রাগি জামাই পর্ব- ২
লেখা : বৃষ্টি জাহান নীলা✍
.
.
নিজেকে তো বউ বউ লাগছে । কিন্তু জামাই তো আস্তো একটা জানোয়ার। ওহো জামাই বললে ভুল হবে জানোয়ারটা একজন ধর্ষক , না জানি কত মেয়ের সাথে এমন আচরন করছে । কত মেয়ের জীবন নষ্ট করছে ওফফ্ ভাবতেই গা শিউরে ওঠে । কিছু বললেই যেভাবে থাপ্রায় মনে হয় আগে মানুষের বাড়ি বাড়ি ঢোল বাজাতো । আজব মানুষ ঢোল আর মানুষের তফাৎ বুঝে না । আর যাই হোক এর সাথে আর একদিনও থাকা যাবে না । পালাতে হবে যেভাবেই হোক । মানুষ চেষ্টা করলে সবই পারে । সফল হতে না পারলে সেটা অন্য ব্যাপার ।
একটা প্লেল কর নীলা নয়তো এই সয়তানটার মাইর খেতে খেতে জীবন শেষ করবি । সয়তানটা গেলো কই দেখতে হবে। না বাড়িতে তো নেই । আসলেই প্লেন অনুযায়ী কাজ করতে হবে সয়তান আসার অপেক্ষা করি । গালে হাত দিয়ে বসে আছি , বড়রা বলতো গালে হাত দিলে জামাই মরে যায় তাই আমি সেই চেষ্টায় আছি যদি কাজে দেয় । প্রায় ৪০/৫০ মিনিট পর আসলো সে । যা করার এখনি করতে হবে ।
– ও আম্মা গো
– আরে সোনা আম্মু বাসায় । এতো তাড়াহুড়ো করলে কি চলে । ওদের না হয় কয় দিন পর জানাবো বিয়ের কথাটা ।
– আরে আমি কি আপনার আম্মুকে ডাকছি নাকি । আমার শরীর খারাপ লাগছে তাই কষ্টে আম্মাকে ডাকছি হু ।
– তা কেমন খারাপ শুনি
– আমার মাথা ঘুরছে আর বমি বমি লাগছে হাঁটতেই পারছিনা ।
– বাহ্ একদিনেই আমি বাবা হতে চললাম। বলতে হবে মাইরি আমার পাওয়ার আছে।
– কে বাবা হবে কিসের বাবা হবে?
– আমি বাবা হবো তোমার বাচ্চার । বেশ আনন্দ লাগছে আমার। দাঁড়াও মিষ্টি নিয়ে আসছি
– আরে থামেন তো । আমার আবার কিসের বাচ্চা ।
– মানুষের ।
– দূর কিসব আজেবাজে কথা বলছেন।
– আরে আজেবাজে না । এইসব প্রেগন্যান্সির লক্ষণ ।
– আচ্ছা আচ্ছা । তাহলে তো আমাদের সিওর হওয়ার জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে হয় তাই না ?
– তা তো অবশ্যই । কিন্তু তুমি তো হাঁটতেই পারছো না , কিভাবে যাবে ।
– উহু আমরা তো হেঁটে যাবো না । গাড়ি করে যাবো ।
– হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক বলেছো । আচ্ছা বিকেলে তৈরি থেকো । ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো
– আচ্ছা ।
বলদ এতো তাড়াতাড়ি কেউ প্রেগন্যান্ট হয়না এটাও জানে না ( মনে মনে খুশি হয়ে বললাম)
বিকেল ৪.০০ টায় লোকটা আমাকে নিতে আসছে ।
– তুমি রেডি?
– হ্যাঁ চলেন ।
– আরে আরে তুমি হেঁটে কোথায় যাও ।
– কেনো ? নিচে যাচ্ছি
– তোমাকে কোথাও যেতে হবে না
– মানে ?
– চলো । বোকা মেয়ে হাঁটতে পারে না আবার হাঁটতে আসছে । আমি আছি কিসের জন্য হুম ?
বলেই আমাকে কোলে তুলে নিলো । কোলে করেই গাড়িতে নিয়ে বসালো ,রওনা দিলাম । লোকটা আগে থেকেই আমাকে বলে রেখেছে আমি যেনো রাস্তায় চিল্লাচিল্লি না করি । করলে আমাকে পাবনায় রুগী বানিয়ে দিবে মানে পাগল । আমি ও ভালো মেয়ের মতো চুপচাপ বসে আছি । সুজোগ বুঝে কূপ দিতে হবে , আমি মনের সুখে গান গাইছি । সয়তানটা আড় চোখে তাকায় আমার দিকে । যেতে যেতে দেখলাম বেশ খানিকটা দূরে একটা ফুসকাওয়ালা । সয়তানটা জানে ফুসকা আমার খুব পছন্দ তাই সে গাড়ি থামালো । আর বললো আমি যেনো গাড়ি থেকে নামার দুঃসাহস না করি । আমিও ভালো মেয়ের মতো মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বললাম । সয়তানটা তো আর জানে না আমার মাথায় কি চলে । সে চলে যাচ্ছে ফুসকা আনতে । গাড়ির লক খোলা, এই সুযোগ। আমাকে পালাতে হবে । গাড়ি থেকে নেমে অন্যপাশ দিয়ে দিলাম দৌড় । সয়তানটা দেখতে পায়নি । দৌড়াতে দৌড়াতে মাগরিবের আজান শুনতে পাই । একটু দাঁড়ালাম। আমি কোথায় কিছুই বুঝতে পারছি না ।ওফফ্ বাসার কারো ফোন নাম্বার মনে আসছে না । টেনশনে সব খেয়ে ফেলছি । এতো মনভোলা হলে কিভাবে হবে । এখন আমি কি করবো। বাসায় কিভাবে যাবো । কিছুই তো চিনি না । এতোক্ষণে হয়তো জানোয়ারটা আমাকে খোঁজাখোঁজির শুরু করে দিয়েছে । আমাকে পেলে না জানি কি করে আল্লাহ এখান থেকে ভাগি আমি। দৌড়াতে দৌড়াতে পেটের নিচে ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে । বেশ খিদে পেয়েছে । মানুষের কাছে জিজ্ঞেস করতে করতে রেলস্টেশনে চলে গেলাম । স্টেশনটা বেশ চেনা চেনা লাগছে । হঠাৎ মনে পড়লো এটা চট্টগ্রাম রেলস্টেশন । ২ বছর আগে নানুর সাথে আসছিলাম । ভেতরে গিয়ে দেখি এটাই লেখা ছিলো । জানতে পারি ঢাকা যাওয়ার ট্রেন রাত ১০:৩০ মিনিটে আসবে । আমাকে অপেক্ষা করতে হবে । এখন ৮ টা বাজে । আমার কাছে টিকেটের টাকাও নাই । যেভাবেই হোক আমাকে চুড়ি করে লুকিয়ে হলেও ঢাকা যেতে হবে । এই জানোয়ারের থেকে বাঁচলে হয় আমার । এইদিকে পেটের ভেতর থেকে মিছিল হচ্ছে খাবার দে খাবার দে বলে । এতো এতো খাবারের ঝুড়ি নিয়ে বসে আছে লোকজন। আর আমি টাকার অভাবে খেতে পারছি না । এখন আমার খুব জোরে চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে । আমাকে ভাত দে নয়তো আমি তোদের পৃথিবী খেয়ে নিবো । এইসব ভাবতে ভাবতে একটা কোনে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ালাম । কেউ দেখে ফেলবে বলে মুখ নিচু করে বসে পড়েছি । কত হাসিখুশি ছিলাম আমি । আমার সাথে এমনটা না হলেও পারতো । আমি কি ওনার কোনো ক্ষতি করেছি । আমি শুধু নিজের মতো বাঁচতে চেয়েছিলাম । আর কিছু নয় । আচ্ছা বাসার সবাই কি আমাকে খুঁজেছে । আমাকে কি তাদের মনে পড়ে । আর ঐ ছোট্ট গোলাপ গাছটা কি শুকিয়ে গেছে নাকি কেউ যত্ন করছে । ভাবতে ভাবতে চোখে পানি চলে এসেছে । সবাইকে খুব মনে পড়ছে এখন ।
প্রচুর পানি পিপাসা পেয়েছে। ঘেমে একাকার হয়ে গেছি । এখন পানি খেতে না পারলে মনে হয় মরে যাবো । মাথা তুলতেই সেই লাল লাল চোখ আমার সামনে চলে এসেছে । আমি দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে । হাতে পানির বোতল । মনে হয় আমাকে পানির সাথে মিশিয়ে খেয়ে ফেলবে । লোকটা পানির বোতল আমার দিকে এগিয়ে দিলো । আমিও কিছু না বলে খেয়ে নিলাম । কারন আর পাঁচ মিনিট আমি পানি না খেয়ে থাকলে মনে হয় মরে যাবো । একি পানি খাওয়ার সাথে সাথে মাথা ঘুরাতে লাগলো । কিছু বলার আগেই আমি পড়ে যাচ্ছিলাম কেউ ধরে ফেললো । মুখ দেখতে পারলাম না । এরপর কি হলো আমি কিছুই বুঝতে পারিনি । নিজেকে আবিষ্কার করলাম অন্ধকার রুমে সেই লাল টুকটুকে চোখের সামনে ।
.
.
.
চলবে