রাগি জামাই পর্ব – ৩

0
5516

রাগি জামাই পর্ব – ৩
লেখা : বৃষ্টি জাহান নীলা✍
.
.
চোখ গুলো আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে বসলাম আর ভাবতে লাগলাম আজকের ঝড়ের নাম কি দেওয়া যায় । এমন রাগী রাগী মুখ দেখে আমার তো হিসু পেয়ে গেছে । ও নো এখন কি করি এটা তো বলাও যাবেনা পরিবেশ খুব গরম এখন । প্রায় পাঁচ মিনিট পর নিরবতা ভেঙ্গে লোকটা আমাকে ৪/৫ টা থাপ্পড় দিলো ।
– লুকুচুরি খেলা খুব মজার তাই না ?
– ……..

– আরো কিছু খেলতে মনে চাইলে বলো । দুইজনে খেলি
– আমি কে ?
– কানের নিচে আরো দুইটা দিলে মনে পড়ে যাবে তুমি কে ।
– আচ্ছা আচ্ছা ( এখন চুপচাপ থাকাই ভালো ভাবাগো )
– নিজেকে খুব চালাক ভাবো তাই না। তুমি কি ভেবেছিলে তুমি আমার থেকে পালিয়ে গেছো । উহু আমি না চাইলে তুমি এই বাসা থেকেই বের হতে পারবে না । আমি শুধু একটু গেইম খেলেছি তোমার সাথে । আমি জিতে গেলাম তুমি হেরে গেলে । এখন তো সারাজীবন তোমায় আমার সাথেই থাকতে হবে সুইটহার্ট ভালোবাসি তোমায় খুব বেশি ।
– জোর করে কখনো ভালোবাসা পাওয়া যায় না ।
– চাইলেই পাওয়া যায় ।

– আপনি আমাকে কষ্ট দিয়ে নিজে সুখী হতে পারবেন?
– তুমি আমাকে কষ্ট দিয়ে সুখী হতে পারলে আমি কেনো পারবো না ।
– আপনার কি আমার প্রতি কোনো মায়া নেই ।
– সবাই নিজে সুখী হতে চায় । তুমিও চাও আমিও চাই । তাই আমি নিজেকে সুখী করার চেষ্টা করছি । আর মায়া তো অনেক অসহায় মানুষের প্রতি আমার আছে । কিন্তু তোমার জন্য যা আছে সেটা ভালোবাসা ।
– আমি যে আপনাকে ভালোবাসি না।
– আমি তো বাসি খুব বেশি খুব খুব । তাই বাবুন আমার থেকে দূরে যাবার কথা ভুলেও মাথায় এনো না । গালটা ফুলে গেছে । আর কখনো এমন করো না লক্ষ্মীটি । রাগ হলে য নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না গো বাউ আমি যে তোমার রাগী জামাই
বলেই লোকটা মিটমিটিয়ে হেসে হনহনিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে । এইদিকে আমি দুগালে দুহাত দিয়ে বসে আছি অভাগীর মতো । আহ্ কত বড় কপাল সকাল সন্ধ্যা থাপ্রানি খেতে হচ্ছে । অনেক রাত হয়ে গেছে । কিছু একটা খেতে হবে , পেটের ভেতর যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে থাপ্পড়ে তো আর পেট ভরে না । আস্তে আস্তে করে নিচে নামতেই দেখলাম লোকটা খাবার নিয়ে উপরে আসছে । লোকটা যে কিভাবে বুঝে আমার কখন কি চাই ওফ ।
আমাকে দেখেই হাত ধরে রুমে নিয়ে আসলো । নিজের হাতে খাইয়ে দিতে লাগলো ঠিক আম্মুর মতো । কেমন জেনো মুখ ভরা মায়া আর মায়া । না না নীলু তোর এইসব ভাবলে চলবে না ‌ । ভুলে যাবি না এই মায়াবী চেহারার পিছনে একটা জানোয়ারের রূপ আছে । হঠাৎ করেই রাগ হতে লাগলো ।
– এখান থেকে চলে যান আমার আর খিদে নেই ।
– ওলে আমার আদুলিরে । মনে হয় আবার রাগ হয়ে গেছে । এই তুমি রাগ কই রাখো বলো তো ।
– পেটের ভেতর ( রেগে )
– হায় আল্লাহ একি সর্বনাশ হলো আমার । এই পেটে আমার বাবু হাঁটাহাঁটি করবে । এর মধ্যে রাগ থাকলে সেও তার মায়ের মতো রাগী হবে । তখন আমার একূল ওকূল কোনো কূলই থাকবে না । বাবুটা ঠিক আমার মতো হতে হবে বুঝলে যেনো লোকজন দেখলেই বলে” বাপকা ব্যাটা”

কথা গুলো দাঁতে দাঁত চেপে শুনছি আমি । অনেকক্ষণ একা একা বকবক করে নিচে গিয়ে আবার রুমে আসলো ।
– এই বউ
-…..
– কি গো
– ……. ‌
– ওই শুনো না
– কি হইছেটা কি ?
– আমার না খুব প্রেম প্রেম পাচ্ছে ( লজ্জায় লাল হয়ে )
– এখন কি আমি নাচবো ?
– আহ্হা এমন করো ক্যান ।
– তো কি করবো ?
দাঁড়াও বলে আলমারি থেকে একটা নীল রঙের শাড়ি নিয়ে আসছে ।
– নেও এটা পরে আসো তো ।
– পারবনা !
– কি বললে ( রেগে )
– না মানে পড়তে পারি না ।
– চলো আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।
– না না একাই পড়তে পারবো ।


রাত তখন প্রায় তিনটে হবে আমি শাড়ি পরে রুমে এলাম । লোকটা তো দেখি লুচ্চা লুচ্চা চোখে দেখছে আমাকে । ওফ অসহ্য
আস্তে আস্তে কাছে আসতে থাকে । আমি পিছনে যেতে যেতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় । মনে মনে হায় আল্লাহ হায় আল্লাহ করতে লাগলাম । লোকটা একটু নিচে ঝুঁকে নাকে নাক লাগিয়ে বললো খেলা শুরু করা যাক । আমি ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলাম । ভয়ে ঘামতে শুরু করলাম ।
– না না আমি কিছু খেলবো না ‌। আমি ঘুমাবো । আমাকে একা ঘুমাতে দিন ।
– সুইটহার্ট প্রথমত এই খেলা তোমার ইচ্ছে নয় আমার ইচ্ছেতে হবে । আর দ্বিতীয়ত তোমাকে বিয়ে করেছি একা ঘুমানোর জন্য নয় । এখন আসো আমার কাছে আমার আদুলি ।
– আপনার মতো জানোয়ারের সাথে আমি এক বিছানায় কখনো ঘুমাবো না ।
– তোমার কি ভালো কথায় কখনো কাজ হয়না ??? আমার খারাপ রূপটা বের করতে বাধ্য করো না সোনা । চুপচাপ এখানে চলে আসো । ( রেগে )
– যা করার করে নিন । আমি চলে যাচ্ছি । গুড নাইট
বলেই ঘুরে দাড়িয়েছি অন্য রুমে যাবো বলে । জানোয়ারটা পিছন থেকে চুলে ধরেছে ।
– আহ্ কি করছেন এইসব। আমার লাগছে । ছাড়ুন
– ভালো কথায় তোমার কাজ হয়না তাই না । আজকের কথা সারাজীবন মনে রাখবে সোনা । সবসময় জানোয়ার বলো । আজ না হয় জানোয়ারের আচরণটা দেখবে।
চোখ গুলো লাল টুকটুকে হয়ে গেছে। এই চোখে কোনো মায়া নেই । ভয়ানক সেই রূপ ‌ । বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিলো । আমি বার বার দরজার দিকে দৌড়ে যাচ্ছিলাম একটা সময় আমার পায়ে একটা কিছু দিয়ে বেশ জোরে আঘাত করে । আমি আর্তনাদে চিৎকার করে উঠি । কিন্তু এই চিৎকার শুনবার কেউ নেই ।
এখন আর দৌড়াতে পারছি না ।
হ্যাঁ এটাই মানুষ রূপি জানোয়ার। যে আমাকে ভোগ করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে । তার প্রতিটা চুমু যেনো কামরে পরিনত হচ্ছে রক্তের দাগ পড়ে যাচ্ছে। প্রতিটি চুমুতে আমি ব্যাথায় চিৎকার করে উঠি । কিন্তু লোকটার কানে যেনো কিছুই প্রবেশ করছে না । সে যেনো মাতাল হয়ে পরেছে । নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে । আজানের ধ্বনি শুনে সে ছেড়ে দেয় আমাকে । ঘুমিয়ে পড়ো আদুলি বলে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় লোকটা । আমি রুমের এক কোণে গিয়ে ব্যাথায় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে থাকি । এই অত্যাচার কত দিন চলবে আল্লাহ্ই জানে ।
.
.
.
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে