#রঙ বেরঙের খেলা
#আলিশা
#পর্ব-৩+৪
— এই যে থাপ্পড়ের উপর থাপ্পড় মারছি এগুলো আমার অধিকার। একজন স্বামীর অধিকারে আমি তোমার গায়ে হাত তুলেছি।
— মানি না আমি। আপনাকে আমি স্বামী হিসেবে আমি না।
— তোমার মানা না মানায় কিছু যায় আসে না। পেপারে সাইন আছে, মানুষ সাক্ষী আছে সাবিহা সুলতানার সাথে সাজিদ আহমেদ সভ্যর বিয়ে হয়েছে।
কথার পৃষ্ঠে কথা। কারো তেজ কমজুরি হয়ে ফুটে উঠলো না। সভ্যর চোখে অগ্নি ঝড়ে। আশরাফুল ইসলাম এহেন দশায় দিশেহারা। উপস্থিত গুরুজনদের সম্মুখে কিসব চলছে? সভ্য সাবিহার গায়ে হাত পর্যন্ত তুলল। একবার পেরিয়ে দু’বার। বাবা হওয়ায় বুকে লেগেছে তার থাপ্পড়গুলো। তিনি কড়া গলায় সভ্যর উদ্দেশ্যে বললেন
— এটা আশা করিনি তোমার থেকে সভ্য। সত্যিই তুমি বেশি সাহস দেখাচ্ছো। আমার মেয়েকে আমার সামনে থাপ্পড় মারার সাহস তোমার কি করে হয়?
সাবিহার বাবার কথার পিঠে সভ্য ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। ঝাঁক ঝাঁক অবজ্ঞা ঝরে পরলো যেন তার হাসি থেকে। দৃষ্টি সাবিহার দিকে নিবদ্ধ করে সভ্য প্রত্যুত্তর করলো নব শশুরের কথার।
— এখন তো এ কথা বললে হবে না বাবা! আপনি গতকাল কণ্যা দান করেছেন আমার হাতে। বলেছেন এখন থেকে আমিই তার গার্জিয়ান। আর একজন গার্জিয়ান হিসেবে আমি তাকে আদব শেখাচ্ছি। আমার দায়িত্ব পালন করছি।
সভ্যর বাঁক চমকে দিলো সকলকে। আঙ্কেল থেকে আশরাফুল ইসলাম বাবা হয়ে গেছেন সভ্যর। শশুর বলে সম্বোধন করেছে। অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন সাবিহার বাবা। রাহেলা ইসলাম কিছু বলার হেতু পেলেন না। কি বলবেন তিনি? মেয়ে তার বিশাল কিছু নীতিগত কাজ করেনি। বরং গত রাত হতে আজ এখন অব্দি সে বেয়াদবের মাত্রা টানছেই টানছে। সভ্য আর কিছু বলল না। ক্ষণিক সাবিহার দশা পরখ করে প্রস্থান করলো সে। সাবিহা রাগে ফুলেফেঁপে উঠলো। বারাবাড়ি রকমের সুন্দরী মেয়েটার মনে চাপলো জেদ। পেছন থেকে সভ্যর দিকে ছুড়ে দিলো তিক্ত সুরে
— কাজগুলো আপনি একদম ঠিক করলেন না সভ্য ভাই। দিস ইজ নট ফেয়ার। আই উইল টিস ইউ আ গুড লিসন।
সভ্য বাড়ির চৌকাঠের ওপাশে একপা রেখেছিল মাত্র। সাবিহার জেদি গলায় সে থমকে দিলো হাঁটার গতি। ঘুরে তাকালো পেছন দিকে। সাবিহা থেমে থেমে বুক ফুলিয়ে নিশ্বাস নিচ্ছে। ভয়ংকর তার চোখ, মু্খের অভিব্যাক্তি। সভ্য এগিয়ে না এসে পারলো না। বেশ কয়েক কদম এগিয়ে গেলো সে সাবিহার নিকট।
— চ্যালেন্স করলো নাকি দু টাকার টিকটকার সাবিহা সলতানা?
— ভাষা ঠিক করুন সভ্য ভাই।
— ঠিক আছে করলাম। সুনামধন্য মডেল এন্ড টিকটকার সাবিহা সুলতানা, রূপের জোন্য যে তুমি এত দাপট করো আদৌ কিন্তু তুমি ততটা সুন্দর নও। ট্রাস্ট মি আমার বিবেক বলতে কিছু না থাকলে আমি তোমায় নিলামে উঠাতাম। তখন নিজেই দেখতে পেতে তোমার মূল্য কতটা নিচে।
এরবেশি কিছু মুখে আসলেও সভ্য বলল না। মা, বাবার বয়সের অনেক গুরুজনই এখানে উপস্থিত। কিন্তু সাবিহা থেমে রইলো না। সে পাল্টা প্রতিবাদ করে বলল
— আমি আপনাকে প্রুফ করে দেখাবো। সাবিহা সুলতানার মূল্য কতটা। সাবিহার জন্য সোসাইটির কোন লেভেলের ছেলেগুলো পাগল তা আপনি নিজেই চোখ দিয়ে দেখে নিবেন। তারা আপনার মতো রূপহীনও নয় গরিবও নয়।
শেষের কথায় বুকে আচমকা ধাক্কা লাগলো সভ্যর। হয়তো! তার টাকা নেই। হতাশা ভাব মনে চেপে তবুও সভ্য শক্ত কন্ঠে বলল
— ওয়েট করবো। তবে আমি যতোদূর জানি, খোলা জিনিসের উপর ছেলেদের আকর্ষণ কম থাকে।
সভ্যর ভাবলেশহীন কথা। সাবিহার সহ্য হলো না এতো বড় কথা। গা জলে উঠলো তার। সে সম্মুখের ডাইনিং টেবিলের ক্লোথটা রাগে আচমকা টেনে ফেলে দিলো। যতো খাবার ছিল, যতো বাটি ঘটি প্লেট ছিল মূহুর্তেই তা ঝনঝনিয়ে মাটিতে পরে আহত হলো। খাবার গুলো বিছিয়ে গেলো মেঝেতে। সভ্য শান্ত চোখে দেখলো। সাবিহা তেড়ে আসছে তার দিকে। সভ্য এবার হাঁটা দিলো সাবিহার সম্মুখ বরাবর। সাবিহা যখন তার খুব নিকটে, একেবারে সম্মুখে পৌঁছালো ঠিক তখনই সভ্য হেঁচকা টানে ঘুরিয়ে নিলো সাবিহাকে। ঘারে টান পরলো সাবিহার। আশপাশের জিনিসগুলো ভনভন করে ঘুরতে লাগলো চোখের সামনে। হাতে ব্যাথা পাচ্ছে। পায়ের আঙুলও উল্টে গিয়ে ব্যাথার বহর নামিয়েছে। সভ্য দয়ামায়া সমুদ্রে বিসর্জন দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে সাবিহাকে। মাথা তারও চওড়া। শেষমুহুর্তে সাবিহার রুমের সামনে এসে সভ্য ধাক্কা দিলো সাবিহাকে। হুড়মুড় করে সাবিহা ঢুকে পরলো রুমে। সভ্যর শক্ত হাতের বেপরোয়া ধাক্কায় সে তাল সামলাতে না পেরে টল খেয়ে পরলো সোজা বিছানায়। বক্স খাটের সাথে হাঁটু লেগে শব্দ হলো। তোয়াক্কা করলো না সভ্য। রাগ তার দেখেনি সাবিহা।
— নেক্সট টাইম দাপট নিয়ে আমার কলার ধরতে যাওয়ার সাহস কোরো না।
কথাটা বলে সভ্য উল্টো পথে পা বাড়ালো। ক’টা অপমান করলো সাবিহা? গায়ের রং নিয়ে, টাকা না থাকায় আর শেষটা শার্টের কলার ধরে। মোট তিনটা। পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে সাবিহাকে ফেরত দেওয়া হবে এসব। সভ্য যন্ত্রণাগ্রস্থ বুক আর আঁধার নামা মুখ নিয়ে হাসলো। বিরবির করে তাকে বলতে শোনা গেলো চলতি পথে
” নারী তুমি ততক্ষণ রূপের বড়াই করতে পারো, যতক্ষণ না তোমার পেটে বাচ্চা উঠে।”
সভ্যর ভয়ংকর কথা। সাবিহা তো এর একরত্তিও আচ করতে পারবে না। সভ্যর মনে যে ভয়াবহ জেদ চেপে গেছে। নিষ্ঠুর পরিকল্পনা চলছে এসবই সাবিহার অগোচরে। মেয়েটা বড্ড বোকা। শুধু ছটফট ছটফট করে রূপ নিয়ে অহংকার করতে পারে। নির্বুদ্ধিতার কর্ম রচনা করতে পারে। আজও তাই করছে সে। সভ্যর কড়া অপমানের জবাব দিতে সে বসে গেছে ল্যাপটব নিয়ে মেঝেতেই। অগোছালো রুমটা জুড়ে আঁধার নিঃশ্বব্দ। সাবিহা অডিও লাইভে চলে গেলো। ইউটিউবে তার ফলোয়ার 1.3M, ফেসবুক পেইজে ফলোয়ারার 920K। এতো এতো ফলোয়ার যে মেয়ের তার কিনা মূল্য কম হবে। নিলামে তুলতে চায় সভ্য। সাবিহা হাসলো। মনে মনে সে সভ্যকে ‘বেকুব’ বলে আখ্যায়িত করে শান্তি কিনলো মনে। তার অডিও লাইভে সে ফুরফুরে চিত্তে বলতে লাগলো,
” আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আজ আমি আপনাদের মাঝে একটা সারপ্রাইজ নিয়ে উপস্থিত হয়েছি। গতকাল সন্ধ্যায় আপনাদের সাথে আমার লাইভ হবে। বিষয়টা হলো আমার লাইভ পার্টনার নিয়ে। এতো দিন অনেকেই অনেক ভাবে প্রপোজ করেছেন। তো কাল আমি অপেক্ষায় থাকবো কারো প্রপোজালের। বেছে নেবো পার্মানেন্ট লাইফ পার্টনার। ”
.
ধরণীর কোলে যখন আঁধার ছাপিয়ে গেছে তখন সভ্য বাড়ির পথ ধরেছে। সারাবেলা তার কাটলো ভাবনায় ভাবনায়। জীবন যে একটা যুদ্ধ তা আজ বেশ করে উপলব্ধি করা হয়েছে। পরিকল্পনা চোখের পলকে সাজাতে পারলেও বাস্তবায়ন হয় না সহজেই। কি করে পাল্টা জবাবা দেবে সে সাবিহাকে? এ চিন্তায় সভ্য বিভোর। আজ ঢাকাতেও যাওয়া হলো না। মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানিতে একটা ইন্টারভিউ ছিলো তার। হলো না দেওয়া। সভ্য দীর্ঘ একটা শ্বাস টেনে মেইন ডোর অতিক্রম করলো বাসার। ড্রয়িং রুমে কেউ নেই। সবাই হয়তো নামাজের বিছাবায়। সভ্য নিজ ঘরে হেঁটে যাচ্ছিলো। এমন সময় সাবিহা নিজ রুম থেকে গলা উঁচিয়ে বলল
— ফকিরে কি আর বোঝে নাকি কোহিনূরের মূল্য।
কথাটা সভ্যর শুনতে সময় লাগলো না। সাবিহা আয়েশ করে বসে আছে বিছানায়। সভ্যর উদ্দেশ্যেই তার কথা। হৃদয় ছিদ্র হয়ে গেলো সভ্যর। হুট করে সে অনুভব করলো পা উঠছে না। হাঁটা যাচ্ছে না এই অপমান উপেক্ষা করে। সভ্য বন্ধ করে নিলো দুচোখ। সাবিহার লাইভ সে দেখেছে। সাবিহা বুঝি তার সাথে খেলতে চাইছে। রঙ বেরঙের খেলা। সভ্য চোখ খুলে সাবিহার খোলা দরজা দিয়ে নজর করলো সাবিহার দিকে। হঠাৎ বলে উঠলো
— খেলাটা শুরু করলে তুমি সাবিহা। শেষ কিন্তু আমিই করবো।
— জয়ীও আমিই হবো। আপনি খেলা শেষ করলেও।
— দেখা যাবে।
আরো একদফা জেদাজেদি। সাবিহা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে ছিল সভ্যর দিকে। সভ্য গটগট করে প্রস্থান করলো সাবিহার সম্মুখ হতে। তার জীবন পথ বাছাই করা হয়ে গেছে। হয়তো সে সাবিহাকে ছাপাছাপি করে দিয়ে টিভির পর্দায় উঠবে নয়তো জীবনের ইতি টেনে দেবে। আর অবশ্যই সে জীবনের ইতি টানতে বিন্দুমাত্র ব্যাগ্র নয়।
চলবে….
#রঙ_বেরঙের_খেলা
#আলিশা
#পর্ব_৪
দেহ জুড়ে প্রসাধনীতে রঞ্জিত সাবিহা বসে আছে তার ঘরের টেবিলের সম্মুখের এক চেয়ারে। ঘরে তার এসি। ডার্ক ব্লু জর্জেট থ্রি পিস পরা সে। লম্বা সরল সোজা কোমর পেরিয়ে যাওয়া চুলগুলো খোলা। বেশ সাদাসিধা তার সাজসজ্জা। মেকআপ করলেও তা লিমিটেড। গা থেকে ভেসে আসছে কড়া পারফিউমের সুবাস। আস্ত এক পরী কণ্যা যেন টুপ করে আসমান থেকে জমিনে নেমে এসেছে বলে মনে হচ্ছে। সভ্যর সারাদেহ উত্তাপ ছড়িয়ে গেছে দুশ্চিন্তায়। কুল কুল করে ঘেমে উঠছে শরীর। কপল চুইয়ে আসছে ঘাম। সাবিহার এখন লাইভ শুরু হবে। গতকাল দেওয়া কথা অনুযায়ী সে আজ সন্ধ্যায় লাইভের আয়োজন করেছে। তার মাঝারি রুমটায় জ্বলছে মোট ত্রিশটা আলোর দীপ। উপর দিকে তাকালেই চোখ বন্ধ হয়ে আসে গোল গোল আলোর দাপটে।
— আপনি আরো একটু সরে বসুন সভ্য ভাই।
সভ্য সাবিহার কথায় ভারি কাঠের চেয়ারটা নিয়ে ল্যাপটপের পেছনের দিক হয়ে বসলো। সাবিহা সব পর্যপেক্ষণ করে ঠিকঠাক হয়ে বসে পরলো তার চেয়ারে। ল্যাপটপ অন করার মুহূর্তে সে তার পাতলা মোহনীয় ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দেওয়া। সভ্যকে তার মূল্য বোঝাবে বলে সে লাইভ করার আগ মুহূর্তে ডেকে এনেছে। দেখে যাক সে, সাবিহার রূপের জন্য কত ছেলে পাগল আর তারা সভ্যর চেয়ে কত উঁচু পর্যায়ের।
— লাইভ শেষে তিন তালাক দিয়ে এই ঘর থেকে বের হবেন।
সাবিহার কঠিন কন্ঠ। সভ্য মাথা তুলে চাইলো। তার বুকটা দুরুদুরু করছে। চ্যালেন্সে সে হেরে যাবে না তো? সত্যিই তো সাবিহা রূপের রাণী। অনেক ছেলেই পাগল হবে তার জন্য। গত কালের অডিও লাইভেই তুমুল ঝড় উঠেছে প্রেমের। কমেন্ট বক্স জুড়ে শুরু ‘তোমাকে চাই’ লেখা। শেয়ার হয়েছে লাইভটা 90K। এরমধ্যে দেখা গেছে বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি আনোয়ার হকের একমাত্র সুদর্শন পুত্র তাহমিদ আহমেদ যে বাউণ্ডুলে, বখাটের শীর্ষক নেতা একজন মাফিয়া সেও লাইভ করে নিজের পেইজে জানিয়ে দিয়েছে সাবিহাকে সে চায়। দু’বছর আগে যে ছেলেটা মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে দশ বছরের রেকর্ড ভাঙলো সে পর্যন্ত আজ একটু আগে সাবিহাকে ফোন করেছিল। তার উদ্দেশ্যও একই। সাবিহা তাকে দেখিয়েছে ম্যাসেঞ্জার, হটস অ্যাপ, ইনসট্রাগ্রাম অনই করা যাচ্ছে না। টেক্সটের উপর টেক্সট। যেন ফোনই হ্যাং হয়ে যাবে। সভ্য ভাবতে গিয়ে চিন্তায় পরলো। তবুও মুখে হার মানার এতোটুকু ছায়াও পরতে দিলো না। উপরন্তু কড়া আত্মবিশ্বাস নিয়ে সাবিহার কাছে জানতে চাইলো
— যদি চ্যালেন্সে হেরে যাও তাহলে?
সভ্যর কথা শুনে সাবিহা ঝট করে চাইলো সভ্যর পানে। চোখে চোখ পরলো। সভ্যর গভীর চোখের দৃষ্টির সাথে সাক্ষাৎ হলো সাবিহার তীক্ষ্ণ দৃষ্টির। সভ্য তার বড় চোখের ভারি পল্লব সামান্য উঁচু করলো। প্রতীক্ষায় আছে সাবিহার কথা শোনার। সাবিহা বলে উঠলো
— আপনি জিতবেন এই আশা করা আপনার জন্য বিলাসিতা। অলরেডি কন্ডিশন আপনি দেখেছেন। গেস করতেও পারছেন কি হবে। তারপরও জানিয়ে দেই আপনাকে, আপনি জিতলে আমি আপনার পা ধুয়ে দেবো আমার চুল দিয়ে। এবং আপনি বললে সেই পানি খেতেও রাজি আমি।
সভ্য হাসলো সাবিহার কথার পিঠে। সাবিহা বেখেয়ালি মনে নিজের ট্যাবটা চালু করে সভ্যর হাতে ধরিয়ে দিলো। হাত বাড়িয়ে নিলো সভ্য। সাবিহা শেষ বারের মতো আয়নায় নিজেকে দেখে নিলো। তারপর আবার কিছু ভেবে আলমারি থেকে একটা সাদা গাজরা নিয়ে এলো। খোলা চুলের উপর নিয়ে মাথায় জারবেরা ফুলের গাজরাটা পরে নিলো। চূড়ান্ত হতে চূড়ান্তে উঠে গেলো তার সৌন্দর্য। চোখা নাক মুখের সাথে বেশ উঁচু হাইটের এই মেয়েটাকে এবার ভয়ঙ্কর সুন্দরের সাথে বড্ড বেশি স্নিগ্ধ লাগছে। সভ্য চোখ ফিরিয়ে নিলো। সাবিহার নাক মুখ, ঠোঁটেরই প্রতিরূপ হবে সভ্যর নাক মুখ ঠোঁট। তেমনই আকর্ষণীয়। শুধু তফাৎটা রঙে। সভ্য মায়ের রং আর বড্ড বেশি গভীর চোখ পেয়েছে। গড়নটা হয়েছে বাবা চাচার মতো। আর সাবিহা হয়েছে বাবার মতো। ওমনই ছিপছিপে, চোখ ধাঁধানো সুন্দর।
সাবিহা পুনরায় বসে গেছে চপয়ারে। ল্যাপটপ অন করে সে ইউটিউবে লাইভ শুরু করলো। সে পুরোদমে বিশ্বাস করছে সে জিতবে। এতবড় জেদটা সে করতো না। জানে পাবলিকের ফালতু, মেজাজ মন নষ্ট করা অনেক কথা শুনতে হবে তার। কিন্তু সভ্যর নিলামে তোলার কথা শোনার পর সে ঠিক নেই। নিলামে তোলার কথা বলে সভয় তাকে বড় অপমান করে ফেলেছে।
সাবিহা হাসিখুশি মুখে লাইভে কথা বলে যাচ্ছে। তার সাথে ফোন কলে যুক্ত হচ্ছে ক্রমে ক্রমে অনেকেই। ব্লুটুথ দু’টোর একটা সভ্যর কানে আরেকটা সাবিহার কানে। প্রথমেই যে কলে এলো সে নিজের পরিচয় জানালো। ঢাকা ভার্সিটির একজন স্টুডেন্ট। বাসা ঢাকাতেই। সে রঙ চঙ ভঙ করে সাবিহাকে প্রেম নিবেদন করলো। সভ্য চোখ রেখেছে ট্যাবের স্ক্রিনে। হাত তার ওঠানামা করছে ক্রমশ। অনেক কমেন্ট, অনেক রিয়্যাক্ট। সভ্য ক্রমশ ঘেমে যাচ্ছে ফুল পাওয়ার এসির মধ্যে থেকেও। সাবিহা লাইভের সাথে আড়চোখে দেখছে সভ্যকে। মিটিমিটি হাসি তার ঠোঁটে। বিশ মিনিটের বেশি সাবিহা লাইভে থাকলো না। টুংটাং ম্যাসেজ আসছে আর কল আসছে বড় বড় সেলিব্রিটি আর হাই কোয়ালিটির মানুষ দের থেকে। লাইভে তো থাকবে শুধু হয়াংলা পাতলা পোলাপান। সাবিহা লাইভ থেকে বেরিয়ে প্রথমেই সভ্যর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো।
— সাবিহা সুলতানার ডিমান্ড বোঝা গেলো?
সভ্য তাৎক্ষণাত কিছু বলল না। ফোন, ট্যাব আর ল্যাপটপ জুড়ে তখন ম্যাসেজ, কলের ঝড়। মাতামাতি বুঝি হয়েই গেছে ইতিমধ্যে অনলাইনে। সভ্য রয়ে সয়ে মুখ তুলে চাইলো সাবিহার দিকে। হঠাৎ বলে উঠলো
— পানি আনো। আর আমার পা ধোয়ার জন্য প্রস্তুত হও।
সভ্যর ঠাট করে বলা কথা। সাবিহা গরম তেলে যেমন পানি দিলে ছ্যাত করে ঠিকই ওভাবেই ছ্যাত করে উঠলো। বসা থেকে দাড়িয়ে গিয়ে বলল
— মানে? কি বলতে চাইছেন আপনি? আমি হেরে গেছি? এখন অব্দি আপনার সামনে ফোন কল আসছেই। থিয়েটারের হিরো, বড় বড় মডেল, এমন কি মুভির হিরো আবরার পর্যন্ত অফার করছে। তাদের তরফ থেকে ফোন আসছে। এক্ষুনি দেখবেন, গায়ক, হিরো, টিকটকাররা আমার দরজায় এসে দাড়িয়ে গেছে। এটা ওটা পাঠাচ্ছে পার্সেলে। আপনি নিজেও গত কাল দশবার দরজা খুলে বারোটা পার্সেল দরজার ওপাশ হতে নিয়ে এসেছেন।
— তো? যারা তোমায় অফার করেছে তাদের মাঝে এমন একজনকে দেখাও দেখি যার ব্যাকগ্রাউন্ট ভালো। টিকটকার সবগুলো তো মেয়েবাজ। মুভির নায়ক আবরার প্রতি বছর সবার চোখের সামনে দিয়ে মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করতে যায় বিদেশ এটা সবাই জানে। গতকাল যে গায়কটা তোমায় পার্সেল পাঠিয়েছে তার চেহারা কি প্রিন্সের মতো? বাকি যারা প্রপোজ করছে তারা কি বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তি?
উঁচু নয় সভ্যর গলার আওয়াজ। তবে বেশ শক্ত কন্ঠ। সাবিহা আচমকা দমে গেলো। খন্ডানো যাচ্ছে না সভ্যর যুক্তিগুলো। সাবিহার নুইয়ে পরা ভাব দেখে সভ্য সুযোগ লুফে নিলো। সেও উঠে দাড়িয়ে সাবিহার কানের কাছে বলল
— বলেছিলাম। খোলা জিনিসের উপর আকর্ষণ কম থাকে। তোমার মতো মেয়েগুলো দিয়ে সবাই মজা নিতেই চায়।লাইফ পার্টনার হিসেবে চায় না। যাও প্রপোজ করা লোকগুলোর কাছে। দু’মাস কাছে রেখে ছুড়ে ফেলে দেবে টিস্যুর মতো।
— তবুও আমি আপনার মতো কালো মানুষের সাথে সংসার করবো না।
চোখে চোখ ফেলে নির্লজ্জের মতো বলে উঠলো সাবিহা। সভ্য সময় নিয়ে পরখ করলো নিজের বউকে। স্বামী স্বামী একটা ভাব জরো হলো মনে। সেই সাথে জেদ আর অপমান গুলোও। হুট করে সে আেপে ধরলো সাবিহার এক হাতের বাহু। খুব কাছাকাছি দাড়িয়ে বলে উঠলো
— অহংকার কমবে না তোর তাই না?
তুই সম্বোধন শুনে বিস্ফোরিত নয়নে তড়িৎ গতিতে সাবিহা সভ্যর দিকে চাইলো। কিছু বলতো সে কিন্তু সেই সুযোগ না দিয়েই হুট করে সভ্য সাবিহার ওড়নাটা গা থেকে টেনে মাটিতে ফেলে দিলো। সাবিহার এবার ভয়ে আত্না কেঁপে উঠলো। সভ্য বলছে
— আজকে যা হবে তারপর দেখবো ক’জন আর এই বাসি রূপে পাগল হয়।
বলেই এক ধাক্কা। সাবিহা ঠাস করে পরে গেলো বিছানায় কিছু আঁচ করার পূর্বেই। ভয়ে কাঁপন ধরলো শরীরে। সে কি জোরাজোরি করে নিজেকে ছাড়াতে পারবে একটা পুরুষের হাত থেকে?
চলবে…….