমাকে ‌ । আর ছোটবেলার গল্প জুড়ে দিলেন । আমিও মন দিয়ে শুনছি আর ওনার ছোটবেলার দুষ্টু দুষ্টু কান্ড শুনে দুইজন হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছি । লোকটাকে এখন পুরোপুরি বাচ্চা বাচ্চা লাগছে । যেনো খুব নিষ্পাপ। নতুন নতুন ভালোলাগা তৈরি হচ্ছে । কিন্তু আমি বুঝতেই পারছিলাম না খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম । বাসায় কয়েকজন কাজের জন্য বয়স্ক মহিলা আছে । ওরা গ্ৰামের, খুব মিশুক । ওদের সাথে গল্প করতে খুব ভালোলাগে আমার । লোকটার কি জানি একটা কাজ পড়ে যায় আসতে নাকি সন্ধ্যা হবে । সবাইকে বলে যায় আমার খেয়াল রাখতে । আমি সারাদিন বাড়িটা ভালো করে দেখলাম । বেশ বড়সড় একটা বাড়ি । এটা নাকি আমার শশুড় আমার স্বামীর জন্য বানিয়েছেন । লোকটা আর আগের মতো নেই । আগে বখাটে ছিলো ‌ । দেখলেই মনে হতো লোকটার কি বাড়ি ঘর নেই এইভাবে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। এখন চাকরি করে , নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে । বেশ তো ,
সন্ধ্যা সাতটার দিকে তিনি বাড়ি ফিরলেন। আমি বসে বসে পা নাচিয়ে ঐ আন্টিদের সাথে টিভি দেখছি । আমাকে দেখে মনেই হচ্ছে না কেউ আমাকে এইখানে আটকে রেখেছে । ওনার হাতে বড় বড় দুইটা টেডি । সাথে অনেক গুলা চকলেট আর আইসক্রিম । এই গুলো দেখে আমার মুখে হাসি ফোটে কিন্তু কাউকে বুঝতে দেইনি। একটা আইস্ক্রিম আর কতগুলো চকলেট আমার কাছে রেখে বাকি গুলো ফ্রিজে রেখে দিলাম । একসাথে ডিনার করে ওনার আগেই চুপচাপ রুমে গেলাম শুতে । আমি চোখ বন্ধ করে আছি যেনো ওনি বুঝতে পারে আমি ঘুমিয়ে গেছি । কিছুক্ষণ পর তিনি এসে পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে একবার বললো ,” খুব ভালোবাসি বউটাকে ” কিন্তু বউটা কেনো যে বুঝে না । এমন বাচ্চা বাচ্চা বউ নিয়ে পড়েছি বিপদে । হে আল্লাহ রক্ষা করো ।
তারপর একপাশে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমিও মিটিমিটি হাসছি । অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেও জানিনা
.
.
.
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে