রহস্য শেষ_পর্ব

4
2611

রহস্য শেষ_পর্ব
#Sabiha_Rahman_Susmita

ব্রাহ্মণ অতল বাবু কে চিহ্নিত করে জিজ্ঞাসাবাদ এর জন্য ধানমন্ডি অফিস থেকে আর্জেন্ট গাড়িতে করে ময়মনসিংহ পাঠানো হচ্ছে পিবিআই এর ফোর্স সহ।বিকি ভাবছে অতল বাবু কেন শোহিনীর লাশ নিয়ে এমন মিথ্যা বলল,বা শোহিনীর লাশ এর সাথে এই অতল বাবুর কি সম্পর্ক।
পরক্ষণেই ভাবতে লাগলো অনেক কালো জাদুকর আছে যারা মৃত মেয়ের লাশ নিয়ে অনেক ধরনের যজ্ঞ করে।তাহলে অতল বাবু কি তাদের ই মাঝে একজন!?

ইনভেস্টিগেশন রুমে বসে আছে বিকি।ঠান্ডা সুরে রিজভিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে,

-রিজভি,শোহিনীরদের পাশের বাসায় তোমার কেমন ভাই ভাবী থাকে?আর তুমি তো আগে কখনো সেখানে যাও নি,শোহিনীর বাবা-মা মৃত্যুর দিন থেকেই একয়দিন এত যাওয়া আসা, হঠাত?

-আমি আগে যাই নি কে বলল আপনাকে?মাঝে মাঝে যেতাম।(আমতা আমতা করে)
তাকে দেখলেই বোঝা যাচ্ছিল সে মিথ্যা বলছে।

-দেখো রিজভি,তুমি কিছু লুকাচ্ছো।আমি একজন ইনভেস্টিগেটর, আমার কাছে লুকিয়ে তুমি বাঁচতে পারবে না। আর যদি তুমি এই ঘটনায় জড়িত না হউ,তাহলে যা জানো বলে ফেলো,তাহলে তোমার ই লাভ হবে।

-স্যার,আমি তেমন কিছু জানি না,তবে অজান্তেই এই ঘটনায় জড়িয়ে গেছি।(কাঁদো কাঁদো গলায়)

-আচ্ছা,নির্ভয়ে বলো তুমি কি কি জানো।

বলতে শুরু করল রিজভি-
শোহিনী দিদি যেদিন মারা যায়,তার আগের রাতে উনাকে বারান্দায় মোবাইলে কথা বলতে আর কান্না করতে দেখেছি আমি।পরদিন সকালেই খবর পাই উনি নাকি আত্মহত্যা করেছেন।

তার ২দিন পর মাঝরাতে,মনেহয় রাত ৩টা হবে।আমি ছাদে বসে সিগারেট খাচ্ছিলাম,হঠাত সব সিগারেট শেষ।ভাবলাম এত রাতে কোথায় পাবো সিগারেট।তবুও নিচে নেমে দেখি কোনোদিকে কোনো দোকানপাট খোলা নেই।আমাদের বিল্ডিং এর দারোয়ান ও নেই,তাই যখন ই গেইট দিয়ে ঢুকবো তখন কি মনে করে পাশের “অর্কিড লুম” এর দারোয়ান চাচা কে ডাক দিলাম কোনো সিগারেট পাবো এই আশায়,কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ নেই।
হঠাত গেইটের ফাঁক দিয়ে দেখলাম,একটা মেয়ে মাথায় কাপড় দিয়ে ঢেকে দৌঁড়ে গেইটের দিকে এসে গেইট খুলেই আমার গায়ের উপর এসে পরল।
পরেই যেন কেঁদে দিল,সারা মুখ ঘর্মাক্ত,চুল এলোমেলো হয়ে মুখে পরে আছে।
মুখ থেকে চুলগুলো সরিয়ে মুখ তুলে তাকাতেই দেখি শোহিনীদির ছোটো বোন সে।মোহিনী।
আমার হাতে পায়ে ধরে কান্না করে দিয়ে বলল-প্লিজ ভাইয়া আমাকে একটু হেল্প করেন।

আমি থতমত খেয়ে গেলাম মেয়েটির কথা শুনে।আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করব।মেয়েটি শুধু ফিসফিসিয়ে আমাকে বলল,আমাকে আগে প্লিজ এখান থেকে দূরে কোথাও নিয়ে যান।আমি সব বলছি আপনাকে।
এত রাতে এই মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবো বুঝতে পারছিলাম না,চট করে মেয়েটার হাত ধরে আমাদের এপার্টমেন্টের গেইট দিয়ে ঢুকে লিফট দিয়ে সোজা ছাদে চলে আসলাম।ছাদে এসে মেয়েটা মাথা থেকে ওরনা ফেলে চোখমুখ মুছতে মুছতে রেলিং এর পাশে গিয়ে তাদের ফ্ল্যাট টার দিকে তাকিয়ে রইল।এত রাতে এক যুবতী মেয়ে আমার পাশে একই ছাদে,পাশে আর কেউ নেই।
আমার কেমন যেন সংকোচ লাগছিল,তবুও পাশে গিয়ে দাড়ালাম।

মেয়েটা আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো,অন্ধকার হলেও শহরের আর্টিফিসিয়াল আলোয় ছাদে মেয়েটার মুখ টা আবছা এমনভাবে দেখা যাচ্ছিল যে খুব বেশি মায়া লাগছিল।
সংকোচ দূর করে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম,কি সমস্যা তোমার এখন বলো।এতো রাতে তোমাকে এখানে কেউ দেখলে সমস্যা হয়ে যাবে।
-আমাকে আজ রাত টা কোথাও থাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন?

-কেন?তোমার বাসায় কি সমস্যা?

– অনেক কাহিনী,বলতে সময় লাগবে।

-কিন্তু,আমি কাহিনী না জেনে তোমাকে কোনো সাহায্য করতে পারবো না।সর‍্যি।

মোহিনীর চোখ ছলছল করছিল।
-আপনি আমার দিদি শোহিনীদি কে চিনতেন নিশ্চয়ই?

-হ্যাঁ।

-সবাই জানে আমার দিদি ২দিন আগে আত্মহত্যা করেছে,কিন্তু আমার দিদি কে খুন করা হয়েছে!!
কথাটা বলেই ডুকরে কেঁদে উঠলো মোহিনী।

আমি যেন মোহিনীর কথা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না,তারপরও আবার জানতে চাইলাম কে বা কারা এবং কেন তার দিদি কে খুন করল।

-আমার দিদির একটা মুসলমান ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল,সে অন্তঃসত্ত্বা ও ছিল তা আমি জানতে পারি দিদি মারা যাবার পর।আমি ভেবেছিলাম আমার মা বাবা এই কথা জানতেন না।কিন্তু তারা আমার অনেক আগেই জানতে পেরে আমার দিদি কে খুন করে!

-কিহ!কেন?মা বাবা কেন তোমার দিদি কে খুন করবে?

-সে আমাদের জাত,ধর্ম ত্যাগ করেছে এ কথা জানতে পেরেই মা তাকে ইচ্ছামত থাপ্পর মারছিল,হঠাত এক পর্যায়ে থাপ্পর টা কান ও মাথার এমন এক জায়গায় হিট করে,দিদি সেভাবেই মারা যায়।কিন্তু তা আমিও বুঝতে পারি নি। তার মুখে ও আশেপাশে বিষ এর ওষুধ রেখে দিয়ে সকলকে জানিয়েছে সে আত্মহত্যা করেছে।ফ্লোরে পরে থাকা বিষ খেয়ে আমার সবচেয়ে প্রিয় পোষা বিড়াল টা ও মারা গেছে।

-কি বলছো তুমি এসব?
কিন্তু তা তো দুদিন আগের ঘটনা।তাহলে আজকে কেন তুমি পালিয়ে এলে?

রিজভি একটানে ঘটনা বলে যাচ্ছে,এমন সময় বিকির কাছে খবর এলো অতল বাবু কে আনা হয়েছে।
এই কথা শুনেই,রিজভী কে অন্য রুমে বসিয়ে চা নাস্তা দেয়ার জন্য অফিসে বলেই উঠে গেলো বিকি।

দশ মিনিট পর অতল বাবু কে জিজ্ঞাসাবাদ এর জন্য ইনভেস্টিগেশন রুমে এনে বসানো হয়েছে।বিকি রিজভীর সম্পূর্ণ কথা শুনেই অতল বাবুর সাথে কথা বলতে চায়,তাই ইনভেস্টিগেশন এর শুরুতে সাধারণ প্রশ্ন উত্তর করতে বলা হলো রফিক কে।

অন্যদিকে ওয়েটিং রুমে চা নাস্তা নিয়ে ইনফরমালভাবে কথোপকথন চালানোর জন্য মুখোমুখি বসে আছে রিজভী আর বিকি।
চায়ের কাপে দ্বিতীয় চুমুক দিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বিকি বলল-এবার শুরু করো রিজভী।মেয়েটি সে রাতে কেন পালিয়ে এলো।

বিকি এক গ্লাস পানি খেয়ে আবার বলতে শুরু করল-মোহিনী নামের মেয়েটি তখন কান্না করতে শুরু করলো।আর কিছুই বলতে পারছিল না।শুধু বলছিল তাকে যেন আজকে রাত টার জন্য নিরাপদ একটা আশ্রয় দিই।

-আমি এত রাতে কেন পালিয়ে এসেছি তা আপনাকে আমি কিভাবে বলি,আমি নিজেই জানি না আমাকে কেন খুন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।শুধু জানি আজ রাতে আমি বাসায় থাকলে কাল সকালে আমার লাশ পরে থাকবে বাসায়,তাই আমি পালিয়ে এসেছি।
(কান্না করতে করতে কথাগুলো বলছিল মোহিনী।)

তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করি তার ও কি কোনো মুসলমান ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে কিনা,সে জানায় এমন কিছুই তার নেই।

তবুও তাকে আজ রাতে খুন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
হঠাত ই খেয়াল করলাম রাত সাড়ে ৪টা বাজে,একটু পর ই আজান দিবে,২বিল্ডিং থেকেই মানুষ নামাজের জন্য বের হবে।তখন এই মেয়েকে লুকানো খুব ঝামেলার কাজ হয়ে যাবে।এমন সময় সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি অর্কিড লুম এর মোহিনীদের ফ্ল্যাটের মোহিনীর রুম থেকে ধোয়া বের হচ্ছে,মনে হচ্ছে রুমে আগুন লেগেছিল।বুঝতে পারলাম মেয়েটাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল।

ধোয়া দেখতে দেখতেই পাশের ফ্ল্যাটে চোখ গেলো আমার,যে ফ্ল্যাটে আমার ভাই-ভাবী থাকে বললাম।উনারা আসলে আমার পরিচিত কেউ নন।আমি প্রায় রাতই ছাদে উঠে তাদের হাজব্যান্ড ওয়াইফ কে দেখতাম।

এই কথা বলেই মাথা নিচু করে চুপ হয়ে গেলো রিজভী।

-দেখতে মানে!?কি দেখতে?তাদের অন্তরঙ্গতার সময়?

মাথা নিচু করে রিজভী বললো-হুম।

আমি যখন ধোয়া দেখে পাশের ফ্ল্যাটের দিকে তাকালাম তখন একটা ঘটনার কথা মনে পরল।
আমি একদিন ট্রাইপট এ ক্যামেরা সেট করে জুম করে তাদের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ভিডিও করেছিলাম!সেই ভিডিও টা আমার মোবাইলেই ছিল।

চট করে মোহিনীর হাত ধরে লিফটে নিয়ে এলাম,সোজা নিচে গিয়ে অর্কিড লুম এ ঢুকে গেলাম।অর্কিড লুম এর লিফট এ ঢুকবো তখন মোহিনী আগে ঢুকে যায়,আমি পরে ঢুকার সময় হয়তো দারোয়ান চাচা আমাকে দেখেছে আমি সিউর না।
সোজা উঠে গেলাম ১৩ তলায়।গিয়ে সেই নবদম্পতির বাসায় ননস্টপ কলিংবেল বাজাতে লাগলাম,হাফপ্যান্ট পরা যুবক দরজা খুলতেই আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে বাসায় ঢুকে গেলাম মোহিনী কে নিয়ে।সেই যুবকের মুখে ধরে ভিতরের বেড রুমে নিয়ে গেলাম,বেড রুমে তার অর্ধনগ্ন স্ত্রী শুয়ে ঘুমাচ্ছিল,আমাদের আওয়ান শুনে ধরফর করে উঠে কাঁথা গায়ে দিয়ে ভীতু মুখে চেয়ে রইল আমাদের দিকে।

তাদের বুঝিয়ে বললাম যেন তারা কিছুদিনের জন্য অন্তত মোহিনী কে তাদের বাসায় আশ্রয় দেয়। কিন্তু তারা আমার কথা রাখতে নারাজ।
তখন আমি মোবাইল থেকে ভিডিও টা বের করে একটু দেখাতেই তাদের মুখ নীল বর্ণ হয়ে গেলো।আমি তাদের বলি,যদি তারা নিরাপদে এই মেয়েটাকে কয়দিন না রাখে তবে আমার মানুষ সেট করা আছে তারা এই ভিডিও ইউটিউবে ছেড়ে দিবে,ভাইরাল হবে এই ভিডিও।আর পুলিশে খবর দিলে ঝামেলা আরো বাড়বে সব হুমকি দিয়ে তাদের ঠান্ডা করে মেয়েটাকে সেই বাসায় রাখার ব্যবস্থা করলাম। এখনো মোহিনী সেই ফ্ল্যাটেই আছে।
আমার মাথায় সেই মুহুর্তে তাদের বাসার চেয়ে ভালো কোনো সন্দেহমুক্ত যায়গা মাথায় আসেনি।এবং আসলেই পাশের ফ্ল্যাট কে কেউ সন্দেহ ই করেনি।

বিকির মুখ চকমক করে উঠলো-তার মানে তুমি বলছো এখনো মোহিনী আছে সেই বাসায়?

-জি,ও এখনো সেখানেই আছে।

– ওকে,তাহলে তোমাকে আমি ফোর্স সহ গাড়ি সহ সেখানে এখন পাঠাবো,তুমি এখনি মোহিনী কে নিয়ে এখানে আসবে।

ইনভেস্টিগেশন রুমে ব্রাহ্মণ ভয়ার্ত চোখে বসে আছে।রফিক এসেছিল সহজ কিছু প্রশ্ন করতে,কিন্তু কেঁচো খুরতে গিয়ে সাপ ই বের হয়ে গেছে।রফিকের কোনো কষ্ট ই করতে হয়নি।
অতল বাবু বয়স্ক মানুষ,ভয়ে হাত পা কাপছে।তিনি ভয়ে অনেক কথা এক টানে বলে দিয়েছেন।আর রফিক সব কথা রেকর্ড করেছে মোবাইলে।

বিকি রেকর্ড শুনছিল আর শিউরে উঠছিল।তবে কিছু যেন তবুও বাকি রয়ে গেলো,শোহিনীর মৃত্যু নিয়ে যা জানা গেলো তার সারমর্ম হলো-শোহিনী আত্মহত্যা করেছে বলেই জানতো অতলবাবু।কিন্তু সে ইচ্ছা করেই চিতায় পুড়তে দেয়নি শোহিনীর লাশ।কারণ তারা জঙ্গলে লাশ পুঁতে দেয়ার পর পর ই লাশ উঠিয়ে নিয়ে আসা হলো তাদের গোপন যজ্ঞখানায়,যেখানে তারা কালোজাদু করে।
অতলবাবু প্রকৃতপক্ষে অমরত্য লাভের যজ্ঞ করছিল,যে যজ্ঞে কিছুদিনের মাঝেই হিন্দু ধর্ম ত্যাগকারী মেয়ের লাশ দরকার ছিল।শোহিনীর বাবা মায়ের কাছ থেকে অতলবাবু জানতে পেরেছিল যে শোহিনী মুসলমান হয়ে গিয়েছিল।এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অতল বাবু শোহিনীর লাশ নিয়ে তাদের যজ্ঞ সম্পাদন করেছে,শোহিনীর লাশ পার্ট বাই পার্ট কেটেকুটে বিভিন্ন কাজ করেছে।

কিন্তু শোহিনীর বাবা-মা এর এই জোড়া আত্মহত্যার কোনো ক্লু সে এই রেকর্ডে পায়নি।রিজভী নামের ছেলেটি ও এই ব্যাপারে কিছুই বলেনি।

কিছুক্ষণ পর
ইনভেস্টিগেশন রুমে অতল বাবু,মোহিনী পাশাপাশি বসে আছে,মুখোমুখি আছে রফিক ও বিকি।
মোহিনী মেয়েটার চোখে মুখে কোনো ভয় নেই,সে চুপচাপ বসে আছে অন্যদিকে অতলবাবুর অবস্থা করুণ।একটু পর পর কেঁপে উঠছে।

বিকি জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলো-

-মোহিনী,তুমি যে রাতে পালিয়ে এসে সে রাতে তোমার বাসায় আগুন লাগে এবং তোমার মা-বাবা ও আত্মহত্যা করেন।তুমি কি এমন করেছো যে তোমার মা – বাবা তোমাকে খুন করতে চাইলো?আর তুমি কিভাবেই বা আগে থেক্র বুঝতে পারলে?

-আমার রাত জাগার অভ্যাস,প্রায়ই রাত জেগে গল্পের বই পড়ি।আগে মেঝদি ছিল,তাই ভয় লাগতো না।মেঝদি বারান্দায় ফোনে কথা বলতো আর আমি বই পড়তাম। সেদিন রাতে বই পড়ার মুড ছিল না,এমনি বসে ছিলাম।পানি পিপাসা লাগায় রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং স্পেসে যাবার পর ই বাবা- মা ফিসফিস শুনতে পেয়ে কাছে যেতেই বুঝতে পারলাম তাদের দরজা টা ভেজানো,লক করা না।আমি একটু দরজা ফাঁক করতেই দেখি ঘরের সব ফার্নিচার একদিকে করে মাঝে খালি জায়গা করে তারা ২জন কি যেন ছক আঁকছে আর ২জনে কথা বলছে।
তাঁদের কথা শুনেই বুঝতে পেরেছিলাম আমাকে ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারবে।
সাথে সাথে আমি আমার রুমের দরজা ভিতর থেকে লক করে আমাদের রুমের বারন্দার দরজা দিয়ে বের হয়ে চলে আসি।আমার বারন্দা দিয়ে চিপা একটা যায়গা ছিল,স্টোর রুমের মত,সেইদিক দিয়ে আবার ড্রয়িংরুমে যাওয়া যায়। আমি সেখান দিয়ে আসি যেন তারা বুঝতে না পারে যে আমি রুমে নেই।

কথাগুলো একটানে বলেই পানি খেতে চাইলো মেয়েটা।

পাশে অতলবাবুর দিকে তাকিয়ে দেখি সেই লোকের মুখ ঘেমে একাকার।

-এবার বলুন মিস্টার অতল বাবু,আপনি কি এই ব্যাপারে কিছুই জানেন না?
তাদের এই আত্মহত্যার জন্য আপনিই দায়ী!আমি সিউর!
ধমক দিয়ে বলল বিকি।

অতল বাবু বাচ্চাদের মত হাউমাউ করে কান্না করতে লাগল,আর বলতে লাগল,আমারে ফাঁসি দিবেন না স্যার,আফনের দুইডা ফায়ে দরি গো স্যার।
আমি সব সত্য সত্য বলমু।
আমিই তাদেরকে অমরত্য লাভের কথা বইলা আত্মহত্যা করাইছি।

-মানে?

-তারা পুরো পরিবার যদি একসাথে তাদের নিজেদেরকে একসাথে বলি দেয়,তবে তারা অমরত্য লাভ করবে, এই মন্ত্র তাদের দিয়েছিলাম।
কিন্তু আমার আসলে আরো কিছু আত্মহত্যা করা মানুষের মাথা দরকার ছিল আমার নিজের অমরত্য লাভের যজ্ঞের জন্য।
কিন্তু তাদের মাথা টা আমি জোগাড় করার আগেই পুলিশ চলে আসে সেখানে।

বিকি খুব সহজেই ৩টা আত্মহত্যার সম্পূর্ণ গোলমাল প্যাঁচ পেয়ে গেলো।
শোহিনী মুসলমান ছেলের সাথে প্রেমের জন্য ভুলক্রমে খুন হয় তার মা এর হাতে,অন্যদিকে অতলবাবু সেই লাশ নিয়ে বিভৎস খেলা খেলার পর,শোহিনীর বাবা-মা কে অমরত্য লাভের লোভ দেখিয়ে আত্মহত্যা করতে প্রলুব্ধ করে।
কেইস টা সম্পূর্ণ সাজাতে সাজাতে বিকি ভাবতে লাগলো,কতটা অদ্ভুত মানষিকতার মানুষ হলে অমরত্যের জন্য কতগুলো মানুষের প্রাণ নিয়ে খেলতে দ্বিধা করে না।

সমাপ্ত

(কাহিনী ও চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক,ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।

4 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে