#রঙ বেরঙের খেলা
#আলিশা
#পর্ব_১০+১১
হাত পায়ে কম্পন শুরু হয়ে গেছে সাবিহার। মাথায় ভেঙে পরলো যেন সমস্ত আসমানটা। পায়ের নিচে এক টুকরো মাটি বিহীন চারদিকে যেন গভীর খাদ। যেদিকেই চোখ পরে শুধু অসহায়ত্ব সুদূর হতে ছুটে এসে তাকে জাপ্টে ধরে। রিপোর্ট নেওয়া হলো না। হনহন করে এলোমেলো পায়ে সাবিহা বেরিয়ে এলো হসপিটাল থেকে। বেশ কিছু দূর। চার তলা হতে দু তলা আসতেই পায়ে অদৃশ্য বেড়ি পরলো। চোখ ঝাপসা হচ্ছে বারংবার। হাঁটা যাচ্ছে না। কেমন কষ্ট! অসহ্য, উপায়হীন লাগছে নিজেকে। মেরে ফেতলে ইচ্ছে করছে সভ্য নামক মানুষটাকে। সাবিহা দিশেহারা হয়ে পরলো। হুট করে থমকে গিয়ে সে হসপিটালের বারান্দায় একটা পিলারের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দেহের ভারসাম্য বজায় রাখলো। তারপর আচমকা হাতের ব্যাগ থেকে বের করলো মুঠোফোন। ফোন করলো কাউকে। এলোমেলো, পাগল পাগল লাগছে সাবিহার।
— হ্যালো কুসুম, আমার না কেমন যেন দুঃখ দুঃখ লাগছে। খুব খারাপ লাগছে দোস্ত। একটা উপায় বল তাড়াতাড়ি। কি করলে আমার বুকের উপর থেকে এত্ত বড় কষ্টের একটা পাহার সরে যাবে? তুই না অনেক বই পড়িস। একটা উপায় বল। আমার সহ্য হচ্ছে না। এই কষ্টের পাহার সরানো দরকার। নয়তো আমি মরেই যাবো। কিন্তু আমার মরলে চলবেনা। অনেক হিসাব বাকি।
উদভ্রান্তের মতো ব্যাকুলতা নিয়ে বলে ওঠা কথা সাবিহার। ফোনের ওপাশের মেয়েটা বুঝি বড়সড় একটা ঝটকা খেলো। সামলে উঠতে সময়ের দরকার। সাবিহা এমন করে কথা বলছে? কেমন খাপছাড়া, বেসামাল দশা।
— আমি এক জায়গায় পড়েছিলাম নির্জন, নিশ্চুপ প্রকৃতির মাঝে চিৎকার করে, মন প্রাণ উজাড় করে কান্না করলে নাকি দুঃখ কমে। কষ্ট নীলিন হয়।
অবাকতা নিয়ে বলে উঠলো ফোনের ওপাশে থাকা মেয়েটা। সাবিহা গভীর মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করলো কুসুমের কথাগুলো। তারপরই তড়াক করে কেটে দিলো ফোন। একটা ছুট লাগালো ভাঙা, অপদস্ত হওয়া মন নিয়ে। পারলে যেন উড়ে যায় সাবিহা। তার মন বলল কুসুম ঠিক বলেছে। বহু কষ্ট জমে পাহাড় ছাড়িয়ে গেছে। কান্নাও জমে জমে পুঁজিভূত। এদের মন থেকে বের না করলে সাবিহা দম আটকে মারা যাবে। ঠিক আকস্মিক! হুট করে মরবে। একটা চিৎকার দেওয়ার সাধ্যও তার হবে না।
ভাবনা চিন্তা পাঁচ মিনিটের মধ্যে স্থির করে দাড় করালো সিলেটকে। হ্যা, সিলেটের নিঃশব্দ, জীবন্ত প্রকৃতির মাঝে কান্না করে দুঃখ ঝড়ানো যাবে। সাবিহা উন্মাদ হয়ে বাসে উঠে পরলো। তার সিলেট যেতে হবে। অনেক কষ্ট হচ্ছে। খুব বেশি। বিবশ হয়ে অবুঝের মতো বাসে উঠার পর সাবিহার কষ্ট গুলো তড়তড় করে বেড়ে গেলো। গত রাতেই কারো সাথে বাসে এলো। পাশে, গা ঘেঁসে বসে। বারংবার মনে সভ্যর প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত হচ্ছে। ঘৃণা হচ্ছে অতিরিক্ত। তার চেচিয়ে সভ্যর মুখোমুখি দাড়িয়ে এই মুহূর্তে বলতে ইচ্ছে হলো
” আপনি একটা কাপুরুষ। না হলে আপনি ওমন করতে পারতেন না আমার সাথে। ”
এইটুকুতেই সাবিহার ভাবনা বিচারণ করলো। একবারও আর একটু এগিয়ে গিয়ে তার ভাবা হলো না সে কি করেছে সভ্যর সাথে? নিজের দোষ সম্পূর্ণ ধোয়ায় আড়াল হলো।
.
প্রায় তিন ঘন্টা বা তারও বেশি সময় পর সাবিহা পৌঁছালো সিলেট। বড্ড বেশি হাশফাশ করছে সে। চেনা আছে সিলেটের প্রায় পুরোটা জায়গা। চলে এসেছে পাহাড় আর চা বাগানের মাঝে। কিন্তু কান্না আসছে না। আশ্চর্য! সাবিহার অসহায়ত্ব আরো বেড়ে বেগবান হলো। গলায় বুকে পিঠে যেন তারা শক্ত করে অস্তিত্ব গড়ে নিয়েছে। সাবিহা পাগলের মতো আবারও ফোন করলো কুসুমের কাছে। একবারের বেলাতেই ফোন তু লল মেয়েটা। সাবিহা উগ্রতা নিয়ে শুধালো
— তুই আমাকে মিথ্যে বলেছিস? আমি সিলেটের চা বাগানে এসেছি। তবুও কান্না আসতেছে না।
কুসুম মেয়েটা এবার সত্যিই অসীম আশ্চর্যের ভুবনে প্রবেশ করলো যেন। সাবিহা যে সত্যিই মাত্র কয়েক ফোটা চোখের পানি ক্ষরণ করার জন্য রাজশাহী থেকে সিলেট যাবে ক্ষণিকের মাঝেই তা ভাবনাতীত। কুসুম রয়ে সয়ে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো সাবিহাকে
— তুই কি মেন্টালি ডিপ্রেসড? এমন পাগলের মতো করার কারণ কি সাবিহা?
এই একটা প্রশ্নেই যেন ছিল সমুদয় আকুলতা। কান্না আটকে, খিল দিয়ে রাখা দরজার চাবি। খট করে খুলে গেলো সাবিহার বুকের দ্বার। মুহুর্তেই আচমকা হু হু করে বেড়িয়ে এলো কান্না। সাবিহা ভিজে জল গড়িয়ে পরা চোখ নিয়ে ভাঙা গলায় বলল
— হয়তো! আমি পাগল হয়ে গেছি।
কথাটা বলেই সাবিহা কেটে দিলো ফোন। ধপ করে বসে পরলো ভূমির বুকে জড়িয়ে থাকা সবুজের মাঝে। দু’হাটু ভাজ করে মুখ ডুবে দিলো তাতে। ফুপিয়ে অসাড় হয়ে অঝোর ধারায় ঝরতে দিলো অশ্রু। তার এখন কি হবে? পড়ালেখা হবে? সভ্যকে ছাড়িয়ে সেও মিডিয়া জগতে নাম লিখতে চেয়েছিল স্বর্ণাক্ষরে। সভ্য দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। পড়ালেখা তো সভ্য শেষ করেছে জাবি থেকে। শিক্ষাতেও উঁচুই রয়ে গেলো। সাবিহাকে শুধু করে দিলো দশ দিক থেকে নিচু। সাবিহা হাঁটু থেকে মুখ তুলে হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো। বলে উঠলো গলা ছেড়ে সমস্ত রাগ ঝেড়ে
— আপনি আমার দু চোখের বিষ সভ্য ভাই। আমার দুইটা চোখের বিষ।
মুখের বাণী ব্যাক্ত হতেই তারা ছুটে গেলো পাহাড়ের পানে। প্রতিধ্বনি তুলে পাহাড় ছুড়ে দিলো দ্বিতীয় বার তা গগনে, পবনে। সাবিহা কান্না করছে। কাকে এই সর্বনাশের কথা জানাবে? নাকি না জানিয়ে হুট করে অপারেশন করে নেবে সবার আড়ালে? নব এই ভয়ংকর ভাবনা মনে জমতেই সাবিহা ঝট করে মাথা তুলল। অস্তিত্ব হয়ে ওঠার আগেই কি সভ্যর চিহ্ন নিশ্চিহ্ন করে দেবে সাবিহা?
কল্প জগৎ আর বাড়তে দিলো না সাবিহা। নিপুনতার সঙ্গে এক ধারালো কাজ করে বসলো সে। আচমকা পাশে একটু আগে অনাদরে ফেলে দেওয়া ফোন কুড়িয়ে নিলো। ঝটপট ফোন লাগালো রাহেলা ইসলামকে। বাচ্চা নিয়ে তাদের অভিমত কি হতে পারে? এক বার অতিক্রম হলো, দুবার পেরিয়ে গেলো তিনবারই বেলায় ফোন ওঠানো হলো। সাবিহা বেপরোয়াভাবে হুড়মুড় করে বলে উঠলো
— আম্মা, আমি সভ্য ভাই
এর অধিক কথা মস্তিষ্ক সাজাতে পারছে না। আচ্ছা, মা’কে কিভাবে বলা যায় এই খবর? লজ্জা দ্বিধা আর সঙ্কোচের হেতু যে এখবর। সাবিহা কিয়ৎক্ষণ ভাবলো। এর নিমিত্তে তার ভাবনায় বিশেষ কোনো মুনাফা যোগ হলো না। ওপাশে সাবিহার মা সাড়া চেয়ে যাচ্ছেন মেয়ের থেকে। অবশেষে সাবিহা বলে উঠলো
— আম্মা, আমি যদি কনসিভ করি মানে বড় মার নাতি নাতনি যদি আমার পেটে আসে তাহলে পরিস্থিতি কেমন হবে?
সাবিহার প্রশ্ন ছোড়ার সাথে সাথে ওপাশ হতে জবাব এলো না। বেশ সময় লাগলো। রাহেলা ইসলাম উত্তেজিত না হয়ে হিমালয়ের মতো অটুট আর হিম লাগা কন্ঠে বললেন
— তোর বাবা হলো জেলা প্রশাসক। তুই আর সভ্য সিনেমা শুরু করছিস। সংসার টিকবে কিনা এটাই বড় কথা। এর মাঝে আবার বাচ্চা! সভ্য যদি স্বীকৃতি না দেয় এই বাচ্চার? সে তো তোর উপর জেদ করে টিভিতে উঠে যাচ্ছে। তুই বাচ্চা নিয়ে কোথায় দাঁড়াবি? তোর বাবার সম্মান কি হবে?
এরপর এক মিনিট নীরবতা। যেন হাপিয়ে গেছেন সাবিহার মা। সাবিহার হঠাৎ মনে হলো মা বুঝি সব অবলোকন করে নিয়েছেন। বুঝে গেছে বোধ হয়।
— আমি তোর মা হয়েও কোনো সিদ্ধান্ত দিতো পারবো না। তুই জগত পরিবেশ বুঝিস। অনার্স পাশ করবি এক বছর পর। একবার ঠান্ডা মাথায় নিজেকে মায়ের আসনে বসিয়ে ভাবিস আর একবার পরিস্থিতির আসনে। তারপর মন যা চায় করিস।
কথাগুলো বলেই ওপাশ হতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে এলো। মা নিজেই ফোন কাটলো নাকি আচমকা নেট প্রবলেম হলো তা আর ঠাহর করা হলো না সাবিহার। দ্বিতীয় বারের মতো ফোনটা পায়ের নিকট বিছিয়ে থাকা থোকা থোকা ঘাসের উপর অযত্নে রাখলো সাবিহা। মা যে তাকে এক পৃথিবী সম চিন্তা মাথার উপর দিয়ে দিলো। ভাবনারা এসে ভির জমিয়েছে মনও মস্তিষ্কে। ইতিমধ্যে চা বাগানে কাজ করতে এসেছে কিছু মেয়েরা। সোরগোল কানে আসছে মৃদু মৃদু। সাবিহা উদাসী ভাবের দখলদার হয়ে ফিরে চাইলো পেছন দিকে। দু একজন মা মত মেয়ে আছে। পিঠে ঝুড়ি বুকে বাচ্চা। কিনা যত্নে আগলে রেখে চা পা সংগ্রহ করে যাচ্ছে। এতো মূল্যবান একটা সন্তান? মা এতো কেন আদর করে তার বাচ্চাকে? কি হতো ঘরের মাঝে বাচ্চ রেখে কাজ করতে আসলে? একটু কান্নাকাটিই তো করবে। কিন্তু তা না করে বাচ্চার চাহিদায় অবহেলা না করে বুকে রেখেছে। যেন সাত রাজার ধন! ঐ ছোট শরীরেই মায়ের বড় দেহের শক্তি লুকায়িত। সাবিহার চোখ ভিজে এলো। বুকভরা কষ্ট, দুঃখ, রাগ নিয়ে সে চাইলো নিজের পেটের দিকে। মিনিট গড়িয়ে গেলো পাঁচ। ওভাবেই তাকিয়ে রইলো। একটা সময় হুট করে বলে উঠলো
— আমি সত্যিই হেরে যাচ্ছি। সভ্যই জিতে যাচ্ছে।
চলবে…..
#রঙ_বেরঙের_খেলা
#আলিশা
#পর্ব_১১
ভাবনা চিন্তা করে সাবিহা মাতৃত্বকে প্রাধান্য দিলো। মা মানে মহত। মা মানে মরণ বাজি রেখে বিনাস্বার্থে সন্তান লালন করা। সাবিহাও সেই পরম মমতাময়ী মায়ের সামিল হতে চাইলো। বাচ্চাটা তো আর দোষ করেনি। সভ্যর রাগের প্রভাব সাবিহা নিজের সন্তানের উপর কেন গড়াবে? যত যাই হোক, সন্তনটা তো তারও। এমনই এক টুকরো বুঝ মনে জায়গা নিলো। সাবিহা নিজ বাসা গন্তব্য করে বাসে উঠে পরলো। সিলেট আসার সময় ঝাঁক ঝাঁক উত্তেজনা আর চিন্তায় ব’মির কথা ভুলে থাকলেও এখন সে কথা দপ করে জ্বলে উঠলো মনে। সাথে সাথেই পেটর খাবার ধাক্কা দিয়ে উপরে উঠে পরলো। মাথা চক্কর দিলো। সাবিহার চোখ চিকচিক করে উঠলো। নীরবে নিজ সন্তানের দিকে মনোনিবেশ করে গাঢ় অভিমান দেখিয়ে বলল
” তুই অন্তত তোর বাবার মতো নিষ্ঠুর আচরণ করিস না ”
কিন্তু মায়ের একথা বুঝি অবিদ্যমান, অনাগত বাচ্চাটা বুঝলো না বা শুনলো না। একটা সময় সাবিহার উগড়াতে হলো পেটের অন্ন। বাসের মানুষদের সাহায্যে কয়েকটা পলি নিতে হলো। হঠাৎ করে সভ্যর কথা মনে স্মরণ হলো। গ্লানি মাখা চোখ মুখ নিয়ে আজ কারোর উপর মাথা এলিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ঢুলুঢুলু দেহটাও কোনো শক্তপোক্ত দেহের সাথে ঠেস দিয়ে রাখা যাচ্ছে না। পাশে বসে আছে শুধু এক মাধ্যবয়ষ্ক মহিলা। তার চোখ মুখ কুঁচকে রাখা। বামের জোড়া সিট থেকে একটা ছেলে কেমন অসাধু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। গা ঘিনঘিন করে উঠলো সাবিহার। ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও বোধ হয় ছেলেটার চোখের পলক আর পরবে না। সাঁঝ হয়ে আসছে। পরন্ত বিকেলে আঁধারের ছায়া ফালি দিয়ে সে বাসা অব্দি নিরাপদে পৌঁছাতে পারবে তো? বাবা তো বাসায় নেই। দিনাজপুরে আছে। ও জেলায় বাবা ডিসি হিসেবে কর্মরত দু’মাস হলো। রাত হয়ে যাবে বাসায় পা ফেলতে ফেলতে। সাবিহা চিন্তায় আর অসুস্থতায় হাশফাশ করে উঠলো। সব দোষ একসময় গিয়ে পরলো সভ্যর উপর। সভ্যর জন্যই তার আজ এদশা। আবারও সাবিহার মনে এক রত্তি বিতৃষ্ণা তুতের মতো ছড়িয়ে গেলো সভ্যকে নিয়ে।
.
বাস রাজশাহী পৌঁছালো মাগরিবের মুখ্যম সময়ে। ব্যাস্ত শহরে বিশাল মসজিদের উঁচু স্তম্ভের উপরের মাইকে তখন ধ্বনিত হয় আজান। আহব্বান করা হচ্ছে, ব্যাস্ততা ফেলে একটু সময় প্রভুর নামে বিলিয়ে দিতে বলা হচ্ছে। সাবিহা বাস থেকে নেমে আবারও গরগর করে ব’মি করে দিলো। অসাড় হয়ে এলো শরীর। তবুও বাম হাত মুখে চেপে চলে গেলো একটা দোকানে। তড়িঘড়ির উপর পানির একটা বোতল কিনে দোকানের পেছনে গিয়ে মুখ ধুয়ে নিলো। কুলকুচি করলো। এবার বাসায় যাওয়ার পালা। ভাবনার মাঝে একবার চোখ যখন গেলো পাশের এক বিল্ডিং-এ। মনটা তখন যেন অবজ্ঞায় ছেড়ে গেলো। সাবিহার ঠিক সম্মুখের পাঁচ তলা ভবনের তিন তলাটাই সভ্যদের ফ্লাট। সে কি চলে গেছে আজ? হয়তো গেছে। সুষ্মিতার সাথে ঢলাঢলি করে ছবি উঠতে গেছে। সাবিহার বুকটা আচমকা ঈর্ষায় ভরে উঠলো। অসহ্যের কাতারে হুট করে ঠাঁই পেলো সুষ্মিতা নামক রূপবতী মেয়েটা।
.
দিন দুই পেরিয়ে যায়। সাবিহা ঘরের বাইরে পা রাখে না। শুধু তার বারান্দায় মতো বিশাল বেলকনি পর্যন্তই তার পদচারণ চলে। মায়ের সাথেও ঠিকঠাক কথা হয়না। খেতে বসলে মাছের গন্ধ, কাচা মাংস দেখলে নাক মুখ সিঁটকানোর মতো স্বভাবগুলো খুব ভালোভাবেই উন্মুক্ত করে দিয়েছে তার গোপন খবর। রাহেলা ইসলাম বুঝে গেছেন, নিশ্চিত হয়েছেন শতভাগ। সাবিহার সাথে যখন সেদিন অস্পষ্ট কথা হলো তার। তিনি বুঝলেন সাবিহা ভয়ে গুটিয়ে গেছে। আশরাফুল ইসলাম কেও এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এমনকি সাবিহা বলে দিয়েছে সে কাউকে জানাবে না বাচ্চার কথা। তার ভাবনা সভ্য জোর করে তার বাচ্চা নষ্ট করাবে। তাই সে নাকি এক মেজর টাইম ফিক্সড করে রেখেছে। তখন জানাবে সবাইকে। সেদিন হবে সভ্যর জীবনের চরম হতাশার দিন। বারংবার সে আফসোস করবে নিজের কর্মের জন্য। রাহেলা ইসলাম মেনে নিয়েছেন মেয়ের কথা। চলুক ওদের নাটক। চলছেই তো, করছেই তো ওরা নাটক। কাউকে গণ্য মাণ্যর ছিটেফোঁটাও তারা দেয় না। ফারজানা বেগমও সভ্যকে সংসার করা নিয়ে প্রশ্ন করলে সে বলে
” আমি কিছু জানি না ”
— আম্মাহ সে যদি জানে তাহলে কি সত্যিই স্বীকৃতি দেবে না তার বাচ্চার?
হঠাৎ সাবিহার গভীর ভাবনায় বলে ওঠা কথা। রাহেলা ইসলাম ঈষৎ চমকে তাকালেন মেয়ের পানে। ড্রইং রুমে একসাথে বসে আছে মা মেয়ে। সম্মুখে টিভি চলে। সাবিহার মা একবার টিভিতে নজর করলেন। সভ্যকেই দেখা যায় টিভিতে। কত মোহনীয় লাগছে ছেলেটাকে। নজর ফেরাতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কিন্তু কোথাও একটা খারাপ লাগা মন দেখিয়ে দিচ্ছে। সুষ্মিতাকে রাহেলা ইসলামের ভীষণ রকমের অপছন্দ। সভ্য থিয়েটারে উঠছে। সেখানেও এই মেয়েটা। তারা দুজনেই হবে নাটকের প্রধান চরিত্র।
— দিতেও পারে নাও পারে। দিনকে দিন সভ্য সবার নজরে আসছে। আসছে কি এসে গেছে। কিন্তু তার যে বউ আছে এ কথাটা কেউ জানে না এখন পর্যন্ত।
প্রায় মিনিট তিনেক পর সাবিহা মায়ের থেকে জবাবা পেলো। কথাগুলো সত্যি। সাবিহাও ধরে নিলো সভ্য এমনটা করতে পারে। সে তো শুধু সাবিহার সাথে রঙ বেরঙের খেলায় মেতেছে। সেই খেলায় সাবিহাকে হারিয়ে দিতেই কি সভ্য এমন কাজ করেছে? সাবিহা আঁতকে উঠলো। কিন্তু একটা বাবা কি সত্যিই অস্বীকার করবে তার সন্তানকে?
— সাবিহা ফ্রিজে খাবার রান্না করা আছে। খেয়ে নিস। তোর বাবা গাড়ি পাঠালো মনে হয়। রওনক আর আমি যাচ্ছি। সাবধানে থাকিস। কালই চলে আসবো।
ভাবনার ছেদ পরলো মায়ের কথায়। সাবিহা পাশ ফিরে বলল
— বাবা আবার বাসা পাল্টাবে?
— হুম।
— সাবধানে যেও। আর তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।
রাহেলা ইসলামের মায়া হলো মেয়ের কথায়। দাম্ভিকতায় ভরপুর থাক আর অশাসিত হোক সাবিহা। কিন্তু তার তো সন্তান। এভাবে মন মরা রূপে সাবিহাকে দেখলে আফসোস হয় রাহেলা ইসলামের। রূপ নিয়ে গর্ব করা, নিজের যত্নে দিনের সিংহ ভাগ সময় পার করা মেয়েটা আজ আয়নার নিকট বোধ হয় যায়ই না।
মা আর ভাইকে বিদায় দিতে দিতে আছরের ওয়াক্ত পেরিয়ে গেলো। সাবিহা টিভির সম্মুখেই বসে আছে। হিন্দি মুভি ছাড়া মুভি দেখা হয়না তার। টিভির সামনেও বসা হয় না বেশি। কিন্তু দু’দিন হলো বসছে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বাংলা চ্যানেল গুলোই আকর্ষিত করে। বোধ হয় হৃদয় পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য। পুরো দৃশ্যপট অন্যমনষ্ক হয়ে দেখে গেলেও সভ্যর চেহারা সামনে আসতেই তড়াক করে মনোযোগ ফেরে। হৃদয়ের ধিকিধিকি আগুন দাউদাউ রূপ নেয়। সভ্যকে যতটা না অসহ্য লাগে তার চেয়ে অধিক অসহ্য লাগে সুষ্মিতাকে। সহ্যই হয় না মেয়েটাকে। এবারও তাই হচ্ছে। না চ্যানেল পাল্টাতে ইচ্ছে করে না দেখতে ইচ্ছে করে। তবুও আবার দেখার জন্য মরিয়া হয় মন।
— বড় মা নেই?
সাবিহার বিষাক্ত মুহূর্তে হঠাৎ ডাক পরলো। চমকে উঠতে বাধ্য হলো সাবিহা। ঝটপট চোখ মেলে চাইলো দরজার দিকে। সভ্য দাড়িয়ে আছে। সাবিহা কি দরজা বন্ধ করে নি? হয়তোবা! এই বদ অভ্যাস আর পিছু ছাড়লো না।
— না।
অত্যম্ত শান্ত থাকতে চাইলো সাবিহা। সভ্যর আচমকা আগমনে যে সে ভরকে গেছে তার বিন্দুমাত্র ছাপ মুখে ফুটিয়ে তুলল না। সভ্য এগিয়ে গেলো সাবিহার নিকট। মাত্রই তার ঢাকা থেকে রাজশাহীতে আসা। সেদিন সাবিহাকে বাসায় দিয়ে মায়ের কাছে থেকে পরদিনই চলে গেছে। কিন্তু ছোট একটা ভুল করে গেছে। সাবিহার মাথায় ইনজুরি-র জন্য ডাক্তার যে প্রেসক্রিপশন করে দিয়েছিল তা আর সাবিহাকে দেওয়া হয়নি। পকেটেই বহন করে ঢাকা টু রাজশাহী, রাজশাহী টু ঢাকা যাতায়াত করা হয়েছে। তাই আজ আবার তাকে অগত্যা শুটিং ফেলে রাজশাহী মুখো হতে হলো। একবার অবশ্য ভেবেছিল দেওয়া লাগবে না। খামোখা কি জন্য, কিসের আশায় সে কষ্ট করে এতো রাস্তা পারি দেবে? যে মেয়েটা তার একমাত্র পরম ভালোবাসার মা কে কষ্ট দিয়েছে অপমান করেছে তার জন্য? ইচ্ছেই করে না। কিন্তু তবুও পরে নিয়ে এলো। সাথে ওষুধও কিনে আনলো।
— তোমার প্রেসক্রিপশন আর মেডিসিন।
দু’টো মেডিসিনের পাতার সাথে প্রেসক্রিপশন সাবিহার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল সভ্য।
সাবিহা মুখ ঠাঁই বসে রইলো। মিনিট দুয়েক কোনো কথা তার কন্ঠ হতে এলো না। সভ্য কুঁচকে ফেলল ভ্রু। সামান্য বিরক্তি নিয়ে সাবিহার পাশে সোফার উপর রেখে দিলো ওষুধ। ক্লান্ত সে। একটু বিশ্রাম প্রয়োজন ছিল তার। কিন্তু সে আর বসবে না। বুঝে গেলো সাবিহা বাসাতে একাই। তাই পা চালালো সভ্য। কষ্ট করে একটু নিজের বাসাতেই যাওয়া যাক। সভ্য এমন ভাবনা নিয়ে যখন দু কদম এগিয়ে গেলো দরজার দিকে ঠিক তখন পেছন থেকে হালকা কিছু উড়ে এসে যেন পরলো ঘাড়ে। সভ্য বিস্মিত হলো। আপনাআপনি ভাজ পরলো ঘর্মাক্ত কপালে। সাবিহা এমন সময় পেছন থেকে বলে উঠলো
— মাথায় ব্যাথা পেয়েছি কবে আর দুইদিন পর আপনি প্রেসক্রিপশন দিতে এসে ভালো সাজতে এসেছেন? চোখ নাই আপনার? আমি আপনার ওষুধের ভরসায় বসে থাকবো? আমি ট্রিটমেন্ট করেছি। আপনার ওষুধ আপনি নিয়ে যান।
চলবে…
#রঙ_বেরঙের_খেলা
#আলিশা
#বোনাস_পার্ট
— মাথায় ব্যাথা পেয়েছি কবে আর দুইদিন পর আপনি প্রেসক্রিপশন দিতে এসে ভালো সাজতে এসেছেন? চোখ নাই আপনার? আমি আপনার ওষুধের ভরসায় বসে থাকবো? আমি ট্রিটমেন্ট করেছি। আপনার ওষুধ আপনি নিয়ে যান।
কথাগুলো সভ্যর কানে পৌঁছাতেই পিছু ফিরল সভ্য। সাবিহা প্রেসক্রিপশন আর ওষুধের পাতা ছুড়ে দিয়েছিল তার দিকে। তা এখন গড়াগড়ি খায় মেঝের উপর। সভ্য মেঝে থেকে চোখ তুলে সাবিহার দিকে চাইলো। শান্ত কন্ঠে বলল
— আমি আজই প্রেসক্রিপশন দেখলাম। মনেই ছিল না আমার৷
কথাটা বলে সভ্য নির্লিপ্ত চোখে তাকিয়ে রইলো সাবিহার দিকে। সাবিহা কিছু বলছে না। সভ্য একটু পর আবারও বলে উঠলো
— দরজা লাগাও। আমি চলে যাচ্ছি।
— ওষুধ নিয়ে যান।
— তুমি কি কখনোই চেঞ্জ হবে না সাবিহা?
আহত গলায় বলে উঠলো সভ্য। আজ আর তার রাগ হচ্ছে না। রাস্তার জ্যাম, জার্নিতে মন, মেজাজ, শরীর কিছুই ভালো নেই। সাবিহাও কথা বাড়ালো না। অভিমান কিনা সে জানে না। তবে হুট করে বুকটা ভারি হয়ে গেলো। তার ভাবনা শুধু একটা জিনিস নিয়েই পড়ে থাকে। সভ্য সুষ্মিতার সাথে ঢলাঢলি করতে যাচ্ছে। সভ্য পা বাড়িয়ে দরজার নিকট গেলো। সাবিহাও যাচ্ছে। মনটা হুট করে এক ভয়ংকর চাওয়া পাওয়ার আবদার করলো। মন বলে উঠলো, সাবিহা এই মুহূর্তে ভয়ংকর অসুস্থ হয়ে পরুক। নয়তো! নয়তো আকাশ কাঁপিয়ে গর্জে উঠুক মেঘ। তুমুল ঝড় শুরু হোক। শিলা বৃষ্টি বর্ষণ হোক এই মুহূর্তে পৃথিবী পৃষ্ঠে। তবুও সাবিহার সম্মুখের মানুষটা না যাক। একটু না হয় থাক আজকে। সাবিহা সভ্যর ওপর তর্জন গর্জন করে রাগ ঝাড়বে। হৃদয়ে সব ঘৃণা আজ তুলে নিয়ে সভ্যর হাতে ধরিয়ে দেবে। শুধু কি এটুকুই? হ্যা সাবিহার কাছে এরবেশি কিচ্ছু মনে হলো না। হয়তো হলেও সে বিশ্বাস করলো তা। ছুড়ে মারতো সেই গোপন একটুকরো প্রেমময়ী অনুভূতি অবজ্ঞায় আকাশপানে। অবুঝ তরুণী ঘাটতে গেলো না কেন সে এমন বায়না করছে, কেন সে সভ্যর পাশে সহ্য করতে পারছে না ইদানীং সুষ্মিতাকে?
ওপাশের মানুষটাও কি নিষ্ঠুর! কি বড্ড ভাব তার। আলগোছে ক্লান্ত চিত্তে জুতো পায়ে দিচ্ছে। সাবিহা তোলপাড় হওয়া মন নিয়ে ঠাঁই দাড়িয়ে দেখছে সভ্যকে। সভ্য জুতো পায়ে দিয়ে পকেট হতে ওয়েট টিস্যু বের করে কপাল মুছে নিলো। পা বাড়িয়েছে সে ইতিমধ্যে রাস্তার পথে। সাবিহার এবার অচেনা এক কষ্টে ছটফট করে উঠলো মন। ঠোঁট উল্টে গেলো। আজ তেজ নিয়ে জেদাজেদিও করলো না। নির্বিঘ্নে চলে যাচ্ছে। সাবিহা ঠাস করে দরজা বন্ধ করলো। চোখে পানি উপচে পরা ভাব নিয়ে ঠেকে আছে। সাবিহা কষ্টে ভরা বুক নিয়ে বলে উঠলো হঠাৎ
” আপনি একটা খারাপ লোক সভ্য ভাই। আপনি অসভ্য। অনেক বেশি অসভ্য। শুধু সুষ্মিতার সাথে ঢলাঢলি করেন।”
ভাঙা গলা সাবিহার। কান্নার ছোটাছুটি বুকের মাঝে। এই ছোটাছুটি অতি বেগবান হতেই হঠাৎ বেজে উঠলো কলিং বেল। সাবিহা আঁতকে উঠল। হঠাৎ অবচেতন মন ভেবে নিলো সভ্য এসেছে। ছুটে গেলো সাবিহা। তার আগে করো নিলো খানিক কল্পনা জল্পনা। আজ রাতে যদি বমি পায় সাবিহার তাহলে সভ্যর বুকের উপর করে দেবে। ভাবনা নিয়ে দরজা খুলল সাবিহা। সম্মুখে তাকাতেই উড়ে সব কল্পনা জুড়ে বসলো আতঙ্ক। ভয়াবহ আতঙ্ক। দরজার ওপাশে আজিজ দাড়িয়ে। ডিরেক্টরের ছেলে। সাবিহা ভাবনা চিন্তা না করেই তড়িঘড়ি করে বন্ধ করতে চাইলো দরজা কিন্তু তার আগেই আজিজ শক্ত হাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলো। রাগ উপচে পরা কন্ঠ নিয়ে বলল
— কি ভেবছিলে? তুমি অব্দি পৌঁছাতে পারবো না? অবশ্য পারতাম না। সভ্যর জন্য পেরেছি। সভ্যর পিছু নিয়ে তোমার বাড়ি পর্যন্ত চলে এলাম। থাপ্পড়ের প্রতিশোধ তো নিতে হবে তাই না?
সাবিহার চোখে জল চলে এলো। কাঁপন ধরলো যেমন হৃদয়ে তেমন দেহেও। ঠিক দুই আস আগে আজিজ সাবিহাকে প্রপোজ করেছিল। কিন্তু সাবিহা নাকচ করে দেয়। তা শুধু মুখে না নয়। আজিজের কালো বর্ণ নিয়ে কটাক্ষ করে এবং সাথে একটা থাপ্পড় দিয়ে প্রস্তাব প্রত্যাক্ষাণ করা হয়।
— চলে যাও বাসা থেকে। আমি কিন্তু বাবাকে বলে পুলিশে দেবো তোমায়?
থতমত কন্ঠে ঠিক তেজটা স্পষ্ট হলো না সাবিহার। আজিজ হাসলো। বেশ শব্দ করেই। বলে উঠলো
— রূপ নিয়ে খুব অহংকার করেছিলে না? আমি বলেছিলাম তোমার অহংকার চূর্ণবিচূর্ণ করে দেবো। আসছি। এখন কেউ বাচাতে পারবে না।
কথাটা বলেই আজিজ শাল কাঠের দরজা সজোরে ধাক্কা দিলো। দরজার সাথে সাবিহার হাত থকায় তা পাশের দেওয়া পরতেই আঙ্গুলে চাপ লাগলো। সাবিহা চিৎকার করে উঠলো ব্যাথায়। তবুও তার মস্তিষ্ক অসাড় হতে দিলো না। আজিজ ঘরে ঢুকে পরলো দরজা ছেড়ে। সাবিহা আচমকা তার ধারালো মস্তিষ্ক হতে বুদ্ধি খুঁজে দরজার পাশে থাকা ফুল ঝাড়ুটা হাতে নিলো। যদিও তা শক্তপোক্ত নয়। তবুও সাবিহা ঝাড়ুর গোড়ালি দিয়ে একটা আঘাত করলো আজিজের মুখে। সৌভাগ্যক্রমে তা গিয়ে লাগলো ছেলেটার চোখে। কিছুটা অপ্রস্তুত ভাব তাকে ঘিরে নিতেই সাবিহা দৌড় দিতে বেরোতে চাইলো দরজা দিয়ে। কিন্তু টান দিলো ঘাতকটা ওড়নায়। সাবিহার এবার সভ্যর কথা খুব মনে পরছে। সভ্যর উপরও রাগ হলো। সেই রাগ আর বর্তমানের পরিস্থিতি মাথায় নিয়ে পা দিয়ে লাথে মারলো আজিজের পায়ে। ছেঁচে দিতে চাইলো পায়ের আঙ্গুল। এবার বড্ড বেশি কষ্ট হয়ে গেলো সাবিহাকে ধরে রাখা। তবুও যেন ছাড়তে চাইলো না আজিজ। সাবিহা উপায়ন্তর না পেয়ে ওড়না গা থেকে ফেলে দিয়ে ছুটলো রাস্তার দিকে। বাড়িতে কোনো গেট নেই। সাবিহার দাদা শখ করে তখনকার সময় নিজ উপার্জনে যেমন বাড়ি বানিয়েছিলেন তেমনই রাখা হয়েছে। সভ্য বা সাবিহার বাবা আর হাত লাগায়নি বাবার গড়ে দেওয়া বাড়িতে। দশ বিশ কদম সামনে এগোলেই রাস্তা। সাবিহা ব্যাস্ত পায়ে হাঁটতে লাগলো। আজিজও তার পিছু আসছে। সাবিহার অন্তর আত্মা কেঁপে কেঁপে উঠছে। ডুকরে কান্না আসছে। সবাই তার রূপের পেছনে কেন পরে থাকে? মাফিয়া তাহমিদও এমন আজেবাজে হুমকি দিয়েছে তাকে। পিচ ঢালা রাস্তায় নগ্ন পায়ে হাঁটা আর কাটার উপর পা ফেলার মধ্যে যেন কোনো তফাৎ নেই। সাবিহা বারবার পা কুঁচকে ফেলছে। কিন্তু এই বুঝি আজিজ ধরে ফেলল তাকে। খুব নিকটে। এবার আর হেঁটে কুল পাওয়া যাবে না। সাবিহা দৌড়াতে লাগলো। মনে মনে খুব করে প্রার্থনা করলে, সভ্যকে যেন সামনে পাওয়া যায়। সে তো একটু আগেই বেরিয়েছে। সাবিহা চাতক পাখির মতো চেয়ে আছে সম্মুখ পথে। ধুপধাপ পা ফেলতে ফেলতে বুঝি সুন্দর পায়ের তালু চোখা পিচের কবলে ছিলে রক্ত জমিয়ে দিচ্ছে।
চলবে….