#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট_২০২০
রহস্যময় ভালোবাসা
তানভীর রানা
.
রাতের খাবার শেষ করে বিছানার ওপর ল্যাপটপটা অন করলো নিলয়। ব্যস্ততার কারণে কয়েকদিন ফেসবুকে আসতে পারেনি সে। তাই আজ ফেসবুকে ঢুকে বন্ধুদের সাথে চ্যাটিং করছে। হঠাৎ ‘বদের হাড্ডি’ নামের একটা অপরিচিত আইডি থেকে নিলয়ের আইডিতে ম্যাসেজ আসলো, “হ্যালো রোমান্টিক বয়! কী করা হচ্ছে?”
নিলয় ম্যাসেজটা দেখে যতটা না অবাক হলো তার থেকে বেশি অবাক হলো আইডির নামটা দেখে। ‘বদের হাড্ডি’ কী অদ্ভুত একটা নাম। নিলয় যদিও অপরিচিত কারও ম্যাসেজের রিপ্লাই করে না তবুও সে কৌতূহলী হয়ে রিপ্লাই করলো,
– আচ্ছা, আপনি কী বদের হাড্ডি নাকি গরুর হাড্ডি?
– হোয়াট? একজন ভদ্র মেয়ের সাথে একজন ভদ্র ছেলে এভাবে কথা বলে না। আপনাকে ভালো মনে করেছিলাম কিন্তু…
– ওরে বাপরে বাপ! কী ভদ্র রে। আমি কী এমন খারাপ কাজ করলাম শুনি?
– আমাকে গরুর হাড্ডি বললেন কেন?
– বলেছি তো কী হয়েছে, মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে বুঝি?
– তা হবে কেন! একটু ভালোভাবেই বললেই তো পারতেন।
– ওহ রে, আমি জাস্ট একটু মজা করলাম। কষ্ট দিয়ে থাকলে স্যরি।
– ইটস্ ওকে, নো প্রব্লেম।
– আপনার নামটা কিন্তু সত্যিই দারুন! ‘বদের হাড্ডি’।
– ওটা জাস্ট আমার আইডি নেম, দুষ্টামি করে দেয়েছি।
– ওহ আচ্ছা, তা হঠাৎ আমার হাড্ডি খাওয়ার শখ হলো কেন?
– হাহাহা! না, আপনার নামের সাথে আমার নামের কিছুটা মিল আছে তো, তাই নক করলাম।
– তাই বুঝি! তা বদের হাড্ডির নামটা কি জানতে পারি?
– হুম অবশ্যই, নীলাদ্রি।
– ওয়াও! নাইচ নেম, দারুন মিল তো।
– হুম, একদম।
– কিন্তু আমি তো আপনার অপরিচিত, তাই না?
– দেখেন, সব পরিচিত মানুষই কিন্তু একদিন অপরিচিত ছিল।
– হুম, তা ঠিক। আপনি কিন্তু ভীষণ মজা করে কথা বলেন।
– আপনিও কম না!
এভাবেই বেশ কিছুদিন মেসেঞ্জারে কথা বলতে বলতে ওরা দুজন খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেল। কিন্তু একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে, নীলাদ্রি নিলয়কে একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছে। শর্তটা হচ্ছে, যতদিন ওদের দেখা হবে না ততদিন পর্যন্ত তারা ফোনে কথা বলবে না। তাই কেউ কাউকে কোনো কন্টাক্ট নাম্বার দেয়নি।
.
বেগম রোকেয়া ভার্সিটিতে পড়ে নিলয়। দেখতে যেমন স্মার্ট পড়াশোনাতেও খুবই মেধাবী। প্রায় দুই সপ্তাহ পরে সে আজ ক্যাম্পাসে এসেছে। ক্লাস শেষ করে ক্যাম্পাসের বড় আমগাছটার নিচে বসে প্রিয় বন্ধু জিসান, সাজিদ, রূপালি এবং মেঘলার সাথে আড্ডা দিচ্ছে সে। তারা সবাই খুব ভালো বন্ধু কিন্তু নিলয়ের প্রতি মেঘলার কেনজানি অন্যরকম একটা টান। মেঘলা মনে মনে ভালোবাসে নিলয়কে কিন্তু নিলয় মেঘলাকে শুধুই ভালো বন্ধু হিসেবে জানে। বন্ধুত্বের বাঁধন ছিন্ন হওয়ার ভয়ে মেঘলা নিলয়কে তার মনের কথা সরাসরি বলার সাহস পায় না। মাঝেমধ্যে ঠাট্টা মশকরার ছলে নিলয়কে ভালোবাসার কথা বুঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু নিলয় সব দুষ্টামি ভেবে উড়িয়ে দেয়। আজও তাদের দুষ্টামি চলছে। বাদাম খেতে খেতে মেঘলা দুষ্টামি করে হঠাৎ নিলয়কে বললো,
– কীরে বাঁদর, তোর গালফ্রেন্ডের কী খবর?
– তুই তো আমার গালফ্রেন্ড।
হেসে হেসে বললো নিলয়।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
– চুপ কর হারামজাদা, এসব লোক দেখানো বয়ফ্রেন্ড দরকার নাই আমার।
– ওই হারামজাদী, তোকে আমার মতো ভালো কে বাসবে বল?
– হুম, কিন্তু তোর সবটাই তো মিথ্যে। সত্যি সত্যি ভালোবাসলেই তো পারিস।
– সত্যি ভালোবেসেও কোনো লাভ হবে না। তোর মতো ডাইনিকে মা কোনোদিনও বউ হিসেবে মেনে নিবে না, বুঝলি?
– আরে রাখ, তোর মতো বাঁদরকেও আমার বাবা কখনো মেনে নিবে না, বুঝলি?
– তাহলে বলিস কেন ভালোবাসতে, হুম?
– মন চায় যে ভালোবাসতে, আমার কী দোষ বল?
– হয়েছে থাক, তোর মন আরো কত কী যে চাইবে!
এভাবেই ওদের দুষ্টামি মাখা ভালোবাসা চলতেই থাকে প্রতিনিয়ত।
হঠাৎ কথার মাঝখানে রূপালির প্রবেশ।
-ওই তোদের মিথ্যে ভালোবাসার নাটক বন্ধ কর তো! দেরি হয়ে যাচ্ছে, এখন চল বাসায় যেতে হবে। সেদিনের মতো আড্ডা সমাপ্ত হয়ে যায়।
.
এদিকে প্রায় তিন মাস ফেসবুকে কথা বলতে বলতে নীলাদ্রি ও নিলয়ের সম্পর্কটা ভালোবাসায় রূপ নিলো। প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত ফেসবুকে চলতেই থাকে তাদের ভালোবাসা আর খুনসুটি।
রাত দুইটায় হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল নিলয়ের। কিছুতেই ঘুম আসছে না আর। তার মন বলছে নীলাদ্রির ব্যাপারে মেঘলাকে জানানো উচিত। টেবিলের ওপর থেকে মোবাইলটা নিয়ে মেঘলাকে কল দিলো সে। এত রাতে নিলয়ের কল দেখে অবাক হয়ে গেল মেঘলা। বুকটা ধরপর করে উঠলো ওর। নিলয়ের কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা এ কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমের ঘোরে ফোনটা রিসিভ করলো মেঘলা…
– কী রে, এত রাতে ফোন! কোনো প্রব্লেম?
কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল মেঘলা।
– আরে, নো প্রব্লেম। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল তাই দিলাম।
– হারামি, এত রাতে জ্বালানোর আর মানুষ পেলি না। আমাকেই লাগবে তোর, না?
– হুম, তুই ছাড়া আর কে আছে আমার, বল?
– এত রাতে তোর সুরের প্যাচাল বন্ধ কর হারামি। আমার ঘুম পাচ্ছে।
– এই শোন না, একটা কথা ছিল…
– কী কথা? তাড়াতাড়ি বল।
– আমি ভালোবেসে ফেলেছি।
– ওয়াও! নিশ্চয়ই আমাকে?
– আরে না, তোর মতো ডাইনিকে কে ভালোবাসবে?
– তাহলে কাকে, নাম কী?
– নীলাদ্রি, আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড।
– ওহ আচ্ছা, তাহলে তোর বউকে ফোন দে। আমাকে আর কখনো ফোন দিবি না? রাখছি, বাই।
তাৎক্ষণিকভাবে ফোনটা কেটে দিলো সে।
নিলয়ের কথা শুনে মেঘলার মন নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল। সে মন খারাপ করে ফোনটা অফ করে আবার শুয়ে পড়লো কিন্তু সারারাত ঘুমাতে পারলো না।
এদিকে মেঘলাকে অনেকবার ফোন দিলো নিলয় কিন্তু মেঘলার ফোন বরাবরই বন্ধ পেল। সে এখন কী করবে মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
.
পরেরদিন সকালে ভার্সিটিতে গিয়ে মেঘলার খোঁজ করতে লাগলো নিলয় কিন্তু কোথাও মেঘলাকে দেখতে পেল না। হঠাৎ রূপালী এসে নিলয়ের হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে বললো, “মেঘলা দিয়েছে।”
নিলয় আমগাছের নিচে বসে খামটা খুলে চিরকুটটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো।
প্রিয় নিল,
তোর যে প্রেমের মায়ায় আমি পড়েছিলাম, সে মায়া এখনো কাটেনি আমার। হয়তো কাটবে না কখনও। তোর জন্য আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় প্রতিনিয়ত কিন্তু তুই সেটা কোনোদিনও বুঝবি না। আমাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবি কি? তোর প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। চলে যাচ্ছি তোর মনের শহর থেকে।
যেখানেই থাকিস, ভালো থাকিস আমার ভালোবাসা।
ইতি,
‘মেঘ’
চিঠি পড়ে নিলয় স্তব্ধ হয়ে গেল। মেঘলা ওকে কতটা ভালোবাসে সে আজ ঠিক বুঝতে পারছে। মনের ভেতর কীসের যেন শুন্যতা অনুভব করছে। এটুকু সময়ের মধ্যে সে বুঝতে পারলো যে মেঘলাকে ছাড়া তার এক মুহূর্ত চলবে না। সে মনে মনে ভাবলো কাল নীলাদ্রির সাথে দেখা করে সবকিছু খুলে বলবে।
নিলয় রাতে ফেসবুকে নীলাদ্রিকে জানিয়ে দিলো যে, কাল বিকেল ৪ টায় ওরা কাশবনে দেখা করবে।
পরেরদিন বিকেল চারটার আগে উৎসুক হয়ে কাশবনে চলে গেল নীলাদ্রি। নীল শাড়ি আর নীল টিপে যেন নীল পরীর মতো লাগছে তাকে। সে অপেক্ষায় আছে কখন তার মনের মানুষ তার কাছে আসবে।
নিলয় ঠিক সোয়া চারটায় কাশবনে গিয়ে দূর থেকে দেখতে পেল একজন নীল পরী পেছন ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। নীলাদ্রিকে চিনতে সমস্যা হয়নি একটুকুও কারণ রাতেই সে নিলয়কে জানিয়েছে নীল শাড়ি পরে আসবে।
নীলাদ্রির কাছাকাছি চলে আসলো নিলয়। নীলাদ্রি লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিলয় দুরুদুরু বুকে বললো,
– তুমিই নীলাদ্রি?
– হুম
পেছন থেকেই মাথা নাড়ালো নীলাদ্রি।
– দেখো নীলাদ্রি, আমি শুধু সারাজীবন তোমার ভালো বন্ধু হয়ে থাকতে চাই। মেঘলাকে ছাড়া আমার চলবে না। আমি মেঘলাকে ভীষণ ভালোবাসি।
– সত্যি?
বলেই মুখটা নিলয়ের দিকে ঘুরালো নীলাদ্রি।
নিলয় মুখটা দেখে অবাক হয়ে গেল। এ কী! এ তো নীলাদ্রী নয়, মেঘলা।
– আরে মেঘলা হারামজাদি তুই?
– হুম, আমি।
– এসবের মানে কী ডাইনি? তুই তাহলে সেই বদের হাড্ডি?
– হুম, বন্ধুরা মিলে প্লান করে করেছি।
– কিন্তু কেন?
– ভালোবাসি যে তোকে, বুঝিস না?
– হুম, এখন বুঝলাম। আমিও তোকে ভীষণ ভালোবাসি পাগলি। আই লাভ ইউ লট।
– লাভ ইউ টু জান।
এরপর তারা দুজন ভালোবাসার জগতে হারিয়ে গেল।
=০=