রহস্য পর্ব_৪

0
2284

রহস্য পর্ব_৪
#Sabiha_Rahman_Susmita

নিচে গিয়ে আজমল সাহেবের কাছে শোহিনীর পোস্ট মর্টেম রিপোর্টের খবরাখবর জানতে চাইতেই তার মুখ নীল বর্ণ ধারণ করল,আমতা আমতা শুরু করলো।
নিজেদের পকেটে পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরে নেয়া বাদে বাকি কাহিনী বিকি কে খুলে বললেন আজমল সাহেব।

বিকির মেজাজ অনেক বেশি বিগড়ে গেলো এবং ভাবতে লাগলো ব্যাপার টা অনেক বেশি ঘোলা হয়ে গেলো কারণ শোহিনীর মৃত্যুর ব্যাপারে কিছুই দেখেনি সে।

এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে একটা বোরকা পরা নিকাব পরা মেয়ে ঢুকলো ফ্ল্যাটে।মেয়েটার চোখ লাল হয়ে আছে,টলমল করছে।
বিকি কে এসেই কান্না কান্না কন্ঠে জিজ্ঞেস করল-লাশগুলো কি পোস্টমর্টেমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে?

বিকি আস্তে করে বললো-না,আপনার পরিচয় টা?

-আমি কি একটু দেখতে পারি উনাদের ২জন কে?

-জি না,আপনার পরিচয় না দিলে তো… আসলে পুলিশ কেইসের ব্যাপার।

-আমি, আমি কুহু রহমান,উনাদের বড় মেয়ে।

বিকি যেন একটু ধাক্কা খেলো,তার মানে অজিত বাবু ও রমা দেবীর বড় মেয়ে মুসলমান হয়ে গেছে।

তারপর বিকি কুহু কে লাশ দেখানোর ব্যবস্থা করে বলল – আপনাকে একটু আমাদের সাথে সময় দিতে হবে যে।
আমি সারজিল আলম বিকি,পিবিআই এর ইনভেস্টিগেটর। আপনার বাবা-মা এর আকস্মিক মৃত্যুর তদন্তের দায়িত্ব আমার উপর দেয়া হয়েছে।

কুহু চোখ মুছতে মুছতে বলল- বলুন কি জানতে চান।

-আচ্ছা,আপনি একটু শান্ত হোন।স্থির হোন।তারপর কথা বলি।চলুন নিচেই একটা কফিশপ আছে,সেখানে গিয়ে বসি।

কফিশপে এখন তেমন কোনো মানুষ নেই,দুপুর টাইমে কেউ কফি খেতে আসে না।শুধু এক কোনায় এক ছেলে একা বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে বসে আছে।বিকি আর কুহু এমনদিকে বসেছে ছেলেটার মুখ দেখা যাচ্ছে না,সম্ভবত সে ও কফি খাচ্ছে।
২টা কোল্ড কফি অর্ডার করল বিকি।
বিকি জানে এই কুহু তার জন্য ইনফরমেশন এর একটা বড় সোর্স।

-আচ্ছা,কুহু আপনার বাবা-মা এভাবে সুইসাইড করার কোনো সন্দেহজনক কারণ কি হতে পারে?আপনার কোনো ধারণা?

-দেখুন,আমি আমার বাবা-মা এর বড় মেয়ে।কিন্তু বাবা মা আমাকে তাদের মেয়ে হিসেবে ত্যাজ্য করেছেন ৫ বছর আগেই।যখন আমি মুসলমান হয়ে সজীব কে বিয়ে করি।এরপর থেকে আমি যতবার বাসায় এসেছি এক পলক তাদেরকে দেখার জন্য,কোনোদিনের জন্য মা আমার দিকে ফিরে তাকান নি।

-কিছুদিন আগে তো আপনার মেঝো বোন ও সুইসাইড করল,তার ব্যাপারে আপনি কিছু জানেন?

-ইয়ে,না। আমি তেমন কিছু বলতে পারি না।

-আপনি কি কিছু লুকোচ্ছেন?দেখুন,আপনি সত্য ইনফরমেশন দিলে আপনার পরিবারের জন্যই সুবিধে হবে।

-আসলে আমি যতদূর জানি,শোহিনীর ও একটা মুসলমান ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল! আমাকে কিছুদিন আগে হোয়াটস এপ এ ম্যাসেজ দিয়ে বলেছিল,আর বলেছিল আরো কিছু কথা আছে।সে সামনাসামনি বলতে চায়।তারপর তো আর শুনা হলো না।

-শোহিনীর ও মুসলিম কোনো ছেলের সাথে সম্পর্ক!?ছেলেটা কে চিনেন?

-না,আমি সেসব কিছুই জানি না।

-আচ্ছা,শোহিনী যে নাম্বার টা ইউজ করতো সে নাম্বার টা দিন তো।
আর একটা কথা,আপনার ছোটো বোন মোহিনী কোথায়?

কথাটা শুনার সাথে সাথে যেন কুহু মেয়েটা আতকে উঠলো!

-কি বলছেন?মোহিনী কে পাওয়া যাচ্ছে না!?

[]
শোহিনী মৃত্যুর দিন-
মোহিনী আলমারি তে টাকা রাখার সময় যে ছোটো নীল বক্স টা পেয়েছিল,সেটা খুলে সে ফ্লোরে বসে নীরবে চোখের জল ফেলছে।
বক্স টা তে ছোটো দুটো চিরকুট আর একটা বেবি টেস্টের স্টিক।স্টিক টা তে দুটো লাল দাগ,মানে পজিটিভ।মোহিনীর বুঝতে বাকি রইল না তার বোন প্র‍্যাগনেন্ট ছিল।
একটা লাল আরেকটা হলুদ রঙের ছোটো চিরকুটে শোহিনীর হাতের কিছু লিখা ছিল।

লাল চিরকুট
তাওহীদ,আমাদের ভালবাসার প্রথম স্মৃতি টা কে আমি হারাতে চাই না।

হলুদ চিরকুট
ছোট্ট চিরকুট সম্পূর্ণ জুড়ে অনেকবার “ভালবাসি” লিখা।

চিরকুটুগুলো পড়ার সময় হঠাত তার মা ঘরে ঢুকছে দেখে আগে বেবি টেস্টের স্টিক ট কোনোভাবে লুকিয়ে জানালা দিয়ে ফেলে দিলো মোহিনী।

[]
কথা বলার মাঝখানে কফি আসলে কুহু মুখের নিকাব খুললে বিকি লক্ষ্য করল কুহু মেয়েটা অত্যন্ত সুন্দরী।
একটু পর পর চোখ থেকে পানি পরছে গাল বেয়ে।

-কুহু,আপনার ছোটোবোন মোহিনী কোথায় তা কেউ জানি না।আপনি যদি আপনার সব আত্মীয়স্বজন এর বাসায় খোঁজ খবর নেয়ার ব্যবস্থা করেন,আমি সার্বিক সহায়তা করব।

সাথে সাথে কুহু মোবাইল ফোন বের করে ফোন করা শুরু করলো একের পর এক।এমন সময় কফিশপের সেই কোনার ছেলেটা এইদিকে ফিরতেই বিকি খেয়াল করল এটা সেই ছাদের রহস্যময় দৃষ্টির ছেলেটা।
ছেলেটা মনে হলো বিকি কে খেয়াল করেনি।মনে হচ্ছে একটু পর উঠে যাবে।
কুহুর মোবাইল নাম্বার টা নিয়ে উঠে দাড়ালো বিকি।
অনেক সময় চলে গেছে,অফিসে যেতে হবে এখনি।তার একটু আগে সেই কোনার ছেলেটাও উঠে চলে গেলো,বিকি ছেলেটাকে ডাক দেয়ায় ছেলেটা যেন অনেক অনিচ্ছা সত্ত্বেও এলো।
বিকি মুখে একটা বোকা বোকা হাসি দিয়ে বলল
-ছোটো ভাই,আপনে বোধহয় এই এলাকার ই ছেলে?

-হ্যাঁ,কেন?

-না,আজকে এইযে এই বিল্ডিং টা তে ২জন মারা গেলো। এইটা কোনো ঘটনা বলেন?আমি খুবই অবাক হইলাম।
আমার মামা-মামী এই বিল্ডিং এ নতুন আসছে।আমি আসলা বেড়াইতে,আইসাই শুনি এই কাহিনী, কেমন লাগে বলেন তো?আমার তো ভয় লাগতেছে।

-ও,ভয়ের কিছু নাই ভাই।আমরা এই এলাকায় অনেকদিন ধরে থাকি।এমন ঘটনা ঘটে না কখনো।

-কি বলেন ভাই,কয়দিন আগেই নাকি শুনলাম আরেকটা জোয়ান মাইয়া সুইসাইড করছে!?

কথাটা শুনেই ছেলেটা কেমন যেন মুখ টা কালো করে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো।

-ভাই,আমি যাই।আমার কাজ আছে।

-আচ্ছা ভাই,যান।মাঝেমইধ্যে তাইলে দেখা হইবো।

বিকির কাছে কেন যেন মনে হয় এই নীরব টাইপের ছেলেটা তাকে কিছু ইনফরমেশন দিতে পারবে।

ময়মনসিংহের পিবিআই অফিস টা নতুন বলা যায়,১বছর ও হয়নি এই অফিস হয়েছে।শুধুমাত্র একটি রুমেই এসি আছে,আর কোনো রুমে নেই।
অফিসে ঢুকে নতুন কলিগদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলেই কাজে নেমে পরল।
কুহু থেলে শোহিনীর যে নাম্বার নিয়েছিল সেই সিমের লাস্ট ১ মাসের কল ও ম্যাসেজ বের করার দায়িত্ব দিল জুনিয়র অফিসার শিমুল কে।সেই সিম যদিও এখন বন্ধ।কিন্তু তাদের ফ্ল্যাটে যে সকল জিনিস পাওয়া গেছে তার ভিতর মোবাইলগুলো চেক করা হয়নি।
থানায় কল দিয়ে সব ইম্পর্ট্যান্ট জিনিস আনার ব্যবস্থা করে ফিংগার প্রিন্ট টিম এর সাথে কন্টাক্ট করতে গেলো বিকি।বেশকিছু ইনফরমেশন একত্র করে সে সব গুছিয়ে এগুতে চাচ্ছে।কিন্তু কোথায় যেন কোনোকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে,মাথার ভিতর অনেক কিছু ঘুরলেও বেশ বড় অংকের একটা হিসাব এখনো ইরর আসছে!

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে