#রজনী_প্রভাতে (পর্ব-২)
৪.
তটিনী আয়রার সাথে এক রুম থাকবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আয়রাও বারবার করে বলেছে সে যেন তার রুমে থাকে। তটিনীও আপত্তি করল না। বরং কনের সাথে থাকার মজা সে উপভোগ করতে চাইছে। সন্ধ্যায় একে একে তটিনীর বাকি ফুপুরা আর বাড়ি থেকে বাবা-মা, চাচা-চাচীরা, ভাই-বোন সব চলে এলো। অবশ্য সব নয়, একজন তখনও এলো না। তটিনীর মেজো বোন মুনিরাহ। মুনিরাহ অবশ্য ওর বাড়ির নাম। ভালো নাম চন্দ্রমল্লিকা। চন্দ্রমল্লিকা চৌধূরী। মা শখ করে রেখেছেন। চন্দ্রমল্লিকা যখন জন্মগ্রহণ করে তখন সবাই বেশ অবাক হয়। কারণ বাচ্চাটা ওজনে আর আকারে একটু বড় হয়েছিল তার উপর গায়ের রঙ যা ফর্সা! ঠোঁট দুইটা যেমন টু’ক’টু’কে লা’ল ছিল জন্মের সময় এখনও তেমন। চন্দ্রমল্লিকার লিপস্টিক লাগেনা। বোনদের মাঝে, কাজিন মহলে কিংবা বন্ধু মহলে বা পাশের বাড়ির আন্টিদের গি’ব’তেও তার এই চেরির মতো ঠোঁটটা নিয়ে কথা হয়। চন্দ্রমল্লিকার চুল গুলো ঘন কালো। চন্দ্রমল্লিকা ছোট বেলা থেকেই একটা অন্যরকম শা’স’নে বড় হয়েছে। তার বাকি বোনদের মতো সে যখন তখন বাড়ি থেকে বের হতে পারেনা। সে মেহমানের সামনে যেতে পারেনা। বাকি বোনদের মতো ফেসবুকে ছবি ছাড়তে পারেনা। সবসময় কানের নিচে কা’লি দিয়ে রাখতে হয়। দাদি সাথে থাকলে দিনে দশবার ন’জ’র কা’টানোর দোয়া পড়ে ফুঁ দেয়। এই এত গুলো কাজের কারণ হলো মেয়েটির রূপ! ছোটবেলা থেকে অ’সুখ তার লেগেই থাকে। হাদিসে বলা আছে ব’দ ন’জ’র সত্য। এই ব’দ ন’জ’র উটকে হাঁ’ড়িতে নিয়ে যেতে পারে। তবে এর মানে এটা নয় কু’সংস্কার মানতে হবে! তবে তার মা সবরকম পদ্ধতি প্র’য়ো’গ করে মেয়ের উপর। বারো বছর বয়স থেকে এই মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু হয়। তা নিয়েও তার বাবা-মা ভীষণ রা’গ করতেন। আবার ছেলেরা রাস্তা ঘাটে মেয়েটাকে খুব টি’জ করতো। পরবর্তীতে আর এসব সইতে না পেরে মেয়েকে তার মামার কাছে অর্থাৎ আমেরিকাতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে ক’ষ্টটা কমে খানিকটা। কারণ সেখানেও ফর্সা লাল ঠোঁটের মেয়ে আছে। তবে ওই যে ঘন কালো কেশ, চেহারার আলাদা কাটিং, নম্র গলার স্বর! ওইসব কিছুর জন্য সেখানেও তার একটা অন্যরকম কদর ছিল। তবে সেখানে মেয়েটি এখানকার ব’খা’টেরা যেমন ডি’স্টা’র্ব করত সেই ডিস্টা’র্বের শি’কা’র হয়নি। মাঝে মাঝে তার মা এবং দাদীর মধ্যে তাকে নিয়ে একটা ল’ড়া’ই হয়। ল’ড়া’ইয়ের বিষয়টা হলো সে এত সুন্দর হয়েছে সব তাদের পূণ্যের ফল। মা বলে মা ভালো কাজ করেছে, দাদী বলে দাদী। দাদী সবসময় যুক্তিতে জিতে যায়। দাদী জী’ব’নে যত নামায কালাম পড়ছে তার ধারে কাছেও তো তাদের মা যেতে পারেনি এই সব বলে খোঁ’চা মারে। তারপর দাদী আরো বলেন,
-‘আমার দাদীবু আছিল সুন্দরী। একবার চাইলে মন ভরত না। তাকাই থাকার মতোন। আমগো মুনিরাহ তার মতোই হইছে। তোমার গোষ্ঠীত কে আছিল এমন সুন্দর! আমার পোলাও তো কম সুন্দর না! তার বাইচ্চা সব কয়ডায় তো ধলা হইছে। তো তোমার তো রঙ ময়লা। তোমার বংশেও সব এমন। আমগো কেউ আছেনি এইরকম! শুধু আমার মোর্শেদ আর মোর্শেদের বাপ খোরশেদ একটু কম ধলা।’
তটিনীর মা নুরাইসা শ্যাম বর্ণের। তাই বলে শ্বাশুড়ির থেকে সবসময় তাকে এমন কথা শুনতে হয়। তবে তিনি এটা জানেন যে শ্বাশুড়ি তাকে খুবই ভালোবাসেন। তবুও যখনিই এমন করে বলেন তখন সে কেঁ’দে কু’টে ঘর ভাসিয়ে দেয়। অবশ্য তটিনীর দাদী সবসময় এমনটা বলেন না। ত’র্কে টি’কতে না পারলেই দুর্ব’লতায় টা’ন মা’রে।
চন্দ্রমল্লিকা আমেরিকা থেকে আসছে আজকে। এবার একটু দেরিতেই ফিরছে সে। কারণ পড়ালেখার পর্ব শে’ষ করে আসছে। দেশে একেবারের জন্য ফিরছে কীনা সেটা এখনও নিশ্চিত নয় কেউ। তার আসার কথা ছিল আরো একমাস পরে। তবে আয়রার বিয়ে ঠিক হওয়াতে আরো আগেই চলে আসছে।
ঢাকায় আসতে তার রাত আটটা বেজে যাবে। মোর্শেদ আর আফজাল এয়ারপোর্টে গেছে তাকে রিসিভ করতে। তারা সেখান থেকে প্রথমে বাড়ি যাবে। দরকারি সব কিছু রেখে তারপর বিয়ে বাড়ি আসবে। কারণ বিয়ে বাড়ি সে’ফ থাকেনা। তার অনেক দরকারি কাগজপত্র আছে, পাসপোর্ট ভিসা আছে। সব বাড়িতে আগে ঠিক মতো রেখে আসতে হবে। নুরাইসা বেগম বারবার ছেলেকে বলেছেন সে ও সাথে যাবে। আফজাল স্পষ্ট বা’র’ণ করেছে। তা নিয়ে রা’গ করে তিনি শ্বাশুড়ির কাছে বসে ছেলের নামে বি’চা’র দিচ্ছেন। তার শ্বাশুড়ি শরীফা বেগম ও তাল মিলিয়ে বলছেন,
-‘আফজাইল্লা নিজেরে কী মনে করে! এরে ধ’ম’কা’য় ওরে ধ’ম’কা’য়! ঔষুধ আমার! আমার মনে চাইলে আমি খামু। তুই ডাক্তার তো কী মাতা কিনা ফালাইছস! আমারে ঠুইসা ঠুইসা তুই ওই সব গিলাস। ক্যারে! তোর এত সমিস্যা ক্যা! আইজ আসলে আমি আর তুমি মিলা ওর কানের নিচে থা’বড়ামু। ঠিক আছে!’
নুরাইসা বেগম চুপ করে গেলেন। আর কিছু বললেন না। শ্বাশুড়ির ভাষ্যমতে ছেলেটারে থা’ব’ড়ানোর কিছুই দেখলেন না তিনি। তার আফজাল সবাইর খেয়াল রাখে। দাদীরে একটু চা’পে রাখে কিন্তু তার নিজেরই ভালোর জন্য। এর জন্য এত বড় ছেলের গায়ে হাত তোলবার মতো তিনি কিছু দেখলেন না। শরীফা বেগম থেমে নেই। তিনি এবার চলে গেলেন মোর্শেদ এর কথায়। মোর্শেদ বিয়ে শাদি করেনা কেন সেই জন্য তাকেও গা’ল ম’ন্দ করছেন। নুরাইসা বেগম আস্তে করে বসা থেকে উঠে দ্রুত পা চালিয়ে রুম থেকে বের হয়ে এলো। শরীফা বেগম তার চলে যাওয়ার পর ব্যস্ত হয়ে পড়লেন আয়রার দাদীর সাথে অন্য কথা বলায়। এই মানুষটা একটু অন্যরকম। তার মুখের কথা কখন বদলে যায় টের পাওয়াও মু’শ’কি’ল।
৫.
তটিনী সারা বাড়িতে ঘুরঘুর করছে। আয়রার ফুপির মেয়েরা এসেছে। আয়রা আর তার জেঠাতো বোন ও চাচাতো বোনরা সবাই তাদেরকে সঙ্গ দিচ্ছে। আয়রা বলেছিল তাদের সাথে বসতে তবে তটিনীর একটু সংকোচ বোধ হচ্ছিল। কারণ আয়রার ফুপাতো বোন গুলোর ভাবসাবে মনে হচ্ছে তারা তটিনীর উপস্থিতি চাইছেনা। আর সেও নিজের দাম কমে যাক এমন চায়না। সে সরে এসেছে। সারা বাড়িতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। আজকে মেহেন্দির অনুষ্ঠান করার কথা ছিল তবে সেটা কালকেই করবে। কারণ এমনিতেও হলুদ একদিন পর। অর্থাৎ পরশুদিন হলুদ। মাঝখানে একদিন গ্যাপ রেখে তারা কী আর করবে! তাছাড়া এখনও অনেকে আসেওনি। তাই আজকের প্রোগ্রামটা কালকে নিয়ে গেছে।
চারিদিকে নানান মানুষ আছে। তবে বাহিরের কেউ নয়। তাদের বাড়ির মানুষ, আয়রাদের বাড়ির মানুষ মোট কথা আয়রার দাদার ও নানার গোষ্ঠী আছে। আর কেউ নেই। তটিনীকে দেখে তার ছোট ফুপু বলল,
-‘কীরে! একা একা হাঁটছিস যে? ওদের সাথে গিয়ে কথা বল। আমি চা নাস্তা পাঠাচ্ছি। যা যা!’
-‘না ফুপু। আমি একটু ডেকোরেশন দেখতে এসেছি।’
-‘ওহ। দেখ তবে। কেমন লাগছে বলিস।’
-‘ভালোই তো লাগছে। খুব সুন্দর হয়েছে।’
-‘আচ্ছা তুই থাক। কিছু দরকার হলে বলিস। ঠিক আছে!’
-‘হুম। ফুপু মা কোথায়?’
-‘তোর মা দাদু সব আয়রার দাদুর রুমে। নিচ তলায়।’
-‘ওহ।’
ফুপু চলে যেতেই তটিনী আবারও এদিক সেদিক হাঁটতে থাকে। এক সময় নিচে নেমে আসে। ড্রয়িং রুমে তেমন কেউ নেই। সবাই কোনো না কোনো একটা রুমে বসে গল্প-আড্ডায় ব্যস্ত। সদর দরজার সামনে লাইটিং এর কাজ চলছে। তটিনী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। তখনিই দুই জন স্টাফ দুইটা লাগেজ আর বেশ কিছু জিনিসপত্র নিয়ে ভেতরে ঢোকে। তাদের তাড়াহুড়োটা চোখে পড়ার মতোন। তারা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই আরো একজন ভেতরে প্রবেশ করল। তাকে দেখেই লাইটিং করা ছেলে পেলেরা সালাম দিল। তটিনী তখনও সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে তাই আকস্মিক ওদের কাউকে সালাম দেওয়ায় সে পেছন ফিরে তাকায়। ভরাট গলায় একটা লোক ছেলেগুলোর সালামের জবাব দিল। তটিনী ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। তার সামনে তাযীম দাঁড়িয়ে আছে। কত পরিবর্তন হয়েছে! তটিনী অপলক তাকিয়েই রইল। তাযীমের শারীরিক গঠনের উন্নতি হয়েছে। লম্বাতেও আগের তুলনায় বেশি লাগছে। ক্লিন শেইভে তটিনী তাযীমকে এই প্রথম দেখল। অসম্ভব সুন্দর লাগছে। সাদা শার্টের হাতা ফোল্ড করে রেখেছে। দেখেই মনে হচ্ছে তার সারাদিন বেশ পরিশ্রমে কেটেছে। চোখে মুখে ক্লান্তি রয়েছে। তাযীম ছেলেগুলোর সাথে কথা বলছিল কাজ আর কতদূর এই সব নিয়ে। তটিনীকে সেও খেয়াল করেনি। হঠাৎ করেই সামনে তাকাতেই তার চোখ পড়ে তটিনীর দিকে। চোখে চোখ পড়ে ক্ষণিকের জন্য। তটিনী খুব দ্রুতই চোখ সরিয়ে নেয়। তার ধারণা তাযীম তাকে চিনবেনা। তবে সে ভীষণ বোকা! যেখানে সে তাযীমকে চিনতে পেরেছে সেখানে তাযীম বুঝি তাকে চিনবেনা! তটিনীকে বহু বছর পর সামনাসামনি দেখে তাযীমও বেশ অবাক হলো। সে জানত তটিনী আসবে। তবে এভাবে হঠাৎ করেই যে তার দেখা পাবে সে ভাবেনি। তাযীম আশেপাশে তাকিয়ে দেখল আর পরিচিত কেউ নেই। সব বহিরাগত লোক যারা কাজ করতে এসেছে। সে তটিনীকে বিস্মিত করেই বলল,
-‘এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?’
তটিনী ভেবেছে তাযীম তাকে চিনবেও না। আর যদি চিনেও থাকে হয়তো কখনো কথা বলবেনা। কিন্তু এখানে যে ব্যপারটা উল্টো। তাযীমের সাথে কথা বলতে বা তাযীমের কথা শুনতে তার কেমন যেন লাগছে। তাযীমের ভরাট পুরুষালি কন্ঠস্বরটা তার হৃদয়ে কেমন শিহ’রণ তুলল। তাযীম আবারও বলল,
-‘এখানে একা কী করছ?’
-‘দেখতে এসেছি।’
-‘কাকে?’
-‘কাউকে না। এখানে লাইটিং এর কাজ চলছে তাই দেখছি।’
-‘যদিও এটা আহামরি দেখার কিছু না। তবে তোমার যেহেতু শখ হয়েছে দেখতে পারো। শিখে নিতেও পারো। ভবিষ্যৎে বলা তো যায় না, কখন কী কাজে লেগে যেতে পারে!’
এই লোকটার স্বভাব আর ঠিক হলো না। এমন ট’ন্ট মে’রে কথা বলে কেন লোকটা! তটিনীর রা’গ উঠে গেল। সে গুটিগুটি পায়ে সামনের দিকে অগ্রসর হলো। প্রথমে ভাবল উপরে চলে যাবে। পরে ভাবল না, সে তার মায়ের কাছেই যাবে। তার বড় বোন তানিয়া আর আয়রার বড় বোন আনিকা ওরা শপিং এ গেছে। তাই তাদের সাথেও যে একটু বসবে তাও হচ্ছে না। তার থেকে ভালো মায়ের কাছে বা দাদীর কাছে বসে থাকবে। তটিনী সেদিকেই হাঁটা ধরে। তখন তার পেছনে অন্য কারো অস্তিত্ব সে টের পায়। পেছন ফিরে দেখে তাযীম। সে অবাকই হলো। তাযীম তার পিছু নিচ্ছে কেন! সে আবারও হাঁটা ধরল এবং খেয়াল করল তাযীমও তার পেছনেই আসছে। এবার সে দাঁড়ায় তাযীমকে কিছু বলার জন্য। তবে তাযীম পাশ কা’টিয়ে সোজা তার দাদীর রুমে ঢুকে পড়ে। তটিনী হা করে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। পরবর্তীতে নিজেকে সামলে সেও রুমে ঢোকে। দেখে তাযীমকে তার দাদী অর্থাৎ আয়রা আর তাযীমের দাদী জড়িয়ে ধরে আছেন। তার চোখে পানি। নাতিকে বহুদিন পর তিনি দেখছেন তাই এমন করে কাঁদছেন। তটিনী ভেতরে ঢুকে দেখে তার মা নেই। তবে তার দাদী আর বড় ফুপু বসে আছেন বিছানায়। সে গিয়ে বড় ফুপুর পাশে দাঁড়ায়। তাযীম একবার চোখ তুলে তটিনীর দিকে তাকালো। তাতেই তটিনী কেমন জমে গেল। সে বুঝতে পারছেনা এমন কেন হচ্ছে। তাযীম খুব সুন্দর করেই তটিনীর দাদী ও ফুপুর সাথে কথা বলল। তারা ছেলেটির আচার ব্যবহারে বেশ সন্তুষ্ট। ছেলেটি ছোটবেলা থেকেই সবাইকে মান্য করে চলে, এই সেই নানান প্রশংসা করা শুরু হলো তার। তটিনীর ভালো লাগল না এসব। এই লোক যে কেমন সেটা তার থেকে ভালো আর কেউ জানেনা। রুম থেকে সে বের হয়ে এলো। তার আসা যাওয়াতে কারো কাছে কোনো ম্যাটার করল না দেখে সে ভীষণ দুঃখ পায়। ধীরে ধীরে পা চালিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠে আর ভাবতে থাকে তার মেজো আপু এলে সে আপুর সাথেই বসে থাকবে। কাউকে আপুর কাছে আসতে দিবেনা। আপুকে বলবে যে এরা তাকে দেখেও না দেখার ভান করে ছিল। সে ক’ষ্ট পেয়েছে। তটিনী ছোট্ট বাচ্চাদের মতো অ’ভি’যো’গ তৈরি করছিল। তাযীম ও যে আবার তার পেছন পেছন আসছে সে খেয়াল করেনি। হঠাৎ উপর থেকে বাচ্চা দুই তিনটা দৌঁড়ে আসে। এমন ভাবে আসে যে আকস্মিক তাদের আগমনে ঘা’ব’ড়ে গিয়ে পা স্লিপ কে’টে সে ঘুরে গিয়ে পড়ে যেতে নেয়। তবে পড়ল না। তাযীম তাকে তার শক্ত বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিল পরম যত্নে। তাযীম স্পষ্ট অনুভব করতে পারছিল তটিনীর হার্টবিট বেড়ে গেছে, তী’ব্র গতিতেই হচ্ছে। ভ’য়ের চোটে তটিনীও তার গ’লা ঝা’পটে ধরল।
এইরকম দৃশ্য দেখে বাচ্চাগুলো হু হা হি হি করে হাসতে থাকে। আর ড্রয়িংরুমে উপস্থিত দুই তিনটা উঠতি বয়সি মেয়ে আর কাজের লোক হা করে তাকিয়ে থাকে। তটিনী একটু শান্ত হতেই সরে এলো তাযীমের কাছ থেকে। তাযীম তাকে বলল,
-‘ঠিক আছো!’
-‘হুম।’
-‘আমার মনে হচ্ছে ঠিক নেই। দাঁড়াও পানি নিয়ে আসছি। পানি খেলে ভালো লাগবে।’
তাযীম পানি আনতে নিচে গেল। এই ফাঁ’কে তটিনীও উপরে চলে এলো। তার চোখ মুখ ল’জ্জা’য় লা’ল হয়ে গেছে। একটু আগের পরিস্থিতি মনে করতেই তার হাত পা তখনকার থেকেও আরো বেশি ঠান্ডা হয়ে জমে যাচ্ছে। এর মধ্যেই সদর দরজা দিয়ে বাড়ির অন্যান্য পুরুষরা আর অতিথি পুরুষ যারা আছে সব ভেতরে ঢোকে, তাদের মধ্যে তটিনীর বাবা আর চাচারাও আছে। ভাগ্যিস তাদের সামনে এমন কা’ন্ড ঘটেনি।
তাযীম পানি এনে দেখে তটিনী নেই। সে বেশ রে’গে গেল। মেয়েটা এত অ’বা’ধ্য কেন? নিজের ভালো তো পা’গলেও বোঝে। এই মুহূর্তে একটু পানি খেলে তো তারই ভালো হতো। যত্তসব!
তাযীম পানির বোতলটা নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে। রুমে ঢোকার আগে আয়রার রুমের দিকে একবার দৃষ্টিপাত করে। তবে তটিনীকে এখান থেকে দেখা গেল না।
#চলবে।
ইনশিয়াহ্ ইসলাম।