রাগি জামাই পর্ব -১
লেখা – বৃষ্টি জাহান নিলা✍
.
.
কান্না করতে করতে চোখের পানি শুকিয়ে গেলো । তবুও লোকটার মায়া হলো না । সে নাকি আবার আমাকে পাগলের মতন ভালোবাসে। ভালোবাসা নাকি ছাই হুহ সবই ওনার ভন্ডামি । মনে করে জোর করে বিয়ে করলেই ভালোবাসা পাবে । একদম সহ্য করতে পারি না লোকটাকে । আমাকে জোর করে বেঁধে রেখেছে তাও আবার বাসর ঘরে । এমন বাসর যেনো অন্য কোনো মেয়ের কপালে না জুটে । বিয়ের সময়ও হাত পা বেঁধে অনেক মেরেছে আমাকে । মারধর করে বিয়ে টা করেই নিলো ।
সয়তানটার জেদের কাছে হেরে গেছি আমি ।
ঘটনার শুরু হয়েছে ২ বছর আগে থেকে । আমি নীলা তখন মাএ ১০ম শ্রেণীতে পরি । এই লোকটি প্রতিদিন আমার পিছু নিতো । অনেক দিন তো ভাইয়া দেখেও ফেলছিলো । বাসায় এসে অনেক কিছু বলছে আমাকে । লোকটার নাম পূর্ণ, অনার্স শেষ করেছে। এখন আর লেখাপড়া করে না । কিন্তু মাস্তানি করে পোরো এলাকায় নাম করে ফেলেছে। তাই ভাইয়া ওকে দেখতে পারেন না । আমাকে অনেক বার তার ভালোবাসার কথা বলতো । আমি কোনো পাত্তা দিতাম না । আমার সাথে অন্য কোনো ছেলে কথা বলতে সাহস পেতো না ওনার জন্য । ওনার পরিবার খুব ভালো ছিলো তবুও ওনাকে কখনো ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়নি ।এমন করে ২ টা বছর চলে যায়। ওনার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে গেছি আমি। একদিন বিয়ের কথা বলে
আমি ওনাকে একটা থাপ্পর মেরে অনেক কিছু বলি। সেদিন থেকে আমি ওনার চোখে রাগ দেখেছি । একদিন ওনি আমাকে দেখা করতে বলে । আর বলে ওনি আমার কাছে ক্ষমা চাইবে এটাই ওনার শেষ ইচ্ছে । অনেক কিছু ভেবে আমি রাজি হলাম । পরেরদিন দেখা করতে গেলাম ওনি আগের মতই ওনার ভালোবাসার কথা বলতে থাকে। আমি রাগে চলে আসতে চাইলাম। ঠিক তখনই পিছন থেকে মুখ চেপে ধরে । পরে আর কিছু মনে নেই আমার । জ্ঞান ফিরতেই দেখি লোকটা আমার মাথায় কাছে বসে আছে । বুঝতে পারলাম ওনি আমাকে ওনার কাছে নিয়ে এসেছে ।
আমি অনেক কান্না করি প্রথমে ওনি আমাকে অনেক বুঝায় ,কান্না করে , ভালোবাসার কথা বলে ।
কিন্তু আমি চিল্লাচিল্লি শুরু করি । ওনার রাগ অনেক বেশি ছিলো তাই আমার হাত পা বেঁধে থাপ্রাইছিলো ।
গাল গুলো লাল হয়ে গেছে । ওনি মুখের বাঁধন খুলে দিলো । আমি ফুপাতে ফুপাতে কান্না করতে লাগলাম।
আমাকে আগে কেউ কখনো এমন ভাবে মারেনি । কান্না করতেও কষ্ট হচ্ছিলো । হয়তো লোকটার একটু মায়া হয় তাই সরি বলতে থাকে । বিয়ের সব ব্যবস্থা করে ফেলে ওনি । ওনার বাসার কেউ কিছু জানেনা । শুধু ওনার মা একটু একটু জানে । এইদিকে আমি বিয়ে করবো না বলে কান্না শুরু করলাম । আবার সেই থাপ্রানি । এমন করে বিয়ে টা করেই ফেললো লোকটা। মনে একটু ও মায়া নাই । ওনার থাপ্পড় খেতে খেতে আমার নাক মুখ ফুলে গেছে। চোখ গুলো লাল হয়ে আছে । ওরা আমার হাত মুখ বেধে বসিয়ে রাখছে ।
– হু হু
– ( আসছে ওনি । হ্যাঁ মুখ খুললেই কান্না শুরু করবো )
– তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না ??
– উুহু উুহু ( মুখ বাঁধা)
– অহ তোমার তো মুখ বাঁধা। দাঁড়াও খুলে দিচ্ছি
– ?
– দেখো পাগলিটা কেঁদে কেঁদে চোখের কি অবস্থা করছে
– আপনার কি সত্যিই কষ্ট হচ্ছে এটা দেখে ??
– মানে । তুমি কেনো বুঝতে পারো না আমার ভালোবাসা ??
– ভালোবাসেন তাই না ??
– হুম । অনেক বেশি , জানো ফুল দিয়ে এই ঘরটা আমি নিজের হাতে সাজিয়েছি । শুধু তোমার আর আমার জন্য
– আমার জন্য তো অবশ্যই। আচ্চা তুমি আপনার এই ইচ্ছেটা মিটাতে আমার নিয়ে আসছেন তাই না ।
– কি বলছো তুমি এসব । আমি তোমাকে ভালবাসি । যদি অন্য কোনো ইচ্ছে থাকতো তাহলে কবেই ইচ্ছে টা পূরন করে নিতাম । কিন্তু না আমি তোমাকে সারাজীবন এর জন্য চাই ।
– তাহলে এখন কেনো এ ইচ্ছে ??
– এখন তুমি আমার বউ আর আমি তোমার স্বামী । আমার সব কিছুতে তোমার অধিকার আছে , ঠিক তেমনি তোমার সবকিছুতে আমার অধিকার আছে ।
– আপনি আমাকে কখনোই ভালোবাসেননি । শুধু ভোগ করতে চাইছেন
– কি বল্লা তুমি ( রেগে )
– আপনি আমাকে ভোগ করতে চাইছেন
– আবার বলো তো ( আরো রেগে,)
– হ্যাঁ আপনি আমাকে ভোগ করতে চাইছেন ( খুব ভয় পেয়ে)
লোকটা রাগের মাথায় নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না ।
আমি কান্নাকাটি শুরু করছি । ওনার হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চাইছি । ওনি কোনো পাত্তা দিলেন না । আমার চোখের পানির কোনো মূল্য নেই । এই প্রথম ওনার ভিতরের জানোয়ারটাকে দেখতে পেলাম ।
আমি কান্না করছি সারারাত ধরে । আর ওনি পরে পরে ঘুমাচ্ছে বদমাইশ কোথাকার ।
সকাল ৮ টা বাজে । লোকটা ঘুম থেকে উঠে দেখে আমি কান্না করছি
– নীলা চুপ করো , আর কতো ??
-উুহু উুহু উুহু
– আল্লাহ এই মেয়ের চোখের পানি কবে শেষ হবে । আর আমার কবে শান্তি হবে । খোদা একটু তাকাও আমার দিকে
– উুহু উুহু উুহু উুহু উুহু উুহু উুহু
– এখন খুব কষ্ট হয় তাই না ?? আমারো হয়েছিলো
– উুহু উুহু উুহু উুহু উুহু উুহু উুহু উুহু উুহু
– উফ , এই বউ রান্না করতে যাও
-উুহু উুহু উুহু
– আহ , তুমি তো আবার রান্না পারো না । আমাকেই করতে হবে ।
ওনি গোসল করে, রান্না শেষ করে আমাকে ডাকতে আসলেন
– এই মেয়ে কি সমস্যা তোমার। এখনো কান্না করতেছো কেনো ??
– উুহু উুহু উুহু উুহু উুহু উুহু
– ঠাসসস ঠাসসস ( দুইটা থাপ্পড় মারলো )
আমি একদম চুপ হয়ে অভাগীর মত তাকিয়ে রইলাম ।
আমাকে টানতে টানতে বাথরুমে নিয়ে গেলো ।
– চলো তোমাকে গোসল করিয়ে দিবো
– কিহ
– হ্যাঁ
– লুচ্চা , সব দেখার ধান্দা তাই না । মনে করছেন কিছু বুঝিনা ।
তাই না
– কিছু দেখার কি বাকি আছে নাকি । সব দেখে নিছি কালকে
– কুওা , বেরহন , আমি একা গোসল করতে পাববো ।
– অখ্যা করো
গোসল তো করলাম কিন্তু এখন পরবো কি অফফ
– এই
– হুম বলো
– আমি কি পরবো ??
– এই নাও শাড়িটা পরে নেও ।
– কিহ শাড়ি । কিন্তু আমি তো পড়তে পারি না ।
– আমি এসে পরিয়ে দেই ??
– এই না না আমি পড়ে নিবো
কোনো রকম শাড়িটা পেঁচিয়ে পরে বের হলাম । পূর্ণ তাকিয়ে আছে অবাক দৃষ্টিতে । আর মিটিমিটি হাসছে ।
আমি মুখ ফুলিয়ে বসে আছি । হঠাৎ আয়নার চোখ পড়লো । হ্যাঁ আজ সত্যিই আমাকে বউ বউ লাগছে ।
.
.
.
চলবে