রঙ বদল পর্বঃ ০৫(শেষ)
লেখকঃ আবির খান
সায়েম আর ফাতেমার সম্পূর্ণ ইসলামিক নিয়মকানুন অনুযায়ী বিয়ে হয়। ফাতেমাকে এখন সায়েমের রুমে রাখা হয়েছে। কারণ আজ ওদের বাসর রাত। সায়েমের খুব উত্তেজনা লাগছে। কারণ আজ এতোটা সময় পর ও ওর মনের মানুষটাকে দেখবে৷ ভাবি আর লিমাকে অনেক চাপাচাপি করেও ফাতেমা দেখতে কেমন তা জানা যায়নি। সায়েম খুব উত্তেজিত হয়ে আছে। হঠাৎ,
– কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন বাইরে? যা ভিতরে যা। ফাতেমা অপেক্ষা করছে। যা তাড়াতাড়ি।
– জ্বী ভাইয়া যাচ্ছি।
সায়েম আল্লাহর নাম নিয়ে ওর রুমে প্রবেশ করে। দরজা লাগিয়ে দিয়ে ফাতেমার দিকে ঘুরতেই ফাতেমা সায়েমকে আস্তে করে সালাম দেয়। সায়েম ফাতেমার কাছে এসে সালামের উত্তর দেয়। দুজন অসম্ভব লেভেলের নার্ভাস৷ সবচেয়ে নার্ভাস সায়েম। বেচারা আজ প্রথম ফাতেমাকে দেখবে। ফাতেমা একটা বড় ঘোমটা টেনে বসে আছে। সায়েম ফাতেমার ঠিক সামনে আসন করে বসে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে ওর। পাশে এক গ্লাস পানি দেখে। ফাতেমার গা ঘেঁষেই পানির গ্লাসটা নিয়ে তিন ঢোক খায়। সম্পূর্ণ না খেয়ে ফাতেমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– পানি খাবে? এই যে পানি? খেলে খেতে পারো।
ফাতেমার যেন সায়েমের চেয়েও বেশী তৃষ্ণা পেয়েছিল। হাতটা বের করে সায়েমের হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে খাওয়া শুরু করে। গ্লাস নেওয়ার সময় সায়েম ফাতেমার হাতটা দেখে। ওর হাতে স্পর্শও লাগে। দুজনের ভিতরে যেন কারেন্ট প্রবাহিত হয়। দুজনই কেপে উঠে। ফাতেমা পানি খেয়ে গ্লাসটা আবার ফিরিয়ে দেয়। সায়েম গ্লাসটা নিয়ে দ্রুত রেখে দেয় পাশে। এবার কী করবে! সায়েম ভাবছে। ফাতেমা চুপচাপ বসে আছে। সায়েম আস্তে করে বলে উঠে,
– আজ জীবনে প্রথম তোমাকে দেখতে যাচ্ছি। তুমি যেমনই হও তোমাকে ভালবাসবো বা ভালবাসতে চাই আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। তোমার রঙে নিজেকে মেখে বাঁচতে চাই তোমার সাথে। আমি তোমাকে দেখতে পারি?
~ আমিতো আজ থেকে আপনার আমানত। আমার উপর আপনার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। জ্বী অবশ্যই দেখতে পারেন।
সায়েম একটা হাসি দেয়৷ আস্তে আস্তে ও হাত দুটো উঠিয়ে ফাতেমার ঘোমটা তুলে ওর মুখখানা আড়াল থেকে বের করে। ঘোমটা সরাতেই ফাতেমাকে জীবনে প্রথম সায়েম দেখতে পায়। সায়েম স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। রীতিমতো হা করে আছে। ফাতেমা সায়েমের অবস্থা দেখে হেসেই দেয়। ওর এক হাত দিয়ে সায়েমের মুখটা লাগিয়ে দেয়। আর সাথে সাথে সায়েমের ঘোর কাটে। কিন্তু নেশাটা আজীবনের জন্য লেগে যায়। সায়েম অপলক দৃষ্টিতে ফাতেমাকে দেখছে। ফাতেমা অসম্ভব লজ্জা পাচ্ছে। লজ্জায় গাল দুটো লাল রক্তিম ভাব ধারণ করেছে। সায়েম ফাতেমার হাত দুটো ওর হাতে নেয়। আজ জীবনে প্রথম সায়েম ফাতেমার হাত স্পর্শ করলো। ও ফাতেমার হাত দুটো দেখছে। ফাতেমা বুঝতে পারছে না সায়েম কী করছে আসলে। হাতদুটো কতক্ষণ দেখে আবার ফাতেমার দিকে তাকায়। ফাতেমা দেখে সায়েমের চোখটা কেমন ভিজা। ও অবাক হয়ে যায়। যেখানে ওর চোখ ভিজা থাকার কথা সেখানে সায়েমের! ফাতেমা কিছুটা অস্থির হয়ে পড়ে। তাই জিজ্ঞেস করে,
~ কী হয়েছে আপনার? চোখে পানি কেন?
সায়েম ফাতেমার হাত দুটো ওর গালে লাগিয়ে বলে,
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
– সেদিন তোমার বাস্তবতাটা শোনার পর আমি খুব অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। দীর্ঘ একটা বছর যাবৎ তোমাকে আড়ালে ভালবাসি। কিন্তু বুঝতে দেই নি। কারণ আমি চেয়েছিলাম তোমাকে বিয়ে করবো। ভেবেছিলাম সব ঠিকঠাক হবে। কিন্তু তোমার সে কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে যাই। আমাদের সমাজ খুব ভালো না। বাবা-মা যে কখনো মেনে নিবে আমি কল্পনাও করতে পারিনি। আমার ভয় একটাই ছিল, তোমাকে হারানোর। হারানোর কষ্টটা খুব কঠিন। মেনে নিতে খুব কষ্ট হতো। তাই সেদিন মহান আল্লাহর উপর সব ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমার এখনো বিশ্বাস হয় না আমি তোমাকে পেয়েছি। তাই তোমাকে স্পর্শ করে অনুভব করে নিজেকে বিশ্বাস করাচ্ছি। আজ প্রথম তোমাকে দেখেছি। বিশ্বাস করো চোখ ফেরাতে পারছিনা। আজ সারারাত তোমাকে দেখেই পার করে দিব। কয়েকশো যুগ তোমাকে দেখলেও আমার এ দেখা শেষ হবে না। নূরের আলো লেগে আছে তোমার মুখখানায়। সত্যি তোমাকে পেয়ে আমি খুব খুশী আজ।
ফাতেমা লজ্জায় আর সায়েমের প্রতি অজস্র সম্মানে বেকুল। মেয়েটা ভাবতেই পারছে না ওর মতো সামান্য একটা মেয়ের কতটা গুরুত্ব সায়েমের কাছে। এটাই বুঝি সত্যিকারের ভালবাসা। সায়েম বলে উঠে,
– আমার এই স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে একমাত্র ওই আল্লাহর জন্য। চলো ফ্রেশ হয়ে দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ে শুকরিয়া আদায় করি তার কাছে। তার ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হতো না।
ফাতেমা হাসি মুখে সম্মতি জানায়। এরপর ওরা নামাজ পড়ে শুকরিয়া আদায় করে আল্লাহর কাছে। সায়েম ফাতেমাকে পেয়ে অসম্ভব খুশী। ফাতেমা দেখতে কেমন তার বর্ননা সায়েম চায় না আমি দি। ওর স্ত্রী শুধু ওর। তবে এটুকু বলতে পারি একজন পর্দাশীল মেয়ের সৌন্দর্য্য অন্য হাজারটা সুন্দরী মেয়ের চেয়ে অনেক কোটি গুণ বেশী। এরপর ওরা নামাজ শেষে অনেক গল্প অনেক কথায় জমে উঠে। সায়েম আর ফাতেমার মাঝে সংকোচ বা লজ্জা ভাবটা ধীরে ধীরে দূর হতে থাকে।
পরদিন সকালে,
~ এই যে উঠুন। আযান দিয়েছে। উঠুন।
– আরেকটু ঘুমাই প্লিজ।
~ উহুম। উঠে নামাজ পড়বেন। এক রাকাত নামাজও বাদ দেওয়া যাবে না। উঠুন।
– আচ্ছা বাবা উঠছি।
এরপর ওরা একসাথে নামাজ পড়ে। সায়েম আবার ঘুমিয়ে পড়লেও ফাতেমা কুরআন তিলোয়াত শুরু করে। ওর কুরআন তিলোয়াত এত্তো মধুর যে সায়েম আর না ঘুমিয়ে উঠে এসে ওর পাশে বসে চুপচাপ কুরআন তিলোয়াত শুনে। মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে ও।
এদিকে সায়েমের বাবা-মার ঘুম ভেঙে যায় ফাতেমার এই মধুর কুরআন তিলোয়াত শুনে।
~ বউ মা কুরআন তিলোয়াত করছে তাইনা? কি মিষ্টি সুরেলা কণ্ঠ দেখেছো।
– হ্যাঁ।
~ চলো উঠে ফজরের নামাজটা পড়ে ফেলি। এত্তো সুন্দর কণ্ঠে ঘুমটা ভেঙে গেল। নামাজটা কাযা না করি।
– আচ্ছা চলো।
অন্যদিকে,
– ফাতেমা খুব সুন্দর কুরআন তিলোয়াত করে দেখছো? আহ! প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। তুমি তো এতো ভালো পারোনা। এক কাজ কইরো ওর কাছ থাকে শিখে নিও। (ভাইয়া)
~ আচ্ছা ঠিক আছে। চলো নামাজটা পড়ে ফেলি। (ভাবি)
– হ্যাঁ চলো। (ভাইয়া)
ঠিক এভাবেই ফাতেমার আর্দশে সায়েমের পুরো পরিবারের রঙ বদল হয়। তারা ধীরে ধীরে আল্লাহর প্রতি ধাবিত হয়। আর এভাবেই ওরা ফাতেমার গুণে একটা সম্পূর্ণ ইসলামিক পরিবারে পরিণত হয়।
– সমাপ্ত।
পুরো গল্পটি কেমন লেগেছে আপনাদের তা জানবেন কিন্তু। আমি অপেক্ষায় থাকবো আমার প্রিয় পাঠক/পাঠিকাদের মূল্যবান মন্তব্যের আশায়। ধন্যবাদ সবাইকে এতোটা সময় ধরে সাথে থাকার জন্য। সামনেও থাকবেন আশা করি। আর,
বাসায় থাকুন-আল্লাহর ইবাদত করুন-সবার জন্য দোয়া করুন।
© আবির খান।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share