রহস্য পর্ব_৬
#Sabiha_Rahman_Susmita
শোহিনীর লাশ ভেবে যে লাশ বের করলো পিবিআই বিকি,সে লাশটা গতকাল এই কবরে দাফন করা হয়েছে।তাহলে শোহিনীর লাশ টা কোথায়!?
বিকি ভাবতে লাগলো এখানে কোনো বড় ধরনেএ গন্ডগোল আছে।
পরক্ষণেই আবার ভাবলো কিছু জায়গায় লাশ চুরির কিছু গ্রুপ থাকে,তারা আবার শোহিনীর লাশ চুরি করলো না তো?অনেক কিছুই মাথায় ঘুরছে বিকির।এইদিকে কুহু কেঁদেই চলেছে।
মন্দিরের সেই ব্রাহ্মণ এর কাছে কল করা হলো,কিন্তু কোনো রেস্পন্স নেই।তাই সেই মন্দিরে পুলিশের ফোর্স পাঠালে জানা যায় মন্দিরে সেই ব্রাহ্মণ নেই।
বিকির মনে সন্দেহ জাগে,সাথে সাথে পিবিআই অফিসে রফিক কে কল করে অতলেন্দ্র বাবুর মোবাইল নাম্বার টা দিয়ে বললো ফিশিং করে ট্র্যাক ডাউন করে দেখতে কোথায় আছে।
রফিক সেই মোবাইলে একটা জনসেবার ম্যাসেজ পাঠিয়ে লোকেশন ট্র্যাক করে একটু পর ই জানালো,মোবাইল টা এখন ময়মনসিংহ পার হয়ে গেছে,ঢাকা রোডে আছে।বিকি রফিক কে বললো বেশ কিছুক্ষণ পর এমনি কোনো নাম্বার দিয়ে কল করে ফিশিং করতে,তারপর আবার একটা ম্যাসেজ দিয়ে ফিশিং করতে।। লাস্ট লোকেশন টা যদি ঢাকার দিকে হয় তবে ঢাকার ফোর্স পাঠানো হবে সেই ব্রাহ্মণ কে ধরার জন্য।
রফিক বুঝতে পারছে না তার স্যার কেন এক ব্রাহ্মণ এর পিছু লাগলো।
কুহু কে নিয়ে আবার ময়মনসিংহ মেইন টাউনের সেই মন্দিরে গেলো বিকি।মন্দিরে অন্যান্য ঠাকুরদের জিজ্ঞেস করলে তারা জানায় অতলেন্দ্র বাবুর নাকি শরীর খারাপ,তাই তিনি বাড়ি চলে গেছেন।
বাড়ির ঠিকানা নিয়ে বাড়িতে গিয়ে দেখা গেলো অতলেন্দ্র বাবু আসলেই বাড়ি নেই,কোথায় গেছে তা বাড়ির কেউ বলতে পারছে না।
বিকি ভাবতে লাগলো এই অতলবাবু যদি কোনোভাবে অপরাধের সাথে জড়িত ও থাকে তবে সে কেনোই বা বিকি কে সন্দেহ করলো এবং পালাতে লাগলো নাকি সম্পূর্ণ ই তার ভুল ধারণা।একদম অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছে বিকি।
হঠাত মনে হলো “অর্কিড লুম” এ আবার একটু যাওয়া দরকার।কুহু কে বাড়িতে চলে যেতে বলে,আশ্বস্ত করে সে একটা সি এন জি নিয়ে চলে গেলো অর্কিড লুম এ।
বিল্ডিং এর দক্ষিণ পাশেই আরেকটা বড় বিল্ডিং,মাঝখানে চিকন রাস্তা।দক্ষিণ পাশের বাউন্ডারি আর বিল্ডিং এর ওয়াল এর মাঝখানে যে চিপা জায়গা,সেখানে ঢুকার একটা ছোট্ট লোহার গেইট আছে।দাড়োয়ান বিকি কে চিনে ইনভেস্টিগেটর হিসেবে,তাই সে সালাম দিয়ে দূরে চলে গেলো।বিকি ছোট্ট গেইট টা খুলে ঢুকলো বিল্ডিং এর শেইপ টা বুঝার জন্য, এইদিক দিয়ে বেয়ে উপরে কেউ ইজিলি উঠতে পারবে কিনা দেখার জন্য।উপরের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাটার সময় হঠাত ই পায়ের নিচে কি যেন পরে মচ করে ভেঙে গেলো।একটা বেবি টেস্ট স্টিক,মাথা টা ভাংলেও যেখানে বেবি টেস্ট এর দাগ দেখা যায় সেটা অক্ষত আছে।সেখানে ২টা দাগ,মানে কারো পজিটিভ টেস্টের রিপোর্ট। স্টিক টা হাতে নিয়ে একটা প্যাকেটে নিয়ে পকেটে নিয়ে বের হয়ে এলো বিকি।
বের হয়ে শোহিনীর হাজব্যান্ড তাওহীদ কে কল দিল-
“হ্যালো,তাওহীদ,আমি ইনভেস্টিগেটর বিকি বলছিলাম।”
“ও হ্যাঁ,বলুন।”
“একটা ব্যাপার জানার ছিল,শোহিনী কি প্র্যাগনেন্ট ছিল?”
কিছুক্ষনের জন্য থেমে গেলো তাওহীদ।
তারপর আবার বিকি হ্যালো হ্যালো বলার পর উত্তর আসলো অপর পাশ থেকে।
“হ্যাঁ,ও প্র্যাগনেন্ট ছিল।তাই আমার সাথে পালানোর প্ল্যান করছিল।কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি।”
“আচ্ছা,মিঃতাওহীদ,অনেক ধন্যবাদ।আবার দরকার হলে কল দিবো,রাখছি।”
বিকির মনে হলো,সে বড় ধরনের বোকামি করেছে।দারোয়ান কে সে কিছু জিজ্ঞেস ই করে নি আজ অব্দি।দারোয়ান কে কাছে ডেকে বলতে লাগলো,
– চাচা,আপনি এই বিল্ডিং এর দারোয়ান কতদিন ধিরে?
-বিল্ডিং টা হউনের পর থেইকাই আমি ই এইহানের দারোয়ান।কিন্তু আমি একা বইলা ২৪ ঘন্টা পাহাড়া দিবার পারি না।
-তাহলে কে পাহাড়া দেয় বাকি সময়?
-আমার রুম তো পাশেই,আমি ঐখানেই ঘুমাই,কেউ আইলে টের পাই আওয়াজ হইলে।
-আচ্ছা,চাচা,যেদিন ১৩ তলার ২জন ফাঁসি নিলো সেদিন রাতে আপনি কই ছিলেন?
-আমার সেইদিন অনেক জ্বর আছিলো বাবা,আমি ঘুম ছিলাম, তাই কিছুই কইবার পারি না।তয় যেদিন শোহিনী মেয়েটা মরলো,সেদিন জাইগাই আছিলাম। কিছুই টের পাই নাই।
-বাইরের কেউ বিল্ডিং এ ঢুকেছিল?
-আমার দেখা মতে তো কেউ ঢুকে নাই বাবা।
এমন সময় লিফট থেকে একটা ছেলে বের হয়ে যেন থতমত খেয়ে গেলো বিকি কে দেখে,কারণ ছেলেটা আর কেউ নয়,সেই পাশের বিল্ডিং এর উদ্ভ্রান্ত ছেলেটি।
বিকি সাথে সাথে হেসে দিয়ে রিজভির সাথে হ্যান্ডশেখ করলো।
-আরে ভাই এর নাম টা ভুলে গেছি,আপনি এই বিল্ডিং এ?
-আমি রি রি রিজভি,না এসেছিলাম এখানে আমার এক বন্ধু থাকে।
-ও আচ্ছা, কয় তলায়?
-সা সাত তলায়।
-আচ্ছা,চলেন বাইরে যাই।আমিও বের হচ্ছিলাম।
বের হওয়ার সময় পিছন থেকে দারোয়ান চাচা বিকি কে ডাক দিয়ে আস্তে আস্তে বলল-স্যার,এই ছেলেটা তো পাশের বিল্ডিং এ থাকে।কিন্তু ১৩ তলায় যেদিন আগুন লাগে সেদিন সকালে পুলিশের গাড়ি আসার আওয়াজ পাইয়া যখন জ্বর নিয়া উঠলাম তখন দেখছি এই ছেলেটা লিফট দিয়া নাইমা বাইর হইয়া গেলো।
বিকি আস্তে করে আচ্ছা বলে রিজভির কাঁধে হাত দিয়ে বের হয়ে গেলো।
বাইরে বের হয়েই বিকির আইডি কার্ড দেখিয়ে বললো-বিকি আপনার কাছ থেকে কিছু জানার আছে। নিজ থেকে সহায়তা করুন,নাহয় আপনি ও অপরাধী সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ যাবেন না।
উত্তেজিত হয়ে রিজভি বললো-আমি কেন অপরাধী হতে যাবো!?উনারা সবাই সুইসাইড করেছেন,এখানে আমাকে কেন টানছেন?
-ওহ!উনারা সুইসাইড করেছেন সিউর?আপনি কিভাবে জানলেন?
দেখুন উত্তেজিত হবেন না,আমার সাথে চলুন,কোথাও বসি,কথা বলি।আপনার ই ভালো হবে।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিকির সাথে যেতে রাজি হলো।
রফিক বিকাল ৪টায় লাস্ট ফিশিং করে জেনেছে ব্রাহ্মণ অতলেন্দ্র ঢাকার ধানমন্ডি ২ এর এক মন্দিরে আছে।খুব কাছেই পিবিআই হেড অফিস,সাথে সাথে হেড অফিসে ফোন করে একটা ফোর্স পাঠাতে বলা হলো সেই মন্দিরে,এবং অতলেন্দ্রবাবু কে আটক করতে বলা হলো, কিন্তু কোনজন অতলেন্দ্র তা সেই অফিসের কেউ জানে না,তাই সেই মন্দিরের ব্রাহ্মণ কে ই আটক করার নির্দেশ দেয়া হলো।
অন্যদিকে ইনভেস্টিগেশন রুম এ বসে আছে রিজভি।
বিকি খুব আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করা শুরু করলো,
-রিজভি,তুমি করে বলছি। তুমি তো অনেকদিন থাকো এই এলাকায়,শোহিনীদের পরিবার সম্পর্কে তুমি কি কি জানো বলো।
-দেখুন,আমি কিছুই জানি না ওদের ব্যাপারে।ওদের আমি চিনি না।
-আচ্ছা,ধরে নিলাম তুমি জানো না,কিন্তু চিনো না তা কিভাবে বিশ্বাস করি বলোতো?তুমি প্রায় ই ছাদে থাকো,আর ছাদ থেকে ওদের বাসা একদম ক্লিয়ার দেখা যায়।বিশেষ করে শোহিনীদের বারান্দা টা।
-হ্যাঁ,আমি ছাদে উঠি,তখন দেখতাম ওদের। কিন্তু রাতে উঠতাম আমি বেশিভাগ সময়। আর ওদের বারান্দার লাইট অফ থাকতো,তাই ওদের চেহারাও আমি দেখতাম না।
-রাতে ছাদে কেন উঠতে?স্মোক করতে?নাকি এর বেশি কিছু ও খাও?
-হ্যাঁ,সিগারেট খাই।তাই।কোনো সমস্যা?
-না,আমার তো আসলে সমস্যা তোমাকে নিয়ে না।সমস্যা টা শোহিনীর ছোটো বোন মোহিনী কে নিয়ে।
কথাটা শুনেই কেমন যেন মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো রিজভির।
-আমি কিভাবে বলবো মোহিনী কোথায়?
একটু হেসে বিকি বললো-তোমার অর্কিড লুম এর সাত তলার বন্ধুর নাম কি বলোতো?আর ফ্ল্যাট নাম্বার টা বলো।
সাথে সাথে চুপ হয়ে গেলো রিজভি।
-ইয়ে না মানে,আমি মিথ্যা বলতে পারি না।আমার আসলেই সেখানে কোনো বন্ধু নাই,শোহিনীদের পাশের ফ্ল্যাটে আমার এক দূর সম্পর্কের ভাই-ভাবী থাকে,সেখানে গিয়েছিলাম।ওদের পাশের বাসায় গিয়েছিলাম,তাই আপনি যদি সন্দেহ করেন,তাই মিথ্যা বলেছিলাম।আই এম সর্যি।
বিকি একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল-তোমার সেই ভাই কি প্রায় ই বাসার বাইরে রাত কাটায়?নাহয় তুমি ভাইয়ের বাসায় রাত কাটাও কেন?তোমাকে তো রাত কাটানোর পর ভোরবেলায় বের হতে দেখা যায় প্রায়ই সেই বিল্ডিং থেকে!
রাত কাটানোর ব্যাপার টা একটা আন্দাজে টোপ ফেললো বিকি।কথাটা শুনে রিজভির চেহারা আগুনের মত লাল হয়ে গেলো।
চলবে…